Tuesday 7 April 2020

এলোমেলো ভাবনা—৪

এলোমেলো ভাবনা—৪
ইমেল নাঈম

যুদ্ধক্ষেত্র... হালকা বিশ্রাম... শংশয়...।
আমরা কী হেরেই যাবো এ’ যুদ্ধে—
প্রশ্নবাণ! উত্তর নেই— পরাজিত মুখ, 
স্বপ্ন ভেঙেছে পশ্চিমের বাঁধ ভাঙায়।

আলোহীন পৃথিবী, অদৃশ্য শত্রুপাঠ
বারবার পালটায় তার খোলস, 
অনুমান মিথ্যে হয়, বাস্তব কড়া নাড়ে,
সময় দূরত্ব শেখার— 
পালিয়ে যাওয়ার—
জেলজীবনের ধারাপাত শেখা শুরু।

একটুও সামনে দিকে নয়, ফিরে যাও
ঘরে, প্রার্থনায় রাখো হাত, তৃতীয় বিশ্বে
নেই প্রযুক্তির ঘনঘটা তাই ঈশ্বরেই
রাখি বিশ্বাস, প্রথম বিশ্ব নাস্তানাবুদ—

রাষ্ট্রনেতাদের চোখেমুখে অসহায়ত্ব
চেয়ে আছেন আকাশের দিকে, 
দৈব কিছু পাবার আশায়—

প্রতিটি ডাক্তার যেন একেকজন 
হারকিউলিস, মাথায় ধরে রাখছে
গোটা আসমান, ঢেবে যাচ্ছে পা 
মাটিতে, প্রথমে হাটু, পরে কোমড়,
এভাবেই লুটিয়ে যাচ্ছে প্রাণ—

প্রকৃতিও ফিরিয়ে দিচ্ছে তার হিসাব
পাইপাই করে বুঝিয়ে দিচ্ছে সব
অজস্র মৃতদেহের সৎকারে, 
একদিন আঁকা হবে বিজয়
সেদিন ভীতু মানুষরা রাস্তায় নামবে

নাচবে, গাইবে, উল্লাস করবে, বিজয়ী
যোদ্ধারাও রেখে দিবে তাদের অস্ত্র 

হায় সুদিন... কতদেরি তোমাকে দেখার...

(গ্রিক মিথে আছে, গ্রিকরা বিশ্বাস করতো আকাশকে ধরে রেখেছে যে পর্বত, তার নাম অলিম্পাস, সেই পর্বতের চূড়ায় আকাশকে কাঁধে নিয়ে রাখতেন দেবতা থেটিস, একবার এক কাজে যাওয়ায় হারকিউলিসকে উনি স্মরণ করেন, হারকিউলিস আকাশকে মাথায় তুলে রাখেন, এতে ওর পা হাটু পর্যন্ত ঢেবে যায়।)

Friday 13 December 2019

অপাপবিদ্ধ ঋণ

অপাপবিদ্ধ ঋণ
ইমেল নাঈম

স্বার্থপর সময়। উড়ে যায় মেঘ অন্য শহরে। সেইসাথে রেখে যায় ঋণপত্র। ঘামের গন্ধ বদলায়। উষ্ণতম সময়টিও ছুটে যায় দূরের পথে। কোথাও তো থেমে যেতে হয়? থেকে যাবার গল্পটিও অদৃশ্য সময়ের।লিখে রাখছি প্রান্তিক সমাবেশ। নির্বিকার সময়ের রেশ থেকে যায়। ছুটে চলা যায় একই পথে। ছন্দপতন কিংবা আলোর বিপরীতে হাঁটছি শুধু।

বদলে গেছো। সময়টিও বদলে গেছে। ভালোবেসে দেওয়া তপ্ত চুম্বনটিও অচেনা হয়ে যায়। ইদানীং বিলিয়ে দিচ্ছো নিষিদ্ধ পাড়ায়, বদলাচ্ছো পার্টটাইম প্রেমিকাও। নিজেকে আয়নায় দেখে রাগ লাগে, গাধা, কুকুরের মতো ভালোবেসেছিলাম এক শুয়োরকে। ছুটে চলার মাঝেই হঠাৎ লক্ষ্যচ্যুত ট্রেনের বগি যেন।

হিসাব চাই নি, কিছু সময় প্রতারককেও ছেড়ে দিতে হয়। ক্ষমাও করতে হয়, সেইসাথে করুণাও করতে হয়। নীরবতা ভাঙুক, পাখিদের ভাষাও অচেনা হয়ে যায়, পালিয়ে যাচ্ছো, একদিন প্রেমিক হিসেবে নিজেকে ধিক্কার দিবে। ততদিনে মুছে যাবে সকালের আয়োজন। নীরবতা ভাঙতেই দেখবে নিজের অশ্লীল, নগ্ন ছবি।

ক্লাসিক পুড়িয়ে ফেলছি। সিগারেটের ছাই হলে তুমি, খাওয়া শেষে ছুঁড়ে ফেলছি তোমাকে রাস্তায়, তারপর হাই হিলে পিষে ফেলছি। আমার অতীতকে এভাবেই ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছি। ভাবছি অযোগ্যকে খুলে দিয়েছি নিজের সবটুকু, বিনিময়ে লিখে দিচ্ছি অপাপবিদ্ধ এক জীবনের গল্প।

Tuesday 1 October 2019

আর্টিস্ট
ইমেল নাঈম

পথ জানে দূরত্বের আদিবিন্দু সব এক
যেটুকু দৃশ্যমান তার কিছুটা মিলিয়ে যাবে,
বিষণ্ণতার রিংটোন বাজবে দুপুরের বেহালায়
নীরবতায় পড়ে রইবে তিনপ্রহরের নির্জনতা

উপচে পড়া ভিড়, গল্পের মতো আগায় সংলাপ
দ্বিপ্রহরের নামতা গুণে নিঃসঙ্গ ক্যাকটাস,
জ্যামিতিক নিয়মে অপেক্ষায় অলিখিত সম্ভাবনা

অলৌকিক কোনো বার্তার অপেক্ষায় থাকে
মুখোশ—
       নীরবতা—
               পরিণতি—
সবকিছুর আড়াল শিখছে তৃতীয় পক্ষ।

জটিল কোনো অংক শেষে মিলেছে হিসাব
পাখিরা ফিরে আসে রিক্তভরা সময়ে
সর্বহারা মানুষ তখনো মননে আঁকে শরীর।

Tuesday 13 August 2019

জীবন

জীবন
ইমেল নাঈম

আদরের কোনো ডাকনাম নেই।
কেবলই ছুটে চলা, উপত্যকা থেকে উপত্যকায়
ভোরের আযান থেমে গেছে, আলোকিত
মানুষের অন্ধকার খুঁজতে বেরিয়েছি মাত্র।

পথ রোধ করোনা, খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে ফেলবে
এ’পথ ছুটে চলার নামান্তর— আনন্দের বিপরীত!
তারপর... প্রতীক্ষার বিন্দুবিন্দু জল,
ছুঁয়ে যায় আমাদের বিন্দুবিসর্গসমেত

প্রলয়ের আদিম সংকেত, বিবর্ণ মানুষের মিছিল
হাত চিনি না, পা চিনি না, সমাজ, রাষ্ট্র,
জাতি কোনোকিছুই চিনি না...
মানুষ চিনিনা, আদরের ডাকনামগুলো চিনি।

প্রশ্ন করি না, প্রশ্নোত্তরের ভয়ে।
পুড়বো বলে আগুনে হাত বাড়াই না
দূর থেকে দেখি, অক্ষরজ্ঞানহীন দর্শক।
স্বার্থের ব্যাপারে নিখুঁত অন্ধ, বিবেকহীনও...

কেবলই অংক করতে শিখেছি, গড়ে তুলছি
নিজের সাম্রাজ্য, ও’দিকে পুড়ে যায় ভুগোল
আফসোসের আগুনে পুড়ে আমিও আছি—
বাগানের ঝরে পড়া ফুলের মতো জীবন নিয়ে।

Friday 19 July 2019

গোরখাদকের জবানে

গোরখাদকের জবানে
ইমেল নাঈম

মলিন কিছু সম্পর্কের কাটাছেঁড়া দেখি রোজ
বৃক্ষের গা লেগে জন্মানো ছত্রাক,
শিকড়কে উপড়ে দিতে না জানা
আগাছাও জানে সেসব গল্পের কিছু অংশ,

রোজই ভেসে যেতে দেখি, বদলায় মুখশ্রী
আনন্দ বেদনা কিনেছে মুঠোফোন
দুঃখী মানুষের মিছিল দেখি,
নিশান উড়িয়ে কারা যেন ডাকে মৃত্যুকে...

ভয় নেই প্রিয়, বেঁচে থাকাই অনেক এখন
তড়িৎবাহিত তারের মতো
আহবান, ছুঁলেই মৃত্যু
দোটানায়, দ্বন্দ্বে মুখোমুখি কিছুটা সময়

হিসাবকে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছি ইদানীং
যোগ বিয়োগের শেষে
গুণ ভাগের জটিল অংকে
কেবল মৃত্যু লেখা হয় নীরবে, অলক্ষ্যে

পলাতক আমি দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছি,
আসামীর খাতায় নেই নাম
তবু ছুটে চলার নাম জীবন
সম্পর্কগুলোর কবর দিয়ে ক্লান্ত

প্রতিদিনের দেখা মুখ, অচেনা হয় স্বার্থে
নিজেকে আবিষ্কার করি ভুল সময়ে
প্রশ্ন করতে ভুলেছি, দোষারোপের মন্ত্রে।

Monday 3 June 2019

স্মৃতির ক্যারাভান
ইমেল নাঈম

মূলত মানুষ একাই হয়। নিঃসঙ্গতার নিবাস গড়ে অলক্ষ্যে।
ভোরের আযান থেমে যাচ্ছে, স্মৃতির ক্যারাভানে নেই সংকেত
মৌন হওয়া মানুষগুলো হেসে ওঠে অকারণে

একোরিয়ামের জীবন, দানাপানিতে ভেসে যায় সূর্যমুখী
জানালায় উড়ে আসে সূর্যকিরণ, মুখস্থ জীবন পাড়ি দিচ্ছি,
অহেতুক সময়ক্ষেপণে কেটে যায় জীবন নৌকো,
ঢেউহীন নদী পাড়ি দিয়ে সাজছি বীর,

বীরগাথা থেমে গেলে শূন্যতার চাষাবাদ হয় কেবল,
মুহূর্মুহু আক্রমণে ভেসে যায় কল্পনার যত বিবাদ
বিরহ আঁকছে যে কবি তার চোখেও ঘৃণার নহর,
ব্যর্থতা আলিঙ্গন করা মানুষগুলো হাসে অকারণে

খেয়ালখুশিতে উড়িয়ে দেয় জীবনের শখ আহ্লাদ
অনুভূতিহীন মানুষ মিশে যায় অন্য মানুষের সাথে
ভুলের বৃত্ত পেরিয়ে যাই মূর্ছনার শেষ পর্যায়ে,
নীরবতা ভাঙতে বসে ছিঁড়ে ফেলি সুরের স্বরগ্রাম

ভুলের মাশুল টেনে ছিঁড়ে ফেলি মানুষের বন্ধন।

Friday 1 March 2019

ক্যানভাসে...

ক্যানভাসে...
ইমেল নাঈম

থেমে যাবার আগে একটু দাঁড়ানো যেতেই পারে
মলিন ক্যানভাসে আঁকতে পারো মায়াবী পোর্ট্রেট
উড্ডীন পাখিদের দেশে রেখে দাও যন্ত্রণা
মিথ্যে প্রলোভন এঁকে দিচ্ছি দূরত্বের নিয়ম মেনে

একোরিয়ামের নীলচে জল, কোথাও নেই শান্তি
মেঘ গড়িয়ে নেমে আসে অশান্ত কিছু শব্দবাণ
ভাবছি, কে কার— কতটা দূরত্ব মাপা হয়
ক্যানভাসে ছবি আঁকা শেষ হলে প্রাপ্তিফল শূন্য হয়।

তবু ভ্রান্তি ফেরি করে ছুটে যাই দুরান্তের পথে
মায়ার জীবন কিছু দুর্বোধ্য চিত্রপট আঁকতে ক্লান্ত
আঁকা শেষ হলে মুছে দিতে হয় অভিমান বুকে...

হরিত সময়ের মূল্য দিচ্ছে কোন সে মহাকাল?
কতটা আড়াল হলে মানুষও হয় তার ছায়া
জানে না কিছুই তার ক্যানভাস, 
          জানে না কিছুই রং-তুলি,
শুধু গভীরে পাড় ভাঙা এক শব্দ শোনে, নীরবে।

Tuesday 26 February 2019

ইলিউশন

ইলিউশন
ইমেল নাঈম

ভুলে যাই নি ব্যাকরণের প্রথম পাঠ। শিখেছিলাম গাছের সালোকসংশ্লেষণজুড়ে থাকে মৌন এক উপলব্ধি। গ্লোবাল ওয়ার্মিং গিলে খাচ্ছে তার পুরোটাভাগ। বিনিদ্র সময় লিখে রাখছে একাকিত্বের কিছু মেঘ প্রহর। দিন পেরিয়ে গেছে, হাতেখড়িতে ক্লান্ত সময় যাপন আজো গেয়ে যায় পুরোনো গান।

ভুলে যাওয়া যাপন— মানচিত্রে ভিন্নধর্মী গান... বখে যাওয়া মানুষের কণ্ঠে বকাটে পাখির আর্তনাদ লিখে রাখো জীবনের সব চোরাবালি। মুছে ফেলো— মিথ্যে আবরণে ঢেকে রেখো না চোখ। কিছু দৃশ্যপট চুপিসারে বলে যায়— মেঘের কাছে হেরে যাওয়ার গল্প ঠিক অন্যরকম। পোস্টমডার্ন ছায়া অথচ প্রাচীণ গোত্রীয় এক ঘোড়া টেনে নিয়ে যাচ্ছে মায়ার কলস।

মুখ মুছে গেছে। ভুলের বৃত্তে আটকে গেছে। দিনের হিস্যা নিয়ে অচেনা এক পথচারী। গল্পের ভাঁজে শুকনো ফুলের পাপড়ি। অপঠিত অধ্যায়ের অনেক গল্প আমাদের পঠিত নয়। কথা ছিলো, তোমায় অভিবাদন জানাবে পথে ছড়ানো জেসমিন। অথচ, দিনশেষে বুঝলে কেউ কখনো কারো কাছে আসে না।

আমাদের দেহমন্ত্র মুছে গেছে। বৃক্ষরা মৃত। নগণ্য জীবন শুধু থমকে যায়। হাতের ভাঁজে কাল্পনিক কিছু সময়যাপন। ভুলের ব্যাসার্ধে উত্তরপত্র শূন্যতায় ঠাসা। মৌন সময়গুলো উত্তরহীন, উত্তাপহীন কিছু মুহূর্তকে এঁকে যাচ্ছে চোরাবালির টানে।

Sunday 24 February 2019

ধারাপাত

ধারাপাত
ইমেল নাঈম

ভাষারা মলিন হবে। রুক্ষতা এঁকে দিবে প্রলোভন। জীবনের পলেস্তারা খসছে। অনুভব করছি অন্যরকমের মায়ার জীবন। দূরের দ্বীপ বিচ্ছিন্নতার গান গাইতে গাইতে থেমে গেছে। জীবনের আয়োজন থেমে যাওয়া বাঁশীর সুর, যা গাইছে শুধু নির্জনতার সংগীত।

দেয়ালে ঝুলছে। নিজের জন্য অবশিষ্ট নেই কোনো কিছুই। প্রান্তিক জীবন কৃষক শ্রমে সমূলে উৎপাটন করছি ভালোবাসা। বৃক্ষের মতো হত্যাকে লিখছি। নিজেদের নিয়ে হারিয়ে ফেলেছি ভালোবাসার নীল চাদর। শিকড়হীন গাছের শিকড়ত্ব আকঁতে ক্লান্ত হচ্ছি খুব।

মায়াময় সময়, নিজের কাছে রেখে দিচ্ছি বখে যাওয়া সময়। কতটা দূরে সরে যেতে পারি। হিসেবে রাখি নি প্রত্যাখ্যান সমগ্রের দুঃখবিলাস। নিজের জন্য রেখে দিয়েছি ইরানি জাফরান, যার ঘ্রাণে লিখে রাখছো ভালোবাসার সকল ছোবল।

চুপিসারে পালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘশ্বাস। অনুভবে মুছে যাচ্ছে বুকের ভেজা অংশ। ক্লান্ত চোখের পাতাজুড়ে ব্যথা, দীর্ঘশ্বাস এঁকেবেঁকে চলে গেছে রূপকথার নদীর মতো। নিজেকে নিয়ে ভাসিয়ে দিচ্ছি তারই বিষাক্ত জলে। জীবন পুড়ে যাওয়া মানচিত্রের মতো, ভুগোল শিক্ষক হয়ে যায়... আর বারবার বলে এভাবে নয়, ওভাবেও নয়...।

আসলে কোনোভাবেই কী নয়...!

Friday 22 February 2019

বিক্রয় মূল্য

বিক্রয় মূল্য
ইমেল নাঈম

ঢেকে যাচ্ছে দূরের আলাপন। মেঘ ছুঁয়ে যাচ্ছে ভ্রান্তিকাল।
মুহূর্ত মুছে যাচ্ছে, নিয়ে যাচ্ছে অহেতুক কালিমা—
পথ এঁকে নিচ্ছে নির্বাক সময়ের নির্যাস—
হাতের রেখায় মুছে যাচ্ছে প্রান্তিক আলাপের দুঃখ।

ছুঁয়ে দেখছি নিজের জন্য রাখা সময়গুলোকে
ভুলো মন ভুলিয়ে দিচ্ছে, হারিয়ে ফেলছি নিজেকে।
ক্রোধের সংজ্ঞায় রেখে দিচ্ছি নীরবতার ভাষা...।
ক্রান্তিকালে লিখে রাখছি জীবনের কিছু আয়োজন

মুছে যাচ্ছে জীবনের দিনপঞ্জি, গৎবাঁধা রুটিনের
ফাঁকে অশ্রুজলে ভিজিয়ে নিচ্ছি দিনের ক্লান্তি
থাকুক কিছু সময়— কথারাও বিমূর্ত হয় শুধু—
জীবন আঁকড়ে ধরছি, বিনিমিয়ে অপ্রাপ্তির খাতা
ভর্তি হচ্ছে মহাকালের নামে, মূর্খমুখ মূক নই।

বধিরতা কেটে যাচ্ছে— নিয়ে যাচ্ছে দূরের পথে
নিজেকে নিয়ে আয়োজনগুলো ক্রমাগত ব্যর্থ হয়
মূর্ছনা থেমে যাক— ঢাকবো নিজেকে কালো কাপড়ে...

মুহূর্তে, বিমূর্ত আলাপনে টিকে থাকে কাহিনির শেষে
আবরণে ঢেকে থাকে অচেনা প্রচ্ছায়া, নিজেকে ফেরি
করছি, বেচে দিচ্ছি চোখের জলে, গায়ে ক্রয়মূল্য লেখা—
যেন অপ্রাপ্তির জীবন তাড়া করে পলাতক আসামি...

Wednesday 6 February 2019

বর্ণমালা

বর্ণমালা
ইমেল নাঈম

একদিন থেমে যাবে সকল আয়োজন
মানুষগুলো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
থাকবে সাড়াহীন, অথচ নিঃশব্দের তীব্রতাও
মাপা হয় নি আজতক, মেঘের ভাষা পড়তে
বসে হারিয়ে ফেলছি পৃথিবীর সব আয়োজন।

ভাষার প্রতিশব্দে কিছুই বাকী নেই আর,
দিনের অংকে বর্ণমালায় কেবলই হাহাকার
চুপচাপ ঝরে যাবে পাহাড়ি ফুল, বুনো ঘ্রাণে
আচমকা নেমে আসবে ঘন মহুলার বন,

নীরবতার ভাষা পড়ছি প্রতিটি মুহূর্তেই
মিলিয়ে যাচ্ছে জীবনের প্রতিটি আয়োজন
দায়বদ্ধতার ফাঁকে হেসে ওঠে কবিতার খাতা
অক্ষরবৃত্ত, স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্তের মাঝেও
হাসে দুঃখিনী বর্ণমালা, চিহ্ন আঁকছি শুধু...

কোথাও কোনো সংকেত নেই, মৌন সবকিছু
ভাগ করে নিচ্ছি অনুভব, অনুভাব; নিজের
জন্য নেই বাক্যের ফোয়ারা, আনন্দের ঝর্ণায়
ভাসিয়ে নিচ্ছে জীবনের মায়াভরা উপলক্ষ

উপলব্ধি করতে করতে বুঝে নিচ্ছি সৌন্দর্য
মেঘের ভাজে উড়ছে স্বর, মূর্ছনায় রাখছি
অস্তিত্ব, বর্ণমালার কাছেই লিপিবদ্ধ সব ঋণ।

Saturday 26 January 2019

সকাল

সকাল
ইমেল নাঈম

এভাবেও এড়িয়ে যাওয়া যায়! গভীর শূন্যতা নিয়ে ডুবে যায় চাঁদ। সুবহে সাদিকের আকাশ লিখে রাখে যাযাবর প্রেম। মুঠোয় আটকে রাখি ছাতিমফুলের স্পর্শ। ভালোবাসার নেশায় নিঃস্ব হয়েছে যে প্রেমিক তাকে উড়িয়ে দাও আকাশে। সে দেখুক আকাশের রঙ কী! নিঃসঙ্গতার বিপরীত মানেই জুড়ে থাকা নয়, নয় কারো পাশে থাকা। একটা শৃঙ্খলা যাকে নিয়ে ভাবা যেতে পারে একটা সকাল।

শরীরের সাথে লেপ্টে থাকে অজস্র মন খারাপের উপকরণ। রঙহীন, স্বাদহীন ফেরিওয়ালা কাঁধে নিয়ে যাচ্ছে যাবতীয় প্রহসন। যেন ছোট্ট বেলায় সেই ঘুড়ি ওড়ানো বিকালের কিছু আলোকছটা। মনে হচ্ছে এইতো নিভে যাবে পুরোটা নিয়ে।! কোথাও তো লুকিয়ে থাকে অলক্ষ্যে, মেঘের দেশ পাড়ি দিলেও আকাশ ছোট হয়ে মুঠোবন্দী হয় না।

ইরানি গোলাপ পড়ে আছে বিকালের পথে। শীতের দিনে শিউলি ফোটে না, শহুরে আকাশ চিনে না পাখির গান। নাগরিক অরণ্য মানেই ইকেবানা আর বনসাই। উঁচু অট্টালিকার ভিড়ে আকাশটিও দখলে নিয়ে নিবে কর্পোরেট বেনিয়া। সুযোগের অভাবে সৎ মানুষ হিসেবে জেলজীবন পার করছি প্রত্যেকে।

আকাশ দখলে চলে গেলো সেই কবে। তার আগে দখল হলো মাটি। খেলার মাঠে জন্মালো শপিংমল। মানুষ বন্দী হলো মুঠো ভর্তি যন্ত্রের কাছে। অসুস্থ হচ্ছি না খুব। সুস্থতা নিয়েও থাকছে সংশয়। আলটপকা আটকে যাচ্ছি একটা অনিচ্ছাকৃত সকালের কাছে, যার কাছে আমার কোনও ঋণ নেই।

Monday 21 January 2019

নিষ্প্রাণ নগরী

নিষ্প্রাণ নগরী
ইমেল নাঈম

গাছেরা কবিতা পড়ে না বলেই সিমেন্টের গাছ পুঁতছ নগরজুড়ে...
আপত্তিগুলো এখনো মাথাচাড়া দিয়ে জানান দেয়, 'আছি'
মাঝে বয়ে যায় অজস্র না জানা নহর, চোরাবালির সৈকত
অপেক্ষায় পেরিয়ে যাচ্ছে হরিত দৃশ্যপট, খুঁড়ে ফেলেছি রাস্তা...

নদীর পানিতে কারখানার ক্যামিকেল, নাব্যতাহীন নদীর
আছে ফেলে আসছি জাগতিক অভিমান, অভিনয় শেষে
হিসাব করিনা, কে সুখী? কতটা পারদ উঠলে উষ্ণতা
মাপা যায় অসুখের। বিত্তের পিছনে দৌড়ছে দোপেয়ে।

অর্থ দিয়ে কিনছে সামাজিক সম্মান, প্রভাব প্রতিপত্তি।
পাড়ায় পাড়ায় বাড়ছে উপাসনালয়, বাড়ছে অন্যায়
তার সমান্তরালে পাল্লা দিয়ে? কিশোর চোখ ডুবেছে
মুঠোফোনে, অন্তর্জালের খেলায়, সামাজিক মাধ্যমে...

কারো কাছে নেই অভিযোগ, অন্ধকারের পথে ছুটছি শুধু
আলো নেই, দূরের টানেলে কেবলই বিভীষিকার মরিচীকা
বিনিদ্র জীবন যেন এক্সিবিশন, আমরা সবাই ক্লাউন...
বিচিত্র অঙ্গভঙ্গিতে ঢেকে দিচ্ছি শৈশবের সকল আয়োজন।

মুছে যাচ্ছে সবুজের পাঠ, কৃত্রিম আবেশ ছড়াচ্ছে সৈকত,
বুকের জমিনে অনন্য এক হাহাকার, অভিধানজুড়ে শূন্যতা।