Tuesday 11 December 2018

অনুভব
ইমেল নাঈম

মুছে দিলাম গোপন ইচ্ছেগুলো
অজস্র কষ্টকে আঁকছি খাতায়
ভুলের বৃত্ত পেরোবো বলে দৌড়ে
গেলাম শুধু— জানা হলো না
এক কক্ষপথ কতবার ঘুরলাম।

মিলিয়ে যাচ্ছে সব দাগ, অনুভব...
অভিমানে কেটে যাচ্ছে পুরো সময়
বেলায়, অবেলায়; অবহেলাই
পরম সত্য হিসেবে সামনে আসে।

অনুভূতিকে মাটি চাপা দিই,
রোজই মিছিল নামে এই শহরে
ছুটছে মানুষ... ছুটছে স্বপ্ন...

হ্যামিলনের বাঁশীওয়ালার মতো
আমাকে নিয়ে যাচ্ছে মূর্ছনায়
নিজেকে নিয়ে ভাবছি না কিছুই
সপে দিচ্ছি পরিস্থিতির কাছে।

পরাজয় নাকি জয়! থাকুক সেটি
তর্কবিতর্কে, অনুভব করছি কেবল
কবিতার চাদরে হারানো একটি মুখ।

Monday 10 December 2018

মুছে দাও— থাকবে না জাগতিক মায়া
প্রচ্ছন্ন আবেশে জড়িয়ে থাকবে শুধু
নিজের জন্য নেই কোনো উপহার
আত্মকেন্দ্রিক মন হলুদ স্বপ্ন গড়তে ব্যস্ত

নির্বাসন লিখে রাখি। পরিকল্পনাহীন
চোখ গেয়ে যায় মরমি গান,
আয়নায় নিজেকে দেখি, থাকে নিশ্চল
এক আহ্বান— উপেক্ষা করতে পারি না।

এইখানে সোনার হরফে লেখা ছিলো,
ছিলো বুকের গভীরে চাপা অভিমান
রাজ্যহীন এক রাজার মতো ছুটে বেড়াই
প্রলেতারিয়া'র মতো ছুটছি শুধু

নিঃস্ব হয়ে ফিরছি
ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি
প্রলেতারিয়া'র জীবনে...

Saturday 8 December 2018

জীবনের সাপলুডু

জীবনের সাপলুডু
ইমেল নাঈম


হঠাৎ থেমে যেতে পারে জীবনের আয়োজন। কথার বাঁকে জমাটবদ্ধ ঋণের বহর। বদলে যাবার মন্ত্রে বদলে যাচ্ছে গোটা শহর। ক্লান্ত অবসাদগ্রস্ত পৃথিবীর জন্য রেখে গেলাম কয়েকগুচ্ছ কবিতা। যেখানে আবেগের তোড়ে ভেসে যাওয়ার গল্প নেই। নেই কোনো প্রতিশ্রুতি। সস্তা কথার পাবলিসিটি নেই। বইয়ের ভাঁজে অদৃশ্য কালিতে দৃষ্টি বিনিময় আছে। আছে মেঘের সাথে প্রণয়ের লুকনো ছাপ।

লুকোচুরিতে পেরিয়ে যাচ্ছে স্বর্ণালি সময়। প্রলেপে ঢেকে দিচ্ছি খসে যাওয়া পলেস্তারা। নির্বাক জীবনের বাঁকে মুহূর্তগুলো দামী হয়। তারা আপন মনে খেলতে থাকে। ধ্বংসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি, ভেসে যায় আমাদের জীবনের ভেলা। স্রোতের সাথে মিলেমিশে যায় যাই, স্পষ্ট কোনো গন্তব্য লেখা নেই। পরিণতি ভাবতে ভাবতে সমূহ বিপদ নিয়ে ভাবা হয়ে ওঠে না কারো। অথচ সাবধানতার খোলসে আটকে ফেলেছিলাম নিজেদের।

চেকপোস্টে প্রহরী, সামনে যাওয়া নিষেধ। আইন অমান্য হলেই সাজা। নিজেকে গিনিপিগ ভেবে বসে থাকি। ঘড়িতে সময় মাপি। দিনের হিসাবে অপরীক্ষিত থাকে সকল আয়োজন। ভেসে যেতে যেতে পেতেছি সংসার— অথৈ সাগর নাকি ধূধূ বেলাভূমি— আজো যাচাই করে উঠতে পারি নি। ঐকতানে সুর নেই, তাল কেটে গেছে খঞ্জনির। উদাত্তকণ্ঠটিও থেমে গেছে অবেলায়।

নিজের জন্য শোকগাথা লিখছি। কাল্পনিক একটা আবেশ ঘিরে রেখেছে আমাকে সবসময়। নিজেকে বেঁধে ফেলছি আর ছুটে চলেছি পায়ে শিকল পরা হাতির মত। প্রজাপতির দিকে চোখ পড়লে নিজেকে অসহায় মনে হয়। কিছুই তো নেই সাথে তবুও গায়ের সাথে লেপটে থাকে অনেককিছু। যেমন একরাশ ধূসর সময়, কিছু মলিন স্মৃতি আর একটা নষ্ট হওয়া ক্যানভাস। আমার তো আর কিছুই নেই তোমাকে দেয়ার...

Thursday 6 December 2018

মনোলগ

মনোলগ
ইমেল নাঈম

সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায় প্রলয়ঙ্করী ঝড়ে
রাতের ক্যানভাসে দৃশ্যত কিছুই নেই
ত্রিভুজ সাইনে ফিরে ভুলের বহর
রক্ষাকবচের জোরে আটকে ফেলি একবৃত্তে
নির্বাসন লিখে রাখছি রু'এ...পালিয়ে যাচ্ছি...

দুর্বোধ্য কিছু সাংকেতিক চিহ্ন, মানে খুঁজতে
বসে পার করে দিচ্ছি দিনের সিংহভাগ
মনোটনাস একটিভিটি, প্যারানরমাল টার্মসে
ফিরে আসছে রিউইন্ড করে আমার কাছে
গর্জন শুনি সাগরের, প্রতিধ্বনি পাহাড়ের।

ছিঁড়ে ফেলেছি যত বাঁধন, প্রশ্ন করছি
না নিজেকে এভাবে। উত্তর খুঁজছি না।
তোমার জন্য নীলপদ্ম...
প্রহসনের পড়ন্ত বিকাল...
দিনের হিসাবের ব্যর্থতা...

দিনশেষে শূন্যতার যাপন হয় বিবর্ণ মনোলগ।

Sunday 2 December 2018

মিউজিক

মিউজিক
ইমেল নাঈম
(উৎসর্গঃ শবরী শর্মারায়)


থেমে যায় হুটহাট— সময় হয় নি যদিও থামবার

শিহরণ মেপে রাখি, সুরেলা সকালের হাতছানিতে
এলভিস নয়, আজ খেলছে অন্য কোনো মুখ

ব্যারিকেডে দিনান্তের প্রাচীর টানা, শূন্যঘরে বিনিদ্র
অবয়বে নস্টালজিক মিউজিক উড়ে বেড়ায়,
এ'ঘরে ও'ঘরে ঘোর জাগানিয়া, মন কেমন করা
একটা রেশ টেনে থেমে গেছে হাওয়াই গিটার।

শূন্যতা...এরপর থেকে শূন্যতার গান গাইছি
পিয়ানোতে ভেসে আসে সকালের নৈঃশব্দ্য
শরত সকাল নিজেই যেন ব্লুজ অ্যান্ড রক
ভিজিয়ে দেয় তোমার চোখ, কপাল, বুক

আত্মসুখে আমিও নীরবে দাঁড়িয়ে থাকি
গিটার নিশ্চল— কেবলই পিয়ানোতে টুংটাং—
গান হয়ে বাজছে দূরবর্তী ভালবাসার সিগন্যাল।

Saturday 1 December 2018

সিস্টেম

সিস্টেম
ইমেল নাঈম

ডার্ক হিউমারে চেপে আসে গোলাপি দুঃখ
লাইক চাই — কমেন্ট হলে আরো ভালো
নারীদেহকে জীববিজ্ঞানের প্রেকটিক্যালে
কাঁটাছেঁড়া করতে বসি সুযোগ পেলেই।

সাইবার সেলের কর্মক্ষমতায় হাসির রোল
চার থেকে ষাট, সবটাই কেবল মাংসপিণ্ড
স্ট্যান্ডার্ড স্ট্যান্ডার্ড খেলায় মুখবইয়ের
অভিযোগের খাতা অজুহাত হয়ে ফেরে।

বুকের পাটা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে বত্রিশ
অহংকারে খেলে যায় আগাগোড়া
সমাজ শেখাচ্ছে অসহিষ্ণুতার পুরাণ,
আইনের হাত লম্বা হয়ে নাগালছাড়া
পঞ্জিকা পালটায় সাড়ে আঠারো মাসে

পত্রিকার কাটতি বাড়ে — মুখবইয়ে আড্ডা
মোমবাতি জ্বলে, কালো পতাকাও ওড়ে।
মধ্যবিকালে নামে মিছিল, অন্যকিছু নয়।

ডার্ক হিউমার মিম, তাতে ছড়ায় দুর্গন্ধ
নারী শত্রু নারীর, পুরুষ ব্যস্ত মাপজোখে
রাস্তায় বাড়ছে কুস্পর্শ — শরীর মাংসপিণ্ড
আর মুখবইতে কিছুদিনের চিৎকার...

কবির কবিতারা ব্যর্থ রোজকার মিছিলে
দিনশেষে শুয়োরেরা গায় মানবতার গান।