Tuesday 28 February 2017

ভাত ঘুমের অবসরে

ভাত ঘুমের অবসরে
― ইমেল নাঈম

বাতাবি লেবুর খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে হিসেব করে নিতে পারো সুখ দুঃখের। প্রহসনের মায়াজালে কখনো প্রশ্ন করো না সামর্থ্যের। বেঁচে থাকাটাই অনেক বড়ো হয় মাঝেমাঝে। কতটা ভালো, কতটা মন্দ তা নিয়ে করে ফেলতে পারো অজস্র ক্যালকুলাস। প্রশ্নেই ভুল, উত্তর মিলবে সেই প্রত্যাশা করো না। ফুল মার্কসের বদলে শূন্যতা আঁকতে পারেন পিকাসো। প্রতিদানে প্রশ্ন করো না, উত্তর জানলেও মাপতে বসো না ভুলত্রুটি।

অবেলায় আকাশ দেখতে যেও না ছাদে। লূ হাওয়াদের সুদিনে তাল কেটে গেছে শরতের আকাশের। বেতালে নাচছে যে সর্বনাশী গঙ্গাফড়িং তার দিকে বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাও। তবে দু' পা এগিয়ে দেখার ইচ্ছেকে পুঁতে ফেলো মাটিতে। কাছে যাবার মানে কিন্তু স্পর্শের আনন্দ নাও হতে পারে। হতে পারে অলক্ষ্যে রয়ে যাওয়া এক মুঠো বিষণ্ণতা। ছুঁতে গেলেই তোমাকেও গ্রাস করে নিবে এমন পড়ন্ত বিকালে।

ভাত ঘুমের আয়োজনে কোনো চিহ্ন রাখিনি। হিসেবের খাতায় প্রেম নেই, অথচ হারানোর বিবরণ অনেক। লিখে চলেছি দিস্তার পর দিস্তা। শেষ ভাবলেও শেষ হয়ে ওঠেনি সব গল্প। প্রেম আর প্রহসনের মাঝে দাঁড়িয়ে তর্জনী আর মধ্যমা। কতো কাছাকাছি অথচ বিপরীত অবস্থান। আরব্য রজনীর উপন্যাসের মতো লিখে চলেছি নির্ঘুম হাজার রাতের রূপকথা। সত্য নয়, অথচ কত সাধনার সময়।

এতো আয়োজনের মাঝের সময়ের ব্যর্থ আস্ফালনটুকু চোখে পড়ে না কখনোই...কারো...

প্রকাশকালঃ ১৬ ফাল্গুন ১৪২৩। 

Monday 27 February 2017

অপেক্ষা

অপেক্ষা 
ইমেল নাঈম

শুরুটা একই রকম মনে হয়। কারণ নেই তবুও খুঁতখুঁতে চোখে তাকিয়ে থাকি। উদ্দেশ্য বিধেয় কোনো কিছুই আমাকে আর তাড়া করছে না। তবে পালিয়ে বেড়াচ্ছি কার থেকে? পথ জানা নেই অথচ পথিক। দৃষ্টির ফাঁক গলে এড়িয়ে গেছে গত সময়ের খোয়াবনামা। জানি না তাই জোর নেই কোনো। হাপিত্যেশ নেই, হতাশা অনেক। রয়ে সয়ে যাওয়া কিছু গল্পের ভাঁজে রেখে দিয়েছি অপূর্ণ কিছু উপলব্ধি। 

সকাল পেরোলে পাতাবাহারের কোনো আবেদন থাকে না। পিচ ঢালা পথ একচ্ছটা মরীচিকার জন্ম দেয় আলোর বিচ্ছুরণে। বারবার পথ ভুলে ঢুকে পড়ি সেই কক্ষপথে। বেরোবার পথ জানা নেই। আলোর দিকে ছুটতে গিয়ে ঢুকে গেছি চোরাবালিতে। মোহ! সেতো গিলে খাচ্ছে আমাকে রাত দিন। অলিক কল্পনায় ভাসিয়ে দিচ্ছি ডিঙ্গি। মাছরাঙার মতো দাঁড়িয়ে থাকি পানির মাঝে।

রাত বাড়লে চাঁদের প্রতিবিম্ব এসে ছড়িয়ে দেয় আলো। নীলাভ আলোয় আমি লীন হই। গুণগুণ করে গান গাইতে থাকি। ক্রমশ ভুলে যেতে থাকি অপ্রাপ্তি আর হতাশাগুলোকে। প্রার্থনা করি রাত দীর্ঘায়ত হোক। আর কাল সকালে ঝুল বারান্দায় অপ্রত্যাশিতভাবেই যেনো নয়নতারা ফুটুক।

কখনো মাছরাঙার চোখে, কখনো পিচ ঢালা পথের গোলকধাঁধা বুকে নিয়ে আমি কতকাল এমন সকালের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছি। 

Sunday 26 February 2017

আত্মনিমগ্ন গান

আত্মনিমগ্ন গান 
― ইমেল নাঈম 

আযান শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। পাখির কলতানে মুখরিত সাম্পান সকাল। শীতের কুয়াশার ভাজে ভাজে বাজাচ্ছে পিয়ানো এক অচেনা মুখ। বধির নই, তবুও সঙ্গীতায়োজন কানে ঢোকে না। সুরের খেলায় ভাসছি জানি, কোথায় থামবে তা জানে না ঘুড়ি জীবন। 

উৎসবের পরেও মুখরিত মুখের মাঝে অক্ষত সব বর্ণমালা এখানে টিকে থাকে। প্রাণ খুলে হাসতে থাকা মানুষজন, বাতাসে উড়তে শেখা ঘাস ফড়িং আর মৃদু ছন্দে দুলে ওঠা ঘাসফুলের মুখ দেখে কেউ বুঝবে না এখানকার ঝড়ের পূর্বাভাষ। 

বলি বলি করেও বলি নি, আমার সীমাবদ্ধতা অনেক। আমি প্রবেশ করতে পারি না সকল জায়গায়। অনেক জায়গায় আমার কোনো অধিকার নেই। আমি নানান রকমের রূপ ধারণ করি সান্নিধ্য পাবার লোভে। প্রজাপতি হই সকালের দূর্বাঘাসের মাঝে। রোববারের গির্জার ঘণ্টায় দেয়ালে ঝুলন্ত জিশুর কাছে জানিয়ে আসি বিগত দিনের নালিশ। 

এসবের কারণ আমার জানা নেই ― তোমার কাছে গেলেই নিজেকে শূন্য মনে হয়। আমি ভুলে যাই পাপ পুণ্যের হিসাব নিকাশ। নিঃসঙ্গ রাতের প্রতিদিনের অতিথি, রাতবিরেতের সকাল গুলো তুমি লিখে রাখো পবিত্র রজনীর রূপকথার ভাজে ভাজে। 

প্রকাশকালঃ ১৪ ফাল্গুন ১৪২৩।

Saturday 25 February 2017

অপেক্ষা

অপেক্ষা
― ইমেল নাঈম

সূর্যাস্তের গল্প বলেছিলাম গতকাল সন্ধ্যায়। মনের ফ্ল্যাশব্যাক এতোটা অতৃপ্ত নয় যে দু এক কথায় মিটে যেতে পারে আমাদের সুখের বিন্যাস। মাটির সরল পথ, পাহাড়ি জনপদ, বিকালের ছিমছাম রোদের আত্মকথা। হাবিজাবি কথার ভিড়ে মখমলে দিনের শ্রুতি কথাও থাকে ― নীরবে। কোলাহল ছেড়ে দাঁড়ায় এখান থেকে অনেক পথ দূরে। বাতাসের বুকেও আঁকিবুঁকি খেলা যায় এমন দিনে। সুযোগসন্ধানী আমিও সংলাপের পর সংলাপ লিখে শেষ করে দিই একেকটা অসমাপ্ত বর্ণনা।

শুরুর দিকে কোনো কথা থাকে না, অদ্ভুত মৌন সুর খেলতে থাকে কলমের নিব জুড়ে। হাহাকারের কোনো ¯পর্শ থাকে না। উপচে আসা কথাদের মাঝেও রেখে দিই জাফরান। পরের গল্পে অন্যরকম ― সেখানে ক্রমশ উর্বর শব্দের কাছে অনুর্বর অনুভূতিদের পরাজয় নামে। যেন অদৃশ্য যুদ্ধের পর দৃশ্যমান এক রিফুজি ক্যামম্প। দাঁড়িয়ে আছি রেড ক্রিসেন্টের গাড়ীর জন্য একা, আমার সামনে দাঁড়িয়ে উপেক্ষার সন্ধ্যা আর পিছনে সোনা ঝরা পাতাদের কলরব।

নৈঃশব্দ্যের কাছে ফিরে যাই অন্য এক সুরে। উষ্ণতার সান্নিধ্যে রেখে দিই অমায়িক গল্পের হাতছানি। নিজেকে সামলে নিই পাহাড়ের বুকে। ধৈর্য ধরতে ধরতে কখন যে পায়ে লেগেছে বেড়ি একটুকুও টের পাই নি। চুপ থাকতে থাকতে ভুলে গেছি মানুষের মুখ। বাস্তব মূকাভিনয়ে ব্যস্ত আমি দেখিনি আয়না কতকাল! দাঁড়িয়ে আছি প্রত্যাশা নিয়ে, যদিও ভুলে গেছি প্রয়োজনীয় নাম আর ঠিকানাটুকু।

প্রকাশ কালঃ ১৩ ফাল্গুন ১৪২৩

Tuesday 21 February 2017

কাঁঠালচাঁপার জন্য

কাঁঠালচাঁপার জন্য
― ইমেল নাঈম


থেমে যেতেই আবিষ্কার করি কাঁঠালচাঁপা গাছটি আমার ছিলো, অথচ গতকাল পর্যন্ত তার অস্তিত্ব আমাতে ছিলো না। এরপর কয়েক মিলিগ্রাম আক্ষেপের জন্ম হয়। সময়ে সময়ে সেগুলো কিছুটা বাড়ে, পুনরায় কমেও যায়।

কিসের মায়াজাল। পুরনো একটা আঙিনা, কেনোইবা টেনে নিয়ে যায় স্মৃতির মিনারে। কাঁঠালচাঁপা সেও তো মিশে যেতে চায় কুয়াশার চাঁদরে। আমি তো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নই বিগত সময়ের ধুলোমাখা স্মৃতির কার্নিশের কাছে। তবুও এক্কাদোক্কা খেলা, বায়স্কোপের ফাঁক গলে ভেসে ওঠা নায়ক নায়িকাদের ছবি। বাতাসা আর শনপাপড়ির মোহনীয় দুপুর সেও কেনো কড়া নাড়ে আমার দরজায়।

নাটকের সংলাপের মতো নিজেকে আওড়ে ফিরি, কোনো মানে নেই জেনেও বারবার হাতঘড়ির সময় দেখি। মফস্বলের সন্ধ্যায় রেখে দিই পুরনো সব আলিঙ্গন। চেনা ইশকুলের মাঠ, তার মাঝে আঁকাবাঁকা মেঠো পথ, দূরের হাতছানি দেখে কার ছবি আঁকছো পড়ন্ত  বিকালে।

সাইরেন থেমে যায়, নিয়মানুগ ঘণ্টা বাজে কারখানার। জীবনের বাঁক নদীর মতো সরল নয়, অথচ জীবন বলতেই নদীকে বুঝি। নাব্যতার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত গতি আর এরপর মৃত্যুর মিছিল। কেমন যেনো মিলে যায় জীবনের হিসাব নিকাশ। ক্ষণিকের অচেনা কাঁঠালচাঁপা― তুমি তো কখনোই আমার কাছের কেউ ছিলেনা। তবে... কেনো অদৃষ্টে খেলে যাচ্ছ অপরিচিত খেলা।

প্রকাশকালঃ ৯ ফাগুন, ১৪২৩

Sunday 19 February 2017

হিসাব নিকাশ


ভেসে আসে। যেটুকু আসার নয়, তাও নিয়েছে মুঠো ভরে।
প্রাপ্তির খাতা জুড়ে আঁকছো বিষণ্ণতা, উড়ুক্কু সাময়ের
হাতেখড়ি, স্পর্শদের মুছে দিয়েছে সময়। আযান থামে।
সূর্য হেলে গেছে পশ্চিমে, চাঁদ ব্যস্ত নিঃসঙ্গতার বিজ্ঞাপনে।

দৃশ্যমান নয় তবুও নীড়ে ফিরে পাখিদল — পথের শেষ দৃশ্য
আঁকছেন কোনো কবি — অবেলায়, লিখছেন কেবল শূন্যতা
প্রশ্ন করো না, কিছু প্রশ্নের উত্তর অজস্র বিস্ময়ের জন্মদাতা
আহত হলে ঢেকে রাখো চোখ, লুকোতে শেখো আবরণে
সান্ত্বনা দাও — কী হবে ইজেলে মিথ্যে রঙ তুলীর সমাবেশে

প্রান্তিক জীবনের এক মুঠো প্রলাপ — তাকে মুছে ফেলো
প্রয়োজনে শিখে নাও পুতুল নাচের সকল আয়োজন।
অবসাদের তর্জমায় নেমে আসতে পারে বিস্ময়কর রাত
ব্রাত্যদের জিপসি হলে মানায়, পেরিয়ে যেতে পারো দূরে

অদ্ভুত সাজে সজ্জিত রাত, ফুরোবার নয় ঘড়ির অস্থিরতা
নির্ঘুম রাত, নির্মোহ নয় একদম, প্রাপ্তির অংক শিখায়
যদিও ভুল অংকেই মিলিয়ে দিচ্ছি জীবনের হিসাব নিকাশ

Wednesday 15 February 2017

সমুদ্র ভ্রমণ

সমুদ্র ভ্রমণ
— ইমেল নাঈম

ফাঁক গলে মিলিয়ে যায় এক চিলতে দুপুর। অর্কেস্ট্রা তোমায় কে বাজায়? ভাত ঘুমের তন্দ্রা কাটিয়ে উঠতে পারিনি এখনো। যদিও মোলায়েম কিছু সুর কানকে জানিয়ে যাচ্ছে শুভ বিকেল। হাতঘড়িটিও অবশ, সেকেন্ডের কাটা আটকে গেছে দৃশ্যমান অদৃশ্য কোনো চিত্রপটে। কল্পনায় আঁকা সন্ধ্যা, চাইলেই উড়িয়ে দিতে পারি গাংচিল।

সন্ধ্যার বুকেও খেলে ফেলা যায় লুকোচুরি। নিজের কাছ থেকে লুকোতে লুকোতে চলে যাই সঙ্গীতের কাছে। সঙ্গীত —  তুমি আমায় আর মোহিত করো না। আবিষ্ট করো না ভুল মানুষকে, ঠিক এইভাবে ইন্দ্রজালে বেঁধো না আর। অন্ধকার ভয় পাই। জানি না, সন্ধ্যার পরের গল্পের সম্মোহনীয় গোপনতা।  পেরিয়ে যাওয়া যায় সিঁড়ি ধরে অনেক পথ। যাবার সময় কেইবা সাজিয়ে রেখেছিলো এই পথ বেলি আর পলাশে।

আমি তো চিনিনা নিজেকেই। কী করে তোমায় চিনবো! অদৃশ্য গল্পের পথে কেনো আঁকছো বৃত্ত। আমি হাটতে হাটতে পেরিয়ে যাচ্ছি উঠোন। গন্তব্যের ইতিটুকু জানি না। অথচ, চলে যেতেই হবে দূর। যেতে যেতে একদিন সমুদ্রের সামনে এসে দাঁড়াবো, আর বুঝে নিবো সঙ্গীতের সকল আয়োজন।

প্রকাশ কালঃ ৩ ফাল্গুন ১৪২৩

Friday 10 February 2017

পর্বতারোহী

"তোমার স্তনে হাত রাখলে মনে হয় যে  একটা
                      ছোট্ট পাখি চেপে ধরেছি মুঠোর ভিতরে
জোরে চেপে ধরলেই ম'রে যাবে – "
– শমসের আনওয়ার

পর্বতারোহী
ইমেল নাঈম

হয়তো পৌঁছে যেতে পারি স্বর্গ উদ্যানে, যেমন করে পেরিয়ে গেছে
সোনাজ্বলা প্রহর। গত রাতের গল্প বলিনি, অলিখিত শব্দ সোপান
ঘিরে ধরেছিলো আমাদের স্পর্শগুলো, অংকের সমীকরণে
বিদ্ধ করে নিচ্ছিল গোলাপের সুবাস আমিও কৃষকের মতো
চাষাবাদ করে নিয়েছিলাম আবাদি আবাসন। প্রান্তিক সুর
থেমে গেছে, সুবহে তারা নির্লজ্জ হলেই ঘেমে যায় সকাল।

তোমাকে পুরোটা চিনি, শরীরের প্রাণীবিদ্যা থেকে মনের রসায়ন...
সবটাই আওতাধীন। পঞ্জিকাবর্ষ উল্টালে সালতামামির জন্ম হয়,
ব্যর্থতার প্রলেপে আটকে পড়া কৌণিক প্রহসন, ত্রিভুজে জন্মানো
যতসব বিক্রিয়া, যেগুলো ভুলেও জায়গা পায়নি রসায়নের বইয়ে।
ঠিক তাদের ভেবেই কাটিয়ে দিলাম সারা রাত – অর্থহীন।

সকাল হলেই আবিষ্কার করি অনুভূতিহীন সময়ের, কোনো পাখি
নেই, যা আছে শক্ত প্রাণ – যা ক্রমশ বড়ো হতে হতে মিশে গেছে।
ক্ষেত্রবিশেষ প্রেম প্রাণহীন হয়, তাতেও প্রেম লুকিয়ে। গতরাতে
পর্বতারোহণ পর্বে কোনো পাখি নয়, একটা বসতির দেখা পেলাম।

Monday 6 February 2017

বখাটে স্পন্দনকে

বখাটে স্পন্দনকে
— ইমেল নাঈম

বখাটে স্পন্দনে মুছে গেছে গল্পকথা
রেখে যাওয়া শ্রান্ত চোখের ঘুমন্ত সুর
থামো... তুমি অন্তত এবার থামো

অবেলায় এভাবে জর্জরিত করো না
অবহেলায়
    অনাদরে
        আঘাতে
আহত করার কোনো মানে নেই।

স্লেটে লেখা শিরোনাম মুছে দিয়েছে
এখানে কোনো চিহ্ন জমা নেই
আর চলতে ফিরতে পেরিয়ে গেছি
অসময়ের বিউগল... ক্রমশ ছুটছি...

ক্যানেস্তারার সুর বাজছে কই?
আমাকে গ্রহণ করো প্রকৃতি
মিশে গেছি ধুলোর আবরণে
আছি জলের কণার নীলাভ সবুজে
আঘাতে তুচ্ছ প্রাণের কী এমন ক্ষতি

বলছি বখাটে স্পন্দন থামো এবার
অতটা আঘাত নিয়ে পেরোতে শিখি নি
ঐকতানে সুর নেই, শ্রান্ত বাতাসে
উড়ে বেড়ায় প্রকাশিত ব্যর্থ প্রণয়।

Saturday 4 February 2017

wrong - সঙ কবিতা

wrong - সঙ কবিতা
ইমেল নাঈম


আপনি বই লিখুন, নাম দিন ঢেকে রাখো প্রকাশিত শূন্যস্থান
গোপন আশীর্বাদে ঠিকই জুটে যাবে সাহিত্য পুরস্কার

বিক্রি বাট্টা নিয়ে ভাববেন না, ওসব আমার মতো
ছায়াহীনরা ভাবে, আপনি লিখুন কতটুকু ঢেকে রাখবো
কতটুকু প্রকাশ করতে হবে। হাসা যাবে তো প্রকাশ্যে?
নাকি নাক মুখ খিঁচে ধৈর্য পরীক্ষায় বসতে হবে,
আমি স্বরগ্রাম বুঝি না, গান-ফান শিখি নি। আড্ডায় স্বর
বেড়ে চলে যায় দশে, এরপর শতে, শত পেরিয়ে হাজারে।

আপনি ঠিক করে দিন, পোশাকের রকমফের
কোন বয়সে কী রকমের পোশাক চলবে, প্রসাধনীর
খবরাখবরও দিয়ে রাখতে পারেন বইয়ের ভাজে
আপনার ফ্যাশন দুস্তর প্রতিভাটা এতদিন কীভাবে
লুকিয়ে রেখেছিলেন। আসলে আপনি পারেনও বটে!

উৎসর্গ পাতায় লিখবেন নবীন, প্রবীণ, সমসাময়িক,
পাতি, খুচরো সব কবির জন্যই এই বই প্রযোজ্য।
কোড অব কন্ডাক্টের উপর আর কেউ লিখে নি আগে

নেক হলো এবার আপনি কবিতা লিখা বাদ দিন,
বরং অন্যকে এথিকস শেখান, নিজের কদ্দুর জানেন
তা মূখ্য বিষয় নয়। বই হোক অন্যের পোশাকআশাক,
আচার ব্যবহারের উপর। কে জানে আরেকটা সাহিত্য
পুরস্কার আপনার জন্য অপেক্ষারত এই উছিলায়...

(বিঃদ্রঃ বিভাস রায় চৌধুরী কবি শ্বেতা চক্রবর্তীর পোশাক নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ স্বরূপ এই কবিতাটা।)

Thursday 2 February 2017

একাকীত্ব


“অবশেষে জেনেছি মানুষ একা !
জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা !"
আবুল হাসান

একাকীত্ব
ইমেল নাঈম

মুহূর্তে হারিয়ে গেলো অনেকগুলো শঙ্খচিল, নোনা জল, শ্রান্ত সাগর পাড়ে
রেখে যাওয়া স্মৃতিচিহ্নে অজস্র গল্প লিখে রেখেছিলাম নাবিক বুকে
বুভুক্ষুর কাছে এসে জেনেছি নিঃসঙ্গতার প্রথম সোপান হিসেবে গিলে নেয়
অপার আনন্দ অশ্রু। দীর্ঘল রাত বারবার ফিরে আসে পিছনের পথে
আর টেনে নেয় সাগরের গভীরে, শান্ত সাগর আর কিচ্ছুটা করে না
শুধু ভাসিয়ে নিয়ে যায় জোয়ার ভাটার সব গণিতকে ভুল প্রমাণ করে।

ভাসতে ভাসতে ভেসে যায় অনেক কিছু, কাছের সব ক্রমশ দূরবর্তী
সিগন্যাল নেই, বাতিঘরের আলো আমায় এখন স্পর্শ করছে না একদমই
ভাসতে ভাসতে ডুবে যাবার প্রস্তুতি হিসাবে সঙ্গীত পাঠ করছি অনবরত
আমি কারণ জানি না, মন্ত্র ভুলে যাওয়া নাম তান্ত্রিক সুরে বেজে ওঠো
হয়তো শেষবারের মতো জপে নিতে পারবো অলিখিত বর্ণন।

মানুষ কী সত্যি একা? একা, তবে কেনো ভাবছি ফুরিয়ে যাবার গল্প
স্মৃতির আলাপনে বুঝলাম একাকীত্ব বলে কোনো শব্দ নেই অভিধানে
মানুষ নিজেকে চিনতে পারে না কোনো কালেই , তবুও সে একা নয়
গভীর বিচ্ছেদের পরেও সে একাকীত্বের ব্যাজ বুকে নিতে পারে না
তাকে ছুঁয়ে যে গভীর ব্যথা, তাকে সঙ্গীহীন করেছে কে? কোথায়? কবে?

ব্যথা কমে গেলে আবার নোঙ্গর ফেলে। আলবাট্রস দেখতে দেখতে
একসময় গাংচিলের সাক্ষাত মিলে জীবনের খাতায় , কবিতার পাতায়...
নিঃসঙ্গ আলাপনের ফাঁকে কী মনলোগে শিহরণ জাগায় নি স্মৃতির বিভ্রম!
মানুষ কখনো একা নয় , কিছু স্পর্শ চুপচাপ তার বুক ঘেঁষে দাঁড়ায়
একটা বুনো ঘ্রাণ তাঁকে ছুঁয়ে থাকে সর্বক্ষণ... মানুষ একা হতে শিখে নি

একাকীত্ব চর্চা করা মানুষের কাছে রয়ে গেছে বকেয়া ঋণ পৃথিবীর...