Tuesday 11 December 2018

অনুভব
ইমেল নাঈম

মুছে দিলাম গোপন ইচ্ছেগুলো
অজস্র কষ্টকে আঁকছি খাতায়
ভুলের বৃত্ত পেরোবো বলে দৌড়ে
গেলাম শুধু— জানা হলো না
এক কক্ষপথ কতবার ঘুরলাম।

মিলিয়ে যাচ্ছে সব দাগ, অনুভব...
অভিমানে কেটে যাচ্ছে পুরো সময়
বেলায়, অবেলায়; অবহেলাই
পরম সত্য হিসেবে সামনে আসে।

অনুভূতিকে মাটি চাপা দিই,
রোজই মিছিল নামে এই শহরে
ছুটছে মানুষ... ছুটছে স্বপ্ন...

হ্যামিলনের বাঁশীওয়ালার মতো
আমাকে নিয়ে যাচ্ছে মূর্ছনায়
নিজেকে নিয়ে ভাবছি না কিছুই
সপে দিচ্ছি পরিস্থিতির কাছে।

পরাজয় নাকি জয়! থাকুক সেটি
তর্কবিতর্কে, অনুভব করছি কেবল
কবিতার চাদরে হারানো একটি মুখ।

Monday 10 December 2018

মুছে দাও— থাকবে না জাগতিক মায়া
প্রচ্ছন্ন আবেশে জড়িয়ে থাকবে শুধু
নিজের জন্য নেই কোনো উপহার
আত্মকেন্দ্রিক মন হলুদ স্বপ্ন গড়তে ব্যস্ত

নির্বাসন লিখে রাখি। পরিকল্পনাহীন
চোখ গেয়ে যায় মরমি গান,
আয়নায় নিজেকে দেখি, থাকে নিশ্চল
এক আহ্বান— উপেক্ষা করতে পারি না।

এইখানে সোনার হরফে লেখা ছিলো,
ছিলো বুকের গভীরে চাপা অভিমান
রাজ্যহীন এক রাজার মতো ছুটে বেড়াই
প্রলেতারিয়া'র মতো ছুটছি শুধু

নিঃস্ব হয়ে ফিরছি
ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি
প্রলেতারিয়া'র জীবনে...

Saturday 8 December 2018

জীবনের সাপলুডু

জীবনের সাপলুডু
ইমেল নাঈম


হঠাৎ থেমে যেতে পারে জীবনের আয়োজন। কথার বাঁকে জমাটবদ্ধ ঋণের বহর। বদলে যাবার মন্ত্রে বদলে যাচ্ছে গোটা শহর। ক্লান্ত অবসাদগ্রস্ত পৃথিবীর জন্য রেখে গেলাম কয়েকগুচ্ছ কবিতা। যেখানে আবেগের তোড়ে ভেসে যাওয়ার গল্প নেই। নেই কোনো প্রতিশ্রুতি। সস্তা কথার পাবলিসিটি নেই। বইয়ের ভাঁজে অদৃশ্য কালিতে দৃষ্টি বিনিময় আছে। আছে মেঘের সাথে প্রণয়ের লুকনো ছাপ।

লুকোচুরিতে পেরিয়ে যাচ্ছে স্বর্ণালি সময়। প্রলেপে ঢেকে দিচ্ছি খসে যাওয়া পলেস্তারা। নির্বাক জীবনের বাঁকে মুহূর্তগুলো দামী হয়। তারা আপন মনে খেলতে থাকে। ধ্বংসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি, ভেসে যায় আমাদের জীবনের ভেলা। স্রোতের সাথে মিলেমিশে যায় যাই, স্পষ্ট কোনো গন্তব্য লেখা নেই। পরিণতি ভাবতে ভাবতে সমূহ বিপদ নিয়ে ভাবা হয়ে ওঠে না কারো। অথচ সাবধানতার খোলসে আটকে ফেলেছিলাম নিজেদের।

চেকপোস্টে প্রহরী, সামনে যাওয়া নিষেধ। আইন অমান্য হলেই সাজা। নিজেকে গিনিপিগ ভেবে বসে থাকি। ঘড়িতে সময় মাপি। দিনের হিসাবে অপরীক্ষিত থাকে সকল আয়োজন। ভেসে যেতে যেতে পেতেছি সংসার— অথৈ সাগর নাকি ধূধূ বেলাভূমি— আজো যাচাই করে উঠতে পারি নি। ঐকতানে সুর নেই, তাল কেটে গেছে খঞ্জনির। উদাত্তকণ্ঠটিও থেমে গেছে অবেলায়।

নিজের জন্য শোকগাথা লিখছি। কাল্পনিক একটা আবেশ ঘিরে রেখেছে আমাকে সবসময়। নিজেকে বেঁধে ফেলছি আর ছুটে চলেছি পায়ে শিকল পরা হাতির মত। প্রজাপতির দিকে চোখ পড়লে নিজেকে অসহায় মনে হয়। কিছুই তো নেই সাথে তবুও গায়ের সাথে লেপটে থাকে অনেককিছু। যেমন একরাশ ধূসর সময়, কিছু মলিন স্মৃতি আর একটা নষ্ট হওয়া ক্যানভাস। আমার তো আর কিছুই নেই তোমাকে দেয়ার...

Thursday 6 December 2018

মনোলগ

মনোলগ
ইমেল নাঈম

সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায় প্রলয়ঙ্করী ঝড়ে
রাতের ক্যানভাসে দৃশ্যত কিছুই নেই
ত্রিভুজ সাইনে ফিরে ভুলের বহর
রক্ষাকবচের জোরে আটকে ফেলি একবৃত্তে
নির্বাসন লিখে রাখছি রু'এ...পালিয়ে যাচ্ছি...

দুর্বোধ্য কিছু সাংকেতিক চিহ্ন, মানে খুঁজতে
বসে পার করে দিচ্ছি দিনের সিংহভাগ
মনোটনাস একটিভিটি, প্যারানরমাল টার্মসে
ফিরে আসছে রিউইন্ড করে আমার কাছে
গর্জন শুনি সাগরের, প্রতিধ্বনি পাহাড়ের।

ছিঁড়ে ফেলেছি যত বাঁধন, প্রশ্ন করছি
না নিজেকে এভাবে। উত্তর খুঁজছি না।
তোমার জন্য নীলপদ্ম...
প্রহসনের পড়ন্ত বিকাল...
দিনের হিসাবের ব্যর্থতা...

দিনশেষে শূন্যতার যাপন হয় বিবর্ণ মনোলগ।

Sunday 2 December 2018

মিউজিক

মিউজিক
ইমেল নাঈম
(উৎসর্গঃ শবরী শর্মারায়)


থেমে যায় হুটহাট— সময় হয় নি যদিও থামবার

শিহরণ মেপে রাখি, সুরেলা সকালের হাতছানিতে
এলভিস নয়, আজ খেলছে অন্য কোনো মুখ

ব্যারিকেডে দিনান্তের প্রাচীর টানা, শূন্যঘরে বিনিদ্র
অবয়বে নস্টালজিক মিউজিক উড়ে বেড়ায়,
এ'ঘরে ও'ঘরে ঘোর জাগানিয়া, মন কেমন করা
একটা রেশ টেনে থেমে গেছে হাওয়াই গিটার।

শূন্যতা...এরপর থেকে শূন্যতার গান গাইছি
পিয়ানোতে ভেসে আসে সকালের নৈঃশব্দ্য
শরত সকাল নিজেই যেন ব্লুজ অ্যান্ড রক
ভিজিয়ে দেয় তোমার চোখ, কপাল, বুক

আত্মসুখে আমিও নীরবে দাঁড়িয়ে থাকি
গিটার নিশ্চল— কেবলই পিয়ানোতে টুংটাং—
গান হয়ে বাজছে দূরবর্তী ভালবাসার সিগন্যাল।

Saturday 1 December 2018

সিস্টেম

সিস্টেম
ইমেল নাঈম

ডার্ক হিউমারে চেপে আসে গোলাপি দুঃখ
লাইক চাই — কমেন্ট হলে আরো ভালো
নারীদেহকে জীববিজ্ঞানের প্রেকটিক্যালে
কাঁটাছেঁড়া করতে বসি সুযোগ পেলেই।

সাইবার সেলের কর্মক্ষমতায় হাসির রোল
চার থেকে ষাট, সবটাই কেবল মাংসপিণ্ড
স্ট্যান্ডার্ড স্ট্যান্ডার্ড খেলায় মুখবইয়ের
অভিযোগের খাতা অজুহাত হয়ে ফেরে।

বুকের পাটা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে বত্রিশ
অহংকারে খেলে যায় আগাগোড়া
সমাজ শেখাচ্ছে অসহিষ্ণুতার পুরাণ,
আইনের হাত লম্বা হয়ে নাগালছাড়া
পঞ্জিকা পালটায় সাড়ে আঠারো মাসে

পত্রিকার কাটতি বাড়ে — মুখবইয়ে আড্ডা
মোমবাতি জ্বলে, কালো পতাকাও ওড়ে।
মধ্যবিকালে নামে মিছিল, অন্যকিছু নয়।

ডার্ক হিউমার মিম, তাতে ছড়ায় দুর্গন্ধ
নারী শত্রু নারীর, পুরুষ ব্যস্ত মাপজোখে
রাস্তায় বাড়ছে কুস্পর্শ — শরীর মাংসপিণ্ড
আর মুখবইতে কিছুদিনের চিৎকার...

কবির কবিতারা ব্যর্থ রোজকার মিছিলে
দিনশেষে শুয়োরেরা গায় মানবতার গান।

Friday 30 November 2018

রোজনামচায়

রোজনামচায়
ইমেল নাঈম

১।
বিচ্ছেদ আঁকা হলে শ্বাশ্বত প্রেমগুলো খসে পড়ে
প্রাচীন দেয়ালের পলেস্তারার মতো, নীরবতা
ছুঁতে চায় আমাদের কাল্পনিক অবসাদ।
অথচ আমরা প্রতিদিন সঙ সাজি নৈঃশব্দ্যে।

২।
পাললিক বিন্যাসের তিনটি স্তরে লুকানো প্রেম
ছুটে চলে চেনাজানা গলিপথ বেয়ে, পরের
তিনটি স্টপেজ পেরোলেই খালি উদ্যান
ত্রিমাত্রিক ডাইমেনশনে শুধু শূন্যতা গায় গান।

৩।
চুপচাপ এঁকে ফেলছি দুর্বোধ্য সব চিত্রশিল্প
অথচ ফাইন আর্টস নিয়ে ধারণা নেই আজো,
নিবেদিত প্রেমের কথা শুনে গেছি আজতক
দেয়াল ঘড়িতে রেখে দিচ্ছি নাগরির উষ্ণতা।

৪।
মুছে যাচ্ছে জীবনের সরল সমীকরণ, প্রান্তিক
মানুষগুলো নিজেদের নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকে
ডান হাত রাখে না বাম হাতের কোনো খবর
বাম অলিন্দের ব্যথা বুঝতে পারেনা ডান
দূরন্ত হিসাবে বেহিসাবি থাকে দৈনিক প্রেম।

৫।
সব শেষ হলে পাখিদের ভাষাও হয় ক্যাকোফনি।

Thursday 29 November 2018

বিভ্রান্তি মাখা প্রেম

বিভ্রান্তি মাখা প্রেম
ইমেল নাঈম 


তবে কী শুধুই বিভ্রান্তি লেখা! কোথাও কী নেই আলো?
ছুটে চলেছি প্রশ্নের পিছনে। উত্তর নিয়ে ভাবি নি।
নিজেকে দাঁড় করাই নি কোনো কাঠগড়ায়,
নীরবতার মানচিত্রে মৌন হয়ে ফিরছি
শব্দহীন মিউজিকে ভেসে আসে দিন বদলের গান।

অনুভব করো গোপন চোখ দিয়ে, তৃতীয় চোখে ভেসে
আসবে চাওয়া-পাওয়ার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সব অংক
মিলবে না অনেক কিছুই, তবু ভ্রান্ত আশ্বাস
দেবে তোমাকে ঝাউ বনের স্নিগ্ধ অনুভব।
অকারণেই তুমি বুঝে নিবে সুখ মানে অন্যকিছু।

মানে খুঁজতে খুঁজতে নিজেকে নিয়ে যাবে ভুল পথে
ঈশ্বরকে প্রশ্ন করতে চাইবে। জায়নামাজজুড়ে
শান্ত এক ফল্গুধারা, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ততম
দিনের সূচনা হবে অস্থিরতার কোরাসে।
মন্দিরে, গির্জার ঘণ্টায় থাকবে শান্তির আহ্বান,

দিনশেষে আমরা ছুটে যাবো এই ঘর থেকে অন্য ঘরে
ঘোরে, মোহে রেখে যাবো প্রেম নামের ব্যর্থতা,
মুছে যাবে সব নাম, আমরা অমরতার লোভে
চাষাবাদ করে যাবো ভুল প্রেমের মন্ত্র।
ইশকুল ঘরের দেয়ালে ঝুলবে কবিতার লাইন

অথচ, সবটাই বিভ্রান্তি মাখা, কোথাও নেই আলো।

Wednesday 28 November 2018

নির্জনতার ক্যানভাসে

নির্জনতার ক্যানভাসে
ইমেল নাঈম


দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছি অন্ধকারাচ্ছন্ন অলিগলি
নম্রতার ব্যাকরণ ভুলেছি— হারিয়েছি অবিধান
ওল্ড টেস্টামেন্টে লেখা নেই কিছু... ধূসর...

মুখের দেশে মূকাভিনয়ের জয়োল্লাস শুনি
ক্লান্তিকর যাত্রায় লিখে রাখছি দিনের পরাজয়
কোমলতা ভুলেছি... আকর্ষণহীন এক স্পর্শকে
উপভোগ করি নির্জনতম একাকীত্বের আসরে

চুপিসারে বদলে যাচ্ছে আমাদের ভাষারীতি
নীতি বাক্যগুলো গেছে পুরনো বইয়ের ভাঁজে
হাহাকার জন্মানো জীবনকে খুঁজে চলেছি—
লাজহীন একটা সত্তা ছুটছে কবিতার মোড়কে

অনন্ত সময়ের হাতেখড়িতে লিখে রাখি নাম
প্রতিদানে মিলে গেছে প্রহসনের সুরের ব্যঞ্জনা
যাত্রা শেষ হয়—
মূর্ছনা থেমে যায়—
বিনয়ের মোড়কে ফিরে আসে কালচে অহংকার

ক্ষতবিক্ষত শরীরে লিখে রাখি পতনের সিম্ফনি
পিয়ানোর সুরে বেজে যায় মন ভাঙা গান
মঞ্চে উপস্থিত সুন্দর মুখের ভিড়ে চুপচাপ
বেরিয়ে আসে শরীরের ম্লান, উষ্কখুষ্ক আবরণ।

Tuesday 27 November 2018

নির্জনতার ক্যানভাসে

নির্জনতার ক্যানভাসে
ইমেল নাঈম


দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছি অন্ধকারাচ্ছন্ন অলিগলি
নম্রতার ব্যাকরণ ভুলেছি— হারিয়েছি অবিধান
ওল্ড টেস্টামেন্টে লেখা নেই কিছু... ধূসর...

মুখের দেশে মূকাভিনয়ের জয়োল্লাস শুনি
ক্লান্তিকর যাত্রায় লিখে রাখছি দিনের পরাজয়
কোমলতা ভুলেছি... আকর্ষণহীন এক স্পর্শকে
উপভোগ করি নির্জনতম একাকীত্বের আসরে

চুপিসারে বদলে যাচ্ছে আমাদের ভাষারীতি
নীতি বাক্যগুলো গেছে পুরনো বইয়ের ভাঁজে
হাহাকার জন্মানো জীবনকে খুঁজে চলেছি—
লাজহীন একটা সত্তা ছুটছে কবিতার মোড়কে

অনন্ত সময়ের হাতেখড়িতে লিখে রাখি নাম
প্রতিদানে মিলে গেছে প্রহসনের সুরের ব্যঞ্জনা
যাত্রা শেষ হয়—
মূর্ছনা থেমে যায়—
বিনয়ের মোড়কে ফিরে আসে কালচে অহংকার

ক্ষতবিক্ষত শরীরে লিখে রাখি পতনের সিম্ফনি
পিয়ানোর সুরে বেজে যায় মন ভাঙা গান
মঞ্চে উপস্থিত সুন্দর মুখের ভিড়ে চুপচাপ
বেরিয়ে আসে শরীরের ম্লান, উষ্কখুষ্ক আবরণ।

Monday 26 November 2018

প্রান্তিক দুঃখবোধ

প্রান্তিক দুঃখবোধ
ইমেল নাঈম


পরম্পরা। নিজেকে নিয়ে লিপিবদ্ধ কবিতাগুলো বিষণ্ণতার বিজ্ঞাপন দেয়। কত সুন্দর, সুশৃঙ্খল অথচ বাস্তব। দূর থেকে দেখলে সাজানো গোছানো। কাছে গেলে মেলে না কিছু। হিসাবের খাতায় কিছু মলিন দাগ, রঙ পেন্সিল অব্যর্থ হয়। স্কেচে ভরে ওঠে প্রাত্যহিক জীবনের হিস্যা। লুকোচুরি খেলে দূরে পালিয়ে যায়। নিজেকে খুঁজে দেখছি অন্তঃ লীন অনুভবে। বিবর্ণ ভালোবাসা ঝরে যায় দূরের ক্যানভাসে।

আঁকছি নিজেকে। প্রতিবিম্ব ঝুলছে দেয়ালে। পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফি আমাকে দেখে অবজ্ঞার হাসি হাসে। বড্ড তির্যক সে হাসি। নির্মাণ করছে অবজ্ঞার অট্টালিকা। মোটের উপরে ঝুলতে থাকে নির্বাক জীবন। মর্মান্তিক জীবনে কিছু ছবি কথা বলে। টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাউ পিছন পথে। মুহূর্ত রঙিন হয়। অথচ প্রাণহীন রঙিন। ফেরি করে চলেছি ব্যক্তিগত দুঃখবোধ। মিছিল নয়, জনসমাবেশ নয়, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য নয় পরিষ্কার। তবু ছুটে চলেছি পিছুপিছু একটা মোহের টানে।

ছুটে চলা মানুষ, কিছু চিহ্ন রেখে দাও আঙুলে। ভুলের প্রাচীর টেনে নিয়ে যায় আমাকে দূরে। কাছের মানুষগুলো গান গায়। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাই। দুর্নিবার আকর্ষণে আমরা ছুটে যাই। মলিন মুখে ক্ষতচিহ্ন আঁকি। রক্তিম সিংহাসনে আঁকা হয় দুঃখবোধ। চুপিসারে পালিয়ে যাচ্ছে, কেবল ছুঁতে চাইছি নিজেকে।

প্রান্তিক জীবনের গল্প মলিন হয়। অনিঃশেষ জীবন, ছুটে চলেছি ভ্রান্ত পথে। বিভ্রান্ত সময়ের গ্যাঁড়াকলে নিজেকে ব্যস্ত রাখি সময়ের দোলাচলে। অনির্বাণ সময়ের সাক্ষী, পিছুটানে মুহূর্তগুলো মনের ক্যানভাসে আঁকা তৈলচিত্রের মতো জ্বলজ্বল করে। ধ্রুপদী হাহাকার বাড়িয়ে দেয় মনের ক্ষুধা। উড়িয়ে চলি নিজের ভিতরের হতাশা। সৌখিন অবসাদে ডুবে গেলে জীবনের মানে বদলে যায়। তাসের রঙয়ের মতো হাতে হাতে ঘুরে। ছুঁড়ে দিলেই বদলে যায় প্রেম, ভালোবাসার মানে...

Saturday 24 November 2018

প্রত্যাবর্তন ও মুহূর্তের গল্প

প্রত্যাবর্তন ও মুহূর্তের গল্প
ইমেল নাঈম

প্রত্যাবর্তনের পথে নিজস্ব কিছু চিহ্ন থাকে। তারা একেবেকে চলে যায় গন্তব্যের দিকে। গৎবাঁধা নিয়মের বাইরে গোপনে দাঁড়ায় অন্যরকম নিয়ম। আইনের ফাঁক সর্বদা অট্টহাসি হাসে। বিনয় মুছে গেলে কিছুই থাকে না অবশিষ্ট। ফাঁকফোকরে বেরিয়ে আসে আসল রূপ। রঙিন পৃথিবী সাদাকালো হয়, মলিন হয়।

পর্দা টেনে দিচ্ছি সম্পর্কের। অভিমানগুলো ক্রমাগত মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। নিজেকে নিয়ে মুঠোয় রাখা কথাগুলো বলা এখনো হেসেখেলে উঠে। জামায় ঢেকে রেখেছি গায়ের ক্ষত। শেষ হয়ে যাচ্ছে নীরবতার সব অধ্যায়। ক্লান্তিকর যাত্রায় জিরিয়ে নেবার সময় নেই। অদৃশ্য ছায়া তাড়া করে ফিরছে সবসময়।

বিষণ্ণতার সব রঙ এক। কথপোকথন শেষে আমরা হিসাব করি, দুরন্ত সময় পেরিয়ে যায় মাটির ক্যানভাস। পলিমাটির তুলিতে আঁকছি বেলেমাটির রঙ দিয়ে। ধ্রুপদী দুঃখদের নিয়ে নতুন কোনটা বাক্য নেই। তাদের ভেবে অভিমানগুলো বৃথাই মন খারাপ করে। অর্থহীন কিছু ইশারার পিছনে ছুটছি।

তামাম সম্পর্ক একদিকে হেলে পড়ে
পাড়হীন নদী এঁকে নিচ্ছে জল রসায়ন
আমি মুসাফির। ক্রমাগত ছুটে চলেছি প্রধান সড়ক দিয়ে। প্রান্তিক মুহূর্তে শেষ বিন্দু দেখার জন্য অপেক্ষায়। প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় দাঁড় করাই এক প্রতিবিম্ব। বালু ঘড়িতে পালটে যায় সময়। বিম্বটিও খসে পড়ে জটিল গাণিতিক হিসাবের শেষে। আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে অপেক্ষমাণ মুহূর্ত।

Wednesday 21 November 2018

একগুচ্ছ নিঃসঙ্গতা

একগুচ্ছ নিঃসঙ্গতা
ইমেল নাঈম

১।
কেউ ফিরে আসে, আবার কেউ চলে যায়
প্রলোভন আটকে ফেলে কোনো এক প্রেমিককে
এরপর অপেক্ষা...সম্মোহনী শক্তিকে পাশ
কাটিয়ে চলে যায় ঘড়ির উল্টো পথে

২।
একোরিয়ামের বিলাসিতা পেট বুঝতে পারে না
শুধুই হিসেব করে— সাদা খাতায় পেন্সিল
দিয়ে আঁকিবুঁকি খেলে, ইরেজারে মুছে দেয়
দাগ মুছে গেলে শুরু হয় সান্ধ্যকালীন ক্লাস
আমি শিখে নিই নিঃসঙ্গতার শৈল্পিক অনুরণন।

৩।
পথে নামতে অনীহা। তবু তুচ্ছ কিছু শব্দের
কাছে নতজানু হয়ে থাকি, ঘাড় নিচু, শব্দহীন
আকাশ বদলে গেছে, মেঘ জমছে তুলোর মতো
ভ্যাঁপসা গরমে টলমল করছে শিরা উপশিরা
হাতঘড়িতে সময় মাপছি জীবনের দামে।

৪।
পালটে যাওয়ার সহজ সূত্রগুলো আওড়াই
গাণিতিক বিন্যাসে রেখাপার করি একাকীত্ব
ক্যালকুলেটরে হিসেব করে ফেলি অবসর
নীরবে সহবস্থান ছেড়ে সরে যায় দূরে,
পথে ঝরেছে পারিজাত, ইরানি জাফরান...

৫।
নিঃসঙ্গতা পড়া শেষে বাকি থাকে আরো
এক অধ্যায়— যা আগাগোড়া মোড়ানো
থাকে সাসপেন্স আর অজানা শিহরণে।
বরাবরই অধ্যায়টি অপঠিত থেকে যায়...

Tuesday 20 November 2018

কবিতা

কবিতা
ইমেল নাঈম

অনেক দিন কেটে গেছে, প্রাচীর টেনেছি সম্পর্কে।
রুক্ষতা আঁকা শেষ হতে বিষণ্ণ ময়ূরকণ্ঠী ভাসে
জলটুকু এঁকে নিচ্ছে কবি তার কবিতায়
তার উপর কল্পনায় ভাসিয়ে দিচ্ছে পানকৌড়ি
মাছরাঙার আহার দৃশ্য, মাছের লুকোচুরি খেলা

বিমূর্ত ব্যাপারগুলো পানসে হয়ে ওঠে একলহমায়
একলব্য ঐকতান, উড্ডীন বেদুইন পাখির ঝাঁক,
নিজেকে নিয়ম করে ব্যবচ্ছেদ করা হয় না আর
এখানে গা ভাসিয়ে দিচ্ছি হাওয়ার অনুকূলে
এভাবে ভাসতে ভাসতে মিলে যেতেও পারে নীড়

অভ্যস্ত কবিতার বাঁকে কিছু মরীচিকা প্রলোভন
হাতছানি দিয়ে ডাকে ধ্রুপদী সংগীতের আহ্বানে
সাড়া দিতে গিয়েও পিছুটানে ফিরছি বারবার
পিছুটানে আটকে ফেলেছি, সময় আটকে গেছে
নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হবার মন্ত্রে ভুলে যাচ্ছি সব

হলদে সোডিয়াম নগরীতে মফস্বলি ঘ্রাণ আসে,
আকাশছোঁয়া অট্টালিকার পাশে বসিয়ে দিই
টিনশেডের ঘর, কাল্পনিক বিন্যাসে অম্লান সব
সব হারানোর মিছিলে অনেক কিছুই জুড়ি
সব মিলাতে গিয়ে দেখি এক গভীর অমানিশা
হা করে তাকিয়ে আছে গিলে খাবার জন্য...

বিমূর্ত অঙ্গিকার

বিমূর্ত অঙ্গিকার
ইমেল নাঈম

বিমূর্ত রাত ডেকে চলে নীরবতার হুইসিলে। শুনশান শহর। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার আপ্রাণ চেষ্টা। প্রচেষ্টাগুলো দামী হয় খুব। নিজেকে নিয়ে গল্পকথা শুনি খুব। প্রাত্যহিক জীবনে ডাকাডাকি আর তার বিনিময়ে হেসে ওঠে প্রাগৈতিহাসিক মুহূর্ত। রূপরেখা নেই, শুধুই উড়ে যায়। অভিযোগের তিরগুলো আহত করে। বোকার হাসি হেসে জানিয়ে যায় আমার অবস্থান।

দিনের হিসেবে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ততার মন্ত্র পাঠ করি। নির্বাক শব্দের কাছে ফিরে যাই অন্ধ ঘোড়সওয়ার হিসেবে। তাসের রঙ খেলে যায় দিনান্তের সুরে, দাবার মন্ত্রী নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকে। হাহাকার খেলে যায় আভিজাতিক সত্তায়। মুসাফিরের মতো ছুটে চলি এই দরজা থেকে অন্য দরজায়। আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখে ঘাবড়ে গেছি, অচেনা হতে হতে হারিয়ে ফেলেছি ঠিকানা।

দুঃখদের নাম জানা নেই, তারা পাপারাজ্জির মতো পিছনে ছুটে চলে। নীরব থেকে অনুসরণ করে। গোপনে তুলে রাখে আমার ব্যক্তিগত সুখ। আনন্দের রঙগুলো শুষে নেয়, বিনিময়ে লিখে রাখে চুলচেরা বিশ্লেষণ। পাপের পাহাড়, বোঝাগুলো আষ্টেপিষ্টে আকটে ফেলে আমাকে। নড়চড়হীন একটা পৃথিবী ঘোর অন্ধকারে আমায় ডেকে চলেছে মহাজাগতিক শূন্যতায়।

নির্বাক জীবনের গণিতে কেবলই পরাজয় লিখে রাখে। ছুটে যেতে থাকি দূরের পথে। উইন্ড-চাইমে আসা হাওয়াদের গল্প শুনি, ভিজিয়ে দিয়ে যায় আমার উঠোন, উষ্ণতায় ভিজে গেছে দূরের ক্যানভাস। রঙতুলিতে জমাটবদ্ধ প্রহসন। স্পর্শ ভুলে যাওয়া শরীরে এঁকে নিচ্ছো দুইশ বছরের দুঃখ। প্রান্তিক জীবন ডেকে চলে দূরের কক্ষপথে ছায়াদের মিছিলে।


Sunday 18 November 2018

মেয়াদ উত্তীর্ণ মেডিসিন

মেয়াদ উর্ত্তীণ মেডিসিন
ইমেল নাঈম

ভুলে গেছি— মনে রাখি না অনেককিছুই
হাহাকারে পুড়েছে আমার যাপিত জীবন
আস্তানা ছেড়েছে মধ্য দুপুরের দুঃখ
বিবর্ণ বুকে নীরবতা লিখছি আনমনে,
ভুল প্রাচীরের পলেস্তারা খসে যায় শুধু।

প্রচারণার বাইরে অন্য এক জীবন ডাকে
প্রতি পরতে লিপিবদ্ধ মৌন দুঃখমালা
নীরবতাকে মিলিয়ে নিচ্ছি কবিতায়—
ডায়রিতে অবহেলার ধুলো, মোবাইল
স্ক্রিনে হাহুতাশ, কিবোর্ড থামে অবেলায়
জীবন মানে দাঁড়ায় বিষণ্ণ রূপক,

রূপকথায় আটকে ফেলেছি নিজেকে
প্রাচীরে খোদাই করা বাক্য, যোগ অংক
শ্যাওলা জমা ইটের সলিং, কুয়াশা
ভেজা পিচ্ছিল পথ, রূপকের ভিড়ে
নির্মম সত্য উঁকি দেয়— পরীক্ষা করে

নৈতিকতার পাঠ চুকেছে অনেক দিন
এরপরও গিলাফ জড়ানো বই রেখে
যাও সামনে— খুলে দেখি নি, ভিতরটা
আজো বুঝতে পারি নি, মন মাজারে
অবহেলার পাপপুণ্যর হিসাব করি শুধু

প্রাপ্তিফলে অবহেলার স্তূপ জমেছে
মেয়াদ উত্তীর্ণ মেডিসিনে।

Friday 16 November 2018

ভুলের মাশুল

ভুলের মাশুল
ইমেল নাঈম

হাওয়া বদলে যায়, হয় ঋতুর পরিবর্তন
কোনো ভুলের মাশুল বুকে চেপে অপেক্ষায়,
কার্নিশে জমেছে ধুলো, অপেক্ষমাণ শব্দের
পরে বসে থাকি অন্যের স্মৃতির পাতায়।

নিজের জন্য সময়গুলোকে ছুটি দিয়ে দিই
প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় রোজকার অভিনয়ের,
হাঁপিয়ে যাচ্ছি— ক্লান্তিহীন ছুটে চলায়
নিজেকে প্রশ্ন করছি, উত্তর খুঁজছি কেবল

গতজন্মের পাপের হিসেব করি, আজন্ম
ভুলের মানুষ, মাশুল দিতে দিতে ব্যস্ত সময়
পার করি, ভাবি— অর্থহীন সময়ের মূল্য...

ভাবলেশহীন মুহূর্তের কাছে পেতেছি ঋণ,
আক্রমণ প্রতি আক্রমণে বদলেছে দিনকাল
করিডোরে পায়ের ছাপ দেখে আতঙ্কিত
নিজেকে তুচ্ছ ভেবে হীনমন্যতায় ভুগছি

শুধরে নেওয়ার পালা, আমার অতর্কিতে
ঢুকে পড়া ভদ্র মানুষের আবাসে, দক্ষিণা
জানালায় ঘোরলাগা বাতাসে ঋণপত্র লিখি
নিজেকে হারানোর পরে বাকি নেই কিছু।

মিছিলে মিছিলে লিখি অচ্ছুতদের হারমনি
সর্বহারার গান গাই— আঙিনায় আঙিনায়।

Thursday 15 November 2018

দুঃখ বিতান

দুঃখ বিতান
ইমেল নাঈম

প্রত্যাবর্তনের গন্ধ গায়ে লেগে থাকে। অপেক্ষা...উপেক্ষা...
পেরিয়ে যাওয়া শহুরে জ্যাম, তার বিবরণীতে ঘুরেফিরে
উড়ে আসে একই কথা। এলফেবেটিক্যাল বিন্যাস নয়,
এখানে লিপিবদ্ধ যা কিছু তার সবটাই প্রাগৈতিহাসিক।

প্রহসনগুলো শুনেছি এমনই হয়, রঙ মাখানো আবরণে...
সত্য নয়, ঢেকে রাখি মায়াবী মিথ্যেগুলো, সলতে আলোয়
ঢাকা পড়ে যায় পুরনো সবকিছু। স্মৃতি হাতড়ে দেখি
মুসাফিরজীবন চলে যায় হেঁটে রাস্তা ধরে দূরে বহুদূরে।

আমাদের জীবন সর্বোচ্চ এক হাজার টাকার প্রাইজবন্ড
নিজের জন্য ব্যস্ত সময় কাটাই, পৃথিবী হলো সরাইখানা।
নিজ ঘরেই নিচ্ছি অবসর, অবকাশ শেষে কিছুই থাকেনা
নিজের মতো, সাজিয়েগুছিয়ে নিচ্ছি নিজস্ব মালামাল...

প্রতারক সময়ের কাছে ধর্না দিই, হারাচ্ছে সুখসমগ্র
ভরছে প্রতিটি পাতা দুঃখদের খণ্ডকালীন আসাযাওয়ায়
সুনিপুণ সম্পর্কগুলো দেখি নিজেকে মাপছে নিক্তিতে
আজ তারা পাকা জহুরি, সবটুকুই মেপে নিবে নির্ভুল।

দুঃখদের সমাবর্তনে দেখি অসুখী মুখেরা অভিনয়ে ব্যস্ত
ক্রমশ আলাদা হয়ে পড়ি তাদের থেকে। মূকাভিনতা নই,
গড়েছি দুঃখ বিতান, নিজেকে স্বল্প মূল্যে বেচবো বলে।

Wednesday 14 November 2018

স্বেচ্ছা নিঃসঙ্গতা

স্বেচ্ছা নিঃসঙ্গতা
ইমেল নাঈম

লারেলাপ্পার মতো ছুটে চলা, খেলাচ্ছলে
হারিয়ে ফেলছি নিজের সবটুকু
ভুলের মাশুল গায়ে চাপিয়ে ছুটছি
চলছে মুঠোমুঠো প্রেম আর চোখভর্তি
নিঃসঙ্গতার পাশাপাশি একান্ত সমাবেশ —

গল্পের মতো হারিয়ে ফেলেছি প্লটগুলো
নায়ক নায়িকার ভিড়ে পার্শ্বচরিত্রটিও
মুখ্য হয়ে ওঠে। আর; প্রান্তিক সংলাপে
মুখরিত হয়ে উঠে আমাদের মুখোশ।
বলে, শব্দ নয়, প্রতীক্ষা নয়, শুধুই
আস্ফালন... আর ব্যর্থতার মন্ত্রবিলাপ।

হেঁটে যাওয়া হয় রোজ, মখমলে ঘাস
পেরিয়ে যেতে যেতে আয়োজন করি
একাকীত্বের, ব্যস্ত সড়কে ব্যস্ত ফুটপাতের
মানুষগুলো একেকটি নিঃসঙ্গতার বিজ্ঞাপন
প্রেমিকার প্লাস্টিক হাসি দেখে বিমর্ষ হই
প্রেমিকের চোখজুড়ে থাকে নীল প্রতারণা।

মন যাপনের মুহূর্তগুলো বন্দী সিগারেটে
প্রতি ধোঁয়ায় উড়ে যায় চলমান দুঃখবোধ
ক্রমাগত শূন্য হয় ফুসফুস, বেরিয়ে আসে
ভিতরের হতাশাগুলো, কিছুটা সময়
নিজেকে বিক্রি করে দিই স্মৃতির কোলাজে

বদলে যাওয়া মানুষগুলোকে মমি করে
রাখি বুকের বাঁপাশে, নিঃসঙ্গতার সমান্তরালে।

মৌন বেলা

মৌন বেলা
ইমেল নাঈম

পেরিয়ে যাচ্ছে মৌন বেলা। রকমারি আয়োজন। জমাটবদ্ধ কিছু শিহরণ। শীতকালীন অবকাশের পর নেমে আসে বৃষ্টি। উপচে পড়া গল্প, আর সারিবদ্ধ আনন্দের মাঝে গোপনে লুকোনো কিছু হরিত সকাল। মলিনতা ছুঁতে পারেনি আমাদের। সাতসকালের নাগরিক শীত। কোথাও তো থেমে যেতে হয়। শহর প্রাণহীন। শীতে কাবু হয়নি এখনো। এরই মধ্যে মিথলজির আবরণে আসবে নতুন কিছু উপাদান।

উড়ে যাচ্ছে সকল হিসাবনিকাশকে তুচ্ছ করে। নিষেধের বাধাকে এড়িয়ে দিয়ে, সামগ্রিক পরিস্থিতিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে তফাৎ করে দিয়ে। অথচ পরিচয়ের প্রথম অধ্যায়ের শেষ পরিচ্ছেদটা অন্যরকম। মনকেমনিয়া সুরে ভিজে যায় গত শতাব্দীর সকল শোকসংগীত। অলস চার্চের গ্রেভ-ইয়ার্ডে কিছুটা নির্জনতা কেনা যায়। তবুও পরাজিত সাজতে হয় নতুন অধ্যায়ের পাঠের পূর্বে। জয় পরাজয়ের এই খেলা আপেক্ষিক। নিজেকে নিয়ে পেরিয়ে যায় ভাবনার মেঘ।

বিভ্রান্ত সময়ের পাড়ি দিই। আস্থার জায়গা নেই। নিজেকে খুঁজে যাই। ব্যস্ত সময়ের রুটিনে ঘড়ি জীবন। সময়ের কাঁটা বদলে যায়। চাওয়া পাওয়ার হিসেব বদলে যায়। মুহূর্তগুলো রঙিন হয়। ধ্রুপদী সংগীতের আয়োজনে বিমূর্ত কিছু শব্দের কাছে ছুটে চলি। নির্বাক চলচ্চিত্র। মূকাভিনয়ের শেষ পরিচ্ছেদে আটকে ফেলি জাগতিক জীবনের লাল নীল নকশায়। আর ভাবি, জীবনের রঙগুলো কেমন করে বদলে যাচ্ছে।

অজস্র গল্পের ভিড়ে ঠিক ঠাহর করতে পারিনা। সত্য-মিথ্যার কুণ্ডলী পাকায়। আর নিজেকে নিয়ে মুহূর্তগুলো উড়ে যায় ন্যাপথালিনের মতো। গল্পের বইয়ের ভাঁজে গচ্ছিত শিশু গোলাপটিও মলিন হয়, শুকিয়ে মর্মর হয়। প্রাপ্তির খাতায় ঋণ বাড়ে। নিজেকে নিয়ে গল্পের শেষটুকু লিখতে হয়। দূরত্বের নিরূপণে কিছু সময় থাকে একান্ত ব্যক্তিগত— যা শুধু নিজের সাথে নিজের কথোপকথন করে যায়।

ভুল বিক্রিয়া...

ভুল বিক্রিয়া... 
ইমেল নাঈম

সময়ের আলাপনে দিগভ্রান্ত হই। সুর কেটে যাওয়া কোনও গানের কলি এসে কানে জানিয়ে যায় ভুল ঋতুর সন্নিবেশের কথা। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ততার মন্ত্র পড়ি, ঘড়ির কাঁটায় মেপে নিচ্ছি দুপুরের একাকীত্ব। খোলা জানালায় দৃষ্টি, মেঘ নেই, ফকফকা আকাশ, তবুও বিষণ্ণতা। গণতান্ত্রিক দুঃখগুলো বিরোধী দলের মতো— মিটিং, মিছিল, আল্টিমেটাম আর হুশিয়ারি জানিয়ে যায় জীবনের গাড় অধ্যায়ের বাঁকে।

সংলাপ, নাকি আত্মসমর্পণ। বারবার চুপসে যাই। মায়া জাগানিয়া শব্দের কাছে অভিমান জানাই। আয়নার ওই পাশের মানুষটাকে দেখে গালি দিই। ব্রিগেড ছুটে বুকের ভিতরে। সমাজতান্ত্রিক দাবিদাওয়া বুকে। সুখের মন্ত্র শিখি স্বৈরশাসকের কাছ থেকে। পুরনো মুখগুলোকে এঁকে ফেলি মোবাইল অ্যাপে। এরপরে রেখে দিই গোপন কুটিরে। পাসওয়ার্ড দিয়ে আটকে দিই, ব্যথাগুলো আমারই থাকুক।

বৈদ্যুতিক আবেশের দরকার নেই। পজিটিভ নেগেটিভের সন্নিবেশ না হোক আগের বারের মতো। সেগুলোকে সাজিয়ে রাখছি বুক সেলফে, রেকে তুলে রাখছি। কর্পূর দিয়ে অবহেলাগুলোকে যত্ন করে রাখছি। সপ্তাহে দুইদিন ঝেড়ে মুছে নিচ্ছি। রাতে ঘুম না এলে, খুলে দেখছি তাদের। ভালোবাসাগুলোর বিপরীতে কী দাঁড়ায়— অবহেলা নাকি ঘৃণা। এই সহজ সমীকরণটুকু বুঝতে পারছি না।

কত সহজে দ্বিতীয় পক্ষ মিলিয়ে নিয়েছিলো জটিল সব হিসেব। ভালোবাসার প্রথম পাঠেই দেখলাম বনসাই বৃক্ষ আর ইকেবানার বাণিজ্যিক সমাহার। অলংকারে ভরে গিয়েছিলো ভালোবাসার ঘর। আকাশ দেখতে অলিখিত নিষেধ এই ভালোবাসার, হাঁপিয়ে উঠছিলো পাখি মন। মুক্তির সংজ্ঞায় ইতিহাসের বইয়ে যা কিছু লিপিবদ্ধ তার পুরোটাই প্রহসন।

আমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছি, পেরিয়ে যাচ্ছি সব রাস্তাঘাট। সুসজ্জিত দুঃখরা সঙ্গ দিচ্ছে। আমি বুঝে নিচ্ছি ভালোবাসার নীল মোহর— প্রভাবকের ভুল বিক্রিয়ায় যে কখনো মিলিত হয়নি কাঙ্ক্ষিত বিন্দুতে।

Sunday 11 November 2018

একগুচ্ছ কোরাস

একগুচ্ছ কোরাস
ইমেল নাঈম

১।
বিক্রি করে দিচ্ছি নিজেকে,
মানে নেই করেও এড়িয়ে যাচ্ছি খুব
অপ্রাপ্তির খাতায় এখনো বিষণ্ণতা
উঁকি দিয়ে যায় পলাতক সাইরেনে।

২।
এড়িয়ে যেতে যেতে অচেনা হবো
একদিন থাকবে না কারো পদচিহ্ন
জীবনের রঙধনু রঙ মলিন হয়ে
ঝুলবে শুধু চিত্রাঙ্কন খাতায়

৩।
থেমে যাচ্ছি আবার দৌড়াচ্ছি...
হাঁপাচ্ছি কিন্তু গন্তব্য পাচ্ছি না খুঁজে
অদ্ভুত একটা চক্রযাপনে আটকে
ফেলেছি নিজেকে, শেষ দেখবো
বলে দৌড়াচ্ছি শুধু একই চক্রব্যূহে।

৪।
নীরবতাও একটা ভাষা, কথা বলে
সে ধ্রুপদী সংগীতের মতো, ঈজেলে
আঁকা ছবির মতো সেও প্রাণবন্ত
প্রেমিকের হৃদয় ভাঙলে পরিপূর্ণতা
পায়, শেষ হয় ভাষা শিক্ষার ক্লাস।

৫।
প্রেমিক হবো বলে এখনো অপেক্ষায়...
মুখ শীতের সকালের চেয়েও রুক্ষ
নিজেকে প্রেমিক ভাবছো, অথচ
জীবন গাইছে নিঃসঙ্গতার কোরাস।

Saturday 10 November 2018

নিলাম

ছুটে চলার মন্ত্রটুকু আওড়ে নিই সবার অলক্ষ্যে
দোদুল্যমান দশার পুণরাবৃত্তি দেখছি শুধু
প্রান্তিক দৃশ্যপট মলিন হয়ে ওঠে

কিছু শিহরণ মুকুলে ঝরে যায় অকাল বাতাসে
তেজহীন পৃথিবীকে কিনে ফেলছি পেট্রোডলারে
বখে যাওয়া মানুষগুলোর হাসি জানান
দেয়— নাগরিক বিষণ্ণতা।

উপড়ে ফেলেছি শিকড়, শিখরে যাবার অদম্য
ইচ্ছেটাও ইঁচড়েপাকা অনুভব নিয়ে পালায়
নাগরিক রাজপথ শীতের বৃষ্টিতে ভিজে
অদৃশ্য কালিতে লিখে ফেলে নৈসর্গিক কালিমা

রাত বাড়লে হাসি নির্জনতাকে আবিষ্কার করে
ভুল বৃত্তে ঘুরেফিরে আসি শুরুর বিন্দুতে
নির্বাক শব্দের শেষে প্রহসনের মুহূর্ত
জেগে থাকে একক সঙ্গি হয়ে।

নিথর হয় প্রকৃতি। আটকে যায় মধ্যবিত্তের
ঘড়ি— অসহায়ত্বের মাপকাঠিতে
নিজেকে তুলে দিই বেনামী নিলামে।

Friday 9 November 2018

গালগল্প

গালগল্প
ইমেল নাঈম

দিনের শেষে কাল্পনিক গল্পের আনাগোনা হয়
ভুলের পাহাড় চেপে উড়ে যেতে পারে
আমাদের দৈনন্দিন দুঃখের চাষাবাদ
বিনিময়ে কিছুই থাকছে না হাতের মুঠোয়।

প্রাঞ্জল কিছু অনুভূতি ব্যর্থ হয়ে ফিরছে,
গোল্ডফিশের মত স্মরণশক্তি, ভুলে যাচ্ছি
হিসেবের বাইরের যাবতীয় হিসাবনিকাশ
স্বল্প স্বল্প করে রুদ্ধ করে ফেলছি নিজেকে

পাহাড়ের রুক্ষ্মতা পড়া হয় নি আমার
নীলাভ আকাশকে এখনো চেনা হয় নি
নীরবতার ভাষা বুঝতে বুঝতে ভুলে
যাচ্ছি চেনাজানা ভাষা, চোখের ব্যাকরণ।

কম্পাসে আঁকছি, শূন্যতার বৃত্ত। দূরবর্তী
মাস্তুলের আলোর চিহ্নকে মুখস্থ করছি
বিষণ্ণতার ভাষাকে আয়ত্ত্ব করার জন্য
রাতদিন বসে থাকি, বিবর্ণ মুখের ইশারায়।

বিবরণে লিখে রাখছি নির্বাক কিছু প্রহসন
চুপিসারে একানে ওকানে রটে যায় গালগল্প।

Thursday 8 November 2018

ব্যক্তিগত কড়চা

ব্যক্তিগত কড়চা
ইমেল নাঈম

ভাবতে ভাবতে কেটে গেলো বেলা, থেমে যাবার
আগে একবার দেখো ডানে-বামে
আত্মবিশ্বাস না থাকলে পা চালিয়ো না
বরং অপেক্ষা করো, একটু ভিড় কমুক
আর তখনই না হয় পেরিয়ে যাবে দৃষ্টিসীমা

আমি মুগ্ধ দর্শক, সার্কাস ভেবে বসে পড়েছি
ভুল করে, তোমাকে দেখে আটকেছে মনোজগৎ
আর সবকিছু তুচ্ছ, ব্যস্ততার বিজ্ঞাপনে
একদণ্ড স্বস্তি নেই, শুধুই প্রচার প্রচারণা...
স্পষ্ট যা কিছু ক্রমাগত ঝাপসা হয়ে আসছে।

ফোকাল পয়েন্ট থেকে সরে যাচ্ছে মনোযোগ
আর শূন্যস্থানে জায়গা করে নিচ্ছে অন্যকিছু
ট্রাফিক সিগন্যালে আটকেছে যানবাহন
রাস্তা পারের বিশাল ভ্রমণ শেষ করলে তুমিও

নিষিক্ত অনুভবে শুষ্কতা মাপছি অবেলায়
দক্ষতার মাপকাঠিতে অপরিপক্ব খেলোয়াড়
নিজেকে নিয়ে উঁচুদরের ভাবনা নেই
দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আপাতত কাজ নেই
প্রতীক্ষা নেই, কল্পনা নেই, সবই নিরুত্তাপ...

আমাদের ব্যক্তিগত পরিভ্রমণে কেউ কাউকে
অতিক্রম করে যাই নি, দুজনেই ছুটছি
ভিন্ন কোনো কক্ষপথে, ব্লু মুনের মতো
দীর্ঘ অপেক্ষার পরে পাশাপাশি এসে দাঁড়াই,

দেখা হয় আমাদের অল্প কিছু মুহূর্তের জন্য
আর ভাবি, হরিত বিষণ্ণতাও কত সুন্দর!

Monday 5 November 2018

কনফেসন

কনফেসন
ইমেল নাঈম

চুপচাপ পেরিয়ে যাচ্ছে সময়। পাঁচিল টপকালে অবশিষ্ট কিছুই থাকে না আমার। বারোয়ারি মেঘ উড়ে যায় শরৎ আকাশে। নির্বাক কিছু দৃশ্যের জন্য অপেক্ষমান। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, কাছের মানুষগুলো দূরত্ব শিখে নিচ্ছে। গোপন, সূক্ষ্ম দৃষ্টিগুলো মুছে যাচ্ছে দ্রুত।

আঁচলে ঢেকে যায় মুখ। কোথাও রেখে দিচ্ছি পুরনো স্মৃতি। বিভ্রমে ঢেকে যায় চোখ। অচেনা পথ পাড়ি দিচ্ছি শুধু। নিজেকে নিয়ে আর কোনো প্রত্যাশা নেই। কাল্পনিক হিসাবগুলো ধ্রুব সত্য হয়ে উঠছে। প্রতিদিন পেরিয়ে যাচ্ছি নিজের আঙিনা।

সুর থেমে যায়। প্রাচীন কিছু বাক্যের কাছে গচ্ছিত অনেক ঋণ। প্রাপ্তি বাড়লে বিনিময়ে কিছুই নেই। নিজেকে নিয়ে বাস্তুসংস্থান, চক্রাকারে ঘুরতে থাকে পারম্পরিক গল্পের প্লট। সুরের পাখিরা থেমে যায়। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সময়সূচি, এরবেশি প্রত্যাশা নেই।

বালু ঘড়িতে পেরিয়ে যাচ্ছে সময়। ভাবনার প্রলেপে রেখে দিচ্ছি শোকসভা। ভিতরের মানুষটার সাথে প্রত্যহ কথা হয়, সঙ্গোপনে কেটে যায় মৌন বেলা। হাতের ভাঁজে কথিত গল্পে থাকে অপ্রকাশিত ভালবাসা। বেজে ওঠে অপেরার সেক্সোফোন। গাইতে থাকি, ওয়ান ডে উই উইল মিট এগেইন, মাই ডিয়ার লাভ... ওয়ান ডে উই উইল মিট....

Sunday 4 November 2018

জলীয়বাষ্প

জলীয়বাষ্প
ইমেল নাঈম

থমকে যাওয়া দেখছি রোজ,
অকারণে ছুটে বেড়াই অন্ধ-গলি
নিজেকে বসিয়ে রাখি দাঁড়িপাল্লায়
গাণিতিক মিটারে বাড়ে রেট,
মুছে দিচ্ছি গ্রীবা, কপাল, চোখ...

নির্বাসনের শেষ অধ্যায় অচেনা
সাজেশনের চোরাগলিতে হারায়
অনেক মুখ, ঘুড়ির মতো ওড়ে
জীবনের মানে বদলে যায় শুধু

নিত্য জীবনের নান্দনিক আবেশে
মেপে নিচ্ছি চোখের ব্যাকরণ
ব্যঞ্জনা মুছে যায়— অপ্রাপ্তির মিছিল
পেরিয়ে যাচ্ছে তোমার উঠোন

রাখি না খোঁজ রোজকার কাটাকাটির
খেলার ফলাফল। জানি, একা হলে
প্রাপ্তির খাতায় কিছুই থাকে না।
স্মৃতিরাও বিট্রে করে, বিভ্রমে
মুছে নিতে হয় বুকের জলীয়বাষ্প।

Saturday 3 November 2018

নভেম্বর রেইন

নভেম্বর রেইন
ইমেল নাঈম

নভেম্বর রেইন, একটা কিশোরের নায়ক হবার গল্প মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সময়। পরিত্যক্ত গির্জা, সামনে গিটার হাতে স্ল্যাশ... সাধারণ একটা দৃশ্য গভীরে ছাপ ফেলে দিয়েছিলো নব্বইয়ের মাঝামাঝিতে। যদিও ঘরে ফিতার ক্যাসেটে বেজে উঠতো ওয়ারফেইজ, সঞ্জয় কামরান। আমার দৌড় ছিলো জাস্ট এটুকুই।

অনুভুতির দালানে অনেক প্রলেপ পড়েছে। আস্তরে আস্তরে পেরিয়ে গেছে সময়। পুরোনোদের ভিড়ে নতুনরা এসে বেঁধেছে বাসা। ক্যাসেট বদলেছে সিডিতে, প্রযুক্তির কল্যাণে সেও এখন জাদুঘরে। অথচ কৈশোরের প্রথম স্মৃতি দগ্ধ করে যায় প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্ত।

হারিয়ে ফেলা অনেক কিছুই খুঁজতে থাকি। কল্পনায় বাসা বাঁধি, সুরেলা মুহূর্তগুলো বেজে ওঠে। নীরবতাকে আঁকড়ে ধরি। স্পন্দন এঁকে যায়। নদীর মতো এঁকেবেকে চলে যায় অসীমে। শূন্যতায় আঁকা আমার নভেম্বর। হেমন্তের বৃষ্টি, মোটেও নয় চিত্তাকর্ষক।

তবুও, আসে। বেজে ওঠে। নাগরিক পথঘাট ভিজিয়ে দেয়। আমি ভাবতে বসি হারিয়ে ফেলা কতকিছুর মাঝে কী কী জিনিস আজো অম্লান তাকিয়ে আছে। শিহরণ মুছে যায়। পালটে যায় রীতিনীতি। মোহ কাটিয়ে উঠার ব্যর্থ চেষ্টা করি।

বিমূর্ত কিছু অবয়ব, যা শুধুই কাল্পনিক। এখনও বৃষ্টি নামে আমার শহরে। অথচ, নভেম্বর রেইনে কোনও বৃষ্টি ছিলো না। অপেরার মেয়েদের কোরাস ছিলো সেইসাথে রোজের পিয়ানোর মূর্ছনা ছিলো। এসবে, ঈশ্বরকে খুব কাছ থেকে দেখা হয়ে যায় আমার। আমি জন্মান্তর লিখে ফেলি ভুল বানানে।

Thursday 1 November 2018

বিবর্তন

বিবর্তন
ইমেল নাঈম

রোজকার আয়োজনে চুইয়ে পড়ছে নীরবতা
ঢেকে দিচ্ছি দুঃখসমগ্র, আহ্বান মুছে যাচ্ছে...
রেখে দিচ্ছি, পালিয়ে যাচ্ছে অনিচ্ছুক সত্তা

উপচে পড়ছে ট্রিক অর ট্রিপের ভাঁজে লেখা
সকল বিষয়াদি নিয়েই তলিয়ে যাচ্ছি শুধু
প্রতিবিম্ব দেখে নিজেকে অচেনা লাগছে
টেম্পল রান গেমের মতো পালাচ্ছি কেবল।

নিজেকে আবিষ্কার করতে পারছিনা একটুও
ছুটে চলছি এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে
দৌড়ে চলেছি ক্লান্তিহীন, মুখাবয়বগুলো
ধূসর হয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত, নির্মল ক্রোধে।

শুরু থেকে থেমে যাওয়ার হুইসিল শুনি
সাময়িক কিছু গল্পের কাছে ধর্না দিচ্ছি
প্রাপ্তিফলের গল্পগুলো অমূলক সুরে হাসে

ইদানীং নিজেকে আয়নায় দেখা হয় না
পাপবোধ ঢেকে রাখছে আমার চারপাশ
নিষিদ্ধ আবেশটুকু মূল্যবান হয়ে উঠছে
ক্রমশ বিবর্তনের পথে হাঁটছি নিঃসঙ্গতায়।

Wednesday 31 October 2018

ঋণ

ঋণ
ইমেল নাঈম

একদিন সব ভুলে যাবো। চাওয়াপাওয়ার হিসেব
ভুলে বিবর্ণ ঋণ লিখে যাবো, নির্বাক হয়ে দেখবো
ঈশ্বরের ঈর্ষা... কাপড়ে ঢাকবো প্রাণহীন মুখ।
নহরের ফোয়ারায় উড়ে যাবে বিষণ্ণ ইশতেহার।

অবসরে, হিসেব করি কে কার? কেনইবা কার?

চুপচাপ দেখে যাবো... ভাববো নশ্বর কবি জীবনে
অপ্রাপ্তিগুলোর শেষ ফলাফল।  কবিতার মতো
শব্দগুচ্ছ— যারা সরল, বিন্যাসে খেলে যায় শুধু।

মৌন থাকার অভ্যাস রপ্ত করি। মুসাফির বৃত্তে
ঘুরাফেরা করে যাই, শব্দের কাছে করজোড়ে
দাঁড়াই— মুহুর্মুহু আক্রোশ জমা রাখি দস্তানায়।

দিনান্তের সুরে বিষণ্ণতা রেখে দিই, বিকেলের
গম রঙা আলো নিভে যায় নম্রতা নিয়ে,
অভিভূত সময়ের সোপানে পেরিয়ে যাচ্ছি
পুরোনো মানচিত্র। ঐশ্বরিক একটা শিহরণে
রেখে যাচ্ছি দৈনন্দিন ঋণ— আওড়ে চলি—

কলম ব্যতীত আর কারো কাছে ঋণ নেই...
বাকিটুকু দোদুল্যমান পেন্ডুলাম, অপেক্ষমাণ।