Monday 29 February 2016

চৌকাঠ

ইমেল নাঈম 

ছুটতে ছুটতে পেরিয়ে যেতে হয় অনেকগুলো চৌকাঠ
মেঝেতে শুকিয়ে পড়া পাপড়ি, তুমি কার কথা বলো?
ওই যে রোলিং চেয়ার, তাতে যে ষোড়শী দোল খেতো
তার ছুটি মিলেছে অনেক আগে। এখনো অপেক্ষায়!

না চাইতেই ছুঁড়ে ফেলা যায় যাকে, তার জন্য এভাবে
বসে থেকো না আর। এরচেয়ে চলো পাপড়ি সরাই
মরে যাওয়া স্মৃতিদের সরিয়ে দিই আমরা একসাথে

ভুলে যেও না, কিছু স্পর্শ যা মোছে না আপনাআপনি
ঘর জিনিষটা খুব অদ্ভুত, সব আঁকড়ে ধরার প্রবণতা
আমাদের প্রান্তিক উঠোন, খুব একটা ধুলো জমে না
তবুও আমরা প্রত্যহ ঝাড়ামোছা করি রুটিন মাফিক,
এতে ক্ষতস্থান গুলো প্রকটভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে

রোলিং চেয়ারে মাঝেমাঝে কীসের ছায়া খুঁজে পাই
মেঝেতে শুকিয়ে পড়া পাতারা জানে না ইল্যিউশন
আমিও ছুটতে ছুটতে পেরিয়ে যাই অন্য চৌকাঠে।

Saturday 27 February 2016

প্রাতঃভ্রমণ

পলাশের বাগান হতে খসে পড়া পাপড়িদের শপথ
এখানে গাছের আড়ালে যে সকল যুগল
প্রকাশ্যে চুমুটুমু খাচ্ছিল, তাদের বাঁধা দিই নি।

আমি শুধু বাগানের ভিতর দিয়ে হেঁটে আসি
হাঁটতে হাঁটতে পেরিয়ে যাই সবটা আড়াল পথ
মাঝে মাঝে মনে হয়, কাউকে ঠিক তোমার মত
এরপরও আমি হাঁটতে থাকি এই পথ জুড়ে

জানুয়ারি মাসে ব্যাপক তুষার জমে এখানে
বৃক্ষাদি লজ্জাহীন হয়, শীত প্রবণ কাতরতায়
তখনও পলাশ বাগানে হাঁটতে বের হই একা

দেখি তাদের চুম্বনে এখানে নদীটি মরে গেছে...

Friday 26 February 2016

কবিতা যাপন

কবিতা আমাকে অপমান ছাড়া কখনোই কোনো কিছু দ্যায় নি। তবুও লিখি...! রক্তকরবীদের দলে একবার নিজের নাম দেখে  চমকে উঠেছিলাম। আমি কেন এখানে—এই প্রশ্নের উত্তর দিতে শেখে নি কল্পতরু। পৃথিবীর মানুষগুলোকে বড্ডবেশি নির্বোধ মনে হয়। তারা জানে না, প্রতিটা কবিরই একটা পরশ্রীকাতরতার দোকান আছে। সেখানে তারা পুশ সেল করেন হিংসে, ঈর্ষা, বিদ্বেষ, আর নিজের আত্মগরিমা তো আছেই। আর বড় কবির দোকানের পরিসর বড়ো। সেখানে মিলবে আরো অনেক কিছু, যেগুলো লিপিবদ্ধ না করাই শ্রেয়।

গত বসন্তে যেই লোকটি ভুল করে ঢুকে পড়েছিলো এলিট শ্রেণির সম্প্রদায়ে। তাকে ধ্বসে দেয়ার খেলায় নির্ভুল গুটি চালানোয় পারঙ্গম খেলোয়াড় ঠিকই মিলে যাবে। তারাই হাসতে হাসতে সাহিত্য রক্ষায় নামেন প্রতিনিয়ত। হাস্যোজ্জ্বল ভাবেই ব্যক্তিসম্পর্কের জের টানতে থাকেন, যেন কমার্শিয়াল মুভির শেষ দৃশ্য। আর সম্পর্কের এদিক সেদিকের সূক্ষ্ম ট্রাজেডিটা কেউ দেখে না। অনেকেই জানে না গভীর দুঃখ থেকে উড়ে আসা হাসির রহস্য।

কর্ণফুলীর জলে লীন হবারও কিছু স্বপ্ন থাকে। সেগুলো বিনা অনুমতিতেই ছিন্নভিন্ন করে ফেলে আমাকে। সুযোগ পেলেই কাঁটা ছেঁড়াই তাদের একমাত্র কাজ। আমি নির্জনতা বিলাসী। নির্জনতা পেলেই আমি ধ্যানে বসি। শব্দের সাথে গড়ে তুলি তীব্র সহবাস। এরপর জন্ম নেয় আমার অপরিপক্ব শস্য খেত।

আমার শব্দমালা। আমার কবিতারা। বাণিজ্যিক মোড়কে আর কত অপমান সহ্য করবো। কর্পোরেট কালচারে আর কতো অপমান সহ্য করলে রূপকথা সত্য হয়ে ধরা দ্যায়।

বলো...

পর্যায়কাল

শোনো, তীব্র দহনের পর শুদ্ধ কোনো সুর থাকে না...
আমরা এখনো ছোটোবেলার মতো মারবেল খেলি,
খেলার উপকরণ বদলাতে থাকে। যদিও স্বপ্ন'র আঘাতে
জর্জরিত হতে থাকি দিনভর। আজ শহরে বৃষ্টি নেই।

গতকাল ভিজে গেছে আমার শহর। রাজপথ ধরে নৌকো
ছুটে চলেছিলো, আর তোমার কারণে অকারণে ছোটাছুটি
বন্ধ করে বাধ্যগত ছাত্রীর মতো কাঁথা মুড়িয়ে বৃষ্টি বিলাস
উৎযাপন টা মন্দ নয় । এই সময় খুব মিস করি মফঃস্বল।

টিনের টুংটাং শব্দ ঝুম বৃষ্টিতে অনেক কথাই মনে পড়ে
বেলায় অবেলায় কিম্বা অবহেলায় যাদের হারিয়েছি
তাদের ভুলতে গিয়ে আরো জড়িয়ে যাই মায়ায়। মিথ্যে
মায়ার বাঁধনটুকু আলগা হয়ে খসে পরেনি  কখনো।

কবিতা কবিতা খেলতে খেলতে অনেক সময় চলে গেলো
দিনের পর দিন ব্যর্থ প্রলেপে সময় পার করেই দিলো
অবহেলিত কলম, খাতা, মোবাইল, নোটপ্যাড, ল্যাপটপ।

ওদিকে তুমি এখন হেঁসেলে চুল্লিতে আগুন পরিমাপ করো
অনুশাসনের নিয়মে নিয়মিত কাঁচাবাজারের ফর্দ লিখো
এর বাইরে কোনো কিছুই লিখো না...এমন কি কবিতাও।

Thursday 25 February 2016

জলজ জীবন

ধরুন আপনি জলজ প্রাণী। জলের গভীরে চোখ পড়লেই একটা কুমির হা করে তাকিয়ে আছে আপনার দিকে। তার হাত থেকে রক্ষা পেতে আপনি নেমে যেতে পারেন আরো এক স্তর নিচে। সেখানেও রেহাই নেই। ক্ষুধার্ত কুমির সেখানে তাড়া করবে না বরং উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবে হাঙর। তার হাত থেকে বাঁচতে চাইলে নেমে যেতে হবে আরো গভীরে একেবারে তলদেশে। সেখানে নীল তিমির সাথে দানবিক সাক্ষাৎ হলে বিন্দুমাত্র অবাক হবেন না।

জলের মাঝে খুব কম সংখ্যক বন্ধু পাবেন তাদের এক কথায় প্রকাশ ডলফিন। বিপদের সময় তাদের অধিকাংশকেই পাবেন না। দু' একজন সত্যিকার অর্থে সবকিছু ছুঁড়ে ফেলে আপনাকে আগলে ধরবে। বিপদ উত্তরণের সাথে সাথে নাচতে নাচতে তারা হারিয়ে যাবে আপনার থেকে। এরপর বাদবাকি ডলফিনগুলো দল বেঁধে পাশে এসে দাঁড়াবেন। অথচ এদের কোনো প্রয়োজন নেই এই মুহূর্তে। সামাজিক জলজ প্রাণী হিসেবে একটু উষ্ণ আলিঙ্গন, সে দোষের কিছু নয় ভেবে তাদের বুকে জড়িয়েই নিতে পারেন।

জলে যে সকল ফড়িং বাস করে তাদেরকে জলফড়িং বলে। এমন কোনো ফড়িং এর খোঁজ প্রাণী বিজ্ঞান দেয় নি, তবুও কল্পনার জগতে তারা টিকে আছে রাজা, প্রজা, উজির, সৈন্য সামন্ত এমন কি জনগণ সমেত। এই ফড়িংরা আবার সবার চেয়ে আলাদা। এতোটাই সংখ্যালঘিষ্ঠ যে, জাতিসংঘের স্পেশাল জোনে আওতাভুক্ত। তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তারা কুমিরের সাথে অবলীলায় খেলতে বসে যায় পাঞ্জা। হাঙ্গর কে নাকানিচুবানি দিয়ে ছিনিয়ে আনে বিজয়ের সুবাস। আর তিমির সাথে গড়ে তোলে বুদ্ধিদীপ্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক, আর মৌন সংগ্রামে, কৌশলে ছিনিয়ে আনে বিজয় মাল্য।

জলজ জীবনচক্রে যে সকল জলফড়িংদের নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়, তার অনেক বেশি জলফড়িং টিকে থাকে আলোচনা থেকে বহু দূরে —নিভৃতে। কেউ জানে না এদের কোনো খবর। তবে আশাব্যঞ্জক খবর কুমির, হাঙ্গর আর তিমিদের সমাবেশে কেনো জানি এই ফড়িংদের গল্পই ফুটে ওঠে বারবার।

Wednesday 24 February 2016

প্রথম দেখা

ব্যস্ত কলেজ করিডোর, আড্ডার চূড়ান্ত প্রকাশ
থেমে যাবার পূর্বরাগ, অস্তমিত দিনের শুরু
ঘড়ি চিনেছে ক্লাসরুম, চেনেনি সবুজ ক্যাম্পাস,
     হয়তো দেখি নি তাকে আগে,
     কিম্বা বেখেয়ালে সব দোষ

ফর্শা নয় খুব একটা, সাদামাটা মায়াবী মুখ
মায়ার প্রলেপ বাঁধা চেহারায় বিদ্ধ হৃৎপিণ্ড
আকাশ হতে আলটপকা খসে পড়া সন্ধ্যাতারা
     সন্দেহের মাপজোকে আঁকি
     বুকের গভীরের পাহাড়ে
যেনো গ্রিক মিথোলজির অপ্সরী কোনো এক দেবী

এক নাগাড়ে তাকিয়ে থাকতে পাশ কাটিয়ে গেলো
মনে এখনো ভাসছে সে’ প্রতিকৃতি। সপ্ত আশ্চর্য…!
     কানে ভাসছে ফার্স্ট ইয়ার…
     মনোযোগ নাড়ালো মুহূর্তে…
যাবার সময় ফেললো এক পলক আড়চোখ

পৃথিবীর সব গোলাপের বাগান আজ বিরান
আকুলতায় ভাঙছে সবচেয়ে সুন্দর উদ্যান
এই অনুভবের নাম শিখায় নি টেক্সট বুক
বন্ধুদের বাড়াবাড়িতে মিলিয়ে গেল মুহূর্তেই।

সন্ধ্যার গল্প

মাঝেমাঝে স্পর্শ টুকু পেলেই দাঁড়িয়ে যাই। রাস্তার ওইপাশে ল্যাম্পপোস্ট টা নিয়ন আলো ছড়াতে ছড়াতে বিষণ্ণতার রোগে আক্রান্ত হয় সন্ধ্যালোকে। ঠিক তখনই পরিচিত এক ঝালমুড়ি ওয়ালা তার সরঞ্জামাদি নিয়ে চলে যান। এরপর ল্যাম্পপোস্ট টা একা। ঠিক ওই চাঁদটার মতো। কবিরা একা হয় না, সবসময় কেউ না কেউ তার পাশে থাকে। এই শহরে শালিক নেই, দোয়েল নেই, রঙবেরঙ এর পাখি নেই। যা আছে তার নাম ইট পাথর আর দেয়ালের সভ্যতা।

এই সভ্যতা টুকু কে নদীর জলে ভাসিয়ে দিলে নাকি নাগরিক জীবন পরিপূর্ণতা পায়। মাঝেমধ্যে ভাবি এই তত্ত্বের জনক কে? তার মাথায় এমন অদ্ভুতুড়ে সূত্রের জন্মের কারণ কি? নাহ! দাঁড়িয়ে থাকার কোনো কারণ নেই। খালি পায়ে হাঁটা একদমই ভালো নয়। তাতে নাকি নানারকম রোগশোক হয়। তাতেও ক্ষান্তি নেই কোনো। বারবার উচ্ছন্নে যেতে কারই বা এতো ভাললাগে।

আগে ওই যে বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট সেখানে নাকি একটা খেলার মাঠ ছিলো। এখন আর নেই। সভ্যতা এগুলো প্রকৃতি কে বিসর্জন দিতেই হয়। এরপর মাস্টারপ্ল্যান নামের এক প্রহসন তো আছেই। কিছু হলেই গলা খুলে ঝাড়ি মারা যায় সবটা প্রয়াস ভুলে।

এই শহর টা আমার প্রেমিকা নয়, তবে সে প্রেমিকার মতো লেপটে গেছে শরীরের সাথে। আমার অভিযোগের তির তাকেই আহত করে যায় বারবার। আর বিনিময়ে সে আমাকে কিছুই দেয় না। একবার আমি তাকে গোলাপ দিয়ে জিজ্ঞাস করেছিলাম আমার সাথে প্রেম করবে? প্রতিউত্তরে মৌন দৃষ্টিতে তাকিয়ে। রাত বাড়লে মনে হয় ঘরে ফেরা দরকার, অথচ ঘর সেও আমার নয়। তবুও ফিরতে হয়...

Tuesday 23 February 2016

মিসরিড

মিসরিড
ইমেল নাঈম

মেঘনা ঘাট যখন পেরিয়ে যাচ্ছি সত্যি করেই বলছি তোমাকে একটুও মিস করছি না। সকল দরজা জানালা বন্ধ, তবুও ভেসে আসে বেহালার সুর নদীর উপর ভাসমান ইঞ্জিন নৌকার থেকে। সুরটাকে জীববিজ্ঞানে কাঁটাছেঁড়া করলে বেরোয় পরাগ রেণুর গল্পগাঁথা।

পৃথিবীর মানুষগুলো কে মাঝেমধ্যে এলিয়েন সদৃশ মনে হয়। বৈজ্ঞানিক কল্পকথার মতো আমাকে সান্ত্বনা দিতে বসে যান। এরপর পিঠ মুছতে মুছতে শোনাতে থাকেন ঠাকুরমার ঝুলি। আমারও রূপকথা শুনতে বেশ লাগে। যদিও আহত হতে হতে চূড়ান্ত অনুভূতিটুকু হারিয়ে ফেলেছি অমোঘ কাতরতায়।

রাস্তার মোড়ে অজস্র লোকের ভিড়ে নতুন কোন চোখ কখনো আমাকে আকৃষ্ট করে না। বিশেষত আমার কোনো কথাই গোপন নেই, পুরোটাই প্রকাশিত। আর প্রকাশিত অনুভবটাই প্রতিনিয়ত মিসরিড করে বসেন চলচ্চিত্রের নায়িকা।

সত্যি কথা বলতে গেলে চুপ থাকার অভ্যাস একদম ছোটকালের। কাল বললেই অনেক ঋণাত্মক ভাবনা ফুটে উঠে অস্তিত্ব জুড়ে। আর সেখানেই বেঁচে থাকার কল্পনাটুকু যেন অমৃত। বিষাক্ত ধোঁয়ার আবরণটুকু মুছে দিতে পারি। শুধু টিকে থাকে এর সাথে জোট করা অনেক মিথ্যে গল্প।

বসন্তের প্রথম পনেরো দিন শাহবাগে রমনা পার্কে অনেক ফুল পরা মেয়ে দেখি। অথচ কেউ নেই ঠিক মনের মতো। কারো চোখ ভালো লাগে, কারো নাক, কারো বা ঠোঁট। পুরোটা ভালোলাগা একত্রে আসে নি কখনো। আর সে জন্যই কাউকেই মিস করছি না। তবুও বলি, চাইলে যেতে পারো, থাকলে থেকে যাও। মানিয়ে নিতে পারি নিজেকে নিজের সাথে। কখনো শিখি নি মানিয়ে নিতে বিসর্জনে।

Monday 22 February 2016

সমবায় সমিতি

ঠিক পরিমাণ মতো কেটে নিন আদা
ছোট্ট একটা লেবুর টুকরো ভাসান
ধোঁয়া ওড়া উষ্ণ জলে। তারও আগে
দেড় চামুচ চিনি ঢেলে রাখুন কাপে
এরপর ছোট্ট একটা টি ব্যাগ ছেড়ে
নাড়ানাড়ি করলেই জন্ম নিতে পারে
একটা স্বতন্ত্র সমবায় সমিতি।

এরপর ঢুকে যান কোনো চিপাগলি
এরপর শুরু হোক টিয়াপাখির নামতা
কীর্তন গাইবার কিছু লোক তো আছে!
এখানেও থামা যাবে না একদম
কারণ নিজের সময়ের সেরা নিজে
এই বিশ্বাসটুকু জাপটে ধরে বাঁচুন।

কালি মন্দিরের ঢাকের শব্দে সবটা
কেউ শুনবে না। নিজেরাই নিজেদের
পিঠ চাপড়ে দিন সকাল হ'তে সাঁঝ
সবার সামনে গাইবেন সমবেত সঙ্গীত
যদিও সবার মেরুদণ্ড একই মাপে গড়া
হালকা বাতাসে নড়ে ওঠে অবলীলায়
কটমটে শব্দে প্রকাশিত সমবায় সমিতি।

এরচেয়ে চলুন নির্লজ্জ হয়ে পুনর্নির্মাণ করি
ভাই ভাই কবিতা সমবায় প্রাইভেট লিঃ
পিঠ চাপড়ানো সাহিত্য’র হোক পুনর্জন্ম।

Saturday 20 February 2016

কপাল

স্বপ্ন দেখার রঙটুকু নীলচে বিষাদ হলে কী হতো!
হয়তো শারীরিক ওম খোঁজা কিশোরীটি হারাতো
তার মাথায় গুঁজে দেওয়া লালচে শিশু গোলাপ।
গোলাপ এখানে মূখ্য নয়, গতকাল রাতে বাসে
আমার সহযাত্রী নারী তাকে দেখে মনে হোলো
ডিপ্রেশনের রোগী।

খুল্লাম মন্তব্য শুনে তুমি হয়তো বোঝো নি
এতে বয়ে পড়া শ্লেষটুকু কোনো কবিতা নয়,
সেইটুকু অধিকার আমাদের দেয় নি মায়া আঁচল
বরং আমার রাত্রিকালীন দূঃখের প্রতিশব্দ হতে
পারতো সে...কিন্তু ক্ষণিকের আবরণে মুছে
যাবে বলেই কিছু শব্দের উৎপত্তি হলো।

শব্দগুলোকে চিনে রাখলাম জানালার ফাঁকে
যে যেতে চায় তার জন্য তালা চাবির অংক নয়
খালি রাখা ওয়ারপড্রোবটা নিক নতুন কেউ!
তুমি ক্লান্তি মুছে দাও আমার! অথচ,
ওই আঁচল কখনো ছোঁয় নি আমার কপাল।

Wednesday 17 February 2016

পত্র

প্রিয়তা,
আমাদের কোনো অন্ধকার নেই, চাইলেই ফানুশ উড়িয়ে দিতে পারি এইখানে। ঠিক এইখানটায় তোমার আমার বসত। ওইখানে একটা শানবাঁধানো পুকুর ছিলো। সেখানে সেজো চাচার মাছের ঘের। আমার ছিপ দিয়ে মাছ ধরার ইচ্ছেটাতো তুমি জানো। বংশের ছোট সন্তান মানেই অতি আদরের বাঁদর। আমার এইসব অতিরঞ্জিত ছেলেমানুষি গুলোতে কখনোই কেউ কিছুই বলতো না। সেজো চাচা তো একদম মাটির মানুষ। তোমরা থাকতে ওই খানে। মানে ওই বাড়ীটায়। দোতলা পুরনো বাড়ী, মাঝেমাঝে তোমাকে দেখতাম বাড়ীর ছাদে। বেশিরভাগ সময়েই দেখতাম না।

কখনো যে তোমাকে ভালবাসবো বুঝি নি। ভালবাসাও যে কাউকে কিছু না বলে, এইভাবে আগন্তুকের বেশে এসে মিলেমিশে যাবে বুকের গভীর কোনো প্রদেশে। আর সেটাই নিয়ামক হয়ে ছড়িয়ে যাবে পুরো শরীরে কেই বা জানতো তা। তোমার সাথে আমার কোনো কাজেই মিলতো না। এমন কি তোমার যত অভিযোগ ছিলো আমার দিকে। আমার ক্রিকেট খেলা, মাছ ধরা, ছাদে উঠে ঘুরি ওড়ানো সবটাতেই যেন তোমাকে আঁড়চোখে দেখার জন্য। অথচ আমার কল্পনার কোনো স্তরেই তোমার দেখা পাওয়া দুষ্কর নয় একেবারেইই দুঃসাধ্য ব্যাপার।

তোমার মনির মামার কথা মনে আছে, আব্বাকে একবার বিচার দিয়েছিলো আমি নাকি তোমার কলেজে যাবার পথে দাঁড়িয়ে থাকি। তোমার হাতে ধরিয়ে দিই কোনো চিরকুট। অথচ, আমার ওই রাস্তার মোড়ে যাওয়াই হয় না একদম। সেইদিন আব্বা আমাকে বেধম মেরেছিলো, আর তার ফলাফল ১০৩ ডিগ্রি জ্বর। অতঃপর ডাক্তার বাড়ী দৌড়াদৌড়ি। জানি না, এতে কি সুখ পেয়েছিলো তোমার মামা কিম্বা তুমি। এরপর বাবা অনেকটা শিশু বাচ্চার মতো কেঁদেছিলেন। পরের দিকে এটা নিয়ে কম দেন দরবার হয় নি।

আমার কবিতা লিখার অভ্যাস টা আমার মা ব্যতীত কেউ জানতো না। আমার বন্ধু রাতুলের কথা মনে আছে তোমার। ভুলে যাবার নয়। সবাই ভুললে অন্ততপক্ষে তুমি ভুলবে না, এটা আমি হলফ করে বলতে পারি। ব্যান্ড পাগল একটা ছেলে। ছন্নছাড়া, তবে মেধাদৃপ্ত চোখ। একটা গানের দল করতো। তুমিও তো সেই দলের সাময়িক সদস্য ছিলে। তারা পুরোনো ক্লাব ঘরটায় নিয়মিত প্র‍্যাকটিস করতো। সেটার সূত্রে তোমার সাথে আমার সখ্যের ধারাপাত। আমি অবশ্য ওটারর কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনো ধরনের মেম্বার ছিলাম না। শুধু কবিতার জোরেই ওদের সাথে মেলামেশা।

জীবনানন্দ আমার খুব প্রিয়। অবসর পেলেই ওই কবিতাটা আওড়াতাম। 
"সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
বোলো নাকো কথা ওই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা :
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;"
জানতাম সুরঞ্জনাদের সাক্ষাৎ চাইলেই মেলে না। তবে তুমি যে গোপনে পিছনে দাঁড়িয়ে সবটাই শুনতে, জানতাম না। যেদিন তোমার উপস্থিতি কানে এলো সত্যি আমি লজ্জায় পরে গেছিলাম। এরপরে তুমি আমাকে একদিন জীবনানন্দের গদ্যসমগ্র কিনে দিলে। আর ভিতরের পাতায় লিখলে, এই লাজুক ছেলেটার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি দিন দিন। সেদিন সত্যি লজ্জাই পেয়েছিলাম প্রিয়তা।

এরপর কলেজ লাইফ পার করে বিশ্ববিদ্যালয়। তোমার আমার প্রেমটাও মফস্বল পেরিয়ে শহরে। তোমার মনির মামা তখনও আমাকে সহ্য করতে পারতেন না। আমরাও নাগরিক শালিক দম্পতি হয়ে টৈটৈ করে ঘুরছি এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত। তুমিও ছেড়ে দিলে গান, যদিও রবীন্দ্র শুনতে তোমার গলায়....আমাদের ডিপার্টমেন্ট আলাদা, অথচ ক্যাম্পাসে আমরা পাশাপাশি সবসময়। জিইসির মোড়ে ক্যাফেটেরিয়ায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুপড়ি ঘর। অনেক স্মৃতি টুকরো টুকরো প্রহরে আমাদের নাড়া দিয়ে যায়।

তুমি হয়তো ভুলে গেছো। আবার মনেও রাখতে পারো। আসলে আমাদের পথ এতোটাই বেঁকে গেছে মনে রাখাটাই অনুচিত। আচ্ছা দিপুর টঙ দোকানের চা খেতে খেতে কোনো এক অঝোর বৃষ্টি তে তোমার ঠোঁটে প্রথম চুমুটা....নাহ তাকেও ভুলে যাও। আমার তো খুব কষ্ট হয় প্রিয়তা।

ইতি,
রোদ্দুর

১৭ ফেব্রুয়ারি ১৬

Tuesday 16 February 2016

বাতিল কবির কবিতা

মেরুদণ্ডহীনদের জন্য কোনো কবিতা নয়
একদলা থুথু তাও গিলে ফেললাম অবহেলায়
সাহিত্যের শিক্ষক কে বহু আগেই করেছি বহিষ্কার

তারা আমায় থামতে বলে, অথচ আমি দৌড়োবার
জন্য প্রস্তুত। মোড়ল কে দিয়েদিলাম বটতলা...
তারা সাহিত্য সম্মেলন করুক ছানাপোনার সমন্বয়ে

কেউ শেখায় আমায় যতিচিহ্ন, বলে দেয় এভাবে নয়
ওইভাবে লিখো, অতোটা প্রকাশ নয়, এতোটুকু গোপনে
আমি চোর কে চোর ব্যতীত কিছুই ডাকতে শিখি নি
আর ডাকাত কে ডাকাত বলতেই ভালবাসি
তাও আবার প্রকাশ্যে, জনসম্মুখে।

আমাকে সবাই মিলে বাতিলের খাতায় লিখে রাখে
আমি দেখি সেখানে এক ফুলের বাগান,
কবিতার চাষাবাদে জন্মেছে অজস্র পঙক্তি।
ফুলের সৌরভে মৌ মৌ করছে, ওদিকে রক্তঝরা
কলম হাঁসফাঁস করে একটু অক্সিজেনের আশায়।

ওহে নগর ঝাড়ুদার পথ পরিষ্কার রাখো
এ'পথে বাতিল কবিরা একদিন হেঁটে যাবে
যদিও তুমি ব্যস্ত ফুটপাথে চাটুকারিতার অংকে।

Monday 15 February 2016

জীবনের পাঠ

প্রিয়তা,
আমাদের কোনো অন্ধকার নেই, চাইলেই ফানুশ উড়িয়ে দিতে পারি এইখানে। ঠিক এইখানটায় তোমার আমার বসত। ওইখানে একটা শানবাঁধানো পুকুর ছিলো। সেখানে সেজো চাচার মাছের ঘের। আমার ছিপ দিয়ে মাছ ধরার ইচ্ছেটাতো তুমি জানো। বংশের ছোট সন্তান মানেই অতি আদরের বাঁদর। আমার এইসব অতিরঞ্জিত ছেলেমানুষি গুলোতে কখনোই কেউ কিছুই বলতো না। সেজো চাচা তো একদম মাটির মানুষ। তোমরা থাকতে ওই খানে। মানে ওই বাড়ীটায়। দোতলা পুরনো বাড়ী, মাঝেমাঝে তোমাকে দেখতাম বাড়ীর ছাদে। বেশিরভাগ সময়েই দেখতাম না।

কখনো যে তোমাকে ভালবাসবো বুঝি নি। ভালবাসাও যে কাউকে কিছু না বলে, এইভাবে আগন্তুকের বেশে এসে মিলেমিশে যাবে বুকের গভীর কোনো প্রদেশে। আর সেটাই নিয়ামক হয়ে ছড়িয়ে যাবে পুরো শরীরে কেই বা জানতো তা। তোমার সাথে আমার কোনো কাজেই মিলতো না। এমন কি তোমার যত অভিযোগ ছিলো আমার দিকে। আমার ক্রিকেট খেলা, মাছ ধরা, ছাদে উঠে ঘুরি ওড়ানো সবটাতেই যেন তোমাকে আড়চোখে দেখার জন্য। অথচ আমার কল্পনার কোনো স্তরেই তোমার দেখা পাওয়া দুষ্কর নয় একেবারেই দুঃসাধ্য ব্যাপার।

তোমার মনির মামার কথা মনে আছে, আব্বাকে একবার বিচার দিয়েছিলো আমি নাকি তোমার কলেজে যাবার পথে দাঁড়িয়ে থাকি। তোমার হাতে ধরিয়ে দিই কোনো চিরকুট। অথচ, আমার ওই রাস্তার মোড়ে যাওয়াই হয় না একদম। সেইদিন আব্বা আমাকে বেদম মেরেছিলো, আর তার ফলাফল ১০৩ ডিগ্রি জ্বর। অতঃপর ডাক্তার বাড়ী দৌড়াদৌড়ি। জানি না, এতে কি সুখ পেয়েছিলো তোমার মামা কিম্বা তুমি। এরপর বাবা অনেকটা শিশু বাচ্চার মতো কেঁদেছিলেন। পরের দিকে এটা নিয়ে কম দেন দরবার হয় নি।

আমার কবিতা লিখার অভ্যাস টা আমার মা ব্যতীত কেউ জানতো না। আমার বন্ধু রাতুলের কথা মনে আছে তোমার। ভুলে যাবার নয়। সবাই ভুললে অন্ততপক্ষে তুমি ভুলবে না, এটা আমি হলফ করে বলতে পারি। ব্যান্ড পাগল একটা ছেলে। ছন্নছাড়া, তবে মেধাদৃপ্ত চোখ। একটা গানের দল করতো। তুমিও তো সেই দলের সাময়িক সদস্য ছিলে। তারা পুরনো ক্লাব ঘরটায় নিয়মিত প্র্যাকটিস করতো। সেটার সূত্রে তোমার সাথে আমার সখ্যের ধারাপাত। আমি অবশ্য ওটার কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনো ধরনের মেম্বার ছিলাম না। শুধু কবিতার জোরেই ওদের সাথে মেলামেশা।

জীবনানন্দ আমার খুব প্রিয়। অবসর পেলেই ওই কবিতাটা আওড়াতাম।
"সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
বোলো নাকো কথা ওই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা :
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;"
জানতাম সুরঞ্জনাদের সাক্ষাৎ চাইলেই মেলে না। তবে তুমি যে গোপনে পিছনে দাঁড়িয়ে সবটাই শুনতে, জানতাম না। যেদিন তোমার উপস্থিতি কানে এলো সত্যি আমি লজ্জায় পরে গেছিলাম। এরপরে তুমি আমাকে একদিন জীবনানন্দের গদ্যসমগ্র কিনে দিলে। আর ভিতরের পাতায় লিখলে, এই লাজুক ছেলেটার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি দিন দিন। সেদিন সত্যি লজ্জাই পেয়েছিলাম প্রিয়তা।

এরপর কলেজ লাইফ পার করে বিশ্ববিদ্যালয়। তোমার আমার প্রেমটাও মফস্বল পেরিয়ে শহরে। তোমার মনির মামা তখনও আমাকে সহ্য করতে পারতেন না। আমরাও নাগরিক শালিক দম্পতি হয়ে টইটই করে ঘুরছি এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত। তুমিও ছেড়ে দিলে গান, যদিও রবীন্দ্র শুনতে তোমার গলায়....আমাদের ডিপার্টমেন্ট আলাদা, অথচ ক্যাম্পাসে আমরা পাশাপাশি সবসময়। জিইসির মোড়ে ক্যাফেটেরিয়ায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুপড়ি ঘর। অনেক স্মৃতি টুকরো টুকরো প্রহরে আমাদের নাড়া দিয়ে যায়।

তুমি হয়তো ভুলে গেছো। আবার মনেও রাখতে পারো। আসলে আমাদের পথ এতোটাই বেঁকে গেছে মনে রাখাটাই অনুচিত। আচ্ছা দিপুর টঙ দোকানের চা খেতে খেতে কোনো এক অঝোর বৃষ্টি তে তোমার ঠোঁটে প্রথম চুমুটা....নাহ তাকেও ভুলে যাও। আমার তো খুব কষ্ট হয় প্রিয়তা।

ইতি,
রোদ্দুর
১৭ ফেব্রুয়ারি ১৬

Saturday 13 February 2016

রোদ্দুরের প্রেমের চিঠি

প্রিয়তা,

আজ তোমার প্রতি কোনো অভিমান নেই। কোনো অভিযোগেই তোমাকে রক্তাক্ত করে ছিন্নভিন্ন করার প্রয়াস নেই। আজ ফেব্রুয়ারির ১৩, আমার ভালবাসা দিবস। প্রিয়তা বাসন্তীরঙা শাড়ীটা পরো প্লিজ। কতদিন ভাসাই না সাম্পান কর্ণফুলীর জলে। তোমার হাত ধরে আঁকি না এবস্ট্রেক্ট কোনো পেইন্টিং।

প্রিয়তা, জানোই তো সব সুর ছিঁড়ে যাওয়ার পরে যে পাগলামো টা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তার নাম প্রণয়। তার নাম এও হতে পারে সর্বহারার আনন্দ। আজ অভিযোগের সকল আয়োজন বৃথা। হাত ধরাধরির এই দিনে আমি চাইছি এক মৌন সন্ধ্যা। শহরের কোলাহল পেরিয়ে লোকালয়ের আড়ালে সমুদ্র বুকে।

প্রিয়তা, পথ বেঁকে গেছে অনেক আগেই। জানি নানান অজুহাতে এড়িয়ে যেতে পারো আমাকে। তুমি তো শিখে গেছো রাস্তা পারাপারের সকল কায়দা কানুন। এখন কিছুতেই ভয় পাও না। তোমার কি মনে পড়ে না....সেই প্রথম বছরের পহেলা ফাল্গুনের কথা। আমার তো গভীর ক্ষত, পুরো শরীর জুড়ে পোস্টমর্টেম। রিপোর্ট পেলেই বুঝবে প্রেমে শহীদ, এর বাইরে কোনোকিছুই ঝুলবে না গায়ে।

তোমার তো পাহাড় খুব প্রিয়। নির্জনতা বিলাসী। আমার বিপরীত মুখেই তোমার অবস্থান। তুমি ভুলে গেছো একটা রোদ্দুর কিভাবে মিলিয়ে যায় বিশালতার মাঝে। তুমি তো জানই একটা রোদ্দুর কতটা ভালবাসার কাঙাল হয়ে প্রতি সকালে পৃথিবী কে জানান দেয় শুভ সকাল বলে। আমি সকাল সন্ধ্যা হাজিরা দেওয়া প্রেমিক। কত দ্বারে হাজিরা দিয়ে আটকে গেছি ভুল সময়ের কাছে।

সময়! তাকে নিয়ে আয়োজন অনেক। প্রিয়তা তুমি কি এখনো গান গাও? কতদিন তোমার কণ্ঠস্বর শুনি না। তোমার খালি গলায় গাওয়া প্রিয় রবি দাদুর গান। রবীন্দ্রনাথ কে দাদু বললেই তুমি রেগে যেতে। বলতে রবীন্দ্রনাথ প্রেমিক, দাদু নয়। আমি বলতাম তাহলে আমি কি? তুমি অভিমান নিয়ে বলতে জানি না। আর আমিও তোমার সামনে বেশি দাদু বলেই ডাকতাম।

তোমাকে নিয়ে কবিতাগুলোকে একীভূত করলে চার ফর্মার কয়েকটা কবিতার বই হয়ে যাবে। আমি সেগুলো কখনো কোথাও প্রকাশ করি নি। আমি চাই নি প্রকাশিত তুমি আমার থেকে ছড়িয়ে পড়ো দশের কাছে। আমি তোমাকে আমার করে পেতে চাই আর একবার। চাই আরো একবার কবিতা হয়ে ওঠো আমার কাছে। আমি লিখতে চাই আরো কয়েকটি কবিতা। আমার কলম জানে তোমার বুকের তিলের সুখ।

শীতের সময় গোধূলি বড্ড গাঢ়তর হয়। আর এমন রোমাঞ্চকর পরিবেশকে দেখতে চাই হাতে হার রেখে। নেভালে উন্মুক্ত বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাক তোমার এলোকেশী। তোমার চোখে গভীর বিস্ময় নামুক আজ বিকেল ৪ টায়। আসো আর একবার কবিতা হয়ে ওঠো দেবী আমার। আমি আরো একবার প্রেম নামক চোরাবালিতে ডুবে যেতে চাই।

আমি আছি অপেক্ষায় তোমার প্রিয় গমরঙা পাঞ্জাবি তে...

অপেক্ষায়,
রোদ্দুর

১৩/১২/২০১৬

রোদ্দুরের প্রেমের চিঠি

আজ তোমার প্রতি কোনো অভিমান নেই। কোনো অভিযোগেই তোমাকে রক্তাক্ত করে ছিন্নভিন্ন করার প্রয়াস নেই। আজ ফেব্রুয়ারির ১৩, আমার ভালবাসা দিবস। প্রিয়তা বাসন্তীরঙা শাড়ীটা পরো প্লিজ। কতদিন ভাসাই না সাম্পান কর্ণফুলীর জলে। তোমার হাত ধরে আঁকি না এবস্ট্রেক্ট কোনো পেইন্টিং।

প্রিয়তা, জানোই তো সব সুর ছিঁড়ে যাওয়ার পরে যে পাগলামো টা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তার নাম প্রণয়। তার নাম এও হতে পারে সর্বহারার আনন্দ। আজ অভিযোগের সকল আয়োজন বৃথা। হাত ধরাধরির এই দিনে আমি চাইছি এক মৌন সন্ধ্যা। শহরের কোলাহল পেরিয়ে লোকালয়ের আড়ালে সমুদ্র বুকে।

প্রিয়তা, পথ বেঁকে গেছে অনেক আগেই। জানি নানান অযুহাতে এড়িয়ে যেতে পারো আমাকে। তুমি তো শিখে গেছো রাস্তা পারাপারের সকল কায়দা কানুন। এখন কিছুতেই ভয় পাও না। তোমার কি মনে পড়ে না....সেই প্রথম বছরের পহেলা ফাল্গুনের কথা। আমার তো গভীর ক্ষত, পুরো শরীর জুড়ে পোস্টমর্টেম। রিপোর্ট পেলেই বুঝবে প্রেমে শহীদ, এর বাইরে কোনোকিছুই ঝুলবে না গায়ে।

তোমার তো পাহাড় খুব প্রিয়। নির্জনতা বিলাসী। আমার বিপরীত মুখেই তোমার অবস্থান। তুমি ভুলে গেছো একটা রোদ্দুর কিভাবে মিলিয়ে যায় বিশালতার মাঝে। তুমি তো জানই একটা রোদ্দুর কতটা ভালবাসার কাঙাল হয়ে প্রতি সকালে পৃথিবী কে জানান দেয় শুভ সকাল বলে। আমি সকাল সন্ধ্যা হাজিরা দেওয়া প্রেমিক। কত দ্বারে হাজিরা দিয়ে আটকে গেছি ভুল সময়ের কাছে।

সময়! তাকে নিয়ে আয়োজন অনেক। প্রিয়তা তুমি কি এখনো গান গাও? কতদিন তোমার কণ্ঠস্বর শুনি না। তোমার খালিগলায় গাওয়া প্রিয় রবি দাদুর গান। রবীন্দ্রনাথ কে দাদু বললেই তুমি রেগে যেতে। বলতে রবীন্দ্রনাথ প্রেমিক, দাদু নয়। আমি বলতাম তাহলে আমি কি? তুমি অভিমান নিয়ে বলতে জানি না। আর আমিও তোমার সামনে বেশি দাদু বলেই ডাকতাম।

তোমাকে নিয়ে কবিতাগুলোকে একীভূত করলে চার ফর্মার কয়েকটা কবিতার বই হয়ে যাবে। আমি সেগুলো কখনো কোথাও প্রকাশ করি নি। আমি চাই নি প্রকাশিত তুমি আমার থেকে ছড়িয়ে পড়ো দশের কাছে। আমি তোমাকে আমার করে পেতে চাই আর একবার। চাই আরো একবার কবিতা হয়ে ওঠো আমার কাছে। আমি লিখতে চাই আরো কয়েকটি কবিতা। আমার কলম জানে তোমার বুকের তিলের সুখ।

শীতের সময় গোধূলি বড্ড গাঢ়তর হয়। আর এমন রোমাঞ্চকর পরিবেশকে দেখতে চাই হাতে হার রেখে। নেভালে উন্মুক্ত বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাক তোমার এলোকেশী। তোমার চোখে গভীর বিস্ময় নামুক আজ বিকেল ৪ টায়। আসো আর একবার কবিতা হয়ে ওঠো দেবী আমার। আমি আরো একবার প্রেম নামক চোরাবালিতে ডুবে যেতে চাই।

আমি আছি অপেক্ষায় তোমার প্রিয় গমরঙা পাঞ্জাবি তে...

অপেক্ষায়,
রোদ্দুর

১৩/১২/২০১৬

Wednesday 10 February 2016

রোদ্দুরের চিঠি ৩

প্রিয়তা,

বাংলা ঋতুতে কোনোকালেই আমার আগ্রহ নেই। তবুও স্পষ্ট মনে পড়ে সেদিন ছিলো শরত। দামাল ঘুড়িগুলো রাঙাচ্ছিলো আকাশ। এতোসব ঘুড়ির বাঁকে কিশোর আকাশকেও বড্ড প্রাপ্তবয়স্ক মনে হয়। পার্কের ঘাসে ছড়িয়ে পড়া শিউলি। কাশফুল নেই আমার শহরে। ব্যাটারি চালিত একটা রিকশা এসে নামলো। তুমি রিকশা থেকে নামতেই অপলক আমার চোখ। আমার প্রেমিকা সিলভিয়া প্লাথের মতো আলতো ছোঁয়ায় মাড়িয়ে দিচ্ছো অদৃশ্যমান শিউলিফুল। আমি বাঁধা দিতে গিয়েও পারি নি।

হঠাৎ একটি গাছের পাতা এসে আমার ডান কাঁধে পড়লো। বাম কাঁধে জড়ো হলো দুটো প্রজাপতি। আমি তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে চুপটি করে বসে থাকি। আর দেখতে থাকি, কেউ একজন পেরিয়ে যাচ্ছে আমার উঠোন। তখনও আমি তোমার নাম জানি না, ভেবেছিলাম স্বর্গের কোনো অপ্সরী বুঝি এমনই হয়। ফার্স্ট সাইট অব এট্রেকশন কি জিনিষ বুঝি নি, বুঝি নি বলেই বুকের ফুসফুসের দ্রুত লয়ের শ্বাসপ্রশ্বাসটুকুও বুঝতে পারি নি।

প্রিয়তা পাহাড়ের বুকে আরো অনেক পাহাড়ের জন্ম হয় তা তুমি জানো নি। আমিও কিশোর পার করা সদ্য যুবক। আমিও বুঝি নি কিছু পাহাড়ের ডাকনাম প্রেম। সেখানে ঝর্ণাধারাগুলো আবেগের প্রতিবিম্ব। এতো কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে দৃষ্টির আড়াল হয়ে যাচ্ছো একটুকু টেরও পাই নি। তোমাকে বলা হয় নি, প্রিয়তা, প্রেমে পড়লে প্রতিটি পুরুষ এন সেক্সটেনের মতো দুঃখবিলাসী হয়। তারা প্রতিনিয়ত কনফেস করে যায় আর চলার পথে ছড়িয়ে রাখে অজস্র গোলাপের রক্তিম পাপড়ি। ভয় পেয়ো না, আজ চট্টগ্রাম শহরে কোনো বৃষ্টি নেই। যদিও কুয়াশা ভিজিয়ে দিয়ে যেতে পারে তোমার বাঁ পায়ের নূপুর।

আমিও উঠে দাঁড়াই পার্কের বেঞ্চ থেকে। তোমার পিছুপিছু বোকার মতো হাঁটতে থাকি। ফুটপাথে দুটো বিড়াল ছানা দেখে থমকে দাঁড়াই। নাহ, হাত বাড়ানো মাত্রই তারা দৌড়ে পালায়। আজ সব কিছুই ভালো লাগে। বিড়ালের দৌড়ানো, রাস্তার পাশে কুকুরের অলস সময় পার। আজ দ্রোহের কবিতাগুলো কে প্রেমে রূপান্তর করতে সাধ জাগে। পড়ন্ত বিকালের গোধূলি টাকে মনে জুয়েল আইচের মায়াবী জাদু।

ও'দিকে তুমি ক্রমাগত খুঁজে যাচ্ছো রিকশা। কেউ যেতে চাইছে না, আবার কারো সাথে তোমার ভাড়ায় মিলছে না। উভয় সংকট কাকে বলে সেদিনই প্রথম বুঝি। খারাপ লাগছিল এমন দাঁড়িয়ে থাকা। আবার রিকশা পেলে চলেই যাবে, আমিও হারিয়ে ফেলবো তোমাকে। একটু পরেই রিকশা চেপে উঠলে তুমি। আমি বাঁধা দিতে গিয়েও পারি নি কিছু বলতে।

থেমে যাও ঘড়ি, সূর্য তুমি ম্লান হয়ো না
এখন তো চলে যাবার সময় নয়, 
আরো থেকে যাও অনেক বাকি প্রহর।
এই লাইনগুলো মনে মনে আওড়াতে থাকি, তোমার রিকশা পেরিয়ে যায় রাস্তার মোড়। সব ভালোলাগার ঘোর কাটতে থাকে। চারপাশের দৃশ্যগুলো একটু একটু করে ম্লান হতে থাকে। সবুজ ঘাস পরিণত হয় হলুদে। ঝর্ণাধারা থেকে জলের প্রপাত বাড়ে। আবার কি কখনো দেখা হবে না আমাদের। নাকি এই অদেখায় পার করে দিবো দুই জীবন।

ইতি,
রোদ্দুর

১০.০২.১৬

Tuesday 9 February 2016

রোদ্দুরের চিঠি

প্রিয়তা,

অনেক দিন বাদে আবার লিখছি। জানতে চাইছি না কেমন আছো? জানি ভালো আছো। এতো ভাল আছো যে সুখও তোমাকে দেখে ঈর্ষান্বিত। শুনেছি নতুন এক জীবনের হাতছানি দিয়ে ডেকেছে। ব্যবসায়ী পাত্র। অংকে তুমি বরাবরই কাঁচা, অথচ জীবনের অংকটা মিলিয়ে ফেললে প্রথমবারেই। অনেক দিন বাদে তোমার ম্যাসেজ আমার মুঠোফোনে, আশঙ্কা নিয়েই খুলে দেখি কষ্টের এক বিশাল আয়োজন নিয়েই এসেছে সে।

অতীত মনে করি না। কষ্ট বাড়ে খুব। আচ্ছা এই তাসনিম নাকি কি যেন লোকটার নাম, সে কি জানে আমার কথা। নাকি তাকে আড়াল করেই এগিয়েছো এতোটা পথ। মাঝে কিছুদিন আগেই খবর শুনেছিলাম কোন এক প্রবাসী ছেলের সাথে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জারে ভালোই সময় কাটাচ্ছিলে। সেও কি আমার মতোই অযোগ্য ছিলো? নাকি যোগ্যতার মাপকাঠিতে অন্যকোনো উপাদান বেশি থাকায় সেও হারিয়ে গেলো তোমার সামনে থেকে!

নাহ, তোমাকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাবো না। বস্তুত অধিকারহীন মানুষ এতোসব করতে পারেও না। ওভারড্রপের ড্রয়ারে তোমার দেয়া চিঠিগুলো এখনো আমার সাথে কথা বলে। প্রতিটা চিঠি যেনো একেকটি স্মৃতিকথা। তারাই মনে করিয়ে দেয় তোমার আমার মান অভিমান আনন্দ বেদনা আর প্রবঞ্চনা। নাহ, প্রবঞ্চনা টা বাদই দিই। এতে করে তুমি ছোট হও না, বরং ছোট হয়ে যায় আমার একমুখো ভালবাসাটুকু।

আজ মুঠোফোনের খুদে বার্তাটুকু বুকের জমিনটা আরেকটু ভিজিয়ে দিয়েছে। আমি মোটেও কাঁদছি না, অথচ ভেতরের প্লাবনটুকু বর্ণনাতীত। যার সাথে বিরহের এতো সুন্দরতম সহবাস তার চোখে জল আসে কী করে! আমার সারাবছরই বর্ষাকাল। ফরাসি আবহাওয়ার মতো এই বৃষ্টি, এই রোদ। বৃষ্টি বললেই তুমি রোমান্টিকতায় পরে যেতে। এখানের বৃষ্টি মোটেই রোমান্টিক নয়। বরং দিন শেষে কষ্টের দিন গুজারে পার হয়।

প্রিয়তা ভালো থেকো তাই চাই বরাবরের মতো। অন্তত তোমার চিরসুখ দেখে মনে হয় আমি না হলেও অন্য কেউ তো সুখে আছে। আমি না হয় সামান্য এই জীবনে বিরহের চাষাবাদে গড়ে তুলবো নিঃসঙ্গতার খামার।

ইতি,
রোদ্দুর

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

Monday 8 February 2016

রাত

হেইয়াহো হেইয়া....নিচে চাপকল শ্রমিকের রাতের খবর আপাতত এটাই। এর বেশি কখনোই প্রকাশ পায় নি। বয়স্ক এক লোক বিড়ি ধরালেন। যুবক তিনজন এখনো নলকূপের কাজে ব্যস্ত।

আমার জানালা খুললেই দেখা যায়। লবণ শহরে খুব একটা ঠাণ্ডা নেই। কুয়াশা জমলেও তা ল্যাম্পপোস্টের আলো কে আড়াল করতে শেখে নি। সস্তাদরের চাইনিজ মোবাইল, ভেসে আসে হিন্দি গান, বাংলা সিনেমার গানও শুনি মন খারাপের রাতে।

আর কতদিন এমন টা চলবে জানা নেই। আমি শব্দের কাছে ফিরতে চাই। আত্মনিমগ্ন হতে চাই আমার মাঝে। শুনশান নীরবতা নামুক আমার শহরে। আমি আধ মাতাল, আরো দু চার পেগ পেটে গেলেই ভেবে বসতে পারি নিজেকে মির্জা গালিব।

এমন রাত যেনো সহজে না পেরোয়। শুনেছি এমন রাতে প্রেমিকাদের শরীর জুড়ে গোলাপের ঘ্রাণ ছড়ায়। আমি কোনকালেই প্রেমিক নই। অথচ আমি স্বর্গের অচেনা অপ্সরীদের থেকে পালাতে চাই ওই গোলাপের জন্য। আমি ছুঁয়ে ছুঁয়ে পাপড়ি সরাবো সবটা তার। আমার নেশায় চোখ ভরে আসে। সকাল এসো না আর....আমি অন্ধকার হবো।

Saturday 6 February 2016

অন্ধকার ৯

সেবক শব্দটির মধ্যে আমি কিছুটা গ্রিক মিথলোজির নিদর্শন পাই। এমন কিছু যা দৃশ্যত অদৃশ্য, কিংবা আভিধানিক পাতায় খুঁজে বের করা কোনো স্বপ্নকল্প। তৃতীয় বিশ্বে সেবক হলেন অঘোষিত ঈশ্বর। তাকে সন্তুষ্টিকরণে মোসাহেবি করেন রাজা থেকে প্রজা, মুচি থেকে শিল্পপতি। 

পত্রিকার পাতায় মাঝেমাঝে ঈশ্বরকে নিয়ে প্রতিবেদন বের হয়। আমরা ওনার ক্ষমতা বিস্মিত চিত্তে পড়ি। শিহরিত হই। ঈশ্বরের বিপক্ষে কিছু বলা মহাপাপ। আর এখানে সবাই মহাপাপী। কারণ, প্রকাশ্যে নয়, অপ্রকাশ্যে রেখে যায় যতসব আলোচনা আর মাতামাতি।

আমরা বাধ্যগত। তাই মেনে নিই সবটা ফলাফল। মেনে নিয়েও শান্ত নই। নিজেকে ভাগ্যবান ভাবি। প্রবোধ দিই, এরচেয়েও নাকি খারাপ কিছু হতেও পারে। অথচ যাঁতাকল পিষ্টে যাচ্ছে সারা দেহ।

সহ্যসীমার অতিক্রম করার পূর্বেই ঈশ্বর বলে বসেন সহ্য করুন আর একটু। আমরা তো আপনারই সেবক।

Friday 5 February 2016

প্রিয়তা কে লিখা চিঠি

প্রিয়তা,

তোমাকে যখন লিখছি, তখন তুমি পেরিয়ে গেছো আমার সাদাকালো উঠোন। পাবলিক বাসে চেপে চলে গেছো অনেকটা পথ। হয়তো কিছুক্ষণ পরে আন্তঃনগর বাসে চেপে ছেড়ে যাবে আমার এই শহর। ফেলে চলে যাবে অতীত নামের শব্দটিকে। আমি তো অনেক আগেই গত। এই চিঠি যখন লিখছি তখন কেনো জানি অতীতের সবটুকু স্মৃতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। কিভাবে শুরু হয়েছিলো। বিকাশকাল কিসের চিহ্ন রেখে গেছে তা নিয়েই চোখদুটো বড্ড এনাটমির ক্লাশ নিচ্ছে।

শরীরের ঘ্রাণটুকু বাদই দিলাম। ভরদুপুরে হেঁটে যাওয়া সারসন রোড হয়ে চট্টেশ্বরী পাড়ি দেয়ার সময় দুই আঙুলের মৌন দুষ্টুমি তাকে চাইলেই এভয়েড করা যায় না। ওয়ার সেমেট্রির পড়ন্ত বিকালে আমরা শালিক দেখতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত চুমুটাকে বড্ড মনে পড়ছে। সকাল নয়টার ব্যাচ, ক্যামিস্ট্রির কোচিং.... নোট আদান প্রদান, আড়চোখ... হাসি বিনিময়....

তোমার লিপস্টিকের খুব শখ ছিলো। আমার ওটাতেই এলার্জি। যদিও তুমি বলতে ওটার বেশির ভাগ আমার পেটেই চলে যেতো। আর তোমার ঠোঁট জুড়ে জমতো শেষভাগটুকু। ওহ। আমাদের দুটো প্রিয় জায়গার মধ্যে একটি ছিলো সাম্পানে কর্ণফুলী পাড়ি দেয়া, আর ছিলো ফয়সলেক। ইঞ্জিনের যুগে বেশিরভাগ সময় যন্ত্র চালিত সাম্পান কর্ণফুলী পাড়ি দিতাম আমরা। আমরা দেখতাম ছোট্ট কিশোর কিভাবে নৌকা বেয়ে চলে যায় মাছের খোঁজে।

আমার সিগারেট টা তুমি একদমই পছন্দ করতে না। আমার গা ঘেঁষতে বসতে পারো না ওটার জন্য। আমি বুঝতাম গায়ের সাথে লেপটে যাওয়াই নয়, আরো অন্যকিছু চাইতে আমার কাছে। আমিও প্রশ্রয় দিবার ছলে মাঝেমাঝে আঙুল থেকে ছুঁড়ে দিতাম সিগার। তুমি চাইলেই আমি এক নিমিষেই ছুঁতে পারতাম তোমার চিম্বুক পাহাড়। তুমিও বুকের অরণ্যে হাঁটতে থাকতে। আমরা উপভোগ করতাম কর্ণফুলীনদীর শান্ত ঢেউ।

বৃষ্টিবিলাস আমাদের খুব প্রিয়। কলেজের সময়টা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাতে হাত ছুঁয়ে....তোমার তো মনে নেই রাশেদের কথা। আমাদের দুইজনের মাঝে ডাকপিয়নের নাম ভূমিকার সেই ছেলেটি। বড়োলোকের ছেলে, টাকা পয়সায় পকেট সবসময় ভর্তি। ওর ফ্ল্যাটে আমাদের দুজনের কিছু স্মৃতি আছে। এমন  অনেক ছোটো ছোট স্মৃতি এখন তোমার মনেই পড়ে না।

এই যে তোমাকে যখন লিখছি, আমার চশমার  লেন্স ভিজে যাচ্ছে আর্দ্রতায়। এতো জল এই চোখ কিভাবে ধারণ করে তাও একটা রহস্য। ওহ, সামনের ১৭ তারিখ মানে ভ্যালেন্টাইনের ৩ দিন পরে, তোমার জন্মদিন। সেদিন তোমাকে উপহার দিবো বলে একজোড়া নূপুর কিনেছিলাম। পুরো চিঠি লিখতে লিখতে হয়তো তুমি আমার শহর ছেড়ে চলে যাবে। অনেক স্মৃতি তো ধারণ করেই আছি, নূপুরটা কী এমন কষ্ট দিবে আমাকে!

ইতি,
রোদ্দুর

তারিখঃ ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬