Friday 27 April 2018

সঙ্গীত

সঙ্গীত
ইমেল নাঈম

কখনো কখনো গাছের পাপড়ি ঝরে অসময়ে
ক্যালেন্ডারের পাতায় দীর্ঘশ্বাস শুধু বাড়ায় উত্তা‌পে
নির্বাক জীবনে কিছু মলিন ব‌লিরেখা জীবিত।

প্রয়াসে বাঁধা যন্ত্রসঙ্গীতের মূর্ছনা, ক্র্যাফটের
দোকান জুড়ে লোক দেখানো উৎসব — নীরবতা...
ছিঁড়ে ফেলেছি পাপ পুণ্যের হিসেব নিকেশ
নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার নিপুণ অভিনয়।

করতল ঢেকে রাখা জীবন যাপ‌নের সরল অংক,
গণিতের শেষ অধ্যায়ে ভুলে ভরা আঁকাজোকা
বৃত্ত পেরোতে হারিয়ে যাচ্ছে দূরের মেঠো পথ।

সম্মুখে কেবলই পথ, বিরতিহীন কাটাকুটি খেলা
মরীচিকা সময়ের ভিখারি, বিভ্রমে কুপোকাত হ‌চ্ছি,
রুক্ষতা জানান দেয় খরতাপে পুড়েছে সবুজ।

ক্যানভাসে আকাশ আঁকা আর নীলচে কিছু দাগ...
তেল রঙে কিছু ধূসর ইঙ্গিত অস্পষ্ট কথা বলে
হাতের ভাজে লুকিয়ে রাখি ঐশ্বরিক আবেদন।

পথ আবিষ্কারের শুরুতে একা আর শেষে ছায়া
মাঝে বিবর্ণ কোরাসে ঢাকা পড়েছে সুর, সঙ্গীত।

Wednesday 25 April 2018

বিষণ্ণময়ী'র ভালবাসা

বিষণ্ণময়ী’র ভালবাসা
ইমেল নাঈম

ভালবাসতাম। এখনো বাসি। কবিতাও লিখতাম। লিখতে তুমিও। দুজনের লেখা কতশত যুগল কবিতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মনের কোণায়। তোমার লেখনীতে ভর করতো বিষণ্ণতা, যেন একটা ভোকাট্টা ঘুড়ি পাক খেতে খেতে পড়ে যাচ্ছে ইলেকট্রিক খাম্বার তারের উপর। তারপিছে দৌড়ে চলেছে একদল কিশোর।

আমি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতাম। তোমার গা থেকে ভেসে আসতো দামী পারফিউম। আমি মুগ্ধতার শেষটুকু নিয়ে তাকিয়ে থাকতাম। তোমার শান্ত চোখ কত অব্যক্ত কথা বলতো তখন, মৃদু হাসিতে অদ্ভুত নির্ভরতা পেতাম। তোমার চওড়া বুকে মাথা পাতলে যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি। আমাকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যেত আমার থেকে অনেকদূরে।

আমার কবিতাগুলো পড়ে তুমি মুচকি হাসতে। আর মুগ্ধতায় বাহ বলে উঠতে। বিশ্বাস করো আমি কবিতার ক বুঝতাম না তখন। অথচ আমার চোখে খেলে যেতো বিস্ময়ের সুর। তুমি বলতে আমার লেখায় সারল্য আছে। যা সহজে আকৃষ্ট করে সবাইকে। আমি বলতাম এই সারল্যটাই আমার সম্পদ।

একদিন ভিতরে ঘোর বৃষ্টি হলো। বাইরে উজ্জ্বল দিন। কী অদ্ভুত বৈপরীত্য! নিজেকে এতোটা অপরাধী মনে হয়নি। তুমি বলেছিলে থেমে যাওয়ার দরকার। অথচ, আমরা থামার জন্য পথ চলিনি। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজের দোষ বের করতে চাইলাম। পেলাম না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বুঝতে চাইতাম, কতখানি বদলে গেছি। নিজের প্রতিবিম্ব ছাড়া আর কিছুই পেলাম না।

দিন কারো জন্য বসে থাকেনা। ঝড়ের পরে লণ্ডভণ্ড প্রকৃতিও আবার সাজিয়ে নেয় নিজেকে। নীরবতা ভেঙে গেয়ে ওঠে পাখি। আমিও গুছিয়ে নিয়েছি নিজেকে। চোখে কাজল দিই, ইচ্ছে হলে শাড়ি পরি, কপালে টিপও দিই। এখনো ভালবাসি তোমাকে, আসলে ভালবাসাটা একটা অভ্যাস মাত্র। ভালবাসতে কোনও কারণ লাগেনা।

Thursday 19 April 2018

দাসত্ব

দাসত্ব
ইমেল নাঈম

প্রথমে বঙ্গোপসাগরে ডুবিয়ে দাও বিবেক,
এরপর প্রভুভক্ত কুকুরের থেকে শেখো নিয়ম
অধির আগ্রহে বসে থাকো, লেজ নাড়ো অদৃশ্যে

একটা মাংসের টুকরোর জন্য অপেক্ষা করো...
লক্ষ্যস্থানের দিকে কাতর চোখে তাকাও,
জীর্ণশীর্ণ, মলিন মুখে কেবলই জয়গান গাও।

যতই জ্বলুক পেটের ভিতরে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি
মুখ থাকবে নির্বাক, সর্বদা সত্যকে চেপে যাও
ইশারা সঙ্গীতকে আয়ত্ত করো, আঙুল নড়লে
তুমি লিখতে শুরু করবে দাঁড়িকমা সমেত দাসত্ব

এর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত পৃথিবী উলটে যাক,
শব্দ নয় — চুপ থাকো, অন্যায়ের পাহাড় জমুক
তুমি চার্লি চ্যাপলিনের মতো বিনোদিত করো

বোঝাই করা ফিকে রঙের অসীম পাপকে
বৈধতা দাও, পূর্ণতা দাও নিজের পকেটকেও
বিনিময়ে মিলে যেতে পারে রাজবাড়ীর আমন্ত্রণ

আয়নায় দাঁড়িয়ে দেখ নি মুখের ব্যাকরণ
বদলে যাওয়া হাহাকারের ভাষায় লিখিত দাসখত
ছেঁড়া তমসুকে বিবর্ণ শব্দমালাতে জীর্ণ অবয়ব...

এখনই সুবর্ণ সুযোগ, নিজেকে বিক্রি করে দাও,
প্রথমে বিবেককে পাঠাও হিমঘরে — শেষকৃত্যে
এরপর কষ্ট করে শিখে নাও কুকুরের ভাষা
আয়নায় নিজেকে দেখো না, চিনতে পারবে না।

Friday 13 April 2018

প্রস্তুতিপর্ব
ইমেল নাঈম

"হাফিজ, চাও কি তার দর্শন?
ক'রো না নিজের আড়াল তাহলে;
দেখা দিলে প্রিয়া, এই জগৎটা
ভুলে যেয়ো তুমি, ছেড়ে যেয়ো চলে।"
একটা ঘুমহীন রাত হত্যা করছে আমাকে। মুঠোভরা ক্লান্তি মোটেও আহত করেনা। মোটেও হারাচ্ছি না ঘুমঘোরে। বিনিময়ে প্রলেপ দিচ্ছি পুরনো ক্ষতস্থানে। বিধুমুখ একচিলতে দেখা দিয়ে পালিয়ে গেলো দূরে। সেই থেকে ঘুরছি কেবল ছায়ার পিছনে। অমূলক দৃষ্টিভঙ্গি, মেদুর আকর্ষণে খানিক সময়ের যাত্রা বিরতি।

তুমি কি চাওনা আমাদের এখানে দেখা হয়ে যাক। সমুদ্র বিলাসের প্রতি পরতে যে ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয় তাকে অস্বীকার কেন করছো এমন সময়ে? এ'তো এক দুঃসময়। যখন নিজের বলে কিছুই থাকেনা, নিজেকেও নিজের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায়না। আবীর আবরণে নেই সংবাদ আবহাওয়ার বুলেটিনে।

ঠিকুজি জানা নেই। শুধু মুখটাই মনে আছে। অকারণ বিন্যাসে লুকোনো খেলাগুলো দৌড়ে আসে সম্মুখসমরে। নাঙা তলোয়ার থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র সবকিছুর গাণিতিক, সুশৃঙ্খল বিন্যাস। অথচ, এমন কিছুর চিহ্ন ছিলো না।

আমি প্রিয়াকে দেখে, দেখি এক যুদ্ধক্ষেত্র, অজগর বিশাল হা নিয়ে তাকিয়ে আমার দিকে। আমি সেই ভয়ে নিজেকে করেছি আড়াল, নিজের খোঁজ নিজেই রাখিনি। হাফিজ, তুমি তো বলেছিলে ভুলে যেতে দুনিয়া। আমিও ভুলেছি দুনিয়াদারি, যদিও প্রেমের কারণে নয়, প্রেমের ঝড় সইতে না পারার প্রস্তুতির পর্বে।

এরপর বাকি থাকে অনন্ত এক প্রতীক্ষা, অস্থির বুকে লিপিবদ্ধ থাকে নীলচে অনুভূতি, তাও যেন মুছে যাবার আগে দপ করে জ্বলে ওঠার পূর্বাভাষ, তার ফলাফল হিসেবে থাকে পূর্বানুমিত। মুখে আনতে তীব্র ভয়, এভাবে ঠিকই গ্রাস করে ফেলবে আমায়।