Wednesday 31 January 2018

বীজগণিত ৩

বীজগণিত - ৩
ইমেল নাঈম
১।
কাটাকুটি খেলা , মেঘের দোটানায় বাড়াবাড়ি
খাতায় লেখা এলজেব্রিক কিছু রহস্য চিহ্ন

বন্ধ করে দাও খাতা, ভাবনা থাকুক চুপচাপ
কে আঁকে দুপুরে (3x +2y) + (3x - y)...

দিনের শেষে শূন্যখাতায় জ্বলছে ফায়ার বক্স

২।
রোদ পোহাতে এসে থেমে গেছে কৃষ্ণচূড়া
নগ্নপায়ের ছাপ অচেনা, কোনো স্পন্দন নেই

দিনের হিসেবে পালিয়ে যাচ্ছি আমরা বহুদূরে

যাযাবর হিসেবে কিছু মুহূর্ত ভুল ব্যাখ্যাত হয়
অংকের মতো জীবন যেনো মরীচিকা প্রহর

ভুল হয় a-{a-(a +1)}, দেখি তার মিছিল

৩।
গুণের পরে কেবল ভাগ অংকের সরল মায়া
মিথ্যের ভাজ খুলে রাখি আঙুলের ফাঁকে
ভিতর নিঙড়ানো আয়োজনে দুপুরের আভা
(x+5)(a-6) এর গুণফল মিলেছে সহজে

৪।
দুপায়ের ফাঁকে লিখে রাখি রাশিফলের কষ্ট...

Sunday 28 January 2018

জয় পরাজয়

জয় পরাজয়
ইমেল নাঈম

বন্ধ ঘড়ি — আলোকচ্ছটা আর মিথ্যে কথার বুনট
রক্তিম সময়ের খুনসুটি ; প্রজাপতির উদার উড়াউড়ি
গল্পের মোড়কে শিহরণ লিপিবদ্ধ বন্ধ খাতায়...
প্রতারক সাজে প্রেমিক, ভুল দরজায় কড়া নাড়ে

বর্তুলাকার পৃথিবী, আপন সাজার ব্যর্থ প্রচেষ্টা
মিথলজিক্যাল ইফেক্টে কেবলই জলপ্রপাতের শব্দ
নিজের কাছে রেখে দাও গোপন সব অনুভব
কেউ জানেনা আড়ালের গল্প — মিথ্যের জয় সর্বত্র

আয়না রাখি সামনে, সামলে রাখি নিজের চোখ
কোথায় রাখি আটকে, দৃশ্যমান ঘটনার মরীচিকা
প্রহরকে আটকেছি, ভুলের বৃত্তে ক্ষয়িষ্ণু স্বরলিপি
নির্বাক জীবনের স্রোতে মিথ্যে হয় তাসের সব রঙ।

দাবার ঘুটিতে তুমি পাকা খেলোয়াড়। কেটে ফেলো
আমার রাজা, উজির, ঘোড়া। মন প্লাবনের অধ্যায়
থাকুক অচেনা। কিছু অপরাধ লিখে রাখি গোপনে
দেখো মায়ার ফানুশ ওড়ে মেঘের শীতল বাতাসে...

জয় পরাজয়ের হিসেবে জয় নিয়ে পরাজিত আমি
আবার পরাজিতের তিলক কপালে লাগিয়ে ছুঁটছি
অন্য এক আমি, দু' আমিতে অদ্ভুতুড়ে অমিল।

Friday 26 January 2018

গোলাপ সম্পর্কিত

গোলাপ সম্পর্কিত
ইমেল নাঈম

পাপড়ি খসে পড়ে... এর কোনো আবেদন নেই
পুরনো বইয়ের মাঝের পৃষ্ঠায় শুকনো পাপড়িগুলো
একটা গোপন ব্যথা পুষে নিয়ে চলেছে বহুদিন।

ডায়রির ভাজে কী উজ্জ্বল প্রভা, টগবগে লাল রঙ!
আজও চোখে ভেসে আছে, কতশত স্মৃতির কোলাজ
তারা নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বেখেয়ালে, অবচেতনে...
উত্তর নেই, পৃথিবীর সব রহস্যের মানে জানতে নেই

নাই বা জানা হলো, হারিয়ে ফেলা সেই সময়গুলো
চিঠির ভাজে বুকের ধুকধুকানি নেই ইদানীং
সংকেতগুলো মুছে গেছে, ভুল শুদ্ধের ব্যতিক্রমে।

তখন ফুলেরা মরে যেতো প্রেমিকের স্পর্শ পেলে
পাপড়ি খসতো বইয়ের গোপন ভাজের অবহেলায়,
অপূর্ণ, অর্ধপূর্ণ প্রেমের কথা জানতো মৃত গোলাপ,
পূর্ণ প্রেমের জোয়ারে ভরে উঠতো তার জীবন।

হয়তো গোলাপ পাপড়িরা এখনো অপেক্ষায় থাকে
লাল মোড়ক বাঁধানো বইয়ের গোপন কুঠুরির মাঝে
প্রেমিক তার প্রেমিকাকে ভালবেসে দেয়না উপহার
গোলাপ এখন শোভা পায় সকল অপ্রেমিকের বুকে...

Wednesday 24 January 2018

ভাগ - ১
ইমেল নাঈম

ভাগ করলে কমে যায়, যেমন মানুষকে ভাগ করলে
একসমুদ্র অভিসম্পাত নিয়ে পড়ে থাকে নিথর দেহ,
একাকীত্বকে ভাগ করলে জন্মান্তর লিখা হয় প্রেমের
মুহূর্ত ছিঁড়ে দ্বিখণ্ডিত হলে সৃষ্টি হয় ক্ষণিকের আবেশ

পৌরাণিক গল্পের মতো প্রচলিত কিছু শব্দমালা,
শুরুর চমক নিয়ে থেমে গেছে আচমকা, মাদলের
ঝঙ্কারে নেচে উঠছে পরিযায়ী সময়ে বেদুইন মন
বুনোপাখির ডাকাডাকি, ভাগ করতে পারছি কই?

দিনের গল্প শেষে কেবলই শূন্যতা ঘিরে থাকে,
হাহাকার করা ধ্বনি কুহুতানে ভরিয়ে রাখে চারপাশ
এড়াতে পারিনা...ধরতে পারিনা...কেমন নিঃসঙ্গতা
আমাকে শুনিওনা বেদনার পাতা ঝরা কবিতা
শীত ঘুমের ব্যস্ততায় আঁকছি বিকেলের এলিজি

নিজস্বতা ভাঙলে কিছু কবিতার শব্দপতন ঘটে
মৌনভাব ছিঁড়ে ফেলতে পারেনি পুরোনো গল্পটুকু
উপড়ে ফেলতে বসেছিলাম সত্তাহীন অনুভাব
শোনাবো না দুঃখের শ্লোক, তোমার বাস শূন্যতায়
তোমায় ভাগ করবো না নিজের গোপন অনুভূতি

০÷১ মানেই অসীম, এই গান তোমাকে শোনানো
মানে বাড়বে ব্যক্তিগত নিঃসঙ্গতার আয়োজন...

Tuesday 23 January 2018

বিয়োগ - ১
ইমেল নাঈম

ভাঙচুর...শব্দ শোনা যায়। প্রতারক বিকেলজুড়ে
সর্বনাশা গান। প্রথম কলি গাইলে নেমে আসে
অনিঃশেষ শব্দপতন — নির্বিকার; উচ্চগ্রামে
দূষণ আর ধুলোমাটি ভেজা দিনের বিকেলের
স্পর্শটুকুও মুছে যায় অন্তর্নিহিত কোনো অর্থে।

বাক্যাংশ মুছে গেছে নির্ভেজাল কিছু অনুরণনে
প্রান্ত বদল করা খেলোয়াড়ের মতো ক্ষিপ্রতাযুক্ত
আমিত্ববোধটুকু আগলে নিয়ে হাঁটছে কেবল,
নিজস্ব বিজ্ঞাপনে ঢেকে রাখে লোভী নীল চোখ,
ইন্দ্রজালিক আবেশে জড়িয়ে পালাচ্ছে সময়।

যোগের হিসেব থেমে যায়, ক্রমশ বিয়োগ শিখি।
২-১=০ হয়, একক বলে শব্দ নেই, সবটাই মায়া
ঘোর কাটলে খাঁখাঁ বিরানভূমি, পাখির কলরব
মুছে গেছে, স্মৃতির কার্নিশে কার্নিভালের ঘ্রাণ
পার্কের বেঞ্চিতে বসে, জনারণ্যর ব্যস্ততা মাপি।

আদত সবাই নিজেকে নিয়ে দৌড়ছে, ভাবছেনা।
ভাবনার উঠোনটুকু খেয়ে নিলো মুঠোফোন
ক্ষুদ্র অনুভূতিগুলো ম্লান হলো, মলিন মুখ দেখে
দীর্ঘশ্বাস, শব্দের তীব্রতায় একাকীত্বর শ্লোগান,

সাদাচোখে সবাই দেখে বিয়োগের শেষে ২-১=১,
আক্ষরিকভাবে অংকটা কেবল শূন্যতেই থামে
০ আমাদের ভাঙন লিখে, লিখে রাখে পথচলাও।

Monday 22 January 2018

বীজগণিত ১
ইমেল নাঈম

"শূন্যতার শোকসভা,
শূন্যতার যত গান
দিলাম তোমার মুকুটে
আমার যত অভিমান।"

গল্পের ভাজে লুকোনো অনেক প্রশ্নবোধক। একেকটি সুবিশাল চোরাবালি। গভীর খন্দক পেরিয়ে যেতে লাগে অসীম সাহস। নির্বাক জীবনের প্রাপ্তিটুকু মিলিয়ে যায় ঘরোয়া সাজগোজের আয়োজনে। এরই মাঝে কেউ তো ডাকে, একাধিক যোগ অংকের সমষ্টিকে নিয়ে। অস্পষ্ট ডাক। কণ্ঠটি চেনা আর অচেনার মাঝামাঝি। কোনো এক যাদুশিল্পীর পরাবাস্তব হাতের মূর্ছনা।

অপেরায় ধ্বনিত হওয়া সুর, ভায়োলিনে ভেসে আসা বিদুর সঙ্গীত, নির্মোহ হয়ে শুনতে থাকি। শীত রাতের প্রখরতাও বাড়ে। নিজের সাথে কথোপকথন, কোথাও যেনো সুরটি তাল কেটে যায়। ভোকাট্টা ঘুড়ির মতো বারবার পাক খায় একই বৃত্তে। সাবকনসাস মাইন্ড মুহূর্তে বদলে ওঠে, চারপাশ তাকাই। কপালের ঘাম মুছি। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি।

এই সম্পর্কের কোনও সংজ্ঞা নেই, শুধুই তাড়না আছে। অনেকটা যোগ বিয়োগের খেলা। প্রতিশোধ পরায়ণ হতে পারি অবেলায়, অবহেলায়। রঙিন সময়টাকে বদলে দিতে পারি সাদাকালোয়। আকাশের রঙটিও হতে পারে ধূসর। গল্পের ভাজে ফাঁকফোকর খোঁজা আত্মাগুলো ফ্যাকাসে হয়ে ওঠে। কিন্তু ঐকতানে কেবলই অমিল, হাতকড়ায় সুখ।

পুণ্য নেই, পাপবিদ্ধ হচ্ছি প্রতিমুহূর্ত। ব্যস্ত দিনের ভাজে গণিতের খাতার ভাজে জমাটবদ্ধ শুকনো পাপড়ি প্রশ্নবিদ্ধ করছে আমাকে। নীরবে হাসছে ভুল করা বীজগণিত। সূত্রের মাঝে লাল বৃত্ত, আমাকে দেখে বিদ্রুপ করে।

চোখের ঝাপসা লেন্সে চোখ পড়ে, x3+y3=(x+y)(x2-xy+y2) মুহূর্তেই আমার তোমার মুখ মনে পড়ে...

Saturday 20 January 2018

যোগ ৪

যোগ - ৪
ইমেল নাঈম

ঈশ্বর কণায় থমকে যেতে পারে তোমার চোখ
উন্মুক্ত বাহুতে ঝুলিয়েছো ই + প = ভালবাসা
উল্কিতে ঢাকা পেলবতা, ভেতরটা কোমল ভীষণ

কঠোর হতে শেখোনি , আমি ভাবি প্রত্যাবর্তন
নিজের লেখা চিরকুটের সাংকেতিক ভাষাটিও
দুর্বোধ্য হয়ে গেছে কালের স্রোতে।
মহাকালের বনবাদাড়ে লেখা কবিতাটিকেও
খেলো কর্পোরেট বিজ্ঞাপন বহুজাতিক মোড়কে

সরলীকরণের শেষে ভাষা তার ব্যঞ্জনা হারায়,
ত্রিমাত্রিক বিন্যাস বলে নতুন কোনো শব্দ নেই
অব্যাখ্যাত কিছু প্রান্তিক শব্দশৈলীয় কারুকাজ
অংকে তুমি পটু, ১+১=৩ লিখোনি কখনো;

ভালবাসার সৃজনে কালিমা লেপটেছে অবচেতনে
আবেগী অনুভবে রয়ে গেছে পুরনো হিসেব
প্রেমটুকু হারালে অনুভূতি থেকে যেতেও পারে
যেমন করে মুছতে পারোনি উল্কি আঁকা যোগ।

আমি বলতাম ১+১ = ৩, তুমি শুধরে দিতে...
বোঝাতে পারিনি প্রেমে ভুলটাই হয় ঠিক
১+১=২ এর মতো মিলিয়ে নিলে নিজের প্রাপ্য,
শুধু উন্মুক্ত বাহুতে ঝুলছে ই + প = ভালবাসা...

Friday 19 January 2018

যোগ - ২

যোগ - ২
উৎসর্গঃ সোয়েব মাহমুদ 

অনুভূতি হারিয়ে যায় মধ্যদুপুরের নীরবতায়
চলে যাওয়ার মানেই শূন্যতার আদিবিন্দু
মুহূর্তগুলো ফ্যাকাসে হয়, চাওয়া পাওয়ার 
সমাবেশে শুধুই লেখা হয় রেখাপাতের জন্ম।

যোগের মতো সরল, বিয়োগান্তক মুহূর্তরা
পরাবাস্তব, কাল্পনিক মোমেন্টামের খেলাঘর
সাজঘরের আয়না ভেঙেছে, প্রতিবিম্বহীন
ঘরে এক কবি দাঁড়িয়ে, ডাক দিই নাম ধরে
সোয়েব... সোয়েব... সাড়াশব্দহীন ছায়া

অভিমানে ক্রুদ্ধদৃষ্টি ফেলি, সাহসী মুখের
ফোয়ারায় ভিজাই নিজেকে, কবিতাকেও।
অন্ধকারে বুক চিঁড়ে গাইছে রক অ্যান্ড ব্লুজ 
মৌন হই, চুপ থাকা ব্যতীত অন্য কাজ নেই।

আলোয় ভরে থাকার কথা শুকনো ঘরদোর, 
বিচ্ছুরণে মেতে ওঠার কথা দিনান্তের শোক
শ্লোকে মূর্ছনায় মাতম উঠেছে দূরের গ্রামে
পরিচিত নই, আবার খুব চেনা কাছের লাগে।

মনের মাইক্রোস্কোপে সোয়েবের চোখে দেখি
সরলতার যোগ অংক, ১০০ + ১০০ = ০
কবিতা বাজারের এই সহজ যোগ মিলিয়ে
দুজনে বেরিয়ে যাই একই পথে, নিরুদ্দেশে...

যোগ-১
ইমেল নাঈম

৭ + ৫ দেখেই সাতপাঁচ না ভেবেই বলো বারো
আমি কানকে অবিশ্বাস করে শুনি বাড়ো
নয়ছয়কে যোগ করে লিখি ৯ + ৬ = ১৪
উত্তর দেখে হেসেই উঠো, কেঁপে ওঠে সাগর
লাজুক চোকে অবনমিত হয়ে ভাবি ছেলেমি...

নির্ভুল বলে কী কোনো শব্দ আছে পৃথিবীতে
যেটাকে ভাবো নির্ভুল তা খুবই আপেক্ষিক
অন্ধকার মানে আলোকহীনতা, আমার ভুল
হলো আনমনা উদাসী চোখে তাকিয়ে থাকা।
চোখ পড়লে এখনো চুপসে যায় বুকের তাঁবু

তড়িঘড়ি করতে গিয়ে রেখে আসি কিছু চিহ্ন,
টের কী পাও, বুঝতে কী পারো ক্ষরতাপ!
উচ্ছ্বাস কী আঁকা যায় মনছবিতে! অপেক্ষায়
পেরিয়ে যাচ্ছে অনাবাদী সময়য়ের বিভেদ
বিচ্ছেদ আঁকছো, যোগ অংকে তুমিও কাঁচা।

সারাসময় যোগই করছো, পাচ্ছোনা উত্তর।
উত্তাপ বুকে চলছে কেবলই কাটাকুটি খেলা
তোমার যোগের খেলায় আমি এক অংক...
উত্তর মিললেই মিলিত হবে পরিস্থানের সুখ
আমাদের শেষ যোগফলও লেখা হবে খাতায়।

Wednesday 17 January 2018

অবসাদের গান

অবসাদের গান
ইমেল নাঈম

নৈরাশ্যবাদের আগুনে পোড়ে গেরস্থালী, উপচে ওঠা
আগুনের হল্কায় জুড়চ্ছি প্রাণ। নির্বাক কথাচিত্র
ফিরে আসে সবাক ভার্সনে। নিজেদের কথারটানে
কেবলই ফিকে হয় স্মৃতি রোমন্থনের ক্যানভাস।

সাত রাস্তার মাথায় লিখে রাখা অবসাদের টুংটাং
হাওয়াই গিটার, চটি, জুতো কিচ্ছুটি নেই পাশে
নীরবে ছুঁতে চাওয়া আমার খুব পুরনো স্বভাব
লজ্জাবতী ফুল কুঁকড়ে ওঠে প্রেমের স্বাদ পেলে।

বদলে যাওয়ার মিছিল দেখি, জনাসাতেক মুখ
খুব চেনা, বাকিগুলো আজো চিনে উঠতে পারিনি
নিজেকে নিয়ে আঁকা ছবিগুলো কী রঙে সাজাই
সাদাকালো আকাশের বুকে ওড়ে রঙিন পাখি
আমি দেখি ঝাপসা চোখে ব্যান্ডদলের মিউজিক।

বখে যাওয়া চিত্রায়ন, কিছু গল্পের সীমারেখায়...
বাজছে সানাই, ড্রামের বিট, নিজের পৃথিবী
অচেনা হতে হতে মুছে গেছে তীব্র অবসাদে…

Tuesday 16 January 2018

স্বেচ্ছামৃতের অভিমান

স্বেচ্ছামৃতের অভিমান
ইমেল নাঈম

মেয়ে আঁকো ঈশ্বরের বিপরীতে মেরুতে দাঁড়িয়ে...
রঙতুলিতে ভরিয়ে দাও জাগতিক অবসাদ
কিছু চাইবার নেই, পাওয়ার হিসেবও শূন্য
কবিতার খাতার লিখিত হিজিবিজিগুলোর
সমাবেশে ভাসাও মৃত মানুষের মুখ ক্যানভাসে।

উতসবের শেষে কিছুটা অন্ধকার থাকে নীরবে
ব্যক্তিগত শব্দগুচ্ছ ছড়ায় নীলচে আভা
গোপন অভিব্যক্তিগুলো মিথ হয়ে যায়
ক্রমশ মুছে যায় কলমের সব যতিচিহ্ন

ছবির মুখগুলো গিলে খায় শীতকালীন দুপুর
গভীর অন্ধকারও নিজেকে ভয় পায়না অতো
হ্যালুসিনেশনের মন্ত্রে, দ্রোহে আর রঙতুলির
আশ্চর্য সমাবেশে আঁকলে মৃত্যু...

অনুভূতি চুপসেছে বেলুনের মতো — নিথর,
নির্বাক ছবিঘর পরে থাকে, মাথার উপরে
সিলিং ফ্যানটিও নিশ্চল দাঁড়িয়ে
বুঝতে পারিনি, শিল্প আর বাস্তবের সাযুজ্য
মেয়ে আঁকো, ঈশ্বরের চোখে চোখ রেখে...

Sunday 14 January 2018

সরল রেখা

সরল রেখা
ইমেল নাঈম

আলপথ, পাশের সবুজ খেত। মলিন রেখা আঁকছি।
বিষণ্ণতার ক্যানভাসে আনকোরা শিল্পীর উগড়ে
দেয়া রঙতুলির সমাবেশে পেরোচ্ছে নির্বাক সময়।

দেয়ালঘড়িতে আঁকা মুহূর্তে হিসাবের শূন্য খাতা...
লেনাদেনার অংক মিলে আসে সূর্যাস্তর হিসেবে।

জ্যামিতীয় ছক, উপপাদ্য আর সম্পাদ্য'র নকশায়
মিলনের গল্পের ফোয়ারা, পিথাগোরাস কখনও
ফুলের অংক কষেননি, জানেননা ফুলের বৃত্তান্ত।

জমিনের আল জন্ম দিতে পারে অনেককিছুই
এ' কথা নীলনদের চেয়ে বেশি কেউ জানেনা
বন্যার পাড় ডুবে, লোকজন মাটিতে দাগ কাটে

বণ্টননামা, খাজনার অংকে ডুবন্ত লোক জানেনা
সরলরেখার মানে প্রেমে পড়ার আদিম উপায়
দুটো বিন্দুর মানেই দুমেরুতে দাঁড়ানো দুটো মুখ
এরপর ভাঙচুরের গল্প কেবল...মূকাভিনয়...

বৃত্ত আঁকা শেষ হলে সরলরেখার মৃত্যু লিখা হয়।

সভ্যতার বিপণন

সভ্যতার বিপণন
ইমেল নাঈম

উন্নয়নের সাইরেন বেজে ওঠে
কেটে ফেলো স্মৃতিদের সমারোহ
প্রশস্ত সড়কের আহ্বান,
উদ্বাস্তু মানুষের মিছিল
ফেলে আসা সময়ের সাতকাহন

কাটো প্রাণ, উপড়ে যাক শিকড়
শিকড়হীন শিখরের শুনছি শ্লোগান
গাছেদের কাছে গচ্ছিত ঋণ
পাহাড়ের কাছে নতজানু
তারা দেখেনি মানুষ নামি হন্তারক

ইতিহাস হোক কুক্ষিগত,
ছিঁড়ো শতায়ুর পাতা, ছাল বাকল
নদীদের মুখে লাগাও লাগাম...

কোনো শব্দ নেই, সকলেই চোপ
সাড়া নেই কারো কোনও
ফেস্টুনে ঝুলে উন্নয়নের বিপণন
মানুষ মৃত নগরীর আয়োজনে
মুখে কুলূপ আঁটছে সভ্যতা  

Saturday 13 January 2018

নদীজীবন

নদী জীবন
ইমেল নাঈম

লিখে রাখি হালখাতায়। নতুন নামের পাশে অস্পষ্ট পুরনো মুখ। ম্লান হয়, পুরোটা নয় অদৃশ্য। কুয়াশার মোড়কে নদীর বুকে ঘুরে বেড়ায় যুবক। এই শহরে নদী ব্যতীত তার অন্য কোনো প্রেমিকা নেই। সুখ, দুঃখের ঝাঁপিতে কেবল পরাবাস্তব উঁকিঝুঁকি। যাদুশিল্পীর আঙুলের ইশারায় বোকা বনে যাচ্ছে। বেশ ধরছে সুখানুভবের।

কুয়াশার চাদরে পেরিয়ে অস্পষ্ট সব ঋণ। পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের আর্দ্রতা মাপতে বসেছি। নদীর বুকে রক্তিম আভা, উপচে পড়ছে নান্দনিক অনুভূতি। ভাষায় প্রকাশিত নয়, গোপন কুঠিতে লুকোনো। কাউকে প্রকাশ করা হয়নি। কেবল নিজের সাথে নিজের প্রেম।

অনিন্দ্য মুহূর্তকে রাঙিয়ে নিচ্ছে সবুজ প্রকৃতি। শীতলতা গ্রাস করছে জ্যাকেটে, দস্তানায়। বুকপকেটে কেবল শালিকের ডাকাডাকি। ম্লান হওয়া মুখদের চুপচাপ নেমে আসা সময়ের গল্পে লিপিবদ্ধ হয়। চুপসে ওঠা গ্যাস বেলুনটিও নিয়ে গেছে চিরকুট। বিনিময়ে লিখে রাখছি নিজেকে... অতীত আর বর্তমানের অলীকতায়।

নদীর বুকে ভাসছে বাঁশ, মাঝে চরের বুকে জন্মানো লোকালয়। নৌকোতে লেগেছে ইঞ্জিন। ছুটছে কেবল সামনের পথে।আমি জিপসি প্রেমিক মাত্র। বুকের ভিতরে ডাকাডাকি, কোনো ধ্রুপদী গানের দিকে ছুটে চলা। অচেনা শব্দের জন্য অপেক্ষমাণ, নদী জীবন এভাবেই পায় পরিপূর্ণতা।

Thursday 11 January 2018

পথ

পথ
ইমেল নাঈম

স্বপ্নের বালুঘড়িতে চেপে চুপচাপ নামে দুঃখের নহর
যেন আচমকা ঘুম ভাঙার পরমুহূর্তে একগ্লাস জল,
নীরবতাও বোঝা হয় হরিত সময়ের নিপুণ মানদণ্ডে
পরস্পরের সরে যেতে যেতে জন্মায় ব্ল্যাকহোল।

পরাহত হয়ে নতুন শব্দের জন্ম দিচ্ছি অভিধানে
বুকমার্কের ভিতরে জন্ম নেয়া অসংখ্য শব্দঋণ
অচেনা হবার পরে আবিষ্কারের নেশাও মুছে যায়
কেউ কাউকে চিনিনা এখন, অথচ সহযাত্রী...

ভারতনাট্যমের তাল ভুলে গেছে ইমন, চাঁদের
ঈর্ষা লালনপালন করছি, বিনিময়ে নির্মাণ করছি
খাঁচাবন্দী স্বাধীনতার মনুমেন্ট। হাতপাখার ভাজে
পৌষালী উষ্ণতা নিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রত্যাশা।

গল্পের শেষ প্যারাটা পড়েই লিখে নিচ্ছি আনন্দ
অথচ আমি কোথাও নেই — অদৃশ্য ছোটাছুটি...
উড্ডীন শব্দদের অন্বেষণে জেগে থাকা অভ্যাস
জানি নিজের জন্য প্রয়োজন একফোঁটা আলো
ব্যতিরেকে পথটি চলে গেছে অন্ধকারের দিকে।

Wednesday 10 January 2018

ছন্নছাড়া মানচিত্র

ছন্নছাড়া মানচিত্র
— ইমেল নাঈম 

দক্ষিণ গোলার্ধে লেখা কবিতাগুলো ভীষণ ছন্নছাড়া
সূর্যের উষ্ণতা মাপছে বসে ঘেমে যাচ্ছে মেঘদূত
নির্বাণ আর অনির্বাণের মাঝে পাথুরে দেবীর অবয়ব
নিশ্চিত পরাজয়ের বৃত্ত আঁকতে বসেছি ভরদুপুরে।

দিন গেলো, রাতটিও চলে যাবে... নিয়ন বাতির
কবিতাগুলো যেন রাজপথ, সঙ্গী হয় পথচলার
আর শেষেরদিকে চলে যায় উন্মুক্ত পাখির ডানায়

একুরিয়ামের কবিতাগুলো অক্সিজেন ছাড়া বাঁচে
নগ্নতার চিত্রায়ন শেষে থেমিসও চোখ বাঁধে কাপড়ে
তারপর তরবারি আর দাঁড়িপাল্লা দু'হাতে ধরে

অবয়ব খুলে দেখেনি কেউ, ভিতরটা কালোই থাক
প্রত্যুষে ঘণ্টার ধ্বনিতে জেসাস... জেসাস... জেসাস
তুলসীপাতা জোগাড় করা বৃদ্ধার চোখে ভয় — শঙ্কা
তারও আগে আযানের কলরব পাখির কলতানে

অবিশ্বাসী মনে আবেদন নেই, প্রত্যাশার চাপ নেই
একটু ভালো থাকা আর রাখার মাঝের তফাৎটুকু
বুঝতে বুঝতে আবিষ্কৃত হয় নিপুণ ছলাকলাশিল্প
বিদীর্ণ সময়ের ভাজে চিৎকার করে দৈনন্দিন সকাল

মেঘ নামুক, বৃষ্টি হোক কিম্বা তীব্র উষ্ণতায় ভিজুক
তবু আমাদের গল্পের ঘড়ির কাঁটায় প্রেম নামুক
নিশ্চুপ — নীরবতায় মুছুক জীবনের সব আয়োজন। 

Tuesday 9 January 2018

ডাকনাম

ডাকনাম
ইমেল নাঈম

আমাদের কোনও ডাকনাম নেই, বিশেষণও নেই।
সম্পর্কের মায়াজাল ছিন্ন করা অনুভূতি আছে কেবল
আছে নির্বাক মুখের ভাষায় বরফ জন্মের শুভ্র উষ্ণতা

আমাকে কেউ কোনোদিন ডাকনামে ডাকেনি
খুব চেয়েছিলাম কেউ একজন ডেকে উঠুক
অভিমানের এভারেস্ট গলে যাক সূর্যের তাপ বিরহে
মনোযোগহীনতা লিখে রাখে অবজ্ঞার উপন্যাস

লজ্জাবতীর মতো মরতে, শুকিয়ে যেতে স্পর্শ পেলে
আদিম অভ্যাসকে অবসরে পাঠিয়ে নামাতাম রাত
তাঁত-কাব্যের বুনটে একটা জীবন হলো ডাকনামহীন,

প্রাক্তনদের গল্পের সমাপনী নেই কোনো অঙ্গিকারনামা
সালতামামিতে ভিড় নেই, বিচ্ছিন্নের বিশাল মিছিল
কলরব মুছে গেলে ভাবতে বসে নির্বাক জীবন
প্রান্তিক সুর ছবিতে আঁকা কবিতার নেই ডাকনাম

একটা জীবন পার হচ্ছে ডাকনামহীন কলতানে
পাখিদের সমাবেশে অনেক পাখি হয় বেদুইন
উড়ে বেড়ায় এধার-ওধার ডাকনামের আশায়...

Sunday 7 January 2018

আখড়া

আখড়া
ইমেল নাঈম

মিথ্যে আলোকচ্ছটা। ফানুশ ওড়ে। লুকোচুরি খেলা।
শব্দ আঘাত করে অন্য এক শব্দকে। প্রতিবিম্বজুড়ে
ঝরছে হাপিত্যেশ। নিজের সাথে নিজের কথোপকথন।

কথার ভিড়ে জমাটবদ্ধ বাক্যবন্ধরা নির্বিক, অসহায়।
যতি চিহ্নের হিসাব নিকেশে শুধু মারপ্যাঁচে হাহাকার
বৃত্তের বাইরে গল্পগুলো সরলরৈখিক সমান্তরালে…
অনুভূতিগুলো প্রেমহীন,
          স্পর্শগুলো জাজ্বল্যমান
                     স্মৃতির জাজিমে আলোকচ্ছটা
খাতায় আঁকা দুর্লভ কোনো রঙপেন্সিলের কারুকাজ।

বন্ধখাতার পরতে পরতে ছড়ানো গোপন ইশতিহার,
লড়াইয়ের গল্পে থাকে নিষিদ্ধ কিছু সাংকেতিক চিহ্ন
উড়ন্ত প্রজাপতির মতো উড়ছে একফোঁটা প্রেম…
           তারপর গল্পরা থেমে যায়,
                  দাড়ি কমা সেমিকোলন সমেত
                           নীরবতাও ভাসে গল্পের মোড়কে।

নতুন ট্যুইস্ট হিসেবে নিজেকেই সামনে আনি কেবল
গল্পের ভাজে সংশোধনাগার, আঁখড়া জমে স্মৃতিদের।

Saturday 6 January 2018

মৃত নগরীর ক্যানভাসার


মৃত নগরীর ক্যানভাসার
ইমেল নাঈম

উদ্দেশ্য বিধেয় সবটাই অচেনা। হঠাৎ ভেসে আসা জীবনের আয়োজন। গল্পের ক্যানভাসে জমাটবদ্ধ শব্দ। অপেক্ষার ঋণে আটকে যায় কুহুতান। বেসুরো সংলাপে কোথাও আটকে গেছে জীবনের ধারাপাত। মন্ত্র পাঠের তান্ত্রিক নই। বিষণ্ণতা এঁকে ফেলি প্রতিদিনই। নির্ভার জীবনের পাঠাভ্যাস আর তার সমান্তরাল প্রতিবিম্বে কেবলই দুঃখের হিসাবনিকাশ। হয়তো কথার সমীকরণের অন্তে আনত হয় সৌখিনতা।

রুটিনবাঁধা সময়ের হাতঘড়ি অনুযায়ী সময়ের অংক, ভ্রান্তি ছড়ানো আকাশের মানচিত্র। কল্পনায় অশ্বের ডাকাডাকি আর বিনিময়ে লিখা হয় প্রাত্যহিক পরিক্রমা। দোপেয়ে জীবনের মালমসলা টানতে ব্যস্ত। নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকি দিনের শেষে। উত্তরের অপেক্ষায় পার করে দিই জীবনের আয়োজন। অদ্ভুত জীবনকে টেনে নিয়ে চলি। বাঁধাহীন জীবনের ডাকাডাকি।

শহর জুড়ে নামে অদ্ভুতুড়ে নিস্তব্ধতা। কাউকে প্রশ্ন করার নেই। উত্তরের জায়গা শূন্য আর শূন্যতায় পরিপূর্ণ। মননের শেষ প্রান্তে এসে থমকে দাঁড়াই। গল্পের ভাজে লেখা গল্পগুলো চুপচাপ থমকে যায়। আহামরি আয়োজনে পার করছি জীবন। খাদক আর খাদ্যর মাঝের সময়টুকু।  মৃত মুখের প্রলাপ আঁকছি। নগরীর গল্প। ম্রিয়মাণ, করুণ সব কেচ্ছা। দুঃখায়নের মুহূর্ত, মাৎস্যন্যায়ের মতো গিলছে আমাকে। কার কাছে রেখেছি অমীমাংসিত ঋণ।

আমাদের গল্পের শেষ অধ্যায়ের নাম নেই। কেবল এলিজি থাকে। এপিটাফ লিখা হয়। নামের ভিটেমাটিতে ভুলের আবাস। মৃত্যু আঁকতে আঁকতে কখন যে আঁকা হলো মৃত নগরীর ক্যানভাস… সে খবর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রত্নতত্ত্ববিদের খাতায়, অনেকটা পম্পেই’রর মতো। শুধু নিদর্শন, বাকিটুকু আশা নিরাশার দোলাচল।