Friday 29 June 2018

অবহেলার ক্যাকটাস

অবহেলার ক্যাকটাস
ইমেল নাঈম

মুগ্ধতা মুছে গেলে যাযাবর হয় স্মৃতি
জিপসি প্রেমিকের গায়ে ছড়ানো উল্কি
থেমে যাক এক্স-ফ্যাক্টরের গোপনীয়তা
প্রেমিকা চুমু খাক ভরা মজলিশে

তবু কথা থাকে, থাকে ভিন্ন কোনো মানে
নির্বাক শব্দের কাছে নতজানু হচ্ছি
শিশির ঝরে যাওয়া পাতাদের সমাবেশে
চাইলে বিষণ্ণতা আঁকা যায় যখনতখন,

পতনের শব্দে নীরবতা ভাঙে, ফানুশ
উড়বার সময় ঝলসে ওঠে উৎসবের রাত
কোনো কথা নেই, শব্দ নেই, মৌন সব
মুখরিত হোক চাওয়া পাওয়ার জটিল অংক

বিমূর্ত দৃশ্য কল্পনায় থেমে গেছে সময়
এক্স ফ্যাক্টরের প্যান্ডোরা খুলে বেরোচ্ছে
অসম লড়াইয়ের কিছু তৈলচিত্র, প্রেমিক
পালাচ্ছে নির্বাসনেদূরের পথ আড়াল
করে দিচ্ছে তাকে জগতের থেকে...

প্রেমিকা এখন চুমু খান, ভালবাসাহীন
চুম্বনগুলো অবহেলার ক্যাকটাস হয়ে
সালোকসংশ্লেষণ করে দখিনা বারান্দায়

Monday 25 June 2018

বৃষ্টি দিন

বৃষ্টি দিন
ইমেল নাঈম

বৃষ্টি হলে আমার কবিতা পায় না, প্রেম পায় না। দূরের দৃশ্যে ভেসে যাওয়া দেখি। জলমগ্ন আবহাওয়া। ঋণের বোঝায় যুক্ত নেই কোনও নাম। মুষলধারায় বৃষ্টি হলে আমি জানালায় দাঁড়াই, ব্যস্ত সড়কের ব্যস্ততা মাপি। রিকশাওয়ালাদের ছুটে চলা দেখতে দেখতে জ্বালিয়ে ফেলি সিগারেট। আর ইশকুল ফেরত বাচ্চাদের উৎফুল্লতা মনের ঘরে আঁচড় কাটে। এই কাটাকুটির কারণটাও আমার জানা হয় নি। পাড়ার দামাল ছেলেরা ফুটবল খেলে, বলের পিছনে দৌড়চ্ছে শৈশব। আমি শুধুই দেখি।

বৃষ্টি এলে আমার কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে না। আনমনে তাকিয়ে থাকি শুধু। মাঝে মাঝে হুডতোলা রিকশাই নয়, জল ভেঙে ছুটে চলে মোটর যান। আমি ভাবি কেন এই ব্যস্ততা? যদিও এটুকু খেয়ালে রাখি নি, নিজের জন্য অবকাশটুকুকে কিনে নিচ্ছে নামীদামী কর্পোরেট কোম্পানি। আর, একদল লোক জীবনের তাগিদে ছুটে বেড়ায় রাস্তায়। দেখতে দেখতে দেখি এলাকায় জল জমে গেছে। বৃষ্টির মানে বদলে যায়, বাইরের দৃশ্যপটে স্থবির হতে থাকে ক্রমশ। ভিতরে? কেইবা রাখে তার খবর?

বৃষ্টিতে কেউ কেউ নাকি ঝালমুড়ি খায়, খিচুরি পাকায়... আমার ওসবে মন নেই। কেন জানি ভালো লাগে না। ইউটিউবে রবীন্দ্র সঙ্গীত লাগিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে বৃষ্টি মাপে। যারা রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনে না তারা শোনে প্রেমের গান। বৃষ্টি কী কেবলই প্রেমের কথা বলে? বিচ্ছেদ, ভাঙচুর এসব কী নেই বৃষ্টিতে? নেই হবে হয়তো! এতো খবর তো রাখি নি। নইলে এতো আনন্দ কীভাবে মশগুল হয় মানুষ? অজস্র প্রশ্নবোধকে আটকে যাচ্ছে আঙুল।

বৃষ্টি হলে আমার কবিতা পায় না, প্রেম পায় না। কেবল বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতে ইচ্ছে করে বৃষ্টির রঙ, মৌন ভাষার ব্যাকরণ বোঝার আদিম ইচ্ছেটা মাথাচাড়া দেয় মুষলধারায়, বৃষ্টির ছন্দে নৃত্তটুকু উপভোগ করতে থাকি, অলক্ষ্যেই বেজে ওঠে মোজার্ট। চোখের সামনে ভাসে মার্কো রথকো'র আঁকা অবহেলিত ছবি, যাকে কিনে নিতে চাইছো এখন কোটি টাকায়।

Sunday 24 June 2018

আবিন


আবিন
ইমেল নাঈম

থেমে যেতে যেতে মূর্ছনায় মগ্ন হও,
বাধার প্রাচীর দেখে মুখ লুকচ্ছ কেন আড়ালে?

দূরের মাস্তুল, আলোটুকু ম্লান হয়
নিমগ্ন নাবিক, দূরবীনে চোখ রেখে
মেপে নিচ্ছে জলের রসায়ন, নির্ভুল
হিসেবে লুকোচুরি খেলা বাকী থাকে— প্রত্যহ...

রোজকার অংক মিলে যায়, ভুলের পাশে
দাঁড়িয়ে থাকে কাটাকুটি লাইন— শূন্যের
ফাঁক গলে অট্টহাসি হাসে—

দূরের মূর্ছনায় কে আঁকে বিষণ্ণতার পোর্ট্রেট
আবিনের বেশে ছোরা হাতে আততায়ী মুখ
নশ্বর জীবনের অসমাপ্ত পাঠ নির্বাক
গল্প বলে যায়— দহনে পুড়িয়ে দেয় চারপাশ।

(আবিন সাঁওতালি শব্দ, অর্থ আত্মীয়)


Friday 22 June 2018

হারানো বিউগল

হারানো বিউগল
ইমেল নাঈম

পথ চলে যায়— দূরে, একা বসে হাসছো কেবল
একটা নীলচে পিছুটান ফেরি করে ফিরি
অবয়ব খোলা হাসি প্রবঞ্চনার কথাই বলে
মানা নেই— রোজ নিজস্ব একটা দেয়াল তুলেছি।

আবছা, সবটুকু মনে নেই, নিজেকে নিয়ে বেশি
কথা নেই— প্রান্ত বদলানো অনুভূতি— কথা বলা
বেদনাদের অনুভূতি লিখে রাখে নীরবে, সম্মিলিত
প্রয়াসে জেগে ওঠে বুকের পাশে হাহাকার,
একটা ব্যথা শুধুই গান গায়, নির্বাসন আঁকে।

সেদিনও ছিলো অন্য এক দৃশ্য— কাঁঠালিচাঁপার
মৌতাতে ভরে থাকতো আনন্দের সবটুকু স্তর
হাসির ফোয়ারায় সন্ধ্যা নামতো পৃথিবীতে, গান
গাইতো অচেনা পাখির দল— সৌখিন ব্যান্ডদল
মার্চ করে যেতো প্রেমের বিউগল বাজিয়ে,
দৃশ্যের কোথাও বিরহ নেই, অবিরাম ছুটছি।

বদলে গেলে সবটুকু ভাঙন নিয়ে চোখ পুড়ে,
সুখটুকুর মিলিয়ে যাওয়া দেখেই ক্লান্ত হই
নির্বিবাদ কিছু মূর্ছনার জন্য কিনে রাখি দুঃখ,
সময় পেরিয়ে গেলে ক্রমশ তারা সামনে আসে...
হারানো বিউগলে মলিন সুখের কোলাজ ওড়ে।

স্মৃতির জার্নাল

স্মৃতির জার্নাল
ইমেল নাঈ

'ভালো আছি ভালো থেকো / আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।’— স্মৃতির জার্নালে লেখা কবিতাগুলো আকাশ আঁকছে। দিনের কষ্টগুলো কোথাও তো স্পেস খুঁজে, চায় নির্ভরতার স্থান। দিন শেষে গাইতে চায় প্রেমের গান। অভিমান ঝরে পড়ে, বহুগামী মন থমকে যায়, ওয়াল পেইন্টিংসে ভরে যায় দেয়ালগুলো। অথচ অদৃশ্য দেয়ালটা জেগে থাকে চোখ মেলে।

হাতের পরশ মুছে যাওয়ার প্রলোভনে রেখে দিয়েছি যাবতীয় ভাব, আবেগ। কতটা পথ একসঙ্গে হাঁটা হলে প্রেমিক ভুলে যায় প্রেম? এই প্রশ্নের উত্তর নেই। কেবলই একটা বিস্ময়, তাড়া করে ফিরছে আমাকে। পথ ভুলে যাওয়া প্রেমিকের মতো খুঁজে যাচ্ছি। এপাশ-ওপাশ করেও পাচ্ছি না, আড়মোড়া ভাঙতেই দৃশ্যত ভাঙনের জলছবি খেলছে। নীরবে মুছে যাচ্ছে আমাদের সকল কথা।

আমার লেখা সবগুলো কবিতাই লাল, তারা আরো রক্তাক্ত হচ্ছে। রক্তক্ষরণের ইতিহাস লিখে রেখেছো চোখের কোণায়। নির্বাক অনুভূতিগুলো জেগে থাকে ধ্রুপদী কিছু হাহাকার নিয়ে। উড়োচিঠিতে শোনা যায় কানাঘুষা, মুঠোফোনের কথাগুলো হাপিত্যেশ ঝরায় কেবল। তুমিও অপমানটুকু নিয়ে জেগে থাকো। কোথাও কোনো প্রশ্ন নেই। দীর্ঘশ্বাসে লিপিবদ্ধ হয় নীরবতার বিউগল।

চুপ থাকার অভ্যাসটুকু আয়ত্ত হয়ে গেছে আমাদের। পলেস্তারা খসা শ্রীহীন দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে আছি আমরা দুজনেই— উদ্দেশ্যহীন। ভ্রান্ত ধারণাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে। হাতে হাত রাখা দুটো মানুষ একাকীত্বকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে।

Thursday 21 June 2018

জলরঙ

রিয়া দাশের আঁকা ছবি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা...

জলরঙ
ইমেল নাঈম

ছুটে চলা মুহূর্তগুলোকে পাঠ করি
থাকে রঙবেরঙয়ের নানান আঁকিবুঁকি,
সামনে ডাকছে অদৃষ্টের হাতছানি।
জেনেছি ভালবাসা অভ্যাস মাত্র
এরবেশি শব্দগুলো গোপনে থাকুক।

তুমি আঁকছো দিনের দুঃখগুলো,
মুছে যায় আমার না পাওয়া হিসেব
প্রান্ত ভুলে ঢুকে পড়ি নিষিদ্ধ স্থানে
আকাশ দেখে খুশি হয়ে ঢাকছি মাথা।

তুষার জমে যায় বুকের বাম পাশে,
অনুভাবে মুছে যায় জলরঙ,
প্রান্তিক আদরে লুটোপুটি খাচ্ছো
হেয়ালিতে মাতিয়ে রাখো নিজের সব।

ঈর্ষান্বিত হচ্ছে চারপাশের মানুষ
নির্বাণ জ্বালাচ্ছো তুমি একাকী এখানে

আমি তোমার আঁকা কোনো নায়ক
ছবিতে ঝুলছি তোমার গা বেয়ে
দৃশ্যের শেষে চুম্বনটুকু লেপ্টে গেছে
বেখেয়ালি হাসির আড়ালে, ছবি হয়ে...

Wednesday 20 June 2018

জলের গভীরতা

জলের গভীরতা
ইমেল নাঈম

থেমে যাবার গল্প জানে অশ্বথ বৃক্ষ
মলিন মুখের কাতর চোখের ভাষা
থেমে যাও বারবার, প্রকাশিত
সুখগুলো কেড়ে নিয়েছে রাতের ঘুম।

প্রশ্ন করো না— একটু শব্দ নয়
অস্পষ্ট গল্প লিখা, পুরনো ডায়রির
পাতায় পাতায় অলিখিত দীর্ঘশ্বাস

একুরিয়ামের মাছ বুঝতে শিখেনি
জলের গভীরতা — এক নিঃশ্বাস
অক্সিজেন দামে কিনে ফেলি দুঃখবোধ

প্রতারকের সাথে দেখা হয় আমাদের
রোজকার আয়োজনে বাঁচে দুঃখ
মাছের মতো বুঝতে শিখিনি জলকে...
রোজ গভীরতায় ডুবে যাই অজান্তে।

কোনো যুদ্ধের ময়দানে...

কোনো যুদ্ধের ময়দানে...
ইমেল নাঈম

খেলাঘরে মুখ লুকিয়ে হাসছো অকারণে
নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি আঘাতের পর আঘাত সয়ে
অভিনয়ের মঞ্চে ভোকাট্টা ঘুড়ির মতো উড়ছো
বাধাহীন দৌরাত্ম্যে নিজেকে ভেবেছিলে অধিপতি।

রাজ্যপাট সাজলো বিশাল সৈন্যবহরে— সজ্জিত
শৃঙ্খলাবদ্ধ বিন্যাস দেখে চুপসে যাইনি
অভিশাপে আটকে দিই নি তোমার রাতের ঘুম
অপেক্ষায় বসে থেকে নিজেকে হতাশায় বাঁধি নি।

ঝড় আগমনী গানের সুরটি মুখস্থ করেছো?  
পায়ের ছাপটিকে চিনে রাখো, নীরবে এসে
দাঁড়ালে চিনতে পারবে তো! বেখেয়ালে ছুটে যাবে
যুদ্ধের সকল হিসেব নিকেশ, সৈন্যদল হবে
বিশৃঙ্খল, দেখবে পালিয়ে যাচ্ছে পদাতিক ফন্ট

অশ্বারোহী দলটিও মনোবল হারিয়ে ফেলবে
কামান থেকে ছোঁড়া হবে না তোপ, দিকনির্দেশনা
না পেয়ে তারা পরাজয়ের সামনে দাঁড়াবে— অসহায়
তুমি ঠিক বুঝে উঠতে পারবে না গলদটুকু

শুনবে কেবল পরাজয়ের ধ্বনি, ক্যানেস্তারায়...
চোখমুখ ঘোলাটে হবে, ঝাপসা হবে সামনের দৃশ্য
খবর আসবে বিশ্বস্ত রেজিমেন্টটি করেছে বিদ্রোহ  
দেখবে না ঈশান কোণ থেকে কালো ঘোড়ায় চড়ে

আসছে না পরিচিত কোনো মিত্র— মিথ্যে অহমিকা
পুষে পরাজয়ের কাছে চলে যাবে নিজের অজান্তে।

Sunday 17 June 2018

দিনের হিসাব

দিনের হিসাব
ইমেল নাঈম

সত্য মিথ্যের প্রলেপে বাঁধা পড়ে নিয়মকানুন
বৃত্তের বাইরে জেগে থাকা চাঁদের আলোকে লিখে
রাখি ভুলভাল মন্ত্রপাঠে, জেগে থাকার পুরনো
ভয় গ্রাস করে চতুর্দিকে, তাড়া করে ফেরে শুধু...

নীরবতার ভাষায় ঝুলছে প্রহসন, আত্মঘাতী
হবার পরিণাম জেনেও চুপসে যাই— নির্বাক
সময়ের কাছে লিপিবদ্ধ থাকে পাপ পুণ্য বোধ
ছুটে চলার ফাঁকে হঠাৎ মাথাচাড়া দেয় স্বপ্ন

পিছুটানে বন্ধুর সময়, কেবলই দীর্ঘশ্বাস...
নিজ কানকে শোনানো হয় নি দুঃখ, হতাশা, ক্লেশ
মুগ্ধতা কাটলে অন্য আমি সামনে এসে দাঁড়াই
হাহাকার লিখতে লিখতে ক্লান্ত খুব— নিরুপায়...

নিজেকে ব্যর্থ প্রেমিক মনে হয়, উপেক্ষিত থাকি
আয়নার সামনে দাঁড়ালে ভুল সব তথ্য ভাসে।

Saturday 16 June 2018

পলেস্তারার অনুভব

পলেস্তারার অনুভব
ইমেল নাঈম

ভুলে যাও পাপ পুণ্যের মায়াবী হিসেব নিকেশ
ক্ষতস্থানের প্রলেপে কেবল মিথ্যে ফানুস ওড়ে
বৃত্তের ভিতরে গড়া আদিম নিবাসে
মুছে দাও লোকদেখানো পলেস্তারাদি
সঙ্গীতের ভাষায় জমাটবদ্ধ অভিমান মুছে
মিলিয়েছে আষাঢ়ের বৃষ্টিতে— বন্ধ হল মূর্ছনা।

মলিনতা ঢেকে রাখে বিগত জন্মের পাপগুলো
ঢেকে রাখি চোখ কালো চশমায়, চিনতে পারি না
পরিচিত দৃশ্যের সম্পূর্ণ অনুভব
সুখের ঘরে প্রাচীর টেনে আটকাই
অলিপিবদ্ধ অভিমান, নির্বাক কথোপকথন
শেষে ভ্রান্তির মৌতাতে ভেসে যায় অনাবাদী মন

আয়োজন শেষ হলে নিঃসীম নীরবতা বাকি কেবল
খড়িমাটির প্রেমে ভেসে যায় কাল্পনিকতা, ভ্রম...
হাত ভুলেছে অন্য কোনো হাতের স্পর্শ
সময়ের গলাতে বাঁধি পাগলা ঘণ্টি
নির্বাসনের মায়ায় আটকে ফেলেছি মিথ্যে বোধ
ছুটি এখন কার কাছে — দুঃসময়ের ঘেরাটোপে।

হাতের ভাঁজে লুকোনো সব খেলা, ম্যাজিসিয়ানের
কাঠিতে ভর করে নেমে আসে অদৃশ্য ট্যাকটিস
চোখে বিমুগ্ধতা, রেশ থেকে যায় শুধু
ইস্কাবনের টেক্কায় ঘুরে যায় মোড়
নির্বাক সময়ের হাতেখড়িতে থেকে যায় চিহ্ন
বাকি থাকে না মেলা হিসাবের মলিন অঙ্কখাতা।

Thursday 14 June 2018

চে’র প্রতি ভালোবাসা

চে’র প্রতি ভালোবাসা
ইমেল নাঈম

আমাদের দ্রুত গতিতে যেতে হবে গহীন অরণ্যের দিকে
তেজী ঘোড়াগুলোকে ছুটতে হবে আরো দ্রুত
মাঝপথের শত্রুর চৌকিকে এড়িয়ে যেতে হবে লক্ষ্যে
আমাজন পেরিয়ে পৌঁছতে লাগবে আরো কয়েক দিন

গন্তব্য বলিভিয়া, সেখানে অপেক্ষমাণ সঙ্গীসাথীরা
এরপরে অনিশ্চিত যাত্রা, লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট,
শোষক শাসকের মাঝের ফারাকটা মুছে দিতে
আমাদের নিপুণ লক্ষ্যবেধ, যাত্রাপথে বিপদ...
তবু ছুটতে হবে, মেহনতি মানুষের জন্য— দূরান্তে।

মুছে দিতে হবে ধনী গরিবের বিভেদ, শোষক
দাঁড়াবে কাঠগড়ায়, পাইপাই করে হিসাব বুঝিয়ে
দিতে হবে। ব্যস, স্বপ্ন পুরাণে এমন সব লেখা...

যদিও পুঁজিবাদের এজেন্টরা তৎপর, খুঁজে যাচ্ছে
চিরুনি অভিযানে, পত্রিকার পাতায় ঝুলছে বিজ্ঞপ্তি
দাগী আসামির লিস্টে উঠে গেছে নাম, বিপ্লবের
নামে ছুঁটে চলেছে একদল সঙ্গীসাথী নিয়ে চে...

স্বপ্নচোখে বিভেদহীন সমাজ ব্যবস্থা, সাম্যের গান।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদে তটস্থ শত্রুরা
একদিন, শেষ হলো রূপকথার যাবতীয় হিসেব
নয়টা বুলেটে ঝাঁঝরা হলো মেহনতি চোখের স্বপ্ন
নানান উপমায় আদর্শকে করা হলো বোতলবন্দী,
চে কে ইদানীং দেখা যায় পুঁজিবাদী বিজ্ঞাপনে।

এরপর বদলেছে পাশার দান, পুঁজিবাদী শ্লোগানে
চে ঝুলছেন রঙবেরঙের টিশার্টে, নয় হৃদয়ের মাঝে... 

Saturday 9 June 2018

প্রতারকের প্রতি

প্রতারকের প্রতি...
ইমেল নাঈম

প্রতারক মন তুমি কোন দেশে বাঁধো ঘর?
সামনে সারিবদ্ধ মৃত্যুর হাতছানি,
তার পিছু ঠিকই তাড়া করে ফিরছে আততায়ী

বৃষ্টিতে ভিজে গেছে গ্রামের পথ, রাস্তার দুপাশে
সারিবদ্ধ লজ্জাবতী ফুল। পথ খোলা নেই,
এভাবেই এগোতে হবে বাবেল মান্দেবের দিকে।

খেলাঘরে ছড়ানো ছিটানো রক্তের দাগ, মুছেছে
আত্মীয়তার বন্ধন। ফাঁক গলে অবিশ্বাসটুকু
মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বিমূর্ত মুহূর্তের শিখরে

অন্ধ দারোয়ানেরও কান সজাগ, নগর ফটকে
প্রহরায় রেখে দেয় প্রেমিক প্রেমিকাদের...
বিনিময়ে দেয়ালে ঝুলে প্রতারিত হবার মন্ত্র

প্রাচীর টপকানো একটা মোহ থাকে, বাদামী রঙের
দুঃস্বপ্ন তাড়া করে ফেরা ইনসোমনিয়াক চোখ
নির্বাক ঘর্মাক্ত অনুভূতির অনুবাদ করে কিংবা
ঠাণ্ডাজল, কাঁপাকাঁপা হাতে স্টিলের গ্লাসে লিখেছে
প্রতারক মনের সালতামামী, অতৃপ্তির হিস্যা।

বেদুইন মনে এরবেশি কোনো অনুভূতি নেই
যেটুকু লুকোনো তাও মুছেছে অনাবাদী বৃষ্টিতে...

(বাবেল মান্দেব আরবি শব্দ, এর অর্থ হলো মৃত্যুর দরজা)