Friday 31 March 2017

জিগলো

জিগোলো
ইমেল নাঈম


“তোমাকে আসতেই হবে আমার কাছে,
তোমাকে বসতেই হবে আমার পাশে”

মোবাইলের মিউজিক প্লেয়ার থেকে ভেসে আসে জয় শাহরিয়ার । নয়টা – সাতটা অফিসের শেষে ঘরে ঢুকতেই নয়টা ছুঁয়েছে দেয়ালঘড়ি। মোবাইলের টুপটাপ ম্যাসেজ জানিয়ে দেয় রাত এগারোটায় মিটিং। এমন মিটিং এ সময় লাগে কম, আয় রোজগার ভালো। শর্তাবলি আর স্বাস্থ্য সচেতন থাকলে সুখের ঘরে কোনো আঘাত আসেনা।

ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পড়ে – গন্তব্য জানে মুঠোফোন। শহরের রাজপথ ক্লান্ত, বাড়ী ফিরছে একদল লোক, আবার আরেকদল তারই মতো। পাবলিক বাস ছুটে চলে। জানালা দিয়ে দেখে নগরীর ফুলের দোকানের পাঠ সমাপ্তি। নিয়ন বাতি জ্বলছে অলিগলি বেয়ে, আর দুই পা বাকি পৌছুতে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের। পৌঁছোবার আগ মুহূর্তে সময় মিলিয়ে নেয়।

এগারোটা বাজতে বাকি সতেরো মিনিট। অপেক্ষা নাকি আবারো ফোন – ভাবতে ভাবতে মুঠোফোনের আলো জ্বলে ওঠে। বার্তা খুলে দেখে 16D লেখা, মনে মনে হাসতে হাসতে ভাবে 36D হলে বেশ ভালোই হতো…লিফট পেরিয়ে উঠে যায় পনেরো তলায়। ডোরবেল বাজলে খুলে যায় দরজা…

প্রথমে হালকা পরিচয় আর এক পেগ শিভাস রিগালের পরে শুরু হয়ে খেলাধুলোর প্রদর্শনী। সিনেমার দৃশ্যগুলো ঘর্মাক্ত হয়, নানা রকম শারীরিক কসরতের পরে এক পিস গুদাং গারাম টানতে টানতে হাতে গুঁজে নেয় তিনটি কচকচে নোট। আর স্নান পর্ব শেষে আবার ফিরে চলে একই পথে অলিগলি দিয়ে রাজপথে….

রাত তিনটে, পাবলিক বাস নেই। ফিরতে হলে ক্যাবই একমাত্র ভরসা। হঠাৎ কে যেনো শিষ বাজিয়ে ওঠে, ফিরে তাকাতেই দেখে তার দিকে তাকিয়ে কেউ ইঙ্গিতপূর্ণ হাসিতে গাইছে, we…we…we will rock you… এই দৃশ্যে হঠাৎ ঘৃণায় গা গুলিয়ে ওঠে।

এটি মিলানের কোনো রাতের গল্প, নায়কটিকে রূপক শব্দেই রাঙিয়ে দিলাম আজ।

প্রকাশকালঃ ১৭ চৈত্র ১৪২৩

Thursday 30 March 2017

অন্ধকারের গান

অন্ধকারের গান
— ইমেল নাঈম


পথ ঝরানো অনেক গল্প, মানুষের কাছে ফিরতে হয় এপথ ধরে। অন্ধত্ব অনেক ভালো, সারাদিন অতৃপ্ত বাসনায় পেরোয়। পলেস্তারা খসলেই জেগে থাকে জীর্ণ চেহারা। তাকে ভুলতে পারি ভ্রমণের জীবন বৃত্তান্ত লিখে। ভয় পেও না বললেও ভীত হতে হতে ঢুকে গেছি অন্ধকারের ডেরায়। লীন হতে গিয়ে আবিষ্কার করি পরনের পোশাকের জোড়াতালি। হাভাতে মিটে গেছে খাবারের চাহিদা।

সহিষ্ণুতার পাঠ ভুলে গেছে ভূগোল। শোনা যায়, অন্ধকারের শ্লোগান। নায়িকার কণ্ঠে বেজে ওঠে অসহায়ত্বের গল্প। দাঁতাল মানবের বিকারহীন প্রলাপ, ছিঁড়ে খেতে চায় মানচিত্রের আঁচল। অন্ধকারের গুহায় গান গাইছে কারা যেনো... হায় ঈশ্বর, তোমাকে খুঁজতে চায়নি ওরা প্রেমে, অন্ধ অনুকরণে দাসত্ব মেনে নিয়েছে তোমার। অলীক আর বাস্তবের ফারাকটুকু ভুলে গেছে।

মানব অবয়ব দেখতে প্রায় একই রকম। পার্থক্য নেই, রেখে যাওয়া সময়ের শ্লোগানে মিছিল নেই। এখানে শাদা পায়রা ওড়েনা — মোমবাতির আলো রাজপথে হঠাৎ জ্বলে ওঠে - আর সেটির ফুটেজ খেতে ব্যস্ত একদল লোক। মসজিদ, গির্জা, প্যাগোডা আর মন্দিরে সভ্যতার মশাল জ্বালিয়ে কারা যেনো নিঃসঙ্গতার গান গাইছে যে যার মতো করে। নিজ অনুসারী নিয়ে তারা বিচ্ছিন্ন, কিম্বা নিজ অনুসারীর নানা দর্শন নিয়ে তারা বিচ্ছিন্ন।

এসবের মাঝেই কারা যেনো গায় ভিন্নধর্মী গান। মতবাদের বাইরে গিয়ে দাঁড়ান সবকিছু ভুলে গিয়ে। তাদেরকেও অন্ধকারের দিকে টেনে নিতে চায়। বাতাস গায়ে লাগতেই বুঝি উলটো স্রোতে গা ভিজছে এখন। এক সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্ছল তরুণটিও আজ নিজেকে বৃত্তবন্দী করে ফেলেছে নানা অনুশাসনে।

এসবে হতাশায় মুষড়ে পড়ে ভিন্ন কোনো মুখ, হয়তো লজ্জাও পায় — যেমনটি পায় লজ্জাবতী ফুল।

প্রকাশকালঃ ১৬ চৈত্র ১৪২৩

Tuesday 28 March 2017

গল্প কথকের গল্প

গল্প কথকের গল্প
ইমেল নাঈম

দাঁড়িয়ে আছি পথের শেষে। ভুল বৃত্তের পর পরিসীমা নেই
জ্যা আঁকতে গিয়ে ছেদক এঁকে দিয়েছে সম্পর্কে দোষ নেই...
ভাষার পিঠে নতুন করে আর কোনো শব্দের জন্ম নেয়নি

গ্রামের শ্লোগানে ধান মাড়ানি কলের শব্দ পাওয়া যায়
কৃষকের আড্ডায় উঠে আসে, ট্রাক্টকের কোলাহল
সেচের জলে ডুবে গেছে গোড়ালি, মসজিদের আজান
জানান দেয় কর্মবিরতির সময়। আলিঙ্গনে কিছু
শব্দের জন্মান্তর লিখা হয়... হারিকেন আজও জ্বলে...

বিদ্যুতের বাতি নিভে গেলে কিছু স্বপ্ন লেখা যায়
উঠোন জুড়ে কিছু শান বাঁধানো রঙচঙে গল্প থাকে
দৌড়ঝাঁপ শেষ করে কেউ বসেনি পড়ার টেবিলে

ক্যাসিওর ডিজিটাল ঘড়ির দিনকাল ভালোই। সময়ের ভিড়ে
এখনো হাসছে কল্পনার বিভ্রমে। দিনালাপে থাকে মিথ্যে
প্রহসনে হাসছে একদল কিশোর মুখ, মুখোর স্বপ্নে বিভোর
হয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে নির্ঘুম রাতের একরাশ একাকীত্ব

বহুদিন গ্রাম দেখা হয়নি আমার, তার ভগ্নাংশতেই ক্লান্ত
কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বুঝতে পারি উষ্ণতার রকমফের
এমন গল্প অনেকক্ষণ শোনার পরেও মনে হয় গল্পের শেষ
আজো বাকি গল্প কথকের আঙুলের ভাজে ভাজে...

প্রকাশকালঃ ১৪ চৈত্র ১৪২৩


Sunday 26 March 2017

মায়াডোর

মায়াডোর 
ইমেল নাঈম 


এক কবি তার প্রেমিকার কথা বলতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছিল কলম। কবিতাকে বাঁধতে চেয়েছিলো পলাশ রাঙা ভোরের মেঠোপথে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফুলের সমারোহ, হাতে ছুঁয়ে থাকে অন্য এক অদৃশ্য হাত। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শ্রোতা হিসেবে জন্ম নিয়েছে মফস্বলের ধুলোবালি। পরতে পরতে জমে গেছে বসন্তের আর্দ্রতা। আসলেই বড্ড কুক্ষণে প্রেম নিবেদন করতে গেলো, অসময়ের জয়জয়কার এখন। মুখোশের ভিড়ে প্রান্তিক মুখের বন্ধনকে হালকা করতে শিখেনি। আর অল্পতেই জন্ম নিচ্ছে বিষাদ। 

অসুস্থতাকে ছুটি দিয়ে হঠাৎ করে চেয়ে দেখি, কোনো কোনো সকাল অন্যরকম গল্প বলে। টঙ দোকানের তিনপেয়ে টুলে বসে লেবু চা আর তক্তা বিস্কুটের ফাঁকফোকরে কিছু আলসে গল্প লিখা হয়। হঠাৎ শোঁশোঁ করে চলে যাওয়া সি.এন.জির ধোঁয়া, আর তার পিছুপিছু একদল কিশোর দৌড়ে ফেরে। এরই মাঝে ইশকুলের ঘণ্টা শুরু, এক ঝাঁক প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়, নতুন এক স্বপ্ন বুনতে। কবির চোখে মফস্বলের সবচেয়ে মনোহর দৃশ্য এটি। 

ভবঘুরে কবি, ডান বাম দেখে উঠে পড়ে টুল থেকে, এরপরের গন্তব্য কোথায় জানা নেই। শব্দের খোঁজে পেরিয়ে যাচ্ছে পথ ঘাট, ইটের সলিঙ। পিচ ঢালা পথ হারিয়ে যাচ্ছে শহরের দিকে। কবি দাঁড়িয়ে আছেন তিন রাস্তার মাথায়। ভরদুপুরের চওড়া রোদ, মাথা হঠাৎ ঝিম মেরে ওঠে, তার প্রান্তিক জীবনের গল্প বলা হয়নি এখনো। শোনাও হয়নি নানা বয়সের রূপান্তরের গল্প। তবুও কবির চোখে স্বপ্ন থাকে — সে কল্পনা করে নগরীর শেষপ্রান্তে কোনো কবি ঠিক এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে। 

বন্ধু তোমাকে বলি, কবিকে সামলে রেখো, আনন্দের হিল্লোলে তাকে ডেকো, বেদনায় মুষড়ে পড়লে বুকে আগলে রেখো। তাকে চোখেচোখে রেখো, স্বপ্নের বাঁধনে রাখো। স্বপ্নিল না হলে তাকে কোনো মায়াতেই আটকাতে পারবেনা। 


প্রকাশকালঃ ১২ চৈত্র, ১৪২৩। 

Saturday 25 March 2017

লরা ও ড্যানিয়েলের গল্প

লরা ও ড্যানিয়েলের গল্প
— ইমেল নাঈম

ড্যানিয়েলকে লেখা শেষ চিঠি, প্রেরকের নাম মুছে গেছে
গায়ে জমা ধুলোর স্তূপ প্রমাণ করে অবহেলিত ভালবাসা,
হয়তো কোনো হাত অযত্নে রেখে দিয়েছিলো চিঠিগুলোকে
পিওন আসেনি এপথে অনেকদিন। আর আসবেও না।

প্রেমিকের চিঠি বুঝেনি প্রেমিকা, হয়তো কোনো নাটকের
সংলাপ ভেবে ছুড়ে ফেলেছিল, এরচেয়ে বেশি নির্দয় হলে
আগুনে পুড়তো স্মারকচিহ্নটি। চিঠিগুলো প্রেমের বিজ্ঞাপন
হতে পারতো, হতে পারতো প্রত্যাখ্যাতের ইতিউতি

কিছু শব্দের মোড়কে রেখে দিয়েছিলো জিশুর নাম,
লরা... ক্ষণিকের নাম, রেখে দিয়েছিলো সময়ের আঙুল
রোববার চার্চে ফুল নিয়ে যাওয়া সেই মেয়েটি
সেমেটেরির পাশে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মুখ
দুঃখের বিপণনে গুটিসুটি সেই মায়াবী কিশোরীটি
বুকে কার ছবির প্রতিবিম্ব নিয়ে হাঁটছে দুপুর রোদে!

ড্যানিয়েল, প্রতিদিন চুরি করে দেখছিলে কাকে এভাবে?
দেখতে চেয়েছিলে বিষণ্ণ বালিকার একচিলতে হাসি
তোমাকে লেখা চিঠিগুলো গন্তব্য খুঁজে পেয়েছিলো
আর ঠিকানা খুঁজে পায়নি তার প্রতিউত্তরেরা
এভাবেই কেটেগেলো তোমার নিরুত্তাপ সময়ের গল্প।

সেমেটারির সূর্য হেলে যাচ্ছে পশ্চিমে, লরা আর ড্যানিয়েল
আজ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, ড্যানিয়েলের হাতে সেই শেষ চিঠি
সামনে এপিটাফ। লিখা — লরা ক্রিস্টোফার গোমেজ,
জন্ম ও মৃত্যুসাল ২৬.০৮.১৯৯৫ এবং ২৬.০৯.২০১৪।

প্রকাশকালঃ ১১ চৈত্র, ১৪২৩।

Thursday 23 March 2017

ডাকাডাকি
  ইমেল নাঈম

মধ্যরাতে শব্দের ব্যঞ্জনা মৃত হয়ে ফিরে আসে ,
কলমের ব্যর্থ আঁচড়ে স্বপ্ন আঁকছেন যে কবি
তার কাছে নতজানু হয়েছো শেষ কবে?

কার কথায় পাচ্ছো আঘাত, আঘাত সহ্য
করে  জন্মায় সব। নিজের বলেই অনেক
কিছু নেই, আবার প্রতিটি জিনিস নিজের

একটা গোলক ধাঁধায় ঘুরছি অবিরাম
নিয়ম মেনে... কক্ষপথ এখানে গন্তব্যের ছবি
আঁকেনা,  সুরের ছবিতে কোনো চিহ্ন নেই
ঐকতানে বাজছেনা পাখিদের কলরব,

বাঁধা দিওনা, অবেলায় থামার পথ আঁকেনি
কোনো শিল্পী, পটে আঁকা দৃশ্যপটে রেখেছিলো
বুনোফুল, আর তার উপর কোনো চিহ্ন নেই

আঁকিবুঁকি খেলার শেষে কিছু স্পন্দন লুকিয়ে,
একই কথার পুনরাবৃত্তি পিছনপথে নিয়ে যায়
থামার সময়ে একবার শুধু একবার চিৎকার
করে বলেছিলঃ থামো! আঘাতে রক্তাক্ত করোনা...

এরপর কেটে গেছে অবহেলার অনেক গল্প
গল্পের শেষে রয়ে গেছে জীবনের কিছু পাঠ
পরিমিতবোধে গিলে খাচ্ছে অব্যক্ত শব্দেকে
প্রাত ধ্যানে, এখনো অস্পষ্ট শুনি সেই ডাক...

প্রকাশকালঃ ০৯ চৈত্র ১৪২৩

Wednesday 22 March 2017

গল্পের সমাপ্তিতে

গল্পের সমাপ্তিতে
― ইমেল নাঈম


ভগ্নাংশের প্রহসন। পুরোটা পর্দা খুলে দেখিনি পর্দানশীন
বিমূর্ত রূপে কখন থেমে যায় জীবনের উল্লাসধ্বনি
কার কাছে দিব্যি খেয়েছিলে সোনালি পরশপাথর
ঘুরতে ঘুরতে একদিন দেখি দাঁড়িয়ে শুরুর বিন্দুতে

কপাল! তোমার উপরে বিশ্বাস নেই, নেই অবিশ্বাসও
মেহমানের মতো তুমি এসে হেসে-খেলে যাও শরীরজুড়ে
যান্ত্রিক প্রহসনে গল্প থাকে, থাকে ওষুধবাড়ীর যাতায়াতে
কিছু প্রসঙ্গ লীন হয়, নীলচে আলোয় ধরা পড়ে আঁধার

উত্তাপের পরের স্তরে থাকে নাইট্রোজেন শীতলতা
জমিয়ে দিয়ে স্তূপ বানিয়ে ফেলছে আমার গোপনীয়তা
কাউকে বলিনি, কেউ জানেনা শীতলতার বিপ্রতীপে
কিছু নিকাশ বেহিসাবি হয়ে ঘুরছে ঘুড়ির দেশে।

কাটাকুটি খেলায় হেরে যেতে দেখি সন্ধির পতাকা
অকারণে গাইছে বাতাস এক সর্বনাশা ঝড়ের গান,
সন্ধ্যা নামলো বলে দেখিনি নিয়নের সমাবেশে
ডানাভাঙা প্রজাপতি ভুল করে ঢুকে গেছে এই শহরে
উড়তে ভুলে গেছে, প্রান্তিক পথিকের সম্বল মাত্রই পা

সেও বাড়ী ফিরে চলে যায় পথের শেষ না দেখে
দরজার বুক চিঁড়ে এখন আর খেলছে না কোনো নাম
পর্দায় টেনে দেয়া পথের গল্প থামে এভাবেই, অবেলায়…

প্রকাশকালঃ ০৮ চৈত্র ১৪২৩

Tuesday 21 March 2017

অন্ধের জন্য কবিতা


অন্ধের জন্য কবিতা
  ইমেল নাঈম

অবিশুদ্ধলোকে বেঁচে থাকার খুব ইচ্ছে হয়, হন্য হয়ে খুঁজে ফিরি
বিশুদ্ধ অক্সিজেন আর সবুজ পাতার সালোকসংশ্লেষণের আবাসন,
এর বাইরে কিছু শব্দ মৌন হতে জানে। তাদের জানাই কুর্নিশ!

সময়ের মারপ্যাঁচে অনেক ইতিহাস, সেগুলোর সবটুকু বর্ণিত নয়,
এরমাঝে কিছু ব্যবচ্ছেদ জন্ম নেয় কবিতার মতো করে,
কেউ চায় হাতে পড়ুক হাতকড়া, পায়ে বেড়ী, কবিতা হবে আজ্ঞাবহ
কবিতা হবে অনুগত, রচিত হবে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনায় সুখের আবাদ,

কলমের কালিতে যে শক্তি তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার প্রকাশ ঘটাও
দুটো মিলিয়ে যেই প্রাণের সন্ধান পাওয়া যাবে তাতে বের হবে
নতজানু সময়ের শ্লোগান। রুদ্ররা ভোলে না উদ্ধত তর্জনীর সুর
রাষ্ট্রকে ধুয়ে দিতে পারে যে কলম তাকে আটকাও ছলেবলে

কেনো ভুল পথে উড়ে যায় তোমাদের অন্ধ যুদ্ধবিমান
ভুল পথে উড়ছে শাদা পায়রার দল। ধর্মের মোড়কে অধর্মের
আবাসনকে ছুটি দিয়ে দাও দ্বিধাহীন চিত্তে। রেখে দাও কিছু গোলাপ
দেখো কেউ কী আসে কিনা কাঁটা ঘেরা পথ মাড়িয়ে।

মুখকে খুলতে দাও দিন শেষে, স্বপ্নদ্রষ্টা বলুক তার কাব্যকথা
তাকে মেনে নাও অন্ধের সেবক, কিছুটা রোদের জন্ম লিখা হয়
কিছু শব্দ থাকে আলোর সন্ধানে মত্ত, তাকে চিনেনি অন্ধের দল।


প্রকাশকালঃ ৭ চৈত্র ১৪২৩।

Monday 20 March 2017

চৈত্রে বৃষ্টির চিঠি


প্রিয়তা,
তুমি এখন অনেক দূরে। এখানে চৈত্র মাসে তুমুল বৃষ্টি। পথের সীমারেখা টানতে টানতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম আমরা দুজনেই। বৃষ্টি আমার খুব প্রিয়। বৃষ্টির শেষে পড়ন্ত বিকেলে নরম ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটতে তুমি খুব পছন্দ করতে, কারণ পা ভেজানো এই আর্দ্রতা তোমার খুব প্রিয়। এই মুহূর্তে তুমুল বৃষ্টি পড়ছে না। চৈত্রের দিনে বৃষ্টি কাম্য নয়। তবুও তো আসে, ভিজছে বাহিরে এবং ভিতরে।

অফিসের জানালা দিয়ে চোখ মেললে ব্যস্ত সড়কের দিকে চোখ যায়। সাধারণত কর্মব্যস্ত মানুষের ঢল কমেনা এইখানে। আমিও নয়টা সাতটার নিয়ম মেনে দৈনন্দিন কাজ কারবারে পার করে দিচ্ছি ব্যস্ত ঘড়ির কাঁটার। অবকাশ নেই, অথচ এই বৃষ্টিতে কাজে মন টেকেনা। কবিতাপ্রেমীদের জন্য এই বিকেলের গল্পটা অন্যরকম হয়। তারা রবীন্দ্র সঙ্গীতে মন ডুবিয়ে ঝালমুড়ি খেতে খেতে প্রেমের কবিতা লিখে। আর আমি সবটাই অনুমান করে লিখছি, অফিসের কাজকর্ম ফাঁকি দিয়ে।

প্রিয়তা বৃষ্টি দিন এখন তোমার কেমন কাটে? আগের মতো? মানে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হাঁটতে ভালবাসতে, পরের দিন ঠাণ্ডা, সর্দি, জ্বর বাঁধিয়ে একাকার। মানা করলেই বলতে ধুর কিছুই হবেনা। কিন্তু হতো, আর তোমার সাথে আমার দৈনন্দিন সাক্ষাতটা কমে গিয়ে নেমে যেতো তিন দিনে একবার। তবে তোমার ঘরে যাবার অজুহাত হিসেবে এটি অবশ্য মন্দ ছিলোনা। একদিন আমি বলেছিলাম বৃষ্টির সাথে ঠাণ্ডা, সর্দি, জ্বরের কোনো সম্পর্ক নেই। শুনেই তুমি খুশিতে টুপ করে গালে এঁকে দিয়েছিলে ভালবাসার পরশ। পরক্ষণেই লজ্জা পেয়েছিলে। আর আমি গোবেচারার মতো দরজার দিকে তাকাচ্ছিলাম। কেউ দেখেনি তো!

এই স্মৃতি আমার চোখে জ্বলজ্বল করতো। আমি অনুভব করতাম। তুমি জানো, এটিই প্রথম চুমুর স্বাদ নয় কিন্তু এটিতে লুকিয়ে ছিলো অন্যরকম একটা স্পন্দন। সেইথেকে এখনো নীরবে বাজছে আমার শরীরজুড়ে একটা শিহরণ। এখনো সেই স্মৃতি খুব চোখের সামনে দৃশ্যমান না হলেও কিন্তু খুব একটা অস্পষ্ট নয়। চৈত্র দিনে আমিও বৃষ্টি কাতরতায় ভুগছি। অনেক কথাই বলার ছিলো, শোনারও ছিলো অনেক শব্দ। অনেক শব্দ অল্পতেই উলটে গেছে গতিপথ ভুলে। কোনো অভিমান নেই, সুখ স্মৃতি অনেক কিছুই এঁকেছে। যদিও গল্পের শেষে আমি ফিরে যাই একলা, আর তুমি ছুঁয়ে থাকো কারো হাত।

হাত ধরার গল্পটাও তো বসন্তের। সেই গল্পটায় আমার নামে কোনো অধ্যায় নেই। আমার পুরোটা জুড়ে তুমি নেই। তবুও, তুমি আছো স্মৃতি বিস্মৃতির ডামাডোলে তুমি লুকিয়ে আছো গোপন এক অধ্যায়ে। এমন অনেক ছোটছোট গল্পের মাঝেই আমার শ্বাস প্রশ্বাস, অলিন্দের স্পন্দন।  আর সেইসব গল্পের রেশ নিয়ে আমি প্রতিবার থামি। থেমে যেতেই হয় আমাকে ঠিক আজকের মতো।

ইতি,
রোদ্দুর।
৬ চৈত্র ১৪২৩।