Friday 27 October 2017

নৈঃশব্দ্য - ৩

নৈঃশব্দ্য - ৩
ইমেল নাঈম

ডোডো পাখির মতো হারিয়ে যাও
নীহারিকা পথের ভিড়ে কিছু নক্ষত্র আজও জ্বলে
স্পর্শের বিনিময়ে জিতে নিয়েছো সব অংক,
এলোকেশী চুল লিখছে কবিতা বুকজুড়ে...

ভাত ঘুমের পরিবর্তে এক কাপ চা আসে
অফিস ডেস্কে বাজে আশির দশকের গান
মুখ বইয়ের পৃষ্ঠায় দেখি তোমার মুখ
মূকাভিনয় শিখে নিয়েছি হিল্লোল উৎসবে

আনন্দের ভাষা শেখা হয়নি আমার
আমি চোখ দেখে অনুমান করি দৃশ্য কল্পের
বিনিময়ে পুড়ে যায় বুক তীব্র ক্ষরণে।
নিকোটিন পুষে রেখেছি তোমার বিনিময়ে...

আহামরি গল্পের ভাজে নৈঃশব্দ্যতা লিখি
নৈবেদ্যর আশায় উড়িয়ে দিই নিজের মনন
হাহাকারে লিখে রাখি অপরিকল্পিত বর্তমান

নৈঃশব্দ্য আমাকে পরিণত করে যুদ্ধের জন্যে...
যুদ্ধশেষে দাঁড়িয়ে থাকে প্রলেতারিয়া মুহূর্ত।

প্রকাশকালঃ ৭ কার্ত্তিক ১৪২৪

Tuesday 24 October 2017

নৈঃশব্দ্য - ২

নৈঃশব্দ্য -২
ইমেল নাঈম

বিমূর্ত শব্দের পাশে দাঁড়াও। প্রতিধ্বনি ফিরে আসে নীরবে।
চুপিসারে রেখে দাও মায়াবী ঘাতক, পায়ের চিহ্নে ভাঙন।
গড়বার সমীক্ষায় উড়ে আসে অচেনা অধ্যায়ের প্রলোভন
আত্মকথনে অহমিকা বেজে ওঠে টঙ্কার, একলব্য প্রহসনে।

অর্থ বদলে যায়। পাওয়া আর না পাওয়ার কঠিন সমীকরণে
পরাবাস্তব গল্পের মোহে উত্তাপ লিখে রাখে নীরব আলিঙ্গন
নিজের কাছে ফিরে যাওয়ার ভ্রান্ত বিশ্বাসে অংক মেলাই
কোনো মূকাভিনেতার অভিনয়ের শেষদৃশ্য দেখার অপেক্ষায়
মোহাচ্ছন্ন হয়ে থাকি কল্পনাতে ফানুশ ওড়ানোর ভঙ্গিমায়।

জাগতিক হিসাব মেলানোর জন্য বাস্তুসংস্থান করতে থাকি
ইকোসিস্টেম অনুযায়ী খাদ্য আর খাদকের অপূর্ব সমন্বয়
ঘড়ির কাটায় সময় পেরিয়ে যায়, নগরে জ্বলে সন্ধ্যাপ্রদীপ
মান অভিমান উপচে পড়ে নিয়নবাতির ল্যাম্পপোস্ট তলে
হাহাকার জন্মায় কেবল, পরে থাকে শূন্য কবিতার খাতা।

নিস্তব্ধতার সুরে ভেসে যায় রাত্রিকালীন অবসরের মুহূর্ত
নিজেকে আবিষ্কার করার জন্য রাতটিও হয় মৌনব্রত
এমন রাতে কবিরা সন্ন্যাসী হয়, প্রেমিকারা হয় গোলাপ...
এরপর তাদের মিলনে লিপিবদ্ধ হয় বিষণ্ণতার কবিতা।

প্রকাশকালঃ ৯ কার্ত্তিক ১৪২৪

Saturday 21 October 2017

নৈঃশব্দ্য -১

নৈঃশব্দ্য -১
ইমেল নাঈম

নৈঃশব্দ্য আঁকছি। দিনের শেষভাগজুড়ে কেবল ঐকতান...
সুরের ঘোরে জমেছে বৃষ্টির খেলা। খোয়াবনামায় পেরুচ্ছে
দিন, গাণিতিক নিয়মে ফিরে আসে হারানো দিনের স্মৃতি
মৌখিক নোটিশে মুছে যাচ্ছে আমাদের আঙুলের গল্পগুচ্ছ

মেঘের ভাজে অভিমান। আবহাওয়া সংকেত তিন…
ডুবে গেছে আমার শহরের রাস্তাঘাট, অফিস ফেরত মুখ
মেনে নিয়েছে নাগরিক অসুবিধা। রোমাঞ্চ মুছে গেলে
জীবাশ্ম হয়ে বাঁচে প্রেম। তার বিনিময়ে মেলেনা কিছুই

জানালায় চোখ দিই, এরপিছনে কোনো গল্প লেখা নেই
সিনেমার উড়ে যাওয়া কোনো চুম্বন দৃশ্যের মতো অভিনয়
কেবল সাইরেন বাজিয়ে তোলে, গন্তব্য লেখা হয়নি তার
পাখির ডানায় কল্পবিজ্ঞান লিখি, আবেশ নাকি আকর্ষণ...
আততায়ীবেশে লিপিবদ্ধ করছি পাপ পুণ্যের স্বরলিপি,

নিজের কাছ থেকে লুকিয়ে যাচ্ছে, ছদ্মবেশ ধরে ক্লান্ত
নিজেকে চেনা হয়নি আজও…আয়নায় প্রতিবিম্ব ঝুলে।

প্রকাশকালঃ ৬ কার্ত্তিক ১৪২৪

Wednesday 18 October 2017

প্রলাপ - ১০

প্রলাপ - ১০
ইমেল নাঈম

ভুলে যাওয়া আস্তিনের ভাজে... কপাল চুইয়ে নামে দুঃখ
বিষণ্ণতা লিখতে বসে হারিয়ে ফেলেছি গতজন্মের আনন্দকে
কুড়িয়ে পাওয়া পাতার ভিড়ে লিপিবদ্ধ সহজাত প্রবৃত্তি
হ্যাশট্যাগের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মনের ক্ষুধা

প্রেমিকের চিঠি এখন আর ঘুমোয় না গল্পের বইয়ের ভাজে
দুপুরের ভাতঘুমে নেমে আসেনা চিরচেনা কোনো গান
মুঠোফোনে ভেসে আসে মেঘদল আর পিংকফ্লয়েড

বিকেলে পাড়ার টঙ দোকানে লিখে রাখছি
কিশোর মনের রাজকন্যার ছবি, অদক্ষ হাতের কারুকাজ...
ক্যানভাসজুড়ে প্রহসনের জন্ম লিখি। উড়ে যায় নিকোটিন
এক কাপ উষ্ণ চায়ের মাঝে লিখছি দৈনন্দিন পরাজয়।

বিগত সময়ের কোরাস গাই, ইশকুল মাঠে লিখি শূন্যতা
কিশোর কিশোরীদের ভিড় নেই, সেখানে আছে মায়ার ফানুশ
আইসক্রিমের ফাঁকে পেরিয়ে গেছে অজস্র হেমন্তকাল
অট্টালিকার ভিড়ে অভিজ্ঞ হয়েছি না পাওয়াগুলো নিয়ে।

প্রকাশকালঃ ৩ কার্তিক ১৪২৪

Monday 16 October 2017

সুবোধ উবাচ

সুবোধ উবাচ
ইমেল নাঈম

১।
সুবোধকে আমি ঠিক চিনিনা। তাকে আমার দেয়ালের ভাজে বন্দী সূর্যটার অকুতোভয় দারোয়ান বলে মনে হয়। আচমকা উড়ো বাতাস এসে বলে, সময় এখন পক্ষেনা... থাকে পালিয়ে যাবার অপার আহ্বান। সুবোধ ঘুরে দাঁড়াতে চায়। তার নির্বাক দৃষ্টিতেও মৌন ভাষা লুকোনো। জারুলের বন হতে উড়ে আসা মিষ্টি ঘ্রাণটিও তার চেনা। তবুও কোনো আনন্দ উল্লাস নেই চোখে। নির্বাক সুবোধও কথা বলছে...দেখো... অথচ আমরা তা বুঝতে পারছিনা একদমই।

২।
বিজ্ঞাপন ঝুলছে ফিরে আসিস না আর... কোথায় পালাবে? জীবনের মায়ায়! নাকি আবার ফিরবে জীবন গোছানোর আয়োজনে। সুবোধ পালাতে শিখেনি। সে তো নতুন প্রজন্মের এক ভাবুক বাউল। নিজের সুরে সবুজের জয়গান গায়। সুবোধ কোনো কবির নাম, লিখে রাখে আগমনী গান। নতুন দিনের মেঘের ভাজে, সেও বিশ্বাস করে একদিন সূর্যটার মুক্তি মিলবে।

৩।
ভোর হবে কী! বিস্ময়ের গল্প লিখে রাখি, ছোট্ট শিশুটিও নির্বাক। সুবোধের হাত ছুঁয়েছে তার মাথা। বোঝাই যায় স্নেহের দৃষ্টি। ভরসা নাকি অপারগতা বুঝতে পারছিনা একদমই। আমি দেখি খাঁচাবন্দী সূর্যটাকে। আমার প্রমিথিউস হবার খুব সাধ জাগে।

৪।
সুবোধ এখন জেলে... ভাবছি কীভাবে সম্ভব! যখন বন্ধ হয়ে যায় মুক্তচিন্তার দরজা জানালা, তখনই জন্মান্তর লিখা হয় সুবোধের। সুবোধ ছড়িয়ে যায় সর্বস্তরে। আনন্দের বার্তা ছড়াতে থাকে ভুল সময়ে। শরীরকে আটকে ফেলতে পারো খাঁচার প্রাচীরে। কিন্তু সবার মনের ঘরে যে সুবোধ গাইছে ধ্রুপদী গান, যে সুবোধ একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরির মিছিল কিংবা পয়লা বৈশাখে প্রেমিকার হাত ছুঁয়ে যাওয়া আঙুল। সেই সুবোধকে আটকায় কোন কারাগার? সুবোধ হতাশার মোড়ে দাঁড়ানো কোনো শ্লোগানের নাম। সুবোধ কে? উত্তরে আসে আমি... তুমি... সে... সবাই...

৫।
হতাশার ভিড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা। ভরাট কণ্ঠে উদাত্ত আহবান। পালাস না সুবোধ... লড়াই চলুক... লড়াই সম্পর্কে আর কিছুই জানা যায়নি। কার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে সুবোধ? শত্রুকে চিনেছে সে কোন মায়াবী প্রলোভনে? আমরাও বলি সুবোধ উঠে দাঁড়াও... সূর্যটার দিকে তাকিয়ে আছি আমি...তুমি...আমরা...সকলেই।

৬।
সূর্যের মানে কী! মুক্তি লাভ নাকি ভিন্ন কোনো বার্তা, তার উত্তর খুঁজছে সরকারি উর্দি চাপানো মানুষগুলো। তত্ত্ব উপাত্তের ভিড়ে তারা শ্বাস নিতে ভুলে গেছে। উড়ুক্কু সময়ের সোপানে তারা খুঁজছে শিল্পীকে। সুবোধকে জানতে চাইছে খুব। তারা দেখছেনা পাশের সূর্যটা দাঁড়িয়ে আছে নিরুপায়। পরাধীন মানুষেরা স্বাধীনতার নাম শুনলেই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। স্বাধীনতাকে তারা ভয় পায়। এ কথা জানে খাঁচাবন্দী সূর্যটা।

প্রকাশকালঃ ১ কার্তিক ১৪২৪

Saturday 14 October 2017

প্রলাপ - ৯

প্রলাপ - ৯
ইমেল নাঈম

মখমলি ঘাসে শুয়ে আকাশ দেখি। আশ্বিনে উড়ছে মেঘের ভেলা। উড়ুক্কু মনের অভিসন্ধি, বুঝতে বুঝতে হারাচ্ছে সৃষ্টির সকল ছলাকলা। মোজার্টের সুর নামছে আযানে। নিঃসঙ্গতার গান গাইছে গঙ্গাফড়িং। কাচপোকাদের প্রেম দেখতে বসে প্রেমিক হচ্ছি রোজ। অচেনা আকর্ষণে মোহিত হচ্ছি বারবার।

মুখবইয়ের বাইরে দেখিনি তোমায়। তুমিও নও আমাকে। প্রেম নয়, আবার অপ্রেমও নয়। বন্ধুত্বের সংজ্ঞা অচেনা। ঠিক বুঝতে পারিনা নিজেকে। তোমাকে তো অসম্ভব। সন্ধ্যার নিয়ন জ্বললে মানুষের ডিপ্রেশন দেখি। নিজেকে বেচে দিচ্ছে সুলভ মূল্যে।

রাত বাড়লে পোষা বিড়ালটির সাথে দুঃখ ভাগাভাগি করি। মনের মাঝে ভর করে সুফিজম। খৈয়ামের রুবাইয়াৎ আওড়াতে পেরিয়ে যায় সময়টুকু। সিগারেটের ধোঁয়ায় বিলীন হচ্ছে আমার ভেতর। আমি শূন্যতার বহিঃপ্রকাশ, অবয়বের বাইরেও অন্য এক আমি ঘুরছে মুখোশ পরে।

বিমূর্ত মুহূর্তগুলোকে রাঙিয়ে নিই কাল্পনিক বিন্যাসে। মেঘের রঙ বদলে দিই অসুন্দরে। নিজের সাথে চলছে জেহাদ। দিনের শেষে রয়ে যায় আবেশ। রাসায়নিক বিক্রিয়ার শেষে টিকে থাকে ত্রিভুজাকার রহস্য। নিজের বলে কিছুই থাকেনা। নিজেকেও মনে হয় নিলামে ওঠা কোনো জিপসি প্রেমিক।

প্রকাশকালঃ ২৯ আশ্বিন ১৪২৪

Friday 13 October 2017

প্রলাপ - ৮

প্রলাপ -
ইমেল নাঈম

মৃত্যুর পর অভিমানী কিছু শব্দ জেগে ওঠে
নাব্যতাহীন নদীর গতিপথে জন্মায় কাশফুল
প্রান্ত ভুলে যাওয়া মুখের ভিড়ে অচেনা হই
অভিমানের পারদ গলে জন্মায় মায়ার বাঁধন।

ছিঁড়ে ফুঁড়ে গিলছি সামাজিক রীতিনীতি
অসহায়ত্বের সম্বল হিসেবে নিলামে উঠাই...
নিজেকে নিয়ে আগ্রহ দেখি দুপক্ষের।
গুরুত্ব বুঝে বসে থাকি। অবাক হই কেবল।

আততায়ী সময় পেরিয়ে যেতে থাকে সামনে
বালুঘড়ির খেল উলটে যায় নির্দিষ্ট সময় পরে
দিনশেষে মূল্যহীন হয়ে তাকিয়ে থাকি।
অনিশ্চিত গন্তব্যতে হারাই প্রবেশাধিকার।

উড্ডীন সময়ের ভাজে, কবিতারা গল্প হয়
সবাই ভুল বানানে লিখে রাখে তোমাকে।
চাইলেও জবাব দিতে পারোনা, কিছুকথা
বাকী ছিলো তোমার, ছিলো গাঝাড়া দেয়ার।

অদৃশ্যকালিতে লিখে রাখছো নিজ অতীত
ভবিষ্যতও লিখতে চাইছো একই কালিতে
আগে রপ্ত করো নিষ্প্রাণ চোখের ভাষা
ও'টি অধরা থাকলে অসমাপ্ত থাকবে প্রেম।

প্রকাশকালঃ ২৮ আশ্বিন ১৪২৪

মৃত্যুখবর

মৃত্যুখবর
ইমেল নাঈম

জন্মের পর থেকে আমি কখনো মানুষ মরতে দেখিনি

অজস্র কুকুর মরতে দেখেছি
মরেছে বিড়ালও
ইঁদুর, চামচিকাও দেখেছি মরতে

রোগেশোকে, হানাহানিতে বিলীন হলো নানা জাতি
দেখেছি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান মরতে
মরেছে অনেক সংশয়বাদী, নাস্তিক

কিন্তু কোনো মানুষের মৃত্যুখবর পেলাম না আজও।

প্রকাশকালঃ ২৮ আশ্বিন ১৪২৪

Tuesday 10 October 2017

আয়না কোলাজ

আয়না কোলাজ
ইমেল নাঈম

১।
মোহাচ্ছন্ন প্রলাপ, কে বাজায় এই সুর
হতাশার গলি থেকে দৌড়ে যায় কিশোরী
দৃশ্যপটজুড়ে কেবল সাদাকালো আঁচড়
বাধা পেরুলে লিখি নিজেকে গোপনে।

২।
আয়নার প্রতিবিম্বে খুব অচেনা তুমি
ভাবো, গাণিতিক সূত্রের সবটুকুই ভুল
যোগ অংকে মিলিয়ে ফেলি তোমাকে
দিনান্তের চোরাবালিতে লিখি কবিতা।

৩।
মুখটা সরিয়ে রাখো, আয়নাও মিথ্যে বলে

আযানের সুরে ভাসে দুঃখ নিরন্তর
গীতার শ্লোকে জেগে ওঠে নীলাভ সবুজ

তুমি আমি দুজনেই বেনামা প্রেমিক
দুজনেই পুষে রাখি আযান আর শ্লোক

৪।
আয়না ভাঙলে দাঁড়িয়ে থাকো — একা
বিস্ময়ের সাথে দেখি কেবল ভাঙাগড়া
একদিন খেলারছলে ভাঙবে পৃথিবী
পাপেট শো'র পুতুল হয়ে তাকিয়ে থাকি

৫।
গোপন আয়নাজুড়ে শুধুই প্রহসন
পরিনামে লিপিবদ্ধ করছি তোমাকে
নীল মোড়কে বাঁধানো বইয়ে...
তোমাকে পড়লেই পড়া হয় ঈশ্বর।

প্রকাশকালঃ ২৫ আশ্বিন ১৪২৪

Sunday 8 October 2017

প্রলাপ ৭

প্রলাপ - ৭
ইমেল নাঈম

আমি খুব একটা ভালো বন্ধু হতে পারিনি। ভীষণ অসামাজিক। নিজেকে নিয়ে এতো ব্যস্ত, দেখাই হলোনা পাশের মানুষের টাঙ্গাইলি শাড়ির সাথে ম্যাচ করে টিপের কারিশমা। ওইপ্রান্ত থেকে অভিযোগ উড়ে এলে চুপচাপ শুনি। উত্তর নেই। যেনো ঝড়ের পূর্বাভাষ। নিজের উপর ধিক্কার হয়। বেশি তো চায়নি, চেয়েছিলো একটু পাশে থাকি। একটু সময় দিই। অবসর গলে দুটো মিনিটের খুনসুটি।

মুখবইতে অজস্র কমেন্ট তবুও মনে হয় কবিতা পড়ে থাকে অবহেলিত। পড়িনি বলেই ঝরছে পারিজাত। স্তূপীকৃত হচ্ছে মলিন মুখের অভিমান নিরুত্তাপ সময়ের ভাজে। অলিখিত বরফ গলছে, শোকার্ত মুহূর্তগুলো বারবার জানান দেয় অসহায়ত্ব। রুটিনমাফিক ব্যস্ত সময় কাটে। ম্যাসেঞ্জার খোলা। অবসর নেই একরত্তি। কেবল ছুটছি... দৌড়ছি আর নিজেকে মাপছি অর্থের মূল্যায়নে।

কিছু জিনিস অব্যাখ্যাত থাকে আবার কিছু অনুভবকে ব্যাখ্যাও করা যায়না। নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে থাকতে ভুলে গেছি বন্ধুত্বের দাবীদাওয়া আর চাওয়াপাওয়া। অতটা দায়িত্বহীন নই তবুও মুখোশের আড়ালে জন্মান্তর হয় উপলব্ধি। বাইরে থেকে দেখতে মনে হয় অবিকল মানুষের মতো। আসলে বদলে ফেলা সময়ের হাতেখড়িতে স্লেটে লেখা কিছু কাব্যিক লাইন।

ভাগ্যিস কবি নই। কথিত আছে  সমাজে কবিদের প্রেমিক প্রেমিকা থাকলেও বন্ধুর খুব অভাব। আমি বিমূর্ত দৃশ্যপটে লিখে রাখি, আমি মানুষ হিসেবে মন্দ নই... মুখোশের ব্যবহার শিখিনি এখনো... আর এও জেনে রেখো তোমরা আমি ভালো বন্ধু হতে পারিনি।

প্রকাশকালঃ ২৩ আশ্বিন ১৪২৪

প্রলাপ - ৬

প্রলাপ - ৬
ইমেল নাঈম

উত্তাপের বিনিময়ে কিনে রাখি তোমাকে
নিরুত্তাপ সময়ের কাটাকুটিতে বিবর্ণ গল্পের জন্ম হয়
বিনিদ্র সময়ের পাঠে চলে একাকীত্বের বেচাকেনা

প্রভাবক মুছলে শুধু থাকে প্রাণহীন সম্পর্কের ফসিলস
আবেশের স্তর থেকে ফিরতে পারেনা প্রেমিক
চোখের ভাষা পড়তে গিয়ে অন্ধ হয় কবি
নির্ভুল হিসেবের ভিড়ে বড় ভুলটাই অলক্ষে থাকে

অনুমানের ভিত্তিতে লিখে রাখি জাদুবাস্তবতা
নিসর্গের বিনিময়ে লিখছি ইট সিমেন্টের গল্প
না পাওয়ার ক্ষোভে চুপসেছে অভ্যন্তরীণ অনুভূতি

থমকে যাওয়ার বিনিময়ে মেলেনা কোনোকিছুই
জাদুর শহরে লিখছি তাসের ঘরের হ্যালুসিনেশন
উপরির বিনির্মাণে চাষাবাদ হয় কোমল নিঃসঙ্গতার

সামলে চলো... পথের বিনিময়ে লিখছি অপ্রেম।

প্রকাশকালঃ ২৩ আশ্বিন ১৪২৪

Saturday 7 October 2017

প্রতিবিম্ব

প্রতিবিম্ব
ইমেল নাঈম

কাল্পনিক প্রতিবিম্বে মেঘের ভাজে লুকিয়ে প্রতিবিম্ব
ঈশ্বরের শপথ পাঠ করতে বসে হারিয়েছে সুখ
মেঘের ভাজে মাইথোলজিক্যাল স্পর্শগুলো জীবন্ত
দিনান্তের পাঠে শিহরণগুলো বেজে ওঠে অবেলায়।

ঘরের কোণায় বিরতিহীন জ্বলছে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি
বাতাস নেই, নেই সুঘ্রাণ... নন্দিত সময়ের রূপকথায়
ঝুলছে ভেন্টিলেটরে একজোড়া চড়ুইপাখির সংসার
স্পর্শক আঁকতে আঁকতে পেরিয়ে গেলো খেলাঘরের
সম্পর্কগুলো অকারণে মলিন হয় ভাদ্র মাসের বৃষ্টিতে

মেঠোপথে নামছে পাহাড়ি তরুণী, মুগ্ধতার বিনির্মাণে
কতটা ঋণ জমা! কতখানি দায়ী অনাবাদী প্রহর!

হিসাব মিটলেও শেষবারে বারবার উঠে আসো তুমি,
লোডশেডিংয়ে জ্বলছে মোমবাতি, উৎসবে লিখছি
সবাক সময়ের মূকাভিনয়। নির্বাক দৃষ্টিবিনিময়ে
লিপিবদ্ধ পাপ পুণ্যের আমলনামা, বৃত্তাকার পথে
আলপনা আঁকছি, মুহূর্তে জন্ম নিচ্ছে বিষাদের রঙ।

প্রকাশকালঃ ২২ আশ্বিন ১৪২৪

Thursday 5 October 2017

প্রলাপ -৫

প্রলাপ - ৫
ইমেল নাঈম

ভেসে আসে প্রাচীন কালের কোনো সঙ্গীত। মূর্ছনায় মেতে উঠেছে চিরকালীন উৎসব। সৃষ্টির আনন্দে মেতে ওঠে কবি। কোজাগরী রাত জেগে আছে, রাজপথে হাঁটছি একাকী। বৈষম্য'র স্তরে স্তরে দেখছি প্রেমিক প্রেমিকার আনন্দ উল্লাস। নিয়নবাতির আয়োজনে কবিতা লিখা হয়, উপচে পড়া ভিড়ে লিখে রাখি নিজেকে।

ব্যস্ত সড়কে হুল্লোড় সঙ্গীত। সামনাসামনি তুমি। ট্রাফিকের ভিড় গলে এগুচ্ছে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। চোখের চশমার প্রতিবিম্ব বলে দেয় মুখবইয়ের নীল নেশায় আসক্ত তুমিও। কানে ভাসে সুফিবাদ। নিঃসঙ্গতার বিপরীতে হাঁটতে ইচ্ছে করে। কোলে জড়িয়েছ ইশকুল ব্যাগ। কিন্তু মুখাবয়ব বলে দেয় ইশকুল পেরিয়েছো অনেক আগেই।

ইতিমধ্যে বিলীন হতে শিখে গেছি। মর্চে ধরা হৃদয়টা চনমন করে উঠে। চাঁদটিকেও ম্লান মনে হয়। প্রথম দর্শনে প্রেমে বিশ্বাসী নই। তবুও এই দেখাকে অস্বীকার কীভাবে করে প্রেমিক মন।

প্রেম নয়, আবার অপ্রেমও নয়। আড়দৃষ্টিতে লিখছো অব্যক্ত অনুভূতি। আমি অনুবাদ করছি তোমার চোখ। চশমায় দেখিনি পুরোটা। আবার যা দেখিছি তাতেও জন্ম নেয়নি নাইটকুইন। অনুবাদ শেষে লিখা হয় ভাব সম্প্রসারণ। তার সারমর্ম সম্পূর্ণ ঝাপসা, স্পষ্ট নয় প্রেম নাকি আবেশ...

তুমি নামলে আমার আগের স্টপেজে। মনে হলো এইমাত্র কণকচাঁপা চাকমা আঁকলেন বিষণ্ণতার পোর্ট্রেট। তারপর ছুঁড়ে মারলেন আকাশের দিকে। সেখান থেকে জন্ম নিলো প্রেম আর অপ্রেমের মাঝামাঝি অবস্থান। উপরে তাকিয়ে দেখি চাঁদটা এখনো ম্লান। হেডফোনে বাজছে সঙ্গীত... একটা অদ্ভুত ভাললাগা নিয়ে ফিরছি।

প্রকাশকালঃ ২০ আশ্বিন ১৪২৪

Wednesday 4 October 2017

প্রলাপ ৪

প্রলাপ ৪
ইমেল নাঈম

থমকে গেছে আয়োজন, নিপুণ হাতের খেল
ব্যস্ত সময়ে স্বার্থপর হয়ে ঘুরছি দরজায়
খিল সাঁটানো সময়ের ধারাপাতে ক্লান্ত হই
নিরুত্তাপ দৃষ্টিতে লেখা হয় কবিতার জন্ম

পথের ধারে ঝরেছে অজস্র শিউলি
ফুটপাথ ঢেকেছে শহর স্নিগ্ধ মাদকতায়
চোরাবালিতে ডুবেছে সময়ের হিসেবনিকেশ
কল্পনারা সত্যি হয়ে ফেরে ভুল সময়ে

অভিমানের খাতায় লিখা নেই তোমাকে
সব রঙ মাখিয়ে রাখি আঁকবো আলপনা
মুঠোফোনে ভেসে আসে অবান্তর আড়ি
নীরবতা লিখবে আমাদের যাবতীয় রসায়ন।

চুপচাপ রাত নেমে আসবে, কথারাও নিশ্চুপ
প্রলাপের মতো উড়ছে বায়বীয় অভিমান
প্রথাহীন মুখদুটিও ভাঙছে নিবিড় আলিঙ্গন,
প্রলেতারিয়ায় ভাসছি মুড়িমুড়কির মতো,
নাড়ছি কড়া ঠিক দরজায়, ভুল সময়ে।

প্রকাশকালঃ ১৯ আশ্বিন ১৪২৪

Tuesday 3 October 2017

ব্যস্ত দিনের কচড়া

ব্যস্ত দিনের কচড়া
ইমেল নাঈম

সকাল ৭:৩০

চোখ খুলে দেখি সুন্দর সকাল কড়া নাড়ে জানলায়। শহুরে আকাশ এতোটা খোলামেলা নয়। জানলায় চোখ রাখলে সবুজ নেই। ইট পাথরের সভ্যতা আঁকছে দিনের ব্যস্ততা। মুঠোফোনে নোটিফিকেশন চেকের মাঝে অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেছে রুদ্ধদ্বার বিশ্বাস। দুটো পরোটা আর এক কাপ গরম চা, এরপর অফিসের গাড়ি। তারও আগে স্নানপর্ব। দম ফালানোর সময় নেই। নিজেকে রোবটিক্স মুডে রাঙাতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা।

সকাল ১১.৪০:

সকালের শেষের দিক। কাজে ডুবে থাকার প্রয়াস। কাজের ফাঁকে চোখ আজও চলে যায় মুঠোফোনে। মুখবইতে অকারণ ঘোরাফেরা। আচমকা বসের টেলিফোন। ফাইল নিয়ে ছোটাছুটি। আসলে প্রযুক্তি কিনে নিয়েছে আমাদের ব্যস্ত সময়। মুহূর্ত বিলীন হয় এক পলকে। কাজের বিনিময়ে কিনতে চাই সাময়িক সুখ। নিঃসঙ্গতার ফাঁকগলে ব্যস্ত থাকার আয়োজন।

দুপুর ৩.৩০

ভাতঘুম চাপিয়ে আসে। এক কাপ রঙ চা খেয়ে ঘুম তাড়ানোর প্রচেষ্টা। সহকর্মীদের সাথে চলতে থাকে খুনসুটি। দিনের কাজ কতটা বাকি, কতটা হলো আর কতটা হয়নি তার জের টানতে টানতে এগিয়ে চলা।

সন্ধ্যা ৭:০০

কাজ গুছাও। বের হতে হবে শীঘ্রই। এমন অটোসাজেশনে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। পয়মন্ত দিনের শুরুতে কোথাও ঘাটতি থেকে যায়। দিনের শেষেও ঘাটতি থাকে। মধ্যবিত্ত মন বারবার উঁকিঝুঁকি দেয়। নিজের ভিতরের হতাশা জানান দেয়। অপ্রাপ্তিদের উড়িয়ে দিই বিষাদের ধোঁয়ায়। হেডফোন কানে গুজে ছুটে চলি, গন্তব্য নিজের আপন নিবাস।

রাত ৯.৩০

বিছানায় শুয়ে আঁকছি অখণ্ড অবসর। মুঠোফোনে কোনো শব্দ নেই। ইমেল'র ডায়রির পাতা বাড়ছে অভিমানে। বুক সেলফ থেকে উঁকি দিচ্ছেন কাহলিল, ওরহান পামুক। ম্যাসেঞ্জার জুড়ে প্রিয় মানুষের আনাগোনা। 

রাত ১১.৩০:

শুয়ে যাবার আয়োজন। তাতে লেখা হয় একটা নিষ্প্রাণ দিনের সমাপ্তি। সাদামাটা দিনের মাঝে কিছু কিছু আঁচড় থাকে রঙিন। সেগুলো গোপনেই থাকে প্রেমিকার চুমুর মতো।

প্রকাশকালঃ ১৮ আশ্বিন ১৪২৪

Sunday 1 October 2017

প্রলাপ - ৩

প্রলাপ - ৩
ইমেল নাঈম

প্রহসনের বাতি নিভে গেলে জেগে ওঠে চোখ
অনেক রঙচঙে স্বপ্নের বিনিময়ে কেনে নিজেকে।
বিশ্বাসের আদিম ঘোড়া পালিয়ে যায় দূরান্তে
জীবন ব্যালেন্স শিটের হিসেবে মোড়ানো খাতা

প্রান্ত বদলানো মিছিলে বইছে শুধু শোকসঙ্গীত
লাল কাপড়ে বাঁধা চোখ, আলোর থেকে দূরে
সাইরেন বাজলে বুঝি ক্রমান্বয়ে বাড়ে ঘড়ির বয়স
মিথ্যে শ্লোগান বুকে জড়িয়ে হাঁটছে বুড়ো যুবক

দৃপ্তকণ্ঠে নিজের অধিকারটুকু বুঝে নিতে চায়
ভুল মানুষের কাছে এসে হাত পাতে দিনশেষে
হতাশার মোড়কে বাজারজাত হচ্ছে মানবিকতা
কর্পোরেট বিজ্ঞাপনে দেখি চোখ ধাঁধানো অফার

নিজেকে এড়িয়ে যেতে চাই নীরবতার শ্লোগানে
কবিতা নিজেকে ব্যতীত কাউকে দেয়নি কিছু
চুপসে গেলে গ্যাস বেলুন ফিরে আসে নীড়ে
আকাশ চেনেনা আবীর, আবীর চেনেনা সন্ধ্যা

টঙ দোকানে বসে দেখি ম্লান সময়ের হাতেখড়ি
নিজের কাছে অচেনা লাগে ধূসর চারপাশ।

প্রকাশকালঃ ১৭ আশ্বিন ১৪২৪