Thursday 29 June 2017

সমুদ্রের সাথে কথোপকথন

সমুদ্রের সাথে কথোপকথন
ইমেল নাঈম

সময় পেরিয়ে যায় খেলার ছলে। ঘড়ির কাটাটিও আটটায় এসে বিরতিতে নামে। চুপচাপ জলরাশি এসে খেলে যায় আমার সামনে। তীব্রতা মাপিনি তখনো। দেখতে দেখতে প্রশ্ন করিনি, কে কতটা নিঃসঙ্গ। সমুদ্র নাকি আমি...!

কোলাহল থেমে গেছে অনেক আগেই। সবাই ফিরে গেছে গন্তব্যে। গাঙচিল নেই, তার ডাকাডাকিও নেই। জীবন নির্বাহ করা স্থানীয় মুখেরাও বাক্স পেটরা গুছিয়ে চলে যাচ্ছে গন্তুব্য। মাঝেমাঝে দু একটা পর্যটক উট এখানে হাঁটাচলা করে।

সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতে বুঝতে চাইছি, তারাও কি আমার মতো বিলাসী। অল্পেই হাহাকার করে ওঠা সাইরেনের ধ্বনি। নাকি তারাও গন্তব্যে চলে যাচ্ছে নিজেদের দৈনিক হিসাব বুঝে নিয়ে

শুধু সমুদ্র দর্শন আমার নেশা নয়। নিজের হিসাবটুকু মেলাতে মেলাতে সৌখিন সময়টুকু পার করে দিচ্ছি। বিয়ারের ক্যান, এখনো খুলেনি তার মুখ। সেও চুপচাপ দেখে যায় সামনের প্রশ্নবোধক।

নিজেকে চিনতে হলে সমুদ্রই ভরসা। তার মতো বিশ্লেষক আসেনি এই সৈকতে। বিকালের দিকে কিছু ঝিনুক কুড়িয়েছিলো একদল শহুরে কিশোর। আমি খুশিমনে তাকে দেখতে দেখতে কখন যে ডুবে গেছি বিষণ্ণতায়।

রাত বাড়লে বুঝে উঠি, নিঃসঙ্গতাও একটা সঙ্গীত। সবাই এটাকে ভালোমতো চেনে। অথচ, বাজাতে পারে কয়জন? হয়তো কেউই পারেনা। আমি কি পারি বাজাতে?

সমুদ্র তুমি বলে দাও, সঙ্গীতের শেষ নোটটা...

প্রকাশকালঃ ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Wednesday 28 June 2017

সার্কাস

সার্কাস
ইমেল নাঈম

স্পর্শ মুছে যায়, পলিতে ভরে যায় উঠোন
নেই নেই করেও অনেককিছু নিয়ে পূর্ণ
পাপ পুণ্যের হিসাব রাখা নেই, করতলে
রাখা দাম্পত্যকাল, ঠোকাঠুকি করে শুধু।

উড়ুক্কু সময়ের মাপজোখ, আশ্বাস জন্মায়
কর্পূর মিলিয়ে যায় একবিন্দু আশা নিয়ে
হারিয়ে ফেলেছি প্রাপ্তিগুলো খেলার মাঠে
ছিঁড়ে খাচ্ছে হাপিত্যেশ জমানো আবেশ...

ভাগ করতে গিয়ে দেখি নিজেই ভগ্নাংশ
সরু চাঁদের ক্ষণস্থায়ী আয়ু, আনন্দ দিয়ে
মিলিয়ে যায়, তার জন্য অপেক্ষা করছি...

আনন্দ উৎযাপনের কোনো স্পষ্ট কারণ নেই
নিজের সাথে নিজের সম্মোহন করে চলি
যেনো রিংমাস্টারকে অনুসরণে ব্যস্ত ক্লাউন।

বিষণ্ণতাকে মুছে দিতে চাইলে মোছা যায়না
আরো কয়েক পেগ পেটে গেলে জীবনের
মানে ঘোলাটে হতে হতে শূন্যতায় মিলায়

জীবনকে সার্কাসের দু'ঘণ্টার শো মনে হয়,
রিংমাস্টারের আজ্ঞাবহ, বিনোদনের দাস
ভেবে পার করে দিতে হয় দাম্পত্য জীবন।

প্রকাশকালঃ ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Monday 26 June 2017

পথের শেষপ্রান্তে চুরি যায় সোনালী রোদ
কষ্টিপাথরের ভাগ্য গণনায় সিনেমার সংলাপ
বিষণ্ণতাকে ছুঁড়ে ফেললে আকাশ দেখতে হয়
মেঘ ছুঁয়ে যায়, মেঠোপথ নিজেও খুব ক্লান্ত

ব্যাটারি চালিত ইঞ্জিন রিকশাতে পাড়ি দিই
আঁকাবাঁকা ইটের সলিং, পাকা, আধপাকা সড়ক
মাঝে উত্তাল সাগরের ঢেউ আঁকছে গ্রাম্য পথ
সিগন্যালবিহীন সময় কেবল মেঘটুকু ছুঁতে চায়...

অহেতুক রোদ ছুঁয়ে দেখে খামখেয়ালী সকাল
দুপুরের তেজ নিষ্ক্রিয় হয় গাছের ছায়ায়
শানবাঁধানো ঘাট, শান্ত জলের অখণ্ড অবসর
লিপিবদ্ধ করি পুরোনো ডায়রির পাতায়,

হিসেবের খাতা থেকে মুছে দিতে থাকি দিন
সেইসাথে মুছতে থাকে সারাদিনের ভাগ্যলিপি
জানি -- হাতের রেখায় কোনো সুসংবাদ নেই
আঙুলের কড়ে গুণে রাখি বিপদ সংকেত

ফ্লুয়িডে মুছে দিই কালো লেখা, শাদা দাগটিও
কলঙ্কের মতো জ্বলজ্বল করে আমার চারপাশে।

প্রকাশকালঃ ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Sunday 25 June 2017

দাবাড়ু
ইমেল নাঈম

চলে যাও। পুরনো তানপুরাটা ফেলে দিয়েছি
কী দরকার অহেতুক ভিড় ঠেলে শূন্যতা আঁকার
মেঘলা দিনে আকাশও সাজছে বড়ো জ্যোতিষী

মিলে যায় প্রতিবেশীর কুকুরের হাঁকডাক,
হাতের কড়ে গুণে রেখেছিলাম গত শীতের প্রলাপ
প্রহসনে শব্দের কোনো স্পন্দন বাকি  থাকেনা

টানা বৃষ্টিতে অনেক আগেই মুছে যাবার কথা।
হলুদ উঠোনে ধ্রুপদী নৃত্যে ব্যস্ত প্রাচীণ জলধারা
ভিজছে অদৃশ্যমান যা কিছু আছে তার পুরোটা
শূন্যতার দুর্জয় শক্তিকে উপেক্ষা করে থেকোনা।

মধ্যরাতের ঝুমঝুম বৃষ্টিতে ঝাঁঝালো রেশ থাকে,
কিছু কবিতার লাইনের জন্ম হয় এমন সময়ে।
নষ্ট, সদ্যভেজা তানপুরাটাও বাজতে শুরু করে
করুণ সুরে, ওদিকে বাজনা বাদকও দাবার শেষ
চাল সম্পন্ন করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন।

কাল্পনিক দৃশ্য শেষ হবার পরও ঘামছি… আমি...

প্রকাশকালঃ ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Friday 23 June 2017

দৃশ্যপট

দৃশ্যপট
ইমেল নাঈম

মুছে যাচ্ছে পেন্সিলের দাগ, বিরতিহীন যাত্রাপথে
পেরিয়ে যাচ্ছে আমাদের গাড়ী, ফোর লেন সড়ক
পেরিয়ে যাই সবুজের খোঁজে, রাস্তার দু'ধারে
বৃক্ষের সারি টুপি খুলে দাঁড়িয়ে, সূর্যের প্রখরতা
মুছে যায় গতির কাছে, বাতাস কেটে ছুটেছিলাম।

মেঘ জমেছে, কিছু আর্দ্রতা লিখে রেখেছি প্রণয়ে
মণিকোঠায় উত্তাপ ছড়ায় শিহরণ, মেঠোপথের
আবেশ নেই, ভগ্নাংশ চাঁদের সৌন্দর্য নিয়ে
দাঁড়িয়ে গ্রাম। নাগরিক আঁচড় নিয়ে ক্ষতবিক্ষত
রাতের বেলা মাদুর পাতিয়ে আড্ডার জন্মপাঠ।

হঠাৎ চোখ পড়ে আকাশে অগুনিত তারার মেলায়
চুপচাপ স্বর্গ থেকে নেমে আসেন এস এম সুলতান
কল্পনায় অনুভব করি তিনি খোলাহাতে ভরিয়ে
দিচ্ছেন আকাশ, সেই ক্যানভাসে রাঙিয়ে চলেছি।
থেমে যায় কোলাহল, আবার গুটিয়ে নিই নিজেকে

ঘোরের বশে অনেক দৃশ্যকে পরাবাস্তব মনে হয়
চারপাশটা ঘোলাটে হতে হতে মিলিয়ে যায় তারা
সুবহে সাদিকের সুরটা ঠিক অন্যরকম, গতরাতের
চেনা দৃশ্যের সাথে মেলাতে পারিনা কোনোভাবে...

প্রকাশকালঃ ১০ আষাঢ় ১৪২৪

Thursday 22 June 2017

হিসাব

হিসাব
ইমেল নাঈম

মেঘের ভাজে অনেক অপ্রকাশিত শব্দ লুকিয়ে,
অক্ষরের সমাজ আঁকার সময় বদলেছে ভূগোল
ব্যস্ত পরিব্রাজক শুধু উপাত্ত এনে দাঁড় করালেন
স্পষ্ট বোঝা যায়না, অনুমানের উপরে দাঁড়িয়ে
খবরের শিরোনাম হয় একেকটি বিমূর্ত সন্ধ্যা...

রাস্তাজুড়ে ব্যস্ত ট্রাফিক, লাল হলুদ বাতিরা ব্যস্ত।
নৈশপ্রহরীরা বাজায় হুইসিল, শুনশান নীরবতা
নামেনি আমার চারপাশে, কুকুরের হাঁক শুনি।
প্রেমের কবিতা পড়তে পড়তে পেরিয়ে যায় রাত
মধ্যবিত্তের টানাপোড়নে কাটছে দিনান্তের গল্প।

কথার পিঠে গল্পেরা বেঁচে থাকে অনেক সময়
ভিজে গেছে গত সন্ধ্যা মিথ্যে কিছু আলোড়নে
ইউটিউবে ভেসে আসে অচেনা গায়কের গান।
যোগবিয়োগের অংকে ভুল করেছি বারবার।

প্রায়ই খেলোয়াড় হতে গিয়ে খেলনা হয়ে যাচ্ছে
আবরণ খুলে বেরিয়ে আসে রূপ, কালো আলোয়
পরিণত হবার সুস্পষ্ট কোনো রূপকল্প নেই,
ভয় নেই, মিথ্যে ফানুশ ওড়াও আষাঢ়ের রাতে
এভাবে চুপচাপ সময় পেরিয়ে যাবে ভোরের পথে।

গলে মুছে যাচ্ছে মান অভিমানের নিপুণ অভিনয়,
হিসাবের অংকে ভুল কেবলই থাকে, বিজয়গাঁথা
লিখতে বসে বুঝতে পেরেছি ঝরেছে পারিজাত।

প্রকাশকালঃ ৮ আষাঢ় ১৪২৪

Tuesday 20 June 2017

বৃষ্টির শেষে

বৃষ্টির শেষে
— ইমেল নাঈম

দীর্ঘ বৃষ্টির পরে রোদ উঠলে দানা বাঁধে সন্দেহ
মেঘ সরলে সূর্যের আলো নয়, ছুটে আসে আক্রোশ
রোদের তীব্রতার সাথে সাথে আড়ালে চলে যাও
মুহূর্তরা ক্রমশ জড়ো হয় জানালার কোণে,
স্যাঁতস্যাঁতে কার্নিশও লিখে রাখে অভিমান।

দীর্ঘ বৃষ্টিতে কর্পূরের মতো মিলিয়ে যায় মোহ
শোকস্মারক হিসেবে মুঠোয় বন্দী শুকনো চেরি ফুল
রোদ্দুর গান গাইতে গাইতে চলে গেছে দৃষ্টির ওপারে

বৃষ্টির সময়ে জলের শব্দে ভেসে আসে মোজার্ট
জানালায় কান পেতে শুনি, নৈঃশব্দ্যের সঙ্গীত
মেঘ জমছে, আমিও গুণগুণ করে গাইতে থাকি…
হিসাবের বাইরের অনুরণনে ক্যানেস্তারা শুনি।

যুদ্ধাহত হই, দীর্ঘ বৃষ্টির পরে রোদেলা দিনের
কোনো মাহাত্ম্য থাকেনা, আকাশ দেখতে দেখতে
মিলিয়ে যাই, সুরেলা শব্দের কাছে — কল্পনায়।

কল্পনার রাজ্যে ভাসতে থাকে ঝুমবৃষ্টির সিক্যুয়েল।

প্রকাশকালঃ ০৬ আষাঢ় ১৪২৪

Saturday 17 June 2017

লুকোচুরি
ইমেল নাঈম

থেমে যাবার আগ মুহূর্তে দৌড়তে শুরু করি

কিছু শব্দ মৌন হতে গিয়ে ভুলেছে গতিপথ
প্রাণহীন ছুটে চলায় আঁকতে থাকি পোর্ট্রেট

শব্দের কাছে মিনতি, গাছদের অসুখ নেই
ভিজে যায় তারা আমাদের বিপ্রতীপে,

গাণিতিক আঁকাজোকায় কেবল বিষাদ বয়
পলেস্তারা খসলেই বেরিয়ে আসে ভিতর
কালোকে কতটুকু ঢেকেছো ডিসটেম্পারে

আলোর মতো পরিস্কার অথচ কী সুস্থির!
আমিও ব্যথা ঢেকে রাখি নাগরিক সিমেন্টে

Thursday 15 June 2017

চে'র জন্য কবিতা

চে'র জন্য কবিতা
ইমেল নাঈম

টিশার্ট, ব্যানার আর ফেস্টুন থেকে বেরিয়ে এসো
মার খেতে খেতে ক্লান্ত পৃথিবী ঘুরে দাঁড়াতে ভুলেছে
টাকার কুমির গিলছে জাগতিক বেশ্যালয়, দাসত্বের
সার্টিফিকেট নিয়ে দৌড়ছি আত্মত্যাগের ক্যানভাসে

পৃথিবী অনেকদিন নতুন কোনো রূপকথা লিখেনি
সঙ্গী সাথীরাও একে একে নিভিয়ে গেছে মোমবাতি
পাহাড়ি রাজপথ, গহিন বনাঞ্চলে জন্ম হয়েছিলো
যে স্পন্দনের, তার মুখে লাগাম টেনেছে শকুন,
ঘোড়ার গায়ে জিন চাপিয়ে স্তিমিত করেছে স্বপ্ন।

অর্ধ জাগরণে কেটে যায় নিদ্রাহীন রাত, মধ্যরাতে
শোনা যায় দোপেয়ে শুয়োরের নাকডাকা, দিনের
আলো বাঁধা দিতে পারেনি পুঁজিপতির আস্ফালন
দুস্থের রক্ত ঝরছে এখনো, আঁচল ছিঁড়ছে নারীর,
থামছেনা কিছুতেই, মহামারিতে ছেয়েছে পৃথিবী।

বিজ্ঞানের প্রসারে মানুষ ভুলতে বসেছে মানুষকে
ধর্মান্ধদের অশ্লীল দামামায় ঘোলাটে চারিদিক,
হানাহানিতে মানুষ নিজেরাই কাটছে নিজের দেহ
বিপ্লব পরিচিতি পেলো মধ্যবিত্তের আবেগ নামে

স্বপ্নের ঘরে মরচে ধরেছে, গিলে খাচ্ছে আমাদের
আলোহীন সময়ের মারপ্যাঁচ, দ্বিধাগ্রস্থ জীবনকে
বয়ে বেড়াই। কতকাল অপেক্ষা করবে মানুষ!

চে তোমার পুনর্জন্ম হোক বাংলাদেশের কোনো গ্রামে
বিপ্লব টিশার্ট থেকে ছড়িয়ে পড়ুক গহিন বন্দরে
পৃথিবী নিজেকে ভাবতে থাকুক অন্যরকম ভাবে
ভালবাসতে ভুলে যাওয়া মানুষ ভালবাসুক মানুষকে

প্রকাশকালঃ ১লা আষাঢ় ১৪২৪

Wednesday 14 June 2017

মার্চপাস্ট

মার্চপাস্ট
ইমেল নাঈম

থামলে বাড়ে আর্তনাদ, ঘুমের ঘোরে
নেমে আসে মাটি। পাহাড় ধ্বসলে কী থাকে!
সমতলে চেপে দিলো অজস্র মুখ,
ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে হতে এই পরাজয়।

পাহাড় ধ্বসার আগে কেইবা জানতো —
এই ঘুম শেষ ঘুম, সুবহে সাদিকের সময়
পেরিয়ে যায়নি তখনো, পাখিদের কলরব
শোনা যাবেনা আর, বৃষ্টির হিংস্র সিম্ফনি...

পাহাড় ধ্বসলে মুখ বিক্রি হয় বোকা বাক্সে
টাকার বিনিময়ে মিলে নীতিকথার আসর
পাহাড় কাটছে যারা, তাদের শেষকৃত্যের
অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে অসময়ের বৃষ্টিপাত,

পাহাড় ধ্বসলে সবুজের কথা মনে পড়ে
বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তার ব্যাখ্যাও মেলে
ছিদ্রান্বেষণ হয় দোষ পরিমাপ করতে বসে
পাহাড় ধ্বসলে আর কীইবা অবশিষ্ট থাকে?

অতটা জানিনা, নেই বিষদ ব্যাখ্যা। জানি —
আমার শহরে ছুটে চলে মৃতদের মার্চপাস্ট

প্রকাশকালঃ ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Monday 12 June 2017

লুকোচুরি

লুকোচুরি
ইমেল নাঈম

চেনা পথ ঘাট পেরিয়ে যেতে যেতে ফেলে যাই মৃত কিছু সম্পর্ক। পাশে থাকা মুখগুলো আলোকবর্ষের মত দূরেই দাঁড়িয়ে থাকে। রেশ টেনে রাখে সামনের পথ। অভিমানের বুক জড়িয়ে কিছু নীল মেঘ লুকোনো। ইলশেগুঁড়িতে ভিজে ভিজে রোমান্টিসিজম দেখানো মধ্যবিত্তের বিলাসিতা। হারিয়ে যাবার মন্ত্রে মিশে থাকে ভুল। বৃষ্টিস্নাত পিচের রাস্তা আর ট্রাফিক লিখে রাখে ভুলের খোয়াব।

খেলার আবরণ মুছলে যা কিছু থাকে তাই ধ্রুব সত্য। কিছু যদি আর কিন্তুর মাঝে একাকী হরিত বিকালের আসা যাওয়া। ইটের সভ্যতায় মনুমেন্টের প্রচার মেলে, অন্যকিছুর নয়। প্রেম চাইতে এসে ফিরে যায় প্রেমিক। আর তার ফাঁক গলে বেজে ওঠে সঙ্গীত। পাখিদের নীরবতা পাঠ করার মতো পাঠকের জন্ম হয়নি এখানে। দামী ইলেকট্রনিক ডিভাইসে কতটুকু সঞ্চারিত হয় প্রাণ!

লিখে রাখা চিরকুট এখন গান গেয়ে বেড়ায় পাড়ায় পাড়ায়। প্রেম সবুজ না পেয়ে অন্ধকার গলিতে করেছে সমর্পণ। সেখানের থেকে কিছু ঘাম কিনে নিচ্ছে কর্পোরেট কোম্পানি। গেট, সেট অ্যান্ড গো... এই মন্ত্রে দৌড়চ্ছি। শুধু জানি অতিক্রম করছি। কোথায় গিয়ে থামবো জানা হয়নি আজো।

প্রতিযোগিতার শেষে কেউ নেই, অজস্র প্রাপ্তিতেও নেই আনন্দ। হিল্লোলে জড়িয়ে আছে সূক্ষ্ম কষ্ট। হতাশাদের কোনো প্রাচীরে আটকাতে পারিনা। যা কিছু লিপিবদ্ধ তার সবটাই না পাওয়ার খাতায়। পাওয়া আর না পাওয়ার আড়ালে নীরবে হাসছেন ঈশ্বর। আমরা দৌড়ে পালাচ্ছি নিজের থেকে। আর সবাই বুঝছে উলটো।

প্রকাশকালঃ ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Friday 9 June 2017

সন্ধ্যার ব্লুজ

সন্ধ্যার ব্লুজ
ইমেল নাঈম

গিটারের স্ট্রিং ছিঁড়ে গেলে নতুন সুরের জন্ম হয়
লোডশেডিংয়ের ফাঁকগলে যে সন্ধ্যা নেমে আসে
তাকে শুনিয়ে যাচ্ছে এক অষ্টাদশের কিশোর
ঝুল বারান্দার ওপারে কেউ নেই, শূন্যের আড়াল।

বিকেলের কোমল রোদ বাড়িয়ে দিচ্ছে তেজ
ছাদের দৃশ্যে কেউ দাঁড়িয়ে, অপেক্ষায় চিত্রশিল্পী
মানে নেই জেনেও হাত বাড়ানোই স্বভাব,
ভেসে আসেনা গুণগুণ, কী গাইছে জানেনা কান

সন্ধ্যার ব্লুজে হারমোনিকার করুণ সুর নেই
গৎবাঁধা কিছু কর্ড ঝড় তুলে গ্রীষ্মের বিকেলে
শ্রোতাহীন গান, স্রোতহীন সমুদ্রের কাল্পনিকতায়
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে চূড়ান্ত প্রেমের।

সূর্য মুছলে ফিরে যায় ঘরে, প্রেম এঁকেছিল কে?
গিটার? নাকি সুদর্শন? গিটারের টুংটাং তো
গোপনে এসে দাঁড়ায়নি পাশে, সেও তো জানেনা
দুটো চোখ বেদুইন হয়ে ঘুরছে মরুভূমিতে।

রাতে কবিতার খাতা, ল্যাপটপে রাখে স্মৃতি
কবিতায় নামকরণ করে প্রেমিকের, গিটারের
স্ট্রিং বেয়ে নেমে আসে ব্লুজ, আদুরে মখমলে।

প্রকাশকালঃ ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Wednesday 7 June 2017

অন্বেষণ


অন্বেষণ
ইমেল নাঈম

হাতের তালুতে আটকে রেখেছো যাবতীয় সুখ।
গলছে অমৃত। খেয়ে নিচ্ছে গ্রীষ্মের উষ্ণতা,
খানিক গল্পের পরে, মুছে দিচ্ছি প্রথম চুম্বন...

অনাবাদী সময়ের সাথে আলাপন জমলেই
প্রান্তিক হতাশাদের আনাগোনা মেলে সহজেই
ঝুল বারান্দায় গড়ে ওঠা চড়ুইয়ের সংসার
দেখতে ক্লান্তি নিয়ে পালাচ্ছি বিকাল থেকে

দৌড়ে বেড়ানোর ভাষা জানা নেই, ছুটছি...
ভাবলেশহীন জীবনের গল্পটা পুরো ধোঁয়াটে
সম্ভাবনাহীন সম্প্রসারিত জীবনের মাপজোখ।

কেবল ভুল... সত্যের অন্বেষণে ব্যস্ত থাকি
আয়নায় সামনে দাঁড়াই, সেও মিথ্যে বলে
খুলে সকল আবরণ, আদিম সময় ডাকে
পরিযায়ী পাখিদের আলাপনে বিভ্রম লিখি

দিন শুরুর গল্পরা মুছে যায়, অন্বেষনে টিকে
কেবল গোলাপ থেকে ঝরা একগুচ্ছ পাপড়ি।

প্রকাশকালঃ ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Tuesday 6 June 2017

গ্রহবিদ

গ্রহবিদ
ইমেল নাঈম

ফুরিয়ে যেতে যেতে লিখে ফেলতে পারো বিচ্ছেদের কবিতা
কী কথা বলার ছিলো ভাবতে ভাবতে পেরোও ব্যস্ত সড়ক,
ভাবনার করিডোরে ত্রিমাত্রিক বিন্যাস এঁকে ভাবো দায়িত্ব শেষ
বিসর্জনের গল্পে মুহূর্তগুলোকে রিকল করে সামনে আনো

দেখো কতটা দাগে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে শার্টের পকেট
বিভ্রম কাটাতে লিখে নাও কয়েক ছত্র প্রেমের কবিতা
শিরোনামে লিখো আমার নাম, প্রাপ্তিটুকু স্বীকার করবো

এন্টিসেপ্টিক ক্রিম মেখে ক্ষতকে মুছে দিয়েছি আড়ালে
অতলে পোড়া দাগ, ক্ষত বিক্ষত স্মৃতির রোমন্থন
প্রেম হারালে নদীরাও স্রোতহীন, শ্রোতাহীন পাড় লিখে
রাখে ব্যর্থ ধ্রুপদী গানের সুর, তা মিলিয়ে যাচ্ছে আবীরে।

বুভুক্ষু হৃদয়ের শিরোনাম শুনি, ভয়ে চমকে উঠি অবেলায়
অবহেলার কারণে অনেকদিন বৃষ্টি নামেনি শহরে, উষ্ণতা
ছিঁড়ে খায়, তোমার আমার দূরত্ব বাড়ছে ক্রমাগত
দৃশ্যমান জায়গার পরিমাণ দুহাত, অদৃশ্যমান আলোকবর্ষ।

আমি গ্রহ নক্ষত্রের হিসাব করতে বসি বিরহের সঙ্গীতে।

প্রকাশকালঃ ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

গ্রহবিদ

গ্রহবিদ
ইমেল নাঈম

ফুরিয়ে যেতে যেতে লিখে ফেলতে পারো বিচ্ছেদের কবিতা
কী কথা বলার ছিলো ভাবতে ভাবতে পেরোও ব্যস্ত সড়ক,
ভাবনার করিডোরে ত্রিমাত্রিক বিন্যাস এঁকে ভাবো দায়িত্ব শেষ
বিসর্জনের গল্পে মুহূর্তগুলোকে রিকল করে সামনে আনো

দেখো কতটা দাগে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে শার্টের পকেট
বিভ্রম কাটাতে লিখে নাও কয়েক ছত্র প্রেমের কবিতা
শিরোনামে লিখো আমার নাম, প্রাপ্তিটুকু স্বীকার করবো

এন্টিসেপ্টিক ক্রিম মেখে ক্ষতকে মুছে দিয়েছি আড়ালে
অতলে পোড়া দাগ, ক্ষত বিক্ষত স্মৃতির রোমন্থন
প্রেম হারালে নদীরাও স্রোতহীন, শ্রোতাহীন পাড় লিখে
রাখে ব্যর্থ ধ্রুপদী গানের সুর, তা মিলিয়ে যাচ্ছে আবীরে।

বুভুক্ষু হৃদয়ের শিরোনাম শুনি, ভয়ে চমকে উঠি অবেলায়
অবহেলার কারণে অনেকদিন বৃষ্টি নামেনি শহরে, উষ্ণতা
ছিঁড়ে খায়, তোমার আমার দূরত্ব বাড়ছে ক্রমাগত
দৃশ্যমান জায়গার পরিমাণ দুহাত, অদৃশ্যমান আলোকবর্ষ।

আমি গ্রহ নক্ষত্রের হিসাব করতে বসি বিরহের সঙ্গীতে।

প্রকাশকালঃ ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Sunday 4 June 2017

উপলব্ধি

উপলব্ধি
ইমেল নাঈম

মোহ ভাঙার প্রাক্কালে জারী থাকে নৈঃশব্দ্য
ম্লান মুখ রেখে দিয়েছে ব্যাখ্যাত অভিমান
স্বপ্নের পেগাসাসে উড়ছে কেবল অবক্ষয়
ক্ষয়িষ্ণু ধারাপাতে রক্তাক্ত ইতিহাস লিপিবদ্ধ

হারার মন্ত্র শিখেছে কবিতা, নেই আনন্দোৎসব
কেউ মাছরাঙা পাখির ঠোঁটে লিখেছে ভালবাসা
পথ পেরোয় দূরান্তে, পরে থাকে পায়েরছাপ
নূপুর পায়ে নাচছে ঘাসফড়িঙ, প্রজাপতির
ভিড়ে কিছু কথা ব্যঞ্জনার জন্ম দিয়ে পালায়।

সম্পর্কের টানাপোড়নে একক নায়িকা থাকেনা
একক মূকাভিনয় চলতে থাকে, প্রতিনিয়ত
নিজেকে অতিক্রম করে যাই, মাইমোগ্রাফ
দেখে বিস্মিত হই, দেয়ালে টাঙানো ফটোগ্রাফ
অস্তিত্ব প্রকাশ করে যেভাবে, ঠিক সেভাবে
নিজেকে জানান দিতে দিতে ক্লান্ত।

ভুল আবেশে যদি ভালোবাসা নেমে আসে
সেদিন ঝরে যাবে ইস্পাহানের সব গোলাপ
স্ট্যাচুগুলো শ্রীহীন দাঁড়িয়ে থাকবে মোড়ে
সভ্যতার পাঠ ভুলে যাওয়া প্রাণীদের দলভুক্ত
হলেও বলবো, মানুষ ভালবাসতে শেখেনি।

প্রকাশকালঃ ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪