Thursday 30 November 2017

ডিপ্রেশন অব নভেম্বর

ডিপ্রেশন অব নভেম্বর

হেমন্তের আলোগুলো ম্লান। মলিন কিশোরী নেচে চলেছে ঘুঙুর পায়ে। ভোরের কলতান মুছেছে বিনিদ্রতার কোরাসে। কুয়াশা নামছে তারই হাত ধরে। নির্ঘুম রজনী অভ্যাস মাত্র। সকালের ভিড়ে গরম চা আর দুটো পরোটার ভাজে কাটছে ব্যস্ততার আয়োজন। নীরবতা আঁকতে বসে বিলীন হলো সুখ। নির্বাক আলিঙ্গনে ছড়ায় উষ্ণতা। আমি কেবল ছায়াকেই অনুসরণ করি ভোরের স্নিগ্ধতায়।

বিষণ্ণ সকাল নামে নভেম্বরে। শীতের উড়ুক্কু বেপরোয়া আয়োজনে নামে কুয়াশা। কবিতার খাতায় জমা হয়নি কিছু। বিপরীতমুখী আকর্ষণে ম্লান হয়েছে সদ্য সমাপ্ত ওল্ডমংক। প্রাচীন কোনো শব্দের কাছে নতজানু হয়েছি। নিঃসঙ্গতার আড়ালে খবর রাখছিনা নিজের। নির্ভুল অংকের হিসেবে গিলে খাচ্ছি সাতকাহন।

শীত বাড়লে একাকীত্ব ঘিরে ধরে। ট্যাবলেটের পর ট্যাবলেট। প্রাক্তন প্রেমের কথা মনে পড়ে অসময়ে। নিজের ভিতরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে অদ্ভুতুড়ে পাগলামো। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আর্দ্রতা মাপি সকাল সকাল। আগের রাতগুলো জেগে আছে এখনো। সকালের রোদ দেখছি। মেজাজ হচ্ছে খিটমটে। ওষুধের বেড়াজালে নিজেকে মাপছি সকালের নাশতায়।

সকালটা বয়ে চলে পুরোটা দিন। যেনো বিশাল ক্রেন টেনে নিয়ে যাচ্ছে দানবাকৃতির সকালকে। দুপুরের মায়ায় পড়ে থাকে তার ছায়া। বিকেলের রঙতুলিতেও পড়ে থাকে সেই রেশ।

Tuesday 28 November 2017

দিনলিপির আয়োজন -২

দিনলিপির আয়োজন - ২
ইমেল নাঈম

একটা বিচ্ছেদের গল্প লিখতে বসে পেরিয়ে যায় হরিৎবন
লীন মুহূর্তগুলো উঁকিঝুঁকি দেয় অষ্টাদশের আঙিনায়
স্পর্শের বিনিময়ে জেগে আছে একরাশ না পাওয়া বিরহ

সকালে চৈতালি হাওয়া এসে পথ ভেজায় অকারণে
নির্বাক সময়ের পরতে পরতে লিপিবদ্ধ দুঃখ কথা
দুলদুল ঘোড়ায় অচেনা সরেওয়ার, নিজের পথটুকুও
চিনে উঠিনি এখনো। মলিনতা ছুঁয়ে যাচ্ছে কাঠের গির্জায়
দরজায় খড়িমাটি দিয়ে কে লিখেছে অচেনা সংকেত!

আমরা দুজনেই রঙিন সময়ের ভাজে আরব বেদুইন
কিছু সময় চেয়ে থাকি একে অপরের দিকে অকারণে
বাকীটুকুন অদৃষ্টকে লিখছি গোলাপের চাষাবাদে।

ব্যক্তিগত কথোপকথনের আড়ালে মেঘমল্লার জমে
নীরবতা পাঠের ভিড়ে একটু কোলাহলও অনেককিছু
উড়ছে পরিযায়ীপাখি আমাদের সম্পর্ক নির্ণয় শেষে।

প্রতিদানে পড়ে থাকে ব্যর্থতার সালতামামি,
গেরস্থালী আর বাউণ্ডুলের মাঝের অদ্ভুত জীবন।

Sunday 26 November 2017

দিনলিপিরর আয়োজন — ১

দিনলিপির আয়োজন—১
ইমেল নাঈম

পথ আটকে যায় গলায় বাঁধানো মুক্তোর হারে।

নির্বাক দৃষ্টিতে আঁকা চিত্রপট, ঘোলাটে মেঘ
কাটলে তাকিয়ে থাকে একরাশ আদিম প্রবৃত্তি
উৎকণ্ঠা কাটিয়ে তাকাতেই ভয়ে শিউরে উঠি
চিরতরে মুছে যায় আমাদের রঙিন ফানুশগুলো

দিনলিপিতে লিখে রাখি নৈসর্গিক উপাদান
কিশোর ময়ূর অবিরাম নাচছে বৃষ্টিহীন দিনে
চুপসে যাওয়া বেলুন, গোত্তা খাওয়া ঘুড়ির বেদনা
আবিষ্কারের ফাঁকে পালিয়েছে নির্ভার সময়।

নির্বাক চলচ্চিত্র, সাদাকালো বিশাল ক্যানভাসের
আঁকিবুঁকি খেলার মাঝে দুঃখ নামিয়ে আনছেন —
ভিখারির বেশে ছুটে চলেছেন সুফি সাধক, নিজের
দিকে তাকিয়ে দেখছিনা একদম, প্রান্তিক ছলনায়
পালিয়ে যাচ্ছি নির্ভেজাল সময়ের জাল ছিঁড়ে।

হাপিত্যেশ ঝরানো বিকেলে যোগব্যায়ামের
আয়োজনে কতটা সবুজ দেখেছে চোখ, বাকীটুকু
নিয়ে কৈশোরের লুকোছাপা খেলছে খেলোয়াড়
তিনমাসের হিসেবে সেও কিনছে কর্পোরেট মুহূর্ত।

পথ আটকে যায় গলায় বাঁধানো মুক্তোর হারে।

Friday 24 November 2017

অনিন্দ্য'র চিঠি -১

অনিন্দ্য'র চিঠি - ১
ইমেল নাঈম

প্রথম চিঠি লিখছি। জানিনা ওয়েভ যুগে, ওয়াইফাইয়ের সব ফাঁক গলে এই চিঠি আদৌ পৌছবে কিনা তোমার ঠিকানায়। ঠিকানাটাও পেয়েছিলাম হুট করেই। কাকে যেনো ঠিকানা পাঠাতে গিয়ে ভুল করেই আমার ইনবক্সে পাঠিয়ে দিলে। অতঃপর নীরবতা দেখে বুঝতে পারলে ভুল জায়গায় ফেলেছো নোঙ্গর। অথচ আমি তখন লিখতে বসে গেলাম এই চিঠি। বলতে পারো জুয়া খেলছি আনাড়ি খেলোয়াড় হয়ে। তোমার শহরে কোন সময় মানে ঋতু কোনটা জানিনা। আমার এখানে হেমন্ত। সকালের মিষ্টি ঠাণ্ডা, জানালার ফাঁক গলে এক চিলতে আকাশ চলে আসে উড়ে উড়ে। ঘড়ির কাটায় ঘুমোচ্ছে ব্যস্ত চঞ্চল মানুষগুলো। খানিকবাদেই সব ক্লান্তি ঝেড়েঝুড়ে ছুটতে শুরু করবে আপন মহিমায়।

দিনের শুরুর এই সকালটা সত্যি মধুময়। আকশজুড়ে পাখির কলতান। ভাড়াবাড়ির ছাদ উন্মুক্ত নয় আমাদের মতো ভাড়াটের জন্য। জানালায় তাকিয়ে পাখির গান শুনি। মোজার্ট নামে বুকের ভিতরে। সুরের ব্যঞ্জনায় ভাসতে থাকি অনাবিল সময়ের নায়ে চড়ে। বদলে গেছে আমার শহর সবুজ মাঠ নেই হতে হতে বিলীন উঁচু দালানের ভিড়ে। কর্ণফুলীতে সাম্পানের শরীরে চাপিয়ে দিয়েছে কে যেনো ইঞ্জিন। আধুনিকতার নামে লৌকিক হয়ে উঠছি। এই শহর ভালবাসতে ভুলে গেছে।

তোমার আকাশ মানেই তো প্রাচুর্য। জ্যাকসন হাইটের সুবিশাল রাস্তার পরিপাটী ভাজ দেখে হয়তো তোমার চোখ জুড়ে যায়। শীতের সকাল আসতে কতো দেরি? নাকি এসেও চলে গেছে সে। আকাশ দেখা হয়? নাকি প্রবাস জীবনের আয়োজনে বুঝি আকাশের রঙ যে প্রেম আর বিরহের সংমিশ্রণ তাও খেয়াল করোনি।

কবিতা লিখছোনা অনেক দিন। মুখবইতে নানা ছবির ভিড়ে ক্লান্ত লাগছে আমার। কবিতা, শুধু কবিতাই পারে এই ক্লান্তির কাছ থেকে পরিত্রাণ দিতে। ছবিঘরের বাইরেও জীবন আছে? সেই জীবনটাকে কখনো আবিষ্কার করতে পারিনি। মুখবইতে একটাই সুবিধা কী সুন্দর নিজের ব্যক্তিগত দুঃখ কষ্ট লুকিয়ে রেখে প্লাস্টিক হাসি হেসে বলা যায় বেশ ভালো আছি। অথচ আমার এটুকুতে পোষাবেনা। আমি চাই তার পুরোটা। সেজন্যই চিঠি লিখা। যদিও আমি নিশ্চিত নই এই চিঠি বাংলাদেশ ফেলে সেই আমেরিকায় পৌছবে কিনা আর পৌছলেও তোমার ঠিকানা সে খুঁজে পাবে কিনা। আর পাবার পর তোমার রিয়েকশন কী হবে সেই চিন্তায় ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি।

সময় পেলে তোমার শহরের গল্প শুনিও। শুনতে চাই আমেরিকার আকাশ কী আমার আকাশের মতো, নাকি অন্যরকম। চিঠির শুরুতে সম্বোধন দিলাম না। আসলে বুঝতে পারছিনা কী বলে ডাকবো তোমাকে।

ইতি,
অনিন্দ্য
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ

(বিঃদ্রঃ ইতি শব্দটায় খুব অরুচি। কারণ ইতি মানেই শেষ। আর শেষটা বলতেই ইচ্ছে করছেনা একদমই)

Thursday 23 November 2017

অনুরণন

অনুরণন
ইমেল নাঈম

১.
আঙ্গিক মুছে গেলে দূরবীনের জন্ম হয়
অভিসারী লেন্সের মাঝদিয়ে বয়স বাড়ে নিঃসঙ্গতার

নির্ভুল অংক কষি, বিনিময়ে মেলেনা প্রাপ্তি
লুকোচুরি খেলার মাঝখান দিয়ে চিৎকার শুনি
হেই ম্যান গো... গো... রান ফাস্ট...

সেলাই মেশিনে লিখছি পলাতক জীবনের স্বরূপ

২.
নিংড়ে দিয়েছি সবটুকু ভালবাসা, প্রতিদানে
ব্যাঞ্জোর সুরে কেবল বেজে গেছে কান্ট্রি সং
ঘর ছাড়া হবে বলেই ফিকে হচ্ছে আয়োজন

চুপচাপ নেমে আসুক রাত, সামাজিকতাকে
ছুঁড়ে ফেলে দিলে দাঁড়িয়ে থাকে আদি প্রবৃত্তি

মাছ বিহীন একুরিয়ামের জীবনকে লিখছি
বিমূর্ত অবয়বের আড়ালে শুনি অট্টহাসি

৩.
চুম্বন মুছলে নিজেকে আর আয়নায় দেখোনা
নির্ভরতার মন্ত্রগুলো মুছে গেছে হিসেবের ভুলে

নাহ্‌, এরচেয়ে বেশি কোনো শব্দ হয়নি
দীর্ঘশ্বাসটুকু শুনছি হতাশার মোড়কে।

ইমসোমনিয়া রাতে চুপিসারে নামে কল্পনারা।

৪.
উল্কিতে এঁকে নিলে পিঠ, আর আমি
ভালবাসি ওই চোখ, এভাবেই বিপরীত দিকে
ঠেলে দিচ্ছো অগোচরে। অথচ, জানতে পারছোনা
বঙ্গোপসাগরের গভীরতা মাপি ওই চোখ দেখে
বিপরীতে ডুবে যাচ্ছি চোরাবালিতে,

অন্ধকারের কোরাসে গাইছি এলিজি, ক্রমশ...।

Tuesday 21 November 2017

বিরহ কোরাস

বিরহ কোরাস
ইমেল নাঈম

ভাবনার করিডোর হতে মুছে যাওয়া নাম
মলিনবিধুর স্বপ্নের ঝাড়ফুঁকে পেরুচ্ছে দিন
নিংড়ে দিচ্ছি নিজেকে প্রহসনের বিরুদ্ধে

হাপিত্যেশের জানালায় কার চোখ পড়ে?
কান্না এলেই দাঁড়িয়ে যাও স্নানঘরে
কৃত্রিম ঝর্ণার বুকে লিখে রাখো অপ্রেম
প্রাহসনিক কাটছাঁট, আর নির্ঘুম রাত্রিকাল

কাঁটাছেঁড়ার বিনিময়ে পাওয়ার তালিকায়
উঠে যাচ্ছে দিনান্তের সুখ দুঃখ, জয় পরাজয়
ইচ্ছেরা ইদানীং চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে
দরজার কপাটে কড়া নাড়ে...খুলে দেখিনা...

বিনির্মাণে গড়তে শিখেছি, ক্ষয়িষ্ণুর পরিবর্তে
কিছু ম্লান শব্দরাশি, যেখানে নোঙ্গর ফেলেনা
জাহাজ, মাস্তুলে ঝুলেনা আলোর মশাল
বাতিঘরজুড়ে ব্যক্তিগত ব্যর্থতার ফুলঝুরি।

যোগ বিয়োগের সমাপনে গড়ি নিজস্ব বলয়
যেখানে নেই এর মিছিলে যুক্ত হয় নাম।

Wednesday 1 November 2017

নৈঃশব্দ্য - ৪

নৈঃশব্দ্য - ৪
ইমেল নাঈম

নৈঃশব্দ্য'র কাছে আছে নীরবতার কিছু ঋণ,
রুটিন মাফিক শব্দও নতজানু হয় তার কাছে
হেমন্তের কুয়াশার চাদরে ম্লান হয় ঘামের গল্প
সূর্যের উত্তাপ মিলিয়েছে যাবতীয় পাপ নিয়ে
জানালার ওপাশটায় কেবলই অন্ধকার...

বলেছিলে চুপচাপ হাঁটতে, শব্দ নয় কোনও
নিজের কাছে রেখে দিয়েছি পাপ পুণ্যের অংক
শিকড় উপড়াতে গিয়ে শিখরে পৌঁছেছি
কলতানে মুখরিত দেখে, মুখ ঢেকেছি চাদরে

মায়াজালে আটকে গেছে সময়, মরীচিকার পিছু
ছুটতে গিয়ে নিজেও আঁটকে গেছি ইন্দ্রজালে
অচেনা সময়ের পিছনে সেজেছি অন্ধ পথিক
একই ট্রেনে চেপে চলে যাচ্ছি নিজ গ্রহের বাইরে

শুনেছিলাম, অন্ধকার চিঁড়ে কিছু গল্প লিখা হয়
রঙপেন্সিল আঁকছে ষোড়শী মন, ড্রয়িংপেপারে
নেই অভিযোগ, কেবল অভিমানের পশরা
সাজিয়ে হিসেব করেছে মন খারাপের অংক।

প্রকাশকালঃ ১১ কার্ত্তিক ১৪২৪