Saturday 29 September 2018

৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮
ইমেল নাঈম

তড়িৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে অভিমান। দুঃখগুলোর নিষ্কাশন শেষে পাললিক হৃদয়ে ক্ষতচিহ্নগুলো উঠে আসে গোপন সব অনুভূতিকে জাগিয়ে দিয়ে। মুহূর্তগুলোকে আনন্দের মাঝে লুকিয়ে ফেলেছি অশ্রুজলে। নির্বাক নুহূর্তগুলোকে হাতের কড়ে মেপে ফেলি রোজকার গোপন হিস্যায়। যদিও ব্যর্থ কিছু অনুরণন তবুও অর্থবোধক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে যাই রোজ। আর বিনিময়ে রেখে দিছি পাপ পূণ্যের নিপুণ অংক।

স্বার্থান্বেষী মেঘ উড়ে যায় আমার আঙিনার উপর দিয়ে। প্রান্তিক শব্দগুচ্ছ হানা দিয়ে যায় দক্ষিণা বারান্দায়। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো মোহাচ্ছন্ন সুর। ডেকে চলে আমাকে। দূরের পথ, কার্নিশে জমে থাকা ধুলোর আস্তর, ভেন্টিলেটরের মেহমান চড়ুই দম্পতিদের ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ উড়ে যাওয়ার অন্যরকম কিছু দৃশ্যকে। বিভ্রম নিয়ে বসে থাকি শরতের দৃশ্যপটে। সেপ্টেম্বর ৭, লিখে রাখছে অব্যক্ত অনুভূতিগুলো এভাবে।

রোজকার দিনের বার্তাগুলো ভুলভাল খবর দেয়। ভাবনার করিডোরে মেঘ এসে  হানা দেয়। বৃষ্টি নেই, তুলোমেঘে বিষণ্ণতা উড়ে যায় কেবল। ছুটে চলাটা ভুলে যাই। উড়ে যাবার নেশা আমাকে মুগ্ধ করে দেয়, অজানা গন্তব্যে ছুটে চলার ফ্যান্টাসি আমাকে আহত করে দেয়। ক্লান্তি নামে শহরের ক্যানভাসে। নাগরিক বিকালগুলো মুগ্ধ করতে পারে না। টঙ দোকানে উড়ে চলে ভ্রান্তিকর কিছু মূর্ছনা।

দিনের হিসাবে বাকির খাতায় সব হিসাব। প্রাপ্তির খাতায় শূন্য। কলনার পাতায় নীলচে কিছু কালির আঁকাজোকা। বাস্তবের সামনে দাঁড়ালে মুছে যায় হিসাবের বারতা। সান্ধ্যকালীন বাতাসে উড়ে যায় মেঘ। ল্যাম্পপোস্টের আলো আঁধারিতে নিজস্ব অনুভবটুকু মুছে যায় দুর্বার গতিতে। প্রহসন মুছে যায়, ক্লান্ত বাতাসে পুড়ে যাই। পুড়ে যায় একটা তারিখ, গোটা একটা দিন।

Wednesday 26 September 2018

জিপসির কবিতা

জিপসির কবিতা
ইমেল নাঈম

একদিন হুট করেই পালিয়ে যাবো। দূরের পথে অনাদরে পড়ে থাকা বুনো ফুলের দলকে মাড়িয়ে চলে যাবো দূরের পথে। ঝরে যাবে পরিচয়ের প্রতিটি ধাপ। অচেনার বেশে— জিপসি প্রেমিকের মতো নীরবে পাঠ করে যাবো শরীরের প্রতিটা বাঁক। হারিয়ে ফেলা পথে পথে ঘুরবো। সবটুকু ঘুরে আবার দাঁড়াবো পুরোনো জায়গায়।

পলাতকা সময় আঁকবো, নীরবতার বুকে ছুড়ি চালিয়ে পলাতক হবো। মানে খুঁজবো অকারণে। উপশম দেখে খুশিতে তালগোল পাকিয়ে ফেলবো। মফস্বলের ঘ্রাণটুকু বুকে, চিবুকে, চোখে, মুখে লাগিয়ে হাসতে হাসতে অবহেলার মন্তব্য শুনিয়ে ফেলবো।  অদ্ভুত হাসি হেসে জানান দিবো নিজেকে।

পথ হারিয়ে ফেলা মানুষের মধ্যে নিজেকে অচেনা মনে হবে না। শান্তির পায়রা উড়ে যাবে আকাশসীমায়। অথচ আকাশ আমার নয়। মাটি কী আমার? উত্তর জানি না। শুধুই জানি উদ্দেশ্যহীন উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছি। নির্বাক সময়ের হাতেঘড়িতে কিছুটা ভুল অবধারিতভাবে নেমে আসবে আমার আঙুলে।

বিনির্মাণের ফাঁকে অনেক কিছুই জানা হবেনা আমাদের। রক্ষিত আলিঙ্গনগুলো পুরোনো হিসাব মেলাতে ব্যস্ত হবে।  আর তার মাঝে কিছু প্রহসনের মুহূর্ত গান গাইবে হেঁড়ে গলায়। প্রান্তিক সুখে কিংবা মৃদু বিলাসিতায় ভেসে যাবে শহর থেকে অনেক দূরে।

জিপসিরা পাখিদের মতো, পাখিরা বেহায়া। উড়ে যায় সকালে আকাশ থেকে। ফিরে আসে আবার সন্ধ্যায়। মাটিটিকেও আমার নয়, বরং আশ্রিতের চোখে দেখে ফেলি পৃথিবীর রূপ, ব্যঞ্জনা।

Thursday 20 September 2018

দূরের হুইসেল

দূরের হুইসেল
ইমেল নাঈম

মুহূর্তগুলো রঙিন হয়। ধূসরে বাঁধা পৃথিবীটাও কেমন যেন সেজে ওঠে হঠাৎ। আবীর বিকেলগুলো রাঙিয়ে নেয় নিজেকে। দূরের জংশনে এসে থেমে যায় পৃথিবীর সকল যান। শীতল বাতাস বিনেদী কায়দায় এসে হুড়মুড় করে ভিজিয়ে দিয়ে যায় আমায়।

সান্ধ্যকালীন নীরবতাকে ছুঁয়ে দেখার এই মুহূর্তটুকু অমূল্য। দীর্ঘ আক্ষেপে পুড়ে যায় আমাদের চাওয়া পাওয়ার সব হিসাব। দৈনন্দিন চাহিদাগুলো মলিন হয়ে যায়।আকর্ষণহীন পড়ন্ত বিকাল হ্যালুসিনেসন ছড়াতে ছড়াতে লুকিয়ে যাচ্ছে ব্যস্ত সড়ক ফেলে জারুল বনের দিকে।

এই সুযোগে এই শহরের মানুষগুলোকে চিনে নিচ্ছি সিগারেটের ধোঁয়ায়, চায়ের কাপে বিষণ্ণতার দাম এখন ছয় টাকা মাত্র। প্রেমিকেরা চুমু খেতে ভয় পায়। সন্ধ্যাটিও সাদাকালো হয়ে উঠছে বেখেয়ালি আচরণে।

জাগতিক বিষণ্ণতা মাপা শেষ হলে উঠে দাঁড়াই। সৌখিন মানুষের কান্নার রঙ আঁকতে বসে হারিয়ে ফেলেছি সঙ্গীতেএ ভাষা। বখাটে যুবকের প্রেম দেখে হেসে ফেলেছি ভুল করে।

নিজেদের ভুলে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আমরা সরে যাচ্ছি কাল্পনিকতার উপরে ভর করে। অথচ দূরের ইস্টিশন থেকে ভেসে আসে হুইসেল— অনাদরে, অবহেলায়।

Wednesday 19 September 2018

প্রাহসনিক

প্রাহসনিক
ইমেল নাঈম

বহুদিন পরে একটা ঝড়ো বাতাসের সামনে দাঁড়ালাম
মেঘের কাছে রেখে দিলাম অভিযোগের বারতা
অথচ, আমাদের চোখের ফাঁকে অদেখা সমুদ্র হাসে
পেরিয়ে যাচ্ছি তেপান্তর, আড়ালে লুকচ্ছি কেবল

মেঘের দেশে প্রণয়ের ছাপ, মুছে যায় ক্ষতচিহ্নরা
চিহ্নিত ভালোবাসাও মুছে যাচ্ছে, রেখাগুলো ক্রমশ
স্পষ্ট হতে হতে দাগ কাটছে গভীরে— ক্ষতস্থানে;
ফানুশের মতো উড়ে যাচ্ছি, গন্তব্যহীন পথ ধরে

দূরত্বের মাপকাঠিতে যাযাবর! বেদুঈন প্রেমিক!
দূরবর্তী সংকেতের অপেক্ষায় কাটিয়ে দিচ্ছি
থেমে যায় পাখি জীবনের যতো বেখেয়ালি অংক
হেঁয়ালি বাতাসের মতো উড়ে যায় কল্পনার বীণ

নির্বাক কিছু শব্দের সামনে এসে দাঁড়াই
থেমে যাও, মুহূর্তের সামনে এসে
দেখা না হওয়া কিছু আলিঙ্গন লিখছি
ব্যস্ত খাতায় উড়ে যায় বিনিদ্র দিন

ঠকিয়ে যাচ্ছি নিজেকে, অভিনয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে
বুঝেছি লিপিবদ্ধ যা কিছু তার পুরোভাগে প্রহসন

Thursday 13 September 2018

মিথ্যে পালক

মিথ্যে পালক
ইমেল নাঈম

রেখে দাও একটু পালক, শোকসভার শেষে যাযাবরের
মতো কেউ তো চলে যায় দূরের পথে, রাখে না খবর
মিথ্যে প্রলোভনে গা ভাসিয়ে রেখে দিই পুরনো হিসাব

কপালের রেখাগুলো স্পষ্ট, তাতে রক্ষিত থাকে প্ররোচনা
হুঙ্কার ছড়িয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে, ক্রমাগত অসহায়
হচ্ছি নিজের কাছে, খরগোশের মতো দৌড়চ্ছি
ক্রমশ আড়াল হচ্ছে দিনের সুখ, মোড়কের প্রহসনে।

দিনগুলো ম্লান হতে হতে মুছে যাচ্ছে রোজ, পুড়ে যাচ্ছে
অরক্ষিত আবাসন, প্রাচীর ঢাকা গোপন অট্টালিকা
সাইরেনে ভেসে যাচ্ছে সন্ধ্যার আকাশ, মুছে যাচ্ছে
লিপিবদ্ধ পাপ, চেনাজানা ব্যথারা নিমন্ত্রিত হয় রাতে

দূর দেশ থেকে ভেসে আসে, আত্মভাবনার শেষে
গতিময়তার কাছে হেরে যাচ্ছি রোজ, হাঁপিয়ে উঠছি...
ঝরে পড়ছে সকালের ফুল, বিরান হচ্ছে বাগান,
নির্বাক প্রহসন ছাড়া বাকি থাকছে না কোনো কিছু।

খোলসবদ্ধ কিছু সময়ের কাছে এসে হেরে যাচ্ছি
আত্মপ্রবঞ্চক হয়ে চলে যাচ্ছে একেকটি দিন
শব্দের কাছে এসে নতজানু হচ্ছি নিয়ম মাফিক
পুড়ে যাচ্ছে অদৃশ্য ঘর যার ছাইটুকুও অদৃশ্য।
এতো অদৃশ্যের মাঝে যত্নে থাকুক মিথ্যে পালক...

Saturday 8 September 2018

অবাস্তব অনুভূতি

অবাস্তব অনুভূতি
ইমেল নাঈম

জীবনের অসমাপ্ত আয়োজন থেমে যাক অবেলায়। কোথাও থেমে যায় আয়োজন। দাঁড়াও রেখে যাও। কিছু স্পর্শ প্রজাপতি হয়ে ওড়ে। ক্লান্তি থামে, দূরের দেশে থেমে যায় বিরহ সঙ্গীত। ক্লান্তি নামে দুচোখে। দূরত্বের সাইরেন থেমে যায়, কিছু মুহূর্ত জেগে ওঠে বালুচরের মতো। সৈকতে থামে প্রহসনের সব অংক।

অঙ্কিত সব দৃশ্য, মোহনিয়া কিছু বাতাস এখনো উঁকি দেয় মনের বারান্দায়। রেশ টেনে আটকে দিয়েছি পিছনের দরজার। সামনে কেবলই ধূসর... নিজেকে নিয়ে ভাবছি না আর! বিশাল প্রশ্নবোধকের কাছে এসে থেমে যাই। নিজেকে প্রশ্ন করি। বিনিময়ে বেরিয়ে আসে একই ফলাফল। বিনিদ্র রাতের সঙ্গীতে সঙ ধরে যায় ভিতরের মানুষটি।

যাত্রাপথের শেষটুকু আজও জেগে আছে সবটা নিয়ে। ভ্রান্তি ছড়াচ্ছে শুধু। কল্পনার প্রেমগুলো রঙিন থেকে ক্রমশ সাদাকালো হচ্ছে, সাদাকালো থেকে আবছা... নিজেকে নিয়ে অনেক ভুলভাল খেলা হলো। সময় অপচয় করে থেমে গেছি শেষ প্রান্তে এসে, প্রান্তিক শিল্পীর মতো নীরবতার সন্ন্যাসে ব্রত হয়ে গেছি।

মোহ ভাঙলে নিজের জন্য কিছুই থাকে না। এশট্রেতে জমাটবদ্ধ ছাই, আর মুঠোফোনের জমে থাকা বার্তা। এরবাইরে ঘামের গল্প, আবেগের কাব্য, বাস্তবতার অংক। বহুত প্যারামিটার এসে থমকে দেয় আমার চারপাশ। অন্ধকার গভীর হলে কিছু সুর নিজের কাছে ফিরে আসে— কল্পনায়, অবাস্তব অনুভূতি নিয়ে। চোখ মুছতে মুছতে সকাল আঁকতে থাকি।

Monday 3 September 2018

ক্ষয়িষ্ণু হৃদয়

ক্ষয়িষ্ণু হৃদয়
ইমেল নাঈম

১।
প্রহসনের মুহূর্তগুলো নির্বাক কথাচিত্র হয়ে যায়
বারবার শব্দরা এসে জানিয়ে যায় অনুভূতি
ক্যানভাসে আঁকা কিছু চিত্র, তাতে মিশে যায়
একটা আকাশ, নীল পৃথিবীর মায়াবদ্ধ ইতিহাস।

২।
দাবার ঘুটির মতো চক্রাকারে চলতে থাকে
আক্রমণ - প্রতি আক্রমণের খেলায় মৃত্যু হচ্ছে
সৈন্য, মন্ত্রী, উজির... ঘোড়ার পিঠে চড়ে
পালিয়ে যাচ্ছি — পতনের বিউগলে উড়ছে
সাদা পায়রা, যুদ্ধ বিরতি নামে আকাশজুড়ে।

৩।
এভাবেই রেখে যাই ক্ষতবিক্ষত চিহ্নজুড়ে
নিজের জন্য সময় রাখি নি, বাঁধি নি মায়াতে
আগুন জ্বালিয়ে বসে থাকি সন্ধ্যায়, পাহাড়ে
নেমে আসে নীরবতা— ক্লান্তি... ক্লান্তিতে
বুজে আসে চোখ, পৃথিবী ঘুমোচ্ছে... দেখো...

৪।
মুহূর্তগুলো বিমূর্ত হয়— রঙিন পৃথিবী সাদাকালো
হয়ে লিখে রাখে নিজের জীবনের গল্প
ক্লান্ত যুদ্ধের শেষে হেসে ওঠে পৃথিবীর মানচিত্র
থেমে যেতে যেতে শুনি জীবনের আয়োজন
ক্লান্তিকর যাত্রায় ক্ষয়িষ্ণু হৃদয় রক্তাক্ত হয়...