Saturday 27 May 2017

অদলবদল

অদলবদল
ইমেল নাঈম

থেমে যায় দক্ষিণের হাওয়া, পিছনে ফিরে দেখি মেদুর স্মৃতি
বিভ্রান্ত সময়ের আলাপনে লিখেছিলাম মিথ্যে রূপকথা
গল্পের ভাজে ভাজে টিকে আছে নিঃসঙ্গতার আয়োজন,
তাকে ঘিরে রাখে ভ্যাপসা সকাল, আর দুটো মায়াবী ফিঙে

ঋণগ্রস্ত, ক্লান্ত পৃথিবীর কাছে খুব বেশি চাওয়া পাওয়া নেই
অরক্ষিত সময়ের প্রলাপে কেউ লিখে রেখেছে অবক্ষয়
আমার হাতের মুঠোতে লিপিবদ্ধ হাহাকার , এরবেশি নয়।

সম্প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করতে শেখা চড়ুই দম্পতির
ভেন্টিলেটর সংসার দেখে পার করে দিই বিকেলবেলা
আর অবসরের গান গাইতে গাইতে ফিরে আসছে সূর্যাস্ত

প্রলাপের মতো কিছু বাক্যালাপে অলংকারের ফাঁকগলে
বিষণ্ণ সন্ধ্যা নেমে আসে হলদে উঠোনে। চা-বিস্কুট আর
মশাদের সমবেত সঙ্গীতে কথারা অন্যরকম প্রাণ পায়।

দেখতে দেখতে পেরিয়ে যায় পঞ্জিকার একেকটি পাতা
ঋতুরা বদলে যায়, নিজেদের অদলবদল দেখতে ক্লান্ত।
গতকালের আমি আজকের আমিতেও তফাৎও অনেক।

কতটা বদলেছে সময়, বিনিময়ে পরিবেশ বদলালো কত...
তারচে' বেশি দেখিনি নিজের বদলে যাওয়ার অংকটুকু।

প্রকাশকালঃ ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Friday 26 May 2017

রূপকথার দেশ

রূপকথার দেশ
ইমেল নাঈম

ভরসা রাখার বিজ্ঞাপন দেখে খুব হাসি পায়
নিজের উপরে আজও ভরসা রাখতে শিখিনি
কীভাবে বিশ্বাস রাখি তৃতীয় কোনো পক্ষে।

দিনান্তের গল্পে সিংহাসন আঁকতে ব্যস্ত শিল্পী
তাতে আঁকড়ে থাকার স্বপ্নে মশগুল রাজা,

এমন দৃশ্যপট দেখে ছোট্টবেলার গল্পের কথা
মনে পড়ে, রাজার পোশাক বানানোর গল্প...
সেই পোশাকে যাচ্ছেন উলঙ্গ রাজা, বুদ্ধিমান
সাজতে গিয়ে ভুলছি গাইতে সত্যের জয়গান।

কেউকেউ সেই অবুঝ বাচ্চার মতো চিৎকার
করে উঠলে, নেমে আসে তার উপর খড়গ,
অদৃশ্য গদাঘাতে নুয়ে যাচ্ছে সমাজের মাথা।

রাস্তার ধারে বনসাই দেখে গাই সভ্যতার বুলি
জাদুঘরে স্থান হারিয়ে তারা এখন রূপকথায়।
রোজ বিদ্যুতের আগমনী সঙ্গীত শুনতে আর
মেগাওয়াটের অংকে ঘামে ভিজে রোমকূপ।

শিক্ষক যায় জেলখানায় দুর্নীতির অভিযোগে।
পেশাদারী রাজনীতিবিদ লিখেন চিত্রনাট্য
দুর্বল চিত্রনাট্যে তাপ বাড়ে জ্যৈষ্ঠে চা'র কাপে

প্রহসন ভেবে ঘুম ভাঙেনা রূপকথার দেশের,
মানুষগুলো অল্পতে খুশি, বেকারত্ব বোঝা
আলগাতে তারা খুশি, মূল্যবৃদ্ধির সাথে খাপ
খাইয়ে চলার মাঝে তারা খুশি। নিজের
শখ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে তারা আনন্দিত।

এই রূপকথার দেশটার টাকশাল লুটে যায়
টাকশাল আগুনে পুড়ে যায়, প্রতিদানে মন্ত্রী
রোজকার সুরে ভাঙা রেকর্ডার বাজিয়ে যান
জনগণ চুপচাপ মাথা নামিয়ে মেনে নেয়।

দেশটা রূপকথার, মানুষগুলো খুব অন্যরকম।

প্রকাশকালঃ ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Thursday 25 May 2017

আহ্বান



আহ্বান

— ইমেল নাঈম

পশ্চিমের অস্তরাগ মুছে যায়। মন খারাপগুলোকে বিষণ্ণ দিনের খামে ভরে পাঠিয়ে দিই। শান্তি খুঁজতে বসে হারিয়ে ফেলেছি অনেক সন্ধ্যা। পাখির কলতান থামে, সেইসাথে থামে আলোকচ্ছটা। পত্রিকার পাতাজুড়ে ঝরছে রক্ত। খুনি আমি। মৃত শরীর সেও তো আমার। নিজেকে নিজেই হত্যা করছি। পৃথিবীজুড়ে সঙ্গীত আর নৃত্তের অপূর্ব সমন্বয়। মানুষের চলাচল থেকে নদীর কূলকুল বয়ে চলা তার সবটাতেই লুকোনো সুর। ঘাসফড়িঙয়ের ওড়াওড়ি থেকে অন্যকোনো প্রাণের হাঁটাচলা তার পিছনেও লুকোনো তাল, লয় আর ছন্দ।

তবে, কেনো ঝরাও রক্তপাত। সেখানে কোনো সঙ্গীত নেই, প্রান্তিক শব্দের কাছে জড়তা অনেক। রক্ত কী তোমার ঝরছে না। যেখানে মরছে, সেখানেও তো আছো তুমি। পার্থক্য একটাই — মৃত শরীর নিয়ে ঘুরে ফিরছো পৃথিবীজুড়ে। অপরপক্ষে সে তো অমর, সেও তো ঘুরছে পৃথিবীজুড়ে। তার জন্য ফুলেরা নিশ্চুপ। প্রজাপতিদের নীরবতা প্রমাণ করে সেও মৃত তোমার মতো।

পৃথিবী প্রেমের। সেখানে কেনইবা চাষাবাদ হয় অন্যকিছুর। শান্তির বিনিময়ে গোলাপ নয়, বারুদ দিতে ভালবাসে পৃথিবী। শান্তি আনয়নের উত্তম পন্থা আবিষ্কার করেছে। ফুলের বাগানের পরিবর্তে ফুলের ফ্যাক্টরি। প্রগতি দিয়েছে দাঁত আর নখের অহংকার। সবুজকে হত্যা করছি কালো ধোঁয়ার নিঃসরণে। তার নাম দিয়েছি সভ্যতা। মানুষ পরিণত হচ্ছে যন্ত্রে।

অবসাদে আক্রান্ত পৃথিবী। তার প্রতি পরতে পরতে জমেছে বেনামা ঋণ। সঙ্গীতের আহ্বান থেমে যেতে থাকে। ছিন্নভিন্ন পড়ে থাকে অনেক নিথর দেহ। কারণ খুঁজতে চাইলে বেরোতে পারে অজস্র অংক। সমস্যার গোঁড়া থেকে সরে যাচ্ছি প্রতিবারই। চাইছি, শিকড় থেকে উপড়ে ফেলা হোক টাকাবৃক্ষের, অস্ত্রের কারখানায় গড়ে উঠুক ফুলের বাগান।

প্রকাশকালঃ ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Wednesday 24 May 2017

গণিতের ক্লাস

গণিতের ক্লাস
ইমেল নাঈম


শূন্যতা + পূর্ণতা = অস্থির দিনলিপি, ইকুয়েশনের মাঝে
লুকায়িত কিছু প্রবাবিলিটি, অস্থিরতা বাড়ে লোডশেডিংয়ে
অংকের খাতায় লিখে রাখছে কবিতা, জমাটবদ্ধ শব্দে
প্রাপ্তিযোগ ক্রমশ শূন্য হয়ে ওঠে। ডাকাডাকি থামলে
ক্যালকুলাসের জটিল সমীকরণ একমাত্র সত্য হয়।

লিখতে না পারা অনেক কথায়, গণিত খাতাটা অন্যরকম
রোজকার বর্ণমালার যোগ অংকে ফুটে ওঠে আবেগ
অর্থহীন কিছু শব্দ শোনায় মন ভালো করা সঙ্গীত
যোগ বিয়োগের ভ্রান্ত বিলাসিতার শেষে একাই ফিরছো

পরিমিতির পরিমতবোধে নিজেকে আটকে রাখি সুশীলতায়,
বিচ্ছেদের গল্প পড়তে পড়তে ডুবছি অন্যকোনো সমীকরণে
মন খারাপের পরিমাপ জানে এক শলাকা দেশলাইকাঠি,
জ্বালানো মাত্রই খুঁজে পাই নিঃশেষিত ঘ্রাণ, সান্ত্বনাবাক্যের
শেষে আলটপকা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষারত থাকি।

জ্যামিতির ক্লাসে তুমি বৃত্ত আঁকো, আমি সমান্তরাল রেখা।
পরিস্থিতি আঁকলো বিপ্রতীপ কোণ, আমরা দুটো ভিন্ন
কোণে বসে মিলিয়ে নিচ্ছি আমাদের গণিতের হোমটাস্ক।

প্রকাশকালঃ ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Tuesday 23 May 2017

মিউজিক

মিউজিক
ইমেল নাঈম

থেমে যাও, জমেছে অনেক কথা। আবরণ খুলে
রাখো, প্রলোভনে মুছে যাক হিসাব নিকাশ
কতটুকু পথ মেপেছিলে মিথ্যের বসতির মাঝে
চলে যাবার আগমুহূর্তে, কিছু গল্প ফিরে আসে।

উপদেশ বাক্য জমা নেই, স্বপ্নকে হাতুড়ি পেটা
করে ব্যস্ততার পাঠ নিই, দুঃখের মলাটে বাঁধা
প্রান্তিক আবরণে আটকে ফেলি মৌন শব্দকোষে।
ভেসে আসে অনন্য সঙ্গীত, শুনিনি তার পুরোটা

অন্ধ হয়ে ফিরি – আঁকা হয় নি সম্পূর্ণ বিবর্তন
কিছু শিহরণ অচেনার বেশে ঘুরেফিরে আসে
নিজের ছায়ার পিছনে দৌড়ে লিখি আনন্দ’ পাঠ
সুর থামে, ঝড় থেমে যায়। থাকে ধ্বংসাবশেষ।

নিজেকে নিজের কাছে এত অচেনা লাগিনি আগে
নামতা পাঠেই পেরিয়ে যায় দুঃখের ধ্রুপদী সুর।

প্রকাশকালঃ ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

ধ্বংসস্তূপ

ধ্বংসস্তূপ
ইমেল নাঈম

গুমোট আবহাওয়া। ভেস্তে যায় সব আয়োজন
গাছের বিন্দু ঘাম মিশেছে মাটির পেলবতায়
পাতারা হলুদ হলেই খসে পড়ে শেকড় থেকে।

অক্সিজেনের চাষবাস দীর্ঘ অভ্যাস,মাটি শুষে
নেয় প্রয়োজনীয় জল খাবার। অসুস্থ বাতাস
প্রতিনিয়ত উষ্ণতা ছুঁড়ে ক্লান্ত। তাপমাত্রা বাড়ে,
সেইসাথে বাড়তে থাকে সবুজের থেকে দূরত্ব।

থমকে যায় যৌথ আবাসন। ক্রমাগত বাড়ছে
মুখ আর চোখ, সবুজ কমিয়ে গড়ছি আবাসন,
সহ্যসীমা পার হলে পৃথিবীও নেড়ে চড়ে ওঠে
আর মুহূর্তেই সীমারেখা এঁকে ফেলে সবকিছুর

এরপর অবশিষ্ট যা কিছু ধ্বংসস্তূপ, হাহাকার...

©ইমেল নাঈম

Monday 22 May 2017

সুকরিয়া

সুকরিয়া
—  ইমেল নাঈম

ভেবেছিলাম শেষ হয়ে গেছে সব খেলা
বাক্স-পেটরা গুছিয়ে চলে গেছে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা

নদীর গল্প বলা মেয়েটিও আবদার করেছিলো —  
তাকে নিয়ে লিখতে হবে কবিতা। ভাবনার সাগরে 
ডুব দিই, কিছুই জানিনা আদ্যোপান্তের গল্পে। 

বানান ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে ফিরে যাই পিছনে
বদ্ধ দরজার ওপারে কান্নার শব্দ শুনি, অসংজ্ঞায়িত
কিছু শব্দকল্পে রেখে দিয়েছিলো অভিমান বা অপমান।

হরেক রকম শব্দের ভিড়ে লিখতে বসি, চিত্রপটের
রূপরেখায় ছবি আঁকছে যে কবি সে আমি নই,
আমারই মতো দেখতে কিম্বা সন্ধ্যায় সমুদ্রে হাঁটু 
ডুবিয়ে ভায়োলিন বাজাচ্ছে যে ভিক্ষুক, তার সাথে 
কেনইবা মেলাও আমাকে, অতটা গুণ নিয়ে আসিনি। 

ইচ্ছে হয় কোনো ম্যাজিশিয়ানের প্রেমে পড়ি, 
যে ছড়ি ঘোরালেই দুঃখ রূপান্তর হয় আনন্দে, 
আর আমিও আনন্দ কিনবো সেই মেয়েটির জন্য

জানিনা এমন পিছুটানের মানে কী! তবে প্রেম নয়
কবিদের প্রেমে পড়েনা কেউ, তবুও মানুষ কবিদের
সাথে হেসে হেসে কথা বলে, কিছু আবদার রাখে

প্রকৃতপক্ষে কবিদের দেবার কিছুই থাকেনা, আমিও
এমন দাবীর জন্য সুকরিয়া জানাই সেই মেয়েটিকে
মুখে কখনোই বলিনা, কবিরা বড্ড অসহায়, অক্ষম! 

প্রকাশকালঃ ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Sunday 21 May 2017

রাত

রাত
– ইমেল নাঈম

মধ্যরাত। নীরবতার পাঠ শেষ করে ক্লান্ত। জীবনের উচ্ছ্বাসগুলো ছুটি নিয়েছে। শৈশবের রাজ্যে এখন নেই কোনো মঙ্গল শোভাযাত্রা। বয়সের সাথে বদলেছে অংক। ভুলের মাশুল টানতে টানতে চুপ হয়ে গেছে কথা। কলতান থামলে বুঝতে পারি থমকে আছে সুন্দরের আহ্বান। সঙ্গীতের সুর ভেসে যায় দূরবর্তী মাস্তুলের কাছে। তার কাছে ঋণ নেই। অনেক শব্দ আটকে গেছে গলায়। প্রকাশের সুযোগ নেই বলে মৌন হয়ে ফিরছি রাতের কাছে।

রাত লিখে রাখে তোমাকে ভেবে লেখা কবিতাগুলো। প্রাপক নেই, ডায়রির পাতা ভরে যায় ব্যক্তিগত অহংকারে। মনেপ্রাণে চাইছি কিছু শব্দ নীরবতার ভাষায় কথা বলুক, কিছু স্পর্শ ভুলে যাক মন খারাপের কবিতায়। সীমানার শেষ রেখা টানতে গিয়ে থেমে গেছে আমাদের আনন্দধ্বনি। রাত বাড়া মানেই সকালের কাছে আসা নয়। আলোয় আলোকিত হলেও সকাল হয়না। এখানে রাত থেমে গেছে, গল্পের চরিত্রগুলো পালটেছে, স্ক্রিপ্ট পালটায় নি একদমই।

ইউটার্ন শব্দটার কাছেও আবেদন থাকে। ফিরে যাবার অনন্য প্রয়াস। ঝিনুক জীবনেও থাকে বিলুপ্ত হবার ভয়। এরমাঝে আহ্বান, সতর্কবার্তা থাকে। নিজের কানকে শুনিয়ে বলি, ইমেল সাবধানে পা বাড়াও। নিহত হবার চেয়ে, আহত হতে শেখো। বিশ্বাস করো নিজেকে, সেভাবেই পা বাড়াও ভুলের দিকে। শুদ্ধতা দিবে মহাকাল – এমন ভাবনায় আটকে ফেলোনা নিজেকে। পথ বাড়াতে থাকো, সকালের রোদ ছুঁয়ে দেখবে তোমার পা।

ইমেল মনে রেখো, একটা সুন্দর ভোর দেখার জন্য অজস্র ইমসোমনিয়াক রাতও উপভোগ্য। 

প্রকাশকালঃ ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Saturday 20 May 2017

সময়

সময়
ইমেল নাঈম


একই বৃত্তগামী হয়ে ফিরছি, পথ জানা নেই
কোথায় বাধা জীবনের অভিলাষ? ছুঁয়ে যায়
নানা রঙের মারপ্যাঁচ। জীবনের অর্থ খুঁজতে
বসে হারিয়ে ফেলেছি আর্টপেপার, রঙপেন্সিল।

বাঁধা নেই। আকাশ চিনেছে ঘুড়ি। অষ্টাদশী
মনের অচেনা রঙের ফাঁড়া। পুরনো ঠিকানায়
ফেরে নামঠিকানা বিহীন চিঠি। কবিতার ভিড়ে
কিছু শব্দ ভার্চুয়ালি আটকে যায় ইন্দ্রজালে।

ফিরিয়ে দিয়েছি সংগ্রহশালায় যা কিছু গচ্ছিত।
অনুভূতিকে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম শীতল ঘরে,
আতরদানি, গোলাপজল আর সুরেলা ধ্বনি
ফিরে আসে রঙবেরঙয়ের শব্দের কাছে।

এর বেশি ছদ্মবেশ নেই, গুহাচিত্রের মতো
আমিও খোঁদাই করে রাখি ফুল, পাখি
বদলাবার মন্ত্রে পড়েও বদলাইনি একটুও
অবাক হই অথচ অদ্ভুতুড়ে কিছুই ঘটেনি।

কারণ খুঁজতে বসে হারাচ্ছে অফুরন্ত সময়
আমিও বুড়ো হচ্ছি। মনটাকে আটকে দিয়েছি
কর্ণফুলীর তীরে, সাম্পান হয়ে ভাসছি জলে। 

প্রকাশকালঃ ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Friday 19 May 2017

জীবন প্রবাহ

জীবন প্রবাহ
— ইমেল নাঈম

স্যাঁতস্যাঁতে প্রাচীর পেরিয়ে আলোর সাক্ষাত নেই
সন্দেহপ্রবণ ঋণে জর্জরিত উত্তরের জানালা
প্রান্তিক শহরে বন্ধ্যা, নেই আনন্দের বিজ্ঞাপন।

অলীক স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে গিয়ে ব্যর্থ প্রেমিক
পানামা পেপারস জুড়ে ধানি মরিচের প্রচারণাপত্র
গিলতে বসে ঝালে জিহ্বা পুড়ছে তৃতীয় বিশ্বের।

সোনালি ধানের মৌসুম। ধান মাড়াইয়ের কলও
নব্য প্রেমিক সেজে অভিমানের মেঘ বৃষ্টি নামায়
কালবোশেখি ঝড়ের রূপরেখা শোনাতে গিয়ে
স্মৃতি বিভ্রান্ত হয়ে ফিরছেন প্রবীণ ইতিহাসবেত্তা

শহুরে কবিরা বড্ড ছেলেমানুষ। তারা বুকে টানে
আমার ছুড়েও ফেলে, নোংরা শব্দের ডিস্টেম্পার
দেখে ধারণা করি — এতদিন কবিতার আদলে
অর্থহীন অজস্র শব্দের মালা গেঁথেছেন অকারণে।

আমি সৃষ্টি আর বাস্তবের সমন্বয় করতে বসি
আর নিজের অসহায় কানকে শুনিয়ে বলি,
দূরের বটগাছ তুমি আরেকটু নত হও... প্লিজ!

Thursday 18 May 2017

মৃত নগরীর ফসিল

মৃত নগরীর ফসিল
— ইমেল নাঈম


থেমে যাক শূন্যস্থান — পূর্ণতা খুঁজতে বেরিয়েছিলে তুমিও
কথা নেই, শুধু অনুভবটুকু বাকী, ধুলোবালি বোঝালো
পথ হারানো অনেক পুরনো স্বভাব, বলেছিলে আকাশ
প্রিয় কিন্তু উচ্চতায় ভীতি, প্রতিমুহূর্তে ভিজছি অনুরাগে...

অনেক শব্দের কাছে ঋণগ্রস্ত হয়ে ফিরে যায় কৃষ্ণচূড়া
মেঠো পথের গল্পে ফ্যান্টাসি নেই, সিনেম্যাটিক চুম্বনগুলো
ব্যর্থ উপমায় আটকে যায় জীববিজ্ঞানের প্রেকটিকেলে

ক্লাসের মতো ফাঁকিবাজির পরিণতি টেনে দিতে পারেনা
কল্পনা বিজ্ঞান, শৈশব নেমে আসে, আসে হ্যারি পর্টার
রাশিয়ান রূপকথার ভিড়ে, ইশপের গল্প শোনা যায়না
সময় পেরিয়ে গেলে প্রবাদবাক্য গুলোর মূল্যমান বাড়ে

কথার মাঝে খেই হারানো আমার অনেক পুরনো স্বভাব
দু-চার মিনিটের নীরবতাতেও কিছু গল্প লিখা হয়
অবিচক্ষণ পাঠক হয়তো বুঝতে পারেনা সম্পূর্ণ ভাবনা
সেও নীরবতার পাঠ নেয়, নিয়ম করে মেডিটেশনে বসে

একজন জিপসি প্রেমিকও স্বপ্ন দেখে স্থায়ী আবাসনের
সময় পেলে সেও আওড়ে দেয় খৈয়াম বা হাফিজ
প্রেমিকার তিল দেখে সেও চায় লিখে দিতে পরগনা
ভাবে তার পরিণামে যদি জুটে রাজকীয় আপ্যায়ন।

এমন একটা যদির দিকে তাকিয়ে তাবৎ ভালোবাসা
তার পাশেই মাটি খুঁড়ে আনছেন মৃত নগরীর ফসিল।

প্রকাশকালঃ ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Wednesday 17 May 2017

সময়ের প্রতিবিম্ব

সময়ের প্রতিবিম্ব
— ইমেল নাঈম

গ্রীষ্মের তাপদাহ, তারও আগে জন্মেছে চর
থেমে যাওয়া দেখতে আবিষ্কার হয় নদীজন্মের
হাটু পানি পেরিয়ে যায় বনভোজনের আবাদ
গল্পের কাছে ফিরতে গিয়ে লিখছি অন্যকিছু।

বৃক্ষের কাছে গচ্ছিত ঋণপত্র, মুঠোতে বন্দী পলি
রোজ সকালের সঙ্গীত গাইতে থাকা পাখিটিও
সব সাধনা ভুলে শুরু করেছে নীরবতার গান
অন্যকিছু লিখতে বসে ভুলেছি চিরচেনা ঠিকানা

নস্টালজিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছি, ঠিক পাশেই
অচেনা এক  সবজিওয়ালা ক্লান্তি মুছছেন 
বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে, পাশে বসে অনুভব করলাম
তার চোখমুখ জুড়ে আত্মতৃপ্তির ছোঁয়া আর 
তার সমান্তরালে সুরটির সাথে একাত্ম হচ্ছে
নগরীর সকল দুঃখ, কষ্ট, ব্যথা, অপমান

মৃত নদীর পাশে বসে দেখছি — কীভাবে
বাঁশির সুরে ভোর হচ্ছে সময়ের প্রতিবিম্ব।

প্রকাশকালঃ ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Monday 15 May 2017

পরিব্রাজক

পরিব্রাজক
ইমেল নাঈম

আদিখ্যেতা মুছে গেলে কিছু স্বপ্নের স্বেচ্ছামৃত্যু হয়,
ক্লান্তির ঘাম মুছতে মুছতে সামনে এসে দাঁড়ায়
নতুন কোনো উপলক্ষ। কারণ লাগেনা উদ্দেশ্যের…
কিছু মুখোশ অকারণে আঁকড়ে ধরে সামনের পথ।

বাধা নেই, দ্বিধা অনেক। গাছের নিচে ছায়া নেই
শ্যাওলা জমেছে গায়ে, চলছে পিপীলিকার মার্চ
আনত হই বিকেলের কাছে, সেও নীরবতায় ব্যস্ত।

জিরিয়ে নিলে তৃষ্ণা বাড়ে চোখের অথবা মনের,
সখটুকু মিটিয়ে নিই, খোলাচুল উড়ছে বাতাসে
এইদৃশ্য আমাকে কার্ল মার্ক্স তার প্রেমিকাকে লেখা
কবিতাগুলোর সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়।

আমি বোদ্ধা নই, শিক্ষক নই, নিমগ্ন পাঠক কেবল
চুপচাপ দাঁড়িয়ে শব্দের গভীরতা মাপি, অতলে
নামতে গিয়ে খেই হারিয়ে গোলকধাঁধায় ডুবে যাই

তেড়েফুঁড়ে উঠে দেখি গাছ বদলে অডিটোরিয়াম
আমন্ত্রণ পত্র নেই বলে ভিতরের রঙটা দেখিনি।
আবার গাছ খুঁজতে পথে নামি, কিছুদূর যেতেই
আমাকে কারা যেন কবি ডেকে বিব্রত করে দেয়।

প্রকাশকালঃ ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪