Thursday 31 August 2017

সভ্যতার জীবাশ্ম

সভ্যতার জীবাশ্ম
ইমেল নাঈম

দুটো পা, দুটো হাত, বুকের বাঁপাশে টাটকা হৃদয়
মাথায় আলসে মগজ নিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে অনাদরে
ব্যথা উপশমকারী মলমের প্রতিটি স্তরে অবক্ষয়
বাসা বাঁধে পুরো শরীরে, মুছে যাচ্ছে মানুষের নাম।

বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলার ছিলো।
তারা মুখবইয়ের পাতায় আবদ্ধ, আত্মমর্যাদা
টিকিয়ে রাখতে গিয়ে সরীসৃপ জীবন কাটাচ্ছে।
মানুষ হারাচ্ছে তার চলার স্বাধীনতা, মুখের বুলিতে
যতটা বাক্য শুনি তার পুরোটাই মিথ্যে, বানোয়াট।

চাইলে মুছে দিতে পারিনা নিজেকে তাদের থেকে
সুযোগ, নৈতিকতা, অবক্ষয়, কীসের অভাব তাড়া
করছে রাতদিন। দাঁড়াতে ভুলেছি। অন্যায় দেখে
পালিয়ে যাচ্ছি, সততার বিজ্ঞাপনে আমিত্ববোধ।

দিনকে দিন বলতে ক্যালকুলেটরে হিসাব করি
রাতকে রাত বলিনা ভয়ে, নারীকে ভাবি মাংসপিণ্ড
সুযোগ পেলেই নিজের ভিতরের পশুটা জাগে
মগজটা নিষ্ক্রিয় হয় আর বুকের বাঁপাশে কোনো
সংকেত নেই, ম্রিয়মাণ সময়ের পথে হাঁটছি মাত্র।

বিশ্বাস নেই প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার ওপর।
বদলাতে চাওয়ার মন্ত্র কেবল ভাসে শূন্যতায়
বাধার প্রাচীর ঠেলে মানুষের অদৃশ্য মৃত্যু আঁকি
মানবহীন পৃথিবীর দিকে এগুচ্ছি ক্রমশ
দুপেয়ে জীবের এতোটা অহংকার কী সাজে!
সে সভ্যতার জীবাশ্ম নিয়ে মুছে যাচ্ছে অবেলায়...

প্রকাশকালঃ ১৬ ভাদ্র ১৪২৪

Tuesday 29 August 2017

ভ্রমণ

ভ্রমণ 
ইমেল নাঈম

জমাটবদ্ধ অজস্র কথা, চুপচাপ নামে রাত
প্রান্তিক জীবনের গল্পে থাকে নানা রঙ
সাদাকালো অনেক আয়োজনের ভিড়ে
হরিত মন বারবার আহত হয়ে ফিরে আসে।

খাতাজুড়ে বিশাল শূন্য, সাকিনের নামগুলো
ব্যর্থদের মিছিলে নাম লিখিয়ে ক্লান্ত,
ইতিহাসের পাতায় লেখা এন্টিডোট,
গা থেকে ছড়ায় পুরোটা শরীরে। প্রলেপে
আটকে দিই সকল ক্ষত, ব্যথাদের পুনর্জন্ম
দেখতে দেখতে পালিয়ে যাই দূরের পথে।

বৃক্ষ'র ক্লোরোফিল গল্পে নিঃস্বার্থ আলিঙ্গন
কেবল বিলিয়ে যেতে যেতে আঁকে সবুজ
নীলাভ জীবনের অস্থিরতার মারপ্যাঁচ
মানা নেই, তবুও ছুটে চলি...

বয়সকে লুকিয়ে ফেলি চোরা আয়নায়
পকেটে ঢুকিয়ে রাখি বিগত জীবনের ঘৃণা
আঙুলের কড়ে মেপে নিয়েছি ভালবাসা
আর বিনিময়ের গল্পে শিহরণ লুকোনো

চাওয়া পাওয়ার হিসেবে জমেছে মাত্র ঘাম
সাক্ষাতের মানে জানে শরীরের রোমকূপ
নিঃসঙ্গতা প্রিয় মানুষের রাত দিন এক
তারা কেবল ভেসে চলে বেদুইনের মতো।

প্রকাশকালঃ ১৪ ভাদ্র ১৪২৪

Sunday 27 August 2017

আয়োজন

আয়োজন
ইমেল নাঈম

ঘড়ির কাটা উলটে গেলে বদলে যায় পাশার দান
সর্বস্ব হারাবার মানসে খেলতে থাকে প্রেমিক
জেতা খেলাতেও মাঝেমাঝে হেরে যায় ইচ্ছেকৃত
অঙ্কুরে বিনষ্ট হয় প্রেম খেলার সকল আয়োজন।

জীবনের আয়োজন দেখে থেমেছি অনেক আগে
গোল্লায় যাচ্ছি রোজকার দিনবদলের শ্লোগানে
লুকোচুরি খেলার মতো লুকাচ্ছি নিজেকে।
উপচে পড়া আয়োজনে, মেঘ বা বৃষ্টিকে আলাদা
করতেই পেরিয়ে যাচ্ছে দিনের সকল ব্যস্ততা।

হাহাকার মুছে সামনে তাকাই, দৃশ্যমান সুখের
পাশে অদৃশ্যমান দুঃখ, হতাশা, গ্লানি, ব্যথা
মিথ্যের প্রহসন মুছে দেয় অচেনা আয়োজন
মাথাচাড়া অংকরা তৈরি করে একেকটি দেয়াল

একটির বাধার বিপরীতে অন্য বাধা দাঁড়িয়ে
একটার সমাধান অন্যটার সূচনা সঙ্গীত মাত্র
লারেলাপ্পার দোদুল্যমান বলটা হুকুম পালন
করে যায়, বিনিময়ে কী আছে পাওনার খাতায়

জীবনের থেমে যাওয়া আয়োজনের অংকটুকু
মেলাতে মেলাতে ঢুকে যাই ভুল সময়ের বৃত্তে।

প্রকাশকালঃ ১২ ভাদ্র ১৪২৪

Friday 25 August 2017

রাতের গল্প

রাতের গল্প
ইমেল নাঈম

পথ হারিয়ে চলে যেতে হয় অনেক দূরে
স্বেচ্ছা নিরুদ্দেশে লিখে রাখি যাবতীয় পাপ
সমীক্ষা শেষে গল্পরা একেবারে চুপ হয়ে যায়
উড়তে চাইছি বাতাসে, তোমার রেশমি চুলজুড়ে
মনোহরা মেঘ আর রোদের মাখামাখি।

লিখিত হিসেব হারিয়ে গেলে কিছু তো থাকে!
মিথ্যে মায়ার ব্লুজ, ভাঁজ গলে বেরোয় শোক
আজ্ঞাবহ সময়ের কল্যাণে, সার্কাসপার্টির
জোকার আর ক্লাউনের খেলা দেখতে দেখতে
রাত পেরিয়ে ফিরে যাই সেই অতীতের পথে।

আক্ষেপ! মায়া! অনুভূতি! অদ্ভুত টানাপোড়ন!
ইদানীং কীসব লিখে রাখি কবিতার খাতায়,
প্রকৃতপক্ষে এসবের কোনো অর্থ খুঁজে নেই,
আবার ফেলে দেয়া হিসাবেও তারা নেই

উপচে পড়া সন্ধ্যার কাছে মলিন হয়ে ফিরি,
চুপ হয়ে ফিরে আসি নিজের কাছে বারবার
নদীর তীরে যে স্রোত জোয়ারে ভেজায় পা
তার সমান্তরলে বাড়তে থাকে একাকীত্ব

রাতের নগরী সুন্দরের জয়গান গায় নিয়নে
অচেনা রাস্তায় কেবল আমিত্বের বিজ্ঞাপন
রাস্তার কোনো এক চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি,
এই দাঁড়াবার গল্পে চেনাজানা চরিত্র নেই
অচেনা মুখের ভিড়ে নিজেই অচেনা মুখোশ।

Sunday 20 August 2017

জ্বর সারার পরে

জ্বর সারার পরে
ইমেল নাঈম

ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমেও কাঁপতে থাকে দেহ
আবার আলিঙ্গন করে ওঠে দেহের তাপকে
কাঁপুনি কমলে অস্থায়ী দুশ্চিন্তা খানিকটা কমে।

এখন বালুঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকি দিনভর
প্রেসকিপশনে ঝুলছে টেস্ট আর ওষুধের লিস্টি
মাথাব্যথা, মনে করিয়ে দেয় খাবারেরসময়সূচী 
অরুচির পেটে স্থান পায়নি স্বাদহীন প্রিয় খাবার
মাথাব্যথার শ্লোগানে কাবু হয়ে পড়ে সারাদেহ

প্রত্যাশিত ঘামের পরে পুরোটা সময় পর্যবেক্ষণের
শরীর থেকে ঝরে পড়তে থাকে অবাঞ্ছিত ঘাম
স্বাদহীন জিহ্বা, ক্ষুধামন্দা পেটও উল্লাসে মত্ত
নিস্তার পেয়ে, দুর্বল শরীর দেখে ফিকে দৃশ্যপট...

অরুচি মুছলে ভুলে যাই ওষুধের কথা
শরীর তার স্বাভাবিক তাপমাত্রা খুঁজে পায়
আবার শুরু হয় অনিয়মের দৈনন্দিন রুটিন

প্রশ্ন করি বারবার, উত্তরও দিই সেইসাথে
ভুলোমনা প্রমাণ করতেই কী জ্বরে পড়ি...
সঠিক উত্তরের লোভে মনযোগী হই কবিতায়...

প্রকাশকালঃ ৫ ভাদ্র ১৪২৪

Friday 18 August 2017

অগোচরে পালিয়ে যাচ্ছি ছায়ার থেকে দূরে
সন্ধ্যার শহরে যাযাবর জীবন ডাকে মোহ আলিঙ্গনে
হাতের মুঠোয় নিজের জন্য রেখেছি কতটা!

ওপাশের মানুষটিও খুব অচেনা

Thursday 17 August 2017

বিষণ্ণতা

বিষণ্ণতা
ইমেল নাঈম

মধ্যরাতের সাইরেনে ঢেকে যায় চোখ দুটো
ঘুমিয়ে পড়ার আয়োজনে ব্যস্ত শহুরে রাজপথ
দেয়ালের চিকায় ঝুলে রাজনৈতিক শ্লোগান,
ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে হিসেব করি ব্যর্থতাগুলোর
নিকোটিনের ধোঁয়া উড়ছে ফ্যানের বাতাসে

ক্লান্তিরা আধোঘুমে, কোনো নিশানা নেই স্বস্তির
মাঝপথে ট্রেনের বগি সঙ্গীহীন। লাইনচ্যুত হয়ে
হিসেব করতে বসি গন্তব্যের স্থানকাল পাত্রের,
বারবার ঘড়িতে দেখি কতটা সময় আছে বাকী

রাতের রূপকথাতে লুকিয়ে গেছে চাওয়াগুলো
ব্যস্ততার মোড়কে আমি তুমি সবাই ক্রীতদাস
দাসত্ব কিনে নিয়েছে আমাদের চাহিদা রেখা।
ছিঁড়ে খাচ্ছে বিনোদনের সকল নিয়মকানুন

নিঃসঙ্গতার মতো কবিতা কেউ লিখেনি আগে
বিষণ্ণতাও মাঝেমাঝে শব্দ নিয়ে খেলা করে
মাতাল না হলে আমিও লিখতে পারিনা কিছু

দৈনিক দুঃখের ফরিয়াদ ফিরছে প্রতিঘাতে
এমন আয়োজনে ফ্যান্টাসি নেই, কষ্ট আছে
বিজ্ঞাপনের সুন্দর মুখের তৈরি হ্যালুসিনেশন
নিজের মাঝে ডুবতে থাকি, মাউথ অর্গানে
সুর তুললেই আঁকা হয়ে যায় প্রেমিকার মুখ।

প্রকাশকালঃ ২ ভাদ্র ১৪২৪

Wednesday 16 August 2017

বেনামি রাত

বেনামি রাত
ইমেল নাঈম

মন খারাপের দিনগুলো কেমন যেন
বৃষ্টির মতো চুপচাপ ঝরে পড়ে
অভিমানের পালক মুছলে জাগে বিভ্রম

সপ্তসুরের কিছু সুর খুব অচেনা
তানপুরা জুড়ে কেবল কিন্নর শব্দ
ম্লান মুখে জেগে উঠি প্রহসনের পর
চুপচাপ এড়িয়ে যাই মুহূর্তগুলো

দরজার ওপারে কে আছে দাঁড়িয়ে?
কেবল ছায়াটুকু দেখি, বিভ্রম নাচে
দু'চোখে, নাক ঘামছে, তৃষ্ণা বাড়ছে
জলের বোতলটিও সম্পূর্ণ খালি

বিদ্যুৎ নেই, চমকাচ্ছে আকাশ
জীবন হরর মুভির জীবন্ত সিকুয়েল
কিছু অজ্ঞাতনামা ভয় পুষে রাখি
নিচের দিকে তাকাতে দেখি শূন্যতা

উড়ে যেতে চাই দ্রাঘিমারেখার ওপারে
যেনো শীতল বাতাস ভিজিয়ে দেয়
গ্লাস আটকে দিই, গলার শব্দ নেই
ঈশ্বরের নাম জপতে ভুলে গেছি

রাতটিকে বেনামি ঘাতক মনে হয়

প্রকাশকালঃ ১ ভাদ্র ১৪২৪

Monday 14 August 2017

ম্যাথম্যাটিকস

ম্যাথম্যাটিকস
ইমেল নাঈম

ভারী কিছু কথার মাঝে লুকোনো স্পর্শ
জলজ সম্পর্ক মুছে যায় আগমনী গানে
কার হাত ছুঁয়ে এঁকেছ সরল সমীকরণ
BODMAS ফর্মুলা কী এখনো ভুল, ব্যর্থ

ব্রাত্য করেছো, পাটিগণিতের ঐকিকে
বানর কী আজো বেয়ে উঠে তৈলাক্ত বাঁশ
এলজেব্রার কঠিন সব সূত্র প্রেম থেকে
বহুদূরের পথে হাঁটে, রহস্যময় হয়ে
ফিরে যায় পিছনে দশমিকের অংকে।

বহুদিনই লসাগুর মতো এগুতে চাইছি
তুমি গসাগুর মতো উলটো পথে হাঁটছো
শতকরার মতো লিখে রাখছো আমাকে

স্পর্শ মুছলে অদৃশ্য তুমি বুকে আঁকো
কঠিন সব সমীকরণে নিজেকে পাইনা
পাইনবন ফেলে চলে যাই আরো দূরে
ভগ্নাংশকে মিলাতে থাকি, পূর্ণ সংখ্যা
বানাবার প্রয়াসে মুছে যায় আয়োজন।

পিথাগোরাসের সমাধানে তুমি ব্যস্ত
আমাকে পড়ার মতো সময় কই?
সুদকষা মেলাতে গিয়েও মিলছে না
বুকের বাঁপাশের গ্যালিলিও'র অংক।

প্রকাশকালঃ ২৯ শ্রাবণ ১৪২৪

Sunday 13 August 2017

কাঁদো, প্রলাপের সুরে চিৎকার করে কাঁদো
মির গুল খান নাসির

কাঁদো, প্রলাপের সুরে চিৎকার করে কাঁদো
কিছু অন্ধ মানুষ উৎসবে মত্ত

তারা বলছে, 'গেলো' অথচ জীবনের দিকে তাকালে দেখি
একটি গভীর কালো রাত পেণ্ডুলামের মত দুলছে

বিদ্যুতের ঝলকানি আর নীরব বজ্রপাত
যেন দূরে কোথাও মেঘ ভেঙে বৃষ্টির শব্দ

কিন্তু বাতাসে কোনো সোদা গন্ধ নেই
বরং খানাখন্দ উপছে পড়ছে রক্ত

ওহে বোকার দল, কোথায় তোমার উজ্জ্বল প্রভাত
শক্তিশালী ক্রুদ্ধ রাত এখনো পুরোটা বাকি

সাম্রাজ্যবাদীরা এখনো ইয়াজিদের মতো
গুড়ো করে দিচ্ছে দেশপ্রেমিকের হাড়গোর

জনবহুল, নাটুকে বাংলাদেশ
আরো একটিবার রক্ত বন্যায় বিপর্যস্ত

সাম্রাজ্যবাদের দাসেরা পুনরায়
জ্বালিয়ে দিতে লাগলো শহর আর গ্রাম।

দেশপ্রেমিক মুজীব — লুটিয়ে পড়েছেন মাটিতে
আর মাটিও তার রক্ত স্নানে শোকাহত।

তাকে সজ্জিত করা হলো সাম্রাজ্যবাদী রীতিতে
পরনের লাল কোটটিও বুলেটে সাজানো হলো

সাম্রাজ্যবাদের ঘৃণ্য দালালেরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আরো একটি জেনোসাইডের
ঠিক যেভাবে ঘটিয়েছিলো ইয়াজিদ, ইমাম হুসেনের বিরুদ্ধে

সাহসী বিপ্লবীগণ ইয়াজিদি আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হও
তোমাদের একতা, সমৃদ্ধি তাদের জন্য পরাজয়ের বার্তা

দেখবে তাদের মুখটি আপাতদৃষ্টিতেতে স্বাভাবিক
কিন্তু জিহ্বাতে সাম্রাজ্যবাদের স্বাদ পাওয়া যায়

তারা অহংকারী কারণ তাদের পকেটভর্তি ক্ষমতা
তাদের সাহায্য করছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সমূহ

একজন সাহসী দেশপ্রেমিকের হত্যার জন্য
তাদেরকে দেওয়া হলো অগুনিত অস্ত্র আর সৈন্য

এমন কাপুরুষের জন্য কোনো ক্ষমা নেই
তাদের কারণেই এই রাত এতোটা কালো

তারা স্বীকার করেনা স্বাধীনতার জ্বলন্ত শিখাকে
নিভিয়ে দিতে চায় আলোর সব মশাল

অকুতোভয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান
সপরিবারে দাঁড়ালেন ফায়ারিং স্কোয়াড়ের সামনে

আবার জাতীয় পতাকা অর্ধনির্মিত হলো
সাম্রাজ্যবাদীরা ফিরলেন তাদের পুরোনো কূটচালে

সশস্ত্র মহড়ায় কলহ বাড়লো পুনরায়
সোনার বাংলা জ্বলে পুড়ে ছারখার হতে লাগল

সাহসী বন্ধুরা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর সময়
বেলুচিস্তানও পুড়ছে একই কায়দাতে

ভয় পেয়োনা প্রিয় যোদ্ধাগণ! থেমো না তোমরা
পথ যদি বন্ধুর হয়, তবে জয় করো কঠোর সাধনায়

শেখ মুজিবের রক্তের দাম অমূল্য। এগোও ধ্বংসের পথে
এটিই হলো দেশিপ্রেমিকের জন্য দৃঢ়তার পরীক্ষা

এখানেই শেষ নয়, এই বিভীষিকার রাত শেষ নয়
যদিও এখন তা কালো আর কুয়াশাচ্ছন্ন

নাসির তার হৃদয় দিয়ে পরিষ্কার দেখছে
তোমাদের বিজয়পতাকা বাতাসে উড়ছে।

Saturday 12 August 2017

পুনর্জন্ম

পুনর্জন্ম
ইমেল নাঈম

আমার শহর ভিজতে থাকে ঝুমবৃষ্টিতে
জলজটে আক্রান্ত পাড়া মহল্লা
সকালে অফিসের তাড়া নিয়ে ছুটি
ইশকুল ইউনিফর্ম দেখে নস্টালজিক হই
হারিয়ে যাওয়া দিন ফিরিয়ে আনে বৃষ্টি

বৃষ্টির শব্দে মনটা ভারী হয়ে ওঠে
নিজের মন পড়তে পারিনা একদমই
অবুঝের মতো ছুঁটে যেতে চায় অতীতে
টাইমমেশিন নেই, নিজের চোখে দেখা
বৃষ্টিটিও বদলেছে, অথচ আবেদন...

একই আবেদন নিয়ে পরাবাস্তব বৃত্তে
ঘুরে চলেছি শুরু হতে শেষ বিন্দু পর্যন্ত
নিষ্পাপ মজাগুলো মুছে গেছে সময়ে
নিষ্প্রাণ চাওয়া পাওয়া ব্যতীত
অন্য কোনো হিসেব নেই আর

রাস্তা ডুবেছে ভারী শ্রাবণধারায়
মানিয়ে নিচ্ছি নিজেকে, কৈশোর স্মৃতি —
এখনো খেলছে বুকের ঘরে প্রতি স্তরে

কাজের ফাঁকে থেমে থেমে বৃষ্টি দেখি
নিজের কাছে নিজেকেই হাতড়ে ফিরি
বৃষ্টির ফোটা আবিষ্কার করে আমাকে...
আমার পুনর্জন্ম লিখা হয় শ্রাবণ মাসে

প্রকাশকালঃ ২৮ শ্রাবণ ১৪২৪

উড়োচিঠি

উড়োচিঠি
ইমেল নাঈম

বায়বীয় মাধ্যমে উড়োচিঠি পাঠচ্ছি তোমার ঠিকানায়
অচেনা আমাকে পড়ে চলেছো, চিনতে পারছো না।
মুখবইতে কাতর তুমি, দেখছি শুধু প্রেমের আকুতি

সামনাসামনি বলতে গিয়ে পিছিয়ে যাইনি একদম।
আলসেমিতে দেখোনি ডাকবাক্সের পুরোনো বার্তা
অনেক চিরকুটের ভিড়ে আমিও তলিয়ে যাচ্ছি নিচে
অচেনা অনুভূতিগুলো আরো অচেনা হয়ে পড়ছে

উড়োচিঠি দিয়ে আমি হয়তো ছুঁতে পারছি তোমাকে
কিন্তু, তোমার কাছে অধরা হয়েই ফিরছি এখনো।।

একদিন উড়োচিঠি পাঠাবো তোমার বাড়ীর ঠিকানায়,
চিঠির সাথে দিয়ে দিবো এক মুঠ বকুল আর শিউলি
লিখবো মালা গেঁথে পরো কোনো রাবিন্দ্রিক বিকেলে
সেদিন কী তুমি একই মনোযোগে খুলবে নীল খাম?

ভাবছি বায়বীয় সময়ে কতটা পুষেছ যান্ত্রিক আবেগ?
লোক দেখানো খেলায় বর্ণিত প্রেম বর্ণহীন রইলো
শুধুমাত্র প্রেরকের ঠিকুজি জানতে পারলে না ব'লে

সেদিন কী পারবে আমায় চিনতে? উড়োচিঠি পেয়ে
ভয় পেয়োনা, ভালবাসা প্রেমিককে বানায় সাহসী,
আমায় চিনে নিও তোমায় পাঠানো ফুলের ঘ্রাণে।

প্রকাশকালঃ ২৭ শ্রাবণ ১৪২৪

Wednesday 9 August 2017

মনোলগ

মনোলগ
ইমেল নাঈম

বাঙালি মানেই প্রেমিক, সে বর্ষা পড়ুক আর নাই পড়ুক। সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। একটু দৃষ্টি বিনিময়। একটু স্পর্শ। একটু কাছে আসা। একটু ছুঁতে চাওয়া। একটুর জন্য পৃথিবীর সকল রোম্যান্টিসিটি উপচে পড়ে। এরপর দূরত্বের গল্পটা ভূগোল ক্লাসের মতো জটিল যেনো গহীন অ্যামাজনে রহস্যময়ী পিরামিড। চমকে দেয়ার কী অদ্ভুত মানসিকতা! কে কার মনে আঁচড় কাটতে গিয়ে অন্ধকারে ফিজিক্স বুঝিয়ে ছাড়ছে তার রেশটুকু আঁচ করাটা সত্যি কষ্টের। রসায়নের পরেও সেই একটুতেই আটকে যাচ্ছি, মনে হচ্ছে আর একটু বেশি সময় কাছে থাকা... উদাসী গলায় প্রেমিক শোনায় "আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো" আর প্রেমিকার গলায় গুনগুন "আমি কূলহারা কলঙ্কিনী..."

অন্ধকারের দিকে অনিচ্ছাকৃত হাঁটার অভ্যাসটা আমাদের প্রাগৈতিহাসিক। কিছু হলেই ঋণাত্মক প্রান্তের দিকে টেনে নিয়ে যাই সবাইকে। নিজে অন্ধকারে নিমজ্জিত অথচ বলি আলোয় আলোকিত চারপাশ। একটুর কাছেই ফিরে যাই আমি আবার। রহস্য ভেদ করে তাকাই তোমার দিকে। কালোয় নিছক মজা করতে থাকো। বেনামা প্রেমিক হয়ে যাও এক মুহূর্তে। রাঙিয়ে দাও নিজেকে। ভুল শুদ্ধ বিচার করো না। শেষ প্রান্তে চলে গেলে চুপ হয়ে যাবে সবাই। নিরাপদ ভ্রমণ শেষে আবার ফিরে এসো শুরুর বিন্দুতে। মুখোশের শেষটুকু দেখতে বসে ক্লান্তি নামুক চোখে। একটা স্প্যানিশ গিটার লিখে রাখুক আমার দুঃখের কবিতা। 

পাখিদের কাছে ফিরে যেতে চাই। প্রেমিক মন কিন্তু শুদ্ধ নই একদমই। সুযোগের অপেক্ষায় থাকি, রাত নামলে অন্ধকারে মুখ লুকাই। আয়নায় বিম্ব দেখে ভয়ে চুপসে যাই। আহা... কামুক হতে শিখেছি, প্রেমিক আর হলাম কই? নিজের অজ্ঞতা দেখে অবাক হই। শিক্ষাদীক্ষার বিনিময়ে লাগিয়েছি মুখোশ। শিক্ষিত নয় বর্তমানে অর্থের জোর। আর মুখোশ খসলেই সবাই ছিঃ ধ্বনিতে মত্ত হয়। তারাও আমার মতো মুখোশ পরে সমাজকে আগলে রাখে।

প্রকাশকালঃ ২৩ শ্রাবণ ১৪২৪

Monday 7 August 2017

প্রহসন

প্রহসন
ইমেল নাঈম

হরিত সময়ের হিসেবে কিছু আবেশ নিষিদ্ধ
ফুল ঝরে যায়, মুখ আটকে রেখেছি পুরো সময়
নিক্তিতে মেপেছি প্রহসন, আয়নার প্রতিবিম্বে
রেখেছি গল্পের মোহর। উলটো পথে হাঁটছি।

নিজের কাছে অপরিচিত হয়ে ফিরছি
পলাতক সাজতে গিয়ে পথ হারিয়েছি আগেই
পাললিক সভ্যতা ছুঁড়ে আস্বাদ নিই নগ্নতার
রাতের নিয়নে ব্যস্ত চৌরাস্তা দেখে বিষণ্ণ হই

হারিয়ে যাবার প্রবল ইচ্ছে আবার ঘরকুনো
থাকার প্রবণতা জানান দেয় বৈপরীত্য
রেখা টানতে থাকি নিজের সাথে নিজের।
ছায়াকে আলাদা করি, আলো কে বিসর্জন।

মানে নেই তবুও... মূকাভিনয় শেষ হলে
নিজের দাঁড়াবার কোনো আশ্রয় নেই
মুগ্ধতা সরালে মুখের সুশ্রী থাকেনা
রূপের ভিতরে কালোর আস্তরণ জমে

নিজের সাথে কাটানো কিছু মুহুর্ত ব্যতীত
কোনো স্পর্শ নেই, বাকিটা প্রহসন…

প্রকাশকালঃ ২৩ শ্রাবণ ১৪২৪

Sunday 6 August 2017

সভ্যতা

সভ্যতা
ইমেল নাঈম

দেশ দখলের পর পুরুষদের হত্যা করো,
নারীদের বানিয়ে দাও দাসী, তাদের জায়গা হোক
সুরম্য অট্টালিকায়। পৃথিবীতে লিখা থাকে বিজয়,
ইতিহাস গর্ব ভরে আড়াল করে পরাজয়ের কথা

গায়ের জোরে অনুলিপি লিখা হয় সভ্যতার
তরবারি লিখে রাখে সকলের ভাগ্যলিপি
রঞ্জিত শব্দ কাহনের পর শীৎকার শুনি কেবল
রাজা বদলায়, মানুষ পরাধীন থেকে যায়...

বন্দুকের নলেও টিকে থাকে সভ্যতা, যারা কখনো
রাখেনি ট্রিগারে আঙুল, তারাও মাপে ওজন
ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে বসে খায় রাতে, পোশাকের
আবরণে অট্টহাসিতে লুকোনো থাকে কান্না।

একদিন পাখির পেট ফেটে বেরিয়েছিলো ডিম
তাতেই ধ্বংস হয়েছিলো একটি শহর, তার স্মরণে
একমিনিট নীরবতা পালন করতে শিখিয়েছে সমাজ
এরপর প্রকাশ্যে আর ন্যাংটো হতে চায়না মানুষ,
উপমার আঙ্গিকে, রূপকে জানান দেয় সভ্যতা।

মাঝে দাঁত আর নখের হিংস্রতা পরিমাপ করতে
বসে খেই হারিয়ে ফেলছে পৃথিবী, বাতিঘরের মতো
আজও জেগে থাকে হিরোশিমা আর নাগাসাকি
বদলে যায় রাজা, মানুষ পরাধীন থাকে আগের মতো

প্রকাশকালঃ ২১ শ্রাবণ ১৪২৪

Friday 4 August 2017

পরিমিতি

পরিমিতি
ইমেল নাঈম

আয়তক্ষেত্র জুড়ে আঁকি বিশাল রঙিন ফানুস
বৃত্তের কল্পনায়  মাপতে ভুলেছি রেখার ঘনত্ব
সূত্র বসাই, আয়তক্ষেত্র = ২ X দৈর্ঘ + ২ X প্রস্থ
পুরো অংক মিলাতে গিয়ে খেই হারাই বারবার

মাঝের কাটাকুটিটুকু গণনার বাইরে রয়ে গেলো
প্রান্তিক হিসাবের খেরোখাতাটি ভুল পথের যাত্রী
পিছন ফিরে মাপি কতটা ভুল হলো বর্গক্ষেত্রে

নিজের জন্য কোনো খালিস্থান নেই, মনের
মালিকানাও বেঁচে দিয়েছি ঘনকের সূত্রে
ভ্রান্ত সময়ে ক্লান্তি আঁকছি, চক আর ডাস্টারে
নিজেকে মাপতে শিখেছি পরিমিতির সূত্রে

হারিয়ে গেছে পুরোনো ইচ্ছেরা, ডুবসাঁতারে
পেরিয়ে যেতে পারি চিরচেনা বন্দর, পাওনার
খাতায় বিশাল এক শূন্য, অংক মিলাই আবার।

ভুল আর ঠিক এই দুয়ের মাঝে বসবাস
বিভ্রম আর বাস্তবের মাঝখানে গেছি আটকে।
যেখানে ভুল হিসাব ঠেলে শূন্যতা গড়ে আবাস
তার কাছে ফিরে আসি উলটো সাঁতারে।

প্রকাশকালঃ ২০ শ্রাবণ ১৪২৪