Monday 31 July 2017

আলাপন

আলাপন 
ইমেল নাঈম

হারিয়ে গেল সব সম্পর্ক, মাঝেরটুকু ছিঁড়ে
খেলো প্রতিবম্ব। আয়নায় অচেনা লাগে নিজেকে।
প্রাত্যহিক ব্যস্ততা গিলে খায় সময়ের পুরোভাগ
উপচে ভরা ভিড় ঠেলে উঁকি দেয় দৈনন্দিন শোক।

রুটিনের ভাজে লিখে রাখি পাপ পুণ্যের হিসাব
ক্যালকুলেটরের বোতামগুলো হয়ে যায় অবশ
উড়তে থাকা ঘাসফড়িঙয়ের দলে অচেনা আমি —
তাকে নিয়ে ভাবতে বসে, লেখা হয় কিছু কবিতা।

সফলতার মন্ত্রণা মুছে গেলে রক্তিম আভার জন্ম
উড়ে আসা বাতাসের ভাজে কিছু প্রহসন লুকোনো
হাতের ভাগ্যরেখা মুছে গেছে নান্দনিক অবহেলায়
মেঘের ভাজে জমাটবব্ধ দুঃখকে কী নামে ডাকি?

গল্পের মোড়কে প্রাপ্তির খাতায় শূন্যতা আঁকা হয়
শূন্যস্থান জুড়ে থাকে বিশাল এক মৌন সময়,
নীরবতার ভাজে কার নাম লেখা? কার শব্দ শুনি?
সব প্রশ্নের উত্তর হয়না, শুধুই জমাটবদ্ধ অভিমান...

প্রকাশকালঃ ১৬ শ্রাবণ ১৪২৪

Sunday 30 July 2017

সঙ্গীত

সঙ্গীত
ইমেল নাঈম

থামার আগ মুহূর্তে তুমি কার কথা ভাবছিলে
চৌকাঠ পেরুতে গিয়ে তাকিয়ে দেখেছো কী পেছনে?
অষ্টপ্রহর দুঃখের দিনে নষ্ট ফ্যান্টাসি লুকোনো
পথের গল্প লেখার ছলে লিখে রাখলে বিচ্ছেদ

সুন্দরের অন্বেষণে আজ উড়ন্ত প্রজাপতিটি 
হারিয়ে যেতে চাইছে পুরনো বন্দর ফেলে দূরে
কিংশুক জীবনের কতটুকু চিনেছো নিজেকে
যেখানে ফেরার পথ নেই, সেখানে যাচ্ছো আবার

বিচ্ছেদ মন্ত্ররা মৃত, টের পাই আগুনের হল্কা
পুড়ে যাবার ইচ্ছেরা লীন, মাত্র জন্মেছে জীবাশ্ম
পথিক হবার সাধ, নেই হয়ে শূন্যতে মিলায়
শৈশব স্মৃতি ধূসর — ডাকছে কাটাকুটি খেলতে...

বাধা দেবার ইচ্ছেরা অবসরে, অচেনা জীবন
পার করছি, যেখানে শুনি শুধু বিচ্ছেদের গান

Friday 28 July 2017

বৃত্ত সংক্রান্ত

বৃত্ত সংক্রান্ত
ইমেল নাঈম

আনুভূমিক রেখা আঁকছি বিচরণ ক্ষেত্রে
শান্তির প্রয়াসে ওড়াচ্ছি শাদা পায়রা
উর্বর মাটি ক্রমশ হয়ে উঠছে নিষ্ফলা
বৃত্তের ব্যাসার্ধ জুড়ে নেমে আসছে ধাঁধাঁ

স্পর্শকের বুক চিড়ে ধ্রুপদী ব্যথার জন্ম
তারা এঁকে দিয়ে যায় বিশালাকৃতির ক্ষত
বৃত্তের প্রয়োজনীয়তা ভুলে যায় কৃষক
আকাশে তাকিয়ে অনুভব করে শূন্যতার।

কিছুকিছু সম্পর্ক জ্যা’র মতো, দূরবর্তী
আবেশে দাঁড়িয়ে থাকে স্মৃতির বারান্দায়
অপেক্ষায় থাকে কেন্দ্রের সিগন্যালের
এরা কাছে আসেনা, দূরের ব্যথায় থাকে।

পড়ন্ত বিকালে ক্লান্তি নামে ছেদকের বেশে
এফোঁড়ওফোঁড় করে ফেলে ভিতরের সব
দুঃখগুলোকে একদম ভাগ করা যায়না
শব্দ নয়, নীরবতা জানে বৃত্তের কষ্টগুলো।

মনকে ছুঁতে পারে কয়জন? কেউ অর্ধেকে
থামে ব্যাসার্ধের ভাগ্য নিয়ে। গোপন কোনো
প্রণয়ের ভাজে লিখে রাখে সোনালি অতীত
বিনিময়ে মিলেনি চাওয়াপাওয়ার হিসাব

শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে অর্ধমৃত সম্পর্ক
কেন্দ্র ছুঁয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তের
মাঝে সম্পর্ক আঁকে ঠিক ব্যাসের মতো
পুরুষতান্ত্রিক একছত্র অধিকার থাকে,
এসবের মাঝে বৃত্তটি অবহেলায় মরে যায়।

Thursday 27 July 2017

জিপসি জীবন

জিপসি জীবন
ইমেল নাঈম

নিরীহ কিছু শব্দের কাছে হাত পেতেছি কতকাল...
উদ্দেশ্য পরিস্কার শুধু গমনপথে ছুঁয়েছে ক্ষণিকের ব্যথা
মুছে যেতে পারে পরিচয়, নিজেকে অচেনা লাগে ভারি।

উৎকর্ষের পথে থমকে দাঁড়াই, চুপচাপ নামে রাত
শেষ স্টেশনে থামে গাড়ি, যাত্রীরাও নামে নিজ গন্তব্যে
এলেবেলে চিন্তারা আমার সাথে খেলছে আপনমনে।

অচেনা পথের পথিক, প্রাচীন  কোনো জিপসি হয়ে
ছুটে চলেছি — পথের শুরুটা জানা, শেষটুকু নয়
বিভ্রম চাপিয়ে চলেছি, পথিক বেশে অচেনা মুখোশে

ক্ষণিকের অতিথি হয়ে শেষ ঢুকেছিলাম এই শহরে
নাম না জানা কোনো গেড়েছিলাম  উদ্যানে তাঁবু
আর সন্ধ্যাকালীন অবকাশে এঁকেছিলাম দুর্ভাগ্য
হতাশার মোড়ে দাঁড়িয়ে লিখেছিলাম নিজের শৈশব

শুন্য চায়ের ফ্লাক্স, পথের তাড়া তাড়িয়ে মারছে
রাত ফুরোলেই ভিন্ন পরিবেশ, নতুন শহরের মেহমান
আমার কখনোই লিখা হবেনা পুরনো শহরের গল্প।

Wednesday 26 July 2017

রক গায়ক
ইমেল নাঈম

থেমে যাওয়ার প্রাক্কালে কিছু স্পন্দন বাকী থাকে
বেহিসেবী ঋণের বোঝায় নত হয়েছি কত আগে
শঙ্খ বাজিয়ে জানান দিয়েছি ফুরিয়ে যাইনি আজো
প্রান্তিক বোদ্ধাদের কাছে নত হতে গিয়ে বুঝেছি
যা কিছু লিপিবদ্ধ আছে তার পুরোটা বানোয়াট।

সত্য মিথ্যের আড়ালে হাসছে অন্য এক ঈশ্বরী,
তাকে দেখে থমকে দাঁড়াই, স্মৃতিকে পুনর্জন্ম দিই
পোস্টকার্ডে উড়ে আসে কেবল কবিদের এলিজি,
গত সন্ধ্যায় ক্যাফেটেরিয়ায় বসে লেখা কবিতাটি
এখনো পাঠ করে শোনাইনি তোমাকে।

পরতে পরতে জমে যাওয়া অনেক স্মৃতির ধুলো,
অভিমান গলছে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কল্যাণে
তার প্রভাবে হঠাৎ সৃষ্ট হওয়া ক্ষণিকের নিম্নচাপে
জল জমেছে আমাদের জাগতিক চাওয়া পাওয়ায়,

অফুরন্ত অবসরকে গ্রাস করেছে সুখের অসুখ
সুযোগে প্রযুক্তি যান্ত্রিকতা শেখাতে বসে পড়েছে
অবসাদ খুন করছে আমার ভিতরের অজানাটুকু
আয়নায় দাঁড়ালে অচেনা এক রকস্টারকে দেখি

নিজের সাথে কথোপকথনেও গোপনীয়তা থাকে
আড়ালের দিকে ডাকাডাকি, অন্ধকার নামলে
সব হিস্যা ভুলে পুরোটা সকাল ফিরে পেতে চাই

কবিতার খাতায় এভাবেই লিপিবদ্ধ করি ঈশ্বরকে
রুটিনমাফিক কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি
গোপনীয়তা ভাঙলে রকস্টারের জীবাশ্ম মেলে।
কবরের শোক স্মারকে কেবল কবির নাম লিখা
রকস্টার তো কিছু কবিতাই লিখেছিলো অন্যভাবে...

Monday 24 July 2017

আঁখের গুড়

আঁখের গুড়
— ইমেল নাঈম

চুপ হয়ে গেছি, আর দিনকে দিন বলবো না
রাতকে রাত বলারও দুঃসাহস দেখাবো না।
প্রয়োজনে কুকুরের চেয়েও প্রভুভক্ত হবো,
দৈববাণীর অপেক্ষায় থাকবো দিনের শেষে,
অন্ধকারের যাত্রাপথে আলোর গান শোনাবো

বলেই দিয়েছি, সাদাকে সাদা নয়। কালোকে
সকালের হবার আগ মুহূর্ত বলে চালাবো
শিশুরা কখনো আঁকবে না কোনো প্রতিকৃতি,
সামাজিক মাধ্যমে, বিপরীতে বিন্দুতে দাঁড়িয়ে
আর ছড়াবো না অন্যরকম চিন্তার স্ফুরণ

ত্রাণের অভাবে মার খেলে হাতেতালি দিবো
যেন উৎসাহে আরো বেগবান হন আপনি
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট সম্পর্কিত
যাবতীয় খবরাখবর বেমালুম চেপে যাবো।

ভিন্ন মতাদর্শী কেউ দলে এলে স্ট্রেটেজির
বিশাল তত্ত্ব চাপিয়ে তাকে বৈধতা দানে
আমার কলম থাকবে সদা তৎপর।
আপনার মঙ্গল কামনায় ব্যস্ত থাকবো,
আমার চেয়ে আপনাকে অন্য কোনো মুখ
বেশি ভালবাসেনা — প্রমাণ করাই উদ্দেশ্য।

অতীত সম্পর্কে খবরাখবর নিবেন না প্লিজ
বর্তমানটাই এখন আপনার সামনে দাঁড়িয়ে
বর্তমান নিয়োজিত আপনার সেবা প্রদানে।

বিনিময়ে বেশি কিছুর চাওয়াপাওয়া নেই
সামান্য আঁখের গুড় পেলেই আমি সন্তুষ্ট
বিশ্বাস করুন, অল্প আঁখের গুড়েই আমি...

প্রকাশকালঃ ৯ শ্রাবণ ১৪২৪

Saturday 22 July 2017

স্মৃতির কার্নিশ

স্মৃতির কার্নিশ ইমেল নাঈম প্রেমে পড়লে সকল দম্পতী মুহূর্তে বনে যান গল্পকার আমার তখন কার্নিশের চড়ুই দুটোর কথা মনে পড়ে, কতটা অবসর তারা গিলে নিচ্ছে পরজীবী বাসস্থানে! মুখোমুখি স্পর্শগুলো নিভে যেতে থাকে ক্রমান্বয়ে দু লাইনের চিরকুট লিখে রাখে স্বপ্নে বিভোর মুখাবয়ব স্বপ্ন ছুঁয়ে গেছে কিছু লিপিবদ্ধ মলিন ইতিহাসের গল্পে উড়তে থাকে, বনেদি পাখির মতো, গৃহবন্দী বাজরিগার গ্রে উইং, রেইনবোর কিচিরমিচিরে, নৈঃশব্দ্যে ভাসে আততায়ী — মুখের ভিড়ে অচেনা মুখ অন্যের ঘরে চুপসে যায় বেলুন, প্যারাট্রুপারের মতো নামে দুঃখ দুজন আলাদা পথে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে অজস্র শিউলি সুখের সময় ঋণে আবদ্ধ করে রাখেনি দুজনকে উড়ুক্কু সময়ের পথে নামে ক্লান্তিকর গল্পের মহড়া কার্নিশে লেখা নাম মুছে যায় সময়ের চোরাবালিতে।

প্রকাশকালঃ ৭ শ্রাবণ ১৪২৪

Thursday 20 July 2017

পথিক

পথিক
— ইমেল নাঈম

কিছু প্রেম শরীর থেকে মনের বাড়ীর দিকে হাঁটে
সম্পূর্ণ উলটো রাস্তায় পথ চলা অচেনা দুটো মুখ
হঠাৎ পাশাপাশি বসে থাকে — অন্তহীন সময়ের 
ছুটে গোপন আয়নার মন্ত্রপাঠ চলে বাকী জীবন।

ছুঁয়ে থাকা হাত কত আলোকবর্ষ দূরের মেহমান
তারা আজও ছুঁয়ে দেখে একজন অন্যজনকে
শাল মহুয়ার বনের গল্প লেখা নেই সাক্ষাতে
রূপকথার জীবন ভর করে স্বপ্নিল চোখে
অচেনা মুখ হঠাৎ পাশে এসে বসে পরস্পরের

আড়ম্বর আয়োজনে মূকাভিনেতার জন্ম হয়
শ্রোতা আর বক্তার অপরূপ সমন্বিত ব্যবস্থা
সূক্ষ্ম তারের উপর জন্ম নেওয়া অচেনা সুর
পিচ ঢালা পথের ব্যস্ততার অনন্য বিজ্ঞাপন।

ভোরের গল্পরা মুছে যায়। ইউটিউব থেকে উড়ে 
আসে সফট আর প্রগ্রেসিভ রকের ক্যানেস্তারা
দুটো মনের অহেতুক ভাঙচুর, সংসার জীবনের 
গল্পে অচেনা দুটো মুখ মনের বাড়ীতে চলে যায়।

প্রকাশকালঃ ০৫ শ্রাবণ ১৪২৪

Wednesday 19 July 2017

প্রতিবিম্ব

প্রতিবিম্ব
ইমেল নাঈম

হারিয়ে গেছি, রয়ে গেছে অঙ্কিত মসৃণ দাগ
একছত্র অভিনয় শেষে চোখজুড়ে ক্লান্তি নামে
কাকে ঠকাচ্ছো, আয়না দেখোনা কতকাল!
শরীরজুড়ে আঁকা উল্কি, রাতবিরেতে মাতাল
নামে রাস্তায়, অযত্নে থাকে একমুঠ শিহরণ।

মুখ অচেনা হয়, খেলনাবাটি খেলতে গিয়ে
চুপ হয়েছে রাতের নীরবতা, ল্যাম্পপোস্টের
নিয়ন আলোয় নিজেকে ভবঘুরে ভেবে বসি
চুপচাপ পেরিয়ে যায় সময়। নিজেকে মুগ্ধ করি।
অভিনয়ের শেষ দৃশ্যে নায়কের মৃতদেহ থাকে।

পানকৌড়িতে ভেসে থাকি, শান্তজলের প্রেম
মাখামাখি মুহূর্তগুলো পালায় নিজের থেকে
চাঁদনিরাত এলে খুলে দিই শরাবের বোতল
তক্ষুনি সামনে এসে বসেন গালিব আর তুমি।

চেনা বাক্য নাম লিখিয়ে নেয় আসামীর খাতায়।
শায়ের শোনার পাশাপাশি ছবি আঁকতে থাকো
অবচেতন মনে হঠাৎ বিড়বিড় করে ওঠো
কাকে ঠকাচ্ছো, আয়না দেখোনা কতকাল!

প্রকাশকালঃ ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪

Monday 17 July 2017

বৃষ্টি বিলাস

বৃষ্টি বিলাস
ইমেল নাঈম

দাঁড়িয়ে থাকাটাও শৈল্পিক... আঁচড় কাটে অচেতনে।
তার ব্যথাও মুছে যায় কিছুটা টানাপোড়নের শেষে
নিপীড়নের কোনো সংজ্ঞা নেই, জাস্ট বয়ে যায়...
শুভ্রতা ছড়াতে গিয়ে হারিয়ে গেছে দূরের সীমানায়
ছবি আঁকতে বসে এঁকে ফেলছি অচেনা দৃশ্যপট।

মূর্ত মুহূর্তগুলো অচেনা হয়ে উঠছে বেখেয়ালে
ঘুড়ির মতো উড়তে উড়তে হারিয়ে যাচ্ছে সুতো
বৃত্ত আঁকতে গিয়ে কম্পাসে আঙুল রাখতেই
অনুভব করছি নিজেকে, আয়না দেখিনা কতকাল
মনোটনাস সময়ের ইতিকথার প্রতিবিম্ব নেই।

পেরিয়ে যাচ্ছি পুরনো অলিগলি, আকাঙ্ক্ষাগুলোর
মৃত্যু ঘটাচ্ছে চোরাবালির সময়, সমুদ্র কেবল ডাকে
সৈকতের পাড়ে দাঁড়িয়ে মানুষের নিঃসঙ্গতা মাপি
গাঙচিলের ডাকে নোনাজল ভিজিয়ে দেয় পা,
সন্ধ্যা নামলে আমার নিকট আমি ছাড়া কেউ নেই।

বিষণ্ণতার খাতায় মেঘ জমেছে। হয়তো ঝরবে...
সেখানে ভিজলে বিলাসীতাই হয়, ব্যর্থতা নয়
বৃষ্টি বিলাস ঢেকে দেয় ব্যর্থদের রোজকার মিছিল।

প্রকাশকালঃ ০২ শ্রাবণ ১৪২৪

Saturday 15 July 2017

অভিনয়

অভিনয়
ইমেল নাঈম

নিবিড় কথোপকথন আর এক মুঠো আলিঙ্গন...
হারিয়ে যাওয়া প্রান্তিক আবাসন, ক্ষয়িষ্ণু জীবনের
হাতেখড়িতে ব্ল্যাকবোর্ড থেকে উড়ে আসে স্মৃতি।
কথার পিঠে কথার জন্ম, মারপ্যাঁচ ভুলে যাওয়া
স্মৃতির রেখায় মুছে গেছে কপালের বলীরেখা ।

উড্ডীন সময়ের হিস্যা, আহামরি মুখের বিপণন
শুনি — বুক পকেটের কোথাও অস্পষ্ট স্পন্দন,
বেশি কথা জমা নেই, জমাটবদ্ধ অনুভূতিগুলো
অমানিশায় পালিয়ে গেছে ডায়রির পাতা থেকে।

একাকীত্বর বিজ্ঞাপনে নায়ক নায়িকা থাকেনা
ক্রমশ বিষণ্ণতাকে একাই গিলে খাচ্ছে সংলাপ,
স্ক্রিপ্টের ভাষায় কোনও যতিচিহ্ন নেই, আড়াল
কেবল ডেকে চলেছে আরও আড়ালের পথে
আবেশের পাশাপাশি অনুভূতির মৃত্যু মিছিল বাড়ে।

অতিরিক্ত আবেশের থেকে চিরস্থায়ী ঘুমের জন্ম
ঘুমিয়ে যেতে থাকে চোখ। পেখম তুলে নাচে ময়ূর
তাতেও বিব্রত হয়েছিলো কোনও এক রাসেল...
ওদিকে অভিনয় সেটে হাসছেন আরেক রাসেল।

আমি সত্য মিথ্যের পরিমাপ করতে বসে
ঢুকে যেতে থাকি অভিনয়ের আরেক মঞ্চে।

প্রকাশকালঃ ৩১ আষাঢ় ১৪২৪।

Friday 14 July 2017

তিমির রাতে আলো নিভে যায়
জাগি নতুন ভোরের অপেক্ষায়
ন্যায্য হিসাবটুকু বুঝে নিবো বলে
জেগে আছি বিধ্বস্ত শরীরে।

কামনার জোর নৈতিক অবক্ষয়ে
পচে যাওয়া সমাজের প্রতিটি স্তরে
নষ্টদের চিৎকারে, হিংস্র উল্লাসে
অনিরাপদ আমি আছি বেঁচে

অসভ্য চিৎকার
নষ্টদের জয়োল্লাসে আমারর কান্না

তোমরা আমায় ভাবো মাংসপিণ্ড
অবজ্ঞার উপমায় অবহেলায় হাসো
আড়ালে শুনি অসভ্যের চিৎকার!
হৃৎপিণ্ড জুড়ে নষ্টদের জয়জয়কার

আমি ধর্ষিতা, সমাজের বঞ্চিত নারী
বিনা দোষে সেজেছি দাগী আসামি
তোমরা কলঙ্ক লেপতে চাইছো আবার
অন্যায়ের বিরুদ্ধে গান গাইবো বারবার

ভুল পথে পেতে চাইলে সবটুকু
জোর করে ছুঁয়েছো শরীরটুকু
বদলে নিলে মুখোশ পরক্ষণে
চেয়ে দেখোনি কতখানি ঘৃণা জমেছে

চলন্ত বাসে, রাস্তাঘাটে
শিষ বাজিয়ে খুঁজছো আমায়
বাতাস বলে কুৎসিত চাহনি
শব্দরা ফিরে গেছে দেখিনি।

নাবিক

নাবিক
ইমেল নাঈম

বহুমাত্রিক রেখা মুছে গেলে প্রসাধনীর ঘ্রাণ ছুটে আসে
এলেবেলে চুল... মখমলি পোশাক... আলতো পেলবতায়
ভুল করে নিজেকে চিনতে চেয়েছিলাম তোমার চোখে।

ঘড়ির কাটা থামিয়ে দিয়ে নিজেত কানকে বিরহ শোনাই
স্মৃতির বায়স্কোপে চড়ে ঘুরে আসি আবার বর্তমানে
হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো কিন্নর কণ্ঠে গাইছে সঙ্গীত
ফেরা হলো না বলেও ফিরে যাই ইট পাথরের সভ্যতায়।

কোথায় চিহ্ন রেখেছো, কোথায়ই বা ফেলেছিলে নোঙ্গর
অজ্ঞাত বন্দর থেকে ছুটে চলি কম্পাসহীন সময়ের পথে
স্রোতের বিপরীতে কখনো চলতে শিখিনি, দাঁড়াই নি
প্রশ্নের সামনে, আভ্যন্তরীণ স্বপ্নগুলো মুছে গেছে বর্ষায়।

ভেসে যাচ্ছিলাম উদ্দেশ্যহীন, কেন ডাকলে এভাবে
অচেনা মুখ আমার কাছে গচ্ছিত নেই তোমার ঋণ
বললে কেন ভেড়াতে জাহাজ, ভুল বন্দরের বাতিঘরে
ভুল মানুষের কাছে ভিড়েছি আবার, ফেলেছি নোঙ্গর...

সন্ধ্যা নামলে জ্বলতে থাকে বাতিঘরের অলস আলো
কেউ জানেনা তীব্র ব্যথা, হাহাকারের সুতীব্র দঙ্গল।

প্রকাশকালঃ ৩০ আষাঢ় ১৪২৪

Tuesday 11 July 2017

প্রশ্ন

প্রশ্ন
ইমেল নাঈম

প্রেমিকের মৃত্যুর সানাই বাজলে প্রেমিকাও মরে যায়।

দূরবর্তী সংকেত আর লাল নীল আলোর মহড়ায়
শেষ বিন্দু লিখে রাখে প্রেম — বিমূর্ত শব্দঋণের ভাজে
আড়াল হতে শিখেছে যে মুখ তাকে কীভাবে ফেরাই?

হসপিটাল বেড লিখে রাখে জন্ম-মৃত্যুর আমলনামা
অজস্র প্রিয় মুখ পালিয়ে যাচ্ছে, রেখে যাচ্ছে মুহূর্ত।
যেগুলোর কোলাজে অব্যক্ত থাকে প্রেম, চাহিদাপত্র
মিটে যায় রোজগারে জীবন, শূন্যতার নাকছাবি
পরে কাটছে নিকোটিন সময়। কেন — উত্তর নেই।

আমাদের কারোর কাছেই কোনোকিছুর উত্তর নেই
কারণ জানিনা কাছে আসার। যাবার কারণ অজানা।
শুধু স্মৃতি কাতরতায় ভিজছি অফিস ফেরত সন্ধ্যায়,
মাঝামাঝি সময় পেরোয় বৃত্তালপনার আঁকিবুঁকিতে।

অপরাধী নই। নিজেকে অপরাধী ভাবি। ঘুরে দাঁড়াবো
কিন্তু কতটা রক্তক্ষরণের পরে অণুচক্রিকায় জমবে...
খেলাঘরের সবচে কঠিন পাঠ শেখালো কে আমাকে?
জীবন নাকি প্রেম? অবচেতনে প্রশ্নটার সামনে দাঁড়াই

আমার এখন নোঙ্গর তুলে পাড়ি দেয়ার কথা দূরে
শূন্যতা আমাকে ফিরিয়ে আনছে পুরনো বন্দরে...

প্রকাশকালঃ ২৮ আষাঢ়  ১৪২৪

Sunday 9 July 2017

কাটাকুটি - ২

কাটাকুটি -২
ইমেল নাঈম

নীল ঘড়ি থেমে যায়। বর্ষীয়ান পৃথিবী খুব ক্লান্ত
প্রতিদ্বন্দ্বীবিহীন মল্লযুদ্ধের পরিণতি টানতে টানতে,
মিথ্যে ফানুশ উড়াতে বুঝলাম চুপ হয়েছে মুখ
ক্লান্তি,  ব্যথা, অপমানের উপশমের ওষুধ নেই

আড়াল করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে
জোয়ারভাটার হিসেবে চলছে গাণিতিক জীবন
হিসেবের বাইরেও কিছু বর্ণমালা থাকে অবশিষ্ট...

নিজেকে আডাল করার শৈশবের প্রবণতায়
মুছে যায় জীবনের হিসাব, ব্যান্ডেজের ফাঁকে
বোঝা যায় ক্ষত। লাভক্ষতির মারপ্যাঁচে
নৈতিকতা অভিধান চ্যুত হলো অনেক আগে।

বিভ্রান্ত হবার সুযোগ নেই, বিভ্রমের কেন্দ্রে চড়ে
বৃত্ত পূর্ণ করে চলেছি কোনো আগপাছ না ভেবে।
মুছে দিতে চাই ভুলগুলো, জীবন ক্যানভাসে
লাল রঙ মুছে সবুজ রঙটাই আঁকতে চেয়েছি...

কাটাকুটি খেলায় কাটছি নিজেকে কেবল নিজে
বুঝতে শিখছি অনুভবের রেশ সম্পূর্ণটুকু মুছলে
কল্পনার রাজ্যপাট, সুতীব্র দহনের জন্ম হয়।

প্রকাশকালঃ ২৫ আষাঢ় ১৪২৪

Friday 7 July 2017

সঙ্গীত

সঙ্গীত
ইমেল নাঈম

ভেসে আসে সঙ্গীত। নিজেকে আড়াল করতে করতে পালিয়ে গেছি। দীর্ঘ প্রতিযোগিতার শেষেও হিসেব করতে বসি জয় পরাজয়ের। অংকের পর অংক কষি। মুছে দিতে থাকি যতসব হিসেব নিকেশ। প্রান্তিক মুখ মেনে নিতে পারেনি শহুরে আদব। সেকেলে হতে হতে ফিরে আসে পকেট ঘড়ি। ব্যাটারি নয়, হৃদস্পন্দনে ঘুরছে আমাদের জীবন।

উড়োজাহাজের গতিবেগ মাপতে মাপতে হিসেব করে নিই চোখ, মুখ, নাক আর চুল। বাধাই করে রাখি কল্পনার ছবি। বাঁধা দিতে গিয়ে থেমেছি। নূপুরধ্বনি কানে বাজে। মিলিয়ে গেলো ভোরের আযান। নিষেধ সত্ত্বেও চলে গেছি দরজা পেরিয়ে অন্ধ গলি। ঘোড়সওয়ার আমি পালটে নিচ্ছি শহর। ভাগ্য অন্বেষণে ছুটছি কেবল। বাধা নেই, যদিও কম্পাস নেই হাতে।

একচোখা দূরবীন, যা দেখি ধূধূ মরু। বালুর উত্তাপ মাঝেমাঝে ছুঁয়ে দেখে আমাকে। সমুদ্র দেখতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছি নিজের স্পর্শগুলো। নেই নেই করেই পালিয়ে যাচ্ছি। আছে ভাবতেই জন্মাচ্ছে বিশাল শূন্যতা। নিজের ক্যানভাসে নিজের ছবি বিমূর্ত হয়ে যায়। কারণ জানা নেই। লুট হয়ে যাচ্ছে রঙ তুলি।

ঐকতানে বাজেনা সঙ্গীত। আহামরি স্বপ্নরা পেঁচিয়ে গেছে কলহে। অন্তর্দাহ দেখছি। ভুল গলিতে ঢুকছি বারবার। দিনশেষে নিজেকে প্রশ্ন করছি। উত্তরও খুঁজছি সেসবের। গল্পের আর প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি শুনতে শুনতে সন্ধ্যা নামাচ্ছি প্রতিদিন।

প্রকাশকালঃ ২৩ আষাঢ় ১৪২৪

Wednesday 5 July 2017

কাটাকুটি -১

কাটাকুটি -১
ইমেল নাঈম

পথ থেমে যায়। বৃক্ষের কাছে নতজানু সময়।
ক্লান্তি নামে। শহরের রাজপথ সৌখিন সাজে।
ভুল সময়ের ক্যানেস্তারা, পাশাপাশি দাঁড়ায়
ভালো আর মন্দ। উভয়ের এখন ঘোর দুর্দিন।

অভিমানের খাতায় কাটাকুটি খেলা চলে
দাঁত আর নখের অহমিকাপূর্ণ আভিজাত্য
চেপে যাই অভিমানের পরতে সোঁদা গন্ধ
ক্ষণিকের বৃষ্টি দিয়ে গেলো মিথ্যে ঘাম।

চেপে যাই সময়কে। বিনির্মাণের পথে নামি।
বিগত কয়েক দশক ধরে গড়ছি কবিতা
ইট, পাথর, সিমেন্টের সমন্বয়ে গড়ে উঠছে
কবিতার মতো কিছু লাইন, বিনিময়ে শূন্যতা...

কই যাচ্ছো পালিয়ে আঘাতের কথা চেপে
সব হিস্যা মিলেনা কবিতায়, গোপনে
বয়ে যায় প্রলেতারিয়া জীবনের গল্প
তাড়া করে ফিরছি অপূর্ণতার ঝুলি নিয়ে।

বাধা নেই, প্রাপ্তি নেই, কেবল সুখস্মৃতির ক্লাস
মনোটনাস সময়ে দৌড়চ্ছি, বাকিটা অভিনয়।

প্রকাশকালঃ ২০ আষাঢ় ১৪২৪

Tuesday 4 July 2017

হন্তারক তুমি - অবলীলায় হত্যা করেছো প্রেম
কী অদ্ভুত! সমাজ তোমার গায়ে দেয়নি আঁচড়।

Monday 3 July 2017

নিষিদ্ধ সম্পর্ক

নিষিদ্ধ সম্পর্ক
ইমেল নাঈম

বৃষ্টি বুকে নিয়ে সংজ্ঞাহীন কিছু স্পর্শ খেলছি
রেশ টানতে টানতে শিকার হচ্ছি প্রতিদিন
স্বীকার করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে

নিকুচি করি শৈশবের বইপত্রগুলোকে
নীতিকথার ভিড়ে কখন নেমে আসে সন্ধ্যা
বিপরীত মুখে বসে চালাচ্ছি হাওয়া কল
মানে নেই জেনেও ভাসাচ্ছি নিজেকে

কোথাও থামতে হয়, কোথাও ছুটে চলি...
মনের দরজায় কড়া নাড়লে বিধান ভুলে যাই
অশ্লীল ইঙ্গিতের কাছে ছোটার কারণ জানিনা,
মোহ, বাস্তবের সূক্ষ্ম পার্থক্যটা আমার জানা
তবু বাঁধাধরা নিয়মের সামনে এসে দাঁড়াই।

এমন কেসে বয়সকে বাড়িয়ে দিতে হয়,
নয়তো নিজ থেকেই কমিয়ে দেয় ওই প্রান্ত।
জগতের অংক ভুল সূত্রে মিলাতে হয়
বৃত্তের মাঝখানটায় আঁকতে হয় ছেদক।

বৃত্ত দুভাগ হলে চুষে খেয়ে নেয় সবটা রস
আড়ালের কানাঘুষা, প্রকাশ্য সাক্ষাতে সব চুপ
কেউ জানেনা কে খাদক — আমি না সে... 

প্রকাশকালঃ ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪ 

Sunday 2 July 2017

শোকস্মারক

শোকস্মারক
ইমেল নাঈম

শহরের শেষপ্রান্তে হঠাৎ আলো জ্বলে ওঠে

মুছে গেছে কালিমা, ব্যর্থদের মিছিলে হাঁটছি
শহরের রাজপথ ভিজছে আষাঢ়ের বৃষ্টিতে
প্রেমের সরণি পেরিয়ে যাচ্ছি — একাকী।

নীরবতার মোড়কে বিক্রি হয় দুঃখবোধ
আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে
মিটে যাচ্ছে যাবতীয় হিসেব নিকেশ ।

প্রথম চুমুকেও বিক্রি করে দিয়েছো ডলারে
অন্ধকারে যে খেলা খেলেছিলো দুটো শরীর
তাকে আজও অবিক্রীত রেখেছো ভাবতেই
অবাক হই। জাদুঘরে জায়গা নেই...
শূন্যস্থানও পরিপূর্ণ ছোটোখাটো আঘাতে

প্রত্নতাত্ত্বিকের মতো মাটি খুঁড়ে আনি,
আধুনিক ডাকবাক্সে রাখি অনির্ণীত সম্পর্ক
ক্লান্তি নামেনা আমার শহরে, বৃষ্টি নামলে
মন তোমার কাছে নয়, ভিন্ন গন্তব্যে যায়।

শহরের শেষপ্রান্তের আলোয় ‘তুমি’ নেই
সলো-লকিতে বর্ণনা করি তোমাকে
তীব্র ব্যথা, রক্তক্ষরণে লিখি শোকস্মারক।

প্রকাশকালঃ ১৮ আষাঢ়, ১৪২৪

Saturday 1 July 2017

হিসাব

হিসাব
ইমেল নাঈম

একটা কস্টলি অতীত ডিপ্রেশনের গাড়ীতে চেপে চলে যাচ্ছে সামনে
বাঁধার প্রাচীর টানতে টানতে নিঃশব্দে দূরত্ব মেপে নিল মেগপাই গাছ

ডায়রির কতগুলো পাতা অবহেলায় ভরে ওঠে শুকনো স্পর্শে
হিসাবের বাইরের হিসাবের জের টানতে ঝরছে অনাবাদী বিকেল
সন্ধ্যা হলে পুরোনো মদের বোতল খুলে ঢকঢক করে গিলি জন্মান্তর।

অবিশ্বাসের গলায় পড়াই মাদুলি। ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাসী নই, গ্রহের ফেরে
আটকে দিয়েছি অপ্রাপ্তিগুলোকে। গতরাতে যে উষ্ণ চুমুরা আমাকে
ক্ষতবিক্ষত করে গেছে, সেই মুখটিও মলিন হয়েছে সকালের রোদে

এরপর, কবিতার খাতায় ছবি আঁকা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই
পেন্সিল স্কেচে আঁকতে থাকি, ক্যানভাসে উদ্দেশহীন আঁকাজোকা।

দিনশেষে নগ্নতার ছবি দেখি, নিজেকে দেখে নিজেই চমকে উঠি
আমি তো আমায় আঁকিনি কখনো , তবে কোন সে মুখ নীরবে
খেলে দিচ্ছে পাশার দান...? নিজের নীরবতা দেখে চমকে উঠি... 

আমি দেখতে থাকি পরিযায়ী পাখি উড়ে যায় আমার আকাশে

প্রকাশকালঃ ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪