Saturday 29 April 2017

গানের পাখি

গান পাখিরদল
ইমেল নাঈম
উৎসর্গঃ স্বরব্যাঞ্জো
স্পেশাল থ্যাংকসঃ নাঈম ফিরোজ

ভোর পেরুলেও গেয়ে চলেছে পাখির দল
নাম জানা অনেকের ভিড়ে অচেনা কিছু মুখ
হারিয়ে যায় কোথাও — সুর শব্দের সমন্বয়ে।

পাখিরদল, আমিও ওড়াতে পারি সব আশঙ্কা
তুমি গাইলে আমিও গাই অশুভ'র বিরুদ্ধে।
পাখিরদল বাজাও তোমার বাদ্য, শব্দের ব্যঞ্জনায়
ভাসাও তরী সুরের দেশে, নিয়ে চলো আমাকে
গাও পাখি, দুঃসময় উড়ে যাক কালবোশেখিতে

গেয়ে শোনাও, আদিবাসী তরুণীর প্রেমের কবিতা
যে চিঠির প্রাপক বাঙালি তরুণ, বৃষ্টি নামাও
নগরীর বুকে, স্বর্গ হতে নেমে আসুক তানসেন।

বাজুক তোমার ব্যাঞ্জো, সেতারে টঙ্কার উঠুক
হারমোনিকায় গেয়ে ওঠো আমার গান,
যা প্রেমিকাকে দিতে গিয়ে ফেলেছি হারিয়ে।
বাঁশীর সুরে রোহিত করো অন্যায় স্রোত

গাও চিরচেনা পাখিরদল, আমি বিমুগ্ধ শ্রোতা।
আমার জন্য গাও প্রেম আর দ্রোহের ধ্রুপদী গান।

প্রকাশকালঃ ১৭ বৈশাখ ১৪২৪

Friday 28 April 2017

আর্টিস্ট

আর্টিস্ট
ইমেল নাঈম

কিছু বিষাদ আঁকা হোক। দেয়ালের আর্দ্রতা ভিজিয়ে গেছে নাগরিক উঠান। জানালার থাইগ্লাস আটকে মাপছি বৃষ্টিপাতের পরিমাপ। কদিনের বৃষ্টি ভিজিয়ে গেলো রাস্তাঘাট। নোনাজলের নিত্য আসা যাওয়ার দৃশ্যপটে লাগেজ গোছাতে গোছাতে ভেসে আসছে নতুন এক সঙ্গীত। অপেক্ষার নামতা শিখতেই জ্বলে ওঠে নগরীর ল্যাম্পপোস্ট। ব্যস্ত রাস্তা ধরে ছুটে চলি স্মৃতি কাতর মুহূর্তগুলোকে পাশ কাটিয়ে।

প্রার্থনাঘর, দিনের বেশিরভাগ সময় নিঃসঙ্গতার আবাদে ব্যস্ত। ক্ষতবিক্ষত শরীরে ভেসে ওঠে জন্মদাগ। এগুলো ক্রমশ আলাদা করেছে আমাকে তোমাদের থেকে অনেক দূরে। জলরঙা কালিতে ভাগ্য লিখি। মানুষ আঁকতে গিয়ে এঁকে বসি শূন্যদ্যান। সেখানে তপ্ত সূর্য কিরণ আঁকি, চারপাশ ঘিরে আঁকি রেইনট্রি, আর ম্যাগপাই। ময়ূর আঁকি। পেখম মেলবার বদলে সে ঘিরে রাখে তার পা। এটা অসুন্দরকে ঢেকে রাখার অবিরাম প্রচেষ্টা।

রঙতুলি ফেলে লিখতে বসি, নোনাধরা দেয়ালজুড়ে কবিতার চর্চা হোক। দেয়ালে দেয়ালে লেখা হোক প্রেমের কথা। বিদ্রোহ চুমু খাক প্রেমিকার ঠোঁটে। প্রেম হোক মানুষের নৈতিক অধিকার। ফিনিক্সের অস্থিরতা কমুক কবির কলমে। প্রেম নামুক পাহাড়ে, হাওড়ে আর সমতলে। মানুষ ভালোবাসতে শিখুক মানুষকে।

মোরাকাবায় বসি, অটোসাজেশন দিয়ে বলিঃ 
পাহাড় শান্ত হও, 
নদী উদ্বেল হও, 
হাওড় শান্ত হও,
রাষ্ট্র মানবিক হও,
মানুষ তুমি মানুষ হয়ে ওঠো,
জলপাই বাহিনী অমানবিক কঠোরতা পরিহার করো,
ধর্ম তুমি সহনশীল হও,
ঋতু স্বরূপে ফিরে এসো,
সর্বশেষে বলি, বাঙালি তোমরা সৃষ্টিশীলতায় মনোনিবেশ করো...

মোরাকাবা থেকে উঠে দেখি, সমগ্র চিত্রপট আর লিখিত শব্দগুলো ধূসর হতে হতে মুছে যাচ্ছে। আমি আবার রঙতুলি নিয়ে আঁকতে বসি...

প্রকাশকালঃ ১৫ বৈশাখ ১৪২৪

Wednesday 26 April 2017

আয়না

আয়না
ইমেল নাঈম

ঢেকে দিয়েছি সব রক্ষণাত্মক আবরণে 
সিংহাসনে মুখ দেখে আঁকছি পরিসীমা
তাড়াহুড়োর ভিড়ে নেমে আসে রাত
সময় কিনেছে পকেটঘড়ির বিলাসিতা

টুকে রাখলাম হাহাকারের জন্ম সময়
রাতের নির্জনে নিঃস্ব থাকে মুঠোফোন
সময়ের করিডোরে কবিতারা ব্যর্থ হয়
থেমে যাই জয় পরাজয় আঁকতে বসে

বদ্ধ জলাশয়ের মাঝে ভেসে বেড়াই
মাছ আর আমি একে অপরের পরিপূরক
অভ্যন্তরীণ অমিলকে পাশ কাটিয়ে
সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে ফলিত রসায়ন।

আয়নায় মুখ দেখি, নিজেকে ব্যতীত
অন্য অবয়ব আসেনি প্রতিবিম্ব ভেঙে
নানান গল্পের ভিড়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর
রাতের অবকাশ লিখি ভিন্ন রঙা কালিতে

দায়ভার এড়ালেই মিটে যায় সমস্যা
নির্জনতাপ্রিয় চিত্রকর্মকে বুকপকেটে
নিয়ে গোলকধাঁধায় ঘুরি। ভ্রম, বাস্তব;
এ’ দুয়ের পার্থক্য বোঝে কেবল আয়না।

প্রকাশকালঃ ১৩.০১.১৪২৪

Monday 24 April 2017

ফল্গুদা'র প্রতি

ফল্গুদা'র প্রতি
ইমেল নাঈম

প্রিয় মানুষগুলো ঠিক এভাবেই ছবি হয়ে যায়

বৃষ্টির শব্দ, নগরী ডুবে গেছে অতিবৃষ্টিতে
আকাশের বুকে সূর্য নেই, মন খারাপের সময়ে
হঠাৎ চুপ হয়ে যায় মানুষ, পাখি হয়ে যায়।

কোনো শব্দ নেই, নিস্তব্ধতার পাঠ সারতেই
বুঝি হারিয়ে যাবার আজকের মিছিল।
দৌড়ছি মশাল হাতে। কোনো ভেদাভেদ নেই
নতুনে পুরানে। কেউ কাঁধে রাখে হাত।

কুঁকড়ে উঠতেই অভয়ের বাণী শোনান
কথায় বাড়ে কথা, বুঝার চেষ্টা করি
গতিপ্রকৃতি। শুরুটা জানার চেষ্টা করি।
শেষটা অনুমান করি, মাঝেরটা চারণভূমি।

অনেক কথা বাকি রয়ে গেলো, ফাগুন
পেরিয়ে বদলে গেলো পঞ্জিকার দিন ক্ষণ
কথার শেষ বিন্দুর অন্বেষনও রইলো বাকি 
কবিতার শপথ, দেখা হবে আবার আমাদের…

কথার পিঠে কথা জন্মাবে, ফুরাবেনা সহজে
আমরা কবিতা দিয়ে নরক কে স্বর্গ বানাবো
আর আপনাকে শোনাবো অনেক কবিতা
একটু সবুর করেন, আমিও আসছি ফল্গুদা...

প্রকাশকালঃ ১১ বৈশাখ ১৪২৪

Saturday 22 April 2017

চার বছর পরে

চার বছর বাদে  
ইমেল নাঈম

জ্যামিতিক মাপে শূন্যতা আঁকি, বৃত্তের পরিমাপে
কম্পাসের কোনো অবদান নেই, সূর্যের হিসাবে
জোয়ারভাটার হিসেব করেছিলাম অন্ধের মতো।

ভেবেছিলো আর ফিরবো না, জলের সংসার
কেড়ে নিবে অবকাশকালীন আয়োজন,
কপালের ভাজ বন্ধুদের মাঝে, বুঝতে পারিনি
শঙ্কা নাকি ভয়! আমি জ্যোতিষবিদ্যা শিখতে বসি

সঙ্গীত হয়ে ওঠে সংকেত, পরিসীমায় বুভুক্ষু অংক
মেলাতে না মেলাতেই বেজে ওঠে ক্যানেস্তারা
অংকের পরে শহর জুড়ে সাইরেন, মুষলধারায়
ভিজছে পুরনো ইশকুল ঘর, আশেপাশের দালান।

জানালায় চোখ, বিপরীতমুখী দালানটাও আছে
নিচের পরিচিত সেলুন আর মুদি দোকান, সবকিছু
আগের মতো, চার বছরের বাদে দৃশ্যপট জুড়ে
অপরিবর্তিত সবকিছু, শুধু বারান্দায় দাঁড়ালে
অনুভব করি বদলেছে জ্যামিতিক হিসাব নিকাশ।

প্রকাশকাল: ৮ বৈশাখ ১৪২৪

Friday 21 April 2017

এলিজি

এলিজি
ইমেল নাঈম

"আমায় ডেকোনা, ফেরানো যাবেনা
ফেরারি পাখিরা কুলায় ফেরেনা"
কাকে ডাকবো! ডুবে যাওয়া নগরীর শোকগাথা দেখার কেউ নেই। পাহাড়ে জমে গেছে নীরব অভিমান। অভিযোগের স্তর পেলবতা ক্ষয়ে হয়ে উঠেছে রুক্ষ। পাহাড়ি মাটি অনুর্বর হয়ে ফিরলো এক রাতের মাঝেই। কিশোরটির কী দোষ! তাকে পুড়িয়ে দিলো জলপাই রঙা পাখি। আগের অধ্যায়টুকু অব্যক্ত থাকুক। প্রকাশিত হলে জীর্ণশীর্ণ মানচিত্র সামনে এসে দাঁড়ায়।

পাহাড়ের প্রতিও আমার অনেক অভিযোগ। বাংলার সব রূপ একাই নিয়েছে ব'লে নয়— ওখানেও চাষাবাদ হয় হায়েনার। চাঁদাবাজি চলে সমতলের মানুষের উপর। অত্যাচার, নিপীড়নের খবর ভেসে আসে সমতলে। অসহায়ত্বের গল্প শোনায় রক্ষকের পোশাকধারী। তবুও চাইনি নিভে যাক প্রাণের স্পন্দন। ষোড়শ জীবন পূর্ণতা খুঁজেছিল। রাষ্ট্র এমন পূর্ণতার গল্প শোনাবে তা হয়তো ভাবেও নি।

ভেসে গেছে চট্টগ্রামের রাজপথ, কাপ্তাই লেকও আজ জলে টলমল। ছুটির দিন। নাগরিক স্পন্দন থমকে আছে। এমন সন্ধ্যায়, শোনা যায় প্রস্থানের গল্প। স্রষ্টার মৃত্যুর খবর ভাসিয়ে নিয়ে যায় আমাকে। বাদলা দিনের রোমান্টিসিজম মুছে যায় ভূমি পুত্র রমেলের জন্য। মানতে পারিনা, লাকী'র পাখি জীবনের গল্প।

ফেরেনা কেউ। দানবও ফেরেনা — পিছনের দিকে আগানোর গল্প লিখা হয়। আমার শহরে মন খারাপের মিছিল। এশা'র আযানে ভেসে যায় বুক, আমি লিখি শোকসঙ্গীত। প্রাপক রমেল আর লাকী, কেউ পরিচিত নয় আমার, অথচ... তাদের মৃত্যু আমাকে আহত করে। সত্যের সামনে আনত মস্তিষ্কে দাঁড়িয়ে থাকি।


প্রকাশকালঃ ০৮.০১.১৪২৪

Thursday 20 April 2017

মুখোশ

মুখোশ
ইমেল নাঈম

মুখোশ নিয়ে বাজারজুড়ে কানকথা, প্রার্থনা ঘরের
নিয়মকানুন ভেঙে কারা যেন খুলেছে চিত্র প্রদর্শনী,
শুনেছি এখন পানশালাতে ঈশ্বর মদ্যপান করেন...

উড়ুউড়ু সময়ের শ্লোক, জীবনের পাশেই মৃতের
কী সুন্দর সমাবেশ! কার চোখে পুণ্য আঁকি?
পাপ যে আঁকছে সেও হয়তো বিদগ্ধ চিত্রশিল্পী!

অনেকটা কাটাকুটি খেলার মতো শৈল্পিক ব্যথাতে
একটা বুনো ঘ্রাণ থাকে, আলোকসজ্জা রাজপথে
মনখারাপের সন্ধ্যায় যাযাবর হবার সাধ জাগে

লোডশেডিংয়ে বোকাবাক্সে সাময়িক বিরতি নামে
নাগরিক চোখ একই চিত্রায়ন দেখে দিনশেষে ক্লান্ত
ছুটছে গন্তব্যহীন পথে বিরতিহীন নাইট কোচ

কিছু শব্দ মলিন হয়, জীর্ণশীর্ণ বুকে আঁকিবুঁকি
খেলতে খেলতে নেমে আসে রূপকথার রাত,
কিছু বিষণ্ণ স্পর্শ আঁকা হয় রাতের ক্যানভাসে।

প্রকাশকালঃ ০৭.০১.১৪২৪

Wednesday 19 April 2017

নিষ্প্রাণ শহর

নিষ্প্রাণ শহর
ইমেল নাঈম

অল্পতেই বিরক্ত হয়ে ফিরছি। পান হতে চুন খসতেই বেরিয়ে আসছে গালি। উদ্দেশ্যহীন সময়ের কাছে ফিরে যাবার মন্ত্র জানা নেই। ইশকুল ঘর পেরিয়ে গেলে বিশাল মাঠ, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উঁচু দালান কোঠার ভিড়ে লেখা হয় ত্রিমাত্রিক শব্দবিন্যাস।

ছবির ভিড়ে লুপ্ত জীবনের আয়োজন। কতটা রুক্ষতা আঁকা যায় পৃথিবীতে? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই, তাই প্রশ্ন করতে ভুলে গেছে সবাই। আয়নায় মুখ দেখিনা, অন্য কাউকেও দেখিনি ঠিক করে। নিজেকে প্রশ্ন করতে শিখি নি, মুখস্থ বিদ্যা ঝেড়ে দিলে নেমে আসে বিষণ্ণ সন্ধ্যা।

রাত্রিকালীন অবসরে কবিতার খাতায় লিখে রাখি অবসাদ। ক্লান্তি মুখর দিনে ঝরে গেছে অনেক ফুল। কালবৈশাখী বাতাস উড়ে আসে দূর থেকে। কুলফি বাতাসে কোনো স্বস্তি নেই, সেখান থেকে উড়ে আসে বার্তা। প্রাপকের ঠিকানা নেই, নেই কোনো আহাজারি। শোনা যায় নিঃসঙ্গতার গান —
          "শাওনও রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে,
           বাহিরে ঝড় বহে, নয়নে বারি ঝড়ে।"

খুব মনোযোগী হলে এ দুটি লাইন রূপান্তরিত হতে পারে প্রেমের সুতীব্র ব্যথায়। কর্পোরেট বিজ্ঞাপনের ভিড়ে কিছু মুখ ভুলে যাই, কাউকে মুছে ফেলি সময়ের ইরেজারে। মায়াজালে বাসা বাঁধছে একজোড়া বাবুই, তার নিচেই ঝরে পড়েছে পারিজাত। ঝড়ের শেষে যা আছে বাকি তাতে কোনো সুর নেই। বেসুরো গলায় গাইছে নগরীর কোনো ভণ্ড প্রেমিক।

সে মুখ বন্ধ করার মতো কোনো বুলবুলি'র অস্তিত্ব নেই শহরে। এভাবেই শহর নিষ্প্রাণ হয়ে উঠছে মাটির পেলবতা হারিয়ে।

প্রকাশকালঃ ০৬.০১.১৪২৪

Tuesday 18 April 2017

স্ট্যাচু

স্ট্যাচু
ইমেল নাঈম

চিহ্ন পেরিয়ে গেলে জেগে থাকে চোখ

শিরোনামহীন কবিতা আওড়াতেই নামে
জাগতিক ঘুম। মানচিত্রের তিনভাগ নীল,
বাকি একভাগের কোথাও নেই আমি।

পথের ধারে ঝরে গেছে হাসনাহেনা
সুগন্ধি ছড়াতে ছড়াতে পথ ভুলেছে পথিক
তার সাথে দেখা হলেও পাতিনি সখ্য

উড়ে যায় ভূগোল অসময়ের বাতাসে
মফস্বলের ঘ্রাণ কেনো আসে শহরে!
এখানে মানুষেরা স্ট্যাচুর মতো নিঃসঙ্গ
আমিও দাঁড়িয়ে থাকি ভদ্রতার মুখোশে

আমার সামনে অজস্র ফুল ছড়ানো
ছবি হলে মুখের কোনো ভাষ্য থাকেনা।

প্রকাশকালঃ ৫ বৈশাখ ১৪২৪

Monday 17 April 2017

বৃষ্টির আলপনা

বৃষ্টির আলপনা
ইমেল নাঈম

একদিন সব ভ্রান্তি ভুলে ঘুরে দাঁড়াবো

চুইয়ে পড়া রক্তের দাগ মুছে যাবে বৃষ্টিতে
অভিমান নয় লিখে রাখবো অপমান — 
যারা এমন দিনে বৃষ্টিতে ভিজবেঅকারণে 
প্রেম খেলতে বসবে স্রোতে গা ভাসিয়ে 
তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে অট্টহাসি হাসবো।

জীবনের আয়োজনে রেখে দিই দুঃখ শ্লোক
প্রতিদিনের প্রাত ভ্রমণে ভেসে আসে
সুরেলা কোরআন আর গীতার ধ্বনি।
নীতিকথা হারাতে চাইলে বেজে ওঠে সঙ্গীত

হাহাকার করা শব্দে, ধ্বনি অহেতুক
প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে নিজের কাছে
আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখে সন্দেহ জাগে
চিমটি কেটে প্রমাণ করি নিজের অস্তিত্ব
বাতাসে সীসার অস্তিত্ব, তাপমাত্রা বাড়ে

রাস্তাজুড়ে ট্রাফিক সব বিভ্রম মনে হয়
দিবাস্বপ্ন বলে কোনো শব্দ নেই, তুমুল বৃষ্টিতে
আমি ক্রমাগত সবুজ রাস্তা এঁকে চলেছি।

প্রকাশকালঃ ০৪ বৈশাখ ১৪২৪

Sunday 16 April 2017

ভুল কিম্বা দুঃস্বপ্ন

ভুল কিম্বা দুঃস্বপ্ন
– ইমেল নাঈম

সার্বক্ষণিক পাহারায় ব্যস্ত গোয়েন্দা চোখ
চোখের বক্র দৃশ্যপটে এঁকে নেয় রূপকথা
রূপকের ভিড়ে পালাতে চাই গ্রীষ্মের দুপুরে।

অফিসের ভাতঘুমে কোনো আয়োজন নেই
ইচ্ছে করে বদলে দিই হিসাব প্রথম থেকে

উলটে দিই দাবার চাল, নিমিষে ভুলে যাই
ঘোড়ার আড়াই চাল, লিখি আত্মহত্যার গল্প।
নীল রঙা স্বপ্নগুলোকে মুছে ফেলি ইরেজারে

সময় ভীত হয় গোয়েন্দা চোখের কল্যাণে
অহং এর পরিমাণ বাড়ে দিনের পর দিন
তার সমানুপাতে বাড়তে থাকে বিদ্বেষ
কান ভারি হতে হতে বৃষ্টি নামে শহরে।

অকাল বর্ষনে ভেসে যায় অফিস পাড়া,
এ’পক্ষ কিম্বা ও’পক্ষ পরাজিত নয় কেউই,
কেউ চায় লিখতে বিজয়কে কূট চালে,

ব্যর্থতাই ঝেড়ে ফেলে জিতেছে সব হিশেব...
হাপিত্যেশ ঝরানো গ্রীষ্মে কেবল লূ হাওয়া বয়

প্রকাশকালঃ ০৩ বৈশাখ ১৪২৪ 

Saturday 15 April 2017

দ্বীপ দর্শন

দ্বীপ দর্শন
ইমেল নাঈম

ফুলের থেকে পাপড়ি খসে পড়তে জন্ম হয় দ্বীপের। প্রতিটি পাপড়ি একেকটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দ্বীপ। মুঠোর সাথে মুঠোবদ্ধ থাকা মানুষগুলো খসে যায় মুক্তোর মালার মতো। মুখ দর্শন করেনা শালিকের দল। যোগাযোগ মাধ্যম কিনে নিয়েছে আমাদের মিলনের সময়। সাংসারিক ব্যস্ততা দূরে সরিয়ে দেয় একে অপরের থেকে অনেক দূরে। অসময়ের সাক্ষী কালের পথিক, পানকৌড়ির মুখের আহারে কেনোইবা আঁকছো নিঃসঙ্গতা?

শুরুর উদ্যমে পরিণতি লেখা থাকেনা বলেই উদ্দেশ্যহীন চোখের মাঝে গড়ে ওঠে প্রাণবন্ত আড্ডার ইতিকথা। উদ্দেশ্য এলেই থেমে যায় যাবতীয় আয়োজন। ফলবতী বৃক্ষ হয়ে যায় নিষ্ফলা। উদ্দেশ্য লিখতে হয় বলেই বৃন্ত চ্যুত হয় পাপড়ির দল। পেটের বৃত্ত পূরণ করতে হারিয়ে যায় অনেক মুখ। 

খালি চোখে অদৃশ্য থাকে অনেক কিছু। ব্যস্ততার মোড়কে খুন হয় সময়। হার্দিক যোগাযোগটুকু থেকে যায় প্ল্যানচ্যাটে। মোমবাতির নিভু নিভু আলোতে চলতে থাকে নিজেকে অন্বেষণ। পাড়ার নিয়নবাতির প্রহেলিকা আলোয় মুখগুলো শুধুই অদৃশ্য হতে থাকে। মুষ্টিবদ্ধ হাত সমাবেশ ভুলের বিচ্ছিন্নতার পাঠ শিখে নেয়। প্রজাপতির দল বিরহের গান গাইতে থাকে জনারণ্যে।

বৃন্ত চ্যুত প্রতিটি মুখ একেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, মুখ বইয়ের দর্শনেই ভেসে থাকে মনের দর্পণে। 

প্রকাশকালঃ ০২ বৈশাখ ১৪২৪।

Friday 14 April 2017

প্রথম সকালের কবিতা

প্রথম সকালের কবিতা
ইমেল নাঈম

রাত ফুরোলেই নতুন সকাল। বদলে যায় পঞ্জিকার পাতা। সকালের গল্পে গেয়ে চলে নতুন দিনের আগমনী গান। জনারণ্য। অদ্ভুত সমাবেশ। গ্রীষ্মের তাপদাহের সূচনাবিন্দু। মঙ্গল শোভাযাত্রা ছুটে চলে পথ থেকে পথে।

মিছিলে কেউ কাউকে চিনিনা, অথচ মনে হয় কতো আপন। একে অপরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হেঁটে চলেছি। পত্রিকার পাতাজুড়ে সালতামামি। মধ্যবিত্তের ব্যক্তিগত হিসাব কখনোই মেলেনা। ডানা মেলা পাখির মতো সেও আজ উড়তে চায়।

প্রেমিক যুগল হাতে হাত রেখে হেঁটে বেড়ায় রাজপথে। ডিসি হিল, সি আর বি চত্তর, এম আ আজিজ স্ট্যাডিয়াম পরিণত হয় প্রেমের আদর্শ জায়গায়। ভুভুজেলার ভাড়াবাড়ি শব্দ ম্লান করে না আমাদের অংকগুলোকে।

নানা সময়ে মুষড়ে যাই প্রতিক্রিয়াশীল আঘাতে। নীরবে সহ্য করতে থাকি সবকিছু। হতাশায় মুষড়ে পড়ি বারবার। কিন্তু এমন সকালে সব শঙ্কার অবসান হয়। মিছিলের পর মিছিলে পেরিয়ে যায় স্বপ্নের উঠোন।

এমন একটি সকাল দেখার জন্য একটি জাতি জেগে থাকে সারা বছর। আঘাতের বিনিময়ে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।

প্রকাশকালঃ ০১ বৈশাখ ১৪২

Tuesday 11 April 2017

মানুষের ক্যানভাস

মানুষের ক্যানভাস
— ইমেল নাঈম

কিছুই করার নেই — যখন সভ্যতা কেড়ে নেয়...
ভয়ানক চিত্রায়নে নিস্তার পায়নি ক্যানভাস
রাস্তার দু' পাশ জুড়ে সারিবদ্ধ মানব দেয়াল
মানুষের চিত্রপটে রক্তাক্ত ছবি আঁকা থাকে না

ভাষা মৌন হতে চায় অবাক দৃষ্টিতে, হাত পেতে
নেয় সন্ন্যাস জীবন, শ্রেষ্ঠত্বের দাবী করে শ্রান্ত
সেবকের দল, খুঁজে দেখেনি — বুঝেওনি মাহাত্ম্য... 
বিচ্যুতির ঘেরাটোপে কিছু মুখ ভিন্ন কথা বলে

সুখের অসুখে ভেসে যায় আমাদের চারপাশ
অদৃশ্য রক্ত ক্ষরণে লিখে রাখি সিমেন্ট সভ্যতা
বাধার প্রাচীর টেনে স্রস্টা আজ শীত ঘুমে ব্যস্ত
মোমের দেয়াল গলে বেরোয় জীর্ণশীর্ণ চেহারা

শুরু থেকে পুনরায় দৌড়তে গিয়ে বুঝতে পারি 
ভাবনার দুষ্টু চক্রে আঁটকে যায় পথের ছবি...

প্রকাশকালঃ ২৮ চৈত্র ১৪২৩

Sunday 9 April 2017

ইমসোমনিয়ার রাত

ইমসোমনিয়ার রাত
ইমেল নাঈম

নির্ঘুম রাত। মুঠোফোনের মৃদু মন্দ আলো, খুলে রাখা অ্যাপ আর ম্যাসেঞ্জারে কিছু গল্পের অসুন্দর সমাপ্তি ঘটে। কৈশোর ঘর মানে অগোছালো জীবনপাঠ। ঘরের কোনায় অ্যাকোরিয়ামের আলো, বুদ্বুদ জল তরঙ্গ। ভিতরে দুটো মাছের পায়চারী, আকাঙ্ক্ষার বিন্দুগুলো জমছে। আবার ক্ষণিক বাদেই হারিয়ে যাচ্ছে কর্পূরের মতো।

কল্পনা করি যদি বৃষ্টি হতো, কেউ একজন ভিজে চলেছে খোলা ছাদে, নিক্বণের শব্দে নতুন কোনো সুরের জন্ম। আবার ভাবি, প্রেমিক প্রেমিকারা রোজকার কী এমন কথা বলে! দৈনন্দিন কথার ভিড়ে নতুন কী এমন গল্পের জন্ম হয়? নাকি গৎবাঁধা কিছু সংলাপেই লিখা হয়ে যায় প্রেমের উপন্যাস।

নির্ঘুম রাত মানেই হেডফোন গুঁজে রাতের সমাপ্তি। আর হরেক ছায়াছবির ভিড়ে নিজেকে খুঁজে ফেরা রূপক কোনো গল্পে।

সুবহে সাদিকের অনেক আগে, ইনসোমনিয়ায় ভোগা রাত পাহারা দেয় চারটি নেড়ি কুকুরকে। নির্মাণাধীন অট্টালিকার পাশেই বালুর স্তূপ। সেখানেই সংসার পেতেছে তারা। জানালা দিয়ে প্রতি রাতেই ভেসে আসে ঘেউ ঘেউ ডাকাডাকি। আমার কখনো জানতে ইচ্ছে করেনি, তাদের বাক্যালাপ। কেবল তারা নয়, আমি বুঝিনা অন্যান্য কোনো প্রাণীর এমন চিৎকারের মানে।

রাত বুড়ো হতে হতে হঠাৎ ভেসে আসে সুমধুর ধ্বনি...
"আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম..."

আমার চোখ দুটো বুজে আসে তন্দ্রায়।

প্রকাশকালঃ ২৬ চৈত্র ১৪২৩।

Saturday 8 April 2017

নগরীর রাত

নগরীর রাত
ইমেল নাঈম


"তুমি ছিলে কাল রাতে জোছনার সাথী
নিয়েছিলে মনখানি দিয়ে দুটি আঁখি"

ভেসে আসে আশির দশক। গেয়ে চলেছেন শিল্পী তার দরাজগলায়। ঘড়ির কাঁটায় সময় দেখি, জানালার ও পাশে নিয়নবাতির সমাবেশ। আলো ম্লান হয়, সদ্য ছুটি পাওয়া ব্যস্ত সড়কের ট্রাফিক লিখে রাখে গ্লোবাল ওয়ার্মিং। আর্দ্রতার সেচ প্রকল্পে হাপিত্যেশ করা জীবনযাপন।

পায়ের মাপে লিখে রাখি পৃথিবীকে। হিসেবের খাতায় যা জমেছে তার নাম প্রহসন। ঘুমহীন বিরতিতে রেখে দিই পলাশ রাঙানো ভোরের পথ। মফস্বল পেরিয়ে গেছি, রেখে দিই ইরানের জাফরান, মখমলে কাপড় ঢেকে দিয়েছে দু'চোখ। মানে নেই, তবু গেয়ে উঠছে গানের দল। কম্পাসের ভিতর দিকনির্দেশনা নেই। দূরবীনের লেন্সে কোনো মুখ নেই। দৌড়ে চলে একদল লোক। বুকে বাজছে দীর্ঘতম বিরহের অর্কেস্ট্রা।

ব্যস্ততার পাঠ থামলে, পরাবাস্তব গল্পে মানুষের সামনে দাঁড়াই, এই দাঁড়ানোর কোনো মানে থাকেনা, তবুও ছন্দপতনের বিভ্রম জাগে। স্পর্শের কোনো মানে নেই। আবার নানান অর্থের জন্ম দেয় তারা। সেগুলোর ভাবানুবাদ হয়, সংঘর্ষ আর প্রলয়ের পর অপেক্ষায় থাকে কাল্পনিক কোনো চরিত্র। এসবের ব্যাখ্যা নেই, তার বিনিময়ে কোনো প্রাপ্তি নেই, স্বীকৃতিও নেই।

নগরীর রাতগুলো ঘুমোয় না, আমার মতো স্মৃতিচারণ করে নিজের সাথে কথা বলে শুধু।

প্রকাশকালঃ২৪ চৈত্র ১৪২৩

Wednesday 5 April 2017

উলটো বাতাস

উলটো বাতাস
– ইমেল নাঈম

বাতাসে নড়ে ওঠে ধর্মের কল, কেউ গাইছে
বিতাড়িত হোক উৎসবের আয়োজন।
অলুক্ষণে বৃদ্ধাঙ্গুল বারবার ভেসে ওঠে চোখে

কেউ স্বর্গ নরকের বিনিময়ে কিনে নিচ্ছে ভয়,
বাধার প্রাচীরে রাখা কিছু গল্প, কিছু কথা
মিথলজির অন্ধ বিশ্বাসকে পুঁজি করে
কেউ লিখছে স্বর্গ নরকের হিসাব নিকাশ

ধর্মীয় সম্প্রীতি, মানবতাবোধের চিরস্থায়ী ছুটি
মিলিয়ে দিলে শুরু হয় দ্বিতীয় অধ্যায়,
এরমাঝে লিপিবদ্ধ হয় আয়-ব্যয়ের অংক।
অন্ধ মুরিদেরা দৌড়ে ফিরে পথ না খুঁজেই

চোখ নয় – কান নয় – বিবেককেও নয় 
চোখ রাখে তৃতীয় কোনো মুখের দিকে
আর তাকে বিশ্বাস করতে গিয়ে ভুলে যায়
পাঠ্য বইয়ের বাইরের যতসব ধারাপাত

ইশারায় নবান্নকে পাল্টাতে ব্যস্ত ধর্মীয় মোড়কে।
জানেনা ইতিহাস, তোঁতা পাখির মুখস্থ বুলি
পাঠ করেই দায়িত্ব পালন করে ধর্মের পাখি,
অন্য ইশারায় বন্ধ হয় আমিষের দোকান

এগুলো সফল হলে বাঁচবে ধর্মের দোকান
সেখানে রচিত হবে স্বর্গ নরকের হিসেবে 
মেরুদণ্ডহীন মানুষের রোজকার জীবন কর্ম।

প্রকাশ কালঃ ২২ চৈত্র ১৪২৩

Tuesday 4 April 2017

বিষণ্ণ রাতের গল্প

বিষণ্ণ রাতের গল্প
— ইমেল নাঈম

রাখিনি হিসেব সময়ে — কোনো দাবী দাওয়া নেই। 
ভ্রান্ত পথ জানেনা কিছু, তবু ছুটছি অকারণে 
আহামরি নয়, মুক্তপ্রাণ আর তার উচ্ছল হাসিরা
উদ্বেল হয়ে ফিরে আসে গোপনে — পিছনের পথে।

ডুবেছে আলো, লোডশেডিংয়ে কাবু চৈতালি রাত
ফিরতে হয় বলে লুকিয়ে ফিরেছে পলাশের দল
এরবেশি কোনো কিছুই জ্ঞাত নয় — কেউ জানেনা —
একাদশী চাঁদ, ভগ্নাংশ দিয়ে লিখে রাখে প্রেম। 

মোমবাতির আলো ম্লান হয় ঘুম চোখে — আলস্যে — 
বাতি জ্বলে না ল্যাম্পপোস্টের, এ'রাত মধুর নয়
থেমে যাওয়া দেখি অনেক হিসাবের ফাঁক গলে
শহরে নেই ঝিঁঝিঁর ডাকাডাকি, মশার তাণ্ডবে
ক্লান্ত হয়ে ফিরছে শব্দরা, বিষণ্ণ রাতের গল্পে...

আমারো অনেক কথা বলার ছিলো, হলো না বলা...
প্রাপকের অভাবে ফিরে আসে তারা আমার কাছে
দৈনন্দিন ব্যস্ততার শেষে ব্যর্থতার আয়োজনে 
রাখিনি হিসেব সময়ে — কোনো দাবী দাওয়া নেই। 

প্রকাশকালঃ ২১ চৈত্র ১৪২৩
প্রথম সংশোধনঃ ৮ বৈশাখ ১৪২৪

Saturday 1 April 2017

বৃষ্টির দিনের কবিতা

বৃষ্টির দিনের কবিতা
ইমেল নাঈম


বৃত্তবন্দী কিছু প্রেম লেখা থাকে, বেয়ারিং চিঠির মতো বেয়াড়া।
ফিরে আসতে চায় পুরনো ঠিকানায়, পা ডুবে গেছে নোনাজলে

ফিরে আসার আগেই লিখে ফেলেছিলো জ্বরের গল্প, গা বেয়ে
ওঠা থার্মোমিটারের পারদের অপর নাম তুমি, উত্তাপ ছড়াও
আমিও বসে থাকি একদলা ওষুধ পথ্য নিয়ে, জলপট্টির তাপ...

কেউ দরজায় দাঁড়ায়, একটা সেলাই মেশিন ঘুরতে থাকে
বিরতিহীন শব্দের পরে কেউ তো আসে দরজার এই পাশে

প্রলাপের ফাঁকে পাশেই শুয়ে থাকে প্রিয় কবিতার বই
এরপর দিনভর বৃষ্টির কবিতা লিখা হয় চৈত্রের তাপদাহে।

প্রকাশকালঃ ১৮ চৈত্র ১৪২৩