Wednesday 31 October 2018

ঋণ

ঋণ
ইমেল নাঈম

একদিন সব ভুলে যাবো। চাওয়াপাওয়ার হিসেব
ভুলে বিবর্ণ ঋণ লিখে যাবো, নির্বাক হয়ে দেখবো
ঈশ্বরের ঈর্ষা... কাপড়ে ঢাকবো প্রাণহীন মুখ।
নহরের ফোয়ারায় উড়ে যাবে বিষণ্ণ ইশতেহার।

অবসরে, হিসেব করি কে কার? কেনইবা কার?

চুপচাপ দেখে যাবো... ভাববো নশ্বর কবি জীবনে
অপ্রাপ্তিগুলোর শেষ ফলাফল।  কবিতার মতো
শব্দগুচ্ছ— যারা সরল, বিন্যাসে খেলে যায় শুধু।

মৌন থাকার অভ্যাস রপ্ত করি। মুসাফির বৃত্তে
ঘুরাফেরা করে যাই, শব্দের কাছে করজোড়ে
দাঁড়াই— মুহুর্মুহু আক্রোশ জমা রাখি দস্তানায়।

দিনান্তের সুরে বিষণ্ণতা রেখে দিই, বিকেলের
গম রঙা আলো নিভে যায় নম্রতা নিয়ে,
অভিভূত সময়ের সোপানে পেরিয়ে যাচ্ছি
পুরোনো মানচিত্র। ঐশ্বরিক একটা শিহরণে
রেখে যাচ্ছি দৈনন্দিন ঋণ— আওড়ে চলি—

কলম ব্যতীত আর কারো কাছে ঋণ নেই...
বাকিটুকু দোদুল্যমান পেন্ডুলাম, অপেক্ষমাণ।

Saturday 27 October 2018

উপেক্ষিত সন্ধ্যা

উপেক্ষিত সন্ধ্যা
ইমেল নাঈম

উপেক্ষিত হয়ে যেতে হয়। অসমাপ্ত বাক্যগুলো বহন করে চলেছি কেবল। ভুলের বৃত্তে আটকে গেছি। নীরবতাকে সাক্ষী করে লিখে রাখছি ডেথ সেন্টেন্স। শপথ নামায় নতুন কোনও রসদ নাই। ছুটে চলার বিনিময়ে কাল্পনিক কিছু বিম্বকে দাঁড় করাই। নিজেকে নিয়ে ভাবছি না একদম। কতো মুখের ভিড়ে কতো ভাবনা হারিয়ে যায় অকাতরে।

নির্বাক জীবনের ধারাপাতে যাই শিখেছি তার পুরোটাই বিভ্রমের। কেটে যাচ্ছে আমাদের অনাদরের সময়টুকু। ব্যস্ত আঙিনায় মেলে দিচ্ছি পড়ন্ত বিকেলের শ্লোক। ব্যস্ত সড়কের ক্যাকোফনি আর যাদুকরী বিভ্রম নিয়ে স্বপ্নগুলো মুছে যাচ্ছে। দূরান্তের প্রতিধ্বনিতে শুধুই জেগে ওঠে বিমর্ষ আর্তনাদ। ফরিয়াদ শেষে, অদৃষ্টকে চাপড়াই। ছুঁড়ে দিই ক্ষোভ, শ্লেষ।

পথের ক্যানভাসের সব রঙ বিবর্ণ হয়ে যায়, বিষণ্ণ পিয়ানোর তাল কেটে যাচ্ছে শুধু। সন্ধ্যাটি লিখে রাখছে অন্যকিছু। স্পষ্ট নয়, আবছা... আংশিক মানে বুঝি, বাকিটা নয়। নির্বিবাদে কেটে যায় আমার দিন। প্রহসনের মুহূর্তগুলো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। কমলারঙের দিনগুলোর মানে অন্বেষণে কেটে যায় বিষাদের দিন।

সপ্তাহান্তের সুর বেজে ওঠে। করুণ, গভীরে ক্ষত... আঁচড়ে দেয়, আহত করে যায় শুধু। নিজেকে নিয়ে এতোটা অবহেলা কখনো কেউ করে নি। সীমান্তের বাইরেও সীমারেখা আঁকি। ছুটে যায় আমার সান্ধ্য কালীন পাবলিক বাস। স্বপ্নহীন কিছু চোখ ক্রমাগত হতাশাকে গিলে খাচ্ছে। আমি নিজেও তাদেরই একজন, অথচ চোখে মুখে হতাশা নেই।

সব হারানোর মিছিলে যাযাবর হয়ে ফিরে আসি, নিজের বৃত্তে ঘুরপাক খাই। বিনিময়ে জমে যায় অপমানের ঘাম। বিবর্ণ কবিতায় ঢুকে যায় একফালি চাঁদ আর নিঃসঙ্গতার সালোকসংশ্লেষ।

Thursday 11 October 2018

মুখোশ
ইমেল নাঈম

পথের শেষ! কাপাস তুলোর মতো উড়ছি শুধু।

প্রতিটি দিন মৌন শিহরণ জাগিয়ে ক্লান্ত
বিন্দু বিন্দু করে জমাটবদ্ধ কষ্টরা হাসিমুখে
মেনে নেয় তাদের না পাওয়া সব হিসাব
ব্যস্ত দিনের খসড়া খাতায় মলিন অঙ্কগুলো
অবেলায় ফুল হয় আর অনাদরে ঝরে যায়

অভিমানের খাতায় জমে উঠছে স্থবির গল্প
নিজেকে নিয়ে ভাবছি না, হিসাব করছি না
তবুও আড়াল দেখে দাঁড়াই অবচেতন মনে
ভুলভাল বকি, নিজেকে আটকাই একই বৃত্তে

হারিয়ে যাবার মুহূর্তগুলো অচেনা হচ্ছে রোজ
বাগানের ফুলেরা ঝরে গেছে অকালের বৃষ্টিতে
দলবদ্ধ প্রেমিক সেজেছে অন্যরূপ, প্রশ্ন করে
নিজেকে বিব্রত করছি না আর— বেহিসাবি
প্রেমিক হয়ে লুকচ্ছি তোমার আঙ্গিনা থেকে

অজানা আশঙ্কাকে বুকে জড়াচ্ছি, ভাবছি শুধু...
একদিন পালিয়ে গিয়ে অচেনা হয়ে যাবো
নিজের কাছে— তোমরা ভাববে ভুল পথে মানুষ
এসেছে এই পাড়াতে... চিনতে পারবেনা আমাকে।

Tuesday 9 October 2018

বৃষ্টিদিন, জানালার কবিতা

বৃষ্টিদিন, জানালার কবিতা
ইমেল নাঈম

একটা মন কেমন করা সকাল দৌড়ে গেলো বৃষ্টি গায়ে মেখে। উদাসী চোখ তখনো আঁকছে দিনযাপনের সালতামামি। প্রেমের ইশতেহারে চুম্বনই শেষ কথা। প্রেমিক মাত্রই ভীষণ স্বেচ্ছাচারী। দিনকে বানায় রাত আর রাতের বেলায় অর্ধ নেশায় জুড়িয়ে নেয় চোখ। ক্লান্তি নামে তোমার দু'চোখে। আপেল বাগানটিও শান্ত। পাইন বনে ঝড়ের পূর্বাভাষ নেই। যদিও অবচেতনে এক কবি তোমাকে লিখে রাখছে  নীরবে। তার কবিতায় তোমার একাকীত্ব কবিতায় অবসাদ হয়ে ঝরে।

পুড়ে যায় নিকোটিন মুহূর্ত। অদৃশ্য ধূমায়িত কফির মগে লিখে রাখছো আত্ম ভাবনা। কাল্পনিক কিছু শব্দ জটের কাছে নতজানু হচ্ছ দুজনেই। কবি পড়ছে তোমাকে। আর তুমি? কাকে পড়ছো? কী ভাবছো? কিছুই জানা হলো না আমার। আমি কবি আর তোমার মাঝে দাঁড়ানো অন্য এক সত্তা, যে নিজেকে আজো চিনতে পারে নি। ত্রিভুজের মতো সম্পর্ক বজায় রাখছে প্রতিটা রেখার সাথে। শুধু ছেদকের থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।

কবিতার শেষে নৈঃশব্দ্য কাটে পাখির গানে। আর নৈঃশব্দ্য কাটলে কেউ কারো নয়। তুমিও নও কবির, কবিও ভাবে না তোমায় একমুহূর্ত। আমিও হঠাৎ সব হারানো যুবকের মতো ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকি সম্মুখে। ভাবি এটা কি ইলিউশান? ডেভিড কফারফিল্ডের আকাশে উড়ে বেড়ানোর মতো মজাদার কিছু? নাকি সিনেমার আবেগময় এক দৃশ্যের শেষে অশ্রু আপ্লুত দর্শকের চোখ?

ভাবতে ভাবতে থেমে এলো বৃষ্টি। যদিও আকাশ ঢেকে আছে মেঘে। নীরবতা ভেঙে তুমিও চলে যাও জানালা ফেলে দূরে। কবিকে খুঁজে পাচ্ছি না অনেকক্ষণ। ভাবছি, সব চলে যাওয়ার পরে আর কেন অপেক্ষায় থাকা? আমার তো কোনো কারণ নেই দাঁড়ানোর। চোখের কবিতা নিয়ে ফিরে গেলে তুমি। প্রাপ্তির খাতায় কী পেলে কেইবা জানে? আমি তো কর্পূর, গোপনে এখানে এমনি এসে দাঁড়াই তোমার, কবি আর কবিতার রসায়নটুকু উপভোগ করতে, আর রোজই মিলিয়ে যাই ঘ্রাণ ছড়াতে ছড়াতে।