Saturday 31 December 2016

বর্ষ বিদায়

বর্ষ বিদায়
— ইমেল নাঈম

কিছু প্রশ্ন থাকে। স্পর্শের বাইরে রাখও সবটুকু সুর।
অংকের মতো উড়ে যায় আমাদের গ্রেগরীয় সুর্য
বিউগল থেমে যাক, পৌষের কুয়াশা বিদীর্ণ করে
ফেলে আমার অনানুষ্ঠানিক প্রণয়। পরিচয়টুকু
আড়াল করতে করতে মুছে ফেলেছি অতীত জীবন।

প্রহসনের শেষপ্রান্তের কিছু গল্প কবিতা বলি নি
সূর্যাস্তের মন্ত্রটুকুও মুছে যাচ্ছে আগুনের ফুলকিতে
অমা নামুক। জ্বালিয়ে দিবো লাকড়ি, উত্তাপ বাড়লে
বেসুরো গলায় গান গাইবো, পূর্ণিমা নেই। ঝিঁঝির
সান্নিধ্যের মুগ্ধতাটুকু মুছে যাবে খানিকবাদেই।

এখানে বারো জন। কেউ কাউকে চিনিনা, জানিনা।
কারো কাছেই প্রত্যাশা নেই, বলারও নেই কাউকে
আমি একাই এসেছিলাম। এসেই দেখি বর্ষ বিদায়ের
আয়োজন। কেনো জানি পিছনে ফিরে তাকাই,

নস্টালজিক সময়ের পদধ্বনি গুনতে থাকি
হিসাব করি ফেলে আসা আনন্দ বেদনাগুলোর
হিসাবে বেরোয় — কোথাও বাজে বিচ্ছেদের সুর,
আবার দূরে হাসছে প্রাপ্তির নির্মল আনন্দ

খানিক বাদেই নাড়বে কড়া নতুন হিসাবের খাতা
এখন অনুমানের খাতায় লিখছি মঙ্গল আর মঙ্গল।

Tuesday 27 December 2016

নীরবতার মাইমোগ্রাফ

নীরবতার মাইমোগ্রাফ
ইমেল নাইম

থেমে যাক কলমের বর্ণমালা, মঙ্গলকে পুড়িয়ে দাও অসময়ে
দূর থেকে তাকিয়ে দেখো , অতি সহজে বুঝতে পারবে
একটা বটবৃক্ষ কীভাবে আগাছা পরিণত হয় প্রক্রিয়াধীন পন্থায়

বুকের বাঁ পাশে তিল খুঁজো না প্রিয়তমা, অন্যভাবে দেখো!
এখন অনুরণনে কাঁপেনা মহারথী, কণ্ঠস্বর শুনিনা দৃপ্ত চেতনার।
পরীক্ষানিরীক্ষার ফলাফলে যাই আসে তার পুরোটাই নড়বড়ে

নির্ভুল ভাবে পুরণ করলে নেমে আসতে হিমালয়ের নীরবতা
জ্বলন্ত মোমবাতি বন্ধ হয়ে যেতে পারে দক্ষিণের বারান্দায়,
বিষম রেখায় ক্রমাগত হাহাকারের রোল ঢেকে যাবে উৎসবে

মাইম শিল্পীর মতো মূকাভিনয় করছি, গায়ের আঘাতেও রা নেই
আক্রান্তের অঙ্গভঙ্গিমা বোঝেনা পাশের লোকজন, তারাও
একদিন মূকাভিনেতায় পরিণত হবেন দীর্ঘ, ইন্দ্রজালিক মায়ায়

Tuesday 20 December 2016

অসময়ের অর্কেস্ট্রা

অসময়ের অর্কেস্ট্রা
— ইমেল নাঈম

ছিঁড়ে ফেলেছি গত প্রণয়ের সব কবিতা,
নব জন্মে কী অধিকারে তাকে ছুঁই!
প্রান্তিক বুকে বিটোফেনের অর্কেস্ট্রা
কে আঁকছে অসময়ে অবহেলিত সুর...

জানোই তো নদীর পাশে প্রেমিকেরা একা
নিঃসঙ্গ মাছরাঙাও দেয় সন্ন্যাস জীবনের ডাক
অনুভূতিরা ভোর আসলে নীরব হয়ে যায়,
তোমার কাছে এসে থমকে যায় সব অধিকার ।

বলিনি অনেক কিছুই, অনেক প্রশ্নের
সোজা সাপটা উত্তর দিতে বাধা দেয় মন।
অবসরের নীরবতাকে জলরঙে
সাজাতে চাইলে জ্বলে ওঠে সাঁঝবাতি

আর কোনো কথা নেই, কোমল রাত
উপভোগ করতে গিয়ে দেখবে কেটে গেছে
সুর-তাল- লয়...আহা! বিমুগ্ধতা আর কতো
মোহিত করবে আশ্চর্য প্রদীপ জ্বেলে...

অসময়ের অর্কেস্ট্রা

অসময়ের অর্কেস্ট্রা
ইমেল নাঈম


ছিঁড়ে ফেলেছি গত প্রণয়ের সব কবিতা,
নব জন্মে কী অধিকারে তাকে ছুঁই
প্রান্তিক বুকে বিটোফেনের অর্কেস্ট্রা
কে আঁকছে অসময়ে অবহেলিত সুর

জানোই তো নদীর পাশে প্রেমিকরা একা
মাছরাঙা দেয় সন্ন্যাস জীবনের ডাক
ভোর দেখে মুখ আটকে দেয় সব
তোমার কাছে এসে থমকে যায় অধিকার ।

বলিনি অনেক কিছুই, অনেক প্রশ্নের
সোজা সাপটা উত্তর দিতে বাধা দেয় মন।
অবসরের নীরবতাকে জলরঙে
সাজাতে চাইলে জ্বলে ওঠে সাঁঝবাতি

আর কোনো কথা নেই, কোমল রাত
উপভোগ করতে গিয়ে দেখবে কেটে গেছে
সুর-তাল- লয়...আহা! বিমুগ্ধতা আর কতো
মোহিত করবে আশ্চর্য প্রদীপ জ্বেলে...

Sunday 18 December 2016

প্রশ্নবোধক

প্রশ্নবোধক
ইমেল নাঈম

পরিচয়হীন সম্পর্ক। কেউ কারো নই। অথচ কী টান!
কেউ কাউকে চিনিনা, জানিনা... এমনকি দেখিও নি
কলমের আঁচড়ের জানাশোনা, এটুকু চিনি আপনাকে

একপেশে কথোপকথন, শ্রোতা নেই, তবুও টের পাই
প্রাচীন এক ঢেউয়ের গর্জন, কোনো চাঁপা কান্নার রোল

হয়তো এটি বাংলায় নয়তো হারিয়ে যাওয়া সভ্যতায়...
পাললিক শিল্পের আগুন ঝড়ানো কারুকার্যে
টের পাই কারো নীরব কান্না, অপমানের লজ্জা

আমি চিনিনা আপনাকে, আপনিও চেনেন না আমায়
বইয়ের পাতায় লিপিবদ্ধ এক ফর্মায় উঠে আসছিলো
নখের আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত মাংস পিণ্ড, আর দু'বেলা
আহারের হিসাব নিকাশ। পালিয়ে যাবার আগেও
ছুঁয়ে দেখেছিলো যে পুরুষ, সে কী সত্যি পুরুষ ছিলো?

ওদের পালাবার পর, পালিয়ে গেলেন আপনি...
আপনাকে আর দেখিনি এইপাড়ায়, আশেপাশে
আপনি হারিয়ে গেলেন, আর আঁকলেন প্রশ্নবোধক।

তার উত্তর দিতে গিয়ে খসে পড়লো এই মুখোশ...

Tuesday 13 December 2016

অমীমাংসিত গল্প

অমীমাংসিত গল্প
ইমেল নাঈম

একটা পথ অনুমান নির্ভর অনেক গল্পের জন্ম দেয়
কল্পনাবিলাসী চোখ আঁকতে থাকে স্বপ্নের ক্যানভাস
উড়ুউড়ু মন জানেনা, কোন বন্দরে ফেলেছে নোঙ্গর?
হাপিত্যেশ বাঁচে অন্তর্নিহিত শব্দের ঘোরে, জ্বরের
প্রলাপ আঁকতে আঁকতে ঘুমিয়ে গেছে শীতের শুরু।

কুঝিকঝিক শব্দে ট্রেন চলে যায় দূরান্তের পথ ধরে,
এইপথ আমার চেনা, গন্তব্যটুকু নয়। তুমিও অচেনা...
দূরের যাত্রাপথে ঘোরলাগা অনেক কাহিনী লুকানো
এসবে পাত্তা না দিয়ে সামনের পথে আগানো মঙ্গল
অযথাই ভাবনাযজ্ঞে অসংখ্য চিন্তা মাথাচাড়া দেয়।

কবিতা লিখার সময় নয়, মুঠোফোনে ভেসে আসে
অচেনা কোনো সুর, সেখানেই বুনতে থাকি মায়া,
যাত্রাপথের বিরতি আছে, চোখের নেই বিরতিহীন
পরীক্ষা করে নিচ্ছে দূরত্ব, এটি মধ্যবিত্ত টানাপোড়ন
এই কবিতারা সাধারণত প্রেম নয়, জন্ম দেয় দূরত্ব।

এরইমাঝে গল্পের শেষটুকু গন্তব্য আসলে জানায়
পথ বাড়ো পথিক, প্রেমিক হওয়া তোমার কাজ নয়...

Sunday 11 December 2016

সমীকরণ

সমীকরণ
— ইমেল নাঈম

আংশিক অনুমান করি। ইচ্ছেরা আজ অচেনা...
রেখা আঁকা শেষ হলে বুঝি পেরিয়ে গেলো বছর
রেখায় পা রাখতে বুঝলাম — পথে নামা সোজা না
বিন্দু আঁকছি। রেখা গড়ছো। দৃষ্টির আড়ালে মুখ।

সমীকরণের মতো সরল, বদমাশ ফর্মুলা
মানতেই হবে... না মানার পরিণাম জানা নেই
হতে পারে শুরু আবার এখানেই হতে পারে শেষ
সূত্র মিলিয়ে সমাধান মানে আনন্দের ফোয়ারা

পথিকের গল্প মিললে উড়ে যায় গল্প ও কথা
ফিনিক্স পাখির মতো নবজন্ম আঁকছি, ক্রমশ
রাত ফুরোলে পৌরাণিক কাহিনীর সমাপ্তি হয়
অনেকটা বিন্দু থেকে রেখার অসমাপ্ত বর্ণন

হিসাব মিললে আমি নতুন সমীকরণ লিখি
তোমার স্বার্থ + আমার স্বার্থ = ভালোবাসার সম্পর্ক
সমীকরণ মেনে নিয়ে চলছে অভিনয় পর্ব...

Wednesday 7 December 2016

বৃত্ত বা ত্রিভুজের সমাপ্তি

বৃত্ত বা ত্রিভুজের সমাপ্তি
ইমেল নাঈম

১।

আমাকে ঘিরে আছে ব্যাসার্ধ, কেন্দ্র মেনে
পরিভ্রমণ হলেই জন্ম নিতে পারে বৃত্তের
শৈশবের অংক'র মতো আয়নার প্রতিবিম্বে
ভেসে আসে বেসুরো সুর। স্পর্শক আঁকছি
আঁকতে আঁকতে ছেদকের জন্ম দিবো

২।

দুটো রেখাকে ভাঙছি বিন্দু দিয়ে
ভাঙলে একের যায়গায় দুটো হয়,
বৃত্তের কেন্দ্র ছুঁলে জন্মায় ব্যাস
আমি তাকেই প্রেম ভেবে ভুল করি

৩।

বৃত্তের ভিতরে ত্রিভুজ আঁকি
কেন্দ্র থেকে তুমি নির্দেশক
মাঝে মধ্যমা এঁকে দিচ্ছো
আমি তাকে পরকীয়া ভেবে
ইরেজারে মুছতে চাইছি বৃত্তকে

৪।

বৃত্ত মুছলে সম্পর্কের কিছুই বাকী থাকেনা
সমবাহু ত্রিভুজটিও বিষম আকারে সাজে
অতিকষ্টে আঁকা ছেদকটিকে কে যেনো
আড়ালে পরিমার্জন করছে প্রেমের নামে।

Tuesday 6 December 2016

মৃত্যুসংবাদ

মৃত্যু সংবাদ
— ইমেল নাঈম
(উৎসর্গঃ মাহবুবুল হক শাকিল)

প্রতিদিন ডায়রির পাতায় লিখে রাখি মৃত্যুসংবাদ
একই জংশন ধরে ছুটে চলেছি সামনের স্টেশনে
অথচ আমরা কেউ কাউকে ঠিকঠাক চিনিনা।

গন্তব্য এসে গেলেই হারিয়ে যায় অনেক মুখ,
তাদের ঘিরে থাকে মনখারাপের সাময়িক অভ্যাস
আবার সেসব জায়গা পূর্ণ করতে ওঠে নতুন যাত্রী
আমরা নতুনদের পেয়ে ক্রমশ শোক কাটিয়ে উঠি

খুব রহস্যময় যাত্রা, থেমে যাওয়ার কোনো চিহ্ন নেই
নেই কোনো নির্দিষ্ট স্টেশন, পুরো যাত্রাপথজুড়েই
নেমে যায় যাত্রী, পূর্ণও হয়... একদিন আসবে
আমার পালা আর আমি সেটিই কবিতায় লিখছি

গন্তব্য এলে বুঝি দেখা হবে হারানো যাত্রীদের সাথে
এমন ভাবতে ভাবতে লিখে ফেলছি প্রেমিকাকে
নিয়ে অনেক কবিতা, লিখে নিচ্ছি কষ্ট, দুঃখ, ক্ষোভ
সহযাত্রীরা আমাকে কবি ভাবছে, ঈর্ষাও করছে।

গন্তব্য আসলে আমিও নামবো পূর্বতনের মতো
অথচ আমি একটি সফল কবিতার দিকে তাকিয়ে
কেউ জানেনা ডায়রির পাতায় লিখছি মৃত্যুসংবাদ।

Sunday 4 December 2016

প্রাপক, তোমাকে

প্রাপক, তোমাকে
— ইমেল নাঈম

এক চিলতে আকাশ ধরে রাখছি। আসলে, আজ আমার বলে কোনো শব্দ নেই। হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে গত সন্ধ্যায়। প্রেম জিনিসটা এমন কেন? কোনোকিছুই আমার নয়, সবকিছু আমাদের হয়ে যায়। নিজেকে গুছিয়ে উঠিনি কোনোদিন, অন্যকে গোছানোর স্বপ্নও দেখিনা। ভাবিনি টুপ করে প্রেমে পড়ে যাবো, ভাবতাম এ কেবল সিনেমার  কোনো দৃশ্য, কিংবা উপন্যাসের কোনো টানটান দৃশ্যপট। যেদিন তোমায় দেখি, কলেজ ক্যাফেটেরিয়া, একটা ম্যাড়ম্যাড়ে সকাল। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় কাটিয়ে দেয়া সাধারণ দিনের মতো। আমি সেকেন্ড ইয়ার আর তুমি কিসে পড়ো জানতামই না। হা করে তাকিয়ে থাকা দেখতে না দেখতে বন্ধুদের টিটকারি কানে ভেসে এলো।

চোখ নামিয়ে নিলাম খুব কষ্টে, তোমার তৃতীয় চোখ সে কি বুঝেছিলো এই দৃষ্টিপাত। এরপর খবর নেয়া, একে একে বেরিয়ে এলো তোমার সম্পর্কে। তুমিও কিভাবে যেনো জেনে ফেলেছিলে আমার সম্পর্কে। কলেজ লাইব্রেরি থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের বাকি সময় তোমায় অনুসরণ করতে করতে আবিষ্কার করলাম নিজেকে একটা বন্ধুহীন মানুষ হিসেবে। এও কী সম্ভব! আমি বন্ধুদের আড্ডা বাদ দিয়ে এভাবে পিছুপিছু ঘুরঘুর করছি।

এর মধ্যে উড়ু খবর এসেই গেলো.... কিছুটা পজিটিভ আবার কিছুটা নেগেটিভ। সবচেয়ে অদ্ভুত লাগলো, তুমি নাকি এমন বলেছো, আমি ভীতু তাই তোমার সামনে এসে দাঁড়াতে পারিনি। বিশ্বাস করবে এই লাইনটির জন্যই আমি অপেক্ষা করেছিলাম এতোটা সময়। সেই মুহূর্তে মনে মনে ঠিক করে ফেললাম দেখা করি। দেখা হোক প্রিয় ক্যাম্পাসে।

পরের দিন নাম ধরে ডাক দিতে তোমাকে ক্যামন যেনো নার্ভাস লাগছিলো। ভিতর টা আমারও অল্পস্বল্প কাঁপছিলো, এটা কী ট্যালিপ্যাথি! হতেও পারে হয়তো। নাহ, তোমার আর আমার আড়ষ্টতা কাটতে সময় লাগেনি বেশিক্ষণ। এরপর অনেক আড্ডায় এগিয়ে গেলো সময়। আড্ডা শেষে বুঝলাম একটা বন্ধুত্ব কেবলমাত্র জন্ম নিলো। এই বন্ধুত্বই প্রেমের প্রথম ধাপ, তা হয়তো তুমি জানো, হয়তো জানোই না।

এরপর কথা হওয়া শুরু, মানে ম্যাসেঞ্জারে আর হোয়াটসঅ্যাপে। এটি আরো চার/পাঁচ বছর আগের কথা, তখন কলিং অপশন ছিলোনা সামাজিক মাধ্যমে, এখনকার প্রেমিক যুগল এইদিক দিয়ে খুব ভাগ্যবান। চাইলেই কথা বলতে পারে, ইচ্ছে হলে মুখটিও দেখতে পারে। আমাদের আলাপন তখনও চলছে মহাসমারোহে। একদিন তুমি হঠাৎ করে বললে কেনো এতো খবর নেই তোমার। শুনে খারাপ লেগেছিলো, সত্যি তুমি বুঝোনি, নাকি বুঝতে চাও নি। পরমুহূর্তে বললে দেখা করতে, কেইবা জানতো সেই দেখাটি একটা বন্ধুত্বের মৃত্যু হবে আর সৃষ্টি হবে নতুন অধ্যায়ের।

যদিও আমার চোখে তুমি এখনো একজন ভালো বন্ধু।

ইতি,
তোমার বন্ধু

পাপ মোচন

পাপ মোচন
— ইমেল নাঈম


সীমানাটুকু খুব চেনা। আকাশের ওপার টা দেখা হয় নি আজও, যেমনটা দেখিনি মাটির নিচ। ঈশ্বরকে চিনিনা অথচ স্বর্গ নরকের দ্বন্দ্ব কাঁপিয়ে দেয় ভিতরের দিক। শৈশবের ধারাপাত খসে পড়ে অবহেলায়। সমাজ টেনে নিয়ে যায় অন্ধকারের পথে। সেও রাক্ষসের মতো খেয়ে ফেলছে মানবিকতা।  অন্ধকারের দিকে যেতে যেতে আবিষ্কার করি, টাকাই পৃথিবীর অলিখিত এক ঈশ্বর।

প্রমাণস্বরূপ, মোহর ফেললেই আয়োজন হয়ে যায় প্রার্থনা পাঠের। প্রতিনিধি এসে গেয়ে যান স্রষ্টার স্তুতি। মোনাজাত আর আমিন শব্দে কতটা কালো পরিষ্কার হয়? জানা নেই। সাপ্তাহিক হাজিরায় নাম লিখে রাখি নিজের। আমার মতো অনেকেই আছে। শেষ কাতারের মুখ। মুখোশটা আল্লাহ চেনেন। প্রতিবেশী নন।

তারুণ্য চলে যায় আরবিয় ঘোড়ায় চড়ে। আমি দৌড়তে দৌড়তে হারিয়ে ফেলি নিজের কক্ষপথ। বুঝতে পারি শরীরের কলকব্জা প্রায় শেষের পথে। পথ খুঁজতেই দেখি ভুল পথের সব আঁকিবুঁকি খেলা। সর্পকুণ্ডলীর মতো পেঁচিয়ে ধরেছে আমাকে। ছোবলে ছোবলে আক্রান্ত করে ফেলছে, তীব্র ব্যথার জন্ম নিচ্ছে। আমি মরছিনা। বেঁচে আছি। ভয় নিয়ে বেঁচে আছি।

আমার স্রষ্টাকে পেতে ইচ্ছে করছে আজ। জায়নামাজ খুলে বসলেই কী পৌঁছানো যাবে আলোতে। কৃষ্ণগহ্বর আমাকে আঘাতে জর্জরিত করছেনা। বরং আমার ভিতরে আলোর কাছে যাবার প্রতিবন্ধকতা জন্ম নিচ্ছে। আমি অন্ধকার খুঁড়ছি আলোর জন্য, তার বিপরীত বিন্দুতে দাঁড়িয়ে। ভিতরের অজানা এক জায়নামাজ মুছে দিবে শেষ জীবনের সব পাপ।

Tuesday 29 November 2016

জানালা বৃত্তান্ত

জানালা বৃত্তান্ত
ইমেল নাঈম

প্রথম দর্শনে প্রেমকে আমার খোলা জানালা মনে হয়
দৃশ্যমান সব কিছুই আমার, আবার কিছুই আপন নয়
এই ধরো একটা যুবতী সর্বদা চোখ অনুসরণে ব্যস্ত
তাকে তুমি ছুঁতে পাবে না জানালার এ'পাশে দাঁড়িয়ে
আবার খোলা আকাশ, নাগরিক সভ্যতায় রসিকতার
মতো দেখা দিয়েই যাবে, অথচ ধরা দেবেনা একদমই।

জানালার উপরে ভেন্টিলেটরে বাসা বাঁধে চড়ুইজুটি
তাদের দাম্পত্যজীবন দেখতে দেখতে আমার খুব
ভালবাসতে ইচ্ছে করে জানালাটিকে কিম্বা তরুণীকে...
মনে হয় অনেকটা দীর্ঘ ট্রেনযাত্রা শুরুর পূর্বে অচেনা
জংশনে ভুল ট্রেনে ওঠা মুখকেই ভালবাসি অজ্ঞতায়।

মূকাভিনয় নিয়ে আমার তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই
যদিও এক বাঙাল আছেন ফরাসি সভ্যতায় মূকাভিনয়
করে নাম কামিয়ে চিনিয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশকে
সমগ্র বিশ্বে, পার্থ দা' নামেই ডাকতে চাই ওনাকে,
ওনার কাছে শেখার খুব ইচ্ছে — মুখে নয়, অঙ্গভঙ্গিতে
কীভাবে জানালার ওপাশে ভালবাসাকে পাঠানো যায়।

আরেকজন সভ্যতার রঙবাজ— নাম শাহাবুদ্দিন
তিনিও ফরাসি সভ্যতায় আঁকিবুঁকি খেলেন। শুনেছি
সমসাময়িক চিত্রকর্মের গ্র‍্যান্ডমাস্টার, সুযোগ পেলে
ওনার থেকে আঁকিয়ে নেবো জানালা সংক্রান্ত প্রেমের
নির্মল আয়োজন, এরপর তুমি মনোযোগী চোখে দেখবে
ছবিটিকে একবার, মূকাভিনেতা আমাকে আরেকবার

তখনো জানবে না জানালার ও'পাশের আকুলতাকে
শোনো, দুইজনকে আমার অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপিটা
দিয়ে চলে আসবো, যেখানে তোমায় নিয়ে সাঁইত্রিশটি
কবিতা লেখা ছিলো, আর অবশিষ্ট পাতাজুড়ে শূন্যতা।

তুমি জানবেনা ভালবাসার পোর্ট্রেটে নায়িকার মুখ।

Sunday 27 November 2016

একটি দৈনন্দিন রুটিনের খসড়া

একটি দৈনন্দিন রুটিনের খসড়া
ইমেল নাঈম

সকাল ৭ টা ৩০,

মুঠোফোনের অ্যালার্ম মোরগের কাজ করে দেয়
বুঝে নিই, এক যোদ্ধার যাত্রারম্ভ অনাকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধের
শীতের সকালের রোদ্র, উত্তাপ মাখেনা সহজে গায়

তাড়াহুড়োর শুরু, বারবার ঘড়িতে চোখ রেখে দিই
নয়টা বাজতে কতটা সয় বাকি, সময় স্বল্পতায়
সকালের নাশতাটাও ঠিকঠাক মতো করা হয়না।

নয়টা বাজতেই ঢুকে পড়ি অফিসে, আবহাওয়া দপ্তরে
অলিখিত বিপদ সংকেত বাজতে থাকে অবিরত!

দুপুর ১১ টা ৩০,

দুটো টোষ্ট বিস্কুট আর এক কাপ চা, খেতে খেতে
ভাবতে থাকি দাবা খেলার পরবর্তী চাল, নিপুণ
অংকে বাড়াই সৈন্য, হাতি, ঘোড়া, কিস্তি, মন্ত্রী...
এতে কোনো জিতার অভিপ্রায় নেই, শুধু রাজা
বাঁচানোর দৈনিক প্রচেষ্টাকে বিজয় ভেবে ধরে নিই

দুপুর ১টা ৩০,

যোহরের নামায শেষে ডাইনিংয়ের দিকে মিছিল
ভালো মন্দ গিলতে গিলতে সবার কথা শুনি
ঠাট্টাতামাসার মাঝে কূটনৈতিক বাক্যবাণে মুগ্ধ

নিজের মুখকেও হতে হয় সাবধানী, এভাবেই
দুপুরের খাওয়া শেষ হয়ে আসে, এরপর বাইরে
তামাক পুড়িয়ে ফের অফিস গমন। চেয়ারে
বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কাজে মনোযোগ।

বিকাল ৪টা ৩০,

ডিরেক্টর ওরফে ডিক্টেটর মশাইয়ের সামনে ক্লাস টু'র
বাচ্চার মতো মনোযোগী হয়ে বসে থাকা, সব কথায়
হাঁ হাঁ করতে করতে নিজের বিরক্তিকে আড়াল করা

ফিরে এসে অধীনস্থকে মনের ঝাল মেটানো
আর নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে গিয়ে
খেয়াল করা ঘড়িতে তখন বিকাল ৫ টা,
আফসোসের সাথে বারবার নিজের ভাগ্যকেই
গালি দিয়ে সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করা

সন্ধ্যা ৬ টা ৩০,

কাজ শেষে বের হওয়া, আর স্বস্তির একফোঁটা নিঃশ্বাস
কাল আবার একই কাজ করার সুযোগ বিনিময়ে
কিছু টাকা মাসের শেষে....

রাত ৮ টা,

ল্যাপটপের ইনবক্সে একটা ওয়েব ম্যাগের জন্য
কবিতা খোঁজা সম্পাদকের সাথে আড্ডা দেয়া আর
স্ট্যাটাসের কমেন্টে কবি বলে অবিহিত করায়
নিজের মধ্যে অলীক সুখ অনুভব করা,

রাত ৯ টা,

ক্লান্ত শরীরে আধা মনোযোগে কোনো বই পড়া

...প্রিয় বন্ধুরা, আমার কবিতা প্রস্তুতি ঠিক এতটুকুই...
তবুও কোন সাহসে তোমরা আমায় কবি বলে ডাকো?

Friday 25 November 2016

ফেস্টিভ্যাল

ফেস্টিভ্যাল
ইমেল নাঈম

রাজনৈতিক গ্যাঁড়াকলে কখন জানি পুড়ে যায় গ্রাম
সনাতনকে সংখ্যালঘু আবরণে সাজালাম কার ইশারায়!
এরই মাঝে কোথাথেকে ভেসে আসে অশুভ কোরাস?
চেয়ে দেখি ইশারায় পুড়ে যাওয়া আদিবাসী জনপদ,
আগুনের উত্তাপে গৃহহীন কিছু মানুষের সুপার মুন

রাত বাড়লে শহুরে নব্য কোরাসটি তীব্র হয়ে ওঠে, চোখ
মেলে দেখি ফোক ফেস্টিভাল আর পূর্ণিমা স্নানে ব্যস্ত
ভাবতে থাকি, মানচিত্রের একই পাশে দু'দল লোক
ভিন্ন জায়গায় রাত কাটায় আকাশের নিচে একই সাথে
উভয়ই অনুভব করে সঙ্গীত, বাস্তুহারা কিংবা আগুনের

অন্যকোনো ভূগোলেও ঠিক মানবতার মৃত্যু হয়, এরমাঝে
সারি সারি নৌকো ভাসে উদ্দেশ্যহীন পথে প্রান্তরে, বাঁচার
তাগিদে ছাড়ে মাটির মায়া, আগত ধ্রুপদীসঙ্গীত উৎসবে
আমরা ভুলে যাবো প্রতিবাদের ভাষার সকল বর্ণমালা।

কারা যেনো যায় ফোক ফেস্টিভ্যালে, থাকে সারারাত
আবার কারা যেনো গায় ধ্রুপদী গান মৃত্যু উপত্যকায়...
শ্রোতাও আছে রাতভোর, অলক্ষ্যেই ঝরে বাস্তুহারা অশ্রু।

Thursday 24 November 2016

পাখির নোঙ্গর

পাখির নোঙ্গর
— ইমেল নাঈম

আকাশ ডাকে। মুক্ত বিহঙ্গ অবেলায় ভাসায় নিজেকে।
দলছুট হয়ে পড়েছে, কখন যে ভুল করে ঢুকে গেছে
এই পথে ঘুণাক্ষরে জানতেও পারে নি, মোহাচ্ছন্ন
ছোটাছুটি শেষে, অদেখা প্রণয় লিখেছিলো ভুল ইমনে

ওড়ার পরে অবশিষ্ট থাকে অনুরাগ, অভিমান জমে
অদেখা যে ছায়ার উপরে কোথাও তার চিহ্ন নেই।
থেমে যাওয়ার গল্প শোনার অপেক্ষায় থাকে, কল্পনা
বিলাসিতা ঠিক এভাবে ছড়াতে থাকে। ক্ষতবিক্ষত
দেহ আর মনের অদ্ভুত মিশ্রণে জন্ম নেয় সালসার

ধ্রুপদী পটু নৃত্যশিল্পীও মুদ্রা ভুল করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে,
কারণ অব্যাখ্যাত থাকে দর্শক ভাবতে থাকে
সক্রেটিসের চোখে অবিশ্বাস, বিস্ময়কর প্রশ্ন নিয়ে
হয়তো পাখিটিও নতুন কোনো আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে
প্রকৃতি জুটিয়ে দিলো নতুন সব সাঙ্গপাঙ্গ চারপাশে।
নিয়ম বাধা সকাল সন্ধ্যা উড়তেও শুরু করে দিয়েছে

পাখিটি এখনো স্বপ্ন দেখে আবার সঙ্গীহীন হবার,
অদেখা ছায়াটাও দৃশ্যমান হয়ে সামনে আসার
স্বপ্নে ওড়ার সময়ে চোখ আর কান জাগ্রত রেখে
খুঁজে যায় নোঙ্গর নতুন ছত্রিশ ব্যঞ্জনমাত্রার পূর্ণরাগ।

Wednesday 23 November 2016

একলা প্রেম

একলা প্রেম
ইমেল নাঈম

অনুসরণ পর্বের দশটি বছর কেটে গেছে অকারণে
দেখেছো কোথায় প্রথম জানিনা তখনও প্রথম দৃষ্টিপাত
ব্যস্ত আমি দেখিনি কাউকে। ভাবিনি আমাকে দেখছে লুকিয়ে

ট্যাক্সিস্ট্যাণ্ড আর লাল শাড়ির গল্পটা শোনা হয়নি তখনও
শুনেছি রুটিনবাঁধা দাঁড়িয়ে থাকতে তুমি রোজ অপেক্ষায়

ভীরুবুকে অতো সাহস এলো কোথা থেকে জানা হলো না আজও
প্রথম কথায় জিজ্ঞেসবাদ নায়িকা হবার সুপ্ত বাসনা
না বলতেই দমে গেলেনা তুমি। প্রাথমিক আলাপটাও সারলে...
বোকার মতোন আমিও বলে ফেললাম সবটুকু ঠিকঠাক

ক্লাইম্যাক্সের সমাপ্তি হয় নি, খুঁজে বের করলে ফেসবুকে
আমিও বন্ধ করে দিলাম যোগাযোগের সকল পথঘাট
তুমি এতোদিনে ভুলে গেছো আমাকে, মোহ বাস্তবের মিলনে

আমিও আছি দূরে থেকে বেশ ভালো আপন পৃথিবী সাজিয়ে...

Tuesday 22 November 2016

ছাপাখানার নিষিদ্ধ এস্রাজ

ছাপাখানার নিষিদ্ধ এস্রাজ
— ইমেল নাঈম

রাত বাড়লে বাজাতে বসি ছাপাখানার নিষিদ্ধ এস্রাজ
হায় আল্লাহ, সকাল আসতে আর কতটা সময় বাকি
পেরিয়ে যায় ভোরের অংক, ফজরের আযানের সুর
শোনায় ইনসোমনিয়া জীবনের অহেতুক সালতামামি।

নিজেকে খুঁজতে থাকি জায়নামাজে, তসবিহ'র ব্যর্থ
আলিঙ্গনে কোথাও নেই আমি। ভিতরের রূপ দেখিনা
উপরের রঙচঙা আয়োজন, দামী প্রসাধনী ঢেকে রাখে
কুৎসিত গায়ের রঙ। জামার কলারকে নীল সাদায়
আবৃত করে সৃষ্টি করি নিজেকে মহান ঘোষণার উপায়

না না করেও ফুরিয়ে যায় ব্যর্থতায় ভরা জীবনের গল্প
শূণ্যতার গল্প বলেছি আগের কোনো আধ্যাত্মিক কাব্যে
বলেছি শূন্যতায় জড়িয়ে গেছে জীবনের অনেক স্রোত
নদীকে দেখো বয়ে যায় জোয়ার ভাটার আইন কানুনে
প্রশ্ন করোনা, এর পিছনে বিদ্যমান দৃশ্যপট কতটা স্পষ্ট

নিজেকে খুঁজতে চাইলে বুদ্ধের মতো বসে যাও ধ্যানে
ভয় পেয়োনা বন্ধু তোমার কাছে সহজে ভেসে আসবেনা
অলৌকিক বার্তা। মোরাকাবা শেষ হলে নগ্ন নিজেকে
দেখো আয়নায়, নিজের মতো করে ভেসে যাও সাধনায়

মন খারাপের এক বা একাধিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকে
নিজেকে আবিষ্কার করো, নিজের প্রাণশক্তিকে খোঁজ
বাইরের প্রসাধনীর পাশাপাশি ভিতরে আলো জ্বালাও
নিজের মাঝেই দেখবে শূন্যতার জয়জয়কার, স্রষ্টাকে
নয় তুমি খুঁজবে তোমাকে — তোমাতেই থাকেন তিনি।

Sunday 20 November 2016

নভেম্বরের কবিতা ৯

ট্রাফিক সিগন্যাল
— ইমেল নাঈম

মেঘ গড়িয়ে যায় দূরে, দাবার বোর্ডে মনোযোগী প্রেমিক...

ট্রাফিক সিগন্যাল জুড়ে লাল আর হলুদ ভালোবাসা ওড়ে
ভুলকরে অন্য পথে ঢুকে যায় আমার গাড়ী, পিছনের দিক
যাবার পথ আবদ্ধ হয়ে গেছে নতুন কোনো যানবাহনে।

উড়ে যাবার মতই মেঘ, ভ্যাপসা গরমে সিদ্ধ হয় মরুপথ
তাপমাত্রা বাড়ে আকাশের, নীল ভালোলাগে না এখন
বিরহ বিলাসী নই, মনের কোণায় এস্রাজ বাজতে থাকে।

গন্তব্য আমাকে চিনতে পারেনি আজতক, এক সৌখিন
পর্যটক বাৎসরিক অবসর কাটায় ভুল পথে — বারবার...
আর্দ্রতা কমে যায় আমার কল্পনা নগরীতে, কৃত্রিম শীত
নামে শুকনো উঠোনে, সন্ধ্যার অপেক্ষায় জানালায় চোখ

আমি তখনো তাকিয়ে দেখি লাল হলুদ বাতির অবস্থান
অর্থ জানা নেই, সমুজ্জ্বল উপস্থিতি দেখে অনুমান করি
রেখে যাওয়া সময়ের হিসাবনিকাশ, এরা কিসের শ্লোগান
গাইছিলো গতকাল সারাদিন ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে...

আমার অর্থ জানানাই, ভুল পথের কাফফারাও অজানা।

Friday 18 November 2016

নভেম্বরের কবিতা ৮

নভেম্বরের কবিতা
— ইমেল নাঈম

মুদ্রাস্ফীতি মাপতে মাপতে পেরিয়ে গেলো পথ। কাকে পরিয়েছো অফুরন্ত সময়ের হাতঘড়ি? কাঠবিড়ালিদের গাছের এ'মাথা থেকে অন্যপ্রান্তে আসা যাওয়া দেখতে দেখতে বরফ ছুঁয়েছে নভেম্বরের শেষে। আমার অগ্রহায়ণ তোমার চোখে খেলে যায় পরিপাটি জীবনের নামতার শিহরণ।

শরৎ শেষে নবাণ্ণ উৎসব খেলে না গ্রাম ভগ্নাংশে, ধানের ক্ষেতে স্বাদ কমে গেছে অক্সিজেনের। পিচ ঢালাই পথ কেড়ে নিয়েছে মেঠো সবুজ। আমি দেখিনি গরুর গাড়ি, রিকশাও কমে গেছে মোটরচালিত তিনপেয়ে গাড়ির দৌরাত্ম্যে। ডাকহরকরা নেই, ডাকঘর ঘুমিয়ে গেছে বাবলা গাছ তলে।

দূরত্ব বড়ো কোনো সমস্যা নয়। অংক চাপলেই ইথারে চলে আসে প্রিয় কণ্ঠস্বর। চাইলে দেখে নিতে পারো প্রিয় মুখ। এখন আর কেউ কাউকে চিঠি দেয়না। রান্নার রেসিপি শিখতে ব্যস্ত তরুণী মন। রুমালের সেলাইয়ে নেই কোনো ভুল পাখি। তার নিচে ঠাঁই পায়নি ছোট্ট করে লেখা "ভুলো না আমায়।"

লোড শেডিং হলে মোমবাতি জ্বলে ওঠে এখনো। বিদ্যুতের রাজকীয় গমন থাকলেও আগমনী সঙ্গীত  বাজেনা সহজে। বৈঠকখানায় তেমন ব্যস্ততা নেই, বোকাবাক্সের দাপটে সন্ধ্যার উঠোনে অদম্য বালকবালিকাদের দৌড়ঝাঁপ নেই।

সদ্য জন্ম নেয়া ইট পাথরের দালানের পাশেই বাঁশঝাড় ঘুমোয়। পাশাপাশি সহবস্থান, অথচ কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সন্ধ্যার ইশতেহারে লেখা নেই প্রেমিক কেনো হয়ে যায় প্রতারক। আমি তোমাকে এমন মায়াহরা সন্ধ্যারাতে চিনতে পারিনা, এমন কী নিজেকেও!

Thursday 17 November 2016

বাউল

বাউল
------ ইমেল নাঈম
 
বাউল আগ্রাবাদ এসো তোমায় পোস্টমর্টেম করবো,
তোমাতে নাকি পাওয়া গেছে দূষিত রক্তের ভ্রূণ।
তোমার বাউলিয়ানা শৈল্পিক বুকে ছোবল মারার
সুদৃঢ় প্রত্যয়ে আশেপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে একদল
ঈর্ষাপরায়ণ সাপুড়ে, বন্দী রেখেছে তোমার প্রিয় চড়ুই।

তুমি জানোনা তোমার প্রিয় রক্তজবার তিনটি পাপড়ি
অনাদরে ঝরে পড়েছে সেই কবে, ইদানীং অনেকে
সাহিত্য চর্চা করে তোমার রক্তজবাকে ভেবে আর
ঢাকঢোল পিটিয়ে নিজেরা চুলকে নেয় নিজেদের পিঠ।

বাউল ঈশ্বরের দোহাই কখনো কবি হয়ো না, কিছু কবি
এখনও গিরগিটির বেশে আশেপাশে ঘোরাফেরা করে,
সুযোগ পেলেই বেরোয় নিজের রূপ পাল্টে যে কোন
সময় স্বার্থ হাসিলের মনোবাসনায় আত্মস্বার্থ রক্ষার্থে।

বাউল সাবধানে থেকো। দেখে শুনে আগাও সামনের পথ।
চিরকালীন অকবিরা বড় বেশি মিথ্যুক আর প্রতারক
তাদের এই জালের বিস্তৃতি ভাঙতে জানে প্রকৃত সাধক।

Wednesday 16 November 2016

নভেম্বরের কবিতা ৭

কৈশোর কথন
— ইমেল নাঈম

টিকটিক ছুটে চলা দেয়াল ঘড়ি, তারপাশেই ধুলোজমা
পোর্ট্রেট, বয়সের নিরিখে বদলে যাওয়া জীবনের অংক
কতটা প্রান্ত ছুঁয়ে নেমে আসে ভোর, শৈশবের কাটাকুটি
খেলা খেলতে গিয়ে ইশকুল পালিয়ে খেলার মাঠ।
প্রথম তামাকের স্বাদ, দমবন্ধ করা সুন্দরী সহপাঠীকে
দুরুদুরু হাতে লেখা প্রথম ব্যর্থ চিরকুট, অজস্র কবিতা
শুধুমাত্র যত্নের অভাবে হারিয়ে গেলো বুক হতে

নৌকো ডুবির মতো ডুবে যাই জোয়ারভাটার হিসেবে
খুব গভীরতা মাপতে বসে শুনশান নীরবতা জমে গেছে
কবিতার খাতায় অনেক না বলা কথা রেখে দিয়েছি,
কাউকে বলা হয়নি, সহজ আর কঠিনের হিসাব বুঝিনি
কৈশোরের ডুবে থাকা তিনগোয়েন্দা সিরিজের ফাঁকে
অন্য নামও বেড়াতে আসে অলস বিকালে চা'র কাপে

অনাবাদী স্বপ্নরা হোঁচট খেয়ে বিদায় নেয়, পাঠ্যবইয়ের
আড়ালে হুমায়ুন আহমেদ'র ফ্যান্টাসি, ডিজ্যুস প্রজন্ম
জন্ম নেয়নি তখনও। সারাদিন হৈহৈ করে বেড়ানো
সময়ের বেড়াজালে আটকে গেছিলো মন ফড়িং।
ঘরের সুবোধ বালক বের হলেই অদম্য এক দুষ্টু ছানা
হুড়মুড় করে ঢুকে যায় বেয়াড়া বাতাস আজ বিকালে।

ব্যাকবেঞ্চার ছাত্র, বেঞ্চে লিখা বর্ণমালার যোগ অংক
কলম খেলার সময়, নানান রঙয়ের বর্ণের স্টিকার
ইট পাথরের সভ্যতায় বিক্রি করে দিয়েছে সমাজ
উঁচু দালানের সারি, বিশুদ্ধ বাতাসের ক্রমাগত ঘাটতি
তবুও ছুটে চলেছি সময়ের টানে নাবিকের বেশে।

সুখে থাকো আমার অদম্য কৈশোর স্মৃতির কোলাজে।