Saturday 26 January 2019

সকাল

সকাল
ইমেল নাঈম

এভাবেও এড়িয়ে যাওয়া যায়! গভীর শূন্যতা নিয়ে ডুবে যায় চাঁদ। সুবহে সাদিকের আকাশ লিখে রাখে যাযাবর প্রেম। মুঠোয় আটকে রাখি ছাতিমফুলের স্পর্শ। ভালোবাসার নেশায় নিঃস্ব হয়েছে যে প্রেমিক তাকে উড়িয়ে দাও আকাশে। সে দেখুক আকাশের রঙ কী! নিঃসঙ্গতার বিপরীত মানেই জুড়ে থাকা নয়, নয় কারো পাশে থাকা। একটা শৃঙ্খলা যাকে নিয়ে ভাবা যেতে পারে একটা সকাল।

শরীরের সাথে লেপ্টে থাকে অজস্র মন খারাপের উপকরণ। রঙহীন, স্বাদহীন ফেরিওয়ালা কাঁধে নিয়ে যাচ্ছে যাবতীয় প্রহসন। যেন ছোট্ট বেলায় সেই ঘুড়ি ওড়ানো বিকালের কিছু আলোকছটা। মনে হচ্ছে এইতো নিভে যাবে পুরোটা নিয়ে।! কোথাও তো লুকিয়ে থাকে অলক্ষ্যে, মেঘের দেশ পাড়ি দিলেও আকাশ ছোট হয়ে মুঠোবন্দী হয় না।

ইরানি গোলাপ পড়ে আছে বিকালের পথে। শীতের দিনে শিউলি ফোটে না, শহুরে আকাশ চিনে না পাখির গান। নাগরিক অরণ্য মানেই ইকেবানা আর বনসাই। উঁচু অট্টালিকার ভিড়ে আকাশটিও দখলে নিয়ে নিবে কর্পোরেট বেনিয়া। সুযোগের অভাবে সৎ মানুষ হিসেবে জেলজীবন পার করছি প্রত্যেকে।

আকাশ দখলে চলে গেলো সেই কবে। তার আগে দখল হলো মাটি। খেলার মাঠে জন্মালো শপিংমল। মানুষ বন্দী হলো মুঠো ভর্তি যন্ত্রের কাছে। অসুস্থ হচ্ছি না খুব। সুস্থতা নিয়েও থাকছে সংশয়। আলটপকা আটকে যাচ্ছি একটা অনিচ্ছাকৃত সকালের কাছে, যার কাছে আমার কোনও ঋণ নেই।

Monday 21 January 2019

নিষ্প্রাণ নগরী

নিষ্প্রাণ নগরী
ইমেল নাঈম

গাছেরা কবিতা পড়ে না বলেই সিমেন্টের গাছ পুঁতছ নগরজুড়ে...
আপত্তিগুলো এখনো মাথাচাড়া দিয়ে জানান দেয়, 'আছি'
মাঝে বয়ে যায় অজস্র না জানা নহর, চোরাবালির সৈকত
অপেক্ষায় পেরিয়ে যাচ্ছে হরিত দৃশ্যপট, খুঁড়ে ফেলেছি রাস্তা...

নদীর পানিতে কারখানার ক্যামিকেল, নাব্যতাহীন নদীর
আছে ফেলে আসছি জাগতিক অভিমান, অভিনয় শেষে
হিসাব করিনা, কে সুখী? কতটা পারদ উঠলে উষ্ণতা
মাপা যায় অসুখের। বিত্তের পিছনে দৌড়ছে দোপেয়ে।

অর্থ দিয়ে কিনছে সামাজিক সম্মান, প্রভাব প্রতিপত্তি।
পাড়ায় পাড়ায় বাড়ছে উপাসনালয়, বাড়ছে অন্যায়
তার সমান্তরালে পাল্লা দিয়ে? কিশোর চোখ ডুবেছে
মুঠোফোনে, অন্তর্জালের খেলায়, সামাজিক মাধ্যমে...

কারো কাছে নেই অভিযোগ, অন্ধকারের পথে ছুটছি শুধু
আলো নেই, দূরের টানেলে কেবলই বিভীষিকার মরিচীকা
বিনিদ্র জীবন যেন এক্সিবিশন, আমরা সবাই ক্লাউন...
বিচিত্র অঙ্গভঙ্গিতে ঢেকে দিচ্ছি শৈশবের সকল আয়োজন।

মুছে যাচ্ছে সবুজের পাঠ, কৃত্রিম আবেশ ছড়াচ্ছে সৈকত,
বুকের জমিনে অনন্য এক হাহাকার, অভিধানজুড়ে শূন্যতা।

Saturday 19 January 2019

পুরস্কার

পুরস্কার
ইমেল নাঈম

পদ্ধতি এখন অনেক সহজ। নিজেকে প্রকাশ করাটাও।
চাইলে মুদ্রিত হয়ে যায় কাঁচাপাকা, রূঢ় অনুভূতিগুচ্ছ
বিজ্ঞাপনও সহজলভ্য, ডাকযোগে পৌঁছে যায় জিনিস।

এখন ডায়েরির পাতাগুলো শূন্যই থাকে,
লুকনো থাকে না প্রিয় অনুভব,
গোপন কথা, প্রেম, অপ্রকাশিত যা আছে
মৃত্যুর পরে খুঁজেও পাওয়া যাবে না কিছু।

তবুও লোক দেখানো একটা মিছিল ছুটে যায় শহরে
শ্লোগান নেই, নীরবতাকে নিয়েই ছুটে চলে সেটি
শো-অফের পরে থাকে দামী মোবাইলের কারসাজি

মুখবইতে সহাস্যে ঝুলে নানাবিধ প্রাপ্তির খবর
শুভেচ্ছায় ভরে যায় মাথা হতে পায়ের তালু
নড়েচড়ে বসেন তারা, এই বুঝি জাতে উঠলো।
মুষ্টিমেয় বন্ধুদের ঘিরে রচিত সকল কার্যকলাপ

অথচ, অমরত্বের পথে হাঁটছে বামুন,
বনসাইয়ের চোখে তারাও অনেক বড়
আর, অমরত্ব অভিধানেরও বাইরে...

Friday 18 January 2019

ক্ষরণ

ক্ষরণ
ইমেল নাঈম

দরজার ওপাশে কেউ অপেক্ষায় থাকে
বিমূর্ত শব্দগুলো খেলছে— দূরত্ব আঁকা
শেষ হলে অচেনা হই আমরা।

দিনান্তের সিগন্যালগুলো ধ্রুপদী স্পন্দন
নিয়ে থেমে যায়— ফানুশ ওড়া আকাশ
লিখে রাখছে নিঃসঙ্গতার মুহূর্ত।

প্রসঙ্গ বদলে যাক। আমাদের হিসাব
গোপনে রেখে দিচ্ছি— মুচলেকায় রেখেছি
পালিয়ে যাবার সব উপকরণ—
বিনির্মাণে লুপ্ত হচ্ছে বাসনা—

মুখস্থ বিদ্যায় রাখছি জীবন,
প্রজাপতি নয়, উড়ে যাচ্ছে ডানা
শান্ত নদীর কাছে পেতেছি হাত—

বয়ে যাচ্ছে শ্রান্ত, ক্ষান্ত জীবন
ক্ষয়ে যাওয়া পাড়ের মতো।