Tuesday 29 November 2016

জানালা বৃত্তান্ত

জানালা বৃত্তান্ত
ইমেল নাঈম

প্রথম দর্শনে প্রেমকে আমার খোলা জানালা মনে হয়
দৃশ্যমান সব কিছুই আমার, আবার কিছুই আপন নয়
এই ধরো একটা যুবতী সর্বদা চোখ অনুসরণে ব্যস্ত
তাকে তুমি ছুঁতে পাবে না জানালার এ'পাশে দাঁড়িয়ে
আবার খোলা আকাশ, নাগরিক সভ্যতায় রসিকতার
মতো দেখা দিয়েই যাবে, অথচ ধরা দেবেনা একদমই।

জানালার উপরে ভেন্টিলেটরে বাসা বাঁধে চড়ুইজুটি
তাদের দাম্পত্যজীবন দেখতে দেখতে আমার খুব
ভালবাসতে ইচ্ছে করে জানালাটিকে কিম্বা তরুণীকে...
মনে হয় অনেকটা দীর্ঘ ট্রেনযাত্রা শুরুর পূর্বে অচেনা
জংশনে ভুল ট্রেনে ওঠা মুখকেই ভালবাসি অজ্ঞতায়।

মূকাভিনয় নিয়ে আমার তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই
যদিও এক বাঙাল আছেন ফরাসি সভ্যতায় মূকাভিনয়
করে নাম কামিয়ে চিনিয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশকে
সমগ্র বিশ্বে, পার্থ দা' নামেই ডাকতে চাই ওনাকে,
ওনার কাছে শেখার খুব ইচ্ছে — মুখে নয়, অঙ্গভঙ্গিতে
কীভাবে জানালার ওপাশে ভালবাসাকে পাঠানো যায়।

আরেকজন সভ্যতার রঙবাজ— নাম শাহাবুদ্দিন
তিনিও ফরাসি সভ্যতায় আঁকিবুঁকি খেলেন। শুনেছি
সমসাময়িক চিত্রকর্মের গ্র‍্যান্ডমাস্টার, সুযোগ পেলে
ওনার থেকে আঁকিয়ে নেবো জানালা সংক্রান্ত প্রেমের
নির্মল আয়োজন, এরপর তুমি মনোযোগী চোখে দেখবে
ছবিটিকে একবার, মূকাভিনেতা আমাকে আরেকবার

তখনো জানবে না জানালার ও'পাশের আকুলতাকে
শোনো, দুইজনকে আমার অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপিটা
দিয়ে চলে আসবো, যেখানে তোমায় নিয়ে সাঁইত্রিশটি
কবিতা লেখা ছিলো, আর অবশিষ্ট পাতাজুড়ে শূন্যতা।

তুমি জানবেনা ভালবাসার পোর্ট্রেটে নায়িকার মুখ।

Sunday 27 November 2016

একটি দৈনন্দিন রুটিনের খসড়া

একটি দৈনন্দিন রুটিনের খসড়া
ইমেল নাঈম

সকাল ৭ টা ৩০,

মুঠোফোনের অ্যালার্ম মোরগের কাজ করে দেয়
বুঝে নিই, এক যোদ্ধার যাত্রারম্ভ অনাকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধের
শীতের সকালের রোদ্র, উত্তাপ মাখেনা সহজে গায়

তাড়াহুড়োর শুরু, বারবার ঘড়িতে চোখ রেখে দিই
নয়টা বাজতে কতটা সয় বাকি, সময় স্বল্পতায়
সকালের নাশতাটাও ঠিকঠাক মতো করা হয়না।

নয়টা বাজতেই ঢুকে পড়ি অফিসে, আবহাওয়া দপ্তরে
অলিখিত বিপদ সংকেত বাজতে থাকে অবিরত!

দুপুর ১১ টা ৩০,

দুটো টোষ্ট বিস্কুট আর এক কাপ চা, খেতে খেতে
ভাবতে থাকি দাবা খেলার পরবর্তী চাল, নিপুণ
অংকে বাড়াই সৈন্য, হাতি, ঘোড়া, কিস্তি, মন্ত্রী...
এতে কোনো জিতার অভিপ্রায় নেই, শুধু রাজা
বাঁচানোর দৈনিক প্রচেষ্টাকে বিজয় ভেবে ধরে নিই

দুপুর ১টা ৩০,

যোহরের নামায শেষে ডাইনিংয়ের দিকে মিছিল
ভালো মন্দ গিলতে গিলতে সবার কথা শুনি
ঠাট্টাতামাসার মাঝে কূটনৈতিক বাক্যবাণে মুগ্ধ

নিজের মুখকেও হতে হয় সাবধানী, এভাবেই
দুপুরের খাওয়া শেষ হয়ে আসে, এরপর বাইরে
তামাক পুড়িয়ে ফের অফিস গমন। চেয়ারে
বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কাজে মনোযোগ।

বিকাল ৪টা ৩০,

ডিরেক্টর ওরফে ডিক্টেটর মশাইয়ের সামনে ক্লাস টু'র
বাচ্চার মতো মনোযোগী হয়ে বসে থাকা, সব কথায়
হাঁ হাঁ করতে করতে নিজের বিরক্তিকে আড়াল করা

ফিরে এসে অধীনস্থকে মনের ঝাল মেটানো
আর নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে গিয়ে
খেয়াল করা ঘড়িতে তখন বিকাল ৫ টা,
আফসোসের সাথে বারবার নিজের ভাগ্যকেই
গালি দিয়ে সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করা

সন্ধ্যা ৬ টা ৩০,

কাজ শেষে বের হওয়া, আর স্বস্তির একফোঁটা নিঃশ্বাস
কাল আবার একই কাজ করার সুযোগ বিনিময়ে
কিছু টাকা মাসের শেষে....

রাত ৮ টা,

ল্যাপটপের ইনবক্সে একটা ওয়েব ম্যাগের জন্য
কবিতা খোঁজা সম্পাদকের সাথে আড্ডা দেয়া আর
স্ট্যাটাসের কমেন্টে কবি বলে অবিহিত করায়
নিজের মধ্যে অলীক সুখ অনুভব করা,

রাত ৯ টা,

ক্লান্ত শরীরে আধা মনোযোগে কোনো বই পড়া

...প্রিয় বন্ধুরা, আমার কবিতা প্রস্তুতি ঠিক এতটুকুই...
তবুও কোন সাহসে তোমরা আমায় কবি বলে ডাকো?

Friday 25 November 2016

ফেস্টিভ্যাল

ফেস্টিভ্যাল
ইমেল নাঈম

রাজনৈতিক গ্যাঁড়াকলে কখন জানি পুড়ে যায় গ্রাম
সনাতনকে সংখ্যালঘু আবরণে সাজালাম কার ইশারায়!
এরই মাঝে কোথাথেকে ভেসে আসে অশুভ কোরাস?
চেয়ে দেখি ইশারায় পুড়ে যাওয়া আদিবাসী জনপদ,
আগুনের উত্তাপে গৃহহীন কিছু মানুষের সুপার মুন

রাত বাড়লে শহুরে নব্য কোরাসটি তীব্র হয়ে ওঠে, চোখ
মেলে দেখি ফোক ফেস্টিভাল আর পূর্ণিমা স্নানে ব্যস্ত
ভাবতে থাকি, মানচিত্রের একই পাশে দু'দল লোক
ভিন্ন জায়গায় রাত কাটায় আকাশের নিচে একই সাথে
উভয়ই অনুভব করে সঙ্গীত, বাস্তুহারা কিংবা আগুনের

অন্যকোনো ভূগোলেও ঠিক মানবতার মৃত্যু হয়, এরমাঝে
সারি সারি নৌকো ভাসে উদ্দেশ্যহীন পথে প্রান্তরে, বাঁচার
তাগিদে ছাড়ে মাটির মায়া, আগত ধ্রুপদীসঙ্গীত উৎসবে
আমরা ভুলে যাবো প্রতিবাদের ভাষার সকল বর্ণমালা।

কারা যেনো যায় ফোক ফেস্টিভ্যালে, থাকে সারারাত
আবার কারা যেনো গায় ধ্রুপদী গান মৃত্যু উপত্যকায়...
শ্রোতাও আছে রাতভোর, অলক্ষ্যেই ঝরে বাস্তুহারা অশ্রু।

Thursday 24 November 2016

পাখির নোঙ্গর

পাখির নোঙ্গর
— ইমেল নাঈম

আকাশ ডাকে। মুক্ত বিহঙ্গ অবেলায় ভাসায় নিজেকে।
দলছুট হয়ে পড়েছে, কখন যে ভুল করে ঢুকে গেছে
এই পথে ঘুণাক্ষরে জানতেও পারে নি, মোহাচ্ছন্ন
ছোটাছুটি শেষে, অদেখা প্রণয় লিখেছিলো ভুল ইমনে

ওড়ার পরে অবশিষ্ট থাকে অনুরাগ, অভিমান জমে
অদেখা যে ছায়ার উপরে কোথাও তার চিহ্ন নেই।
থেমে যাওয়ার গল্প শোনার অপেক্ষায় থাকে, কল্পনা
বিলাসিতা ঠিক এভাবে ছড়াতে থাকে। ক্ষতবিক্ষত
দেহ আর মনের অদ্ভুত মিশ্রণে জন্ম নেয় সালসার

ধ্রুপদী পটু নৃত্যশিল্পীও মুদ্রা ভুল করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে,
কারণ অব্যাখ্যাত থাকে দর্শক ভাবতে থাকে
সক্রেটিসের চোখে অবিশ্বাস, বিস্ময়কর প্রশ্ন নিয়ে
হয়তো পাখিটিও নতুন কোনো আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে
প্রকৃতি জুটিয়ে দিলো নতুন সব সাঙ্গপাঙ্গ চারপাশে।
নিয়ম বাধা সকাল সন্ধ্যা উড়তেও শুরু করে দিয়েছে

পাখিটি এখনো স্বপ্ন দেখে আবার সঙ্গীহীন হবার,
অদেখা ছায়াটাও দৃশ্যমান হয়ে সামনে আসার
স্বপ্নে ওড়ার সময়ে চোখ আর কান জাগ্রত রেখে
খুঁজে যায় নোঙ্গর নতুন ছত্রিশ ব্যঞ্জনমাত্রার পূর্ণরাগ।

Wednesday 23 November 2016

একলা প্রেম

একলা প্রেম
ইমেল নাঈম

অনুসরণ পর্বের দশটি বছর কেটে গেছে অকারণে
দেখেছো কোথায় প্রথম জানিনা তখনও প্রথম দৃষ্টিপাত
ব্যস্ত আমি দেখিনি কাউকে। ভাবিনি আমাকে দেখছে লুকিয়ে

ট্যাক্সিস্ট্যাণ্ড আর লাল শাড়ির গল্পটা শোনা হয়নি তখনও
শুনেছি রুটিনবাঁধা দাঁড়িয়ে থাকতে তুমি রোজ অপেক্ষায়

ভীরুবুকে অতো সাহস এলো কোথা থেকে জানা হলো না আজও
প্রথম কথায় জিজ্ঞেসবাদ নায়িকা হবার সুপ্ত বাসনা
না বলতেই দমে গেলেনা তুমি। প্রাথমিক আলাপটাও সারলে...
বোকার মতোন আমিও বলে ফেললাম সবটুকু ঠিকঠাক

ক্লাইম্যাক্সের সমাপ্তি হয় নি, খুঁজে বের করলে ফেসবুকে
আমিও বন্ধ করে দিলাম যোগাযোগের সকল পথঘাট
তুমি এতোদিনে ভুলে গেছো আমাকে, মোহ বাস্তবের মিলনে

আমিও আছি দূরে থেকে বেশ ভালো আপন পৃথিবী সাজিয়ে...

Tuesday 22 November 2016

ছাপাখানার নিষিদ্ধ এস্রাজ

ছাপাখানার নিষিদ্ধ এস্রাজ
— ইমেল নাঈম

রাত বাড়লে বাজাতে বসি ছাপাখানার নিষিদ্ধ এস্রাজ
হায় আল্লাহ, সকাল আসতে আর কতটা সময় বাকি
পেরিয়ে যায় ভোরের অংক, ফজরের আযানের সুর
শোনায় ইনসোমনিয়া জীবনের অহেতুক সালতামামি।

নিজেকে খুঁজতে থাকি জায়নামাজে, তসবিহ'র ব্যর্থ
আলিঙ্গনে কোথাও নেই আমি। ভিতরের রূপ দেখিনা
উপরের রঙচঙা আয়োজন, দামী প্রসাধনী ঢেকে রাখে
কুৎসিত গায়ের রঙ। জামার কলারকে নীল সাদায়
আবৃত করে সৃষ্টি করি নিজেকে মহান ঘোষণার উপায়

না না করেও ফুরিয়ে যায় ব্যর্থতায় ভরা জীবনের গল্প
শূণ্যতার গল্প বলেছি আগের কোনো আধ্যাত্মিক কাব্যে
বলেছি শূন্যতায় জড়িয়ে গেছে জীবনের অনেক স্রোত
নদীকে দেখো বয়ে যায় জোয়ার ভাটার আইন কানুনে
প্রশ্ন করোনা, এর পিছনে বিদ্যমান দৃশ্যপট কতটা স্পষ্ট

নিজেকে খুঁজতে চাইলে বুদ্ধের মতো বসে যাও ধ্যানে
ভয় পেয়োনা বন্ধু তোমার কাছে সহজে ভেসে আসবেনা
অলৌকিক বার্তা। মোরাকাবা শেষ হলে নগ্ন নিজেকে
দেখো আয়নায়, নিজের মতো করে ভেসে যাও সাধনায়

মন খারাপের এক বা একাধিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকে
নিজেকে আবিষ্কার করো, নিজের প্রাণশক্তিকে খোঁজ
বাইরের প্রসাধনীর পাশাপাশি ভিতরে আলো জ্বালাও
নিজের মাঝেই দেখবে শূন্যতার জয়জয়কার, স্রষ্টাকে
নয় তুমি খুঁজবে তোমাকে — তোমাতেই থাকেন তিনি।

Sunday 20 November 2016

নভেম্বরের কবিতা ৯

ট্রাফিক সিগন্যাল
— ইমেল নাঈম

মেঘ গড়িয়ে যায় দূরে, দাবার বোর্ডে মনোযোগী প্রেমিক...

ট্রাফিক সিগন্যাল জুড়ে লাল আর হলুদ ভালোবাসা ওড়ে
ভুলকরে অন্য পথে ঢুকে যায় আমার গাড়ী, পিছনের দিক
যাবার পথ আবদ্ধ হয়ে গেছে নতুন কোনো যানবাহনে।

উড়ে যাবার মতই মেঘ, ভ্যাপসা গরমে সিদ্ধ হয় মরুপথ
তাপমাত্রা বাড়ে আকাশের, নীল ভালোলাগে না এখন
বিরহ বিলাসী নই, মনের কোণায় এস্রাজ বাজতে থাকে।

গন্তব্য আমাকে চিনতে পারেনি আজতক, এক সৌখিন
পর্যটক বাৎসরিক অবসর কাটায় ভুল পথে — বারবার...
আর্দ্রতা কমে যায় আমার কল্পনা নগরীতে, কৃত্রিম শীত
নামে শুকনো উঠোনে, সন্ধ্যার অপেক্ষায় জানালায় চোখ

আমি তখনো তাকিয়ে দেখি লাল হলুদ বাতির অবস্থান
অর্থ জানা নেই, সমুজ্জ্বল উপস্থিতি দেখে অনুমান করি
রেখে যাওয়া সময়ের হিসাবনিকাশ, এরা কিসের শ্লোগান
গাইছিলো গতকাল সারাদিন ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে...

আমার অর্থ জানানাই, ভুল পথের কাফফারাও অজানা।

Friday 18 November 2016

নভেম্বরের কবিতা ৮

নভেম্বরের কবিতা
— ইমেল নাঈম

মুদ্রাস্ফীতি মাপতে মাপতে পেরিয়ে গেলো পথ। কাকে পরিয়েছো অফুরন্ত সময়ের হাতঘড়ি? কাঠবিড়ালিদের গাছের এ'মাথা থেকে অন্যপ্রান্তে আসা যাওয়া দেখতে দেখতে বরফ ছুঁয়েছে নভেম্বরের শেষে। আমার অগ্রহায়ণ তোমার চোখে খেলে যায় পরিপাটি জীবনের নামতার শিহরণ।

শরৎ শেষে নবাণ্ণ উৎসব খেলে না গ্রাম ভগ্নাংশে, ধানের ক্ষেতে স্বাদ কমে গেছে অক্সিজেনের। পিচ ঢালাই পথ কেড়ে নিয়েছে মেঠো সবুজ। আমি দেখিনি গরুর গাড়ি, রিকশাও কমে গেছে মোটরচালিত তিনপেয়ে গাড়ির দৌরাত্ম্যে। ডাকহরকরা নেই, ডাকঘর ঘুমিয়ে গেছে বাবলা গাছ তলে।

দূরত্ব বড়ো কোনো সমস্যা নয়। অংক চাপলেই ইথারে চলে আসে প্রিয় কণ্ঠস্বর। চাইলে দেখে নিতে পারো প্রিয় মুখ। এখন আর কেউ কাউকে চিঠি দেয়না। রান্নার রেসিপি শিখতে ব্যস্ত তরুণী মন। রুমালের সেলাইয়ে নেই কোনো ভুল পাখি। তার নিচে ঠাঁই পায়নি ছোট্ট করে লেখা "ভুলো না আমায়।"

লোড শেডিং হলে মোমবাতি জ্বলে ওঠে এখনো। বিদ্যুতের রাজকীয় গমন থাকলেও আগমনী সঙ্গীত  বাজেনা সহজে। বৈঠকখানায় তেমন ব্যস্ততা নেই, বোকাবাক্সের দাপটে সন্ধ্যার উঠোনে অদম্য বালকবালিকাদের দৌড়ঝাঁপ নেই।

সদ্য জন্ম নেয়া ইট পাথরের দালানের পাশেই বাঁশঝাড় ঘুমোয়। পাশাপাশি সহবস্থান, অথচ কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সন্ধ্যার ইশতেহারে লেখা নেই প্রেমিক কেনো হয়ে যায় প্রতারক। আমি তোমাকে এমন মায়াহরা সন্ধ্যারাতে চিনতে পারিনা, এমন কী নিজেকেও!

Thursday 17 November 2016

বাউল

বাউল
------ ইমেল নাঈম
 
বাউল আগ্রাবাদ এসো তোমায় পোস্টমর্টেম করবো,
তোমাতে নাকি পাওয়া গেছে দূষিত রক্তের ভ্রূণ।
তোমার বাউলিয়ানা শৈল্পিক বুকে ছোবল মারার
সুদৃঢ় প্রত্যয়ে আশেপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে একদল
ঈর্ষাপরায়ণ সাপুড়ে, বন্দী রেখেছে তোমার প্রিয় চড়ুই।

তুমি জানোনা তোমার প্রিয় রক্তজবার তিনটি পাপড়ি
অনাদরে ঝরে পড়েছে সেই কবে, ইদানীং অনেকে
সাহিত্য চর্চা করে তোমার রক্তজবাকে ভেবে আর
ঢাকঢোল পিটিয়ে নিজেরা চুলকে নেয় নিজেদের পিঠ।

বাউল ঈশ্বরের দোহাই কখনো কবি হয়ো না, কিছু কবি
এখনও গিরগিটির বেশে আশেপাশে ঘোরাফেরা করে,
সুযোগ পেলেই বেরোয় নিজের রূপ পাল্টে যে কোন
সময় স্বার্থ হাসিলের মনোবাসনায় আত্মস্বার্থ রক্ষার্থে।

বাউল সাবধানে থেকো। দেখে শুনে আগাও সামনের পথ।
চিরকালীন অকবিরা বড় বেশি মিথ্যুক আর প্রতারক
তাদের এই জালের বিস্তৃতি ভাঙতে জানে প্রকৃত সাধক।

Wednesday 16 November 2016

নভেম্বরের কবিতা ৭

কৈশোর কথন
— ইমেল নাঈম

টিকটিক ছুটে চলা দেয়াল ঘড়ি, তারপাশেই ধুলোজমা
পোর্ট্রেট, বয়সের নিরিখে বদলে যাওয়া জীবনের অংক
কতটা প্রান্ত ছুঁয়ে নেমে আসে ভোর, শৈশবের কাটাকুটি
খেলা খেলতে গিয়ে ইশকুল পালিয়ে খেলার মাঠ।
প্রথম তামাকের স্বাদ, দমবন্ধ করা সুন্দরী সহপাঠীকে
দুরুদুরু হাতে লেখা প্রথম ব্যর্থ চিরকুট, অজস্র কবিতা
শুধুমাত্র যত্নের অভাবে হারিয়ে গেলো বুক হতে

নৌকো ডুবির মতো ডুবে যাই জোয়ারভাটার হিসেবে
খুব গভীরতা মাপতে বসে শুনশান নীরবতা জমে গেছে
কবিতার খাতায় অনেক না বলা কথা রেখে দিয়েছি,
কাউকে বলা হয়নি, সহজ আর কঠিনের হিসাব বুঝিনি
কৈশোরের ডুবে থাকা তিনগোয়েন্দা সিরিজের ফাঁকে
অন্য নামও বেড়াতে আসে অলস বিকালে চা'র কাপে

অনাবাদী স্বপ্নরা হোঁচট খেয়ে বিদায় নেয়, পাঠ্যবইয়ের
আড়ালে হুমায়ুন আহমেদ'র ফ্যান্টাসি, ডিজ্যুস প্রজন্ম
জন্ম নেয়নি তখনও। সারাদিন হৈহৈ করে বেড়ানো
সময়ের বেড়াজালে আটকে গেছিলো মন ফড়িং।
ঘরের সুবোধ বালক বের হলেই অদম্য এক দুষ্টু ছানা
হুড়মুড় করে ঢুকে যায় বেয়াড়া বাতাস আজ বিকালে।

ব্যাকবেঞ্চার ছাত্র, বেঞ্চে লিখা বর্ণমালার যোগ অংক
কলম খেলার সময়, নানান রঙয়ের বর্ণের স্টিকার
ইট পাথরের সভ্যতায় বিক্রি করে দিয়েছে সমাজ
উঁচু দালানের সারি, বিশুদ্ধ বাতাসের ক্রমাগত ঘাটতি
তবুও ছুটে চলেছি সময়ের টানে নাবিকের বেশে।

সুখে থাকো আমার অদম্য কৈশোর স্মৃতির কোলাজে।

Monday 14 November 2016

নভেম্বরের কবিতা ৬

নভেম্বরের শোকগাথা
— ইমেল নাঈম

শান্তির বিউগল বাজেনা সিমেন্ট সভ্যতার বিজ্ঞাপনে
মাঝেমাঝে অতিথি এনে জন্ম দিয়ে দেয় ফোক উৎসব
আভিজাত্যের মোড়কে রেখে আড্ডামুখর থাকে নগরী
এমন চাঁদনী রাতে প্রেমিকা কোরাস গাইছে আপন মনে

সাঁওতালি চোখের আকাশ কেমন? ছাদ নেই, হা করা
চাঁদের আলো, নির্ভেজাল চাহনিতে কোনো গোপনীয়
কথা লিপিবদ্ধ থাকেনা। প্রহসন হিসেবে ত্রাণের মাল
আসে তাদের কাছে। জমি হারিয়ে শুকনো খাবার
তাও ফিরে যায় সরকারের নির্লজ্জ কোষাগারে,

চাঁদনী রাতে আমার খুব একটা প্রেম পায়না, বেকার
জীবন — শূন্যতায় ভরা এক গ্লাস বিষণ্ণতা পান করি
আমার কবিতারাও দিনদিন প্রেমহীন হয়ে যায়
চাঁদ তার রূপে আমাকে মোহিত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ
আমি ভাবতে বসি হেমন্তকালীন অনাদরের গল্প,

ব্যক্তিগত লাভ লোকসানের হিসাব অনেক হলো
এরচেয়ে দেখি আকাশকে ছাদ করা মানুষ জীবন
কোনো মানে নেই, আক্ষরিক অর্থে আটকে গেছি
চার বর্ণের গালিময় জীবনের চোরাপথে। আকাশে
চাঁদ ওঠে, আবার ডুবেও যায়... গৃহহীন মানুষ কী
চাঁদের জ্যোৎস্নায় ভেসে যেতে শিখেছে এই দুর্দিনে!

Sunday 13 November 2016

নভেম্বরের কবিতা ৫

নভেম্বরের কবিতা ৫
— ইমেল নাঈম

একবার ভাবুন, জিজ্ঞাসা আর ধমকের পার্থক্য
আক্রমণ আর বিনয়কে একসাথে গুলিয়ে খাওয়ান
সাধারণের মাঝে। ঢুকিয়ে দিন চেতনার ট্যাবলেট।
না না, মোটেও ব্যতিব্যস্ত হবেন না, সাহিত্যের সব
পদক আপনার ঘরে চলে আসবে যেকোনো পন্থায়

আপনি থাকতে অন্যকেউ পাবে পুরষ্কার, এও সম্ভব!
আপনি তো ইজারা দিচ্ছেন সাহিত্যের সব অলিগলি
পাইক পেয়াদা নিয়ে সাজাচ্ছেন অন্ধকার আসর,
পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে নবীশ, আপনি পুলকিত হচ্ছেন।
এদের রেখে দিবেন ছোলা লুচি খাইয়ে, বিজ্ঞাপনের
খরচ একেবারে কমে ছোলা লুচিতেই নেমে আসবে।

প্রত্যাশায় না মিটলে মুখবইয়ে রঙচঙে বিজ্ঞাপন দিন
শেষ ভরসা হিসেবেও মিলে যেতে পারে পুরষ্কার
নিন্দুকেরা অনেক কথাই ছড়াবেন, এমন হাবভাবে
দুই একটা বেনসন জ্বালিয়ে মনোযোগী হতে পারেন
ডাকবাক্সে কোনো সুন্দরী রমণীর কবিতার দিকে,
না পড়েই বলতে পারেন পরিচর্যার লোভনীয় গল্প....

তারপর মোবাইল নাম্বার আদানপ্রদান, পরিচর্যাকেন্দ্র
হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিন অন্ধকার গলির চোরাবালি
আশেপাশে সবাই বোঝে অথচ কেউ প্রশ্ন করেনা,
প্রশ্ন করা পাপ। এভাবে চলছে অদ্ভুতুড়ে পাঠদান পর্ব।

দৈনিক পত্রিকার সাহিত্যপাতার সম্পাদকের সাথে
দৈনন্দিন আলাপন হোক — কারণে বা অকারণে
পুরষ্কার আসতে থাকবে ঘরে, পাঠক চেনে আলো
আলেয়া চিনে নেয় নবীন কোনো কবি, মুখ ফুটে
বলতে ভুলে যায়, একসময় এতেই অভ্যস্ত হয় মুখ

এভাবে আপনি হয়ে যান জীবাশ্ম কবির বিজ্ঞাপন!

Friday 11 November 2016

নভেম্বরের কবিতা ৪

ফেরিওয়ালা
— ইমেল নাঈম

অন্ধ ও বধিরের মাঝে কোনো প্রান্তিক স্পর্শ নেই
শখের বিলেতি কুকুরের মতো গায়ে গা ঘেঁষে
থাকে কেউকেউ বাধ্যগত মানুষের আবরণে

উপড়ে পড়া সময়ের বাতাবরণ শেষে
কিশোরীর মুঠোফোনে ভেসে বেড়ায় নাম
নিষিদ্ধ বারতা পাঠিয়ে যে যুবক দাঁড়িয়ে
তার চোখে মায়াবী প্রতারক লুকোনো

ঈর্ষাকে যত্ন নিয়ে পুষতে থাকো বুকের ঘরে 
কিছুটা অভিশাপ বৃত্তাকার পথে বাঁচুক
আক্ষেপের ঘরে নামতা পাঠের শেষে যে
হারিয়েছে কালো আংটি — গাও তার মুক্তির গান।

দাবী নেই খুব একটা, শৈশবের নীতিবাক্যরা
এখনো মদিরায় সুর তোলে, মাদল বাজিয়ে
নাচে এক পাহাড়ি সুন্দরী — চেয়ে দেখো তার 
চোখে প্রেম জিনিসটি ফুরিয়েছে অনেক আগেই।

আমি ফেরি করে বেড়াই পাহাড়ি সুন্দরীর ঘৃণা...

নভেম্বরের কবিতা ৪

নভেম্বরের কবিতা ৪

— ইমেল নাঈম


অন্ধ ও বধিরের মাঝে কোনো প্রান্তিক স্পর্শ নেই

শখের বিলেতি কুকুরের মতো গায়ে গা ঘেঁষে

থাকে কেউকেউ বাধ্যগত মানুষের আবরণে


উপড়ে পড়া সময়ের বাতাবরণ শেষে

কিশোরীর মুঠোফোনে ভেসে বেড়ায় নাম

নিষিদ্ধ বারতা পাঠিয়ে যে যুবক দাঁড়িয়ে

তার চোখে মায়াবী প্রতারক লুকোনো


ঈর্ষাকে যত্ন নিয়ে পুষতে থাকো বুকের ঘরে 

কিছুটা অভিশাপ বৃত্তাকার পথে বাঁচুক

আক্ষেপের ঘরে নামতা পাঠের শেষে যে

হারিয়েছে কালো আংটি — গাও তার মুক্তির গান।


দাবী নেই খুব একটা, শৈশবের নীতিবাক্যরা

এখনো মদিরায় সুর তোলে, মাদল বাজিয়ে

নাচে এক পাহাড়ি সুন্দরী — চেয়ে দেখো তার 

চোখে প্রেম জিনিসটি ফুরিয়েছে অনেক আগেই।


আমি ফেরি করে বেড়াই পাহাড়ি সুন্দরীর ঘৃণা...

Wednesday 9 November 2016

নভেম্বরের কবিতা ৩

নভেম্বরের কবিতা ৩
ইমেল নাঈম

বিষণ্ণতায় লেখা নীলচে খাম লাল হয়ে যায় শেষে
কোথায় লেখা ললাটলিখন, দেখিনা তার রেশ
প্রান্ত বদলে যাওয়া মুখ, মুখোশ খুললেই অচেনা
সাজঘরের মেকাপ বক্স, উড়তে থাকা ঝাড়বাতি...
সাঁওতালি প্রেমিকা, তুমি তো পড়তে শেখনি অ আ

পুড়তে দেখেছো নিজ বাস, ঈশ্বরকে ভাবো দানব
আমরাও মুখোশকে মুখ ভেবে মণ্ডপ সাজিয়েছি
দূর্বাঘাস আর শিউলিতলায় ঝরে যাওয়া ফুলেদের
শিল্প ভেবে কবিতা লিখে কাটাচ্ছিলাম হেমন্তকাল

তোমার জন্য কেউ লিখে নি কবিতা, সংখ্যা তত্ত্বে
তোমাকে তালিকাভুক্ত করতে পারেনি গণিতবিদ
আমি তোমার ভাষা বুঝিনা, চোখটাই পড়তে পারি

তুমি লজ্জাবতী ফুল স্পর্শ পেলেই শুকিয়ে যাও
আগুনের তীব্র আঁচে মরে গেছো হয়তো, বাঁচলে
কার কীইবা যায় আসে, মরলেও বা কার চোখের
জল ঝরতো তোমার জন্য! আমিও অনেক দূরের
মানচিত্রের বুকে শুধুই গা বাঁচিয়ে চলতে শিখছি

তোমাকে উৎসর্গিত কোনো কবিতা নেই কারো
সবাই খুব ব্যস্ত। আইন আদালত বোঝো না তুমি।
অধিকারহীন প্রাণ বলে শিখোনি প্রতিবাদী কণ্ঠ
কবিতার খাতায় আজ অন্তত ভুল শব্দ চয়নে
অবহেলিত তোমায় ভেবে শিরোনাম জন্ম নিক।

Tuesday 8 November 2016

নভেম্বরের কবিতা ২

বিচ্ছেদ নগরীর কবিতা
ইমেল নাঈম

একটা অহেতুক গল্প হা করে তাকিয়ে থাকে
ভেসে আসে দামী মুঠোফোনে উড়ে আসা
কিছু সংলাপ, হাপিত্যেশ বাড়ানো আগন্তুক
গল্প সমগ্রের পরিণাম ভাবতেই নামে সন্ধ্যা

শীত নামলে পানাম নগরে যেতে ইচ্ছে করে,
ওখানে কেউ নেই, তুমিও ছিলে না কখনো
কবিতার ডায়রির পাতাগুলো খালি থাকে
কেনো জানি লিখা হয় না, নভেম্বরের বৃষ্টিরা
থেমে গেলেও একটা অনুরাগ থেকে যায়
চোখে ভাসে প্রবীণ সাধকের সাধনার দৃশ্য

সব দেখাই সত্য হয় না, যেমন হয়নি অতীত
ভবিষ্যৎ বলতে শিখেছি এক নারীর সান্নিধ্যে...
ভুল সময় কাটিয়ে বুঝেছি, ডিসেম্বর'র আগে
শেষ জের টেনে দিয়ে মিলিয়ে দিতে হবে
ব্যালেন্স শিটের সকল হিসাব, মুদ্রাস্ফীতির
সাথে সাথে কমে যায় নদীর জোয়ারভাটা

সম্পর্কহীন সবকিছু, তবুও কাকতালীয় মিল...
অস্তিত্বহীন, লারেলাপ্পার মতো বারবার
আঙুল ছুঁয়ে নেমে যায় শেষ বিন্দুতে, বেশি
টানাহেঁচড়া করলে ছিটকে যায় অনেক দূরে

আমি তখন কবিতা পাঠ করি বিচ্ছেদ নগরীর।

Saturday 5 November 2016

নভেম্বরের কবিতা ১

নভেম্বরের কবিতা ১
ইমেল নাঈম

অনেক কান্নার কোনো মানে থাকে না
কিছু প্রশ্নের কোনো ব্যাখ্যা নেই জমা
রাতের আঁধারে ঢেকে যায় পুরো মানচিত্র
স্বপ্ন দেখার জন্য অস্থির ফজরের আকাশ

রাতের আকাশে কারা আলো জ্বালায়
আবার কারা যেন পুড়িয়ে দেয় ঘরদোর
রাজনীতি তাকে ঘেন্না করিনা, দেখো
সেই পুড়িয়ে ফেলছে আমার পৃথিবী,
ব্যাখ্যা খুঁজিনি, শুধু মাথার ঠাঁইটুকুন...

দুবেলা আহার, এরবেশি স্বপ্ন দেখেনা
চোখের সামনে পুড়ে যায় নিজ পরিচয়
কীইবা থাকে পুড়ে গেলে? মানবতা?
তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয় স্বার্থের ইয়াবা।

পবিত্র কিতাব খুলে দেখো, কোথায় তুমি?
হঠাৎ হঠাৎ সরীসৃপের দেখা মিলে যায়...
মানুষ হতে কশেরুকা থাকতে হয় জানি
কবির কলম নীরব, মরচেধরা কলমে
কান্না আঁকার জন্য নেই কোনো শিল্পী

বিনোদন দাতাদের অল্পতেই মেলে বাড়ী
পুড়ে যাওয়া ঘরের হিসাব কেইবা জানি
ধর্ম দিয়ে কীইবা হয় যদি মানুষই না থাকে!

এতকিছুতেও গল্পটা অপরিবর্তিত থাকে
আলোর দিকে তাকিয়ে নিঃসীম অন্ধকার।

Friday 4 November 2016

s

পৃথিবীটা আজ খুব অসুস্থ। হানাহানিতে ভরে গেছে মাটি, সহিষ্ণুতার জায়গায় ধান্ধা, ধৈর্যশক্তি নেই হয়ে গেছে। মানুষ আগে হুজুগে লাফাতো, আর এখন লাফানোর জন্য কোনো হুজুগই লাগেনা। ধর্ম পালনে নিয়মিত নয়, অথচ ধর্ম রক্ষায় কি প্রচেষ্টা। হাসিও পায়, কষ্টও লাগে।

Tuesday 1 November 2016

সত্তা

সত্তা
ইমেল নাঈম

পেঁজা তুলোর মতো উড়ছি সারাদিন— গন্তব্য জানিনা,
বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এক অদৃশ্য অপরাধী
প্রান্তিক চোখে বুনে রাখে গোপন ব্যথা আর জিঘাংসা

বিচারক গোপনে সারছেন বিচারকার্য, অদৃশ্যকালিতে
লিখলেন দৈনন্দিন জীবনের অপরাধের জটিল হিসাব
আমি অন্ধ কিন্তু জগত দেখি স্পষ্ট চোখে। অন্তরাত্মা
ঘুমিয়ে অনেকদিন। ডাকিনি কখনো, আবার ডেকেও
ভাঙাতে পারিনি জীবনের গানে আর গল্পের মোহনায়
পাপ ঢাকতে আয়োজন করি লোক দেখানো উৎসব
পরিনামে বাড়তে থাকে লৌকিকতা, নির্বাক দূরত্ব।

প্রেম নিয়ে প্রত্যাশার পারদ কমে আজ শূন্যের কোঠায়
ভালবাসতে গিয়ে আবিষ্কার করি স্বার্থপর এক মুখ
গির্জার যিশু ছলছলে চোখে তাকিয়ে দেখে মানুষ
আমার চোখেমুখে জ্বলজ্বল করে লোভ আর লালসা
আমি হিসাব রাখিনি প্রেমের অংকের, প্রতিদান নেই
বলেই  হয়তো একমুখো প্রেম আজ স্বর্গ নরকে এসে
কড়া নেড়ে জানাচ্ছে প্রেম সরে গেছে অনেক দূরে।

হায় মুহাম্মদ, কোথায় এতো প্রেম, যেখানে লালসা
গিলে খাচ্ছে আমাকে, পৃথিবীতে কেইবা আছে বাকী
যে আমাকে শেখাবে ভালবাসার মন্ত্র, আমি ঈশ্বর
থেকে সরে গেছি অনেক দূরে, যেখানে নিজের ছায়া
ব্যতীত অন্য কোনো সত্তাকে খুঁজে পাওয়া যায়না।