Saturday 31 March 2018

হিসেব-নিকেশ

হিসেব-নিকেশ
ইমেল নাঈম

পেরিয়ে যাচ্ছি আদিকালের নির্যাস, বিবর্ণ পৃথিবীর ঋণ…
অবান্তর প্রশ্নবাণ, আহত করে যায় প্রান্তিক অবয়বে,
নিজেকে আবিষ্কারের নেশায় মুখে বেঁধেছি মুখোশ
মূর্ছনা সঙ্গীতও ফিকে হতে হতে মিশে যায় ধুলোতে

কোথায় লিখেছ ভাগ্যলিখন? কেইবা খেলছে লুকোচুরি?
প্রশ্নবোধকেরা নিরন্তর ঘুরে যায় তাদের আদিম কক্ষপথ
মুখের মলিনতা মুছে যায় নিরুদ্দেশে, প্রান্তিক অভিমান
চেপে রেখেছি শুকনো বইয়ের জীর্ণশীর্ণ মলাটের ভাজে

বিষুবরেখার উষ্ণতায় বাজে বনেদী পাখির নিঃসঙ্গতা
হাতের রেখার দাগ মুছে যায়, করতলজুড়ে অনাদর।
আগুনের হল্কার মত বাড়ন্ত ডবকা শরীরের তেজটি
চোখে লাগে প্রচণ্ড – লোডশেডিংয়ের কল্যাণে শুধুই
নির্বাক জীবনের খেলাঘর। মায়া জন্মানো অভিমান।

অভিনয় জীবন কেবলই সুসজ্জিত চিত্রনাট্যের মহড়া...
রোজকার আয়োজনে বুভুক্ষা আর হাহাকার থাকে
বাকিটুকুন চলনশীল, কাজটুকু সারলেই গোরস্থানে
এসে থেমে যায়, শুরু হয় প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব।

Friday 30 March 2018

সিম্ফনি অব ডেথ

সিম্ফনি অব ডেথ
ইমেল নাঈম

একদিন তো মরে যাবো, তার আগে প্রাক্তন প্রেমিকার বাড়ীতে পুঁতে দিয়ে আসব কৃষ্ণচূড়া গাছ। শুনেছি পশ্চিমের ওই দেশে সারাবছরই তীব্র শীতকাল, তাই যাবার সময় নিয়ে যাবো গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা। জানি, বন্য পাখি পালন দণ্ডনীয় অপরাধ। তবুও, তাকে পিউকাঁহা গান শোনাবো বলে কিনব একটা খাঁচা।

রোদ্দুরের বুকে শীত নেই, মাখামাখি নেই। নির্জীবতা গ্রাস করেছে তার বুক। ক্যালকুলেটরে কেবলই হিসেব করে, ই.আর.পি সফটওয়্যারে মেলায় ডেবিট আর ক্রেডিট। মরে গেছে সুপ্তবাসনা। নাগরিক ব্যঞ্জনায় বিশুদ্ধ অক্সিজেন অচেনা। দুষিত শীশায় ঢেকেছে নগরের পাললিক বন্ধন।

তার কাছে যাবার আগে চিঠি লিখবো। লাল ডাকবাক্সে ফেলে দিবো, নাকে তেল লাগিয়ে ঘুমন্ত ডাকবিভাগ চিঠি দেখে অবাক হবে? এই প্রযুক্তির দিনে কেইবা চিঠি পাঠায় বিভুঁইয়ে...

শুনেছি ভালবাসা পেলে অসাধ্যসাধন হয়। সেই বিশ্বাসে একদিন কৃষ্ণচূড়া গাছটিতে ফুটবে প্রথম ফুল। আনমনা কফিকাপ উড়িয়ে দিবে তোমার বিষণ্ণতা। ততদিনে শরীরে বার্ধক্য ছুঁয়ে যাবে। তিনপেয়ে আমিও তোমার বাড়ীর সামনে পার্কের দিকে তাকিয়ে দেখে নিবো সুখের সময়।

একদিন তো মরে যাবো, তার আগে শীতের দেশে রেখে যাব পূর্বের প্রেমের উপাখ্যান, একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ।

Wednesday 28 March 2018

জানালা

জানালা
ইমেল নাঈম

জানালার ও'পাশটায় কেবলই অন্ধকার
নিঃসীমতার সঙ্গীত আর মনোরঞ্জনের শেষে
ফিরে গেছে যে যার ঘরে, বিমূর্ত প্রলোভন
আজও টোকা দেয় শূন্যতায়

তুমি খিল এঁটে রাখো, শোবার আগে
দেখে নিও সব ঠিকঠাক লাগিয়েছ তো,

তারাদের নক্ষত্রপথে শুধুই নিঃসঙ্গতা
আমি আকাশের শূন্যতা মাপতে বসেছি
হয়তো রঙপেন্সিল, খড়িমাটির বিন্যাসের
সহবস্থানটুকুই আঁকছ

খুলে ফেলেছি অর্গল, যাদু বাস্তবতার
মূর্ছনায় জমেছে ঘাম ক'ফোটা...
অবাঞ্ছিত অনুভব ফেরি করার সময়
ভুল করে টোকা দিতে পারি তোমার ঘরে
খিল এঁটে রাখো, পথ রুদ্ধ থাকুক

নচেৎ, জানালার অন্যপাশেও নামবে
ঘুটঘুটে অন্ধকার

Sunday 25 March 2018

সম্ভোগ

সম্ভোগ
ইমেল নাঈম

চুমুতে লেখা অনেকগুলো কবিতা আজও অপঠিত
অপরিণত আঙুলে কেবল খেলে যাচ্ছে তোমাকে নিয়ে
আবেশ আর স্পর্শ ঘামে অন্যরকম মানে লুকোনো
সিগারেটের ধোঁয়ায় উড়ছে কাল্পনিক চরিত্রের প্লট।

শরীরের তীব্রতা আজও জেগে ওঠে সুন্দরের শেষে
থেমে যাওয়ার আগ মুহূর্তে দপ করে ওঠা বহ্নিশিখা
চুমুগুলোকে অনুবাদ করে নিও, গালিবের সাথে…
জালাল উদ্দিন রুমিও প্রেম লিখেছেন সারাজীবন।

হিসেবের বারোয়ারি চিন্তা, নির্বাক কথোপকথনে
লিপিবদ্ধ শিহরণগুলো নীরবে হেসে ওঠে অকারণে
উত্তাপের শেষে নির্লিপ্ততা আঁকে পরিণত মনকে।

কোথায় নেই সম্ভোগ? কেবলই কী প্রতীক্ষার প্রহর?
সুখের আবেশ মুছে জেগে ওঠে নিঃসঙ্গ দাবার ঘুটি
ওল্ড মঙ্কের বোতলটিও শূন্য হয় দেখতে দেখতে
বন্ধ চোখে দেখি তুমি আঁকছো নগ্নতার পোর্ট্রেট

তোমাকেও সম্ভোগ শেষে নগ্ন এক ঈশ্বর মনে হয়...

Monday 19 March 2018

বৈধ…অবৈধ

বৈধ…অবৈধ
ইমেল নাঈম

কথোপকথন শেষ। মায়াজাল ছিন্ন করে আসা তারার বাতি। হিল্লোলে মুছে গেছে সন্ধ্যাকালীন মুর্ছনা। গল্পের ভাজে লেখা একাকীত্ব তার ছোঁয়া রেখে গেছে। ইজেলে আঁকা অশরীরী চুমুগুলো এখনো গায় কোরাস। পশ্চিমা আকাশে উড়ে আসে সা রে গা মা পা ধা নি সা। প্রকৃতি আর মন মিলেমিশে একাকার।

প্রশ্ন করতে শিখিনি। চোখ দেখে ভাবতে বসিনি, শীতের শেষে কেনো পাতারা ঝরে যায়, ব্যর্থ প্রেমের মতো। চলে যাবার পরে শরীরের দাগগুলো মন বয়ে চলে আরেকটা সম্পর্কের আদিবিন্দু পর্যন্ত। দিনের শেষে ক্লান্তি মুছে যায়।

আহ, প্রথম প্রেমের অপ্রাপ্তবয়স্ক চুমু এঁকে নিয়েছিলো জীবনের আয়োজন। হঠাৎ বড়ো হয়ে যাওয়ার মানে বলেছিলো সেই চুম্বন। লাজুকলতা লজ্জা ভেঙে তাকালো ঈশানকোণে। বাতাসের ফাঁকে স্বরলিপিগুলো বিমূর্ত সঙ্গীত হয়ে বাঁচতে শিখেছে।

ফুল ফোটার সময়ে ইঁচড়েপাকা হপবার আস্বাদ আজো আছে ঠোঁটে লেগে। বিমূর্ত মূর্ছনা — আবেশেটুকু ধরে রেখে চলে গেছে। এরপরে অনেক বসন্ত… হরেক অভিজ্ঞতা…বৈধ আর অবৈধ বলে কিচ্ছুটি হয়না। সব প্রেমের ট্যাটু আঁকে বুকে। বুক ফুঁড়ে স্থায়ী আবাস গড়তে হারিয়ে যায় দূরে। শরীরে কিছু চিহ্ন থাকে, মাথায় কিছু অনুরণন থাকে। মুখস্থ জীবনের পাঠে কতটা ক্ষতদাগের প্রলেপ দিয়েছি — মনে নেই, রাখিনি ভুলের হিসেব।

Saturday 17 March 2018

রোজনামচা

রোজনামচা
ইমেল নাঈম

বিষণ্ণণতার আলিঙ্গনে কোনও মুহূর্ত নেই
খাতার বুকে জমাটবদ্ধ কিছু ঋণ, আক্রমণাত্মক
শব্দের সমাবেশ ফেলে পালিয়ে যাচ্ছি দূরে।

থেমে যাওয়ার নিয়মকানুনগুলো ছিঁড়ে ফেলেছি
পাপপুণ্যের মায়াজালে — “কে আঁকে অন্য ছবি?”
বোঝা আর দুর্বোধ্যতার রেশটুকু নিয়ে সজাগ,
মিছিলের দৈর্ঘ্য দেখে ক্লান্ত হচ্ছি বারবার।

নীরবতা ভাষা শেখায় — অজস্র কথোপকথন —
যারা প্রাপকহীনতায় ভুগছে বহু সময়...
তাদেরকেও মুক্ত করে দিয়েছি গত বসন্তে

মেঘলা আকাশের নিচে পায়ের মানচিত্রে ভর করে
অকারণেই পাড়ি দিচ্ছি এই ঘর থেকে ওই ঘর,
তাদের বেদনা বিন্দু লিখেনি কোনো জ্যামিতিবিদ

অংকের খাতায় কেবলই মলিনতা, হাহাকার।
আহ্নিকগতির ফাঁকে পরাবাস্তব মূর্ছনা আজো
উঁকি দেয় ব্যর্থতা মোড়ানো রোজনামচায়।

Tuesday 13 March 2018

সঙ্গীতায়োজন

সঙ্গীতায়োজন
ইমেল নাঈম
(উৎসর্গঃ মেঘ অদিতি)


সঙ্গীতায়োজনের শেষে বিষণ্ণ সন্ধ্যা নেমে আসে। দূরে কোথাও বাঁশীর সুর। চোখের সামনে সখের পিয়ানো। হারমোনিকা জুড়ে নিস্তব্ধ করা সময়। কোণায় পড়ে থাকা ধুলো জমা সেতার। কারও কাছে কোনও ঋণ নেই।

জি-কর্ড ফেলে চলে যাচ্ছি সীমারেখার বাইরে। ফিউশনে মেতে উঠেছে সৌখিন বাজরিগার, জাপানিজ ক্রেস্টেড। একাকীত্বের শ্লোগানে মুখরিত চারপাশ। কে বাজায় বাঁশী? ধুলোর আস্তরণ মুছে দাঁড়ায়না চৈতালি অবকাশ।

কথা ছিলো, সেতার আর পিয়ানোর ফিকশন হবে আজ। দূরবর্তী মাস্তুলের আলো দেখে সকাল নামাবো স্বল্পকালীন মায়ায়। অথচ চারপাশে কী অদ্ভুত নিস্তব্ধতা! আলো নিভে গেছে, ক্রমশ বাড়ছে বাঁশীর সুর।

দৃশ্যগুলো দূরে কোথায় ভেসে যায়? থেমে গেছে হারমোনিকা। যদিও সেতারের টুংটাং, পিয়ানো আর বাঁশীর সুরের ব্যঞ্জনাময় আয়োজনের ফাঁকে নির্বাক স্থিরচিত্র লেখা হয়ে গেছে, অলক্ষ্যে — অলসতায়।

Sunday 11 March 2018

বড়োমানুষদের প্রতি ভালবাসা

বড়োমানুষদের প্রতি ভালবাসা
ইমেল নাঈম

আপনার সাথে আমার কখনো দেখা হয়নি। মুখবইয়ের প্রচারণায় কোনো ছবিও নেই। হুজুগের বিস্ফোরণ হিসেবে কোনো সেলফিও নেই। আপনাকে অনেক ভালবাসি। গোপনে মনের ঘরে বিমূর্ত অবস্থান আপনার। ভাষায় প্রকাশিত – বিনম্র কিছু শিহরণ।

আপনি আপনার থেকে দূরেই থাকতে চাই। আপনি ঈশ্বর হতে পারেন কবিতা আর গল্পের সীমারেখায়। কবিতাযাপনে আপনি হাঁটতে পারেন যাদুপরাবাস্তবতায়, হাঁটাতেও পারেন। শব্দশৈলীতে আপনি গড়ে তুলেছেন অনন্য স্থান। হিমালয় ভ্রমণও নস্যি আপনার গদ্যের সাবলীলতার কাছে।

আপনার সাথে আমার অজস্র মুহূর্ত আছে। কখনও প্রকাশ করিনা সেগুলো। আপনার এসব জানবার কথাও নয়। বস্তুত আমাদের দেখাই হয়নি আজও। কখনোই হবেনা হয়তো।

এই কথাগুলো শুনে ভাবনায় পড়ে যেতেও পারেন। লেখা পড়ে ভাবতে পারেন, কেন এই দূরত্বযাপন। উত্তরটাও দিয়ে দিই, শিল্প জগতে বড়দের থেকে দূরে থাকতে হয়। কাছে গেলে ভেঙে পড়ে আয়নার ইমেজ, ভাবমূর্তি।

পুরো গল্পে একবারও খেয়াল করলেন না এখানে অজস্র আপনির সৃষ্টিকে নিয়ে নীরবে খেলে যাচ্ছে একটা আমি। এটুকুই সারাজীববের প্রাপ্তির খাতায় লিখে রাখুন প্রিয়।

Friday 9 March 2018

প্রবহমান

প্রবহমান
ইমেল নাঈম

থেমে যাওয়ার আগে, পিছনে তাকাও বারবার 
মূর্ছনা থামবার পরেও থেকে যায় তার রেশ
ভায়োলিনের সুর মলিন হয় পূবালী বাতাসে
অর্কেস্ট্রায় বিষণ্ণতা নামে লিপিবদ্ধ হাহাকারে…

নিজেকে গিলে ফেলেছ মেঘবদ্ধ সমাজের কাছে
বৃষ্টি বাদলে, ঋণপত্র রাখা মলিন ফুটপাথে
দিনে দুপুরে নীরবতা আঁকছে পরিযায়ী দুঃখ,
ম্লান সময়ের ক্যানভাসে ভাসমান ক্ষতচিহ্ন।

দিনের হিসেব বন্ধ হয় কোজাগরী রাতে – ভ্রমে।
হারানো মিছিলে মৌন মূর্ছনাও ভাসে নিরন্তর
ক্ষতচিহ্ন জেগে ওঠে বামুনের যাদুর কাঠিতে;

পাবার হিসেব চুকলে রাতটিও হয় মাতাল।
একই বৃত্তে ঘোরাফেরায় ব্যস্ত নিষ্ক্রিয় মগজ
খাতায় প্রলাপ, বিভ্রাট, ভুল বানানে মাখামাখি

থেমে যাক সঙ্গীত, লেখা হোক দুঃখের ভাগাভাগি
প্রবহমান জীবন –  দিনান্তে বাজে বিচ্ছদ – সুরে…

Sunday 4 March 2018

জন্মদিন

জন্মদিন
ইমেল নাঈম

উড়ে যায় পাখির পালক, পরিযায়ী থাকে মেঘের ঋণ।
থামো, বলতে না বলতে বিমূর্ত আয়োজনে ফাঁকগলে
হারিয়ে যাওয়া মুহূর্ত কেড়েছে নির্ঘুম গাছের শোকলিপি।

শূন্যতার আয়োজন ঊনমানুষের, আঁকিবুঁকি খেলতে
নির্ভার পাঠ উন্মোচনের আয়োজনে ঝুলছে মোমবাতি
ঘড়ির কাটা ঘুরছে ঘণ্টায়... মিনিটে... সেকেন্ডে...

খুলে রাখা জামার ময়লাধরা আস্তিনে লুকনো সম্ভাষণ,
রঙবেরঙয়ের বিস্কুট আর চানাচুর ভাজা আলসে
সময়ের বিজ্ঞাপন দিয়ে চলেছে দূরবর্তী মাস্তুলের দিকে
হারিয়ে যাচ্ছে রোজকার দিনের ব্যস্ত আয়োজনগুলো

নৃত্যশিল্পীর মতো নিপুণ আঙুলের কারুকার্যে ভাসছে
কলার সূক্ষ্মতর বহিঃপ্রকাশ, হঠাৎ করে থমকে যাবে
ভাসমান সাদাকালো পোর্ট্রেট দেয়ালজুড়ে কথা বলে
থামবে কেক, মোমবাতির ব্যক্তিগত উৎসব — নীরবে।