Wednesday 30 December 2015
স্বপ্ন
Monday 28 December 2015
কনফেশন
Sunday 27 December 2015
অন্ধকার ৬
Wednesday 23 December 2015
পোস্টমর্টেম
অন্ধকার গলিতে আটকে যেতে পারে আমাদের পরিচয়
দিন ফুরালে আমরা কেউ নই কারো। ছায়াবৃত্তে অবিশ্বাস
লুকিয়ে সারি দৈনন্দিন নৈশভোজ, তৃপ্তির ঢেঁকুর গিলতে
বসে আবিষ্কার করি খুব অচেনা নিজেকে, আয়নার চোখে
রাতের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতির নিভু নিভু আলোকচ্ছটা
মুছে দিলে পুরোটা জুড়ে শুধু বাকি থাকে নিঃসীম অন্ধকার
এরপর অদ্ভুত চিন্তার পসরা সাজিয়ে গল্পের বিন্যাসে
প্রার্থনায় ডেকে যাওয়া নাম, ঢেকে যাওয়া নামের মিছিলে
নিঃশব্দে হেঁটে চলা পথের বুকে শুভ্রতার পাঁচিলে হারিয়ে
ফেলার মৃদু ঝাঁকুনি টা বড্ড রহস্যময় এখনো কানে বাজে
বিছানায় দৌড়ে চলে নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ী, স্মৃতির কার্নিশে
কান পাতলে শুনি হৃদস্পন্দন, অনুভব করি প্রবাহিত
শিরা উপশিরা ভেদ করা রক্তকণাদের মুক্ত বিচরণে
উড়ে আসা ক্লেশ, ক্লেদহীন মাখামাখি সবাক চিত্রাঙ্কনের
পর অবশিষ্ট স্পন্দন মুছে যায়, জেগে থাকা চোখের ভিড়ে
অর্ধ অবচেতন মনের উঁকিঝুঁকি শেষে ক্লান্তির ভ্রমণে
কোথাও কোনো বৃত্ত নেই, নেই দীপ্ত শ্লোগান মুখর আজান।
Monday 21 December 2015
একটা সাদামাটা দিন
ব্যাখ্যাত অনেক প্রশ্নের জানতে গিয়ে হারিয়ে
গেলো জন্মের দাগ, যাত্রা পথে অনর্গল ভ্রম।
এই কম্পাসের কাটায়, মানচিত্রের বুক জুড়ে
অর্গলে যে কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত হয় অরণ্যের
সবটুকু আলিঙ্গন, তার কোনো সেবিকা নেই।
নেই নেই বলেই ঠায় দাঁড়িয়ে অসভ্য সমাজে
আঁধার ঘরে চব্বিশ ইঞ্চির একটা জানালা,
এনার্জি সেভিংস লাইট, সদ্য আগত শীত
কুয়াশার চাদরে আটকে যাওয়া লেপ ঘুম
অলসতার মোড়কে আটকে যায় বেড টি।
দিন ছোটো হতে হতে সূর্য সাক্ষাৎকার কঠিন
চোখ বন্ধ করে আরো কিছুটা সময় পার
আলসে দিনের মধ্যদুপুরে ঠিকই লুকিয়ে
সোনালি আকাশ মিষ্টি হাসিতে লুটিয়ে পড়ে
পশ্চিমে। পত্রিকার পাতা উল্টাই না আর...
সন্ধ্যাকালে বোকাবাক্সে চাটুকারিতার বিজ্ঞান
প্রতি ঘণ্টায় তোঁতা পাখির মুখস্ত বুলির
মতো রাশিফল পাঠিকা সহাস্য মুখে দিচ্ছেন
নিউজ বুলেটিন। পাড়ার দোকানে চা খেতে
বসে শোনা যায় অন্য লোকের মন্দ বিজ্ঞাপন।
সাদামাটা গল্পের সমাপ্তিতে ব্যক্তিগত প্রাপ্তিরা
অবহেলিত হতে থাকে খেয়ালে বেখেয়ালে,
ক্ষতরা ক্রমাগত বড় হলেই নাকি বিজয়ী হয়
একটা সাদামাটা দিন আমাকে এর চেয়ে
বেশি কিছু দিতে পারেনি কখনো, কোনোদিন।
Saturday 19 December 2015
জ্বর
তাপমাত্রা পরিবর্তন এখন অনুভূতির শূন্যতা
ছাড়া আর কোনো আবেদন রাখে না
এন্ড্রোয়েডের হেডফোনে ভেসে আসে ব্লুজ
গিটারের ছয় তারে যেন ভিন্ন সুরের খেলা
নিজের কাছে অচেনা হলে ফেরার পথটি
মিশে যায় অনেকগুলো পথের মাঝে,
নিজের বলে কোনো কিছুই থাকে না।
অধিকার, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি, ঈর্ষাবোধ, সখ্য
এসব শব্দগুলো হারিয়ে যেতে থাকে
অভিধান থেকে অনেকদূর...
ঠাণ্ডায় লেপ কাঁথার ভিড়ে ঋতু কাঁপানো
সময়টাও গ্রহণে অপারগ শরীরে দেখি
মানুষের উঁকিঝুঁকি, মুখবই জুড়ে ব্যক্তিগত
প্রচারণায় চোখে পড়ে দেখা সাক্ষাৎ,
ব্যক্তিগত সুখদুঃখ, অচেনা মানুষের ছবি
গেট টুগেদার কিংবা আড্ডামুখর মুখ
আমার হেড ফোনজুড়ে বাজতে থাকে
এক্সপেরিমেন্টাল রক,
প্রোগ্রেসিভ রক,
অল্টারনেটিভ রক,
ব্লুজ অ্যান্ড জ্যাজ রক,
আর টেবিলের এক কোণায় পরে আছে
উৎপলকুমার, একফ্লাক্স উষ্ণ পানি,
অর্ধেক খালি এক পাতা প্যারাসিটামল।
Saturday 12 December 2015
ডাক
প্রতিবিম্বের ঘোর কেটে আসে দুঃস্বপ্ন
আলটপকা সময়ের কার্নিশজুড়ে
স্মৃতিদের আনাগোনা। ঘাসেদের ছুঁয়ে
ঝরে পড়ে একগুচ্ছ অবন্তিকা ফুল ।
রাত বাড়লে নীরব হয় ল্যাম্প পোস্ট
হেমন্তের কুয়াশা আর শীতের ছায়া
মনহরা সবকিছু, তবুও শূন্যতা।
ভিতরটা শুনশান, বাতিটা জ্বলছে...
ল্যাপটপে খসখস শব্দে আত্মনিষ্ঠ
এক শিল্পী নীরবে গড়ে যান স্থাপত্য।
এশট্রে জুড়ে ছাই, তবুও বেনসন
পুড়ে যায় ক্রমাগত, কফির পেয়ালা
ধোঁয়া ছড়াতে ছড়াতে ক্লান্ত নয় আর
কবিতার পাতা ভরে গেলে বেজে ওঠে
ক্লেডারম্যান, ইউটিউবে মগ্নতার
শীর্ষচূড়া ছুঁলেই রাত গভীর ঘুমে
আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ক্লান্তির ভিড় ঠেলে
তখন কান পেতে একটি বার শোনো
মায়াবতী নারী কণ্ঠ ক্রমশ ডাকছে
দেবাশীষ... দেবাশীষ... দেবাশীষ বলে...
ইমেল নাঈম'র কবিতা ভাবনা
বোহেমিয়ান
প্রাচীন দেয়ালের সাথে সখ্য পাততে গিয়ে অনুভূত হয়
মহাশূন্যের নীরব এক এস্রাজ কে, আত্মনিমগ্ন স্রষ্টাকে।
পলেস্তারার খসে পড়া শব্দে, ধুলো ঝড়, খড়কুটো জীবন
ভুল উপত্যকা ভ্রমণে অবিরাম ছুটে বোহেমিয়ান প্রেম,
আরব্য রজনীর রূপকথা, নিঃসঙ্গ রাজকন্যার আহ্বান
প্রতিবন্ধকতার আড়ালে হাসা অদ্ভুত হাসি — তাকেও ভয়,
চিন্তার ভাজে সকালের রোদ্দুরে ঝরে বিরক্তির উপাখ্যান
জিপসি যাযাবর, পথের পাশে পাতানো আমার সংসার
তাঁবুর ভিতরে অবিরাম ঢুকছে রাতের শীতল হাওয়া
দিনের তপ্ত বালুকণায় উটের পিঠে খাদ্যের অন্বেষণ
সময় পেরোলে যাবো নতুন কোনো শহরে জীবনের খোঁজে
প্রতিবার ভালবাসার কাছে অবহেলিত হয়ে হেরে যাই
তবু… নিক্কণের শব্দ, অদেখা হাসি, ভাবায় আমার পথকে।
প্রকাশিতঃ বুক পকেট
অঙ্গার
নিয়ন বাতির শহর, নীরবতা ভাঙার শব্দ
ক্লান্ত মুখ ছুঁয়ে যায়, মলিন পাতার স্পর্শ ধ্বনি
মর্মর করে ভেঙে পড়ে, চেয়ে থাকে অবাক চোখ।
এই দৃষ্টিপাতে ক্লান্তি নেই, শুধু মৌন রক্তপাত
অশ্রুকণা ঝরে, যেটুকু ব্যথা সম্পূর্ণ নৈসর্গিক
অপেক্ষারত এক তুমুল ঝড়, অদৃশ্য ভাঙন
পৃথিবী শান্ত হলেও ঠিকই উত্তাপ থেকে যায়।
ভঙ্গুর শরীরে উঠে দাঁড়াই, অবাধ্য যোগফল
প্রাপ্তির নিরিখে হেরে যাওয়া এক নাবিক মাত্র
প্রশ্ন করো না আর, উপভোগ্য হোক এ’ পরাজয়
কঠিন বাস্তবতার মাধ্যমে, বিজেতার কণ্ঠে স্তুতি।
পুড়ে যাওয়া হৃদয়, রক্তপাতে ভাসমান দুঃখ
জ্বালিয়ে অঙ্গার করে, গোপন রাখে নি বাকী কিছু।
অন্ধ পথিক
বিভ্রান্ত সময়ের সাথে ছুটে চলা পথ
ঘূর্ণন গতিতে দৌড়ে চলেছে ঘড়ি
ঘণ্টার কাটা শোনা যায় বারবার।
ভাবুকতা নিয়েই পড়ে থাকে মন
গল্পের শেষে টিকে থাকে অস্থির রাত
পূর্ণ চাঁদ অবহেলায় হেসে ওঠে
শোনা যায় দূরের সাইরেন, গাড়ীর হর্ন
ট্রেনের কুঝিকঝিক সুর তোলা ধোঁয়া
রাস্তার ধারে পড়ে থাকে অচেনা ফুল
থাকে অব্যাখ্যাত কী সব যুক্তি বিদ্যা!
কোথায় আগুন? শান্ত সব অলিগলি…
অহর্নিশ ডাকাডাকি, রাতবিরাতে
অন্ধ পথিক পথ খুঁজে নিশীথ রাত্রিতে।
প্রকাশিতঃ বুক পকেট
Friday 11 December 2015
অন্ধকার ৫
Thursday 10 December 2015
কিছু মুখ
রূপকথার মিহি শিল্প, উপদেশের ভাজে
খোদাই করা কিছু মুখ, হাসি, দৃষ্টিকোণ।
সূর্যের আলোতে পরিণত হয় চিন্তাজগত
রূপকথামালা হারিয়ে যায়, শূন্য পূর্ণ হয়
অন্যকোনো রসালো প্রাপ্তবয়স্ক উপকরণে,
সেলুলয়েড ফিতার দিনগুলো বড্ড টানে।
এই শহরের নিষ্প্রাণ সাজ বৃষ্টি দিনে,
জমাটবদ্ধ পানি, পাতাদের নীরব ঝরে পড়া
ফাঁকা রাস্তা, কেউ রাখে না হাত কারো হাতে
আয়নার সামনে নিজেকে অচেনা লাগে
চোখের সামনে যা কিছু দেখি কঠিন বাস্তব
চাকচিক্যময়তা থমকে দিয়েছে চারপাশ
কিছু নিভৃতচারী মুখ, হাসি, ইশপের গল্প
সাজিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রকাশিতঃ বুক পকেট
মেহমান
দেখুন, এই সেই বিশাল মাঠ যেখানে বর্ষায়
কাদাজল লুটোপুটি খেতো, আমরা শীতের রাতে
আগুন জ্বালিয়ে পান করতাম মদ —চন্দ্রালোকে।
গ্রীষ্মের রাতে জ্যোৎস্নার আলোতে মনোমুগ্ধকর
পরিবেশে অজস্র বিনিদ্র রাত— মনে আছে আজো!
ঠিক পিছনে ছিলো একটা জীর্ণশীর্ণ ছোট্ট ঘর,
ছিলো বৃষ্টিফোটা, সূর্যের আলোর পূর্ণ বিচরণ
বদলেছে অনেক কিছু। সবুজ বদলে দ্রুতই—
গড়েছে ইট সিমেন্ট সভ্যতা, ঘরের আকারও
বদলেছে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে আপনার
স্মৃতির কার্নিশে আজো উজ্জ্বল ভাসমান নক্ষত্র।
অত্যাধুনিক জিনিষপত্র। প্রত্যেকের আলাদা ঘর।
শুধু… আপনার আয়োজনটাই বাদ পড়ে গেছে!
প্রকাশিতঃ বুক পকেট
কাঁটাতার
এপার ওপারেই বদলায় জানাশোনা ভূগোল
শিকর আঁকড়ে ধরা মানুষ ক্রমশ নামহীন,
মাছি ভেবে দুরদুর করেই তাড়ায় অহেতুক।
জমিদারি প্রকাশের উপযুক্ত সময় এখন
প্রচারিত হোক নিজ কীর্তন, যাদের গা লেপটে
আছে মাটির ঘ্রাণ, যারা পেরুলো সীমানা দেয়াল
তাদের কে অবাঞ্ছিত করে দাও ও’ ভদ্রপল্লিতে
অচ্ছুত সমাজ, ছুঁলেই চলে যায় সম্মানবোধ
তাদের দিয়ে দাও উপমা, অন্ধ বিশ্বাসের ‘পরে
নিজেকে তুলে ধরো নড়বড়ে ভ্রান্ত বিলাসিতায়
উপমাটুকু টিকে থাকুক আভিজাতিক মোড়কে
প্রাচীরসম কাঁটাতারের পাশে — অভদ্রপল্লির
নাম হয় ‘বেড়া টপকানো মাল’, কিম্বা ‘মালাউন’।
প্রকাশিতঃ বুক পকেট
উৎসব
ফেরার সময় রেখে আসি, অলিখিত তাপ — চাপ
ভবঘুরের মিছিলে বিশাল মুহূর্তগুলো একা
তারুণ্যের ক্ষয় মুঠোফোন আর ভ্রান্ত অন্তর্জালে
মন্দিরের ঘণ্টার আশ্বাসে সময়ের ডাকাডাকি
গির্জার ও’প্রান্ত থেকে যিশুর ছলছলে আহ্বান
ইমামের পাঞ্জাবি জুড়ে সুরমা আতরের ঘ্রাণ
দৈনন্দিন প্রার্থনায় ভিক্ষুর উদাত্ত নিমন্ত্রণ।
ওদিকে চলছে উৎসব শ্রেষ্ঠত্বের আয়োজনে
কে কাকে ছাড়িয়ে তা নিয়েই এক যুদ্ধযুদ্ধ খেলা
অবিশ্বাসী কলম ভুলেছে মৈত্রীর সব বন্ধন
পবিত্র গ্রন্থাদির লেখাগুলো ক্রমশ মুছে যায়।
অজস্র রক্তক্ষরণের শেষে শান্ত সমুদ্র তীর
ভেসে ওঠে ফসিল, জীবিত চোখের মিথ্যে বিশ্বাসে।
প্রকাশিতঃ বুক পকেট
এপিটাফ
কে বা কারা যেন রেখে গেছে সুগন্ধি আতরদানি
পলক ফেলে দাঁড়িয়ে যায় নির্ভেজাল সব চোখ
ঘুমের ঘোরে নতুন করে কোন ডাকাডাকি নেই
পাশে দাঁড়ানো সুপারি গাছ, নিঃসঙ্গতার শ্লোগান
অবিরাম ছায়া দিয়ে ক্লান্ত নতজানু ভ্রান্ত মুখ
রেখে গেছে জেসমিন আর রজনীগন্ধার স্টিক
মাঝেমাঝে বকুলের ঘ্রাণ পাই, রিক্ততার স্বপ্নে।
নিয়মিত আয়োজনে ব্যস্ত, মনে রাখার কৌশল
ভুলে যাওয়া কিছুনাম স্মৃতিপটে আঁকছে ছবি
কারো কারো অভিমানী মুখজুড়ে আফসোস শুধু
কৈশোর পেরোনো মেয়েটি বুকে চেপে রাখে কবিতা
সামনে দাঁড়ালে নামফলকে ভাসে করুণ নাম
অবহেলায় শোয়া… প্রেমিকটি লেখেছিলো কবিতা
প্রকাশিতঃ বুক পকেট
আগুনের ধারাপাত
জারি থাক আঁকিবুঁকি, নরম পেলবে
পায়ের চিহ্ন… বলো কতো রক্তাক্ত হবো?
রক্তকণিকা চিনে, অলিখিত বিচ্ছেদ
পরিচিত চিত্রপট, আস্ত কুঁড়ে খায়
দুপুরের কষ্ট চিনেছে সকাল ঘড়ি
সময়ের সমানুপাতিক শান্ত স্রোতে
চেনা আগুন… কতো পোড়ালে থাকে ছাই
অবশিষ্ট ছাইভস্ম বোঝে পুড়ে গেলে
যা কিছু থাকে তার ডাক নামই মোহ
সন্দেহের ব্যতিরেকে রয়ে যায় ছায়া
পিছু লাগা নক্ষত্র জানে পথের মানে
রুক্ষ পাথরও আঁকতে শিখেছে প্রেম
দেখো… ক্ষত নিয়ে লীন হওয়া আগুন
প্রকাশিতঃ বুক পকেট
অরণ্য
আছে তার কষ্টের গোপন ক্যানভাস
লালন করে চলেছে লুপ্ত অভিসার
পুষেছে শীতল ব্যথা স্যাঁতসেঁতে বুকে।
নিঃসঙ্গতা জানে ভয়ের পোট্রেটজুড়ে
সাদাকালো ডোরাকাটা দাগের কী অর্থ !
অভিমানী অরণ্য জানে রাত নামলে
ক্যাঙ্গারু শাবক কত একা, অসহায়।
অরণ্য চেয়েছিলো একটু নীল সঙ্গ
সবুজ বুকে হরিতকী গাছের ছায়া
নিম গাছের তলে প্রাণবন্ত বাতাস
নির্ভেজাল অক্সিজেনের আসা যাওয়া
বেশি নয় সে চেয়েছিলো কোমল হাত
চেয়েছিলো মন খারাপ দিনে বন্ধুতা।
প্রকাশিতঃ বুক পকেট
Wednesday 9 December 2015
ঋতু
পেরিয়ে যেতে যেতে দূরে সরে গেলাম
চোখ মেলে আজো দেখি নি সময়টাকে
পালাতে গেলে বদলে যায় ঋতুচক্র
চক্রপথে ঘুরতে থাকে লাটিম প্রাণ।
স্পর্শ ভুলে গেছি ঠিকানা সহ, হারিয়ে
ফেলেছি শেষ সম্বলটুকু, ছিঁড়ে জুতো
আরো কয়েকভাগ হলে নির্লজ্জ চাঁদ
পরিচয় লুকোলে জিপসি মনে হয়
নিজেকে দশের চে' আলাদা মনে হয়
সমভাষী একই বর্ণের মানুষের
চোখে বিস্ময় খেলে যায় গবেষণায়
উৎসুক মন হাঁক ডাকে জোরেশোরে
যাযাবর পখিরা শুধু উষ্ণতা খোঁজে
এর বাইরে অন্য কোনো কিছুই নয়
ওম পেলে তারা পোষ মানে শীতকাল
প্রেম পেলে উড়ে বেড়ায় উঠোন জুড়ে
ঋতু বদলে গেলেই চলে যায় দূরে
আর ফিরে না কখনো, ফেরানো যায় না
জিপসি'রা প্রেম ভুলে যায় অতিদ্রুত
তার চেয়ে দ্রুত ভুলে নিজস্ব ঠিকানা।
Tuesday 8 December 2015
অন্ধকার ৪
Monday 7 December 2015
রাত এবং সকালের উপলব্ধি
Saturday 5 December 2015
অন্ধকার ৩
Thursday 3 December 2015
অন্ধকার ২
Wednesday 2 December 2015
অন্ধকার ১
বিকল্পপথে আমাদের পৃথিবী খোলা। সেই পথে আমরা শ্বাস নিই প্রতিদিন। রাগ অভিমানও ঝাঁড়ি, পুনরায় ছুটে চলার অদম্য নেশায়। আমাদের সকালগুলো স্বপ্নমাখা। আঘাতের পরেও উঠে দাঁড়াই, সেফটিপিনটাকে ছুঁড়ে ফেলি রাস্তায়।
আমরা সর্বহারাদের দলভুক্ত নই। তবুও সাহসটুকু বুকে নিয়ে চলি। বারবার শুধরে নিই সঠিক পথ। অথচ...আমাদের জন্য সর্বভুকের মতো হা করে তাকিয়ে আছে নিঃসীম অন্ধকার।
স্বপ্ন
ভুল বৃত্ত। ভাঙার আগেই ক্ষত শরীরের পায়চারী
মাত্রা ভাঙার নিমিত্তে হাঁক ছেড়ে ওঠে বারবার ,
নগর দারোয়ান চিৎকার করে জানান দেয়
রাতের সঙ্গী হিসেবে কুকুর তাড়ানোর আয়োজন
রাত বাড়লে, ম্লান হয় না সাদাকালো স্মৃতিপট,
ছিঁড়ে খায় আমাদের সবটা রঙ, নগর রাজপথে
বেওয়ারিশ প্রাণের হাহাকার, হুশিয়ার সাবধান
বলে হুইসিল বাজায়। চাঁদের লজ্জা ভাঙলে
কোজাগরী ঈশ্বরের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারি।
আমি শয়নকক্ষে বিছিয়ে দিই সুগন্ধি ফুল
ছিটিয়ে দিই, দামী গোলাপ জল, পারফিউম
সুঘ্রাণের তীব্রতায় ঘুমটুকু পালিয়ে যায়
সুবহেতারার আগমনে মসজিদ হতে ভেসে
আসা আজানের ধ্বনি, পথে আলো আসে নি।
সূর্যোদয়ের পরপরই আমি ঘুমিয়ে যাই,
এই যাত্রাপথে কোনো স্বপ্ন লেখা থাকে না
সুগন্ধিও না, নগর দারোয়ানের হুইসিল
কুকুরের হাঁকডাক কিছুই থাকে না,
তবুও অনেক মানুষ পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।
সকালের সুর
ভুলে যাওয়া গিটারের ছয়টি তারে
এখনো ভেসে আসে টুংটাং। আশ্চর্য!
সংশয় ভুলে মুখ লুকাও, গর্ত খোঁজ
অকারণ আবেশে, হিসাবের অংক
ভুলে গেছো প্রাপ্তির অংশ নিয়ে।
মঙ্গলবারটাও বদলে যায় কুয়াশায়
কার থেকে পালাচ্ছো সারা সময়
নিজেকে চিনতে দাঁড়াতে পারো
আয়নার সামনে, প্রশ্নের পর প্রশ্ন
করে যাচাই করে নাও অবস্থান।
জয়ী ভাববার আগে একটু দাঁড়াও
বুকে হাত দিয়ে দেখো একবার
গভীরের শ্বাস গুলো কতো অসহায়
অসম, দোদুল্যমান প্রহসনে আজ
শান্ত হয়েছে, কুয়াশার সকালে।
থেমে যেতে যেতে ভাবতে পারো
সকাল মানে পরাজয়ের নামতা
সালতামামি জুড়ে আছে মরীচিকা
সামনে পথ চলেছো অনেকদূর
তবুও আগানোর খাতায় নেই প্রাপ্তি
এখনো অহংকারে ভাসাও নৌকা
মেঘ নেমে এলো, ঝড় নামবে এবার...
উপলব্ধি
চাপা আতঙ্ক আর আশঙ্কা আগামীর পথে ঘাটে...
সবাই নীরব, কারো মুখে কথা নেই, গিলে খাচ্ছে
সব অভিমান। পত্রিকার পাতা জুড়ে মিথ্যে বুলি
দেখেও দেখে না কেউ। কোনো কথা নেই। শুধু সহ্য...
লড়তে গিয়ে মরেছে প্রাণ তাকে নিয়ে রাজনীতি...
আমাকে কে শেখালো বাঁচার মন্ত্র, হার না মানার
বিশাল অঙ্গীকার। আগুন জ্বালিয়েছি ভুল পথে।
কারো কণ্ঠে ঝরতে দেখি নি, জীবনের সংগ্রাম।
অন্ধকার মুখ গিলে খায় আমাদের স্বপ্ন সুখ,
এখানে সৃষ্টির চাষবাস বন্ধ, ছেঁড়া তমসুক
জুড়ে স্তব্ধ করা নীরবতা। বোকাবাক্স দিয়ে যায়
অবাস্তব জ্ঞান বিতরণ, অবান্তর প্রদর্শনী।
প্রচণ্ড প্রিয় এ' রাজপথ, শ্লোগানে মুখর সন্ধ্যা
নিষ্প্রাণ পৃথিবী হাতছানি দেয় রক্তের প্লাবনে।
অপমৃত্যু
যে ফুলগুলো ঝরে পড়েছে অনাদরে তার জন্য
এক মিনিট জুড়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো নাটুকে ছল
চোখ ঢেকে দাও বিজ্ঞাপনে, মুখে লাগুক লাগাম
স্বপ্নগুলো বেহাতে হারায়, পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়।
প্রশ্নের জবাবে প্রশ্ন আসে, উত্তরের বিনিময়ে
অদ্ভুত নীরবতা বাঁচিয়ে রাখে কৌতূহলী মন।
সকাল কতদিন আসে নি, যারা আলোর পথিক
তাদের রক্তে বয়ে চলেছি রাজপথের মিছিল।
প্রবঞ্চনা আর প্রহসন - খুব কাছ থেকে দেখি
শোনা যায় আস্ফালন, বেঁচে থাকার গভীর ইচ্ছে
নগর সর্দার দরজায় বসাও কড়া প্রহরা
তোমার ভুলে ঝরছে ফুল, রক্তাক্ত হয় বাগান।
ফুলহীন বাগান জঙ্গল মাত্র। স্বপ্নহীন প্রাণ জানে
ধ্বংসের শেষ প্রলয়ে থাকে, সভ্যতার অপমৃত্যু।
Tuesday 1 December 2015
উপলব্ধি
নীলচে অনুভব ছুঁয়ে দিলেই বৃষ্টি হয়
সময় অসময়ের ফাঁকফোকরে
বখে যাওয়া দিনের স্বরলিপি।
বৃষ্টি নামলেই ঠাণ্ডা নামে না এখানে
কুয়াশায় ঢাকা সকালের ইতিউতি-তে
কিছু মেদহীন স্বপ্ন হঠাৎ বাষ্পীভূত...
চেয়ারটা খালি পড়ে আছে দীর্ঘদিন
ড্রেসিংটেবিল জুড়ে দীর্ঘশ্বাস
চুড়িগুলো ঝুলছে সারিবদ্ধ
বেলজিয়াম মিররে টিপগুলো অসহায়
কবিতা গুলো এখনো কথা বলে
প্রতি সন্ধ্যায় তাদের উল্টেপাল্টে দেখি।
একান্ত ব্যক্তিগত বলে কিছু নেই
বড়জোর কিছু অফিসিয়াল ডকুমেন্টস
নাহ, হোয়াটস আপ আর ম্যাসেঞ্জারেও
তেমন কোনো ড্যাটা জমা নেই
তবুও তুমিহীনতায় কত্ত বিশাল ফারাক।
গত বছর ছিলে, আজকের দিনে নেই
আগামী কাল থাকবে না, সেটা জানাকথা।
এমন কোনো রোম্যান্টিক আলাপন নেই
দরকার ব্যতীত কোনো জিজ্ঞাসা নেই
রসায়নের বুকে তীব্রতার দহন নেই
নতুন প্রাপ্তির খাতায় কোনোকিছু নেই
তবুও তো অনেক শীতকাল, অনেক বৃষ্টি
বিনা বাক্যালাপে পার করে দিলাম।
আর কিছুদিন থেকে গেলে কী এমন হতো!
অবগাহন
Monday 30 November 2015
মধ্যরাত
মধ্যরাতে টঙ দোকানগুলো অদ্ভুত নীরবতার সাক্ষী হয়। হেমন্তের রাত, কুয়াশা এসে ভর করে, ভ্রাম্যমাণ দোকান স্থির দাঁড়িয়ে, চামুচ আর কাপের টুংটাং নেই। কুয়াশা ভিজিয়ে দিয়ে যায় রাজপথ। কিছু বিনোদিনী দাঁড়িয়ে রাস্তার ও'পাশে, কড়া লিপস্টিক, চুলে তেল দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় ব্রত। তাদের রাত মানেই অনেকের দিন। সামান্য কিছু মানুষের রাত মানেই বাঁধন হারিয়ে অশ্লীল জোয়ারে ভেসে যাওয়া।
পথের অন্বেষণে অনেক ধুলো জমে আছে। পায়ের জুতো জোড়া ছিঁড়েছে যত না ক্লান্তিতে তার চেয়ে বহুগুণ অবহেলায়। কিছু মানুষের কোথাও যাওয়ার থাকে না। তারা দিন শেষে ফিরে আসে, কাঙ্ক্ষিত জায়গাতেই। সেই একটা কক্ষপথ মেনে ছোটাছুটি। সফেদ পাঞ্জাবি, ময়লা খুবলে খাচ্ছে শরীর। তবুও এক কাপ চায়ের তৃষ্ণাটুকু জানান দেয়, বেঁচে থাকতে হলে অনেকবার মরে যেতে হয়।
টিকে থাকে বেঁচে থাকার করুণ আর্তনাদ। আমি ঈশ্বরীকে ছুঁড়ে দিই রেড রোজ। ছুঁড়ে দিই চার শব্দের চিরকুট। তরুণ চোখের স্বপ্নগুলো ল্যান্ডস্কেপ ক্যানভাসে আটকে যায় অকারণে। আমার ভিতরে ক্রমান্বয়ে টের পাই ভিন্ন কোনো এক সত্ত্বার। তাকিয়ে দেখি আমি আমাকেই দেখছি আমার সামনে।