Monday 27 June 2016

সমুদ্র যাত্রা

সমুদ্র যাত্রা
- ইমেল নাঈম

সন্ধ্যার ক্যানভাসে পারিজাত ঝরে যায় অবহেলায়
করতল জুড়ে বিষণ্ণতা নামে ফ্যাকাসে বন্দরে
ঢেউয়ের মাতমে সাইরেনে বাজে বিপদের সানাই

দ্রাক্ষালতা তুমিও গোপনেই রাখো প্রাপ্তবয়স্ক প্রেম
হারাবার কিছু নেই, তারপরেও জলে নামতে ভয়
সময় পেরিয়ে যায়, রাত বাড়লে মাস্তুল জ্বালিয়ে
আলো ফেলতেই আবিষ্কার করি "আমি অন্ধকার"

ভুল কম্পাসে চোখ রাখে নাবিক, ঝাপসা দুরবিনে
কোনো ইশারা নেই, শান্ত সমুদ্র চিনেছে গভীরতা
জেগে থাকি পাটাতনে চোখ রেখে, অজস্র প্রণয়
পেরিয়ে যায় অজানা মোহে, সুখের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে
এক দৃশ্য মূকাভিনয় আঙুল নাড়িয়ে বলছে প্রেম...

ক্ষুধা জমলে আনন্দ'র রেশ বন্ধ হয়ে যায় সীমান্তে
কম্পাস ও দুরবিনের চোখে চোখ রাখতে রাখতে
অলক্ষ্যেই সমুদ্রের ঝড়োহাওয়া আঘাত করে যায়।

Saturday 25 June 2016

শীলালিপিতে অস্পষ্ট নাম

শীলালিপিতে অস্পষ্ট নাম
ইমেল নাঈম

চুপচাপ বেঁচে থাকা বৃক্ষও সময়ের পরে দুর্বোধ্য কিছু শব্দমালার জন্ম দেয়। অহর্নিশ বেঁচে থাকার প্রয়াসে মুখ লুকোনো শামুক জীবন নীরবে তাকিয়ে থাকে হাস্যোজ্জ্বল চোখে। পরিণতি মেনে অংকের খাতায় কাটাকুটি খেলতে বড়ো হয় নি একদম। মেনে নিতে নিতে থামতে হয় আমাদের। অসহায়ত্বের মোড়কে বাণিজ্যিক উপাদান খুঁজে পাই বারবার। বেচাকেনার হিসেবে লাভের অংক শিখেছে খুব।

চাকচিক্যের আবরণে ভিন্ন কোনো খোলসে বন্দী মোহের কারণে তাকিয়ে থাকি আকাশের দিকে। নীলচে আকাশে মেঘঘুড়ি কাটাকুটি খেলা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয় চোখ। মেঘের কোনো ক্লান্তি নেই, খেলে যায় নির্মোহ কাটাকুটি খেলা। সুর্যের প্রখরতা কমলে বিবর্ণ হতে থাকে চোখের সামনে চারপাশ। কমলা রঙা আকাশ সুন্দরের পশরা সাজায়, যাবার আগ মুহূর্তে উপহার বলেই তড়িঘড়ি এমন আয়োজন। আমার নতুন কোনো কথা থাকে না।

নির্বাক হাঁটা চলায় অনেক সাতকাহনের জন্ম হয়। নির্বাক সময়ের পাঠশালায় লালমাটির বুকে সবুজের আবাসন স্বর্গীয় সুরেলা কবিতার জন্ম দিয়ে যায়। মোজার্টের পিয়ানোর সুর যেন লিখে রেখেছে আমাদের নাম। দেখা হয় না আমাদের কখনো, হয়তো কখনো হবে না। বিপরীত মেরুতে বেঁচে থাকি কাল্পনিক স্পর্শের কল্যাণে। অদ্ভুত বিচ্ছেদ বুনে রাখি সুঁই সুতোর বুননে, বিমূর্ত প্রেমের শীলালিপিতে অস্পষ্ট নামটি অচেনা হয়ে যায়।

Tuesday 21 June 2016

নিঃসঙ্গতা

নিঃসঙ্গতার বিজ্ঞাপন
— ইমেল নাঈম

থেমে যেতে যেতে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে যে প্রণয়
তার রূপরেখা নিয়ে চা দোকানে শোরগোল হয়না
ওইদিকে চাঁদটিও নির্লজ্জের মতো খুলে দিয়েছে
সবটা আব্রু, পুড়ে যেতে যেতে ভাবতে বসে যাই
পাওয়া না পাওয়ার হিসেবে নিকেশের দোলাচল।

দুলতে দুলতে মুঠোফোনের বার্তায় পৌছে যায় —
সঙ্গীত দিবসের যত কথোপকথন, আমাদের
দুজনের জন্য তেমন কোনো আলাদা দিবস নেই,
শিখি নি পঞ্জিকার তারিখগুলোতে বিভাজন করতে।
রাত বাড়লে তামাক খোরেরা একা হয়ে যায় খুব
চা খেতে খেতে পত্রিকার পাতা উল্টেপাল্টে দেখে।

রাতবিরেতে তন্দ্রাহীন সময় পারও বিলাসিতা
হাজারটা অদ্ভুত কথার ভিড়ে চুপসে যায় বেলুন
অহেতুক সময় ঘড়ি বয়ে চলে স্মৃতিরর কার্নিশে
আমার সুখের অসুখ, পালিয়ে যাওয়া স্মৃতিকথারা
তোমরাই বলো, সুবহে সাদিকের কতক্ষণ বাকি?

ভাসমান, পুড়ন্ত চাঁদটা ছাড়া আর কেউ জানে না
রাতের ক্যানভাসজুড়ে এখন বিষণ্ণতার স্বরলিপি।

Friday 17 June 2016

রক্তস্নাত মিছিল

রক্তস্নাত মিছিল
- ইমেল নাঈম

গিরগিটির চামড়া গায়ে লাগিয়ে দিব্যি সাহিত্য চর্চা
করে যাচ্ছে নাগরিক ইঁদুরগুলো, গর্ত না থাকলে
যেমন হয়, ঠিক তেমন অবস্থা তাদের -
এর ওর পিছে লেগে থাকে টিকে থাকার অবলম্বন
ভেবে, ঘরকুনো স্বভাবে বসে থাকে মুখ গুঁজে,
বের হতে চায় না নিজের আঙ্গিনা ভুলে, যদি খসে
পড়ে কৃত্রিম পালক, দ্বিধা টেনে নেয় পুরোটা চিত্র।

বিচক্ষণ চোখ সবটা বোঝে। বুঝেও পাশে দাঁড়ায়,
ঠিক পাশাপাশি বসে, আর চা খেতে খেতে গুণতে
থাকে আমি...আমি... আমি, অতঃপর নীরবে হাসে।
চোখেরা এসব নিয়ে কিছু ভাবে না, অতো সময় নেই...

আঁধার ছেড়ে আলোয় আসতে যাদের ভয়, তাদের
নিয়ে নির্ভার হওয়াই ভালো। পিঁপড়ে থেকে শিখে
নেওয়া দলবদ্ধ জীবনের ভুল প্রয়োগে দ্রুত ধ্বংস
হয় নিবিড় সাধনা। এদিকে পুড়ছে হরিৎ বনাঞ্চল।

একে একে ছেড়ে যায় তাদেরকে সবকিছু, অলৌকিক
বার্তায় খুলে যায় তাদের মুখোশ, মুখোশহীন মুখের
কুৎসিত আবরণ দেখে মুখ লুকোয় না কেউ এখন।
মেনে নিয়েছে এতো আস্ফালন, নিজের গা বাঁচিয়ে।

আর, রক্তস্নাত মিছিলে রক্তাক্ত কবিতার রাজপথ...

বিষণ্ণতার কোরাস

বিষণ্ণতার কোরাস
- ইমেল নাঈম

ইদানীং আমি মাঝরাত্রিতে বিষণ্ণতার বৃষ্টি কিনি...
ভারসাম্য'র পরিবর্তনে আষাঢ়িয়া দিনের বৃষ্টিও
গচ্ছিত রাখে প্রকৃতির আঁচল - সময় পালটেছে,
মানুষ চুপ হতে হতে হারিয়ে ফেলেছে অক্ষর।
চাপিয়ে দিতে দিতে কিনে ফেলেছে কৃত্রিম বাতাস

হাপিয়ে ওঠা সময়ের বৃত্তে মানুষ এক মুসাফির মাত্র
পেরিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে ভূগোল, মানচিত্র বদলে
গেলে মানুষও বদলে যায়। বদলে যাওয়া চিহ্নে
কাঁচা হাতে আঙুল ঘোরালেই সভ্যতার সাক্ষাত
হয়ে যায় গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে বুকে আগলে রেখে।

প্রণয়ের ভাজে লুকিয়ে রাখো হাজারটা প্রহসন
দিন পঞ্জিকায় আলাদা বলে কোনো দিন নেই,
দিনগুলোর আবেদন সর্বদা একহলেও বদলে যায়
আমি বদলে যাওয়া হিসেবে প্রেমিকাকে আঁকি
গ্লোবাল ওয়ার্মিং গ্রাস করে ফেলে নিজস্ব সত্ত্বা।

প্রাচীনপন্থী মন, আহাজারি করতে থাকে সময়ের
বিপ্রতীপ কোণে, এর বাইরে স্মারক চিহ্ন নেই
ছিঁড়েফেলা চিরকুটে কেউ লিখেছিলো সর্বনাশ...

বিষণ্ণতার কোরাস

বিষণ্ণতার কোরাস
ইমেল নাঈম

ইদানীং আমি মাঝরাত্রিতে বিষণ্ণতার বৃষ্টি কিনি...
ভারসাম্য'র পরিবর্তন আষাঢ়িয়া দিনে বৃষ্টি রেখে
দেয় প্রকৃতির আঁচলে - সময় পালটে গেছে,
মানুষ চুপ হতে হতে হারিয়ে ফেলেছে অক্ষর।
চাপিয়ে দিতে দিতে কিনে ফেলেছে কৃত্রিম বাতাস

হাপিয়ে ওঠা সময়ের বৃত্তে মানুষ এক মুসাফির মাত্র
পেরিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে ভূগোল, মানচিত্র বদলে
গেলে মানুষও বদলে যায়। বদলে যাওয়া চিহ্নে
কাঁচা হাতে আঙুল ঘোরালেই সভ্যতার সাক্ষাত
হয়ে যায় গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে বুকে আগলে রেখে।

প্রণয়ের ভাজে লুকিয়ে রাখো হাজারটা প্রহসন
দিন পঞ্জিকায় আলাদা বলে কোনো দিন নেই,
দিনগুলোর আবেদন সর্বদা একহলেও বদলে যায়
আমি বদলে যাওয়া হিসেবে প্রেমিকাকে আঁকি
গ্লোবাল ওয়ার্মিং গ্রাস করে ফেলে নিজস্ব সত্ত্বা।

প্রাচীনপন্থী মন, আহাজারি করতে থাকে সময়ের
বিপ্রতীপ কোণে, এর বাইরে স্মারক চিহ্ন নেই
ছিঁড়েফেলা চিরকুটে কেউ লিখেছিলো সর্বনাশ...

Thursday 16 June 2016

বোঝাপড়া

বোঝাপড়া
- ইমেল নাঈম

চিরব্যর্থ কিছু সংলাপ আওড়ানোর পর
একটা নায়িকা সকাল সামনে এসে দাঁড়ায়।
বেড টি ঢালতে ঢালতে তোমার মোবাইলে
রুটিনমাফিক বেজে উঠে হেভি মেটাল গান,
প্রতিবারই চমকে উঠো অত্যাধুনিক যন্ত্রের
কারুকার্যে। চমকে উঠলেও ওই শরীর জুড়ে
খেলে যাওয়া বিদ্যুতকে আমি প্রহসন ভাবি।

বিছানা দিয়ে আকাশ দেখা যায় না একদম
বাইরে চোখ পড়তেই দেখি ল্যাম্পপোস্টটি
বন্ধুসমেত কাক ভিজা ভিজেছে অসময়ে
তার শরীরের তাপমাত্রা মাপতে গিয়ে
অনুধাবন করি আসলে জ্বর বলে কিছু নেই

বারোমাস যারা রোদে আর বৃষ্টিতে ভিজে
তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও
এই বিরহ বিলাসীদের চেয়ে অনেক বেশি
কিন্তু প্রতিদিন সকালে বেজে ওঠা সঙ্গীতে
তোমার শরীরে খেলে ওঠা রহস্যময় বিদ্যুৎ
আমাকে দাঁড় করায় নগ্ন আয়নার সামনে।

Wednesday 15 June 2016

পরামর্শ

পরামর্শ
ইমেল নাঈম


রাজনীতি সুদূরের পথ। এরচেয়ে ভালো হয় বিজ্ঞাপন নির্মাতা হলে। সেটা না হলে কোনো পলিটিকাল পার্টি অফিসে চা বিস্কুট আনা নেওয়া আর ছোটোবড়ো  ফুটফরমাশ খাটতে পারেন। তাতে যদি ইতস্তত বোধ করেন আর পড়াশোনার জোর যদি থাকে তবে এড ফার্মে নয়টা থেকে সাতটা কাজ জুটিয়ে নেয়াই মঙ্গল। এইসব পরামর্শ ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার আগেই বসে যেতে পারেন "ভাই ভাই কবিতা" সমবায় সমিতির ভার্চুয়াল মিটিং এ। পিঠ চুলকে দিতে পারেন একে অপরের। আলোচনায় আহ উহ করতে করতে সন্ধ্যা নেমে আসবে।

সন্ধ্যায় টঙ দোকানে এককাপ চা আর দুইটা টোস্ট বিস্কুট চাবাতে চাবাতে ফাঁকা বুলি ছাড়তেই পারেন রাজনীতির বিপরীতে, নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন আপনি বা আপনারা অথবা আপনার ঈশ্বর কেউ রাজনীতি করেন না। কেউ খতিয়ে দেখবে না সত্যতার নিক্তিতে। ঈশ্বর একসময় ভালো কবিতা লিখতেন, এখনো হয়তো...  বর্তমানে ভালো বিজ্ঞাপনদাতা হিসেবে নাম কুড়াচ্ছেন। সুযোগ পেলেই নিজ কীর্তন ছাপিয়ে দেয় মুখবইয়ের প্রথম পাতায়।

কলমে যদি শব্দ না থাকে তবে বিনে পয়সায় ক্যানভাসিং করতে পারেন ঈশ্বরের। ঈশ্বরও পিঠ চাপড়ে দিবেন খুশি মনে। আপনাকে মাথায় তুলে রাখতেও পারেন আনন্দ চিত্তে। এতে করে নিজেকে কবি ভাবলেও কোনো অসুবিধে নেই, এমনকি মহানায়কও ভাবতে পারেন। অনেক পেশার সন্ধান এখনো অনুল্লিখিত আছে। খুঁজে দেখলে পেয়েও যেতে পারেন। যারা এসবের বাইরে কলমেরর সাধনায় মগ্ন তাঁদের হাতেই কবিতাকে ছেড়ে দিন। দলবাজি আর মোসাহেবি করে পচে যাওয়া মাথায় অন্তত কবিতার জন্ম হয় না।

Monday 13 June 2016

অসময়ের মেঘ

অসময়ের মেঘ
ইমেল নাঈম

ছালবাকল খুললে নতুন কোনো বাতাবরণ থাকে না। পরিযায়ী মেঘেরা ঘরে ফিরে গেলে দিনভর ঘ্যানঘেনে বৃষ্টির ছলাকলায় সূর্যহীন একটা সন্ধ্যা নামে। ময়ূরাক্ষী ছলাৎছলাৎ বয়ে যায় অনেক দূর। সেখানে ডিঙি নৌকো ভাসে অদম্য কিশোরের বুকে। প্রেম নয়। বরং একগুচ্ছ পাখির পালক। সন্ধ্যায় লোডশেডিং এর শহরে কুপি বাতি জ্বলে। সন্ধ্যাদীপ, তাকে নিয়ে কুসংস্কার যতটা লুকোনো ঠিক সেই পরিমাণে কিম্বা তার চেয়েও বেশি রয়ে যায় পারিবারিক রীতিনীতি।

জ্যৈষ্ঠ'র প্রখরতা খুব একটা গায়ে লাগেনা। টানা বৃষ্টিতে নরম মাটি লেপটে গেছে কাদায়। মনে পড়ে কৈশোর। মনে পড়ে আরো গভীর সময়কাল। বুকের বাপাশে তিলটাকে এখন আর আড়াল করি না। শৈশবে বাঁধনছেঁড়া কোনো ফড়িং এর মতো উড়ে বেড়ানোর অনন্য স্বাদ আজও লেগে আছে মননে। ধান কাটা শেষ হলে নাড়া ক্ষেতে সবাই যেন ক্রিকেটার। লম্বা এক টুকরো কাঠের ব্যাট, আর টেনিস বলের আয়োজন।

ভাঙা আধপাকা ইশকুল ঘর। সেখানেই চাষাবাদ হতে থাকে স্বপ্ননিনাদের। বাবা মার খেয়ালে নেই এতকিছু। হয়তো তারা বুঝতেও চাননি অতোটা। খেয়াল বেখেয়ালের বার্তাবহন করতে করতে সময় চলে যায় ছোটো গলি হতে বড় সড়কের দিকে। এইযে শৈশব আর কৈশোরকে নিয়ে এতো জল্পনাকল্পনা তার পিছনেও একটা সূক্ষ্ম কিন্তু লুকিয়ে, যা কখনোই বলা হয় নি আপনাকে, এমনকি তাকেও। না বলা জীবন পার করে দিতে বসে উৎযাপন করছি অসময়ের এই বৃষ্টি বিলাস।

Friday 10 June 2016

জীবিকা

জীবিকা
ইমেল নাঈম

আংগো শহরে বেশি কথা নাই। ঘাসফুলগুলান
মইরা গেছে হেই কবে! দুই ছটাক স্বপ্ন ছিলো,
গ্যালো বন্যায় ভাইসা গ্যাছে...মাথার উপর ছাদ
দিয়া আসমান দেহা যায়, হানি ঢুকে বৃষ্টি হইলে।

বেয়াইন্না নুন দিয়া ভাত খাই, হুকনা ছালম আর
হোড়া মরিচ, এই নিয়াই কাইটা যাইতেছে দিন
কাচারি ঘরের সামনে চা দোয়ানের ভিড় ঠেইলাই
আগাইতে হয় ফ্রতিদিন। হেইহানে আড্ডায় কথা
জমে বাকির খাতায় নামডাও শক্ত হইতেছে।

কামহীন চইলা যায় জীবন...দুচোহে শুধু আন্ধার
হকেটে ট্যায়া নাই, ট্যায়া না থাকলে নিজেরে
হানির দরে মনে হয়, মনে হয় দরদামহীন ফ্রাণ।

কামের অভাবে দুপুরে বা রাইতে খাওন হয় না
কদিন হরেই হয়তো ঘাস চিবাই বাঁইচতে হইবো,
বাজেমালের দোয়ানে বাকির খাতাও আগায় না
জ্যোৎস্না আইলে চাঁদডারে বড্ড বেয়াড়া লাগে
ক্ষুদা হ্যাডে কোনো রোমান্টিসিজম জন্মায় না...

Wednesday 8 June 2016

মদ্যপ

মদ্যপ
ইমেল নাঈম

গতরাত্রে পানশালায় মদ খাচ্ছিলেন যে ঈশ্বর
তার প্রেমিকা ছিলো না, যিনি ব্রোথেলে উঁকিঝুঁকি
দিয়ে দিরহাম ভাঙাতে না পারায় দরজার হুঁক
খুলতে পারেনি, তাকে উপাসক ভাবলেও বেশি...

কবিতা লিখতে বসে কবি যখন এঁকে ফেলে
নগ্ন নারী, তখনই সেন্সর বোর্ডে আটকে যায়
শব্দ, ঈশ্বর আর উপাসকের তীব্র বিরোধিতাও...

এখনো ভালো মন্দ বুঝতে শিখি নি, পথ হাতড়ে
তেমন পরিবর্তন খুঁজে নেই, বিভ্রান্তি ছুঁয়েছে
পাশাপাশি ছুঁয়েছে বিভ্রম, সাধারণত মাতাল
না হলে এমন ফিউশন দেখে না কোনো প্রেমিক।

ইসাবেলও কী মদ খেয়ে বেশুমার হয় চাঁদনী রাতে
আমার জানতে ইচ্ছে করে ঈশ্বরীও কি মদ্যপ...
নাকি আমি আমার মতো ভুল জানি জগত সূত্র।

Tuesday 7 June 2016

প্রতিবিম্ব

প্রতিবিম্ব
ইমেল নাঈম


সময়ের দিব্যি। ভুল পথে চলে এলো শব্দরা। এভাবে চাইনি, এইটুকুন পরিমাণেও নয়, হিসেবের খাতায় ভুল বৃত্ত আঁকা ছাড়া আমার তেমন কোনো কাজ নেই। সৃষ্টির নেশাতে বুদ হবার সম্ভাব্যতা শিখে নি কলম। কলমদানি জুড়ে শুধুই হাহাকার - ব্যথায় রক্তাক্ত হয়ে ফিরছে। সবটুকু প্রকাশিত নয়, অনেক গল্প থাকে অব্যক্ত। শিহরণ কাটতে কাটতে ফিরে যায় কিশোর উপন্যাসে। অল্প করে প্রতিদিনই আহত হই, সময়ের সরল রেখায় তা বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্টি করে অনেক বড় পরিসর। ছুটে চলার মানসিকতায় ভাটা পরে না দৃষ্টির সীমানায়।

আকাশ ভালবাসি, নীলরঙও আমার অনেক প্রিয়। জানিনা বিষণ্ণতার সাথে নীল কে কেনো মিলিয়ে নেয় সবাই। হয়তো আকাশের বিশালতায় শূন্যতা লুকিয়ে। আমি বুঝতে পারিনি কিম্বা বুঝতে শিখিনি। পত্রিকার পাতার হাহাকার দেখে ভাবি আকাশ দেখা অনেক মঙ্গল। গ্রীষ্মকালীন আকাশে খুব একটা মেঘ থাকে না, সাদামাটা আকাশ দেখতে কোনো সুখ নেই, যদিও মন্দের ভালো হিসেবে মেনে নিয়েছি তাকে।

ঋতুপরিবর্তন চোখে পড়ে তোমার। আমার পরিবর্তন কিম্বা তোমার নিজস্ব পরিবর্তন; সেগুলো কখনো মেপে দেখো নি খাতা কলমের ব্যকরণে। স্পর্শকাতর বিষয়াদি নিয়ে বেশি খোঁচাতে নেই। রক্তাক্ত হয়ে যেতে পারি তুমি আমি দুজনেই। এরচেয়ে ভালো মুখবইয়ের বিজ্ঞাপন মুখস্ত করি। নানান মুখ দেখো, পরিমাপ করতে শেখো মানুষকে। মুখোশ দেখো, রঙ খেলানো বিবর্ণ চেহারা দেখো। আতঙ্কিত হয়ো না দেখে। আয়নার সামনে দাঁড়াও, পলেস্তারা খসে পড়া নিজেকেই দেখবে অসময়ের মারপ্যাঁচে।

Monday 6 June 2016

আকাশ

আকাশ
ইমেল নাঈম

নামহীন শহরে কেউ পথ হাঁটে অকারণে
কারো স্পর্শে লেগে থাকে একবিন্দু সমবেদনা
ছিঁড়ে ফেলা প্রশ্নপত্রে প্রণয় থাকে লুকিয়ে
এরবেশি জানায় নি আমায় শরতের আকাশ

উড্ডীন্ন পাখিদের ভিড়ে আবেদন থাকেনা,
প্রলেপে আটকে গেছে সময়ের হিসাব,
স্বপ্নের পরিসীমা আঁকতে গিয়ে বাচ্চা শিশুর
রঙ পেন্সিল হারানোর তীব্র কষ্টের গল্পটা
বেশিরভাগ সময় চোখের জলেই আঁকা হয়।

বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো আমরা খুব আলাদা
সবাই পাশে কিন্তু কেউ কারো কাছে নই
দুই হাত পার্থক্যেও একটা বিশাল গল্প থাকে

কেন্দ্রীভূত স্বপ্নের বুকে হাহাকার জন্মায় নি
সেখানে আমাদের ঈর্ষান্বিত হবার কথা নয়
বরফ জমলে এখানে পশ্চিমা টোন বাজেনা
তবুও টানাহ্যাঁচড়ায় একটা মধ্যাহ্ন বিন্দু থাকে

আমার আকাশ আর কতই বড় হতে পারে,
তবুও সেখানে নিয়ম করে সকাল আসে।

Saturday 4 June 2016

ইমেল নাঈম'র যুগল কবিতা

অসুখ

ছিপ ফেললেই উঠে আসে না কিছুই
উৎকণ্ঠা নিয়ে পেরিয়ে যায় সুর্য
ভরদুপুরে তেমন তাড়া থাকে না

বুক পকেটে লিপস্টিকের দাগটি
শুকিয়ে যায় অভিযাত্রিক পথে
আমার পথ চাওয়াতেও সুখ নেই

কৌণিক হিসাব অনুসারে বিকাল
নামলে ছিপ তুলে বাড়ী ফিরে যাই...
ঝোলায় ঝুলছে কেবল শূন্যতা

জামার লিপস্টিক শুকালেও সন্দেহ
করে না এখন কেউ আমাকে, কিন্তু
মনের ঘরে পাপবিদ্ধ হচ্ছি প্রতিমুহূর্ত।

বর্ষাকাল

একটা ছেলে সবুজ রঙের বৃষ্টি আঁকছিল
তোমার উঠোনে, হয়তো দেখেছিলে
তার রঙ পেন্সিলজুড়ে লেপটে থাকা
প্রেমের উপাখ্যান। ছেলেটি আর আসেনা।

বৃষ্টি নয়, প্রেম আঁকার পর চলে গেল
যাবার সময় ফেলে গেলো জলতরঙ্গ...
পট আর জলরঙ বৃষ্টিতে ভিজেনি এখনো
ছেলেটি প্রেম নয় বৃষ্টি আঁকতে এসেছিলো

তুমি অপেক্ষায় থাকতে থাকতে খেয়াল
করলে না কখন যে বর্ষাকাল চলে এলো।

Friday 3 June 2016

নদীজন্ম

নদীজন্ম
ইমেল নাঈম

বৃষ্টি হলেই আমার পোষা বিড়ালটি জানালার সামনে করুণ চোখে তাকিয়ে থাকে। তার দৃষ্টি দেখে অনুমান করি পাপের জন্মে সে হয়তো কবি ছিলো। রাস্তার দিকে তাকিয়ে সে কি দেখে সেটা আজও বুঝতে পারি নি।

আমি পিছনে আরাম কেদারায় বসে হাই ভলিউমে পুরনো দিনের গান চালিয়ে ভাবতে থাকি হারানো দিনের গান আর হারিয়ে ফেলা সময়ের গানের পার্থক্য। এরই মাঝে ভিতরে একটা নদী জন্মের গল্প শোনা যায়। নদী নিয়ে ভাবি না। আমি ডিঙি নৌকার জীবনী নিয়েই বেশি আগ্রহী।

এরই মাঝে একজন বয়স্ক জেলের সাথে দেখা হয়ে যায় কল্পনায়। জাল ফেলে বন্দী করে নিচ্ছেন আহার। হাটবারে বেচাকেনা হলেই ওনার ঘরে সপ্তাহের মোটা চাল আর ডাল কেনার সম্ভাব্যতা মিলে যায় শতভাগ।

এসব ভাবতে ভাবতে মাছেদের কথা মনে পড়ে। মাছ হয়তো জানে না তার সাথে জেলের সম্পর্ক? অথচ নদী সে শিখে নিয়েছে সবকিছু। তাকে নিয়ে কখনো কবিতা লিখি নি।

জানালায় বৃষ্টি দেখতে গিয়ে আমিও হঠাৎ একটা নদীজন্ম অনুভব করি।