Wednesday 30 December 2015

স্বপ্ন

অহর্নিশ ডাকাডাকি। কোমল মখমল জড়ানো রাত। ঘরের চাঁদ ডুবে গ্যালে মন হয়ে ওঠে চিত্রশিল্পী। খোলা ক্যানভাসের বুকে অদৃশ্য কালি তে তৈল ছবি। নগ্ন কোনো শরীর, লম্বা চুল, ভারি নিতম্ব, আর সুউচ্চ স্তন, নাহ....আর কোনো কিছু আঁকা নেই, ভাবনা নেই, কল্পনা নেই, বাস্তবতা বলে কোনো শব্দ নেই। ব্যর্থ শরীরের অনুরণন। মুখ ভিজে যাওয়া ঝর্ণাধারা। ব্যর্থতাটুকু মুছে দিতে দরকার আলো।

আলো জ্বালালে স্বপ্নেরা হারিয়ে যায়, বন্ধ ঘরে জানালা দিয়ে আসে হেমন্তের বাতাস। শিউলি ঝরা উৎসবের শেষে, ক্লান্তি ঝেড়ে দিলে প্রান্তিক ঘামের বুকে চিঁড়ে নেমে আসে কুয়াশা। শুনেছি, এখানে আগে তাঁতি পাড়া ছিলো। এখানে বোনা হতো মসৃণ কাপড়। এখানে শুনেছি বারো মাস অভাব ছিলো, ছিলো খামখেয়ালী প্রাকৃতিক আবহাওয়া। এখানে কোনো কবি আসেন নি কখনো।

সময় বদলে গ্যালে, তাঁতঘর বিলুপ্ত, আবহাওয়া এখনো খেলে যায় তার নিষিদ্ধ খেলা। এখানে এখন ইন্দ্রজাল দেখানোর মতো অনেকেই আছেন, প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করে যাচ্ছেন একেকটি জাদু। এখানে একজন চিত্রশিল্পী এসেছেন, উনি নারীদেহ আঁকেন না, অশ্লীলতার অভিযোগ মাথা পেতে নেবার ভয়ে।

এখানে কোনো কবি আসেন নি, তাই অন্ধকারে এখনো ছবি আঁকতে হয় দরজা জানালা বন্ধ করে, আর মাঝপথে লাইন ছিটকে যায় বারবার। এই শহরের সাধারণ মানুষ স্বপ্ন দেখেন এই শহরে একদিন একজন কবি আসবেন, খুব শীঘ্রই।

Monday 28 December 2015

কনফেশন

ইমেল নাঈম

আমি আদর্শ কোনো প্রেমিক নই...কবিতার পাতায় নাম লিখে রাখা শিরোনামে অতীত লিখেছিল কিছু কৃষ্ণচূড়া। ডায়রির ভাজে শুকনো ফুল অম্লান শরীরে জানান দেয় অতীত ছুঁয়ে যায় হতাশায়, গ্লানিতে, ব্যর্থতায়।

প্রথম যার প্রেমে পড়ি তাকে এখন মনে পড়ে না, ভুলে গেছি ছোঁয়া। মান অভিমান পর্বের মাঝে প্রেম পর্ব আর আবেগ টুকু অস্পৃশ্য ছিলো বলেই নীরব হয়ে থাকা।

দ্বিতীয় জনকে খুব মনে পড়ে। চেহারাটুকুও মনে পড়ে, রসায়ন মনে পড়ে, আঙুলের চাহিদাও মনে পড়ে....কতই বা বয়স, ষোলো বা সতেরো... মুঠো আলাপন ছিলো না, ছিলো চিরকুট, সিগারেটের প্যাকেটে ছোট্ট অনুভূতির পাশাপাশি বিশাল বিশাল চিঠি আসতো রঙবেরঙ কালিতে। সবকিছুর পরেও আরো একবার নীরব হতে হয় নানাবিধ কারণে।

এরপর, তৃতীয়... চতুর্থ... পঞ্চম, এদের নিয়ে বেশি আলোচনা করে লাভ নেই। ক্রমাগত শিখে নিয়েছি চাহিদাপত্রের মাপজোখ, হাসিমুখের অন্তরালে দুঃখের ঝর্ণাধারা, আগাছার প্রতাপে গাছ নিরুপায়, নিরূপণ করা সময়ের ভিড়ে ব্যর্থ এক নাম।

নিজেকে ব্যর্থ প্রেমিক মনে হয়, প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়াই। তাকিয়ে থাকি প্রতিবিম্বের দিকে, চোখের দিকে তাকাই, দেখি ক্রোধ নেই, প্রাপ্তি নেই, হতাশা নেই, প্রেম নেই, চাহিদা নেই, তাড়না নেই, এষণা নেই...

অথচ, ইতিহাসে আছে নিঃসঙ্গ মানুষ নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে।

Sunday 27 December 2015

অন্ধকার ৬

একটি অন্ধকার পথ আঁকড়ে ধরেছে পুরনো নেকড়েবাঘ। সংখ্যাতত্ত্বের ভুল অংকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারে না আমাদের চোখ। তবুও ব্যর্থ প্রয়াসে গ্লানি আঁকতে বসেছে একদল অপরিপক্ক চিত্রকর। ঘৃণাভরে আঁকছে দানবের ছবি। এরপর সুযোগ পেলেই তার প্রদর্শনী। চারপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে দূষণ, পচা গন্ধে ভরে যাচ্ছে সব দিক।

ইতিহাসকে অস্বীকার করার মন্ত্র পাওয়া যায় কোথায়, তা নিয়েই অনেক কান কথা লুকানো। আমি দেখি অন্ধ বিভ্রান্ত কিছু মুখ, যারা ভ্রান্ত বিশ্বাসে বকে যাচ্ছে সত্যকে অস্বীকার করে, অসত্যের জয়গানে লিখে রাখছে নিজেদের নাম। প্রচার করছে তাদের চেহারা বড়ো গলায়, ক্ষতবিক্ষত শরীরে।

কোনো গ্লানি নেই চেহারায়, নেই কোনো হাহুতাশ। স্বাধীনতা পেয়েই যেন স্বার্থের খেলায় বিকিকিনি তে নিলামে উঠছে মানচিত্র। সাতান্ন সংখ্যাটি ব্যর্থ আজ মানবতার আড়ালে। নাকি ভোটের অংকের মারপ্যাঁচে সেও পড়েছে ভদ্রতার মুখোশ।

এভাবেই কেটে যায় দিন, একদিন সভ্যতা গড়ে তুলবে জাদুঘর। সেখানে মুখোশ ঝুলবে মানুষের চেহারার আদলে। সারা পৃথিবীর মানুষ সেখানে যাবে ঘৃণা জানাতে। সেদিন সেখানে সবচেয়ে অবহেলায় আপনিও স্থান করে নিবেন। মানুষ আপনাকে নিয়ে আফসোস করবে, আপনার আত্মাও সেটাকে নিয়েও আত্মতৃপ্ত মনে গুণগান গাইবে।

কথা দিলাম....

Wednesday 23 December 2015

পোস্টমর্টেম

অন্ধকার গলিতে আটকে যেতে পারে আমাদের পরিচয়
দিন ফুরালে আমরা কেউ নই কারো। ছায়াবৃত্তে অবিশ্বাস
লুকিয়ে সারি দৈনন্দিন নৈশভোজ, তৃপ্তির ঢেঁকুর গিলতে
বসে আবিষ্কার করি খুব অচেনা নিজেকে, আয়নার চোখে
রাতের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতির নিভু নিভু আলোকচ্ছটা
মুছে দিলে পুরোটা জুড়ে শুধু বাকি থাকে নিঃসীম অন্ধকার

এরপর অদ্ভুত চিন্তার পসরা সাজিয়ে গল্পের বিন্যাসে
প্রার্থনায় ডেকে যাওয়া নাম, ঢেকে যাওয়া নামের মিছিলে
নিঃশব্দে হেঁটে চলা পথের বুকে শুভ্রতার পাঁচিলে হারিয়ে
ফেলার মৃদু ঝাঁকুনি টা বড্ড রহস্যময় এখনো কানে বাজে
বিছানায় দৌড়ে চলে নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ী, স্মৃতির কার্নিশে

কান পাতলে শুনি হৃদস্পন্দন, অনুভব করি প্রবাহিত
শিরা উপশিরা ভেদ করা রক্তকণাদের মুক্ত বিচরণে
উড়ে আসা ক্লেশ, ক্লেদহীন মাখামাখি সবাক চিত্রাঙ্কনের
পর অবশিষ্ট স্পন্দন মুছে যায়, জেগে থাকা চোখের ভিড়ে
অর্ধ অবচেতন মনের উঁকিঝুঁকি শেষে ক্লান্তির ভ্রমণে
কোথাও কোনো বৃত্ত নেই, নেই দীপ্ত শ্লোগান মুখর আজান।

Monday 21 December 2015

একটা সাদামাটা দিন

ব্যাখ্যাত অনেক প্রশ্নের জানতে গিয়ে হারিয়ে
গেলো জন্মের দাগ, যাত্রা পথে অনর্গল ভ্রম।
এই কম্পাসের কাটায়, মানচিত্রের বুক জুড়ে
অর্গলে যে কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত হয় অরণ্যের
সবটুকু আলিঙ্গন, তার কোনো সেবিকা নেই।

নেই নেই বলেই ঠায় দাঁড়িয়ে অসভ্য সমাজে
আঁধার ঘরে চব্বিশ ইঞ্চির একটা জানালা,
এনার্জি সেভিংস লাইট, সদ্য আগত শীত
কুয়াশার চাদরে আটকে যাওয়া লেপ ঘুম
অলসতার মোড়কে আটকে যায় বেড টি।

দিন ছোটো হতে হতে সূর্য সাক্ষাৎকার কঠিন
চোখ বন্ধ করে আরো কিছুটা সময় পার
আলসে দিনের মধ্যদুপুরে ঠিকই লুকিয়ে
সোনালি আকাশ মিষ্টি হাসিতে লুটিয়ে পড়ে
পশ্চিমে। পত্রিকার পাতা উল্টাই না আর...

সন্ধ্যাকালে বোকাবাক্সে চাটুকারিতার বিজ্ঞান
প্রতি ঘণ্টায় তোঁতা পাখির মুখস্ত বুলির
মতো রাশিফল পাঠিকা সহাস্য মুখে দিচ্ছেন
নিউজ বুলেটিন। পাড়ার দোকানে চা খেতে
বসে শোনা যায় অন্য লোকের মন্দ বিজ্ঞাপন।

সাদামাটা গল্পের সমাপ্তিতে ব্যক্তিগত প্রাপ্তিরা
অবহেলিত হতে থাকে খেয়ালে বেখেয়ালে,
ক্ষতরা ক্রমাগত বড় হলেই নাকি বিজয়ী হয়
একটা সাদামাটা দিন আমাকে এর চেয়ে
বেশি কিছু দিতে পারেনি কখনো, কোনোদিন।

Saturday 19 December 2015

জ্বর

তাপমাত্রা পরিবর্তন এখন অনুভূতির শূন্যতা
ছাড়া আর কোনো আবেদন রাখে না
এন্ড্রোয়েডের হেডফোনে ভেসে আসে ব্লুজ
গিটারের ছয় তারে যেন ভিন্ন সুরের খেলা

নিজের কাছে অচেনা হলে ফেরার পথটি
মিশে যায় অনেকগুলো পথের মাঝে,
নিজের বলে কোনো কিছুই থাকে না।
অধিকার, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি, ঈর্ষাবোধ, সখ্য
এসব শব্দগুলো হারিয়ে যেতে থাকে
অভিধান থেকে অনেকদূর...

ঠাণ্ডায় লেপ কাঁথার ভিড়ে ঋতু কাঁপানো
সময়টাও গ্রহণে অপারগ শরীরে দেখি
মানুষের উঁকিঝুঁকি, মুখবই জুড়ে ব্যক্তিগত
প্রচারণায় চোখে পড়ে দেখা সাক্ষাৎ,
ব্যক্তিগত সুখদুঃখ, অচেনা মানুষের ছবি
গেট টুগেদার কিংবা আড্ডামুখর মুখ

আমার হেড ফোনজুড়ে বাজতে থাকে
এক্সপেরিমেন্টাল রক,
প্রোগ্রেসিভ রক,
অল্টারনেটিভ রক,
ব্লুজ অ্যান্ড জ্যাজ রক,
আর টেবিলের এক কোণায় পরে আছে
উৎপলকুমার, একফ্লাক্স উষ্ণ পানি,
অর্ধেক খালি এক পাতা প্যারাসিটামল।

Saturday 12 December 2015

ডাক

প্রতিবিম্বের ঘোর কেটে আসে দুঃস্বপ্ন
আলটপকা সময়ের কার্নিশজুড়ে
স্মৃতিদের আনাগোনা। ঘাসেদের ছুঁয়ে
ঝরে পড়ে একগুচ্ছ অবন্তিকা ফুল ।

রাত বাড়লে নীরব হয় ল্যাম্প পোস্ট
হেমন্তের কুয়াশা আর শীতের ছায়া
মনহরা সবকিছু, তবুও শূন্যতা।
ভিতরটা শুনশান, বাতিটা জ্বলছে...

ল্যাপটপে খসখস শব্দে আত্মনিষ্ঠ
এক শিল্পী নীরবে গড়ে যান স্থাপত্য।
এশট্রে জুড়ে ছাই, তবুও বেনসন
পুড়ে যায় ক্রমাগত, কফির পেয়ালা
ধোঁয়া ছড়াতে ছড়াতে ক্লান্ত নয় আর

কবিতার পাতা ভরে গেলে বেজে ওঠে
ক্লেডারম্যান, ইউটিউবে মগ্নতার
শীর্ষচূড়া ছুঁলেই রাত গভীর ঘুমে
আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ক্লান্তির ভিড় ঠেলে

তখন কান পেতে একটি বার শোনো
মায়াবতী নারী কণ্ঠ ক্রমশ ডাকছে
দেবাশীষ... দেবাশীষ... দেবাশীষ বলে...

ইমেল নাঈম'র কবিতা ভাবনা

কবিতা ভাবনা ও গুচ্ছ কবিতা ঈমেল নাইম কবিতা বললেই আমি হেলাল হাফিজের উৎসর্গ কবিতাটাকেই মনে করি। কবি নিজেই বলেছেন কবিতা অবিকল মানুষের মতো, চোখ, মুখ, বিবেকের কথা।

কবিতা মানুষের জীবনগাঁথা, সভ্যতার শ্লোগান। কবিতা নষ্ট সময়ে জ্বলে ওঠা এক প্রদীপ, যে কিনা ভুল পথের পথিক কে পথ দেখায়। কবিতা অচেনা এক নারী, প্রথম প্রেমের স্পন্দন। কবিতা নদী, কষ্ট ভুলে থাকার একমাত্র অবলম্বন। কবিতা একটা ইঙ্গিত, একটা চিত্রপট। ভ্যানঘগের আঁকা ল্যান্ডস্কেপ। ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীর নিপুণ আঙুলে তৈরি কোন স্থাপত্য কলা। এক কথায় কবিতা কবিতাই। কবিতা বলতে কবিতাই বুঝি। অন্যকিছু বুঝে উঠি নি।

কবিতা আটকে নেই নির্দিষ্ট কোনও বলয়ে। সে বৈশ্বিক। বৃত্ত, বৈভব, ক্ষেত্রফল, ব্যঞ্জনা, উৎকর্ষতা কোনও কিছু নিয়ম মেনে চলে না, অথচ তার মাঝেই খুঁজে পাওয়া যায় এইসব মৌলিক উপাদান। শব্দের পিঠে শব্দ বসিয়ে অদ্ভুত এক ছন্দের খেলা যা প্রতি মুহূর্ত আলোড়িত করে যায় পাঠককে। কবিতা কে ঠিক মতো আঁকা যায় না, অনুভব করতে হয়। অনুভব জিনিষটাও স্রষ্টার সমান্তরালে নাও যেতে পারে। তবুও পাঠকের মস্তিষ্কের সামান্য যেই বোধটুকু নাড়িয়ে দেয় সেটাকে নিয়েই দাঁড়ায় একটি কবিতা।

কবিতা হলো কবির মৌলিক দর্শন। কবি তার বিশ্বাস কে প্রকাশ করেন নানাবিধ আকার ইঙ্গিতে। এই দর্শনে অস্তিত্বগত ঐতিহ্যের উপলব্ধি, সংবেদনশীলতা ও নির্ভরশীলতাকে পক্ষপাতহীনভাবে ফুটে উঠে। কবিতা যেহেতু বোধের চরিতার্থকে আদর্শমণ্ডিত করে, চিন্তার স্তর বিন্যাস উন্নত করে, সৃষ্টির পথে চেতনার অস্তিত্বের অবয়ব দেয়, পূর্ণাঙ্গ করে সম্মোহন শক্তির মাধ্যমে, তাই এখানে প্রতিনিয়ত সে শব্দ-ভাষা শক্তির রূপান্তর ঘটিয়ে চলছে। নিজের অস্তিত্বে, শব্দে, পরিভ্রমণ করছে সময়, কাল, যুগ-ক্ষণ।

একটা কবিতা গড়ে ওঠে কি করে? এমন প্রশ্ন প্রায়ই নাড়া দিয়ে যায়। কবিতা গড়ে ওঠে তার চারপাশ, একজন কবির বেড়ে ওঠা সমাজ ব্যবস্থা, অবক্ষয়, রাজনৈতিক অবস্থা, স্বপ্ন আশাবাদ সব কিছু মিলেই গড়ে ওঠে একটা কবিতা। কবি তার লেখাকে বারবার ভাঙেন আবার গড়েন, প্রতিটা মুহূর্তই শুদ্ধতার পথে হেঁটে যান। তার এই হেঁটে যাওয়ার পথটি অনন্তকালের, বন্ধুর পথে একাকীত্বের শ্লোগান।


প্রকাশিতঃ বুক পকেট

বোহেমিয়ান

পরম বন্ধু ভেবে ছায়ার কাছে এসে বারবার ভুল করি
প্রাচীন দেয়ালের সাথে সখ্য পাততে গিয়ে অনুভূত হয়
মহাশূন্যের নীরব এক এস্রাজ কে, আত্মনিমগ্ন স্রষ্টাকে।
পলেস্তারার খসে পড়া শব্দে, ধুলো ঝড়, খড়কুটো জীবন

ভুল উপত্যকা ভ্রমণে অবিরাম ছুটে বোহেমিয়ান প্রেম,
আরব্য রজনীর রূপকথা, নিঃসঙ্গ রাজকন্যার আহ্বান
প্রতিবন্ধকতার আড়ালে হাসা অদ্ভুত হাসি — তাকেও ভয়,
চিন্তার ভাজে সকালের রোদ্দুরে ঝরে বিরক্তির উপাখ্যান

জিপসি যাযাবর, পথের পাশে পাতানো আমার সংসার
তাঁবুর ভিতরে অবিরাম ঢুকছে রাতের শীতল হাওয়া
দিনের তপ্ত বালুকণায় উটের পিঠে খাদ্যের অন্বেষণ
সময় পেরোলে যাবো নতুন কোনো শহরে জীবনের খোঁজে

প্রতিবার ভালবাসার কাছে অবহেলিত হয়ে হেরে যাই
তবু… নিক্কণের শব্দ, অদেখা হাসি, ভাবায় আমার পথকে।

প্রকাশিতঃ বুক পকেট

অঙ্গার

আলো আঁধারি খেলা, মুছে যায় পূর্বের অস্তরাগ
নিয়ন বাতির শহর, নীরবতা ভাঙার শব্দ
ক্লান্ত মুখ ছুঁয়ে যায়, মলিন পাতার স্পর্শ ধ্বনি
মর্মর করে ভেঙে পড়ে, চেয়ে থাকে অবাক চোখ।

এই দৃষ্টিপাতে ক্লান্তি নেই, শুধু মৌন রক্তপাত
অশ্রুকণা ঝরে, যেটুকু ব্যথা সম্পূর্ণ নৈসর্গিক
অপেক্ষারত এক তুমুল ঝড়, অদৃশ্য ভাঙন
পৃথিবী শান্ত হলেও ঠিকই উত্তাপ থেকে যায়।

ভঙ্গুর শরীরে উঠে দাঁড়াই, অবাধ্য যোগফল
প্রাপ্তির নিরিখে হেরে যাওয়া এক নাবিক মাত্র
প্রশ্ন করো না আর, উপভোগ্য হোক এ’ পরাজয়
কঠিন বাস্তবতার মাধ্যমে, বিজেতার কণ্ঠে স্তুতি।

পুড়ে যাওয়া হৃদয়, রক্তপাতে ভাসমান দুঃখ
জ্বালিয়ে অঙ্গার করে, গোপন রাখে নি বাকী কিছু।

প্রকাশিতঃ বুক পকেট

অন্ধ পথিক

কোথায় আগুন, শান্ত স্থবির সবটুকু
বিভ্রান্ত সময়ের সাথে ছুটে চলা পথ
ঘূর্ণন গতিতে দৌড়ে চলেছে ঘড়ি
ঘণ্টার কাটা শোনা যায় বারবার।

ভাবুকতা নিয়েই পড়ে থাকে মন
গল্পের শেষে টিকে থাকে অস্থির রাত
পূর্ণ চাঁদ অবহেলায় হেসে ওঠে

শোনা যায় দূরের সাইরেন, গাড়ীর হর্ন
ট্রেনের কুঝিকঝিক সুর তোলা ধোঁয়া
রাস্তার ধারে পড়ে থাকে অচেনা ফুল
থাকে অব্যাখ্যাত কী সব যুক্তি বিদ্যা!

কোথায় আগুন? শান্ত সব অলিগলি…
অহর্নিশ ডাকাডাকি, রাতবিরাতে
অন্ধ পথিক পথ খুঁজে নিশীথ রাত্রিতে।

প্রকাশিতঃ বুক পকেট

Friday 11 December 2015

অন্ধকার ৫


এটাকে ঠিক কবিতা বলা যায় না। প্রতিবাদও না। অধিকার আদায়ের কোনো বক্তব্য লিপিবদ্ধ নেই খাতায়। তবুও আপনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে। একদম সন্মুখে চোখে চোখ রেখে শান্ত ভাষায়, দৃঢ় চিত্তে, নির্ভীক মননে কিছু কথা আপনার সামনে বিড়বিড় করতেই হয় আমাদের। শোনার মতো সময় নেই আপনার, আর হবেই বা কি করে, আপনার এখন কতো কাজ। পুরো একটা নিশান আপনার আঙুলে নাচে, উড়ে, ঘুরে, ফিরে।

অজস্র কথা চাপিয়ে দিয়েছেন আমাদের উপরে। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা। কিন্তু ইঁদুর বিড়ালের খেলার মতোই খেলে যাচ্ছেন পুরোটা সময়। আপনার কথাগুলো ক্রমশ মিথ্যে প্রতিশ্রুতিতে পরিণত হচ্ছে। আর একের পর এক ঘটনা আপনাকে করে তুলছে প্রশ্নবিদ্ধ। পত্রিকার পাতা খুললে এখন ভেসে আসে দুর্ঘটনার সংবাদ। তালহীন ঘুড়িটিও আকাশের ঠিকানা পেলে নিজেকে রাজা মনে করে বসেন। আর ক্রমশ সুতোর সান্নিধ্যটুকুও ভুলে যান।

ভূমিকার বাইরে এসে কিছু কথা বলার থাকে। বলতে গেলে সাতান্ন এসে জগদ্দল পাথরের মতো আটকে ঘরে। ঘর থেকে বেরোই না, চুয়ান্ন শব্দটা খুব পরিচিত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করায় আপনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা। যদিও আপনার আত্মীয়স্বজন অনেকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ঘুরে ফিরে আসে বারবার। আপনি তাদের বিপক্ষে সবসময় মিস্টেরিয়াস নীরবতা পালন করেন। আমি চিমটি কেটে পরীক্ষা করি চেতনার থার্মোমিটার।

পেপার খুলেই চমকে উঠলাম। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অনেক চিহ্নিত রাজাকার, অমুক্তিযোদ্ধারাও এখনো পেয়ে যাচ্ছেন ভাতা। এরচেয়ে বেশি কিছু বলার নেই। আমি শালা মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। সবসময় বেঁচে থাকার লড়াইয়ে মেতে থাকি। আমার কপাল অনেক ভালো, অন্য দশজন ছেলের মতো চাকরি নামের সোনার হরিণের খোঁজে ব্যস্ত থাকতেও পারতাম। আমিও তো ম্যানহোলে পড়ে নেই হয়ে যেতেও পারতাম, হয়ে যেতে পারতাম গুম, মধ্যরাতে লাশ পাওয়া যেতো কোনো ঝোপঝাড়ে। কিংবা চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে মরেও যেতে পারতাম।

এইযে আমার বেঁচে থাকা, মধ্যবিত্ত মানসিকতার লড়াই...এটা নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই আগামীর পথ।


Thursday 10 December 2015

কিছু মুখ

প্রাচীনকালে গল্পগুলো অন্যরকম ছিলো
রূপকথার মিহি শিল্প, উপদেশের ভাজে
খোদাই করা কিছু মুখ, হাসি, দৃষ্টিকোণ।  

সূর্যের আলোতে পরিণত হয় চিন্তাজগত
রূপকথামালা হারিয়ে যায়, শূন্য পূর্ণ হয়
অন্যকোনো রসালো প্রাপ্তবয়স্ক উপকরণে,
সেলুলয়েড ফিতার দিনগুলো বড্ড টানে।  

এই শহরের নিষ্প্রাণ সাজ বৃষ্টি দিনে,
জমাটবদ্ধ পানি, পাতাদের নীরব ঝরে পড়া
ফাঁকা রাস্তা, কেউ রাখে না হাত কারো হাতে
আয়নার সামনে নিজেকে অচেনা লাগে  

চোখের সামনে যা কিছু দেখি কঠিন বাস্তব
চাকচিক্যময়তা থমকে দিয়েছে চারপাশ
কিছু নিভৃতচারী মুখ, হাসি, ইশপের গল্প
সাজিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রকাশিতঃ বুক পকেট

মেহমান

দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষ করে আপনি এলেন।
দেখুন, এই সেই বিশাল মাঠ যেখানে বর্ষায়
কাদাজল লুটোপুটি খেতো, আমরা শীতের রাতে
আগুন জ্বালিয়ে পান করতাম মদ —চন্দ্রালোকে।

গ্রীষ্মের রাতে জ্যোৎস্নার আলোতে মনোমুগ্ধকর
পরিবেশে অজস্র বিনিদ্র রাত— মনে আছে আজো!
ঠিক পিছনে ছিলো একটা জীর্ণশীর্ণ ছোট্ট ঘর,
ছিলো বৃষ্টিফোটা, সূর্যের আলোর পূর্ণ বিচরণ

বদলেছে অনেক কিছু। সবুজ বদলে দ্রুতই—
গড়েছে ইট সিমেন্ট সভ্যতা, ঘরের আকারও
বদলেছে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে আপনার
স্মৃতির কার্নিশে আজো উজ্জ্বল ভাসমান নক্ষত্র।

অত্যাধুনিক জিনিষপত্র। প্রত্যেকের আলাদা ঘর।
শুধু… আপনার আয়োজনটাই বাদ পড়ে গেছে!

প্রকাশিতঃ বুক পকেট

কাঁটাতার

ভাষা নিজেই টেনে দেয় এক বিশাল বিভাজন
এপার ওপারেই বদলায় জানাশোনা ভূগোল
শিকর আঁকড়ে ধরা মানুষ ক্রমশ নামহীন,
মাছি ভেবে দুরদুর করেই তাড়ায় অহেতুক।

জমিদারি প্রকাশের উপযুক্ত সময় এখন
প্রচারিত হোক নিজ কীর্তন, যাদের গা লেপটে
আছে মাটির ঘ্রাণ, যারা পেরুলো সীমানা দেয়াল
তাদের কে অবাঞ্ছিত করে দাও ও’ ভদ্রপল্লিতে

অচ্ছুত সমাজ, ছুঁলেই চলে যায় সম্মানবোধ
তাদের দিয়ে দাও উপমা, অন্ধ বিশ্বাসের ‘পরে
নিজেকে তুলে ধরো নড়বড়ে ভ্রান্ত বিলাসিতায়
উপমাটুকু টিকে থাকুক আভিজাতিক মোড়কে

প্রাচীরসম কাঁটাতারের পাশে — অভদ্রপল্লির
নাম হয় ‘বেড়া টপকানো মাল’, কিম্বা ‘মালাউন’।

প্রকাশিতঃ বুক পকেট

উৎসব

সমুদ্র গর্জন শান্ত হলেই আমরা বাড়ী ফিরি
ফেরার সময় রেখে আসি, অলিখিত তাপ — চাপ
ভবঘুরের মিছিলে বিশাল মুহূর্তগুলো একা
তারুণ্যের ক্ষয় মুঠোফোন আর ভ্রান্ত অন্তর্জালে

মন্দিরের ঘণ্টার আশ্বাসে সময়ের ডাকাডাকি
গির্জার ও’প্রান্ত থেকে যিশুর ছলছলে আহ্বান
ইমামের পাঞ্জাবি জুড়ে সুরমা আতরের ঘ্রাণ
দৈনন্দিন প্রার্থনায় ভিক্ষুর উদাত্ত নিমন্ত্রণ।

ওদিকে চলছে উৎসব শ্রেষ্ঠত্বের আয়োজনে
কে কাকে ছাড়িয়ে তা নিয়েই এক যুদ্ধযুদ্ধ খেলা
অবিশ্বাসী কলম ভুলেছে মৈত্রীর সব বন্ধন
পবিত্র গ্রন্থাদির লেখাগুলো ক্রমশ মুছে যায়।

অজস্র রক্তক্ষরণের শেষে শান্ত সমুদ্র তীর
ভেসে ওঠে ফসিল, জীবিত চোখের মিথ্যে বিশ্বাসে।

প্রকাশিতঃ বুক পকেট

এপিটাফ

শ্রাবণে… ঝরঝরে রোদ বৃষ্টির আকস্মিক খেলা 
কে বা কারা যেন রেখে গেছে সুগন্ধি আতরদানি 
পলক ফেলে দাঁড়িয়ে যায় নির্ভেজাল সব চোখ 
ঘুমের ঘোরে নতুন করে কোন ডাকাডাকি নেই 

পাশে দাঁড়ানো সুপারি গাছ, নিঃসঙ্গতার শ্লোগান 
অবিরাম ছায়া দিয়ে ক্লান্ত নতজানু ভ্রান্ত মুখ 
রেখে গেছে জেসমিন আর রজনীগন্ধার স্টিক 
মাঝেমাঝে বকুলের ঘ্রাণ পাই, রিক্ততার স্বপ্নে।

নিয়মিত আয়োজনে ব্যস্ত, মনে রাখার কৌশল 
ভুলে যাওয়া কিছুনাম স্মৃতিপটে আঁকছে ছবি 
কারো কারো অভিমানী মুখজুড়ে আফসোস শুধু 
কৈশোর পেরোনো মেয়েটি বুকে চেপে রাখে কবিতা

সামনে দাঁড়ালে নামফলকে ভাসে করুণ নাম 
অবহেলায় শোয়া… প্রেমিকটি লেখেছিলো কবিতা  

প্রকাশিতঃ বুক পকেট

আগুনের ধারাপাত

মাঝেমাঝে থেমে যাও, রাখো কিছু স্পর্শ 
জারি থাক আঁকিবুঁকি, নরম পেলবে 
পায়ের চিহ্ন… বলো কতো রক্তাক্ত হবো? 
রক্তকণিকা চিনে, অলিখিত বিচ্ছেদ 
পরিচিত চিত্রপট, আস্ত কুঁড়ে খায় 
দুপুরের কষ্ট চিনেছে সকাল ঘড়ি 
সময়ের সমানুপাতিক শান্ত স্রোতে 
চেনা আগুন… কতো পোড়ালে থাকে ছাই 

অবশিষ্ট ছাইভস্ম বোঝে পুড়ে গেলে 
যা কিছু থাকে তার ডাক নামই মোহ 
সন্দেহের ব্যতিরেকে রয়ে যায় ছায়া 
পিছু লাগা নক্ষত্র জানে পথের মানে 
রুক্ষ পাথরও আঁকতে শিখেছে প্রেম 
দেখো… ক্ষত নিয়ে লীন হওয়া আগুন

প্রকাশিতঃ বুক পকেট

অরণ্য

কে অরণ্যের বুকেও অনেক দুঃখ আছে 
আছে তার কষ্টের গোপন ক্যানভাস 
লালন করে চলেছে লুপ্ত অভিসার 
পুষেছে শীতল ব্যথা স্যাঁতসেঁতে বুকে। 
নিঃসঙ্গতা জানে ভয়ের পোট্রেটজুড়ে 
সাদাকালো ডোরাকাটা দাগের কী অর্থ ! 
অভিমানী অরণ্য জানে রাত নামলে 
ক্যাঙ্গারু শাবক কত একা, অসহায়। 

অরণ্য চেয়েছিলো একটু নীল সঙ্গ 
সবুজ বুকে হরিতকী গাছের ছায়া 
নিম গাছের তলে প্রাণবন্ত বাতাস 
নির্ভেজাল অক্সিজেনের আসা যাওয়া 
বেশি নয় সে চেয়েছিলো কোমল হাত 
চেয়েছিলো মন খারাপ দিনে বন্ধুতা।

প্রকাশিতঃ বুক পকেট

Wednesday 9 December 2015

ঋতু

পেরিয়ে যেতে যেতে দূরে সরে গেলাম
চোখ মেলে আজো দেখি নি সময়টাকে
পালাতে গেলে বদলে যায় ঋতুচক্র
চক্রপথে ঘুরতে থাকে লাটিম প্রাণ।

স্পর্শ ভুলে গেছি ঠিকানা সহ, হারিয়ে
ফেলেছি শেষ সম্বলটুকু, ছিঁড়ে জুতো
আরো কয়েকভাগ হলে নির্লজ্জ চাঁদ
পরিচয় লুকোলে জিপসি মনে হয়

নিজেকে দশের চে' আলাদা মনে হয়
সমভাষী একই বর্ণের মানুষের
চোখে বিস্ময় খেলে যায় গবেষণায়
উৎসুক মন হাঁক ডাকে জোরেশোরে

যাযাবর পখিরা শুধু উষ্ণতা খোঁজে
এর বাইরে অন্য কোনো কিছুই নয়
ওম পেলে তারা পোষ মানে শীতকাল
প্রেম পেলে উড়ে বেড়ায় উঠোন জুড়ে

ঋতু বদলে গেলেই চলে যায় দূরে
আর ফিরে না কখনো, ফেরানো যায় না
জিপসি'রা প্রেম ভুলে যায় অতিদ্রুত
তার চেয়ে দ্রুত ভুলে নিজস্ব ঠিকানা।

Tuesday 8 December 2015

অন্ধকার ৪

আকাশ বন্ধ করে দাও বোতাম টিপে। বিকল্প পথযাত্রীদের রক্তাক্ত করো নানা অযুহাতে...কথায়...চোখে...মুখে...অঙ্গভঙ্গিতে। ঘুম ভাঙলেই খুঁজে পাওয়া যায় রহস্যের ঘেরাটোপ, শিঘ্রি আলো আসবে অথচ দৃষ্টিসীমায় আলোকবর্তিকা নেই। মাস্তুল জুড়ে অন্ধকার চাদরে ঢেকে দিয়েছে। নিরাপদ যাত্রাপথের এটাই এক অভিন্ন উপায়।

টিভি দেখি না বিজ্ঞাপন গিলতে হবে বলে। এরই মাঝে টি.আর.পি'র অংকে সামনে চলে আসে নানা অপ্রীতিকর খবর। ম্যানহোলে ডুবে যাওয়া শিশু, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত শরীর, বিল্ডিং ধ্বসে কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। ক্ষত বিক্ষত শরীরে কেউ হয়তো ফিরে, বাকিরা নয়...জনগণের বন্ধু বলে পরিচিত মুখগুলোর আচরণ শত্রুর মতো। নেভি ব্লু চোখ রাস্তার মোড়ে মালবাহী ট্রাকের দিকে তাকিয়ে থাকে দিনের অনেকটা সময়।

সেবক শব্দটাকে বড্ড অসহায় মনে হয়। ঠিক আভিধানিক অর্থটা মেলাতে পারি না। তারা নিজেদের নিয়ে প্রচারে এতো মগ্ন, ভুলে গেছেন প্রকৃত কাজ। কক্ষপথ হীন একটা কণা খুঁজে ফিরে তার মূল কেন্দ্র।

এ'দিকে দখল হয়ে যায় খেলার মাঠ। কিশোর ছেলেটির ভিতরের পশুটিও প্রকাশ পায় সুযোগ বুঝে। আটাশ দিনের বাচ্চা শিশুটিও পরীক্ষাকেন্দ্রে। কে বোঝায়? এই শহরে আজ সব রাজার শাসন। সবাই নিজেকে নিয়ে এতো মগ্ন যে দেখেনি তার চারপাশের প্রকৃতি। নিজের দোষ ঢাকতে চলে যায় পিছনের পথে। বন্ধ করে দেয় সব দরজা জানালা।

মতের অমিল মানেই আঘাত করো সজোরে। ছিন্নভিন্ন করে দাও সেই সকল মুখ। আত্মপ্রচারের এটাই অতি উত্তম পথ। পথিক হিসেবে আমি দেখি ঝরে যাওয়া কতগুলো পাখির পালক যারা গান লিখতে বসে হারিয়ে গেছে অজানা পথে।

Monday 7 December 2015

রাত এবং সকালের উপলব্ধি

আঙুল ছুঁয়ে থাকে আঙুলের গল্প। মৃত্যু ছুঁয়ে থাকে ইতিহাস। আটকে গেছে জগদ্দল পাথরে স্বপ্ন গাঁথা। নিজের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়াদির আড়ালে অনেক দুঃখ লুকিয়ে। ব্যস্ততার ফাঁক গলে এখন সময়ের জোয়ার ভাটায় ভেসে আসে পরিযায়ী সময়েরা। রাত বাড়ে টিক টিক শব্দে। ডিজিটাল ঘড়ির ঘণ্টা কালীন এলার্ম। জেগে থাকা একটা রাতের গল্প। অভিমানী কথারা পায়চারি করে সারাটা লন জুড়ে। জানালা খুলে দিলেই দেখি নিয়ন জ্বলে পোস্টের চূড়ায়। সেই আলোতে আবছায়া একটা খেলার মাঠ। সেও আমার মতো রাত পাহারায়, চারপাশের ব্যস্ততা নেই। শুধু পায়চারি করা ছাড়া।

খাবার ঘরে একটা ডিম লাইট জ্বলছে। লাইট টা কেনো জ্বলে জানি না, তবে আমি অন্ধকার ভয় পাই না। আলোকে এড়িয়ে চলতে বসে হারিয়ে ফেলেছি অনেক পাঠ। সকাল হলেই ছাদে যাবো। কতদিন ছাদে যাই না। একসময় প্রায় যেতাম। ভাল না লাগার যে সংবেদ আমার চেয়েও বেশি জানে না কেউ। ক্রমশ নিজের ভিতরের সত্ত্বাটা প্রশ্ন করে চলেছে অর্বাচীন সুখে। তার প্রশ্নবাণে ক্ষতবিক্ষত হই, রক্তাক্ত হই। তবুও জল নেই চোখে। মেনে নেয়ার তীব্র আনন্দ সুখ তাড়িয়ে মারে নীরবে। আমি বারবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। পা ফসকে যায়, ব্যথায় কুঁকড়ে উঠি। আবার দৌড়ে বিছানায় ফিরি।

সকালের বিছানা ছেড়ে উঠি। প্রাতঃস্নানে আয়নার নিজের প্রতিচ্ছবি দেখি। অচেনা একটা মানুষ সারাটা রাত পায়চারি করে কাটিয়ে দিয়েছে নিজের সাথে আনমনে এক ভাবনায়। প্রতি রাতেই নিজের ভিতরের অন্য আমি'কে আবিষ্কার করতে এখন আর ক্লান্ত লাগে না। বরং নিজেকে যুদ্ধ শেষে ক্ষতবিক্ষত এক অতিসাধারণ সৈনিক মনে হয়। যে সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরেছে নিজের ঘরে। 

Saturday 5 December 2015

অন্ধকার ৩

অন্ধকার ঘর। অন্য দশ জন ঠিক আমারই মতো। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে, কেউ দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে আছে। নানান জন নানান সমস্যায় এখানে। কেউ এখানের দশ বছরের অতিথি, কেউ আজীবনের সদস্য। নানান ঘটনায় আমরা আজ মুখোমুখি। কেউ আমার মতো নয়, আর বাকিরা সবাই প্রায় একই রকম। একই ঘটনার পথ যাত্রী।

আমার বিপরীতে আজ সব হৈহুল্লোড় করা আয়োজন। ঈশ্বরের বিপক্ষে লিখতে চাওয়ার জন্য এই দুর্বিনীত খড়গ। ছিদ্র করে দিয়ে যায় বুকের প্রান্ত। আমি সত্য লিখতে বসেই লিখে ফেলেছি তেল কূপের কথা। আমি সত্য কে ধারন করতে গিয়ে বলে ফেলেছি বিলাসিতার নির্মম বাক্য। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সবটাই শুধু ব্যক্তি স্বার্থের আঘাতে।

আমি অন্ধকার ঘরে খাতা আর কলম চাই। আমি লিখতে চাই অন্ধকারের কবিতা। পাতা ভর্তি থাকুক সত্যে। কেউ জানবে না এই খাতায় কি লিখা হয়েছিলো। ঈশ্বরকে লিখে দিবো খোলা চিঠি। আমি রাজা বাদশাহ কে লিখে দিবো তেল নিয়ে মিথ্যে অহংকারের ইতিবৃত্ত। আমি লিখে যাবো মৃত্যু পথ যাত্রার সকল আয়োজন।

বেশি দিন আর নেই, খাতার পাতা গুলো অধিকাংশই খালি রেখে যাবে। কাল কোনো অচেনা জিপসি কবি লিখে ফেলবেন কিছু অংশ। খাতায় লিখা থাকবে কৃষ্ণাঙ্গ হাতের ছোঁয়া, দক্ষিণ এশিয়ার উজ্জ্বল শ্যামল কোনো কবির আঙুল। শ্বেতাঙ্গ কবিরাও সোচ্চার হবে এই শূন্যস্থান পূর্ণতার পথে। আমার মৃত্যু খুলে দিবে অনেক জীবনের বন্ধ দরজা।

Thursday 3 December 2015

অন্ধকার ২

চলো শান্তির পায়রা উড়াই। সাদা পায়রা ওড়ানোর পরেই আয়োজন করি মোমবাতি জ্বালিয়ে এক মিনিটের নীরবতা পালনের উৎসবের। এরপর রবীন্দ্র সঙ্গীত গাই সকল অপচেতনা দূরীভূত করার প্রয়াস। আসো এই মৃত্যু উল্লাসে কবিতা লিখি। কবিতা লিখি প্রতিটি বোমার বিপরীতে। জীবনের স্বাদ আস্বাদনের নিমিত্তে কবিতা লিখি। আগেও বলেছিলাম, বস্তুবাদের জগতে কবিতার কোনো শক্তি নেই। যদিও মধ্য পৃথিবীর প্রিয় সহযাত্রী একই অভিযোগে মৃত্যুর পথে এগিয়ে যাচ্ছে। কবিতার লিখার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড। আমরা কবিতা পড়ছি এরপর।

কতগুলো বোমার আঘাতে একটা মানচিত্র ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। হিসাব কষে ফেলে লাভ ক্ষতির মুনাফা। প্রাকৃতিক সম্পদের লুটপাট করলেই ঠাণ্ডা হয়ে যাবে ভূখণ্ড। এখানে শান্তির জন্য কবিতা নয়, বোমারু বিমান বরাদ্দ করেছে ঈশ্বর। অতঃপর আঘাতের পর আঘাতে ঝাঁঝরা করে দাও সব সমান্তরাল জায়গা। বোকাবাক্সে প্রচারিত করো নিজেদের ক্ষমতা। ক্ষমতায়নের এই দুঃসময়ে নিজেকে প্রচার করার জন্যই এই প্রেসকিপশনেই বিশ্বাস তোমার। ও'দিকে সন্ত্রাসী মরে, বয়স ওদের কতই আর বারো...চৌদ্দ...ষোল...সন্ত্রাসের আস্তানা উড়ে যাওয়ার পর জানা যায়, ওটাকে ইশকুল নামেই চিনতো সবাই।

ওখানের মানুষ সকাল দেখে না। মসজিদে যায় না, অফিসে যায় না, হাটবাজারেও যায় না। শুধু পালিয়ে বাঁচতে চায় অন্য কোনো সীমান্তে। তাদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে কয়েক প্লাটুন পুলিশ। শিশুর মৃতদেহ মিলে যায় সমুদ্র সৈকতে। আমরা শান্তির জন্য মসজিদে যাই, গির্জায় ধর্না দিই, মন্দিরে যাই। আর তারা বোমা মারে, নিরপরাধ মানুষ মারে, অথচ সন্ত্রাসী নয় একদমই।

চলো আমরা কবিতা লিখি, মোমবাতি জ্বালাই। মৃতদেহের স্মরণে এক মিনিটের নীরবতা পালন করি। এটাই অক্ষম লোকের একমাত্র ক্ষমতা। আমরা নৈতিকতার কারণে শান্তির কামনায় দাঁড়িয়ে থাকি ভুল সময়ে, ভুল দরজায়।

Wednesday 2 December 2015

অন্ধকার ১

পরতে পরতে মিথ্যে লুকিয়ে। আত্ম অহংকার সরিয়ে দেয় পা মাটির অনেক উপরে। ক্রমশ অক্সিজেন শূন্যতায় ছিঁটকে পরে মাটির অনেক উপরে। বুদ্ধিমান চোখ যখন অন্ধ সাজে, তখন ছড়াতে থাকে কানকথা।  আত্মসম্মানবোধের তীব্রতায় পুড়ে যায় দর্শন। ভস্মটুকু আঁকড়ে ধরে রাখে একদল বানোয়াট মুখ। পুড়ে ফেলা কবিতায় ভুল বানানে আটকে দেয় সেফটিপিন।

ছোট্ট ছিদ্রগলে আলো ঢুকে, সেইসাথে ঢুকে পড়ে দুষিত বাতাস। পত্রিকার পাতায় লিখা থাকে আত্মপক্ষ বিশ্লেষণ। আবেগ দিয়ে ভাসিয়ে নেওয়ার পরও ফাঁক গলে বেরিয়ে আসে নিগুঁঢ় বাস্তবতা। এটাকে অস্বীকার করলেই উড়ে আসতে থাকে উটকো ঝামেলা।

বিকল্পপথে আমাদের পৃথিবী খোলা। সেই পথে আমরা শ্বাস নিই প্রতিদিন। রাগ অভিমানও ঝাঁড়ি, পুনরায় ছুটে চলার অদম্য নেশায়। আমাদের সকালগুলো স্বপ্নমাখা। আঘাতের পরেও উঠে দাঁড়াই, সেফটিপিনটাকে ছুঁড়ে ফেলি রাস্তায়।

আমরা সর্বহারাদের দলভুক্ত নই। তবুও সাহসটুকু বুকে নিয়ে চলি। বারবার শুধরে নিই সঠিক পথ। অথচ...আমাদের জন্য সর্বভুকের মতো হা করে তাকিয়ে আছে নিঃসীম অন্ধকার।

স্বপ্ন

ভুল বৃত্ত। ভাঙার আগেই ক্ষত শরীরের পায়চারী
মাত্রা ভাঙার নিমিত্তে হাঁক ছেড়ে ওঠে বারবার ,
নগর দারোয়ান চিৎকার করে জানান দেয়
রাতের সঙ্গী হিসেবে কুকুর তাড়ানোর আয়োজন
রাত বাড়লে, ম্লান হয় না সাদাকালো স্মৃতিপট,

ছিঁড়ে খায় আমাদের সবটা রঙ, নগর রাজপথে
বেওয়ারিশ প্রাণের হাহাকার, হুশিয়ার সাবধান
বলে হুইসিল বাজায়। চাঁদের লজ্জা ভাঙলে
কোজাগরী ঈশ্বরের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারি।

আমি শয়নকক্ষে বিছিয়ে দিই সুগন্ধি ফুল
ছিটিয়ে দিই, দামী গোলাপ জল, পারফিউম
সুঘ্রাণের তীব্রতায় ঘুমটুকু পালিয়ে যায়
সুবহেতারার আগমনে মসজিদ হতে ভেসে
আসা আজানের ধ্বনি, পথে আলো আসে নি।

সূর্যোদয়ের পরপরই আমি ঘুমিয়ে যাই,
এই যাত্রাপথে কোনো স্বপ্ন লেখা থাকে না
সুগন্ধিও না, নগর দারোয়ানের হুইসিল
কুকুরের হাঁকডাক কিছুই থাকে না,
তবুও অনেক মানুষ পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।

সকালের সুর


ভুলে যাওয়া গিটারের ছয়টি তারে
এখনো ভেসে আসে টুংটাং। আশ্চর্য!
সংশয় ভুলে মুখ লুকাও, গর্ত খোঁজ
অকারণ আবেশে, হিসাবের অংক
ভুলে গেছো প্রাপ্তির অংশ নিয়ে।

মঙ্গলবারটাও বদলে যায় কুয়াশায়
কার থেকে পালাচ্ছো সারা সময়
নিজেকে চিনতে দাঁড়াতে পারো
আয়নার সামনে, প্রশ্নের পর প্রশ্ন
করে যাচাই করে নাও অবস্থান।

জয়ী ভাববার আগে একটু দাঁড়াও
বুকে হাত দিয়ে দেখো একবার
গভীরের শ্বাস গুলো কতো অসহায়
অসম, দোদুল্যমান প্রহসনে আজ
শান্ত হয়েছে, কুয়াশার সকালে।

থেমে যেতে যেতে ভাবতে পারো
সকাল মানে পরাজয়ের নামতা
সালতামামি জুড়ে আছে মরীচিকা
সামনে পথ চলেছো অনেকদূর
তবুও আগানোর খাতায় নেই প্রাপ্তি
এখনো অহংকারে ভাসাও নৌকা

মেঘ নেমে এলো, ঝড় নামবে এবার...

উপলব্ধি

চাপা আতঙ্ক আর আশঙ্কা আগামীর পথে ঘাটে...
সবাই নীরব, কারো মুখে কথা নেই, গিলে খাচ্ছে
সব অভিমান। পত্রিকার পাতা জুড়ে মিথ্যে বুলি
দেখেও দেখে না কেউ। কোনো কথা নেই। শুধু সহ্য...

লড়তে গিয়ে মরেছে প্রাণ তাকে নিয়ে রাজনীতি...
আমাকে কে শেখালো বাঁচার মন্ত্র, হার না মানার
বিশাল অঙ্গীকার। আগুন জ্বালিয়েছি ভুল পথে।
কারো কণ্ঠে ঝরতে দেখি নি, জীবনের সংগ্রাম।

অন্ধকার মুখ গিলে খায় আমাদের স্বপ্ন সুখ,
এখানে সৃষ্টির চাষবাস বন্ধ, ছেঁড়া তমসুক
জুড়ে স্তব্ধ করা নীরবতা। বোকাবাক্স দিয়ে যায়
অবাস্তব জ্ঞান বিতরণ, অবান্তর প্রদর্শনী।

প্রচণ্ড প্রিয় এ' রাজপথ, শ্লোগানে মুখর সন্ধ্যা
নিষ্প্রাণ পৃথিবী হাতছানি দেয় রক্তের প্লাবনে।

অপমৃত্যু

যে ফুলগুলো ঝরে পড়েছে অনাদরে তার জন্য
এক মিনিট জুড়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো নাটুকে ছল
চোখ ঢেকে দাও বিজ্ঞাপনে, মুখে লাগুক লাগাম
স্বপ্নগুলো বেহাতে হারায়, পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

প্রশ্নের জবাবে প্রশ্ন আসে, উত্তরের বিনিময়ে
অদ্ভুত নীরবতা বাঁচিয়ে রাখে কৌতূহলী মন।
সকাল কতদিন আসে নি, যারা আলোর পথিক
তাদের রক্তে বয়ে চলেছি রাজপথের মিছিল।

প্রবঞ্চনা আর প্রহসন - খুব কাছ থেকে দেখি
শোনা যায় আস্ফালন, বেঁচে থাকার গভীর ইচ্ছে
নগর সর্দার দরজায় বসাও কড়া প্রহরা
তোমার ভুলে ঝরছে ফুল, রক্তাক্ত হয় বাগান।

ফুলহীন বাগান জঙ্গল মাত্র। স্বপ্নহীন প্রাণ জানে
ধ্বংসের শেষ প্রলয়ে থাকে, সভ্যতার অপমৃত্যু।

Tuesday 1 December 2015

উপলব্ধি

নীলচে অনুভব ছুঁয়ে দিলেই বৃষ্টি হয়
সময় অসময়ের ফাঁকফোকরে
বখে যাওয়া দিনের স্বরলিপি।
বৃষ্টি নামলেই ঠাণ্ডা নামে না এখানে
কুয়াশায় ঢাকা সকালের ইতিউতি-তে
কিছু মেদহীন স্বপ্ন হঠাৎ বাষ্পীভূত...

চেয়ারটা খালি পড়ে আছে দীর্ঘদিন
ড্রেসিংটেবিল জুড়ে দীর্ঘশ্বাস
চুড়িগুলো ঝুলছে সারিবদ্ধ
বেলজিয়াম মিররে টিপগুলো অসহায়
কবিতা গুলো এখনো কথা বলে
প্রতি সন্ধ্যায় তাদের উল্টেপাল্টে দেখি।

একান্ত ব্যক্তিগত বলে কিছু নেই
বড়জোর কিছু অফিসিয়াল ডকুমেন্টস
নাহ, হোয়াটস আপ আর ম্যাসেঞ্জারেও
তেমন কোনো ড্যাটা জমা নেই
তবুও তুমিহীনতায় কত্ত বিশাল ফারাক।
গত বছর ছিলে, আজকের দিনে নেই
আগামী কাল থাকবে না, সেটা জানাকথা।

এমন কোনো রোম্যান্টিক আলাপন নেই
দরকার ব্যতীত কোনো জিজ্ঞাসা নেই
রসায়নের বুকে তীব্রতার দহন নেই
নতুন প্রাপ্তির খাতায় কোনোকিছু নেই
তবুও তো অনেক শীতকাল, অনেক বৃষ্টি
বিনা বাক্যালাপে পার করে দিলাম।

আর কিছুদিন থেকে গেলে কী এমন হতো!

অবগাহন

ভুল পথে অনেকটুকু আগানো হলো। প্রত্যাশার বুকে ছুঁড়ি চালালো কে, এতো কঠিন উল্লাসে। ভ্রান্তি ছুঁড়ে ফেলে দিই পিছনের পথে। ঠিক এভাবেই এগিয়ে চলেছি পিছন ফেলে দীনতা। মায়াবী আবেগ টুকু লাগাম টনতে টানতে হয়ে গেছি ঘোড়সওয়ার। কোনো আরব্য ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটে চলেছি দিগ্বিদিক। জানি না এর শেষের কাঙ্ক্ষিত মিলনের বিন্দু।

যাযাবর জীবনের পথে পথে দৌড়তে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছি অনেক। যা কিছু পেয়েছি নাগাল জুড়ে, তার পুরোটা মরীচিকা। শেষের রেশটা বিরহ সহকারে বৃষ্টি নামায়। আভিজাত্য নিয়ে মুখে হাসি ফোটাই। ক্ষত বুকে প্রলেপ মাখি। আটকে রাখি নিজেকে, সব মিথ্যে মিথলজির আবরণে।

আমার গল্পগুলো সত্যের মতো, তবে সত্য নয়। আংশিক মিথ্যে এসে তাঁবু গেড়েছে তার সাথে। মিশে গেছে প্রণয়ের অন্তরালে। দুষিত হয়ে পড়ছি ক্রমশ। মুক্তির অপেক্ষায় এখন আর দুরবিনে চোখ পাতি না। আপেলের অর্ধেক অন্ধকার। বাকি অর্ধেকে মুখোশ পড়া কোনো হলোকস্ট।

ক্রুসেডের মতো নীল হচ্ছি একটু একটু করে। ছড়িয়ে পড়ছে পচন সমগ্র শরীরে। একদিন সবটুকু রক্ত ঝরে গেলে নিষ্প্রাণ দেহটুকুও রক্ষা পাবে না। ছিঁড়ে ছিন্নভিন্ন করে বিজয় উল্লাসী ধ্বনিতে লিখা হবে পরাজয়ের সুনিপুণ এক কারুকার্য।