Monday 21 March 2016

বিব্রত

বিব্রত
ইমেল নাঈম

থামুন। আর কোনো অস্থির ছোটাছুটি নয়
আমাদের সবটা কালো অপ্রকাশিত থাকুক
মুদ্রার উভয় পিঠের মতোই পরিণতি জানি
আমাদের স্পর্শ কালো হয়ে উঠুক বসন্তে
কালবোশেখি এলো এলো করেই সাজাতে
থাকি নতুন নতুন উপকথা।

ফুলের বাগানে এখন কোনো ফলন নেই
বন্ধ্যাকালীন অন্ধকার ঘিরে ধরে চারপাশ
দীর্ঘসময় পাপড়িহীন হয়ে গাছ বেঁচে আছে
আমরা মেতেছি উৎসবের ঘ্রাণ বুকে নিয়ে
অন্ধকার তবুও স্বীকার করি না কালো।

অক্সিজেনের পরিমাণ কমছে, বাড়ছে বিষ
শ্বাসপ্রশ্বাস নিতেও সাবধানী। একটু ভুল
বদলে দিতে পারে আপনার অবস্থান,
মুহূর্তে পরিণত হবেন হিরো থেকে ভিলেন
আমাদের অন্ধকার আড়ালে রাখুন প্রিয়।

আলোর সামনে নির্লজ্জ'র মতো মাথা পাতুন
ঢেকে রাখুন কালো হাত, ভদ্রলোক পকেটে
কঠিন চীবরদানে মত্ত হন, কোনো কথা
বলবেন না। মুখ খুললে অন্ধকারটুকু চোখ
মেলে তাকিয়ে বিব্রত করে দিতে পারে সমাজ।

Sunday 20 March 2016

সিঁড়ি

সিঁড়ি
রিমঝিম আহমেদ

চল
চলে যাই
যেতে-যেতে-যেতে
কোথাও থামতে হলে
বিজন ছায়ার নিচে বসে
প্রজাপতি ওড়া দেখব দুজন
আমাদের ক্ষণিকের বিবর্ণ জীবন
স্যাঁতসেঁতে দেরাজের নিচে ক্ষয়ে যাওয়া গল্প
আজও ক্ষরণের কাছে অযাচিত আত্মসমর্পণ 
চল সবুজের পথে, দূরে-- চাঁপাবন যেখানে সুগন্ধি
মেলে রাখে, সেইখানে, চল হেঁটে যাই ভোরে প্রাচীন আকাশে
যেখানে তারার মতো জ্বলে দগদগে লাল নিয়ে ক্ষয়িষ্ণু অসুখ 
কাজির দেউড়ি জ্বলে; সন্ধ্যের বিতান খুলে দিয়ে আলো এসে নামে চোখে
ঝাঁঝাল স্মৃতির ঘ্রাণ; মানুষ বিচিত্র দাহ্যবস্তু অগোচরে পোড়ে, শুধু পোড়ে।

Sunday 13 March 2016

আকুতি

ইমেল নাঈম

খুলে যায় অলিখিত পর্দা, অর্গল ভাঙলো সুখে
জমাট স্তব্ধতা ছিঁড়ে খেলো দায়দায়িত্বের বোঝা
সত্য এড়াতে পারি না, আড়ালে হাসে বিধাতা
কিভাবে এলাম পাশাপাশি, জানে না দেয়াল ঘড়ি।

সবটা ছুঁড়ে ফেলে, ছোটার কোন ডাক নাম নেই।
এটাকে পাগলামো বললে বড্ড বাড়াবাড়ি হয়।
তবুও ঘোর। জাগে না সন্ধ্যা, বিকাল আসলে স্তব্ধ
হয়ে যায় সূর্য। থেমে যাও তুমিও—বিভ্রান্তি নিয়ে।

হাত রাখার মানে জানি না। হয়তো ধ্বংস যাত্রার
প্রথম স্তর, যুদ্ধের শেষে রক্তাক্ত শরীর থাকে...
এরপরে নতুন প্রস্তুতি, সেখানে স্পন্দন নেই
দৈনিক জীবনের আলাপ গিলে খাচ্ছে মৌন সুখে।

থামতে চাইলে এক তুড়ি। ছুটতে গেলে ডেকো না
পালাবার সূত্র নেই, আছে তীব্র দহনের খেলা।

Friday 11 March 2016

আলোর ভিড়ে হারানো রোদ

ইমেল নাঈম

সকাল দশটা, কলেজ ক্যাম্পাস ব্যস্ত আঙিনা
মামার দোকানে ধোঁয়া ওড়া চা, বন পাউরুটির
ফাঁক গলে উঠে আসে এক শলাকা নিকোটিন...
মনে হয় কী যেন নেই আজ - সবকিছু ফাঁকা!

আজ কেনো সে এলো না? প্রশ্নের উত্তর নেই
তবুও জানতে ইচ্ছে করে। মুঠোফোনে মুখবইয়ে
উঁকিঝুঁকি করি সংকেত বা খবরের আশায়।
শরীর খারাপ করলো না তো? দৌড়ে জানতে
ইচ্ছে করে নিচের শ্রেণির রুটিন। বুকের বাঁপাশে
তুমিহীনতায় কেটে যায়, সংকোচ বেঁধে দেয় পা।

হঠাৎ করে একটি হুডখোলা রিকশা এসে থামে
তাও আবার মামার দোকানের ঠিক সামনে
একটি কোমল হাত পার্টস থেকে টাকা দেয়
মুখটা কার জানতেও ইচ্ছে করে না একদম।
চিন্তায় মাথা জ্যাম, অন্য কিছুর ভাবার সময় নেই

নামতেই আমার দিকে এক চিলতে হাসি
পিছনে বন্ধুদের অট্টহাসিতে টিটকারি ভাসে
নিজেকে সেই মুহূর্তে বড্ড রবীন্দ্রনাথ মনে হয়
তার হাসিটাকে মোনালিজা নয়, এরচেয়েও
সুন্দর যা অনুভব করা যায়, ব্যাখ্যা নয়।
অস্থিরতা নেমে যায় অদ্ভুত ভালোলাগায়
বালিকার চোখ ভাসতে থাকে দৃষ্টির সীমানায়।

Thursday 10 March 2016

সায়কের জন্য কবিতা

ইমেল নাঈম

আপনাকে অনেক আগে সায়কের কথা বলেছিলাম
মনে আছে তো, নাকি ভুলেই গেছেন ব্যস্ততার মোড়কে।
কবিতা পাগল ছেলে। প্রায়ই বলতো কম লিখছি,
বেশি লিখা আমার আসে না। একটা কবিতা লিখতে
বসলে প্রচণ্ড মাথাব্যথা আর মনে দ্বিধা কাজ করে।
আর দ্বিধার বশে একের পর এক শব্দ বসাতে থাকি
কিন্তু সহজ শেষ লাইনটা আর আঁকতে পারি না।

ছেলেটি দারুণ লিখতো। প্রায় বলতাম লেখা ছেড়ো না...

মাঝে অনেক দিনের এক যাত্রাবিরতি। কোনো খবর নেই
প্রযুক্তি কখনো মানে নি কাঁটাতার। আমার তো পাখি মন
উড়ে বেড়ানোর খুব সাধ। শুধু ক্ষমতার অভাবটুকু
জানান দেয় যোগ্যতার বিন্দু। কখনো দেখা হয়নি,
তাকে আমি অনুভব করি অকৃত্রিম এক বন্ধু আমার।

অনেকদিন বাদে ইমোতেই কথা হলো আবার।
বদলে যাওয়া সায়ক কে দেখে নিজেই চমকে উঠি।
কবিতা পাগল ছেলেটি এখন আর কবিতা লিখে না
তার ব্যস্ত সময় কাটে ছোট্ট একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে
সে রেইলের টিকেট কাটে, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে
ইএসবি ফ্যাসিলিটি দেয়, কিন্তু কবিতা লিখে না একদম

শুধু জেনে রাখুন সায়ক একসময় দারুণ কবিতা লিখতো
সে এখন ভাতের হিসেবটুকু লিখে রাখে খাতায়...
এর বাইরে নতুন করে একটি শব্দও লিখে না
আপনাকে তো অনেক আগে সায়কের কথা বলেছিলাম।

Tuesday 8 March 2016

বার্তা

ইমেল নাঈম

শব্দহীনতা খুব প্রিয়, তাই আটকে দিতে চান কণ্ঠ
পৃথিবী নির্বাক হলেই আপনার সুখ,
অন্য মতামতকে চাপিয়ে দিন ধর্মের মোড়কে
নিরপেক্ষতার জায়গায় বসিয়ে দিন অনুগত চর।
দিনে দুপুরে জিভ কাটার বিল মাত্র পাঁচ লাখ।

ধর্মের মোড়কে রেখে দিন সবটুকু মানবতাবোধ
আস্তে আস্তে প্রসার বাড়ুক জাতীয় দাঙ্গাবাজ
ধর্ম নামক মাদকের প্রসারে বাড়ান ভোট
জিতলেই শুরু হবে নতুন কোনো উন্মাদনা।

পেটোয়া বাহিনী আছে, আছে অন্ধভক্তের দল।
পিটিয়ে উড়িয়ে দিতে পারেন অন্য দলের লোক
সমস্যা নেই সুনিপুণ ভাবে বাড়ছে সেই সংখ্যা,
দুর্নীতি নিয়ে কোনো কথা নেই, সন্ত্রাসবাদ তো
নিজের মাঝেই লুকিয়ে, গড়ে তুলেন মন্দির...
গির্জা জ্বলুক আগুনে, গরুর নামেই নগ্ন দলিত।

রাত ফুরলেই আইনজীবীর দল আইন ভুলে
সন্ত্রাস হয়ে ফিরবেন ঘরে, এরপর অত্যাচার
নিপীড়ন, এতো অনেক সহজ ঘটনা।
আমরা ভুলি না নিপীড়ন, দুঃখ ক্লেশের দিন।

অন্যায়ে চুপ না করার অভ্যাস আমাদের পুরনো
চাইলেই আপনি বদলাতে পারবেন না ঐতিহ্য।
রক্তস্রোতে ভেসে যাওয়া আমাদের এই ভূমিতে
কাঁধে রাখা কাঁধ গড়ে তুলেছে বিশাল প্রাচীর
বিশাল রক্তস্রোতের বিনিময়ে লিখা ইতিহাসে
সমূহ পতন বোঝে না নেশায় আচ্ছন্ন গিরগিটী।

Thursday 3 March 2016

বোধ

ইমেল নাঈম

আছি, শব্দটি আবেদন হারালে অনেক শব্দ টেক্সটবুকের
ভারি শব্দের মাঝেই খুঁজে পাওয়া যায়, যদিও বাস্তবতা
অস্বীকার করতে করতে নিজের নগ্নলেজ টুকু বেরোয়
অচেতন অবয়বে—এই নিগূঢ় বাস্তবতার কোনো উত্তর নেই। 

প্রশ্ন কোরো না পুনঃপুন, এতো প্রশ্নোত্তর শিখি নি
উত্তর দেয়ার আগে ভাবতে দাও, থাকার উপকারিতা
না থাকলে কীইবা এমন ক্ষতি, প্রাপ্তির মোড়কে
ভুলভাল শব্দের কাছে গচ্ছিত আছে অনেক ঋণ
তীব্র দহনের পরে ছাইও মাঝেমাঝে দলিল হয়ে ওঠে।

অনেক গল্পের শেষে সেখানে আবছা প্রবঞ্চনা থাকে
এতোটা সূক্ষ্ম অবয়বে কেউ আঘাত করে নি আমাকে
বিষণ্ণতায় ঘুমের ট্যাবলেটেরও থাকে নিরবচ্ছিন্ন অবসর
অবসাদের ভাষা শিখতে বসেছে একুরিয়ামের গোল্ড ফিশ

এরবাইরে দিনগুলো সাদামাটা। এই থাকা — না থাকার
তফাতে টিকিয়ে রাখতে পিছাতে পিছাতে শক্ত দেয়ালের
খোঁজ পেয়ে যাই। অথচ জ্বলে পুড়ে যাওয়া ছাইগুলোর
নীরবতা একবারও ভাবায় নি আমাকে। আমি আছি...কিন্তু...
স্থান, কাল, পাত্রভেদে অনুভব করতে পারছি না একদম।