Monday 30 July 2018

ভালবাসার রূপ রোমন্থন

ভালবাসার রূপ রোমন্থন
ইমেল নাঈম

হেরে যাওয়ার গল্পগুলো পালিয়ে যায় আড়ালে
নিদ্রা যাপনের ফাঁকে বিমূর্ত দৃশ্যপট আঁকছে
বিষণ্ণতার দিনরাত্রি। পোষা পাখির সঙ্গম দেখার
অপরাধে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি এখনো।

নির্ঘুম রাতের চাদর খুলে নেয় অব্যক্ত কথা
চাঁদের পেয়ালায় ঝরে পড়ে নীরব অনুভব
নির্বাক কথোপকথন অথবা ঈর্ষান্বিত পর্দা ভেদ
করে অকারণে হেসে উঠেছে আমাদের অলক্ষ্যে

কথার প্রাচীর নেমে যায়, সৌখিন পিয়ানোয় ঝঙ্কার।
আবার এমন হতে পারে— গহীন নীরবতার ফাঁকে
নৈঃশব্দ্য সঙ্গীতের মাঝে ঝুলতে থাকা কথাদের
আবিষ্কার করে ফেলি অবচেতন অনুভাবের রেশে
নিজেকে প্রশ্ন করিনি, তোমাকেও করিনি আড়াল।

চুপচাপ থেমে যায় দূরের পথে, নিঃসঙ্গ চাঁদ
ডুবে যেতে যেতে রেখে যায় কিচিরমিচির শব্দ
তবু চুপসে যায় দিনের আলো ফোটার আগেই
নীরবে রেখে যায় কিছু শিহরণ— অব্যক্ত প্রেম...

Wednesday 25 July 2018

অন্যরকম ভাষা

অন্যরকম ভাষা
ইমেল নাঈম

প্রাচীর খুলে ফেলো। বিমর্ষ দাগের বিন্যাসে
কিছু কাল্পনিক গল্প লেখা হয় অবচেতনে,
মুহূর্তগুলো মলিন হতে হয়ে ক্ষয়ে গেছে

উপচে পড়েছে ভুল সব হিসেব নিকেশ
পথের ক্লান্তি মেপে নিয়েছি— হাতের ভাজে
রেখে দিচ্ছি আমাদের জীবনের গল্প।

চুপচাপ... শব্দহীন...
কেবল চেয়ে চেয়ে দেখা,
মঙ্গলধ্বনি বেজে ওঠে...

অসময়ে বেড়ে যায় রক্তচাপ, দূরত্ব বাড়ছে
সুখে, অসুখে আহত হচ্ছি— নতুন পথ
অচেনাই রয়ে গেলো, স্পর্শ মুছে গেছে

ক্লান্তি নেমে আসে, ফিসফিস শব্দ শুনি
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিজেকে মাপি
কাটাগুলো ভুলে যায় ভাষা
ভাসতে ভাসতে ঢুকে পড়ে
গহীন অরণ্যে জেগে থাকে একাকীত্ব

এরপরে মঙ্গলধ্বনি শুনি...
শূন্যতাকে মাপতে থাকি...
নৈঃশব্দ্য হয় অলংকার...

Tuesday 24 July 2018

বৃষ্টিমুখর বিভব

বৃষ্টি মুখর বিভব
ইমেল নাঈম

ভালোবাসা ঝরছে, তারও আগে ঝরেছে গোলাপ
এলায়িত, অলস মানুষগুলো অনধিকার চর্চায় ব্যস্ত...
শুধু লাল নীল রঙে রাঙিয়ে নিচ্ছে নিজেকে,
প্রত্যেকে যেন সার্কাস দলের ক্লাউন কিংবা জোকার
হাসিমুখে যে যেভাবে পারছে ছুঁড়ছে অঙ্গভঙ্গি,

তুমুল বৃষ্টিতে কারা ঠোঁটে আঁকছে সাহসী চুমু?
তা নিয়ে হুল্লোড় বাঁধলো সামাজিক মাধ্যমে
কতটা প্রেম, কতটা সাহস— তা নিয়ে ভাবল না কেউ,
সবাই কানাঘুষো করতে লাগল উচ্ছন্নে যাওয়ার
নিজের অপ্রাপ্তি, অক্ষমতাগুলোকে ঢাললো ক্রোধে

আমিও প্রেমিক ছিলাম, বৃষ্টিতে হুড খোলা রিকশায়
ভিজতে ভিজতে দুজনে চলে যেতাম এধারওধার
বৃষ্টিতে একবারও চুমু আঁকতে পারিনি ওই ঠোঁটে।

কিছু চুম্বন তুমি লিখে রেখেছিলে আমার গায়ে
তার সমান্তরালে এঁকে নিয়েছিলাম গুহা চিত্র...
দেখো, তুমুল বৃষ্টিতে ভেজা সেই চুমুটার দিকে
অনুভব করো বয়স কমে যাচ্ছে তোমার,
ইচ্ছে হচ্ছে টাইম মেশিনে চড়ে চলে যাই
বছর সাতেক আগে; অথচ, বদলে গেছে সময়

শুকিয়ে যাচ্ছে ঠোঁট, গলার শব্দরা অস্পষ্ট হচ্ছে।
জানি না, অপ্রাপ্তিগুলোকে কেন রোমন্থন করছি?

সম্পর্কের মাঝে চুমু একটা অমোচনীয় সীলমোহর,
যা লেগে থাকে আজীবন, সম্পর্কের শেষেও
গায়ের মাঝে মিশে যায়, কিছুতেই মোছা যায় না

দুজনেই বিপরীত মেরুতে বসে অনুভব করছি,
কিন্তু কাছে আসতে পারছি না, বলতে পারছি না
সবটা কালো নিয়েই শেষ হয়ে গেছে আমাদের
কাছে আসতে পারছি না, শুরু তো দূর... বহুদূর...

ঝরছে তুমুল বৃষ্টি ভিতরে, বাইরে, সবখানে।

Monday 23 July 2018

নিজস্ব

নিজস্ব
ইমেল নাঈম

মলিন দুঃখবোধ। বারবার উড়ে আসে হিংস্র তির।
অপরাধী নই, তবু কাঠগড়ায় দাঁড়াতে শিখে গেছি
ম্লান মুখের হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি বিষণ্ণতা,
এখন চোখে চশমা পরে থাকি— লাল নীল রঙা
যাতে কেউ নির্মম শূন্যতা বুঝতে না পারে,
বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মির কাছে শিখে নিচ্ছি সব।

কোমল ভুলে নির্ভরতার সূত্রগুলো ব্যর্থ হচ্ছে 
খেলাচ্ছলে ভেঙে যাচ্ছে, অনিচ্ছায় চাপছি মুখোশ
চোখেমুখে বিরক্তি ঝরছে, মিশছে মাটির সাথে
নিজেকে প্রশ্ন করতে করতে ক্ষয়িষ্ণু পাথরের
মতো মিলিয়ে যাচ্ছি কর্পূরের ঘ্রাণে, ভ্রম নিয়ে।

রেশ নিয়ে দৌড়ে চলেছি। শালবন পেরিয়ে যাচ্ছি
আনন্দ ভরা মুহূর্তগুলোর উপর বিশ্বাস করে লিখছি
ভুলে ভরা কিছু শব্দ বিন্যাস, বাড়াবাড়ি করছি...
নিজেকে মুছে দিচ্ছি ইরেজারে, আবার আঁকছি
অর্থহীন অবয়বে— বালুচরে গড়ি তাসের প্রাসাদ,
নীরবতা ভাঙার বিনিময়ে জাগছে দুঃখবোধ।

প্রাচীন দুঃখগুলোকে বিনির্মাণ করে ফেলি
হেলায় ফেলায় হারিয়ে ফেলছি নিজের সবটা
নীরবতা ভাঙে... হেলায় হারাচ্ছি সব...
কিছুটা ঋণ নিয়ে চুপচাপ বসে থাকি একাকী
অন্বেষণে উঠে আসে সমুদ্রসমান নিস্তব্ধতা...

Sunday 22 July 2018

নিভৃত প্রেম

নিভৃত প্রেম
ইমেল নাঈম

দেশলাইয়ের বাক্সের মতো ভেঙে যায় সকল প্রতিরোধ। অর্থহীন শব্দের প্রলেপ সেঁটে দিয়ে বসে থাকি জানালার পাশে। শহুরে বাতাসগুলো বদলে যাচ্ছে দ্রুত— মানুষের মতো বদলে যাচ্ছে তারা। দক্ষ অভিনেতার মতো দ্রুতই মানিয়ে নিচ্ছে নিজের চরিত্র। এতই সুনিপুণ যে গভীর পর্যবেক্ষণেও উঠে আসছে না, কে প্রেমিক আর কে ধোঁকাবাজ।

রাতের সিম্ফনি, বিমূর্ত কিছু গল্পের মাঝে নাঙা তরবারির শান দেয়। ক্রমশ কেটে ফেলে বুকের ভিতরের সবটুকু অনুভব, আবেগ, মায়া, অন্যকারো প্রতি সফট কর্নার। নিজেকে প্রশ্ন করার সময় নেই কারো। প্রেম এখন দু অক্ষরের খেলা, যেখানে মানুষ অন্ধকারে পনেরো মিনিটের উত্তেজনাকে কিনে ফেলে।

নতুন সময় মানে শর্টকাট পদ্ধতি মেনে চলা। প্রেমগুলো মিগ২৯ বিমানের মতো ঢুকে পড়ে বিপদসীমার ভিতরে, এরপরে শানিত অস্ত্রে ঘায়েল করে নেয় কাঙ্ক্ষিত লক্ষবস্তু। কিন্তু স্লো পয়জন, ধীরে ধীরে গ্রাস করে নেওয়ার মাঝের কাব্যিক স্বর্গীয় সুখটুকু জানে না অনেকে। প্রযুক্তির কল্যাণে তিন অক্ষরের চিরকুট মুছে গেছে, ল্যান্ডফোনটিও ছুটি নিয়েছে প্রযুক্তির কল্যাণে। প্রেম হয়েছে দেশলাইকাঠি। জ্বলেই নিভে যায়, নিভলেই হারিয়ে যায়...

ঋতুর রঙ বদলেছে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, ইন্টারন্যাশনাল ইস্যুর ভিড়ে আমরা সচেতনার মোড়কে স্বার্থপর হয়ে গেছি। গ্রামগুলো ভেঙে হয়েছে ভগ্নাংশ, গরু নেই, ধানের স্বাদও নেই, সাঁকো নেই, পুকুর ভরাট হয়েছে নানাভাবে। আর অপেক্ষার মোড়কে বেড়েছে শ্লোগান, ব্যথাতুর হৃদয়ে কেবলই ডেকে যাচ্ছে।

অপেক্ষার সবটা প্রহর ভেঙে যায়, দুর্বার এক শক্তি, সাইরেন বাজিয়ে ভাঙে নীরবতা, হুইসিলে ভাঙে নীরবতা, মধ্যরাতে উপচে উঠে নিহত কিছু পাখির দৃশ্য। হায় প্রেম... হায় নিভৃত নিঃসঙ্গতা, কোথাও তো রাখো নি পায়ের ছাপ...

Friday 20 July 2018

প্রার্থনা

প্রার্থনা
ইমেল নাঈম

চুপিসারে নেমে আসে ব্যথা, ঘন ক্ষতস্থানে
প্রলেপ মাখতে বসে ভুলেছি দাঁড়ি কমা
পলেস্তারা খসলে বেরিয়ে আসে রূপ
রেখাপাত করে জীবনের নীল আয়োজন

ভুলের মাশুল গুনতে বসে হঠাৎ করেই
আবিষ্কার করি আমি এক ভুল নাবিক
যাত্রাপথে কেবলই ভুল কম্পাস এঁকেছি
লাইট হাউজের চেয়ে সরে গেছি দূরে

নিজেকে নিয়ে এরবেশি বলার নেই—
ক্ষতস্থানে পুডিং লাগিয়ে ভুলেছি দুঃখ
অচেনা একটা হাসি ফেরি করছি
মাথাভরা দুশ্চিন্তা, কোনো বার্তা নেই।

চোখেমুখে ক্লান্তি, বয়ে যাচ্ছি নিজেকে...
বার্তায় ছড়িয়ে দিচ্ছি বিপদ সংকেত
সাইরেনে মুখরিত হচ্ছে ভুল সঙ্গীত
ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর নিয়মে
আমি ঢুকে যাচ্ছি সাগরের আরো গভীরে।

নীল রঙে ঝিকিমিকি আলোর বিচ্ছুরণ
কিছু কথা রেখে যাও এই জাহাজে
এখনো পাটাতনে উঠে আসে সহযাত্রী
বিমর্ষ মুখ দেখে তারা শব্দ করে না,
বুঝে নেয় এসে গেছি পতনের সন্নিকটে।

সন্ধ্যায় শুরু হয় পবিত্র বাইবেল পাঠ
মৃত্যুর আগে ঈশ্বরকে পাঠালাম কবিতা
যেখানে লেখা ইসাবেলা'র কথা—
শেষ দেখেছিলাম ছয় মাস আগে,
এরপর থেকে রক্তের সাথে মিশে গেছে

ঈশ্বরকে বলে দিয়েছি ভালো হোক তার,
তার সংসার হোক অনাবিল আনন্দের...

Tuesday 17 July 2018

উৎসবের মুহূর্ত

উৎসবের মুহূর্ত
ইমেল নাঈম

থেমে যায় খেলাঘর, মন কেমনের উৎসবে
স্পন্দনগুলো স্পর্শক এঁকে উড়ে যায় পূর্বদিকে
মানুষ রোজকার হিসেবে ব্যর্থ। প্রতিক্ষার ফাঁকে
ভাঙে সাজঘরের সাজানো গোছানো সরঞ্জামাদি।

মুখোশ দেখেই প্রেমে পড়ি, মুখ সাঁটা কালো রঙে
আলোকচ্ছটা, রঙিন ছবি, চটকদার বিজ্ঞপ্তি
দেখে মোহাচ্ছন্ন হই, ফিরে আসে পুরনো হিসেব
নামতার শেষ বাক্যে শুধু পৌরাণিক কেচ্ছা বাকী...

বকেয়ার খাতায় জমাট অভিমান, গল্প শেষে
রয়ে যায় দৈনন্দিন দুঃখ, রেজাল্ট মানে ব্যর্থতা
কোনো শব্দ নেই, সাড়াহীন মুহূর্তগুলো লিখছে
পাঁচ ফর্মা ব্যর্থতা সমগ্র, আঘাতে আহত হই

জর্জরিত জীবন। শ্লোগানে ভুল বাক্য উড়ে আসে
কোথাও সুখের দেখা নেই, গ্লানিকর উৎসবে...

Monday 16 July 2018

ইচ্ছে নদী

ইচ্ছে নদী
ইমেল নাঈম

ছুঁয়ে দেখবার অপরাধে অনেক স্পর্শই অসম্পূর্ণ
কথার প্রাচীর টেনে পালিয়ে যাওয়া যায় দূরে
মূর্ছনা মুছে গেলে থেমে যায় দ্বৈত সঙ্গীত—
প্রান্তিক জীবনের অবহেলার সাক্ষী ক্যাকটাস।

মুহূর্তর কাছে ঋণ, লাভক্ষতির মারপ্যাঁচ বাকি,
বকেয়ার খাতায় মনখারাপের জীবনচক্র
বারবার দিয়ে যায় একই বার্তা, পুরোনো ব্যথা
হেসে ওঠে অট্টহাসি, ক্ষয়িষ্ণু পলেস্তারায়
রেখেছি পুরোনো হিস্যা, নির্বিবাদ আবাসন।

চুপচাপ নেমে আসে দুঃখের দিন, হলদে পাতা
ঝরেছে অনাদরে, বুকের মধ্যে দ্রিমদ্রিম শব্দ...
আহামরি গল্প নয়— শুধু প্রহসনের অংক
চোখের মায়াবী পর্দা দুলে ওঠে বারবার
অসহায়ত্ব বরণ ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।

লাজুকলতা বারবার চুপসে যায় স্পর্শ পেলে
চোখমুখ থেকে বেরোয় অন্যরকম বিভা,
দিনের শুরুতে ডাকাডাকি করে পোষা পাখি
আমি সবটার মানে বুঝতে শিখি নি,
অন্ধ প্রেমিক হয়ে সেজেছি যুদ্ধসাজ,
সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত অন্ধকার শুধুই হাসছে।

Saturday 14 July 2018

প্রলেতারিয়া সময়

প্রলেতারিয়া সময়
ইমেল নাঈম

হারিয়ে যাবার আগে বিসর্জন থাকে
থোকায়থোকায় লুকোনো প্রতারণা— স্তব্ধ
মুহূর্তগুলো কোলাজ হয়, ব্যান্ডদলের বাদ্যতালে
ফিরে আসে বিগত দিনের অপমানগুচ্ছ।

স্বাধীনতাকে বুঝতে গিয়ে ভুলপথে হেঁটেছি
নির্ভরতাকে পুরনো নামে ডেকেছি— অতীতকে
টেনেহিঁচড়ে নিয়ে এসেছি সবার সামনে— দ্বিধাহীন,
পলাতক জীবনে প্রতিটি স্তরে লুকনো অভিমান

মান অভিমানের রেশ ধরে ক্রমশ হারাচ্ছি দূরে
পথের শেষটুকু আজো জানা হয় নি আমার
আয়না দেখে নিজেকে মাপতে শিখি নি কখনো
গুণগুণ করে গেয়ে যাচ্ছি চেনাজানা গান—
“When you find love / And it gets away
If it comes back to you / Then it'll stay”

ব্যখাত মুহূর্তগুলো চোখ মেলে তাকায়
অপমানগুলো অট্টহাসিতে ভরিয়ে দিচ্ছে
ছায়ার সাথে কথোপকথনে উঠে আসে জীর্ণ দেহ
থেমে যাবার আগে দপ করে জ্বলে ওঠার প্রবণতা
প্রলেতারিয়ার মতো ভেসে যাই— সর্বনাশা
সুর ভেসে বেড়ায়— দৃষ্টির বাইরে, সীমান্তে সীমান্তে।

Friday 13 July 2018

১৩ জুলাই ২০১৮

১৩ জুলাই ২০১৮
ইমেল নাঈম

সমান্তরালে দাঁড়িয়ে নৈসর্গ মাপি। সভ্যতা মুছলে
কঙ্কালসার সময় উঁকি দেয় ভরাট যৌবনে
স্মৃতির খোলসে আটকে রেখেছি পাপ পুণ্য
মুখে বিষের পেয়ালা আর ভাবছো অমরাবতী...

কবিতায় ডাক দেয় কল্পিত প্রাচীন ইতিহাস,
আঙুলের দাগ মুছে গেছে গণতান্ত্রিক আবেশে
স্বাধীনতা স্বাদহীন হতে হতে ধূসর— গভীর
আঙুল উঠে আসে এখনো সময়ে বা অসময়ে

আকাশ দেখতে ভুলে গেছে তরুণের দল
দুশো বছরের শিক্ষা গোলামি— ব্যবহারিক ক্লাস
শেষে আকাশ থাকে মুঠোয় ভরা, অকারণ চিৎকার
দেখে ভাবি আকাশ হওয়া উচিৎ ছিলো বিশাল।

আমরা হিসাব করি দৈনন্দিন জীবনের অঙ্ক...
মুদ্রাস্ফীতি, ক্রমাগত উচ্চ জীবনযাত্রার ফাঁকে
কমে গেছে জীবনের দাম—তার মাঝে প্রাপ্তিগুলো
অবহেলায় হারায় ভুল তর্জনীর ক্ষিপ্ত অভিপ্রায়ে,

আমরা ইদানীং হিসেব করি বাসভাড়া, ডাইনিং...
শিল্পায়ন খেয়ে গেলো ছোট্টোবেলার মামদো ভুত
সরকারি চাকরি খেয়ে নিলো চতুর অংকবিদ
পশ্চিমে হিজরত মানে দেশপ্রেমের টানাটানি,

কোথায় যাবো? নরকে হয়তো আছে রিজার্ভেশন...
স্বর্গকে অনেক আগেই ব্রাত্য করে দিয়েছি
আর বাকী নেই একবিন্দু মাটি, একটা স্বদেশ...

Tuesday 10 July 2018

উদ্বাস্তু শিবির

উদ্বাস্তু শিবির
ইমেল নাঈম
(উৎসর্গঃ শাকিরি, লুকা মদ্রিচ, ইভান রাকিটিচ)

অজান্তেই খাকি পোশাকের পাখিরা উড়ে আসছে আমাদের দিকে
প্রাণের মায়ায় চোখ এখন স্বপ্নহীন, ছেড়ে এসেছি জন্মভূমি
নতুন দেশ, নেই আপন কেউ... সবকিছু অচেনা মানুষ, ভাষা
খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা নেই, ফিরে যাবার মুহূর্ত অজানা...

জানিনা শেষ কবে ইগল পাখি, ভূমির ডাইনোসরের দৌরাত্ম্য
রিফিউজি ক্যাম্পে স্বপ্ন দেখতে মানা, তবুও স্বপ্ন আসে
সুশৃঙ্খল নয় কোনোকিছু, লাইনে দাঁড়াই সকালবিকাল
রেডক্রসের গাড়ীগুলো ভেঁপু বাজিয়ে আসে নিয়মমাফিক
আমরাও শিখে ফেলি পৃথিবীর সাথে লড়াই করার শিক্ষা

রিফিউজি ক্যাম্পে কোনো ফুটবল নেই, হাহাকার আছে,
খাবারের কষ্ট ভুলতে গিয়ে জড়িয়ে যাচ্ছি অকারণে
সারাদিন ক্যাম্পের সবার সাথে দৌড়াদৌড়ি, খেলেই কাটছে
অথচ জানে না সামনে আলো না অন্ধকার অপেক্ষারত
ফুটবলের মাঝেই ভুলে গেছে তারা উদ্বাস্তু হবার কষ্ট

সময় পেরিয়ে যায়, দানব ইগল, ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটে
স্বাধীনতার শ্বাস নিয়ে ফিরে যায় মানুষ তার ঘরে
ছোট্ট শিশুটিও ফিরছে ঘরে, সাথে স্বপ্ন, হাতে ফুটবল।
বল তার পা ছুঁলে স্বাধীনতার গল্প লেখা হয়ে যায়,
ফুটবল হয়ে ওঠে রাজনৈতিক... নিপীড়িতের হাতিয়ার।

Sunday 8 July 2018

রাতের সঙ্গীত

রাতের সঙ্গীত
ইমেল নাঈম

ছিমছাম নীরবতা ছুঁয়ে দিয়ে যায় প্রথম আঙুল
ইশারায় লিপিবদ্ধ— অজস্র অপ্রকাশিত ঋণ
নিজেকে খুঁজে ফিরছি হারানো সময়ের পরতে

কতটা সময় পেরলে ঝাউবনজুড়ে নৈঃশব্দ্য রাত
পাখিদের কলতানে শোনার ইচ্ছেতে ঘুমহীন,
নির্ঘুম রাতের ভাষা পড়ছি বিনয়ী অনুরোধে

প্রতিমুহূর্তে উপভোগ করেছি রাতের সৌন্দর্য
বিষণ্ণতার বিপরীতে আশার আলো হাতড়াই
মনহরা স্মৃতির কোরাসে ল্যাম্পপোস্টটিও মত্ত
শুধু একুরিয়াম ভর্তি মাছের স্বাধীনতা মাপি।

বেজে ওঠে আলোকধ্বনি, সকালে এসে থামে
রাতের সকল আয়োজন— সত্য মিথ্যার খেলায়
অসমাপ্ত ফলাফল নিয়ে বেঁচে থাকি প্রতিদিন...

রাত সঙ্গীতের ব্যাপকতা অনেক, হৃদয়পুরে
বুনে দিয়ে যায় অন্যরকম নকশা— বাম পাশে
জন্মানো ক্ষতস্থানের প্রলেপ মুছেছে আচমকা।

Saturday 7 July 2018

জীবনের অন্য গান

জীবনের অন্য গান
ইমেল নাঈম

হেরে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে কিছু জটিল বাক্য থাকে...
শব্দের পর শব্দ, বাক্যাংশ আর যতিচিহ্নের ব্যবহারে
ঠিকই বেজে ওঠে প্রাচীন ঘড়ি, দেয়ালে টাঙানো
পোর্ট্রেট, অয়েল পেইন্টিংসের ল্যান্ডস্কেপ কিছু ছবি
ঘুরে ফেরে একই বৃত্তে— শিহরণ নিয়ে বুকে ধরে।

উন্মাদনা কমে যায়, চুলের বিবর্ণ হবার ইতিহাসে
রয়ে যায় মূর্ছনা সঙ্গীত, পিয়ানোয় টুংটাং, ব্যাঞ্জোর
ব্যাঞ্জনা দৌড়ে চলে বুকের বাঁপাশটায় দীর্ঘ সময়...
নিজেকে এতটা আস্থাহীজন মনে হয়নি, ক্লান্তি নামে
চোখে, খাতায় আঁকা কা র্টুনগুলো বিদ্রুপ করে

মেডিটেশনের শেষে অদ্ভুত অনুরণন থেকে যায়
নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে থাকতে ভুলেছি দিন,
রাতের হিসেবে অপেক্ষায় থাকে এক বিষণ্ণ স্মৃতি
সাড়াহীন কিছু মুহূর্তের চাষাবাদ, ক্লান্তিময় যাত্রায়
কেবলই জেগে থাকে বিনিদ্র রাতের সারমর্ম।

নির্বাসন। অসময়ে পাওয়া ফুলের নির্যাসে ডেকে
চলে একাকীত্বের গল্প, জীবনের কিছু আয়োজন
অবধারিত মুছে যায় শীতের ঝরাপাতার মতো।

Friday 6 July 2018

মধ্যবিত্ত কবিতা

মধ্যবিত্ত কবিতা
ইমেল নাঈম

বিবেকের দরজাটা একবার খুলে দেখো
বুঝতে পারবে ঠিক কতটা পচেছে দুটো চোখ
অন্ধত্বের দাসত্বে আটকে ফেলেছ কলম
সত্য আটকে গেছে মাথা নোয়ানোর অভ্যাসে

গলার ঢেকুরটুকু গিলে ফেলে প্রেমের কবিতা
লিখো, ন্যায়ের পথে কলম থাকুক বিচ্যুত
কী হবে লিখে— সবার উটপাখির অভ্যাস...

মুখ লুকিয়ে ফেলে যখনতখন, একটু আঁচড়
লাগতে দেয়না গায়ে, বাহিরের খোলসে লিখছে
প্রেমের কবিতা। রক্তপাতে আহত হচ্ছে না
স্পর্শ করে না এতো চিৎকার, সমর্থন বাড়ুক
অন্ধকারের, নিজের পিঠ বাঁচাতে ব্যস্ত কেবল...

আগুনের লেলিহান শিখা, দাউদাউ করে নিভে
পুরোটা নিভে গেলে থাকে নিঃসীম অন্ধকার,
নিভেছে আলোর গান, পড়ে থাকে অভিশাপ
দুচোখে দৃষ্টি নিয়ে অন্ধত্ব। বাক-হীন মুহূর্তরা
দাসত্ব কিনে ফেলে। নিজের গায়ে আঁচড় মাপতে
গিয়ে প্রতিবাদ করতে ভুলেছে মধ্যবিত্ত কবি,

অজান্তে কবিতাদের বেচছে সরকারী নিলামে...

Tuesday 3 July 2018

ব্যথার কৃষক



ব্যথার কৃষক
ইমেল নাঈম

ঝরা পাতার বর্ণহীন স্পন্দন শুনি
মুছে গেছে বৃষ্টি দিনের মুগ্ধতা
শব্দ বুনটে আটকেছে রেশমি সুতো

নিজের খেয়াল রাখা হয় নি কখনো
অন্যকে দেখতে গিয়ে হারিয়েছি খেই
ক্যালকুলেটিভ, সূক্ষ্ম অঙ্ক
বাজিয়ে যাচ্ছে রাতের সাইরেন
কিছু বিষণ্ণ বাক্যের ব্যর্থ অবয়বে

পথের শেষটুকু মিলিয়ে গেছে দূরে
কথার বুননে গোপনীয় এক মায়া
অবশিষ্ট মলিন মুখটিও মিলিয়ে যাচ্ছে
দূরের ক্যানভাসে বিমূর্ত আয়োজনে

ক্রমাগত মানুষগুলো ঝাপসা হচ্ছে
দূরে গেলে গাছের মতো দেখায়
কত একানিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে বৃক্ষরাজি

সময়ের বুকে কান পাতলে তাদের
দীর্ঘশ্বাস বাজে, শুনি কিছু কালো ব্যথা

সময় পেরিয়ে যায়
ব্যথারা আপন হয়
করি অচেনা ব্যথার চাষ।