Monday 28 May 2018

বৃত্ত ভাঙার গান

বৃত্ত ভাঙার গান
ইমেল নাঈম

বৃত্ত ভাঙার গানটি শোনা হয় নি আমার
যদিও যত্নে রেখেছি অভিমানগুলো হাতের মুঠোয়
অনুভব মুছে গেছে — রয়ে গেছে ভ্রান্তি — পুরনো
প্রাচীর খুলে দেখে নাও জীবনের মিথ্যেটুকু

অবিশ্বাস জেগে ওঠে, হাতের ভাঁজে ভাঁজে
খেলা ভাঙার করুণ শব্দে মুছে যায় চিহ্ন,
নির্বাসনের মানে জানে না, করুণ চোখ লিখে
রাখে অবিন্যস্ত প্রহসন, চুপচাপ দাঁড়িয়ে
দেখতে থাকি, নিজের কাছে অচেনা লাগে সব।

বিমূর্ত অবয়ব আরো অস্পষ্ট হয়
মূকাভিনয়ের ফাঁকফোকরে জেগে থাকে আপন
মুহূর্তগুলো আড়াল খুঁজতে ঢুকে গভীরে
ম্লান শব্দগুলো মলিন থেকে মলিন হয়,

রঙ ওঠা কিছু স্মৃতিকে ঢেকে রাখি চাদরে
চুপ করে শোনো নীরবতার গোপন ভাষা
ঘড়ির কাটায় কেবল টিকটিক, পেরিয়ে যায়
দাবার বোর্ডের গুটিগুলোর গোপন সাধনা।

Wednesday 23 May 2018

মুহূর্ত কোলাজ

মুহূর্ত কোলাজ
ইমেল নাঈম

১।
রেখে দাও জীবনের হরিৎ আয়োজন
ভ্রান্তির বিনিময়ে খোঁপায় বাঁধো ভুল
বিন্যাসে সাজানো স্তূপাকৃতির দুঃখ
মলিন ক্যানভাসে আর ছবি আঁকো?

২।
বুকের ভাঁজে লুকোনো সব প্রহসন
এক্স ফেক্টরও মাঝেমাঝে হানা দেয়
নির্বাসনের মাঝে জানে না মন...
প্রকৃতিও নিঃস্ব দেখে নিষিদ্ধ গন্ধম।

৩।
হাতের মুঠোতে ধরে রাখছো সবটুকু
কারো কাছে ভুলেও প্রকাশ করছো না
অপ্রকাশিত থাকছে মায়া জীবনের গল্প
নায়ক নায়িকা নয়, আমার বৃষ্টি প্রিয়।

৪।
পঙখীরাজে চড়ে এঁকে ফেলতে পারো...
ঘুমহীন চোখে লিখছি নির্ঘুম তোমাকে
বিনিদ্র রাতে পুড়ছে শলাকা নিকোটিন
দেশলাই বাক্সের মতো ভেঙে যায় মন।

৫।
পাহাড়ের বুকে জমাট লিপিবদ্ধ বর্ণমালা
এতটা পথ হেঁটে তুমি রইলে আচেনা...

Sunday 20 May 2018

আবহাওয়া সংবাদ

আবহাওয়া সংবাদ
ইমেল নাঈম

দূরবর্তী প্রেম ঢেকে দেয় কাছের নীরবতা
কাচের শহরে চুপিসারে নামে ক্লান্তিকর রাত
মোহনা ফেলে চলে যাচ্ছে দূরে সোনালি মাছ
হিসেবের বাইরেও থাকে হিসাব — লুকোনো
অভিধানে নামে নীরবতার হেয়ালী মোচ্ছব।

পুরোনো খাতায় লেখাগুলো স্মৃতির রোমন্থন
এভাবে ফিরে আসতে পারো ভুলের নামতায়
উপড়ে পড়া মানুষের কোলাহল থেমে যায়
বাঁশীর সুরে ভেসে যেতে পারে বৃষ্টিস্নান দিন...

উপচে পড়া দিনের হিসেবে ক্রমাগত পাপ
ফুসমন্তর করে উড়ে যাবে জীবনের সঞ্চয়
নস্টালজিক মন আবহাওয়া অফিসের
খবর জোগাড় করে ক্লান্তি ঝরাবে আঙিনা

খবরে ভেসে আসবে বৃষ্টির দিন প্রেমিকদের
জন্য লঘুচাপ, ক্রমান্বয়ে ঝড়ের পূর্বাভাষ
সজোরে বৃষ্টিপাত কান্নার সিম্বোল,
মনুমেন্ট গড়বার আদিম উপলক্ষ মাত্র

আর তার দূরবর্তী বিপদ সংকেত মাত্র চার,
ভয়ানক হতে দুটো রাতই অপেক্ষমান।

Thursday 17 May 2018

অবস্থান

অবস্থান
ইমেল নাঈম

থামো। সময় হয়নি যাবার। পিছনে ফিরে দেখি
একটা আবছা আলো ঘিরে রেখেছে চারদিক
খুব অসময়... কোথাও জায়গা নেই জিরবার।

ক্লান্তি মুছে চেয়ে দেখি বিকাল নামলো কেবল
নিজেকে বারবার প্রশ্ন করতে বসি
উত্তরের আশাটুকু গুড়েবালি হয়
বিচ্ছিন্নতার কাছ থেকে জেনেছি দুঃখশ্লোক।

নীরবতাও কথা বলে, মন কেমনের ভিড়ে
অস্পষ্ট শব্দগুলোর কাছে ঋণী নই
শূন্যতার পাঠ... বিনিময়ে থাকে কোমলতার
বিপরীত মেরুতে দাঁড়ানো মনখারাপটুকু।
মাটির কাছে লিখে রেখেছি দিনান্তের কথা
রুক্ষতা আঁকতে বসে তালগোল পাকিয়েছি

নিবারণ করতে পারিনি ভিতরের সত্তা
কথোপকথনের ভাজে আলটপকা খসেছে
গোপনীয় স্থান, চোখেরা হয়েছে দর্শক
তখনই পরিব্রাজক মন ছুটি নিয়েছে
জগত থেকে — কল্পকথায় জমেছে ক্ষণ

আমি ঈশ্বরের বিপরীতে দাঁড়িয়েছি শুধু।

আঘাত

আঘাত
ইমেল নাঈম

প্রতিধ্বনিগুলো ফিরে আসে নিজের কাছে
অক্ষরের সমন্বয়ে গড়েছি ভুলের সংসার
যাত্রাপথ আটকে গেছে সাইরেনে,

জলের কাছে রেখেছি, পাতার কাছেও রাখা
আছে জমাটবদ্ধ জীবন তুমুল আয়োজন।
নম্রতার বিনিময়ে হুট হাট মরে যাওয়ার
প্রবল ক্ষুধা জেগে ওঠে অবচেতন বিন্যাসে

পরীক্ষার খাতায় লেখা শব্দগুলো আজও
মলিন হয়, তত্ত্ব আর বাস্তবের মাঝে অমিল
দেখে হেসে গালি দিয়ে ফেলি নিজেকে

অর্থহীন কিছু শব্দ সুরকে টেনে নিয়ে যাই,
মন ঘুড়ির সাথে নাটাইয়ের আত্মীয়তা নেই
আর শিকড়ের সাথে যোগাযোগটুকু মুছে
যাচ্ছে পলিমাটির তীব্র ক্ষয়িষ্ণু মনোভাবে।

বাধ্য নই জবাবদিহিতায়, চাওয়া পাওয়ার
হিসেবে লিখা নেই দস্তখত, ভগ্নাংশ দিনের
মতো নিজেকে ভাগ করা যায় অসমভাবে

বিষম খেতে খেতে গিলে ফেলেছি অপমান
ছুঁড়ে দেয়া প্রতিধ্বনি পুনরায় ফিরে আসে,
সেগুলো এখন আমাকে আহত করে না

তারা জানে ব্যর্থকে আঘাত করে লাভ নেই।

Tuesday 15 May 2018

বিমূর্ত আয়োজন

বিমূর্ত আয়োজন
ইমেল নাঈম

বিমূর্ত হয় চেনাজানা দৃশ্য, নিজের কাছেই অচেনা
সত্য মিথ্যার খোলসে আটকে ফেলি নিজেকে
অবয়বগুলো মিথ্যে বিভ্রান্ত — বিলাসিতায়...
আটকে ফেলেছি বিগত দিনের পাপ পুণ্যে
নির্বাক অনুরণনে রাখি অনুভূতির পালক।

গল্পের মোড়কে আটকেছে গতরাতের মলিন
দৃশ্যপট, শুধু জেগে থাকে নির্ভুল হিসাব
প্রান্তিক গল্পের শেষে বিচ্ছুরিত আলোছায়া
আর সমান্তরালে আঁকি মুগ্ধতার প্রলেতারিয়া।

ঝড়ের শেষে জেগে থাকে দুটো আঙুল, বিনিময়ে
লিপিবদ্ধ কবিতাগুলো দারিদ্রসীমা আঁকে
কাস্তে, হাতুড়ি ব্যর্থ সভ্যতার নির্মাণে
কিম্বা প্রহসন অট্টহাসি হাসে
দুনির্বার শব্দের কাছে মোহাচ্ছন্ন হতে ভুলেছি

অবহেলায় মাটিতে জমাটবদ্ধ  রক্ত পালক
ঝড়ের শেষে গুমোট
আবহাওয়া খুঁজে ফিরছে
দ্রুত পালটেছে চেনা রাস্তাঘাট
অভয়ারণ্যেরও মানে বদলে গেছে
থমকেছে পঞ্জিকার পাতা, শূন্যতা গাইছি...
সব শান্ত হলে দৃশ্যগুলোর গা থেকে রক্ত ঝরে।

ওয়ান লাইনার

বাবা 
*
সুবিশাল এক বটবৃক্ষ, দেখতে অবিকল মানুষ।

****************************

মা
*
অদ্ভুত এক অবয়ব যাতে বিদ্যমান আকাশ, পাহাড়, নদী, সাগর।

Friday 11 May 2018

শূন্যস্থান

শূন্যস্থান
ইমেল নাঈম

শূন্যস্থান জেগে থাকে একা। বিশাল মাঠ, ঘুর্ণায়মান
বাতাস নাচতে থাকে লাটিমের মতো এক কক্ষপথে...
তার নিজের বলে কোনোকিছু রইলো না অবশিষ্ট,
ভ্রান্তি, অবিশ্বাস বা অন্ধত্বের মাঝের সূক্ষ্ম পার্থক্য
নাড়া দিয়ে যায় সেই অনিশ্চিত ঘুর্ণনের মায়াজালে।

পাখির জীবন লিখতে গিয়ে প্রতিদিনই লিখে ফেলি
ভুলে ভরা কীর্তন, চাওয়া পাওয়ার কোনো রেশ নেই।
প্রাপ্তির খাতায় জমাটবদ্ধ অপ্রাপ্তিরা জেগে আছে
জেগে জেগে বাজায় সাইরেন, সেখানে ভ্রুক্ষেপ নেই
নীরবতার গল্পে মোহ থাকে, থাকে একটা সিস্টেম।

জাদুকর! ম্যাজিক স্টিকে লিখেন দৈনন্দিন বিনোদন।
জীবন তাসের কোনও রঙ। সাহেব, বিবি, গুলামের
ফাঁকে খেলে ফেলা যায় তিনকার্ডের নিষিদ্ধ খেলা।
তবু খোলা আকাশ... গমরঙা মাঠ... তপ্ত সুর্যালোক
জানান দেয় জীবনের আনন্দক্ষণ শুধু নৈঃশব্দ্যময়।

Tuesday 1 May 2018

ছুঁয়ে ফেরা

ছুঁয়ে ফেরা...
ইমেল নাঈম

পুরোটা ভাগ মিথ্যে, নিজস্ব আলিঙ্গনে কেবলই মায়া
প্রলয়ের ছাপ রেখে গেছে আদিম বিন্দুগুলোতে
ঘাসফুলের ভিড়ে, একাকী কিছু সময় কিনছি রোজ।

চুম্বনগুলো বৈধ না অবৈধ তা নিয়ে মাতামাতি সবার...
অজস্র মুখ এড়িয়ে জাজিম টেনে বসে যাই রোজ
কথোপকথন ফাঁকি দিয়ে ভ্রান্তির কাছাকাছি যাচ্ছি।

একটা শালিক রোজ কাঁদে,  চড়ুইপাখির সংসারে
শুধুই কিচিরমিচির, হাতের ভাজে নথিবদ্ধ শব্দ।
আহামরি নয়, খোলসে আটকে রাখে তারা দিনভর।

পরাধীন চোখ মুক্ত আকাশ দেখলেই উড়তে চায়
সে শিখেনি ওড়ার কলাকৌশল, হাত প্রসারিত
করে ভাব দেখায় উড়ে যাবে নো ম্যানস ল্যান্ডে।

বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জিরো টলারেন্স থেকে বেরুবে...
মাটির স্পর্শ প্রাণ খুঁজে দরজায়, কড়া নাড়ার শব্দ
রোজ এসে শব্দ করে বদ্ধ আসমানে, কল্পনায়
আকাশ আঁকি, আমার আজো ছুঁয়ে দেখা হয়নি।

এখানে আয়নার প্রতিবিম্ব ছাড়া অন্যকিছু মূল্যহীন