Thursday 28 December 2017

বিভ্রম বিভ্রাট

বিভ্রম বিভ্রাট
ইমেল নাঈম

মন্দের ভালো। চাওয়া পাওয়ার ফাঁক গলে জেগে ওঠা মুহূর্ত। হিসেবের খাতায় জমছে মিছিল। বিচ্ছিন্নতার পাঠ করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে বংশীবাদক। হারমোনিকা পড়ে থাকে অবহেলায়। ভেসে আসে বেসুরো সুর। স্টিং ছিঁড়া একুস্টিকের বুকেও অদ্ভুত নীরবতা।

গানের দেশে নেমেছে সূর্য, চাঁদ নেই। থেমেছে পৃথিবীর আয়োজন। কোনো জাদুকর আঙুলের ইশারায় থামিয়ে দিয়েছে দৈনন্দিন ব্যস্ততা। ভিড় ঠেলে প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছে ইচ্ছের গল্পরা। উপমার আঙ্গিকে সাজানো কথাগুলো সিঁড়ির মতো যোগাযোগ রক্ষা করছে।

শিল্পী তার রঙ তুলিতে আঁকছেন মোলায়েম দুঃখদের। চারপাশে ধূধূ মরীচিকা, আলোর বিচ্ছুরণে জেগে ওঠে অনেক প্রশ্ন। এই দরজায়, ওই দরজায় কড়া নেড়ে খুবই বিমর্ষ। নির্মোহ কথারা মৌনব্রত পালনে ব্যস্ত। রাতের নিস্তব্ধতায় ঢেকে যায় পুরো শরীর। মিছিলে শ্লোগান নেই। কেবলই হেঁটে চলেছে কিছু মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।

হারিয়ে যাওয়া খাতাটায় টুকে রেখেছিলাম হারিয়ে ফেলা স্বপ্নগুলো। বিনির্মাণ প্রকল্পে কিছু রেশ জেগে থাকে। সময়ের হাতঘড়িতে কেবল ভ্রান্তি। খুব দূর থেকে উড়ে আসে পিয়ানোর সুর। ঘুম ভেঙে হয়তো চোখ খুলে তাকাবেন বংশীবাদক। আড়মোড়া ভাঙলেই বেজে উঠবে সঙ্গীত। অথচ রাতের গভীরতা মাপা হয়নি আমার। মাপতে বসেছি বিভ্রম বিভ্রাট...

Tuesday 26 December 2017

সূত্র

সূত্র
 ইমেল নাঈম

বিউগল। উত্তাল সময়কে ধারণ করেছিলাম দুজনেই।
উচ্ছ্বাস মুছে গেছে, ছাই জমেছে হিসেবের অনুরণনে,
নির্ভুল বলে কিছু নেই, যেমন নেই একান্ত সময়গুলো।

নিঃসাড় হিসেবে চিলেকোঠায় নামে কাল্পনিক সুর
মোহভঙ্গ হলে বোঝার ভার নেমে যায় শূন্যে
ছুঁয়ে যেতে থাকে মায়াবী হাত — বিভ্রান্তির গলিপথে
অবান্তর ভাবনারা কেবল মিথ্যের ফুলঝুরি ছড়ায়

ছুঁয়ে যাক নিসর্গের উপাদান, যদিও বিমূর্ত দৃশ্যপটে
পিঠাপিঠি আঘাত এসে জর্জরিত করে চারপাশ
নিজেকে আবৃত করে রাখি দামি রেশমি কাপড়ে,
আবরণগুলো মুছে যেতে থাকে — থাকে অসময়।

খোলসহীন দেহে গল্পরা অন্যভাষায় লিপিবদ্ধ হয়
তবুও... আবরণ ভালো, মমী ঢেকে রাখে ব্যর্থতা
বহুকাল পরে হয়তো ভেসে ওঠে তুতেন খামেন

বুকের মানচিত্র বদলেছে, বদলেছে সুর সঙ্গীত
গতির তৃতীয় সূত্রের মতো, প্রত্যেক ক্রিয়ারই
একটা সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে...
আমরা সমতায়নে ব্যস্ত পৃথিবীর দুপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।

Sunday 24 December 2017

দিনলিপির আয়োজন - ৬

দিনলিপির আয়োজন - ৬ 
ইমেল নাঈম

বিচ্ছেদের গল্পে গলে পড়ে মোম। গচ্ছিত উচ্ছিষ্টাংশটুকুও জমে থাকে অব্যবহৃত। ব্যাবচ্ছেদে জন্ম নেয়া নিঃশ্বাসটুকু মুছে যায় অবহেলায়। ছাড়পত্র পেলে উড়ে যেতে পারে পোষা জাপানিজ ক্রিস্টেড। পৃথিবী ছোটো, অল্পেই মিশে যায় ধুলোয়। বিবর্ণ সময়ের মারপ্যাঁচে ক্রুর সময় এগিয়ে চলে মধ্যবিত্ত সমাজের হাতেখড়িতে।

বুকে শীতকালীন উষ্ণতা। মাফলার জমানো ঠাণ্ডায় ইট পাথরের সভ্যতায় কেবলই কাঁটা ছেড়া। সময় মাপছি। নিজেকে নিয়ে মেডিটেশন। মনছবিতে কেবলই রূপকথা। মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছি তান্ত্রিক মন্ত্রের মাঝখানে। এরপর চোখ বন্ধ করে সুরারোপ করছি মনের। নিজের মাঝে ঐকতানে বাজে অপ্রাপ্তি, হতাশা, দৈনন্দিন জীবনের যুদ্ধ, আর যুদ্ধবিরতির সাইরেনে বাজে নির্লিপ্ত ঘুম।

সকাল হলেই ক্যানেস্তারা। চুপচাপ দৌড়ে নামি। বাঁচার জন্য দৌড়। নিজেকে প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিচ্ছি সামনের দিকে। হুমড়ি খেয়ে পড়ছি, আহত হচ্ছি, রক্তাক্ত হচ্ছে চারপাশ। নিজেকে নিয়ে দুটো মিনিট ভাবার সময় নেই। প্রশ্নবোধক! বিশাল প্রশ্নবোধক গড়ছে রোজকার ভাগ্য।

দিনান্তের গল্পে নিজেকে নিয়ে বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। খুব বেশি হলে নিজেকে সার্কাসের ক্লাউন ভাবি। হাসি ফোটানোর জন্য কিম্ভুতকিমাকার অঙ্গভঙ্গি ছড়াই। ভাগ্য এরচেয়েও ভালো হলে সার্কাসের রিং-মাস্টার। পয়েন্টারে লিপিবদ্ধ করছি নিজের ভাগ্য। মধ্যবিত্ত মনে এরচেয়ে বেশি কিছু নেই। স্বপ্ন নেই, পাবার আকাঙ্ক্ষাও নেই। তার একমাত্র সফলতা হলো নির্লিপ্ততা।

Friday 22 December 2017

দিনলিপির আয়োজন - ৫

দিনলিপির আয়োজন - ৫
ইমেল নাঈম

জানালা জুড়ে সুনসান নীরবতা। বারান্দায় নেই আলো।
শৈশব পেরিয়ে দুঃখরাও এখন প্রাপ্তবয়স্ক, তারা এখন
সহজে আহত হয়না, কাঁদেনা, দুমড়েমুচড়েও যায়না;
প্রবলে উৎসাহে দ্বিগুণ শক্তিতে ক্ষতবিক্ষত করে শুধু

এরপর স্বপ্ন দেখার আকাশ ছোটো হয়। মাঠ নয় —
বাড়ীর সামনের উঠোনও নয় — বারান্দাও নয় —
জানালা খুলে কেবল দেখি শূন্যতা ভর্তি আকাশ।

ইদ, পূজা, পার্বণ, সান্টা কতো এলো আর কত গেলো
যাবার সময় চুরি করে নিয়ে গেলো অলিখিত স্বপ্ন
খণ্ডিত সময়ের হিসাবে আকশটিও ভগ্নাংশ স্বরূপ...
আমাকে দেবার মতো অবশিষ্টাংশ নেই তার কাছে।

তবুও নিয়ন আলো দেখলে উৎসুক মন উঁকি দেয়
ল্যাম্পপোস্টের নিচের মানুষের আসাযাওয়া দেখি
তাদেরও কী অনাদরে স্বপ্ন পুড়েছে আমার মতন
চাঁদ দেখলেই বলে উঠি আহা কী অপরূপ দৃশ্যপট
অথচ আমি নিজেও অন্যের শক্তিতে নিভুপ্রায়,

খর্বিত শক্তিতে হাসছি লৌকিক পৃথিবীতে, উপলব্ধি
করছি স্বাধীনতার ভিতরে লুকোনো পরাধীনতাকে
বিনিময়ে মিলছেনা ব্যক্তিগত কোনো হিসেবনিকেশ,
সান্টা আসেনা, ইদের কোলাকুলি, পূজা পার্বণ
কেবলই একটি দিন, বাকিটা শুধু নীরব হাহাকার।

Wednesday 20 December 2017

ব্যক্তিগত কড়চা

ব্যক্তিগত রোজনামচা
ইমেল নাঈম

সালতামামি। ব্যর্থতা। ঘুরে দাঁড়ানোর আস্ফালন
কোনো কিছুতেই নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিনা,
মুখবইয়ের প্রতি পাতায় আমিত্ববোধ,
নিজেকে জাহির করার অদম্য প্রয়াসে ব্যস্ত...
কথারা চুপ থাক, নীরবতা নামুক কলমের নিবে

অনেক আগেই বন্ধ করেছি শব্দনির্মাণের কাজ
এখন সার্কাসের ক্লাউনের অঙ্গভঙ্গি দেখি
রিং মাস্টারের হাতের ছড়িতে কেবল প্রহসন
অচেনা শহরে সুরম্য অট্টালিকার ভিড়ে
একচিলতে আকাশ চুরি করে নিচ্ছে কৈশোর

যোগবিয়োগে ব্যস্ত নিজেকে প্রশ্ন করতে শিখিনি,
প্রাপ্তির খাতায় আঁকছি দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন
সমান্তরাল পথে মানুষের রঙ চেনা কঠিন,
লোকালয়ে তারা মিশে মুখোশ পরে,
ভালোমানুষের আড়ালে করে নিজের বিজ্ঞাপন

নাগরিক ব্যস্ততায় কেন আঁকছি বিশাল শূন্য?
বাধা দিওনা। আঁকতে বসে নষ্ট করবো চারপাশ;
ছোট্ট শিশুদের অঙ্কনে যেমন নষ্ট হয় দেয়াল
ঠিক তেমনি নষ্ট করবো সাজানো বাগান
তোমরা ভাবলেশহীন তাকিয়ে দেখবে নীরবে...

শিশুরা ধ্বংস করতে ভালোবাসে সৃষ্টির মানসে
আমি ধ্বংস করতে পারিনা। কেবলি আঁকিবুঁকি...

Tuesday 19 December 2017

বৃত্তবন্দি হাহাকার

বৃত্তবন্দী হাহাকার
ইমেল নাঈম

প্রলেতারিয়া সুখে ভাসছে যাবতীয় পাপপুণ্য
দুয়ে মিলে লিপিবদ্ধ প্রহসন। সর্বভুক প্রাণে
দোলা দেয়া বসন্তের বাতাস — অচেনা পরিবেশ —
খেলাঘরের ভাঙাগড়া দেখতে দেখতে পেরোচ্ছি।

নীরবে শ্লোগান শুনি গত জীবনের ধারাপাতে
আচমকা সুনামির সাক্ষাত, থেমেছে আয়োজন।
দাগ মুছে গেছে — ক্ষত আজও বয়ে বেড়াই শরীরে
শব্দহীন হও — কঠোর ধ্বনিতে মুখরিত সৃষ্টি।

উড্ডীন পাখিদের সংসার নিয়েও চিন্তামগ্ন
নীরবে সয়ে যাচ্ছে সব — বাড়ছে ঋণ পৃথিবীর
রেশ থাকে শেষ হিসাবেও, থাকে ভুলের পাহাড়
বুকের গভীরে বুনো পাখির ধ্রুপদী ডাকাডাকি।

প্রাণের হাহাকার থামলে, উষ্ণতায় রাখো হাত
বুঝে নাও — অনুভব করো — বৃত্তবন্দী হাহাকার।

Sunday 17 December 2017

দিনলিপির আয়োজন — ৪

দিনলিপির আয়োজন — ৪ 
ইমেল নাঈম

উড়ে যায় বিষণ্ণ মেঘ, অভিধান থেকে খসছে শব্দ।
নির্বাণ করছি। বিনির্মাণ দেখি সুবিশাল মেঘমালার,
দেখছিনা কত সুন্দরে তারা মিশছে পূবালী বাতাসে
নির্ভার সময়ের প্রান্তে কিছু ঋণ লিখেছি অজান্তে।

নির্বাক হয়েছে গল্পের শেষ অধ্যায়ের প্রতিটা বাক্য
অতিকল্পিত চিত্রায়নে ঢেকেছে প্রান্তিক মনের কোণ
পাললিক কারুকাজে উড়ে আসে পরিযায়ী পাখিরা
ক্যানভাসের তৈলচিত্রে শৈল্পিক মন হয় বিমোহিত।

হিসাবের খাতায় মেলেনা বেপরোয়া হিসাব নিকাশ,
সালতামামিতে শুধু শব্দহীনতা — নির্বাক, চুপচাপ
রাস্তার নিয়ন আলোয় আঙুলজুড়ে নামে বিষণ্ণতা
পথিকের আসাযাওয়া দেখতে দেখতে লিখে ফেলি
দৈনন্দিন জীবনের সাপ লুডু, অর্থহীন কাটাকুটি

প্রতীক্ষার বিনিময়ে মেলেনা কিছুই, পরিভ্রমণকে
সময়ক্ষেপণ হিসেবে ধরে নিই, শেষ ট্রেন চেপে
চলে গেছি অনেকপথ। অপেক্ষমাণ নদী জীবনী।

ব্যস, থেমে যেতে যেতে ভুলে গেছি শুরুর বিন্দু
বিবর্তনে উড়ে আসে কেবল বিষণ্ণ মেঘের গল্প।
নিঃসঙ্গতার পাঠে থেকে যায় আঙুলের স্পর্শ...

Friday 15 December 2017

স্বাধীনতা মানে

স্বাধীনতা মানে
ইমেল নাঈম

পেরিয়েছে সময়, মুহূর্ত পেরোচ্ছে তারচেয়েও দ্রুত
চাওয়া পাওয়ার হিসেবের খেলায় জমাটবদ্ধ ঋণ
বোঝা টানতে টানতে দিকভ্রান্ত হয়েছে সমাজ,
চুপসেছে সহাস্য মুখেরা, বিনিময়ে নীরবতা...

থেমেছে তর্জনীর গর্জন, এরপর থেকে স্বপ্ন দেখতে
ভুলেছে মানুষ, উদ্দেশ্যহীন ছোটাছুটিতে পেরিয়ে
যাচ্ছে দিনপঞ্জিকায় লিপিবদ্ধ যাবতীয় নথিপত্র
নির্বাক সময়ের হাতেখড়িতে স্বাধীনতা কেবল শব্দ

কবিরাও কবিতায় লিখছেন না স্বাধীনতার কথা
ব্যর্থদের কলমজুড়ে ফুটে ওঠে শ্লোগান, কবিতা নয়।
পারিজাত ফুল ঝরেছে কবেই! জেসমিনের ঘ্রাণ
বুকে জড়াতে ভুলেছে নিঃসঙ্গতাপ্রিয় মানবসমাজ।

আমিও অনেকদিন লিখিনি স্বাধীনতার কথা।
স্বাধীনতা বলতে বুঝি ছোট্ট শিশুর অনাবিল হাসি
লাজুক মুখে ঢেকে রাখা গ্রাম্য বধুর হাসি,
আমি চোখ বন্ধ করলেই শুনি লালন, হাসনের
স্নেহের পরশ, ভেসে আসে আব্বাসউদ্দিন,
আবদুল আলিমের কণ্ঠেও খুঁজে পাই স্বাধীনতা...

নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা সভ্যতায় জন্মানো
অজস্র কবিতার ভিড়ে বিমোহিত করা রবিঠাকুর,
নজরুল, জীবনানন্দ'র কবিতায় জীবনের টঙ্কার।
স্বাধীনতা মানে অজস্র রক্ত, লাঞ্ছনার বিনিময়ে
পাওয়া লাল সবুজ পতাকা, অজস্র সুখের ঋণ।

Wednesday 13 December 2017

লিজাকে লিখা চিঠি

প্রিয়তা,

কথারা থেমে যায়। চুপচাপ ভাবতে বসো, শেষ কবে গা এলিয়েছো বারোয়ারি বাতাসে? ভাবছো, শুরুটা হতে পারতো ফর্মালিটিজ মেনে। প্রথমে সম্ভাষণ, অতঃপর প্রযত্নে... অথচ তার কিছুই নেই এখানটায়। শুরুতে একথা বলতেই হয় তুমি একটা মহাপাজি। নিজে চিঠি লিখছোনা আর  আমাকে বলছো লিখতে। লিখতেই হবে? ভাবছি এই নগরে যে কবি কখনো প্রেমে পড়েনি, সে কাকে চিঠি লিখবে? কেনোইবা লিখবে? কেউ তো নেই অপেক্ষায়? সেও তো জানে কোনোদিন কোনও চিঠি ভুল করে উড়ে আসবেনা তার ঠিকানায়... অদ্ভুত হলেও সত্য সেই মানুষটা চিঠি লিখতে ভালবাসে।

শীতে চারটে জ্যাকেট কিনলে শুনলাম। এতোগুলো! ভাবছি... উষ্ণতার জন্য তোমারও কী মানুষ দরকার। তোমার শহরে তো উৎসবের মাস। বড়দিন, বর্ষবিদায়, নববর্ষের আগমনী গান। দোকানে দোকানে দিয়ে রেখেছে স্পেশাল অফার। কিনেছো বুঝি অনেক? আচ্ছা তুমি কী গান গাইতে পারো? নাচতে? ছবি আঁকতে? পারো না বুঝি! আমার তো তোমার মুখের দিকে তাকালেই মনে হয় সব্যসাচী আর্টিস্ট। যে কথা বললে গাছ থেকে খসে পড়বে শিউলিফুল। লজ্জাপতিরা কুঁচকে যাবে লজ্জায়, আবার দূর্বাঘাস ভিজিয়ে দিতে চাইবে পা। কুয়াশা, শিশিরে মিলেমিশে একাকার। এসব সবটাই আনুমানিক।

এতোটুকু লিখেও ভাবছি কী লিখবো তোমায়? কোনো কথাই তো বলা হলোনা। প্রান্তিক সময়ের অলিগলিতে থেমে থাকে সময়। তুমি লুকোচুরি খেলতে ভালবাসো। দেশে এসে ঘুরে যাও, মুখবইতেই দেখি...সামনাসামনি সাক্ষাত হয়না আমাদের। দেখা হবে কিনা সেটাও জানিনা। যখন আমি এই চিঠি লিখছি তখন প্রায় তিনটে। লাঞ্চ করেই লিখতে বসলাম। এতোক্ষণে তোমার ঘড়ি মধ্যরাত পেরিয়েছে। হয়তো লেখাটা পুরোপুরি শেষ হতে হতে তুমি ঘুমিয়ে পড়বে। তারমানে তোমার অভিব্যক্তি জানতে আমার রাত নামবে। ভাবছি অবাক হবে নাকি বিরক্ত।

কিছু উশখুশ রেশ থাকুক মনের কাটাকুটিতে। জ্বলছে সিগারেট। ভাবনার অবকাশে সুখে বিলীন হচ্ছে এলোমেলো বাতাস। বরফ জমা শহরে আমার উষ্ণতা পাঠালাম। গায়ে, মুখে, বুকে মেখো যতনে।
বরফে ঢেকে গেছে চারপাশ, সান্টার আগমনী গান
শোনাতে শহরজুড়ে নেমেছে শীতকালীন বাতাবরণ
নির্ভয়ে চালাও আঙুল, হে প্রেমিক পিয়ানোবাদক
আমি ভাসছি — প্রেমে, অপ্রেমে কিংবা তোমাতে।
চুপিসারে নেমে আসবে আমার শহরে রাত। গল্পের মোহনা হতে মুছে যাবে নাম। দিনশেষে আমিও ডুবে যাবো কবিতার বইয়ে। তুমি ব্যস্ত অফিসের কাজে আর সকালের কফির কাপে...এরমাঝে একটু দাবী তো থাকে...চাওয়া পাওয়ার বাইরেও থাকে কিছু শিহরণ, স্পর্শ, অনুনাদ। আর থাকে প্রেম আর অপ্রেমের মাঝের স্বরলিপি, তুমি সেগুলোকে অলংকার বানিয়ে রেখো নিজের মাঝে।

ইতি,
রোদ্দুর
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ

Saturday 9 December 2017

ট্রাপিজিয়াম

ট্রাপিজিয়াম
ইমেল নাঈম

ট্রাপিজিয়ামের চোখে চোখ রাখি, বর্তুল পৃথিবীতে হাহাকার
কেবল উড়ে আসে। নির্ভুল জীবনের মাপজোকে নিরেট হিসেব।
ভুল, ভুলই একমাত্র সত্য। নদীর পটে গড়ে ওঠা সভ্যতায়
বলি হচ্ছে পাললিক স্পর্শগুলো, ম্লান হচ্ছে নির্বাক জীবন।

তোমাকে স্থূল দেখায়, লেন্সের কারণে... স্পষ্ট আর অস্পষ্টের
মাঝামাঝিতে সহবস্থান। ট্রাপিজিয়ামের বাহুগুলো অসমান্তরাল,
সেখানে অপলিপিবদ্ধ সুস্পষ্ট বার্তা — সব আবছা, রাডার ফাঁকি
দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একদল প্রজাপতি, আমিও ট্রিগারে রাখি হাত।

ব্যারেলের উপর বসেছে একটি দোয়েল, নির্ভার দৃষ্টিতে দেখছে
সুন্দরের বিনির্মাণ প্রকল্পে গড়ে উঠছে অজস্র ধ্বংসাত্মক যন্ত্রাদি,
হাপিত্যেশ ঝরছে দিনপঞ্জির গল্পগুলোতে, আমি লিখছি অসুন্দর।

ট্রাপিজিয়ামের বুকে কেন্দ্র গড়ি যুদ্ধক্ষেত্রের মায়াজালে।
পড়ে আছে মৃত পাখিদের জীবাশ্ম, প্রজাপতিরা ফেরেনা ঘরে,
বর্তুল পৃথিবীর সভ্যতায় চাষাবাদ করি বনসাই, ইকেবানা
ট্রাপিজিয়াম আমাকে আস্বাদ দেয় অলীক চুম্বন, যৌনতার।

ট্রাপিজিয়ামজুড়ে দুঃখ — তোপধ্বনি শুনি ধ্বংসের  সাইরেনে।

প্রকাশিতঃ অন্যনিষাদ ওয়েব পত্রিকা

Thursday 7 December 2017

দিনলিপির আয়োজন - ৩

দিনলিপির আয়োজন - ৩
ইমেল নাঈম

খেলাঘরের রূপালি মায়া, চুপচাপ তাকিয়ে থাকে।
শব্দহীন হই। নতজানু আমি কেবল অন্বেষণে মত্ত।
বিমূর্ত শব্দায়নের পরে প্রকৃতির নীরবতার প্রচ্ছদে
আঁকিবুঁকি খেলছি মহাকালের পথে — নিঃসাড়।

এভাবেই লিপিবদ্ধ হয় অভিমানের জলপ্রপাত
শীতলতা গ্রাস করে ফেলে আমাকে, নির্বাক
চিত্রায়নে সাদাকালো পোর্ট্রেট। নির্ভরতা শিখি।
নিজের সাথে প্রেম — এর বেশি পাওনা নেই।

হেমন্তের শেষভাগে চুপিসারে নেমে আসে চাঁদ
ঠাণ্ডার আমেজ, কল্পনার প্রেমে কিছু চুম্বন থাকে
নীরবতার ভাজে অনেক কথা বলা হয় — শব্দহীন।

নৈঃশব্দ্যের কাছে নতজানু হই, প্রফেটের মতো
দৈববাণী এসে ছুঁয়ে যাবে আমাকে, অন্ধকার মুছে
আলোয় আলোকিত হবে চারপাশ, এরবেশি অজানা
নির্বাক চালচিত্রের ভিড়ে কিছু সময় ব্যক্তিগত।

নীরবতায় দুঃখদের বিনির্মাণ করছি স্ট্যাচুর আদলে
নির্ভুলতার দায় নেইনি কেউ, নগ্নতার ভিড়ে
বিট জেনারেশনের মতো ছিঁড়ে ফেলি খোলস
বইয়ের মলাটের মতো লুকোনো সব গল্প

প্যান্ডোরা বক্সের মতো ছড়িয়ে পড়ছে ঋণাত্মক ধর্ম
আপেক্ষিকতার হিসেবে সময় পেরোয় আবেশহীন।

Tuesday 5 December 2017

পলাতক

পলাতক
ইমেল নাঈম

১।
নিষ্প্রভ আলোকচ্ছটা, মুছেছে নির্ভুল কারুকাজ
বেপরোয়া জীবন পাঠ, চুপসেছে ভ্রান্ত হিসেব
অভিমানের খাতায় লিখে রাখছি নিঃসীমতা
কে ডাকে? কার গলা শোনা যায় এই অবেলায়?

২।
মুছে যায় আকরিক আকর্ষণ, ম্যাড়ম্যাড়ে ভাজ।
আততায়ী হয়ে ছুঁটি, কম্পাসে রাখিনি চোখ।
ঠিক আর ভুলের নির্ণায়ক নেই এখন এ'মুহূর্তে
চুপিসারে নেমে আসে রাত, হাতড়ে ফিরি পথ

৩।
সিটি সার্ভিসের বাস থামলো আলেয়ার খেলায়
গন্তব্য তার শেষটুকু আঁকতে পুরোপুরি ব্যর্থ,
মরীচিকা আঁকার মতো পর্যাপ্ত রোদ নেই
ভুলগুলো অব্যাখ্যাত থাকে নিয়মের কারণে
কেবল প্রবঞ্চনার কালিটুকু আছে রঙতুলিতে।

৪।
নির্ভার জীবন মুছে যায়। রয়েছে পাপদৃষ্টি...
আহ এই সমাবেশ যেনো দুদিনের খেলাঘর

আসা যাওয়ার ফাঁকেই মিলাচ্ছি সরল অংক
জমছে পাপ, পুণ্য। মিছিলে জুটছে নতুন মুখ

আমি পলাতক, শুধু ছুটছি রাজপথ পেরিয়ে...

প্রকাশকালঃ ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৪

Monday 4 December 2017

নগরের গান

নগরের গান
ইমেল নাঈম

একই শব্দ বারবার ফিরে আসে। মেঘ, বৃষ্টি, রোদ, জল,
এমনকি আগুনগুলো এক। প্রেম ছড়িয়ে যায়
এক হতে দশে সেই প্রেমটিও এক, এককে সাজালে
থাকে দুটো সত্তা; সেখান থেকে ছড়ায় বহুতে

সুউচ্চ দালান কোঠা, ইট পাথর, সিমেন্টের ভিড়ে
রসায়ন হিসেবে থাকে ইস্পাত, তাতে প্রভাবক হয়
এক স্থপতির চোখ। তুহিন নামেনা আমার শহরে।
হালকা শাল গায়ে চাপিয়ে আমরা অবসরে
পাড়ার দোকান হতে ভাপা পিঠা কিনে খাই।

কিশোর-কিশোরী একসাথে খেলে ব্যাডমিন্টন
তরুণের দল অপেক্ষায় রাত নামবার
অফিস ফেরত যুবকের সময় কাটে মুঠোফোনে
বাবাদের কার্যক্রমও চোখ বন্ধ করে বলা যায়
মায়েদের হেঁসেলে রান্না হয় সুখ, দুঃখ, আনন্দ, কষ্ট

নাগরিক রোজকার ছবিগুলোর পরিবর্তন নেই
প্রেমগুলো একই থাকে
       স্পর্শগুলো এক
               চাওয়া এক
                      মুহূর্তগুলো এক
এসমস্ত দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি জানান দেয়
শহরের পটে আঁকা ছবিগুলোরও প্রাণ আছে

তারাও শ্বাস নেয় গাছের মতো, উষ্ণতা দেয় 
প্রেমিকের মতো, আগলে রাখে অভিভাবক হয়ে।

প্রকাশকালঃ ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৪

Friday 1 December 2017

সিস্টেম

সিস্টেম
ইমেল নাঈম

ডার্ক হিউমারে চেপে আসে গোলাপি দুঃখ
লাইক চাই — কমেন্ট হলে আরো ভালো
নারীদেহকে জীববিজ্ঞানের প্রেকটিক্যালে
কাঁটাছেঁড়া করতে বসি সুযোগ পেলেই।

সাইবার সেলের কর্মক্ষমতায় হাসির রোল
চার থেকে ষাট, সবটাই কেবল মাংসপিণ্ড
স্ট্যান্ডার্ড স্ট্যান্ডার্ড খেলায় মুখবইয়ের
অভিযোগের খাতা অজুহাত হয়ে ফেরে।

বুকের পাটা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে বত্রিশ
অহংকারে খেলে যায় আগাগোড়া
সমাজ শেখাচ্ছে অসহিষ্ণুতার পুরাণ,
আইনের হাত লম্বা হয়ে নাগালছাড়া
পঞ্জিকা পালটায় সাড়ে আঠারো মাসে

পত্রিকার কাটতি বাড়ে — মুখবইয়ে আড্ডা
মোমবাতি জ্বলে, কালো পতাকাও ওড়ে।
মধ্যবিকালে নামে মিছিল, অন্যকিছু নয়।

ডার্ক হিউমার মিম, তাতে ছড়ায় দুর্গন্ধ
নারী শত্রু নারীর, পুরুষ ব্যস্ত মাপজোখে
রাস্তায় বাড়ছে কুস্পর্শ — শরীর মাংসপিণ্ড
আর মুখবইতে কিছুদিনের চিৎকার...

কবির কবিতারা ব্যর্থ রোজকার মিছিলে
দিনশেষে শুয়োরেরা গায় মানবতার গান।

Thursday 30 November 2017

ডিপ্রেশন অব নভেম্বর

ডিপ্রেশন অব নভেম্বর

হেমন্তের আলোগুলো ম্লান। মলিন কিশোরী নেচে চলেছে ঘুঙুর পায়ে। ভোরের কলতান মুছেছে বিনিদ্রতার কোরাসে। কুয়াশা নামছে তারই হাত ধরে। নির্ঘুম রজনী অভ্যাস মাত্র। সকালের ভিড়ে গরম চা আর দুটো পরোটার ভাজে কাটছে ব্যস্ততার আয়োজন। নীরবতা আঁকতে বসে বিলীন হলো সুখ। নির্বাক আলিঙ্গনে ছড়ায় উষ্ণতা। আমি কেবল ছায়াকেই অনুসরণ করি ভোরের স্নিগ্ধতায়।

বিষণ্ণ সকাল নামে নভেম্বরে। শীতের উড়ুক্কু বেপরোয়া আয়োজনে নামে কুয়াশা। কবিতার খাতায় জমা হয়নি কিছু। বিপরীতমুখী আকর্ষণে ম্লান হয়েছে সদ্য সমাপ্ত ওল্ডমংক। প্রাচীন কোনো শব্দের কাছে নতজানু হয়েছি। নিঃসঙ্গতার আড়ালে খবর রাখছিনা নিজের। নির্ভুল অংকের হিসেবে গিলে খাচ্ছি সাতকাহন।

শীত বাড়লে একাকীত্ব ঘিরে ধরে। ট্যাবলেটের পর ট্যাবলেট। প্রাক্তন প্রেমের কথা মনে পড়ে অসময়ে। নিজের ভিতরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে অদ্ভুতুড়ে পাগলামো। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আর্দ্রতা মাপি সকাল সকাল। আগের রাতগুলো জেগে আছে এখনো। সকালের রোদ দেখছি। মেজাজ হচ্ছে খিটমটে। ওষুধের বেড়াজালে নিজেকে মাপছি সকালের নাশতায়।

সকালটা বয়ে চলে পুরোটা দিন। যেনো বিশাল ক্রেন টেনে নিয়ে যাচ্ছে দানবাকৃতির সকালকে। দুপুরের মায়ায় পড়ে থাকে তার ছায়া। বিকেলের রঙতুলিতেও পড়ে থাকে সেই রেশ।

Tuesday 28 November 2017

দিনলিপির আয়োজন -২

দিনলিপির আয়োজন - ২
ইমেল নাঈম

একটা বিচ্ছেদের গল্প লিখতে বসে পেরিয়ে যায় হরিৎবন
লীন মুহূর্তগুলো উঁকিঝুঁকি দেয় অষ্টাদশের আঙিনায়
স্পর্শের বিনিময়ে জেগে আছে একরাশ না পাওয়া বিরহ

সকালে চৈতালি হাওয়া এসে পথ ভেজায় অকারণে
নির্বাক সময়ের পরতে পরতে লিপিবদ্ধ দুঃখ কথা
দুলদুল ঘোড়ায় অচেনা সরেওয়ার, নিজের পথটুকুও
চিনে উঠিনি এখনো। মলিনতা ছুঁয়ে যাচ্ছে কাঠের গির্জায়
দরজায় খড়িমাটি দিয়ে কে লিখেছে অচেনা সংকেত!

আমরা দুজনেই রঙিন সময়ের ভাজে আরব বেদুইন
কিছু সময় চেয়ে থাকি একে অপরের দিকে অকারণে
বাকীটুকুন অদৃষ্টকে লিখছি গোলাপের চাষাবাদে।

ব্যক্তিগত কথোপকথনের আড়ালে মেঘমল্লার জমে
নীরবতা পাঠের ভিড়ে একটু কোলাহলও অনেককিছু
উড়ছে পরিযায়ীপাখি আমাদের সম্পর্ক নির্ণয় শেষে।

প্রতিদানে পড়ে থাকে ব্যর্থতার সালতামামি,
গেরস্থালী আর বাউণ্ডুলের মাঝের অদ্ভুত জীবন।

Sunday 26 November 2017

দিনলিপিরর আয়োজন — ১

দিনলিপির আয়োজন—১
ইমেল নাঈম

পথ আটকে যায় গলায় বাঁধানো মুক্তোর হারে।

নির্বাক দৃষ্টিতে আঁকা চিত্রপট, ঘোলাটে মেঘ
কাটলে তাকিয়ে থাকে একরাশ আদিম প্রবৃত্তি
উৎকণ্ঠা কাটিয়ে তাকাতেই ভয়ে শিউরে উঠি
চিরতরে মুছে যায় আমাদের রঙিন ফানুশগুলো

দিনলিপিতে লিখে রাখি নৈসর্গিক উপাদান
কিশোর ময়ূর অবিরাম নাচছে বৃষ্টিহীন দিনে
চুপসে যাওয়া বেলুন, গোত্তা খাওয়া ঘুড়ির বেদনা
আবিষ্কারের ফাঁকে পালিয়েছে নির্ভার সময়।

নির্বাক চলচ্চিত্র, সাদাকালো বিশাল ক্যানভাসের
আঁকিবুঁকি খেলার মাঝে দুঃখ নামিয়ে আনছেন —
ভিখারির বেশে ছুটে চলেছেন সুফি সাধক, নিজের
দিকে তাকিয়ে দেখছিনা একদম, প্রান্তিক ছলনায়
পালিয়ে যাচ্ছি নির্ভেজাল সময়ের জাল ছিঁড়ে।

হাপিত্যেশ ঝরানো বিকেলে যোগব্যায়ামের
আয়োজনে কতটা সবুজ দেখেছে চোখ, বাকীটুকু
নিয়ে কৈশোরের লুকোছাপা খেলছে খেলোয়াড়
তিনমাসের হিসেবে সেও কিনছে কর্পোরেট মুহূর্ত।

পথ আটকে যায় গলায় বাঁধানো মুক্তোর হারে।

Friday 24 November 2017

অনিন্দ্য'র চিঠি -১

অনিন্দ্য'র চিঠি - ১
ইমেল নাঈম

প্রথম চিঠি লিখছি। জানিনা ওয়েভ যুগে, ওয়াইফাইয়ের সব ফাঁক গলে এই চিঠি আদৌ পৌছবে কিনা তোমার ঠিকানায়। ঠিকানাটাও পেয়েছিলাম হুট করেই। কাকে যেনো ঠিকানা পাঠাতে গিয়ে ভুল করেই আমার ইনবক্সে পাঠিয়ে দিলে। অতঃপর নীরবতা দেখে বুঝতে পারলে ভুল জায়গায় ফেলেছো নোঙ্গর। অথচ আমি তখন লিখতে বসে গেলাম এই চিঠি। বলতে পারো জুয়া খেলছি আনাড়ি খেলোয়াড় হয়ে। তোমার শহরে কোন সময় মানে ঋতু কোনটা জানিনা। আমার এখানে হেমন্ত। সকালের মিষ্টি ঠাণ্ডা, জানালার ফাঁক গলে এক চিলতে আকাশ চলে আসে উড়ে উড়ে। ঘড়ির কাটায় ঘুমোচ্ছে ব্যস্ত চঞ্চল মানুষগুলো। খানিকবাদেই সব ক্লান্তি ঝেড়েঝুড়ে ছুটতে শুরু করবে আপন মহিমায়।

দিনের শুরুর এই সকালটা সত্যি মধুময়। আকশজুড়ে পাখির কলতান। ভাড়াবাড়ির ছাদ উন্মুক্ত নয় আমাদের মতো ভাড়াটের জন্য। জানালায় তাকিয়ে পাখির গান শুনি। মোজার্ট নামে বুকের ভিতরে। সুরের ব্যঞ্জনায় ভাসতে থাকি অনাবিল সময়ের নায়ে চড়ে। বদলে গেছে আমার শহর সবুজ মাঠ নেই হতে হতে বিলীন উঁচু দালানের ভিড়ে। কর্ণফুলীতে সাম্পানের শরীরে চাপিয়ে দিয়েছে কে যেনো ইঞ্জিন। আধুনিকতার নামে লৌকিক হয়ে উঠছি। এই শহর ভালবাসতে ভুলে গেছে।

তোমার আকাশ মানেই তো প্রাচুর্য। জ্যাকসন হাইটের সুবিশাল রাস্তার পরিপাটী ভাজ দেখে হয়তো তোমার চোখ জুড়ে যায়। শীতের সকাল আসতে কতো দেরি? নাকি এসেও চলে গেছে সে। আকাশ দেখা হয়? নাকি প্রবাস জীবনের আয়োজনে বুঝি আকাশের রঙ যে প্রেম আর বিরহের সংমিশ্রণ তাও খেয়াল করোনি।

কবিতা লিখছোনা অনেক দিন। মুখবইতে নানা ছবির ভিড়ে ক্লান্ত লাগছে আমার। কবিতা, শুধু কবিতাই পারে এই ক্লান্তির কাছ থেকে পরিত্রাণ দিতে। ছবিঘরের বাইরেও জীবন আছে? সেই জীবনটাকে কখনো আবিষ্কার করতে পারিনি। মুখবইতে একটাই সুবিধা কী সুন্দর নিজের ব্যক্তিগত দুঃখ কষ্ট লুকিয়ে রেখে প্লাস্টিক হাসি হেসে বলা যায় বেশ ভালো আছি। অথচ আমার এটুকুতে পোষাবেনা। আমি চাই তার পুরোটা। সেজন্যই চিঠি লিখা। যদিও আমি নিশ্চিত নই এই চিঠি বাংলাদেশ ফেলে সেই আমেরিকায় পৌছবে কিনা আর পৌছলেও তোমার ঠিকানা সে খুঁজে পাবে কিনা। আর পাবার পর তোমার রিয়েকশন কী হবে সেই চিন্তায় ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি।

সময় পেলে তোমার শহরের গল্প শুনিও। শুনতে চাই আমেরিকার আকাশ কী আমার আকাশের মতো, নাকি অন্যরকম। চিঠির শুরুতে সম্বোধন দিলাম না। আসলে বুঝতে পারছিনা কী বলে ডাকবো তোমাকে।

ইতি,
অনিন্দ্য
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ

(বিঃদ্রঃ ইতি শব্দটায় খুব অরুচি। কারণ ইতি মানেই শেষ। আর শেষটা বলতেই ইচ্ছে করছেনা একদমই)

Thursday 23 November 2017

অনুরণন

অনুরণন
ইমেল নাঈম

১.
আঙ্গিক মুছে গেলে দূরবীনের জন্ম হয়
অভিসারী লেন্সের মাঝদিয়ে বয়স বাড়ে নিঃসঙ্গতার

নির্ভুল অংক কষি, বিনিময়ে মেলেনা প্রাপ্তি
লুকোচুরি খেলার মাঝখান দিয়ে চিৎকার শুনি
হেই ম্যান গো... গো... রান ফাস্ট...

সেলাই মেশিনে লিখছি পলাতক জীবনের স্বরূপ

২.
নিংড়ে দিয়েছি সবটুকু ভালবাসা, প্রতিদানে
ব্যাঞ্জোর সুরে কেবল বেজে গেছে কান্ট্রি সং
ঘর ছাড়া হবে বলেই ফিকে হচ্ছে আয়োজন

চুপচাপ নেমে আসুক রাত, সামাজিকতাকে
ছুঁড়ে ফেলে দিলে দাঁড়িয়ে থাকে আদি প্রবৃত্তি

মাছ বিহীন একুরিয়ামের জীবনকে লিখছি
বিমূর্ত অবয়বের আড়ালে শুনি অট্টহাসি

৩.
চুম্বন মুছলে নিজেকে আর আয়নায় দেখোনা
নির্ভরতার মন্ত্রগুলো মুছে গেছে হিসেবের ভুলে

নাহ্‌, এরচেয়ে বেশি কোনো শব্দ হয়নি
দীর্ঘশ্বাসটুকু শুনছি হতাশার মোড়কে।

ইমসোমনিয়া রাতে চুপিসারে নামে কল্পনারা।

৪.
উল্কিতে এঁকে নিলে পিঠ, আর আমি
ভালবাসি ওই চোখ, এভাবেই বিপরীত দিকে
ঠেলে দিচ্ছো অগোচরে। অথচ, জানতে পারছোনা
বঙ্গোপসাগরের গভীরতা মাপি ওই চোখ দেখে
বিপরীতে ডুবে যাচ্ছি চোরাবালিতে,

অন্ধকারের কোরাসে গাইছি এলিজি, ক্রমশ...।

Tuesday 21 November 2017

বিরহ কোরাস

বিরহ কোরাস
ইমেল নাঈম

ভাবনার করিডোর হতে মুছে যাওয়া নাম
মলিনবিধুর স্বপ্নের ঝাড়ফুঁকে পেরুচ্ছে দিন
নিংড়ে দিচ্ছি নিজেকে প্রহসনের বিরুদ্ধে

হাপিত্যেশের জানালায় কার চোখ পড়ে?
কান্না এলেই দাঁড়িয়ে যাও স্নানঘরে
কৃত্রিম ঝর্ণার বুকে লিখে রাখো অপ্রেম
প্রাহসনিক কাটছাঁট, আর নির্ঘুম রাত্রিকাল

কাঁটাছেঁড়ার বিনিময়ে পাওয়ার তালিকায়
উঠে যাচ্ছে দিনান্তের সুখ দুঃখ, জয় পরাজয়
ইচ্ছেরা ইদানীং চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে
দরজার কপাটে কড়া নাড়ে...খুলে দেখিনা...

বিনির্মাণে গড়তে শিখেছি, ক্ষয়িষ্ণুর পরিবর্তে
কিছু ম্লান শব্দরাশি, যেখানে নোঙ্গর ফেলেনা
জাহাজ, মাস্তুলে ঝুলেনা আলোর মশাল
বাতিঘরজুড়ে ব্যক্তিগত ব্যর্থতার ফুলঝুরি।

যোগ বিয়োগের সমাপনে গড়ি নিজস্ব বলয়
যেখানে নেই এর মিছিলে যুক্ত হয় নাম।