Saturday 29 October 2016

সেপ্টেম্বরের চিঠি

সেপ্টেম্বরের চিঠি
ইমেল নাঈম

সেপ্টেম্বরের চিঠিগুলো অকারণেই পরে থাকে
সময় পেরিয়ে যায়, সামনের পথে দাঁড়িয়ে
কেউ নেই, তবুও অপেক্ষা থাকে, অবসরে
চায়ের কাপে একমুঠো বিষণ্ণতা লিখে রাখি।

এরই মাঝে ব্যস্ত সড়কের পাশে স্পেনিশ গিটার
বাজিয়ে গান গাইতে থাকা ভিক্ষুকটিও হাতের
ভাজ খুলে খেললো টুয়েন্টি নাইনের ট্রামকার্ড।
সেপ্টেম্বর, শুধু সেপ্টেম্বরই জানে প্রতীক্ষারত
কবি দুরবিন চোখে তাকিয়ে থাকে সামনে।

সেপ্টেম্বর জানে, চিঠিগুলোর কোনো প্রাপক নেই
উড়োচিঠির মতো উড়তে উড়তে আজ এখানে
আমি প্রত্নতাত্ত্বিক, সারাদিন মাটি খুঁড়ে বের করি
প্রেমের উপাখ্যান। এখনো ব্যর্থ নাবিকের মতো
হিসেব করি জোয়ারভাটার স্রোতের বেগ,

পাটাতনে বসে সময় কাটাই, একাকি সময়ে সঙ্গ
দেয় সেপ্টেম্বরের চিঠিগুলো, প্রেরক খুঁজে
পায়নি প্রাপকের নাম, আমি খুঁজে বের করে
সাজিয়েছি তাদের, সেখানে আমার অতীতের
কোনো গল্প নেই, স্মৃতিপটে মুছে গেছে সব নাম...

চিঠি

চিঠি
— ইমেল নাঈম

প্রিয় বাংলাদেশ খুব ইচ্ছে করে ওমরের মতো একটা চিঠি লিখি তোমাকে। নীলনদকে লিখেছিলো ওমর, আমি লিখবো তোমাকে। ওমর ছিলো খলিফা, আমিও রাষ্ট্রের মালিক যদিও বাস্তবে নই, শুধুই খাতা কলমে। ওমরের ক্ষমতা ছিলো অনেক, আমার কলম ছাড়া আর কোনো ক্ষমতাই নাই। 

আমার খুব ইচ্ছে একটা চিঠি দিই তোমাকে। শুনেছি কিশোরীর তাজা রক্তে নাকি নীলনদ ভরে উঠতো জলে। না পেলে শীতকালে অকারণেই শুকিয়ে চৌচির। চিঠির ভিতরে কি লিখা ছিলো আমি জানি না, শুনেছি নীলনদ চিরদিনের জন্য পানিতে ভরে উঠেছিলো ওই চিঠি পেয়ে।

চিঠি লিখতে বসে শুরু করলাম, কিন্তু শুরুর লাইনটা কি হবে সেটা জানি না। প্রযত্নে কাকে দিবো — সেটাও অজানা। একবার এক আল্লামার কণ্ঠে শুনেছিলাম, নীলনদকে লেখা চিঠির লাইনবিশেষ। আমিও ওটার অনুকরণে লিখা শুরু করলাম, হে বাংলাদেশ যদি তুমি মহান আল্লাহ্'র ইচ্ছায় নারী নির্যাতন, ভিন্নধর্মাবলম্বীদের উপরে এহেন নির্যাতন করো আমার কিছু বলার নাই, যদি তোমার স্বেচ্ছায় এমন হয় তবে আল্লাহ্'র কসম তোমার মতো....

বাকি অংশটুকু আমি আর লিখতে পারি না। আমার খুব ইচ্ছে হয় ইদানীং বাংলাদেশকে একটা চিঠি দিই, নীলনদকে যেভাবে দিয়েছিলো ওমর।

Tuesday 25 October 2016

পাঁচ বছরের জন্য এলিজি

পাঁচ বছরের জন্য এলিজি
ইমেল নাঈম

পাঁচ বছরের জন্য কোনো কবিতা হয়না
পাঁচ বছর জানেনা জীবনের অর্থমূল্য
পাঁচ বছর থাকে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে
অপরাধ বোঝেনা, কিন্তু সে অপরাধী...

পাঁচ বছর এককাতারে দাঁড় করায় পৃথিবী
পাঁচ বছর কী জানে অন্যায়কারী অনেকে
মুখোশের আড়ালে লুকিয়েছে জনারণ্যে!

পাঁচ বছর জানেনা সাইফুল্লাহরা জন্মেছে
কারো পেট ফুটো করে, পাঁচ বছর বোঝেনা
সাইফুল্লাহরা আঁচলে ঘাম মোছে কপালের
উনত্রিশ বছর বোঝেনি সাইফুল্লাহদের
অসুস্থ মানসিকতার আগাগোড়া বিশ্লেষণ,

উনত্রিশ বোঝে পাঁচের মানে হয়না অংকে
হতে পারে সেটা আড়াই কিংবা সাড়ে তিন
হতেও পারে সাত বা আট বছরের পৃথিবী

উনত্রিশ বছর জানে এতকিছুর পরেও
সাইফুল্লাহরা বেঁচে থাকে অন্যায় নিয়ে
মরে পচে যায় পাঁচ বছরের অনেক গল্প।

Saturday 22 October 2016

প্রিয়তাকে চিঠি

প্রিয়তা,

মাঝে বয়ে গেলো অনেক সময়। শরতের আকাশ ডুবে গেলো হেমন্তের বুকে। অনেক রাত পেরিয়ে গেছে নির্ভার স্বপ্নে। বাঁধা ছিলো না প্রজাপতির। ভাবি, শান্তিনিকেতনি কুয়াশা বুঝি প্রতি বিকেলে পা ভিজায় প্রিয়তার। দীর্ঘ বিরতি লিখে রাখে অনেক না বলা অভিমান। আমিও রেখেছি কিছুটা তার। বাকিগুলো ঝরে গেছে সকালের শিউলির মতো। লিখতে বসে অবিরত এটাই ভাবছি, প্রিয়তা অবসরে কী তুমি জীবনানন্দ পড়ো নাকি জীবনের আনন্দ কে পাঠ করো সারা সময় ধরে! মনে কী পড়ে বলেছিলে কবিতার বাঁধনে আঁকড়ে ওঠা রোমাঞ্চকর কোনো অধ্যায়ের নাম!

তোমার চিঠি বহুকাল পাইনি, শারীরিক অসুস্থতাও অনেকটা দূরে ঠেলে দিয়েছিলো আমায়। আমিও লিখতে পারি নি অনেক দিন। আসলে অনেক দিন বললে বাড়িয়ে বলা হয় খুব। মাত্র দুমাস। কিন্তু মনে হয় কতকাল। পুরোনো চিঠিগুলো পড়ছিলাম হসপিটালের সিটে বসে। কত স্নেহ, আবেগ আর ভালবাসা এসে জড়ো হলো চিঠিগুলোতে। জানো তো আমি স্বপ্নবিলাসী। কবিতার রঙে তোমাকে সাজাতে থাকি অনবরত। মুখবইয়ের মাঝেও অনুপস্থিত এই কয়েকদিন। প্রতিদিনই যেনো নতুন করে বাঁচার এক আনন্দ।

কোনো এক ডাকপিয়ন বলেছিলো তোমার মন খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। ছাত্ররাজনীতি। তৃতীয় বিশ্বে আদর্শিক রাজনীতি কোনোকালেই কি ছিলো? আমার মনেই পড়ছে না। এখানের রাজনীতিকদের বাদ দিয়ে যদি প্রথম বিশ্বের দিকে তাকাও, দেখো হিলারি ক্লিনটন আর ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতার লোভে কী নির্লজ্জভাবে আক্রমণ করছে একে অপরকে। এরাই আবার পৃথিবীকে সভ্যতা শেখাতে কত বড়বড় ডায়লগ ঝাড়বে ক্ষমতায় আসার পর। আর পৃথিবীও ভদ্রতার নামে মেনে নেয় তাদের সব কথা। কখনো বলে না তাদের এইসব নোংরামোর কথা। কবিতা ভালবাসি, তাই রাজনীতিও। আমারও সাম্যের গান গাইতে ওই মিছিলে হাঁটতে ইচ্ছে করে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সুউচ্চ কণ্ঠস্বর শুনে আমি ভাবি কোকিলের ডাক, সামনেই অনাগত এক বসন্ত।

সাম্প্রতিক সময়ে নোবেল নিয়ে ঝগড়া দেখলাম মুখবইয়ের কল্যাণে। আমার নিজেরও প্রিয় ছিলো হারুকি মুরাকামি। নাহ, উনি নন। পেলেন বব ডিলান। পুরোই থমকে গেলাম এই খবরটা দেখে। এরপরই শুরু হলো নোবেল প্রাইজ নিয়ে নানা ট্রল। আমি তো হতবাক। তবুও ভালো হাসপাতালের শেষ কয়েকটা দিন ভালোই কেটেছে বিতর্ক প্রতিযোগিতা দেখে। ওহ, আমাদের এখানকার প্রথম সারির একটা পত্রিকা একটা মজার কাণ্ড করেছে। নাম টা বলছি না, তবে পত্রিকাটে আমি দৈনিক সুবহে সাদিক নামেই ডাকি। ওনারা বব ডিলানের একটা গান কে বিচ্ছিরি ভাবে অনুবাদ করেছে। এইটা মানে গানটা তোমাকে হোয়াটস আপে পাঠাবো। আমার অবাক লাগে এতো উপরের মানুষ এতো খারাপ অনুবাদ কেমনে করে?

বাবা আশাকরি ভালো আছেন। আর এতোদিনে তোমার মেঠোপথের ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠেছে। গান কেমন চলছে? কতদিন শুনিনি। জানোই তো মাত্র মেডিক্যাল ফেরত, সেভাবে সময় দেয়া হয়নি তোমাকে। আর তোমার মন খারাপের পরিমাণ কমবে আশাকরি এখন থেকে। আমার পরীক্ষাও কাছিয়ে এলো। কিছুই পড়িনি। সামনে যে দুর্যোগের ঘনঘটা। অবশ্য আমি একাডেমিক পড়াশোনাকে এতোটা গুরুত্বও দিই না। তাই ওটা নিয়ে ভাবছিও না খুব একটা। পড়াশোনার দরকার মননের জন্য, মানুষ হয়ে ওঠার জন্য।

তোমার নতুন চিঠির অপেক্ষায় রোদ্দুর। প্রিয়তা জানো তো, সব কবিতার মানে হয় না। প্রতিটা ভালবাসিও কেনো জানি বাসি হয়না। প্রতিটি মুহূর্ত মুহূর্তের মতোই কথা বলে। আসলে কবিতার মোড়কে যাই লিখে যাই তার সবটাই তোমাকে ভালবাসার গল্প।

ফিরে আসা
রোদ্দুর
চট্টগ্রাম।

Friday 21 October 2016

শিক্ষালাভ

শিক্ষালাভ
ইমেল নাঈম

ঈশ্বর আমি তোমার সাথে প্রেম করতে চাই

আমার অষ্টাদশী প্রেম ভাসে আবেগে,
তোমার সাথে গড়তে চায় অলিখিত বন্ধন।
শিখিনি আকৃতির তত্ত্ব, প্রশ্ন করিনি অস্তিত্বে
আনন্দ খুঁজতে মাথা পেতে দি' তোমার বুকে।

নিজেকে খুঁজে পেতে চাই লোক লোকারণ্যে
দামী মন্দিরে কিংবা শানবাঁধানো গির্জাতে নয়
মসজিদের মিম্বারে অথবা প্যাগোডার শান্ত
অবয়বে তোমাকে খুঁজিনি আমি কোনোদিন।

আমি সকালের স্নিগ্ধতার আবেশে খুঁজি,
রেখে দেওয়া প্রাণান্তকর পৃথিবীর পথেঘাটে
প্রাণের ভিতরের স্পন্দন খেলছে আপন মনে
তার প্রতিটি স্তরে খুঁজে পাই তোমার স্পর্শ।

তোমাকে খুঁজতে দেখি — সকাল সন্ধ্যা টাকার
গোলাম ভাঙাচ্ছে ডলারের বাণ্ডিল, ধর্মের
নামে ব্যবসা করে ফিরছে ভণ্ড প্রতারক,
তোমাকে আপন করতে গিয়ে ক্রমশ দূরে
সরে যায় মানুষ, তোমার থেকে অনেক দূরে

প্রতি বেলার আযান আমাকে প্রশান্তি দেয়
বুদ্ধের অহিংস নীতি আমাকে করে সজীব
সন্ধ্যার উলুধ্বনি আমাকে ভাবতে শেখায়
ক্রিসমাসের আনন্দে আমিও ভাসতে জানি
ধার্মিক মানুষের সান্নিধ্য আমাকে তৃপ্তি দেয়

আমি তোমার কাছেই প্রতিদিন প্রেম শিখি
অপূর্ব পৃথিবীর রূপে কতভাগ দিলে তুমি
আমি প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে অনুভব করি
তোমার রূপের মহিমা। আমি প্রেম শিখি...

তোমার সাথেই প্রেম করতে চাই পরমেশ্বর।

Thursday 20 October 2016

একগুচ্ছ অন্ধকার

একগুচ্ছ অন্ধকার
ইমেল নাঈম

১।

অন্ধকার তাড়াতে ঢুকে পড়ি
ভুল কোনো গলিতে

ল্যাম্পপোস্টের আলোতে
তাড়াই নিঃসীম আঁধার

রাতের আলোয় সব দৃশ্যমান

তবু, আমি আলোর অপেক্ষায়
হাঁটছি অন্ধকারের অলিগলি।

২।

দু হাত বাড়াই, আঁকড়ে ধরতে
চাই শিকড়, মুহূর্তে মিলিয়ে যায়।

পথের গল্পে শেষ বিন্দুতে কিছুই
থাকেনা বর্ণিত, নিরাকার সুর
তাকে বাঁধতে গিয়ে হারিয়ে যাই

আলিঙ্গন করি পাপ, দায়ভার
কমানোর অংক করলে বুঝি
আলোর পথ অনেক দূরে।

৩।

সিরাত ডুবে গেছে, আলো নেই।
অন্ধকার ছুঁয়ে গেছে চারপাশ
নিঃসীম আঁধারে কী থাকে আমার
ক্রমাগত খুঁজে চলেছি তোমাকে...

৪।

তাকিয়ে থাকি অনির্ণীত গন্তব্যে
আলোর সন্ধ্যানে হাঁটি অন্ধকারে।

Saturday 15 October 2016

আর্জি

আর্জি
ইমেল নাঈম

কোজাগরী চাঁদ আস্ত গিলে খায় আমাকে
বিন্দুর শেষ রেশ টানতে বসে অজানায় হারাই
মিউজিক প্লেয়ারে ভেসে আসে অস্কার পেটারসন...

আজ নেশা করতে আপত্তি নেই সিন্ডারেলা 
আমায় জুতো হারাবার গল্প শুনিও না আর
দুঃখের প্রলেপে জমে গেছে অহেতুক প্রশ্ন
নিজেকে মিথলজির কাল্পনিক চরিত্রে খুঁজছি না

তোমরা কেউ কখনো চাঁদটিকে ডুবতে দিওনা 
আমৃত্যু থেকে যাক প্রবারণা, আকাশে উড়ুক
নানা বর্ণের ফানুশ। কবিরা ফানুশ দেখে 
বেঁচে থাকে নতুন কোনো কবিতা লেখার জন্য।

নির্লজ্জ চাঁদ তুমি আর গিলে খেয়ো না আমাকে
পাত্রের শরাব শেষ হয়ে এলো প্রায়, যদিও আমি
ঘোরলাগা চোখে সৌন্দর্য পান করছি এখনো।

Thursday 13 October 2016

দুঃসপ্নের খসড়া

দুঃসপ্নের খসড়া
ইমেল নাঈম

বাবেল মান্দেব খুলে গেলে আর কোনো অবয়ব থাকে না
নিশ্চল দেহের নিরাকার ছোটাছুটি, প্রাণবন্ত উড়ে বেড়ায়
রুহ জানে প্রিয় মানুষের কান্নার রঙ, কেবলমাত্র রুহ চেনে
পাপ পুণ্যের অংকের বেসামাল হিসেবে নগন্য এক দেহকে

ভেসে আসে আজানের ধ্বনি, খানিক আগেই কিছু লোক
খাটিয়া নিয়ে গেছে এ'পথে, কার ডাক এলো— জানা হয়নি
ভাবতে থাকি মুক্তির নাকি নতুন করে পুনঃ পরাধীনতার
শৃঙখলে আবদ্ধ হবার মন্ত্র, বারবার চেষ্টা করি কার মুখ
নিজের মুখ দেখে কাঁপতে থাকে দেহ। ঘাম জমে কপালে।

রাতের ম্লান সিরাত, কোথাও বাজছে সুকরুণ এক বেহালা
গভীরতা বাড়লে দরজার এ'পারে কোনো শব্দ ভাসে না
ভূগর্ভের প্রহরী অনবরত হিসেব করছেন পাপ আর পূণ্যের,
ডান কাঁধের অংক মিলে যায় অল্পেই, বাম কাঁধ দেখে ভয়ে
মুষড়ে উঠি বারবারকল্পনাতেই শিউড়ে ওঠে পুরো শরীর।

আতঙ্কে ঘুম ভাঙতেই বুঝি, রাত শেষভাগ এসে চুমু খায়
আমিও দুঃস্বপ্নে আর ভয়ে বিড়বিড় করে পড়তে থাকি
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্, এরপর ঘুম...
ঘুম ভাঙলেই ক্রমাগত ঈশ্বরের থেকে দূরে শটকে যাই।

(নোটঃ বাবেল মান্দেব আরবি শব্দ, মানে মৃত্যুর দরজা। সিরাত ফার্সি শব্দ, মানে চাঁদ)

Wednesday 12 October 2016

তোমার জন্য লেখা

তোমার জন্য লেখা
ইমেল নাঈম

তোমায় নিয়ে লেখা কবিতাগুলোর কোনো উপমা নেই
সাদামাটা, অথচ আমার চোখকে মনোযোগী করে রাখে
সমগ্র শরীরজুড়ে বিচরিত অজানা একটা জাদুর খেলা
আমার বুকের প্রেম পাখিকে আবিষ্ট করে পুরো সময়,
আমিও উড়তে শেখা চড়ুই বারবার বসতে চাই বুকে
আর ক্রমশ ডুবেতে থাকি গহীন অরণ্যের সমারোহে।

চুপ করে সময়কে আলিঙ্গন করতে থাকি, সব মনকাড়া
দৃশ্যপট একে একে অচেনা হয়ে যায়, তুমি সুন্দর থেকে
আরো রূপবতী হও, কাছ থেকে ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দেখি।
তুমি আড়াল ভালবাসো গঙ্গাফড়িং-এর মতো, পালিয়ে
যাও আমাকে শুরুতে রেখে, আমি আগাতে গিয়ে থামি।

গল্পের মতো শিহরণ, না না সবটা বলি নি এভাবে খুলে
কিছু গল্প অজানা থাকুক রোমাঞ্চকর অনভিজ্ঞতায়
সিরিয়াল কিলারের মতো ঠাণ্ডামাথায় আঘাত করছো
ব্যথার তীব্রতা বুঝতে পেরেও চুপ করে বসে থাকি
তোমার শরীরের ঘ্রাণ নিতে পারা প্রজাপতিকেও ঈর্ষা...

তুমি সকালে আসো আবার মিলিয়ে যাও খানিক বাদে
আমি তীর্থেরকাক, শুধু নীরবে আসা যাওয়া দেখি।

Monday 10 October 2016

আত্মবিচারক

আত্মবিচারক
ইমেল নাঈম

সবুজ প্রান্তরে কাটাই এক মুসাফির জীবন
আলোর সন্ধ্যানে জড়াতে গিয়ে ডুবে যাই তোমাতে
জীবনের মানে জানেনা, বয়ে যাওয়া পাখির দল
সন্ধ্যা নামলেই ফিরে আসে তার আপন ঠিকানায়
মাঝের এই চলাচলের শেষটুকু জানা হয়নি আজও,
কার উদ্দেশ্যে ছুটছে অন্তহীন পথের শিরোনামে...

রাত বাড়লে দেখি আকাশ, সারিবদ্ধ নক্ষত্র'র আলো।
বিকিরণ বোঝার চেষ্টা করি। মেঘ আর আকাশের
সবটা সৌন্দর্য মেখে নিই চোখের মণিতে, প্রশ্ন নেই।
উত্তর খুঁজিনি কখনো, মেনে নিয়েছি অদৃশ্য শক্তিকে,
নিজের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেছি দূরে,

হরদম আনন্দে মেখে দিই এক বিন্দুকণা শিশির,
পা'র পাতা ভিজে জলকণায়, আমি নিঃস্ব হই আরো
আয়নার সামনে যা কিছু দৃশ্যমান তার পুরো মেকী
সত্য বেরিয়ে আসে না বলেই, তাকাই অসুন্দরে...

নিজেকে আটকই নি স্বেচ্ছায়, হিসেব রাখিনি বিধানে
অন্যের ক্ষমতায় নিজেকে করেছি রাজা, কল্পনায়
সাজিয়েছি রাজ্যভাণ্ডার, অনুতাপ নেই, নিজেকে
সমর্পণ করতে শিখিনি, যেন ভিখারি সেজেছে রাজা।

আজ আর আয়না দেখিনা, ভুল শুদ্ধ'র বিচারক নই!
তবুও নিজেকে মাপতে বসে তলিয়ে যাচ্ছি অতলে
ঢুকে পড়েছি গহীন অরণ্যের ক্ষুধার্ত অজগরের পেটে।

নতজানু হতে ছুঁড়ে ফেলতে হয় আলগা উপকরণ
আমি খুঁজছি তার আদিমুখ, খুঁজে ফিরছি নিজেকে...

Sunday 9 October 2016

শূন্যতা

শূন্যতা
ইমেল নাঈম

যে আলোর দিকে তাকিয়ে জন্মেছে এতো অহংকার
সামনের যা কিছু সেই আলোতে অতটা আলোকিত
সেই উৎস খুঁজতে একবার দ্যাখো পিছনের দিকে
আলোর শেষ সীমা দেখো, খুঁজতে থাকো কেন্দ্রকে...

তাকিয়ে দেখো শূন্যতার দিকে আগাচ্ছো, দেহ মুহূর্তে
পরিণত হচ্ছে বালুকণায়। বিশালতার মাঝে ক্ষুদ্রতা
অনুভব করো, ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছো দূর দূরান্তে
এভাবেই একদিন মিশে যেতে হবে শূন্যতার জগতে
তোমার বলে কিছু থাকবে না, এই শূন্যতাই বাস্তব

এখানে প্রেম আবিষ্কার করতে গিয়ে বুঝতে চাইবে
উৎসের সকল সংজ্ঞা। ভুল পথে হয়তো ডুবে যাবে,
সাদা ডানার জিবরীলকে দেখে চিনতে পারবে না
ক্রমশ তুমি ডুবে যাবে শূন্যতা থেকে অন্ধকারে...

উৎসের কাছে এসে বিভ্রান্ত হয়ে ফিরবে, রাতের
মেহজাবিন তোমাকে নতুন করে বিভ্রান্ত করবে না
তুমি পথ খুঁজতে খুঁজতে অনুভব করবে অন্যকিছু
সত্তার সামনে দাঁড়াবে, দেখবে না কোনো অবয়ব।

অনুভবে শুধু কথা হবে, বুঝতে পারবে জীবন মানে
শূন্যতার পথে অন্তর্নিহিত যাত্রা, প্রেমিকের সাধনা।

(নোটঃ মেহজাবিন আরবি শব্দ, মানে চাঁদের মতো সুন্দর)

Saturday 8 October 2016

অলক্ষ্যের ব্যাপ্তিকাল

অলক্ষ্যের ব্যাপ্তিকাল
— ইমেল নাঈম

অলক্ষ্যেই থেকে যায়, বয়ে যায় মৃত্যুর মিছিল
সাদা পায়রা এতোটাই অর্থহীন হয়নি আগে
ঝড়ের পূর্বাভাস দিচ্ছিলেন যে সুন্দরী রমণী
তাকে ভালবাসি বলতে গিয়েও ফিরে আসি
শুনেছি ওনার বুকের বাঁপাশে অনেক দুঃখ...

পাতাঝড়া উৎসবে রয়ে গেছে চিহ্ন কয়েক
এর বাইরে অস্পৃশ্য যা, তাদের গ্যাস বেলুনে
উড়িয়ে দাও। কোনো প্রমাণ রেখো না ব্যথার।
সাংকেতিক আয়োজন মুছে যাক, অবহেলা
থামতেই থমকে উঠি — পথ ভুলে, ভুল পথে।

অনেক সময় দাঁড়াতে ভুলে যাই, চোখ উপরে
তুলে তাকাতে পারি না। কষ্টের প্রাচীরে প্রলেপ
লাগাই, নিপুণ চুনকামে তরতাজা হয়ে ওঠে
কেউ দেখেনি কতটা লেগেছে অন্দরমহলে
স্তুতির বিউগল বাজে রুটিনমাফিক। শুনছিও...

আমি শুধু পরাজয় দেখি — বুঝতে পারছি না
কতটা সময়ের ব্যবধান, কতটুকু ব্যাপ্তিকাল...

Monday 3 October 2016

উপেক্ষিত

উপেক্ষিত
ইমেল নাঈম

বিশাল প্রশ্নবোধক, পাওয়া আর না পাওয়ার খাতায়
বিশালাকৃতির শূন্য এঁকে পালিয়ে যায় শব্দ শৈলীরা
ধুলোঝড়ের আগাম বিপদ সংকেতে ব্যস্ত নিজেকে
সামলে নেয়ার অভিপ্রায়ে জাগে লুণ্ঠিত হবার মানস!

আমাতে জেগে থাকে, শতাব্দীর নিশাকালীন অভিমান
অভিপ্রায়ের প্রতিটি শব্দ বুনটে খুলে পড়া রিক্ততা...
ভোর জাগানিয়া গান, প্রতারক সুখ, ডাকাতিয়া বাঁশি
অজস্র ঋণের ভারে নুয়ে পড়া বৃক্ষের দল চোখ
তুলে তাকিয়ে দেখো আকাশ, দেখো মেঘের বাড়াবাড়ি
প্রজাপতির উড়াউড়ির নামে অচেনা নৃত্য দেখো।

জীবনের রঙ খুঁজতে চলে যাও অনেক দূরে
আনন্দ খোঁজ, উৎসবের রঙ দেখে মোহিত হও,
দুঃখকে এড়িয়ে গড়ে তোলো জীবনের নতুন গান
পিয়ানোর শব্দ সুরের ঝংকার দেখে বাঁচতে শেখো

ভুলেও একবার এদিকে তাকিয়ে না, দেখবে
জীবনের ঠিক পাশেই মৃত্যু, আনন্দের পাশেই দুঃখ
দুঃখের সমান্তরাল কোন স্মারকচিহ্নে আমার নাম।

Sunday 2 October 2016

দৃষ্টিসীমা

দৃষ্টিসীমা
ইমেল নাঈম

সময়টা এখন দুর্বোধ্য, চাইলেও নিস্তার নেই
অতীতকে মনে করতেই হারাচ্ছে বর্তমান
স্মৃতিকথায় জমে থাকা কনকনে বাতাস
থামতে না থামতেই গল্প শোনায় অবেলার।

পূবের হাওয়ারা ক্রমশ মিলিয়ে যায় পশ্চিমে
শীতকালের কুয়াশা কাটতে পেরিয়ে যায়
ঘোরলাগা একেকটা সকাল, উষ্ণতা খুঁজতে
আসা পাখিদের সাথে খেতে বসি মোয়া মুড়কি

জীবনের গল্পপাঠে অনেক অধ্যায় অপঠিত
ছোটার গতি শিখেছি। এখন প্রশ্ন করোনা।
সবকিছুর ব্যাখ্যা প্রশ্নের বিনিময়ে হয়না
কিছুটা অনুমান থাকে জলাধারের মতো
মাছরাঙার মতো শিকার খুঁজে বসে থাকতে
পারো ওখানে, উদ্দেশ্যহীন বিশালতা দেখতে।

আলবাট্রস গভীরতা চেনে, নিজেকে দাবার
ঘুটি ভেবে কতটা শীতকাল পার করে দিবো
তুমি গভীরে ডুবতে ডুবতে একটু একটু করে
তলিয়ে যাচ্ছো দৃষ্টিসীমা থেকে অনেক দূরে।