Wednesday 13 April 2016

চিঠি

প্রিয়তা

তোমার ঠিকানা জানি, শুধু অধিকার নেই বলেই আকাশের ঠিকানায় চিঠি দিলাম। রুদ্রের মতো তোমার কোনো আকুতি ছিলো না। আকাশের ঠিকানায় চিঠি দেয়ার। তবে আমি ভালো থাকি সে তুমি বিচ্ছেদের দিনেও শুনিয়েছিলে। সেই থেকে আমি ভালো আছি। ভালো থাকতেই হয়। এই সমাজে খারাপ আছি বলাটা যে পাপ তাও আবার প্রেমের জন্য। আসলে কিছু ব্যথা বুকে পুষে বড় করেছি। আর সেগুলো এখন বিশালাকৃতির ফলন দিচ্ছে।

রুদ্রের কবিতার মতোই এক মুঠ অন্ধকার নিয়ে বসে আছি। অন্ধকারই তো। প্রেমহীন বেঁচে থাকাটাও অন্ধকার নিয়ে বাঁচা। শূন্যতা নিয়ে পেরিয়ে যাওয়া একেকটি মাইলফলক। আমাদের স্বপ্ন দেখাটা অমূলক ছিলো না। কেউ কাউকে ছেড়ে যাবো তেমন ভাবি নি। বিচ্ছেদের মন্ত্র পড়ি নি কেউই। তবুও ছুটে চলার নিরিখে ছুটে চলি। মাঝেমাঝে ভাবি আমাদের দেখা হয়েছিলো ভুল সময়ে। নইলে এতোটা কাছে এসে কিভাবে হারিয়ে গেলে অবেলায়।

অংকে আমি খুবই কাঁচা। কাঁচা বলেই সহজেই তৃপ্ত হয়ে যেতাম। আমার এই অল্পতুষ্টি সত্যি আমাকে অবাক করে। তোমার অনেক কিছুই আমি বুঝতে পারি না এখন আর তখন আমি এই জিনিসগুলো বুঝতেই চাইতাম না।
ব্রেইলে লিখা অনেক প্রেম আমি পড়তে পারি নি
আঙ্গুলের ইশারা অজানা বলে তোমায় চিনি নি।
তোমাকে চিনি নি। যে দিন এসেছিলে আমার জীবনে সেদিন আর যেদিন চলে গেলে সেদিনও আমি তোমাকে চিনতে পারি নি। মাঝে কয়েকদিন কেটে গেলো তোমাকে আবিষ্কারের অজানা মোহে। আগেই বলেছিলাম অংকে আমি কাঁচা আর তোমার শরীর জুড়ে যেই কলা আর অনুর্বর মস্তিষ্ক কিছুতেই আবিষ্কার করতে পারে নি।

প্রিয়তা তুমি আকাশ হও নি। আসলে আকাশ তোমার জন্য নয়। জীবনের টানে তুমি এখন আমার থেকে অনেক দূরে। অন্য কোনো মহাদেশে সুখের সংসার পেতেছো। আমার হাত ছেড়ে যার হাত ধরেছিলে তাকে তুমি কি দিয়ে বোঝালে। মানে সেও তো পায় নি তোমাকে তার মতো করে। নাকি সেও আমার মতো করে বলেছিলো সুখী হোক তোমার আগামী।

বরফ শীতল দেশে তোমার পহেলা বৈশাখ কেমন কাটে। তুমিহীন বৈশাখ আমার ভালোই কাটে। প্রথম বার কেমন জানি অসহায় লেগেছিলো। মনে হচ্ছিলো গতবার তুমি ছিলে। সন্ধ্যে নামলে রয়েলহাটে খেতে বসে বিশাল জনারণ্যে একা হতে আমরা ছাড়া আর কেইবা পারতো। এখন অবশ্য সমস্যা হয় না। মানিয়ে নিয়েছি। বিশ্ব ভালবাসা দিবস নিয়ে এখন আর কোনো উচ্ছ্বাস নেই। অন্য পাঁচ দশটা দিনের মতোই একটা দিন। অথচ এই দিনটা আমাদের জন্য কতো আনন্দের, কত প্ল্যানিং, কত হিসাব নিকাশের বিষয় ছিলো।

আমাদের নদী খুব ভালো লাগতো। আমার এখনো লাগে। আমাদের সম্পর্কের শুরু কিন্তু কর্ণফুলীর বুকে। সাম্পানে চড়তে চড়তে কখন যে ছুঁয়েছিলাম হাত কেউ জানে না। আমরা কেউ কখনো কাউকে বলি নি ভালবাসি। অথচ প্রেম, সে তো হয়ে যায়। আমার এখন মন খারাপ হলে কর্ণফুলীতে রেখে আসি সব দুঃখ। তোমার নদীটি এখন শুধুই আমার। আমার দুঃখ কষ্ট সবকিছুর একমাত্র ভাগীদার সে। তোমার যান্ত্রিক শহরে কি কোনো নদী আছে? নাকি সবকিছু ভুলে গিয়েছো ক্যারিয়ার নামক মিথ্যে মোহে।

প্রিয়তা, জানো এইবার চিঠি উৎসব হচ্ছে। সবাই সবার প্রিয় মানুষকে চিঠি দিচ্ছে। এরপর উড়িয়ে দিচ্ছে বেলুনে ভরে। আমিও তোমায় নিয়ে লেখা চিঠিটা উড়িয়ে দিবো। তোমার ঠিকানা আকাশ জানে। সেই হয়তো পৌছে দিবে তোমার ঘরে। তুমি জানবে না আমার চিঠির কথা। আবার আকাশ নিজেই রেখে দিতে পারে এই চিঠি। তারও তো আমার মতোই দুঃখ। বরং তোমার কোনো দুঃখ নেই। তুমি বুঝতে পারবে না কতটা পাহাড় ধ্বসে একটা প্রেমের চিঠি বিরহে রূপান্তর হয়। তুমি সুখে থাকো। এরপরো বলি সুখে থাকো।  সুখী হোক তোমার জীবন সংসার।

ইতি,
তোমার রোদ্দুর
১৩ এপ্রিল, ২০১৬
চট্টগ্রাম।

No comments:

Post a Comment