Sunday 3 April 2016

আই পোয়েট

প্রিয়তা,

অনেক দিন পরে ডাক যোগে তোমার সান্নিধ্য এলো। কতদিন দেখা হয় না আমাদের। তোমাকে আমি অনুভব করি প্রতিদিনের মতো। আমাদের পরিচিত সব রাস্তাঘাট, মুঠো ফোনের ব্যস্ত সময়টুকু এখনো অবিনশ্বর, চোখের সামনে ভাসছে। পরিণতি সবসময় মনের মতো হয় না। বাস্তবতার সাথে অসম এক যুদ্ধে নিজেকে পরাজিত বীর মনে হয়। আর পরাজিত বলেই এই সফর আমার। মরুর দেশে। মধ্যপ্রাচ্যে। এই শহরটা প্রেম করতে জানে না। জানে না বলেই শুষ্ক বালুতে আটকে গেছে তাদের পথ ঘাট।

প্রিয়তা, কেমন আছো? প্রশ্ন টা অনেক পরেই করছি তোমাকে। মাঝের এই দূরত্বটুকু দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে অপরিসীম যন্ত্রণা। যন্ত্রণাকে আড়াল করে থাকি তোমার হাসিমুখ কল্পনায় এঁকে। সকাল ৬ টা থেকেই এখানের জীবন শুরু হয়। এরপর মরুভূমির মাঠ, তীব্র গরম, লূ হাওয়ার মাঝে একফোঁটা শান্তির জন্য খেজুর গাছের নিচে অলস পার করে যাই, পকেটের মানি ব্যাগে কোনো টাকা নেই, শুধু তোমার ছবি আছে বলেই আমি অনেক ধনী, একদম আরব শেখের মতো। জানি ও'প্রান্তে তুমিও এতোটা অস্থির পায়চারী করে সময় পার করো। আমাদের মুঠোফোনে থাকা অনেক বার্তা তোমাকে শান্তি দেয়। ভাবছি এই শীতে দেশে ফিরে আসবো। হয়তো আর কখনোই ফিরে আসবো না প্রাণহীন এই শহরে।

ভাবছো বাস্তবতার কথা। চিঠি পড়ে হাসবে, আর বলবে আবেগ জিনিসটা খুব খারাপ যা মানুষকে অন্ধ করে দিতে পারে। হয়তো চোখের কোণে জল ঠেকিয়ে বলবে আসা লাগবে না। তোমাকে একটা গল্প বলেছিলাম। ফ্রিজিয়ান শহরের দুই বুড়োবুড়ির গল্প। অভাব ছুঁয়ে ছিলো তাদের। মাথার উপরে ছাঁদ ছিলো না। ছাদ বলতে ছিলো নলখাগড়ায় ছাওনি। সেখানেই সেই বুড়ো দম্পতি বসবাস করেন। সেখানেই তারা বছরের পর বছর পার করে দিলো অভাব নিয়ে শুধু মাত্র প্রেম আর ভালবাসাকে সাথী করে। তুমি হয়তো বলবে পৌরাণিক কাহিনী, জীবন তো পুরাণ মেনে চলে না। প্রেম জিনিসটা জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম পর্যায়। তোমার আমার এই আবেগটুকু, তাকে কী করে ব্যাখ্যা করবে! সে তো নির্বাক অনেক আগেই। 

প্রিয়তা, দৈব জিনিসে একদম বিশ্বাস নেই আমার। আমি বিশ্বাস করি না, আমাদের প্রেমের কারণে এই শহরে সবচেয়ে সুন্দর কোনো প্রাসাদতুল্য বাড়ির মালিক হয়ে যাবো। এটা কিন্তু সত্য মৃত্যুর অনেক পরেও আমরা একে অপরকে ভালবেসে যাবো। কিন্তু আমাদের এই ভালবাসার স্মরণে কোনো গল্প কাহিনী রচিত হবে না ওভাবে। দরিদ্র পথিকের বেশে ঈশ্বরও নেমে আসবেন না মাটিতে। এসব কারণে হয়তো তুমি বলবে ওখানেই থেকে যেতে। দুবেলা ভাত আর একটু ভালো থাকার জন্য তুমিও বিসর্জন দিয়ে দিচ্ছো নিজের সবটা আনন্দ। 

আরো কিছু কথা জমে আছে এখানে বুকের ঠিক মাঝখানে। কবিতা কেমন আছে – এই শব্দটা জিজ্ঞেস করে আর বিব্রত করো না। লিখছি না, বলতে পারো আসছে না। এই প্রাণহীন শহর কোনো কবিতা পেতে পারে না। আর তুমিহীন স্বর্গ যেন নরক। সব কিছু থেকেও কি যেন নেই, শান্তির বুকে পুঁতে দেয়া অশান্তির বীজ। যেখানে টাকার পিছনে দৌড়চ্ছে দোপেয়ে যন্ত্র মানব। আর দৌড়তে দৌড়তে কখন যে হারিয়ে ফেলছে নিজের সত্ত্বা তাও জানে না। 

প্রিয়তা, আসলে অনেক কথাই বলার থাকে। লিখতে বসলেই সব কিছু গুলিয়ে ফেলি। আর সেই কারণেই অনেক কথাই তোমাকে জানানো হয় না। লিখা শেষ করার পর মনে হয় একথা সেকথা এখনো লিখা হয় নি। কতবার অর্ধেক লিখে কেটে দিয়েছি আর কতবার লিখা শেষ হবার পরে মনে হলো ওই কথা এখনো লিখা হয় নি। এই যে শেষ পর্যায়ে এসে মনে হলো তোমাকে দেয়া গত জন্মদিনে আমার দেয়া উপহারের কথা…কেমন আছে সেটি। খুব বড় হয়ে গেছে বুঝি। শোনো সামনের বার দেশে এলে কর্ণফুলী তে সাম্পান ভাসাবো। আর বেসুরো গলায় শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণবের প্রেমের গান গাইবো। তুমি অপেক্ষায় থেকো বন্ধু, শীত আসতে আর বেশি দিন বাকি নেই। ৩ থেকে ৪ মাসের মতো বাকি। 

আজ আর নয়। ভালো থেকো। দূরে বলেই কিন্তু তুমি দূরে নও। বুকের ঠিক এইখানটায় তুমি এখনো সদা হাস্যোজ্জ্বল ভাবে প্রাণিত করে চলেছো।

ইতি,

রোদ্দুর

জেদ্দা, সৌদি আরব
০৩ এপ্রিল ২০১৬।

No comments:

Post a Comment