Friday 24 November 2017

অনিন্দ্য'র চিঠি -১

অনিন্দ্য'র চিঠি - ১
ইমেল নাঈম

প্রথম চিঠি লিখছি। জানিনা ওয়েভ যুগে, ওয়াইফাইয়ের সব ফাঁক গলে এই চিঠি আদৌ পৌছবে কিনা তোমার ঠিকানায়। ঠিকানাটাও পেয়েছিলাম হুট করেই। কাকে যেনো ঠিকানা পাঠাতে গিয়ে ভুল করেই আমার ইনবক্সে পাঠিয়ে দিলে। অতঃপর নীরবতা দেখে বুঝতে পারলে ভুল জায়গায় ফেলেছো নোঙ্গর। অথচ আমি তখন লিখতে বসে গেলাম এই চিঠি। বলতে পারো জুয়া খেলছি আনাড়ি খেলোয়াড় হয়ে। তোমার শহরে কোন সময় মানে ঋতু কোনটা জানিনা। আমার এখানে হেমন্ত। সকালের মিষ্টি ঠাণ্ডা, জানালার ফাঁক গলে এক চিলতে আকাশ চলে আসে উড়ে উড়ে। ঘড়ির কাটায় ঘুমোচ্ছে ব্যস্ত চঞ্চল মানুষগুলো। খানিকবাদেই সব ক্লান্তি ঝেড়েঝুড়ে ছুটতে শুরু করবে আপন মহিমায়।

দিনের শুরুর এই সকালটা সত্যি মধুময়। আকশজুড়ে পাখির কলতান। ভাড়াবাড়ির ছাদ উন্মুক্ত নয় আমাদের মতো ভাড়াটের জন্য। জানালায় তাকিয়ে পাখির গান শুনি। মোজার্ট নামে বুকের ভিতরে। সুরের ব্যঞ্জনায় ভাসতে থাকি অনাবিল সময়ের নায়ে চড়ে। বদলে গেছে আমার শহর সবুজ মাঠ নেই হতে হতে বিলীন উঁচু দালানের ভিড়ে। কর্ণফুলীতে সাম্পানের শরীরে চাপিয়ে দিয়েছে কে যেনো ইঞ্জিন। আধুনিকতার নামে লৌকিক হয়ে উঠছি। এই শহর ভালবাসতে ভুলে গেছে।

তোমার আকাশ মানেই তো প্রাচুর্য। জ্যাকসন হাইটের সুবিশাল রাস্তার পরিপাটী ভাজ দেখে হয়তো তোমার চোখ জুড়ে যায়। শীতের সকাল আসতে কতো দেরি? নাকি এসেও চলে গেছে সে। আকাশ দেখা হয়? নাকি প্রবাস জীবনের আয়োজনে বুঝি আকাশের রঙ যে প্রেম আর বিরহের সংমিশ্রণ তাও খেয়াল করোনি।

কবিতা লিখছোনা অনেক দিন। মুখবইতে নানা ছবির ভিড়ে ক্লান্ত লাগছে আমার। কবিতা, শুধু কবিতাই পারে এই ক্লান্তির কাছ থেকে পরিত্রাণ দিতে। ছবিঘরের বাইরেও জীবন আছে? সেই জীবনটাকে কখনো আবিষ্কার করতে পারিনি। মুখবইতে একটাই সুবিধা কী সুন্দর নিজের ব্যক্তিগত দুঃখ কষ্ট লুকিয়ে রেখে প্লাস্টিক হাসি হেসে বলা যায় বেশ ভালো আছি। অথচ আমার এটুকুতে পোষাবেনা। আমি চাই তার পুরোটা। সেজন্যই চিঠি লিখা। যদিও আমি নিশ্চিত নই এই চিঠি বাংলাদেশ ফেলে সেই আমেরিকায় পৌছবে কিনা আর পৌছলেও তোমার ঠিকানা সে খুঁজে পাবে কিনা। আর পাবার পর তোমার রিয়েকশন কী হবে সেই চিন্তায় ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি।

সময় পেলে তোমার শহরের গল্প শুনিও। শুনতে চাই আমেরিকার আকাশ কী আমার আকাশের মতো, নাকি অন্যরকম। চিঠির শুরুতে সম্বোধন দিলাম না। আসলে বুঝতে পারছিনা কী বলে ডাকবো তোমাকে।

ইতি,
অনিন্দ্য
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ

(বিঃদ্রঃ ইতি শব্দটায় খুব অরুচি। কারণ ইতি মানেই শেষ। আর শেষটা বলতেই ইচ্ছে করছেনা একদমই)

No comments:

Post a Comment