Saturday 22 October 2016

প্রিয়তাকে চিঠি

প্রিয়তা,

মাঝে বয়ে গেলো অনেক সময়। শরতের আকাশ ডুবে গেলো হেমন্তের বুকে। অনেক রাত পেরিয়ে গেছে নির্ভার স্বপ্নে। বাঁধা ছিলো না প্রজাপতির। ভাবি, শান্তিনিকেতনি কুয়াশা বুঝি প্রতি বিকেলে পা ভিজায় প্রিয়তার। দীর্ঘ বিরতি লিখে রাখে অনেক না বলা অভিমান। আমিও রেখেছি কিছুটা তার। বাকিগুলো ঝরে গেছে সকালের শিউলির মতো। লিখতে বসে অবিরত এটাই ভাবছি, প্রিয়তা অবসরে কী তুমি জীবনানন্দ পড়ো নাকি জীবনের আনন্দ কে পাঠ করো সারা সময় ধরে! মনে কী পড়ে বলেছিলে কবিতার বাঁধনে আঁকড়ে ওঠা রোমাঞ্চকর কোনো অধ্যায়ের নাম!

তোমার চিঠি বহুকাল পাইনি, শারীরিক অসুস্থতাও অনেকটা দূরে ঠেলে দিয়েছিলো আমায়। আমিও লিখতে পারি নি অনেক দিন। আসলে অনেক দিন বললে বাড়িয়ে বলা হয় খুব। মাত্র দুমাস। কিন্তু মনে হয় কতকাল। পুরোনো চিঠিগুলো পড়ছিলাম হসপিটালের সিটে বসে। কত স্নেহ, আবেগ আর ভালবাসা এসে জড়ো হলো চিঠিগুলোতে। জানো তো আমি স্বপ্নবিলাসী। কবিতার রঙে তোমাকে সাজাতে থাকি অনবরত। মুখবইয়ের মাঝেও অনুপস্থিত এই কয়েকদিন। প্রতিদিনই যেনো নতুন করে বাঁচার এক আনন্দ।

কোনো এক ডাকপিয়ন বলেছিলো তোমার মন খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। ছাত্ররাজনীতি। তৃতীয় বিশ্বে আদর্শিক রাজনীতি কোনোকালেই কি ছিলো? আমার মনেই পড়ছে না। এখানের রাজনীতিকদের বাদ দিয়ে যদি প্রথম বিশ্বের দিকে তাকাও, দেখো হিলারি ক্লিনটন আর ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতার লোভে কী নির্লজ্জভাবে আক্রমণ করছে একে অপরকে। এরাই আবার পৃথিবীকে সভ্যতা শেখাতে কত বড়বড় ডায়লগ ঝাড়বে ক্ষমতায় আসার পর। আর পৃথিবীও ভদ্রতার নামে মেনে নেয় তাদের সব কথা। কখনো বলে না তাদের এইসব নোংরামোর কথা। কবিতা ভালবাসি, তাই রাজনীতিও। আমারও সাম্যের গান গাইতে ওই মিছিলে হাঁটতে ইচ্ছে করে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সুউচ্চ কণ্ঠস্বর শুনে আমি ভাবি কোকিলের ডাক, সামনেই অনাগত এক বসন্ত।

সাম্প্রতিক সময়ে নোবেল নিয়ে ঝগড়া দেখলাম মুখবইয়ের কল্যাণে। আমার নিজেরও প্রিয় ছিলো হারুকি মুরাকামি। নাহ, উনি নন। পেলেন বব ডিলান। পুরোই থমকে গেলাম এই খবরটা দেখে। এরপরই শুরু হলো নোবেল প্রাইজ নিয়ে নানা ট্রল। আমি তো হতবাক। তবুও ভালো হাসপাতালের শেষ কয়েকটা দিন ভালোই কেটেছে বিতর্ক প্রতিযোগিতা দেখে। ওহ, আমাদের এখানকার প্রথম সারির একটা পত্রিকা একটা মজার কাণ্ড করেছে। নাম টা বলছি না, তবে পত্রিকাটে আমি দৈনিক সুবহে সাদিক নামেই ডাকি। ওনারা বব ডিলানের একটা গান কে বিচ্ছিরি ভাবে অনুবাদ করেছে। এইটা মানে গানটা তোমাকে হোয়াটস আপে পাঠাবো। আমার অবাক লাগে এতো উপরের মানুষ এতো খারাপ অনুবাদ কেমনে করে?

বাবা আশাকরি ভালো আছেন। আর এতোদিনে তোমার মেঠোপথের ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠেছে। গান কেমন চলছে? কতদিন শুনিনি। জানোই তো মাত্র মেডিক্যাল ফেরত, সেভাবে সময় দেয়া হয়নি তোমাকে। আর তোমার মন খারাপের পরিমাণ কমবে আশাকরি এখন থেকে। আমার পরীক্ষাও কাছিয়ে এলো। কিছুই পড়িনি। সামনে যে দুর্যোগের ঘনঘটা। অবশ্য আমি একাডেমিক পড়াশোনাকে এতোটা গুরুত্বও দিই না। তাই ওটা নিয়ে ভাবছিও না খুব একটা। পড়াশোনার দরকার মননের জন্য, মানুষ হয়ে ওঠার জন্য।

তোমার নতুন চিঠির অপেক্ষায় রোদ্দুর। প্রিয়তা জানো তো, সব কবিতার মানে হয় না। প্রতিটা ভালবাসিও কেনো জানি বাসি হয়না। প্রতিটি মুহূর্ত মুহূর্তের মতোই কথা বলে। আসলে কবিতার মোড়কে যাই লিখে যাই তার সবটাই তোমাকে ভালবাসার গল্প।

ফিরে আসা
রোদ্দুর
চট্টগ্রাম।

No comments:

Post a Comment