Friday 5 February 2016

প্রিয়তা কে লিখা চিঠি

প্রিয়তা,

তোমাকে যখন লিখছি, তখন তুমি পেরিয়ে গেছো আমার সাদাকালো উঠোন। পাবলিক বাসে চেপে চলে গেছো অনেকটা পথ। হয়তো কিছুক্ষণ পরে আন্তঃনগর বাসে চেপে ছেড়ে যাবে আমার এই শহর। ফেলে চলে যাবে অতীত নামের শব্দটিকে। আমি তো অনেক আগেই গত। এই চিঠি যখন লিখছি তখন কেনো জানি অতীতের সবটুকু স্মৃতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। কিভাবে শুরু হয়েছিলো। বিকাশকাল কিসের চিহ্ন রেখে গেছে তা নিয়েই চোখদুটো বড্ড এনাটমির ক্লাশ নিচ্ছে।

শরীরের ঘ্রাণটুকু বাদই দিলাম। ভরদুপুরে হেঁটে যাওয়া সারসন রোড হয়ে চট্টেশ্বরী পাড়ি দেয়ার সময় দুই আঙুলের মৌন দুষ্টুমি তাকে চাইলেই এভয়েড করা যায় না। ওয়ার সেমেট্রির পড়ন্ত বিকালে আমরা শালিক দেখতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত চুমুটাকে বড্ড মনে পড়ছে। সকাল নয়টার ব্যাচ, ক্যামিস্ট্রির কোচিং.... নোট আদান প্রদান, আড়চোখ... হাসি বিনিময়....

তোমার লিপস্টিকের খুব শখ ছিলো। আমার ওটাতেই এলার্জি। যদিও তুমি বলতে ওটার বেশির ভাগ আমার পেটেই চলে যেতো। আর তোমার ঠোঁট জুড়ে জমতো শেষভাগটুকু। ওহ। আমাদের দুটো প্রিয় জায়গার মধ্যে একটি ছিলো সাম্পানে কর্ণফুলী পাড়ি দেয়া, আর ছিলো ফয়সলেক। ইঞ্জিনের যুগে বেশিরভাগ সময় যন্ত্র চালিত সাম্পান কর্ণফুলী পাড়ি দিতাম আমরা। আমরা দেখতাম ছোট্ট কিশোর কিভাবে নৌকা বেয়ে চলে যায় মাছের খোঁজে।

আমার সিগারেট টা তুমি একদমই পছন্দ করতে না। আমার গা ঘেঁষতে বসতে পারো না ওটার জন্য। আমি বুঝতাম গায়ের সাথে লেপটে যাওয়াই নয়, আরো অন্যকিছু চাইতে আমার কাছে। আমিও প্রশ্রয় দিবার ছলে মাঝেমাঝে আঙুল থেকে ছুঁড়ে দিতাম সিগার। তুমি চাইলেই আমি এক নিমিষেই ছুঁতে পারতাম তোমার চিম্বুক পাহাড়। তুমিও বুকের অরণ্যে হাঁটতে থাকতে। আমরা উপভোগ করতাম কর্ণফুলীনদীর শান্ত ঢেউ।

বৃষ্টিবিলাস আমাদের খুব প্রিয়। কলেজের সময়টা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাতে হাত ছুঁয়ে....তোমার তো মনে নেই রাশেদের কথা। আমাদের দুইজনের মাঝে ডাকপিয়নের নাম ভূমিকার সেই ছেলেটি। বড়োলোকের ছেলে, টাকা পয়সায় পকেট সবসময় ভর্তি। ওর ফ্ল্যাটে আমাদের দুজনের কিছু স্মৃতি আছে। এমন  অনেক ছোটো ছোট স্মৃতি এখন তোমার মনেই পড়ে না।

এই যে তোমাকে যখন লিখছি, আমার চশমার  লেন্স ভিজে যাচ্ছে আর্দ্রতায়। এতো জল এই চোখ কিভাবে ধারণ করে তাও একটা রহস্য। ওহ, সামনের ১৭ তারিখ মানে ভ্যালেন্টাইনের ৩ দিন পরে, তোমার জন্মদিন। সেদিন তোমাকে উপহার দিবো বলে একজোড়া নূপুর কিনেছিলাম। পুরো চিঠি লিখতে লিখতে হয়তো তুমি আমার শহর ছেড়ে চলে যাবে। অনেক স্মৃতি তো ধারণ করেই আছি, নূপুরটা কী এমন কষ্ট দিবে আমাকে!

ইতি,
রোদ্দুর

তারিখঃ ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

No comments:

Post a Comment