Wednesday 10 February 2016

রোদ্দুরের চিঠি ৩

প্রিয়তা,

বাংলা ঋতুতে কোনোকালেই আমার আগ্রহ নেই। তবুও স্পষ্ট মনে পড়ে সেদিন ছিলো শরত। দামাল ঘুড়িগুলো রাঙাচ্ছিলো আকাশ। এতোসব ঘুড়ির বাঁকে কিশোর আকাশকেও বড্ড প্রাপ্তবয়স্ক মনে হয়। পার্কের ঘাসে ছড়িয়ে পড়া শিউলি। কাশফুল নেই আমার শহরে। ব্যাটারি চালিত একটা রিকশা এসে নামলো। তুমি রিকশা থেকে নামতেই অপলক আমার চোখ। আমার প্রেমিকা সিলভিয়া প্লাথের মতো আলতো ছোঁয়ায় মাড়িয়ে দিচ্ছো অদৃশ্যমান শিউলিফুল। আমি বাঁধা দিতে গিয়েও পারি নি।

হঠাৎ একটি গাছের পাতা এসে আমার ডান কাঁধে পড়লো। বাম কাঁধে জড়ো হলো দুটো প্রজাপতি। আমি তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে চুপটি করে বসে থাকি। আর দেখতে থাকি, কেউ একজন পেরিয়ে যাচ্ছে আমার উঠোন। তখনও আমি তোমার নাম জানি না, ভেবেছিলাম স্বর্গের কোনো অপ্সরী বুঝি এমনই হয়। ফার্স্ট সাইট অব এট্রেকশন কি জিনিষ বুঝি নি, বুঝি নি বলেই বুকের ফুসফুসের দ্রুত লয়ের শ্বাসপ্রশ্বাসটুকুও বুঝতে পারি নি।

প্রিয়তা পাহাড়ের বুকে আরো অনেক পাহাড়ের জন্ম হয় তা তুমি জানো নি। আমিও কিশোর পার করা সদ্য যুবক। আমিও বুঝি নি কিছু পাহাড়ের ডাকনাম প্রেম। সেখানে ঝর্ণাধারাগুলো আবেগের প্রতিবিম্ব। এতো কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে দৃষ্টির আড়াল হয়ে যাচ্ছো একটুকু টেরও পাই নি। তোমাকে বলা হয় নি, প্রিয়তা, প্রেমে পড়লে প্রতিটি পুরুষ এন সেক্সটেনের মতো দুঃখবিলাসী হয়। তারা প্রতিনিয়ত কনফেস করে যায় আর চলার পথে ছড়িয়ে রাখে অজস্র গোলাপের রক্তিম পাপড়ি। ভয় পেয়ো না, আজ চট্টগ্রাম শহরে কোনো বৃষ্টি নেই। যদিও কুয়াশা ভিজিয়ে দিয়ে যেতে পারে তোমার বাঁ পায়ের নূপুর।

আমিও উঠে দাঁড়াই পার্কের বেঞ্চ থেকে। তোমার পিছুপিছু বোকার মতো হাঁটতে থাকি। ফুটপাথে দুটো বিড়াল ছানা দেখে থমকে দাঁড়াই। নাহ, হাত বাড়ানো মাত্রই তারা দৌড়ে পালায়। আজ সব কিছুই ভালো লাগে। বিড়ালের দৌড়ানো, রাস্তার পাশে কুকুরের অলস সময় পার। আজ দ্রোহের কবিতাগুলো কে প্রেমে রূপান্তর করতে সাধ জাগে। পড়ন্ত বিকালের গোধূলি টাকে মনে জুয়েল আইচের মায়াবী জাদু।

ও'দিকে তুমি ক্রমাগত খুঁজে যাচ্ছো রিকশা। কেউ যেতে চাইছে না, আবার কারো সাথে তোমার ভাড়ায় মিলছে না। উভয় সংকট কাকে বলে সেদিনই প্রথম বুঝি। খারাপ লাগছিল এমন দাঁড়িয়ে থাকা। আবার রিকশা পেলে চলেই যাবে, আমিও হারিয়ে ফেলবো তোমাকে। একটু পরেই রিকশা চেপে উঠলে তুমি। আমি বাঁধা দিতে গিয়েও পারি নি কিছু বলতে।

থেমে যাও ঘড়ি, সূর্য তুমি ম্লান হয়ো না
এখন তো চলে যাবার সময় নয়, 
আরো থেকে যাও অনেক বাকি প্রহর।
এই লাইনগুলো মনে মনে আওড়াতে থাকি, তোমার রিকশা পেরিয়ে যায় রাস্তার মোড়। সব ভালোলাগার ঘোর কাটতে থাকে। চারপাশের দৃশ্যগুলো একটু একটু করে ম্লান হতে থাকে। সবুজ ঘাস পরিণত হয় হলুদে। ঝর্ণাধারা থেকে জলের প্রপাত বাড়ে। আবার কি কখনো দেখা হবে না আমাদের। নাকি এই অদেখায় পার করে দিবো দুই জীবন।

ইতি,
রোদ্দুর

১০.০২.১৬

No comments:

Post a Comment