প্রিয়তা,
তুমি এখন অনেক দূরে। এখানে চৈত্র
মাসে তুমুল বৃষ্টি। পথের সীমারেখা টানতে টানতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম আমরা দুজনেই।
বৃষ্টি আমার খুব প্রিয়। বৃষ্টির শেষে পড়ন্ত বিকেলে নরম ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটতে
তুমি খুব পছন্দ করতে, কারণ পা ভেজানো এই আর্দ্রতা তোমার খুব প্রিয়। এই মুহূর্তে তুমুল বৃষ্টি
পড়ছে না। চৈত্রের দিনে বৃষ্টি কাম্য নয়। তবুও তো আসে, ভিজছে
বাহিরে এবং ভিতরে।
অফিসের জানালা দিয়ে চোখ মেললে
ব্যস্ত সড়কের দিকে চোখ যায়। সাধারণত কর্মব্যস্ত মানুষের ঢল কমেনা এইখানে। আমিও
নয়টা ― সাতটার নিয়ম মেনে
দৈনন্দিন কাজ কারবারে পার করে দিচ্ছি ব্যস্ত ঘড়ির কাঁটার। অবকাশ নেই, অথচ এই বৃষ্টিতে কাজে মন টেকেনা। কবিতাপ্রেমীদের জন্য এই বিকেলের গল্পটা
অন্যরকম হয়। তারা রবীন্দ্র সঙ্গীতে মন ডুবিয়ে ঝালমুড়ি খেতে খেতে প্রেমের কবিতা
লিখে। আর আমি সবটাই অনুমান করে লিখছি, অফিসের কাজকর্ম ফাঁকি
দিয়ে।
প্রিয়তা বৃষ্টি দিন এখন তোমার
কেমন কাটে? আগের মতো? মানে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হাঁটতে ভালবাসতে,
পরের দিন ঠাণ্ডা, সর্দি, জ্বর বাঁধিয়ে একাকার। মানা করলেই বলতে ধুর কিছুই হবেনা। কিন্তু হতো,
আর তোমার সাথে আমার দৈনন্দিন সাক্ষাতটা কমে গিয়ে নেমে যেতো তিন দিনে
একবার। তবে তোমার ঘরে যাবার অজুহাত হিসেবে এটি অবশ্য মন্দ ছিলোনা। একদিন আমি
বলেছিলাম বৃষ্টির সাথে ঠাণ্ডা, সর্দি, জ্বরের
কোনো সম্পর্ক নেই। শুনেই তুমি খুশিতে টুপ করে গালে এঁকে দিয়েছিলে ভালবাসার পরশ।
পরক্ষণেই লজ্জা পেয়েছিলে। আর আমি গোবেচারার মতো দরজার দিকে তাকাচ্ছিলাম। কেউ
দেখেনি তো!
এই স্মৃতি আমার চোখে জ্বলজ্বল
করতো। আমি অনুভব করতাম। তুমি জানো, এটিই প্রথম চুমুর স্বাদ নয় কিন্তু এটিতে
লুকিয়ে ছিলো অন্যরকম একটা স্পন্দন। সেইথেকে এখনো নীরবে বাজছে আমার শরীরজুড়ে একটা
শিহরণ। এখনো সেই স্মৃতি খুব চোখের সামনে দৃশ্যমান না হলেও কিন্তু খুব একটা অস্পষ্ট
নয়। চৈত্র দিনে আমিও বৃষ্টি কাতরতায় ভুগছি। অনেক কথাই বলার ছিলো, শোনারও ছিলো অনেক শব্দ। অনেক শব্দ অল্পতেই উলটে গেছে গতিপথ ভুলে। কোনো
অভিমান নেই, সুখ স্মৃতি অনেক কিছুই এঁকেছে। যদিও গল্পের শেষে
আমি ফিরে যাই একলা, আর তুমি ছুঁয়ে থাকো কারো হাত।
হাত ধরার গল্পটাও তো বসন্তের। সেই
গল্পটায় আমার নামে কোনো অধ্যায় নেই। আমার পুরোটা জুড়ে তুমি নেই। তবুও, তুমি আছো স্মৃতি
বিস্মৃতির ডামাডোলে তুমি লুকিয়ে আছো গোপন এক অধ্যায়ে। এমন অনেক ছোটছোট গল্পের
মাঝেই আমার শ্বাস প্রশ্বাস, অলিন্দের স্পন্দন। আর সেইসব গল্পের
রেশ নিয়ে আমি প্রতিবার থামি। থেমে যেতেই হয় আমাকে ঠিক আজকের মতো।
ইতি,
রোদ্দুর।
৬ চৈত্র ১৪২৩।
No comments:
Post a Comment