Saturday 12 December 2015

ইমেল নাঈম'র কবিতা ভাবনা

কবিতা ভাবনা ও গুচ্ছ কবিতা ঈমেল নাইম কবিতা বললেই আমি হেলাল হাফিজের উৎসর্গ কবিতাটাকেই মনে করি। কবি নিজেই বলেছেন কবিতা অবিকল মানুষের মতো, চোখ, মুখ, বিবেকের কথা।

কবিতা মানুষের জীবনগাঁথা, সভ্যতার শ্লোগান। কবিতা নষ্ট সময়ে জ্বলে ওঠা এক প্রদীপ, যে কিনা ভুল পথের পথিক কে পথ দেখায়। কবিতা অচেনা এক নারী, প্রথম প্রেমের স্পন্দন। কবিতা নদী, কষ্ট ভুলে থাকার একমাত্র অবলম্বন। কবিতা একটা ইঙ্গিত, একটা চিত্রপট। ভ্যানঘগের আঁকা ল্যান্ডস্কেপ। ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীর নিপুণ আঙুলে তৈরি কোন স্থাপত্য কলা। এক কথায় কবিতা কবিতাই। কবিতা বলতে কবিতাই বুঝি। অন্যকিছু বুঝে উঠি নি।

কবিতা আটকে নেই নির্দিষ্ট কোনও বলয়ে। সে বৈশ্বিক। বৃত্ত, বৈভব, ক্ষেত্রফল, ব্যঞ্জনা, উৎকর্ষতা কোনও কিছু নিয়ম মেনে চলে না, অথচ তার মাঝেই খুঁজে পাওয়া যায় এইসব মৌলিক উপাদান। শব্দের পিঠে শব্দ বসিয়ে অদ্ভুত এক ছন্দের খেলা যা প্রতি মুহূর্ত আলোড়িত করে যায় পাঠককে। কবিতা কে ঠিক মতো আঁকা যায় না, অনুভব করতে হয়। অনুভব জিনিষটাও স্রষ্টার সমান্তরালে নাও যেতে পারে। তবুও পাঠকের মস্তিষ্কের সামান্য যেই বোধটুকু নাড়িয়ে দেয় সেটাকে নিয়েই দাঁড়ায় একটি কবিতা।

কবিতা হলো কবির মৌলিক দর্শন। কবি তার বিশ্বাস কে প্রকাশ করেন নানাবিধ আকার ইঙ্গিতে। এই দর্শনে অস্তিত্বগত ঐতিহ্যের উপলব্ধি, সংবেদনশীলতা ও নির্ভরশীলতাকে পক্ষপাতহীনভাবে ফুটে উঠে। কবিতা যেহেতু বোধের চরিতার্থকে আদর্শমণ্ডিত করে, চিন্তার স্তর বিন্যাস উন্নত করে, সৃষ্টির পথে চেতনার অস্তিত্বের অবয়ব দেয়, পূর্ণাঙ্গ করে সম্মোহন শক্তির মাধ্যমে, তাই এখানে প্রতিনিয়ত সে শব্দ-ভাষা শক্তির রূপান্তর ঘটিয়ে চলছে। নিজের অস্তিত্বে, শব্দে, পরিভ্রমণ করছে সময়, কাল, যুগ-ক্ষণ।

একটা কবিতা গড়ে ওঠে কি করে? এমন প্রশ্ন প্রায়ই নাড়া দিয়ে যায়। কবিতা গড়ে ওঠে তার চারপাশ, একজন কবির বেড়ে ওঠা সমাজ ব্যবস্থা, অবক্ষয়, রাজনৈতিক অবস্থা, স্বপ্ন আশাবাদ সব কিছু মিলেই গড়ে ওঠে একটা কবিতা। কবি তার লেখাকে বারবার ভাঙেন আবার গড়েন, প্রতিটা মুহূর্তই শুদ্ধতার পথে হেঁটে যান। তার এই হেঁটে যাওয়ার পথটি অনন্তকালের, বন্ধুর পথে একাকীত্বের শ্লোগান।


প্রকাশিতঃ বুক পকেট

No comments:

Post a Comment