জীবন ছবি
— ইমেল নাঈম
ভিজতে আমার কখনোই ইচ্ছে করেনি। মনে হয়েছে ভিজতে গেলেই সুন্দরের থেকে
দূরে সরে যাবো। বৃষ্টি হলেই জানালার পাশে দাঁড়াই। বৃষ্টির ফোটার টুপটাপ নৃত্ত
দেখি। ইলেকট্রিক তারের উপর ভিজতে থাকা কাকটিকে মনে হয় এবস্ট্র্যাক্ট কোনো
পেইন্টিং। শিল্পী সদ্য চিত্রকর্ম সম্পন্ন করে ঘুমোতে গেছেন শুভ্রতা নিয়ে। এককাপ
ধোঁয়া ওড়া কফি আর সিগারেট জ্বালিয়ে উপভোগ করি নাগরিক সঙ্গীত। দামাল প্রজাপতির দল উড়ে বেড়ায় মনের আনন্দে এক পশলা ভিজবে বলে। প্রেমিক প্রেমিকার দল হুড
খোলা রিকশায় চেপে চলে যায় গলিপথ থেকে ব্যস্ত সড়কের দিকে। স্টেনলেস জানালায় ভিজে
যায় কাচ। আমি জলমগ্ন হয়ে দৃশ্যটাকে ভেবে বসি যাদুশিল্পীর ইলিউশান। পাশাপাশি থেকে
যায় মুঠো বইয়ের রকমারি কবিতার আসর।
আবার সমুদ্র প্রিয় অথচ জলে নামতে অনীহা। সৈকতে বসে দৃশ্য আঁকি। আঁকতে
থাকি নীল কীভাবে মৌন সাধনায় মত্ত হয়। স্রোত এসে চুমু খেয়ে যায় প্রেমিক প্রেমিকার
পায়। কতটা শৈল্পিক হলে তরুণ প্রাণ বুক ভেজায় নোনাজলে। ফেনিল জলরাশি, নদীর তীরে এসে
থেমে অভিবাদন জানায় টুপি খুলে, তার অদূরেই পাহাড়ি বালিকার
ছোট্ট দোকান — শামুকের মালা, চাবির ছড়া, ঘর সজ্জার টুকটাক আয়োজনে ব্যস্ততার নামতা আঁকছে আমাদের দৈনন্দিন অবসরে।
মুঠোফোন আর অত্যাধুনিক ক্যামেরায় ধরে রাখে মুহূর্ত। সূর্য ডোবার আগে নীল হয় টকটকে
লাল। আর সেটিকে দেখার জন্য উদগ্রীব চোখ।
আকাশ প্রিয় নয় একদমই। তাকে ছুঁয়ে দেখার অধিকার নেই। সেও নীলকে বুকে ধরে, একগুচ্ছ তুলো মেঘ
ওড়ায়। মেঘদের মাঝে অভিমান হলে বৃষ্টির আকারে পাঠায় আমার উঠোনে। বিকাল হলেও সেও মাখে লাল আবীর। পশ্চিমের আকাশেও একটা সিম্ফনি আছে। আমি হয়তো তা হৃদয়ঙ্গম করতে
পারিনি। আকাশ আমার প্রিয় নয়, সেও সাজে আমার জন্য। দৈনন্দিন
জীবনেও কিছু মানুষ এমন থাকে। তারা দূরে থেকেই দূরে মিলায়। তাদের প্রেম নামক শব্দে
আটকানো সম্ভব না। তাদের জন্য কেউ লিখেনি কোনো কবিতা। কোনো গল্পের বইয়ের মোড়কে কিছু
শব্দ এখনো চুপচাপ।
আমার দৃশ্য আঁকা কখনোই শেষ হয়না। রঙ তুলি নিয়ে মনের ক্যানভাসে আঁকার
নামই জীবন। এই ছবি বিফল নয়,
এর কোনো সাবস্টিটিউট আবিষ্কৃত হয়নি।
প্রকাশকালঃ ৩০ বৈশাখ ১৪২৪
No comments:
Post a Comment