Thursday 14 July 2016

ইশরাত আখন্দ, আপনাকে

ইশরাত আখন্দ, আপনাকে
ইমেল নাঈম


আপনাকে আমি দেখি নি, আপনিও আমাকে... একই দেশের দুজন নাগরিক, কেউ কাউকে চিনি না। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে হয়তো আমাদের দেখা হতো না কোনো দিন। হলেও আপনাকে জানাশোনা হতো না আজকের মতো। এখন আর আমাদের কখনো দেখা হবে না কোনোদিন। আপনার কথা প্রথম শুনি বায়বীয় জগতের মুখবইয়ের কল্যাণে। মানুষের অভিব্যক্তি দেখে নিজেকে খুব ছোটো মনে হচ্ছিলো, কেনো যে চিনলাম না আপনাকে!

আচ্ছা বলুন তো সেইদিন যখন একজন বাঙালি আপনাকে হিজাবের জন্য চাপাতি দিয়ে গলায় কোপ দিয়েছিলো, আপনার মনে কি একবারও আসে নি এও অসম্ভব! একজন বাঙালি অন্য একজনকে হত্যা করতে পারে... আপনার অপরাধ বলতে এক টুকরো কাপড়, যা আবৃত করে রাখে আপনার মাথা বা মুখ। ওরা কি আপনাকে কালেমা জিজ্ঞাস করেছিলো? তখনও আপনি স্বপ্ন দেখছিলেন, আর ভাবছিলেন এও কী সম্ভব বাংলাদেশে!

ধর্ম মাদকের সমান্তরালে দাঁড়িয়ে আছে আজ এখানে। অর্থ, অস্ত্র, সবকিছুতেই দাঁড়িয়ে গেছে এর ঠিক পিছনে। আমরা যত্ন করে বড়ো করেছি বিষবৃক্ষ, তার প্রথম প্রতিদান মনে হয় আপনি। অথচ এর জন্য আপনাকে কোনোরূপে দায়ী করা যায় না। আপনি এসবের সাতপ্যাঁচেও ছিলেন না। কিন্তু তারা ছাড়ে নি। আপনার মুণ্ডু আলাদা করে ভাসিয়ে দিয়েছিলো, প্রকাশ করেছিল বীভৎস সব ছবি। আর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতেই তারা এই কাজ করেছিলো।

ভাবছি আপনি আজও বাংলাদেশকে ভালবাসেন! ক্ষতবিক্ষত, আদর্শচ্যুত এই দেশকে এখনো ভালোবাসতে ইচ্ছে করে আপনার? আপনার শরীর থেকে ঝরে যাওয়া রক্ত নিঃশেষ হয়ে যায়, অসাড় দেহে আপনি বলে যান ট্রাজেডি। আর আমরা বেঁচে থাকা মানুষের শরীর থেকে রক্ত ক্ষরণ হয় না। তারা নীরবে হজম করে। মুখ ফুটে বলে না, রাষ্ট্রযন্ত্র শীতঘুম কাটিয়ে দেখলো স্বর্গ নয়, নরকের খুব কাছে দাঁড়িয়ে।

আড়ম্বর ভাঙলো, মানুষেরা দুঃখের শ্লোক গাইছে। আর সোচ্চার হয়েছে বলে নড়েচড়ে ওঠা সুখনিদ্রা কাটিয়ে। আমরা জানি না, যুদ্ধ খেলার গল্লের শেষ কোথায়, জানি না কতদিন পরে আবার হাসবে বাংলাদেশ। শুধু জানি আমরা ভালো নেই, বাংলাদেশ ভালো নেই।

No comments:

Post a Comment